real love পর্ব ৩ এবং ৪

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
part: 3+4
.
আমাকে টানতে টানতে উনি একদম উনার কাছে নিয়ে এসেছে।আমার বুকের মধ্যে একহাজার মাইল বেগে কিছু একটা ওঠানামা করছে।নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে।প্রচুর কষ্ট হচ্ছে নিশ্বাস নিতে।
.
উনি উনার বুকের সাথে আমার পিঠ ঠেকিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
– গায়ে হলুদে তো হলুদ শাড়ী পরতে হয়।শাড়ী পরোনি কেনো?জানো আজ সারাদিন কতটা বিজি ছিলাম।ইভেন এখনও বিজি আছি।যাওয়ার আগে একটাবার তোমাকে শাড়ী পরা অবস্থায় দেখবো বলে ড্রাইভারকে মানা করে দিয়ে আমি নিজে ইয়াশকে নিতে এসেছি।বাট আফসোস!বউ আমার শাড়ী পরে নয় কামিজ পরে ঘুরে বেরাচ্ছে।
.
বউ কথাটা শুনে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।কিন্তু উনি কি বললেন?যাওয়ার আগে দেখতে এসেছেন মানে?কোথায় যাচ্ছেন উনি!
.
আমি পেছন ফিরে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– যাওয়ার আগে দেখতে এসেছেন মানে? কোথায় যাচ্ছেন?
উনি উনার দুই হাত দিয়ে আমার মাথা ধরে উনার কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
– কোম্পানির কাজে আব্বুর সাথে ইউএসএ যাচ্ছি।দশটায় ফ্লাইট।
– দশটায় মানে??সকাল দশটা??
– আজ্ঞে না মিসেস চৌধুরী।আর তিন ঘন্টা পর ফ্লাইট।
.
উনার মুখে মিসেস চৌধুরী শুনে মনের মধ্যে ধুক করে উঠলো।মিসেস চৌধুরী!সামান্য দুটা শব্দের মধ্যে এতটা ফিলিংস লুকিয়ে থাকে!বুকের ভেতরটা কাঁপছে।কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেলো এটা ভেবে যে,উনি একটু পর চলে যাচ্ছেন।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আসবেন কবে?
– এইতো পনেরো দিন পর।কি হলো মন খারাপ করলা নাকি?
– উহুম!
– বাব্বাহ্!বউ দেখি সত্যি মন খারাপ করেছে।এইটুকু সময়ে আমাকে এতটা আপন করে নিবে যদি জানতাম তাহলে তো আমার শ্বশুর মশাইয়ের কথা সেই কবেই অমান্য করে তোমার সাথে দেখা করা থেকে শুরু করে সবকিছু করতাম।
.
সবকিছু করতেন মানে?আমি মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– সবকিছু করতেন মানে?
– যাস্ট কথার কথা বললাম।আবার ভয় পেয়ে দূরে দূরে থেকো না যেনো।
আমি উনাকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– ছাড়ুন তো।
উনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই আম্মুর কন্ঠ শুনে ছেড়ে দিলেন।
.
আম্মু ডাইনিং থেকে চিৎকার করে আমাকে বলল,
– ইফাজকে নিয়ে ডাইনিং এ আয়।
.
– চলুন,আম্মু ডাকছে।
ও প্যান্টের পকেটে দুহাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো।আমি এক কদম পা বাড়াতেই আমার হাত খোপ করে ধরে বলল,
– আমার এখন একদম টাইম নেই।সি,অলরেডী সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।ইয়াশকে নিয়ে এখন বাসায় যাবো।আম্মুর সাথে দেখা করে সোজা এয়ারপোর্টে যাবো।জ্যামে পরলে তো কথাই নেই।প্লিজ,আন্টিকে একটু ম্যানেজ কর।
– নো নো নো!আমি পারবো না।সবকিছু রেডি।আপনি যাস্ট খাবেন।পাঁচ মিনিটেও কিন্তু খাওয়া যায়।আর পাঁচ মিনিটে নিশ্চয় আপনার বিমান উড়ে যাচ্ছে না!বেশি কথা না বলে চলুন।
আমি উনাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবো কিন্তু পেছন থেকে উল্টো উনি আমাকে টান দিয়ে আবার আগের স্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।উনার মতো জিমওয়ালা বডিবিল্ডারের সাথে কখনোই আমার মতো চিকনা একটা মেয়ের পেরে ওঠা সম্ভব না।তাই হাল ছেড়ে দিয়ে আম্মুকে ডাকলাম।হঠাৎ আম্মুকে এভাবে ডাকাতে উনি ভড়কে গেলেন।আম্মুকে আসতে দেখে আমার থেকে সামান্য দুরুত্বে দাড়ালেন।আম্মু বলল,
– চলো।সবকিছু রেডী।
আমি ভ্রু উপরে উঠিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।উনি অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিলো।তারপর আম্মুকে বললো,
– আন্টি, আমার এখন একদম সময় নেই।দশটায় ফ্লাইট। এখনই আমাকে বের হতে হবে।নাহলে অনেক লেট হয়ে যাবে।
– দশটায় ফ্লাইট। আর এখন বাজে মাত্র সাড়ে সাতটা।কোনো কথা হবে না।এই প্রথম তোমাকে দেখলাম।এর আগে তোমার আংকেলের সাথে তোমার দেখা হলেও আমার সাথে আজই প্রথম।তুমি আসবে বলে আমি নিজে রান্না করছি।হবু মেয়েজামাই বলে কথা না খাইয়ে ছাড়ছি না,হুম।
আম্মুর মুখে বলা মেয়েজামাই কথাটা শুনেই খালি মুখে বেশম খেলাম।আম্মু,ইফাজ দুজনই আমার বেশম্ খাওয়ার কারনটা ধরতে পেরেছে।আমি ওদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ওখান থেকে আমার রুমে চলে আসলাম।
.
ওখানে কি হচ্ছে কে জানে।যত যাই হোক আজ উনাকে না খাইয়ে আম্মু ছাড়ছে না।আমি একগাল হেসে ইয়াশের পাশে আধশোয়া অবস্থায় বসে ফোনে সামান্য ভলিউমে গান ছাড়লাম।যেই চোখটা বন্ধ করবো সেই মুহূর্তে উনি আমার রুমে ঢুকলেন।আমি অবাক হয়ে আস্ক করলাম,
– আপনি এখনও খেতে যান নি?আমি তো ভাবলাম আম্মু অলরেডী জামাই আদর শুরু করে দিয়েছে।
– জামাই না বানিয়েই জামাই আদর করবে এটা আমি মানবো না।আগে জামাই তারপর আদর।
– আম্মু কিছু বলে নি না খেয়ে এলেন যে?
– অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি।
.
.
উনি আমার পুরো রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে।এমনকি ওয়াশরুমটাও বাকি রাখে নি।অবশ্য আমার ওয়াশরুমটা যথেষ্ট ক্লিন।এই ওয়াশরুমটা বেশি ইউজও করা হয় না।এই বাসায় আসিই তিন চার দিনের জন্য।
.
আমি ঘুমন্ত ইয়াশের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলাম।ইয়াশ ঘুমের মধ্যেই একহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।আমি পা লম্বা করে রেখেছিলাম।উনি এসে আমার পায়ের কাছে বসলো।উনার বসা দেখে আমি নিজের পা ভাঁজ করলাম।উনি ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কি আরামে ঘুমাচ্ছে।আমি যে কবে এভাবে ঘুমাতে পারবো?
– আপনার তো বড় কোনো ভাই নেই।আপনি এই আরাম কোনোদিনও পাবেন না।
– মানে?
-বোঝেন নি?মানে আপনার ভাই থাকলে ভাবী হতো আর সেই ভাবীকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে পারতেন।
.
আমি বুঝেও যে না বোঝার ভান করে কথাগুলো বলছি সেটা উনি ধরতে পেরেছেন।উনি উঠে আমার একদম কাছে এসে দুহাত দিয়ে চুলের ভেতর দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আমি ভাবীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর কথা বলি নি পাগলী।তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর কথা বলেছি।
উনার হাতের স্পর্শ আমার গলার গভীরে গিয়ে গলার ভেতরসহ সারা শরীর কাপছে আর উনার কথাগুলো বুকের ভেতরে গিয়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাল্লা দিয়ে কাপছে।চোখগুলো আবেশে বন্ধ হওয়ার উপক্রম।অনেক কষ্টে তাকিয়ে আছি।সামান্য এইটুকু স্পর্শের মধ্যে এতটা সুখ লুকিয়ে থাকে কল্পনাও করিনি।উনি বললেন,
– কি হলো?চুপ কেনো?
– উহু!
– কি উহু!
আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না।কিছুক্ষন পর উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
– তোমার কাছে আর থাকা যাবে না।তোমার কাছে থাকা মানে তোমার ভাষ্যমতে আমার বিমান আমাকে রেখেই উড়ে যাওয়া।ইয়াশকে নিতে তোমার রুমে এসেছিলাম।বাট দেখো এখনও নিতেই পারলাম না।
– ও তো এখনো ঘুমোচ্ছে।
– এটাই তো সুযোগ।
– মানে?
– মানে ওকে ঘুমোনো অবস্থায়ই নিয়ে যেতে হবে।নাহলে জেগে গেলে পরে আর তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইবে না।
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি আস্তে করে আমার কোমড় থেকে ইয়াশের হাত আলাদা করে কোলে তুলে নিলো।পেছনে ফিরে আমাকে বললো,
– বসে আছো কেনো?আমার সাথে আসো।
– কেনো?
উনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমিও উনার পেছন পেছন গেলাম।লিফ্টের মধ্যে দুজনই চুপচাপ ছিলাম।লিফ্ট থেকে বের হয়ে দেখলাম আমার কাজিনরাসহ ফ্লাটের সবাই অনেক আনন্দ করছে।মিম,সুরভী,আসিফ আমাকে দেখে আমার কাছে এসে বললো,
– জানো,আমরা কত্ত মজা করছি।আজ সারারাতও অনেক মজা করবো।সন্ধ্যের পর তো তোমাকে আর দেখিই নি।আজ রাতে কিন্তু আমাদের সাথে জাগতে হবে।
– ওকে।ঠিক আছে।তোরা যা।আমি ওদের এগিয়ে দিয়ে আসি।
সুরভী ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাইয়া আপনি চলে যাচ্ছেন? এখনই কেনো?একটু আগেই না আসলেন!
– একটু তাড়া আছে।অন্য একদিন আসবো।
– আচ্ছা।টাটাহ্।
– টাটাহ্!
.
উনি ইয়াশকে গাড়ীর পেছনের সিটে শুয়ে দিয়ে দরজা লক করলো।তারপর আমার হাত ধরে গাড়ীর সামনের দিক দিয়ে ঘুরিয়ে অন্যপআশে নিয়ে গেলো।গাড়ীর দরজা খুলে বড় একটা গিফ্টের বক্স বের করলো,
– এটা কি?
– গিফ্ট।
– কার জন্য?
– কার জন্য মানে?obviously তোমার জন্য।নাও।
আমি তো মহাখুশী।লাফাতে ইচ্ছা করছে।কোনোরকমে গিফ্টটা সরিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– থ্যাংক ইউ!!!থ্যাংক ইউ সো মাচ!!!
উনিও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– তুমি যে এতোটা হ্যাপি হবে ভাবতে পারিনি।থ্যাংক ইউ।
আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
– আপনি কেনো থ্যাংকস্ বলছেন?
– এই যে এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য।
আমি সামান্য লজ্জা পেয়ে কোনোকিছু না ভেবে উনার হাত থেকে গিফ্টের বক্সটা নিয়ে বললাম,
– এখন আপনার লেট হচ্ছে না?
কথাটা শুনে উনি হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল ঝাকিয়ে বললো,
– উফ্!তোমার সাথে থাকলে সময়েরও হিসাব থাকে না আমার।
আমি হেসে বললাম,
– হয়েছে!এখন যান।
– হুম বাই।
– হুম!
.
উনি গাড়ী স্টার্ট দিয়ে আমাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিলো।আমিও হাসি হাসি মুখে বিদায় দিলাম।

Part: 04
.
আমি গিফ্টটা নিয়ে সোজা উপরে উঠে আমার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। বেডের উপর আরাম করে বসে ইয়া বড় বক্সটা সামনে রাখলাম।উপরের পেপার টেনে হিচঁড়ে ছিড়ে ফ্লোরে ফেলে দিলাম।বক্সটা খোলা মাত্রই শক খেলাম।ওহ্ মাই গড এত্ত কিছু!!!ভেতরে আরো অনেকগুলো বক্স রাখা।চোখে হালকা পানি এসেছে।হাত পা কাপছে।কাঁপা কাঁপা হাতেই একটা একটা করে বক্স খুলে দেখতে লাগলাম।
.
ফার্স্ট একটা বক্স খুললাম।কালো কালারের একটা সিল্কের শাড়ী।চোখ আটকে আসলো।পুরোটুকু কালো।মাঝে ঘন ঘন করে হোয়াইট স্টোন বসানো।শাড়ীর পাড়ের দিকে সারিবদ্ধভাবে বড় বড় স্টোন লাগানো।ব্লাউজটা ফুলহাতা।পুরো ব্লাউজে স্টোন বসানো।অসম্ভব সুন্দর!
.
শাড়ীটা বেডের উপর রেখে আরেকটা বক্স বের করলাম।খুলে দেখলাম এটাতেও শাড়ী।জামদানী শাড়ী!আমি হা করে তাকিয়ে আছি।এত্ত সুন্দর!!!পুরো শাড়ী নীল কালার।নীল আমার ফেভরিট কালারের মধ্যে একটা।শাড়ীটার বিশেষণ কিভাবে করবো ভেবে পাচ্ছি না।জামদানী শাড়ীর প্রশংসার উপর প্রশংসা করলেও মনে হয় কম হয়ে যাবে।আমি শাড়ীটা নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম।অনেক সুন্দর মানিয়েছে!চয়েজ আছে বলতে হবে।আমার জন্য ভালোই হলো।আমার চয়েজ মোটেও ভালো না।আমার সব জিনিস উনাকে দিয়ে কেনাবো।খুব পরতে ইচ্ছা করছিলো।কিন্তু কে পরিয়ে দিবে?আম্মুকে তো বলাই যাবে না,অসম্ভব!পরে এটা নিয়ে খোটা দিতে পারে।
.
ফোনটা নিয়ে শিফাপুকে কল দিলাম।রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না।কিছুক্ষণ পর মিমের নাম্বারে ফোন দিলাম।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই আমি বললাম,
– মিম বোন,একটু তাড়াতাড়ি আমার রুমে আয় তো।
– কেনো?কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?
– আরে না।তুই আয় একটু তাড়াতাড়ি।
– ওকে,আসছি।
.
আমি মেইন ডোর খোলা রেখেই মেইনডোরের কাছে দাড়িয়ে পায়চারি করছিলাম।মিমকে দেখেই ওর হাত টেনে আমার রুমে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।ও আমার বেডের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম,
– কি দেখিস?
ও চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– এইসব জিজুর কাজ,তাই না?
– হুম।কথা না বাড়িয়ে এই শাড়ীটা পরিয়ে দে।
ও আমার হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে বললো,
– জামদানী রাইট?
আমি হাসি হাসি মুখে জবাব দিলাম,
– হুম।সুন্দর না?
– ওয়াও!রিয়েলি অন্নেক সুন্দর! শাড়ীটা কোথা থেকে কিনেছে?আমিও কিনবো।
– আমি জানিনা।
– জিজুর নাম্বারটা দে।আমি এখনই ফোন করে বললো এতো সুন্দর শাড়ী উনি কোথাও পেয়েছে?
– কি শুরু করলি,বল তো।তাড়াতাড়ি পরিয়ে দে।
– বাই দা ওয়ে!তখন তুই এই বক্সটাই কি আমাদের সামনে দিয়ে নিয়ে আসলি?
আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,
– জ্বী।এখন কথা না বাড়িয়ে পরিয়ে দে,প্লিজ?
– দে।
.
আমি শাড়ীটা মিমের হাতে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে শাড়ী বাদে বাকি জিনিসগুলো পড়ে আসলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি মিম বেডের উপর বসে বক্সের সব জিনিসগুলো এক এক করে দেখছে।
.
আমি চিৎকার দিয়ে ওর সামনে থেকে বক্সটা কোলে নিয়ে বললাম,
– শালা,আমি এখনো কিছুই দেখলাম না,তার আগেই তুই দেখতেছোস!
– আস্তে,এভাবে চিল্লানোর কি আছে?
.
আম্মু আমার রুমের বাহির থেকে আমার দরজায় নক করছে আর বলছে,
– হিয়া,কি হয়েছে?চিৎকার করছিস কেনো?তোর আব্বু যে বাসায় খেয়াল আছে?
.
আব্বু আম্মু যে নিচে থেকে বাসায় আসছে আমি জানতামই না।জানলে আমি এতো জোরে চিৎকার করতাম না।আমার গুষ্ঠীর কেউ ই মেয়েদের চিৎকার সহ্য করতে পারে না।বিশেষ করে আমাদের বোনগুলোর চিৎকার।আম্মুর কন্ঠ শুনে ভয়ে মুখটা চেপে ধরলাম।মিমকে আস্তে করে বললাম,
– আম্মু আসছে বলিস নি কেনো?
– আজব!চাচিআম্মুর বাসায় চাচিআম্মু আসবে,নরমাল।বলার কি আছে।আর ঠিকই তো করেছে এভাবে চিৎকার করার কি ছিলো।তোর এইসব আজাইরা প্যাচাল বাদ দিয়ে এদিকে আয় শাড়ীটা পরিয়ে দেই।
.
আমি জামদানিটা মিমের হাতে দিয়ে বললাম,
– নে।
– তুই বয়লারের মতো বসে আছিস কেনো?উঠ।
– এই বয়লার বয়লার করবি না একদম।
.
– ঠিক হয়ে দাড়া,নড়িস না।
– তুই ই তো টানাটানি করছিস!অসভ্য।
– অসভ্যর মতো কি করলাম?
– বারবার পেটে হাত দিচ্ছিস কেনো?সুড়সুড়ি লাগে তো।
– শাড়ি পরানোর সময় এই জায়গার ই কাজ বেশি।শরীরে এরকম সুড়ঁসুড়ি নিয়ে ঘুরলে তো বিয়ের পর সুড়ঁসুড়ি খেতে খেতে মরে যাবি তুই।
.
মিমের কথা শুনে গায়ের সব লোমগুলো দাড়িয়ে গেলো।ইফাজের কথা মনে পড়ে গেলো।ও সামান্য টাচ্ করাতেই আমার অবস্থা শেষ হয়!আর ওইসব করলে..উফ্!ভাবতে পারছি না।
.
– সেফটিপিন দে।
আমি ড্রসিংটেবিলের সামনে থেকে সেফটিপিন দিলাম।
ও পিনটা লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখে বললো,
– নিহ্! কমপ্লিট।অনেক সুন্দর লাগতেছে।নিচে যাবি না?
– যেতে ইচ্ছা করছে।বাট বাসায় তো আব্বু আম্মু আছে।
– আমি চাচীআম্মুকে কিচেনে নয়তো চাচিআম্মুর রুমে আটকে রাখব এই সুযোগে তুই নিচে নামবি,ওকে?
– আর আব্বু?
– ওয়েট,আমি গিয়ে দেখি চাচ্চু কি করে?
– অন্য চাচিআম্মুরা কই?নিচে নাকি?
– নাহ্!অনেক রাত হয়েছে।যে যার মতো বাসায় গেছে।নিচে শুধু সব ফ্লাটের পিচ্চি পোলাপাইন আর ফ্লাটের অন্যসব আপু ভাইয়ারা আছে।
– ওহ্।একটু একটু লজ্জা লাগছে।সারাদিন কামিজ পড়ে ঘুরলাম আর এখন শাড়ী পড়া অবস্থায় দেখলে সবাই পিন্ঞ্জ করবে।
– আরে সবাই তো শাড়ী পড়া।আর এই রাতে কেউ তোকে ওতো লক্ষ্য করবে না।রিলেক্স!
– আচ্ছা যা দেখে আয় আব্বু আম্মু কি করে?
– হুম।
.
আম্মু বেডরুমে বসে কার সাথে যেনো কথা বলছিলো আর আব্বু অন্যপাশ ঘুরে শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছিলো।কারোরই দরজার দিকে লক্ষ্য ছিলো না।মিম ইশারায় আমাকে ডাকলো।আমি লুকিয়ে যাওয়ার সময় আব্বু আম্মুর রুমে একবার উঁকি দিয়ে এক দৌড়ে লিফ্টের মধ্যে ঢুকলাম।
.
নিচে নেমে দেখলাম শিফাপু আর সুরভী একটু দূরে ফ্লাটের সব ভাইয়া আপুদের সাথে বসে বসে গল্প করছে।নাফিসা,মায়শা,সুমনা আরো কয়েকজন ফিল্ডের মাঝখানে ঘাসের উপর বসে খেলছে।
রিফাপু একদম ফিল্ডের কর্নারে যেয়ে হেসে হেসে কার সাথে যেনো কথা বলছে।দুলাভাই হবে হয়তো।
আমি আর মিম শিফাপুদের কারোর কাছে না যেয়ে পাশেই দোলনা ছিলো সেখানে গিয়ে বসলাম।সুরভী আর শিফাপু দূর থেকে আমাদের দেখে ইশারায় ডাকলো।
.
আমার ওদের কাছে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না।কিন্তু মিম জোর করে সেখানে নিয়ে গেলো।
.
আমাকে দেখে শিফাপু, সুরভীসহ বাকি সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।উনারা সবাই সকাল থেকে আমাকে কামিজ পরে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে।এতো রাতে হঠাৎ শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে সবাই অবাক হচ্ছে।ওদের সাথে অনিম ভাইয়াও ছিলো।শিফাপু আমার হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে বললো,
– কিরে,হঠাৎ শাড়ি পরেছিস!তাও আবার এতো রাতে!ঠিক আছিস তো তুই?
আমি সামনের কাটা চুলগুলো ঢং করে আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে বললাম,
– মন চেয়েছে তাই পরেছি।
– শরীরের মধ্যে এখন উশপিশ করে না?
আমি কিছু একটা বলতে যাবো তখনই মিম বলে উঠলো,
– আরে আপু,এখন কেনো ওরকম লাগবে।আমাদের কেনা শাড়ি পরলে ওর উশপিশ লাগে।এটাতো জিজু কিনে দিয়েছে।এটা পরে ওর অসম্ভব ভালো লাগছে।কজ জিজুর স্পর্শ এই শাড়িতে আছে।বুঝোনা কেনো!
আমি মিমের হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলাম।সবার সামনে এভাবে আমাকে লজ্জায় না ফেললেও পারতো।অসভ্য মেয়ে কোথাকার!
শিফাপু মিমকে বললো,
– মানে?
– মানে ইফাজ ভাইয়া চলে যাওয়ার পর যেই গিফ্ট বক্সটা নিয়ে ওকে উপরে যেতে দেখলাম,ওই বক্সটাতে ওর জন্য চারটা শাড়ি,প্রত্যেকটা শাড়ীর সঙ্গে মেচিং জুয়েলারী,তিনটা চকলেট বক্স,একটা ছোট টেডিবিয়ার ছিলো।আরোও হাবিজাবি কিসব প্যাকেট ছিলো।দেখতে পারি নি ওগুলো।বেয়াদবটা দেখতে দেয় নি।
.
মিমের কথা শুনে আমি নিজেই অবাক হলাম।আমি শুধু শাড়ি দুটোই দেখেছি।বাকি একটা জিনিসও দেখি নি।
.
অনিম ভাইয়া বললো,
– ইফাজের চয়েজ অলওয়েজ হাই লেভেলের।আনফরচুনেটলি তুমিও ইফাজের চয়েজের মধ্যেই পরেছো।
.
অনিম ভাইয়ার কথা শুনে সবাই শব্দ করে হাসলো।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
.
অনেক্ষণ সবাই আড্ডা দেওয়ার পর অনিম ভাইয়া ফোন বের করে বললো,
– স্মাইল প্লিজ!
সবাই তাকানোর সাথে সাথেই কয়েকটা গ্রুপ সেলফি তুললো।
.
আম্মুকে আমাদের দিকে আসতে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।আমি এখন কই লুকাই!নিজের শাড়ির আচঁল টেনে মুখ আড়াল করলাম।আমার এরকম আচরন করা দেখে আমাদের ফ্লাটের নিচতালার নিলা আপু বললো,
– হিয়া,এভাবে ঘুমটার আড়ালে লুকাচ্ছিস কেনো?
– আপু,আম্মু আসছে এই দিকে।
– তো?
শিফাপু বললো,
– ও শাড়ি পরে চাচিআম্মু, চাচ্চুর সামনে যেতে পারে না।লজ্জা লাগে ওর।
– এটা আবার কেমন লজ্জা!…বলেই নিলা আপু হাসলো।সাথে অন্যরাও।
.
আম্মু আমাদের থেকে সামান্য দূরে
দাড়িয়ে আমাকে ডাকলো।এক হাতে আমার ফোন আর অন্যহাতে আম্মুর ফোন।আমি তিল পরিমাণও নড়ছি না।আম্মু আবার ডাক দিলো।আমি ঠাঁই সেখানেই বসে আছি।আম্মু হয়তোবা টের পেয়েছে আমি শাড়ি পরেছি বলে তার ডাকে সাড়া দিচ্ছিনা।আম্মু গলার সাউন্ড অনেকটা বাড়িয়ে বললো,
– আমি জানি তুই যে শাড়ি পরেছিস।লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।ইফাজ বার বার ফোন দিচ্ছে।ফোনটা উপরেই রেখে এসেছিলি।নিয়ে যা!
ইফাজ ফোন দিচ্ছে শুনে আমি চমকে উঠলাম।অন্যরা সবাই হাসাহাসি করছে।নানাধরনের কথা বলছে।মিম বললো,
– আপু,এখন থেকে একটু ফোনটা সাথে রেখো।নাহলে এভাবে জামাই হয়ে শ্বাশুরিকে জ্বালাতন করা,ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?
.
আমি ওদের কাছ থেকে উঠে আসলাম।আমার বোনগুলোর কথাবার্তা বলার লিমিট নেই।কখন কি বলে ফেলে তার ঠিক নেই।আম্মুর কাছে যেয়ে আম্মুর থেকে ফোনটা নিতে যাবো তখনি আম্মু আমাকে কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে একটা হাগ করলো আর বললো,
– অনেক সুন্দর লাগছে শাড়ি পরে।ইফাজ দিয়েছে তাই না?
আমি লজ্জামাখা মুখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম।….বলেই সেখান থেকে দোলনার দিকে আসলাম।দোলনায় বসে ইফাজকে কল করলাম।কল কেটে দিয়ে উনি নিজে কলব্যাক করলো।আমি রিসিভ করে সালাম দিলাম।উনি বললেন,
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– স্যরি।
– কেনো?
– আপনি কতবার ফোন করলেন বাট আমি ধরতে পারি নি।
– ইট’স ওকে।আমি রাগ করিনি।আমি রাগ করেছি অন্য একটা কারনে।
– মানে?আমি তো রাগ করার মতো আর কিছু করি নি।
– শাড়ি পরেছো বাট আমাকে একটা পিক দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করনি।কেনো করলে এটা?
আমি চমকে উঠলাম।আমি শাড়ি পরেছি উনি জানলো কিভাবে?
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here