# Real_Love♥
# Oniya_chowdhury
part:01
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে খানিকটা দূরে দাড়িয়ে আছি আমি আর আমার ছোট বোন নাফিসা।নর্থ সাউথে আমার কাজিন পড়ে।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে।উনি আমার বড়আব্বুর মেজো মেয়ে শিফা আপু।আমার তিন চাচ্চু।আমাদের ফেমিলির বড় মেয়ে মানে আমাদের কাজিনদের মধ্যে সবার বড় রিফা আপুর আগামী পরশু বিয়ে।সেই উপলক্ষে আজ শপিং এ যাওয়ার কথা।তিন চাচ্চু আর তিন ফুপু তাদের ফেমিলির শপিং করা কমপ্লিট।এখন শুধু আমার আর নাফিসারই বাকি।আব্বু আম্মুর শপিংটা নাকি বড় আব্বু আর বড়আম্মু করছে।আমাদেরটাও করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমরাই মানা করে দিয়েছি কারন পরে যদি পছন্দ না হয়!আপুকে নিয়ে যাওয়ার কারন চয়েজ করে দেওয়ার জন্য।কারন আমার চয়েজ জিরো লেভেলের।কারোরই পছন্দ হয়না।সব কাজিনরা একসাথে শপিং করার কথা ছিলো।বাট আনফরচুনেটলি আব্বুর ছুটি যেদিন দেওয়ার কথা ছিলো সেটা দুদিন পিছিয়ে দিয়েছিলো।খুব রাগ উঠেছিলো আব্বুর ওসি সাহেবের উপর।দুদিন পর রওনা দিয়েছিলাম চিটাগাং থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
উফ!আমার আনন্দ দেখে কে!প্রচুর এক্সাইটেড ছিলাম।কজ সব কাজিনরা অনেকদিন পর একসাথে হবো প্লাজ ছয়বছর পর কোনো নিকটাত্মীয়ের বিয়ে খাবো।আগে সাভার ছিলাম বিধায় কিছু মনে হয়নি।যখন মন চেয়েছে তখনই আব্বু আম্মুকে রেখে একা চলে এসেছি।আমার এসএসসি কমপ্লিট হওয়ার একমাস পরই আব্বুর চিটাগাং পোস্টিং হয়ে যায়।আব্বু আর্মি অফিসার ছিলো বলে কখনো তিন বছর আবার কখনো চার বছর পর পর বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্মি ক্যান্টনমেন্ট এ পোস্টিং হতো।আমার ভালোই লাগতো।বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে পারতাম।বাট এইবার পোস্টিংটা একটু বেশি দূরে হয়ে গেছে।এর আগেও চিটাগাং পোস্টিং হয়েছিলো।তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়তাম।চিটাগাং থেকে ঢাকা আসতে মিনিমাম ছয় সাত ঘন্টা লাগেই কিন্তু জ্যাম এ আটকা পরলে পুরো একদিন লেগে যায়।এইবার ঢাকায় আসার সময় ভালোভাবেই আসতে পেরেছিলাম।কালই আসার কথা ছিলো শপিং এ।কিন্তু আমি নিজেই মানা করে দিয়েছিলাম।কাল সারাদিন ক্লান্ত ছিলাম।তাই আজ সকাল সকাল বের হয়েছি।ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে।কিছুটা শীত এখনও আছে।ঢাকা শহরে বলতে গেলে সবসময়ই গ্রীষ্মকাল।
.
নাফিসা অনেক্ষণ হাটাহাটির পর আমার কাছে এসে বললো,
– আপু,একবার শিফাপুকে ফোন কর না।এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে জাস্ট বিরক্ত লাগছে।
– গাড়ীতে যেয়ে বস।
– তুই ফোন কর।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে ফোন বের করে আপুকে ফোন দিলাম।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আপু রিসিভ করার সাথে সাথেই আমি বলে উঠলাম আর কতক্ষণ লাগবে?
– এতো আগে আসছিস কেনো?আমি না তোদের আধাঘন্টা পর আসতে বললাম।
– আগে তো কখনো নর্থ সাউথে আসি নি।ভাবলাম আগে আসলে তোমার সাথে কিছুক্ষণ আশপাশ ঘুরে তারপর শপিং এ যাবো।কিন্তু তোমার তো আশার নাম নেই।বিরক্ত লাগতেছে আমার।তাড়াতাড়ি আসো।
– ওকে।
আমি ফোন রেখেই নাফিসাকে মিথ্যা বললাম যে দশমিনিটের মধ্যেই আসবে।ও বিরক্ত মুখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দুহাত পিছনে দিয়ে আগের ন্যায় পায়চারী করতে লাগলো।ওকে দেখে মনে হলো এই দশমিনিট ওর কাছে দশ বছরের সমান।
.
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে ফেসবুক লগইন করলাম।ভালোমন্দ কিছু না পেয়ে লগআউট দিয়ে চলে আসলাম।
.
কেউ একজন দুবার ভাবী বলে ডাক দিলো।ডাকটা আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি।আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না।শুধু কয়েকটা গাড়ী ছিলো।গাড়ীর মধ্যে থেকে কেউ ডাকে নি তো!
.
হঠাৎ একটা পিচ্চি ছেলে ভাবী ভাবী বলে দৌড়ে আমার কাছে আসলো।অনেক ফরসা,চুলগুলো সিল্কি সামনে এসে আছে।আমি একবার নাফিসার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম”কে রে?”ও ইশারায় “জানিনা” বললো।আমি পিচ্চির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তুমি চেনো আমাকে?
– হুম।
আমি কিছুটা অবাক হলাম।এর আগে কখনোই এই পিচ্চিকে দেখিনি।আমি ওর সামনে বসে বললাম,
– তোমার নাম কি?
ও আমার মাথার হিজাবের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাবী,এই সুইগুলোর সাথে ব্যাথা লাগে না তোমার?
এই পিচ্চির কথা শুনে আমি হাসবো না কাদবো বুঝতে পারলাম না।আমি আবার বললাম,
– তোমার নাম কি?
– ইয়াশ।
– আমাকে ভাবী ডাকলা কেনো?তোমার বড় কোনো ভাই আছে?
– হুম,আছে তো।তার জন্যই তো তুমি আমার ভাবী ।
অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।নাফিসা বললো,
– এই পিচ্চি, কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছো?ওর তো এখনও বিয়ে হয় নি।
আমি নাফিসাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– তোমরা কয় ভাইবোন?
– ভাইয়া,আপু আর আমি।
– তোমার ভাইয়া কিসে পড়ে?
– এইট্টিন এ পড়ে।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে নাফিসার দিকে তাকালাম।নাফিসা ইয়াশকে বললো,
– এইট্টিন মানে?
– এইট্টিন মানে জানোনা?এইট্টিন মানে আঠারো।
নাফিসা অসহায়ভাবে উত্তর দিলো,
– ওহ
আমি মুখ টিপে হাসলাম।হঠাৎ ইয়াশ আমার দুটো গাল টেনে দিলো।
– আহ্!কি নরম!জানো আমি এভরিডে তোমাকে অনেকগুলো কিস করি।
.
মুহূর্তের মধ্যেই হাসিটা চলে গেলো।আমার গালে আজ পর্যন্ত কাউকে টাচ করতে দেইনি।আর এই পিচ্চি কিনা মুহূর্তেই আমার গাল টাচ করলো।আবার বলছে কিসও নাকি করে।পিচ্চি মানুষ যা মন চাচ্ছে তাই বলছে।
আমি বসা থেকে উঠে বললাম,
– কোন ক্লাসে পড়ো?
– ক্লাস টু।তুমি কোন ক্লাসে পড়?
হায়রে!এইটুকু একটা পিচ্চি উল্টো আমাকে প্রশ্ন করছে আমি কিসে পড়ি?
– ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে।
– ইন্টার কি?
পাশ থেকে নাফিসা বললো,
– ইন্টার মানে ক্লাস টুয়েল্ভ।
নাফিসার উত্তরটা শুনে হঠাৎ মাথার ব্রেইন খুলে গেলো।ইয়াশ বলছিলো ওর ভাই এইট্টিন এ পড়ে।তারমানে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে।ইয়েস!পেয়েছি।
তারপরও সিউর হওয়ার জন্য বললাম,
– তোমার ভাইয়া কি তোমার থেকে অনেক বড়?
– হুম,আমি ভাইয়ার হাতের কনুই পর্যন্ত।
– ওহ্!
আমি প্রশ্নটা অন্যভাবে করেছিলাম বাট ও এইরকম একটা আনসার দিবে সেটা ভাবিনি।
.
হঠাৎ একটা গাড়ী আমাদের সামনে আসলো।গাড়ীর গ্লাস নামানোর সাথে সাথে সানগ্লাস পড়া ফর্সা চেহারা,খোঁচা খোঁচা দাড়ি,চুলগুলো উপর দিকে উঠানো একজন ইয়াং হ্যান্ডসাম ম্যান কে দেখলাম।ক্রাশ খাওয়ার মতো একটা লুক নিয়ে সানগ্লাসটা খুলে পিচ্চিটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– কি!ভাবীর সাথে কথা বলা শেষ?এখন কি বাসায় যেতে পারি?
– অ্যা’ম কামিং।
ইয়াশ দৌড়ে গাড়ীর অন্যপাশে যেতেই উনি দরজা খুলে দিলো।ইয়াশ চুপচাপ উঠে বসলো।আর উনি সানগ্লাস পরে গাড়ী স্টার্ট দিলো।ইয়াশ হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো।
.
আমি আর নাফিসা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম।কি হলো এতক্ষণ!এটাই কি ওর বড় ভাই!
.
শিফাপু ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আমাদের কাছে বললো,
– সরি!বেশি লেট করে ফেললাম।
– হুম!এখন তাড়াতাড়ি গাড়ীতে উঠো।
– এখনই!ঘুরে দেখবি না?
– না আপু।অন্য একদিন।এমনিতেই কেমন জানি বিরক্ত আর টেনশন লাগছে।
– কেনো?অসুস্থ নাকি?
নাফিসা বললো,
-আরে না আপু।তুমি আসার আগে একটা শর্টফিল্ম হয়ছে।
– মানে?
– গাড়ীতে উঠো তারপর বলছি।
নাফিসা পুরো ঘটনা গড়গড় করে বলে দিলো।আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম আর ওদের কথা শুনছিলাম।
আপু পুরো ঘটনা শোনার পর আমাকে বললো,
– ইফাজ ছেলেটা দেখতে কেমন ছিলো?
– লাল ফর্সা,খোজা খোজা দাড়ি সুন্দর একটা স্টাইলে কাটা,চুলগুলো খাড়া খাড়া উপর দিকে উঠানো আর…আর কিছু খেয়াল করি নি।
– আই সি! আমার মনে হচ্ছে তোর সাথে যার বিয়ে ঠিক করছে এইটা ওই ইফাজ।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-আমার বিয়ে মানে?
– সে অনেক কাহিনী!আগে প্রমিজ কর কাউকে বলবি না?
আমি আর নাফিসা দুজনই প্রমিজ করলাম আপুর হাতে হাত রেখে।দুজনই শোনার জন্য খুব এ্যাক্সসাইটেড ছিলাম।উৎসুক ভাবে তাকিয়ে বললাম,
– এবার তো বলো।
– আমাদের ফ্লোরের নিচের ফ্লোরে অনিম নামের যেই ভাইয়াটা থাকে উনি এই ইফাজের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে একজন।তুই তখন ক্লাস টেন এ পড়তিস।কুরবানী ঈদের সময় যখন সাভার থেকে এখানে আসলি তখন কোনোভাবে উনি তোকে দেখে ফেলেছে।আর তুই যেই সুন্দর মানুষ, প্রথম দেখেই অন্যসব ছেলেদের মতো তোকে ভালো লেগেছিলো বোধ হয়।হাত ছাড়া করতে চায় নি যার ফলে ঈদ শেষ হওয়ার দুদিন পর ইফাজের পুরো ফেমিলি নিয়ে আসছিলো বিয়ের কথা পাকা করতে।আমি নিজেও জানতাম না,আম্মু আমাকে বলছে।তোকে বলতে মানা করেছিলো।কিন্তু আজ যেহেতু ইফাজ নিজেই ওর পরিচয় তোর সামনে দিলো।আমি লুকিয়ে কি করবো?
আমি আর নাফিসা আপুর কথাগুলো এতক্ষণ গিলছিলাম।সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।এতো কিছু হয়ে গেছে আমার লাইফে আর আমি গন্ডারের মতো কিছুই টের পেলাম না?এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে আমার হাজবেন্ড হতে চেয়েছে আর সবাই কিনা আমাকে না জানিয়ে ওয়েটিং এ রাখলো।
.
আমার পড়াশোনা করতে মোটেও ভালো লাগে না।আমার সব ফ্রেন্ডরা একশো একটা প্রেম করে সেইখানে আমি আজ পর্যন্ত কোনো ছেলের দিকে ভালোভাবে তাকায় নি পর্যন্ত।শুধুমাত্র আব্বুর কথা ভেবে।আব্বু বলেছিলো ঠিকমতো পড়াশোনা না করলে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।সেই ভয়ে ওলওয়েজ পড়তাম।
.
এখন তো জানতে পারলাম আমার হাজবেন্ড কোনো রিকশাওয়ালা না।এখন পড়াশোনা ঘোল্লায় যাক।আমি আর পড়াশোনার মধ্যে নাই।
আমি আপুকে বললাম,
– আচ্ছা,আব্বু আম্মু মানা করলো কেনো?
– আরে গাধী,মানা করে নাই।জাস্ট বলেছে তোর এইচএসসি কমপ্লিট হওয়ার পর এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
– আচ্ছা,পড়ুয়া একটা ছেলের বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে আসার সাহস হয় কি করে?তাও আবার ফেমিলি নিয়ে?
– ও পড়ার পাশাপাশি একটা জবও নাকি করে।আর বসুন্ধরার দিকে ওদের একটা শপিং কমপ্লেক্স আছে।ঢাকার বড় বড় দুটো মাদ্রাসা ওরা চালায়।ইফাজের আম্মুতো বোরখা পড়ে।যেদিন তোর বিয়ের কথা পাকা করতে আসছিলো ওইদিন আসতে আসতে উনাদের মাগরিব হয়ে গিয়েছিলো।আন্টি আংকেল তো কথাবার্তা শুরু করার আগে নামাজ পড়ে নিলো।ইসলামিক রীতিনীতি কিছুটা আছে ওদের মধ্যে।এখনকার বড়লোকদের যা অবস্থা!সেই তুলনায় আমার ভালোই লাগলো।বিশেষ করে আমাদের ফেমিলির মেয়েদের জন্য পারফেক্ট শশুরবাড়ি।
নাফিসা হঠাৎ বলে উঠলো,
– আমি আজই বাসায় যেয়ে আব্বুকে বিয়ের কথাটা পাকা করতে বললো।আমার দুলাভাই হিসেবে উনাকে আমার চাই।
– নাফিসা,আমাকে কিন্তু প্রমিজ করছিলি।
– প্রমিজ ফিরিয়ে নিলাম।
আমি বললাম,
– নাফিসা খবরদার।এইসব কথা তুলিস না আব্বুর সামনে।
– কেনো রে?যত দেরী করবো আমার ফ্রেন্ডেরও বলতে তত দেরী হবে।
– কি বলতে দেরী হবে?
– এই যে,আমার হবু দুলাভাই যে এত্ত হ্যান্ডসাম সেটা।
আমি আর আপু দুজন দুজনের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।মেয়ে বলে কি এসব!
.
আপু হিজাবের সামনে ঠিক করতে করতে বললো,
– নি নাম তাড়াতাড়ি।চলে আসছি।
.
আমরা শপিং শেষ করে রাত আটটায় বাসায় আসছি।আমার সব কাজিনরা আমাদের বাসায়ই ছিলো বসে বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।আমি মেইন ডোর খোলার সাথে সাথে সবাই চিৎকার দিয়ে আমাদের হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে একটা একটা করে দেখতে লাগলো।
.
আমরা কাজিনরা মোট আট বোন আর দুইভাই।বড়আব্বুর দুইমেয়ে রিফাপু আর শিফাপু।তারপর সিরিয়ালে আব্বু।আব্বুর দুইমেয়ে আমি আর নাফিসা।মেজো চাচ্চুর দুইমেয়ে সুরভী, সুমনা,আর একমাত্র ছেলে মেহেদী।ছোট চাচ্চুর দুইমেয়ে মিম,মায়শা এবংএকমাত্র ছেলে আসিফ।কাজিনদের মধ্যে সিরিয়ালে আমি তিন নাম্বার।
.
রাতে ডিনার করে শুয়ে পরেছিলাম রাত দশটায়।ইফাজের চেহারাটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।কি সুন্দর উনি!আর ইয়াশ পিচ্চিটা!মাশাআল্লাহ্।
.
সকালে নাফিসা ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললো,
– আপু তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে দাদুর বাসায় চল।ওখানে পার্লার থেকে আপুরা আসছে।আমরা সবাই ওখানেই আছি।
আজ যে আপুর গায়ে হলুদ আমার মনেই ছিলো না।আমি বললাম,
– মেজো ফুপি আসে নি এখনও?
– উনি কাল বিয়েতে একেবারে আসবে।আংকেল এর ছুটি হয়নি।
– ওহ!
– তোর হলুদের ড্রেস সব আমি নিয়ে গেছি কিন্তু।আবার খুজিস না যেনো।
– আচ্ছা।
.
আমাদের এ্যাপার্টমেন্টটা আটতালার।আমরা পাচনাম্বার ফ্লোরে থাকি।প্রতি ফ্লোরে মোট আটটা করে বাসা।পাচঁ নাম্বার ফ্লোরের আটটা বাসাই দাদাভাই কিনে নিয়েছে।এই ফ্লোরের সাতটা বাসা তার সাত ছেলেমেয়ের জন্য আর তারা নিজেদের জন্য একটা কিনেছিলো।দাদা দাদি মারা যাওয়ার পর তাদের বাসাটা আমাদের সব কাজিনদের বাসা হয়ে গেছে।কাজিনরা মিলে একসাথে অনেক আড্ডা দেই ওই বাসায়।
.
বাসাগুলো বিশাল বড় বড়।ড্রয়িংরুমের স্পেস অনেক বড়।ডাইনিং এর সাথে কিচেন।মোট চারটা রুম।আর একটা গেস্টরুম।
.
আমি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে চলে গেলাম। মেহেদি আর আসিফ ওরা শুধু ড্রেসটা পরেই নিচে চলে গেছে।সুরভী,সুমন
া আর মায়শার সাজ প্রায় কমপ্লিট।সবাই একই ডিজাইনের হলুদ শাড়ী পরেছে।শিফাপু,নাফিসা আর মিম শাড়ী পরে বসে আছে।সাজ এখনও শুরু করে নি।সবাই খোপা করেছে সাথে হলুদ ফুল।আমার সবগুলো বোন এমনিতেই অনেক সুন্দর।
.
আমি নাফিসাকে বললাম,
– আমার ড্রেস কই রেখেছিস?
আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বললো,
– ওই যে।
মিম বললো,
– শাড়ী পরলে তোমার কি এমন ক্ষতি হতো?আমরা সব বোনরা শাড়ী পরলাম তুমিই শুধু কামিজ পরবা।
আমি ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললাম,
– শাড়ী পরে থাকতে পারি না।শরীরের মধ্যে কেমন যেনো উশপিশ করে।
.
সত্যি কথা বলতে আব্বু আম্মুর সামনে শাড়ী পরে ঘোরাঘুরি করতে আমার কেমন যেনো অসস্তি লাগে।আবার লজ্জাও লাগে।আম্মু আবার টিটকারি মেরে আব্বুকে বললে,ওমা! মেয়ে দেখি শাড়ী পরেছে।দেখো তোমার মেয়েকে পুরো গিন্নি গিন্নি লাগছে।আব্বু আম্মুর মুখে এইসব কথা শুনলে নিতে পারি না আমি,প্রচুর লজ্জা লাগে।
.
রেডি হয়ে সেজেগুজে এ্যাপার্টমেন্টের নিচে আসলাম।এ্যাপার্টমেন্টের সামনে বিশাল জায়গা।ফুটবল মাঠের মতো।চারপাশে উচু দেয়াল দিয়ে আটকানো।
.
আমি হলুদ কামিজ পরা,ওড়না সামনে ছেড়ে দেওয়া,চুল খোলা রেখে একপাশে হলুদ ফুল লাগানো।আমার চুল অনেক লম্বা 2’3″ ।
.
মিম আমাকে ইশারায় ওদের কাছে ডাকলো।আমি কয়েক কদম যাওয়ার পর আচমকা একটা পিচ্চি জড়িয়ে ধরলো।আমি টাল সামলাতে না পেরে সামান্য পিছনে সরে গেলাম।
.
(চলবে)