real love পর্ব ৬৮

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 68
.
.
ব্রেকফাস্ট শেষে রুমে এসে ড্রেস দুটো আর শাড়ি দুটো নিয়ে আলমারিতে রেখে দিলাম।আমি বেলকুনিতে গিয়ে দাড়ালাম।মনের ভেতর কেমন খুঁচখুঁচ করছে।এলোমেলো চিন্তাভাবনা মাথায় আসছে।এমন কেনো লাগছে?উনি পেছনে দাড়িয়ে আমার দুইহাতের উপর উনার দুইহাত রেখে বললেন,
– টেনশন?
আমি উনার সাথে হেলান দিয়ে বললাম,
– হুম।
– সবঠিক হয়ে যাবে।এতো টেনশন নিও না।
– চাচ্ছি না তবুও মাথার মধ্যে জেঁকে বসছে।
– রুমে চলো।
– থাকি না কিছুক্ষণ।
– আমার মাথাব্যাথা করছে খুব।চুল টেনে দিবে,চলো।
আমি আর কথা বাড়ালাম না।চুপচাপ রুমে এসে বসলাম।উনি আগের ন্যায় আমার কোলে মাথা রেখে আমার হাত উনার মাথায় রেখে বললেন,
– নাও,টানো।জোরে জোরে টানবে কিন্তু।
উনার কথামতো আমি উনার চুল খুব জোরে জোরে টানতে লাগলাম।উনি চোখ বন্ধ করলেন।উনি যে এইমুহূর্তে ঘুমাবেন না এটা শিওর।আমি অন্যহাত উনার গালে রেখে কিছুক্ষণ স্লাইড করলাম।উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে হাতের তালু দিয়ে নিজের ঠোঁট চেঁপে ধরে তালুতে কাঁমড় বসিয়ে দিলেন।কাঁমড়ের জায়গায় কয়েকটা চুঁমু খেয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুম।
– আব্বুকে একদিন কথার প্যাঁচে ফেলে আমি “বাবা” হবো সেইখবরটা দিয়েছিলাম বাট আব্বু ধরতে পারেনি।আব্বু আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলো “এতো তাড়াহুড়ো কিসের?হিয়া মা’তো পালিয়ে যাচ্ছে না।কিছুদিন টাইম নাও তারপর নাহয় ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে ভাব্বে।”
উনি কথাটা বলেই হেসে উঠলেন।আবার বললেন,
– এদিকে যে আমরা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে সেটা আবার সাকসেসফুল করার মিশনে লেগেছি,সেটা তো আমার বাপজান জানে না।জানলে কি হবে বলো তো?
– উফ্!টপিক চেঞ্জ করুন।এমনিতেই ভয় হচ্ছে তারউপর আবার এসব কথা।
উনি গাঁ ঝাঁকি দিয়ে বললেন,
– ইদানিং এসব বিষয় নিয়ে কেনো যেনো আমার আর টেনশন হয়না।
– তা হবে কেনো?এখন তো সব ভাবনা চিন্তা ওদেরকে নিয়ে।আমিই শুধু এরকম,যতই টেনশন কমাতে চাই টেনশন আরো জেঁকে বসে।
উনি উঠে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– প্লিজ,এই অবস্থায় এইসব টেনশন বাদ দাও।আসো আমরাএকটু রোম্যান্স করি!
.
.
ইয়াশ স্কুল থেকে বাসায় ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেলো।দুপুরে আন্টির ফোন পেয়ে মলি আপু ইয়াশকে স্কুল থেকে সরাসরি বাড়িতে আঙ্কেলের সাথে দেখা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।সারাদিন আঙ্কেলের সাথে সময় কাটিয়ে আপুর সাথে সন্ধ্যের দিকে বাসায় ফিরলো।আপু ইয়াশকে বাসায় দিয়ে ইফাজের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিলেন কিন্তু উনি আটকালেন।যেতে দিলেন না মলি আপুকে!অনিম ভাইয়া এসেছিলেন সন্ধ্যের পর পরই।কিছুক্ষণ গল্প করেই চলে গেলেন।
.
রাতে আমি শুঁয়ে শুঁয়ে আপুর সাথে গল্প করছিলাম।উনি পাশে বসে লো ভলিউমে টিভি দেখছিলেন।ইয়াশ লক্ষী ছেলের মতো পড়ছিলো ঠিকই কিন্তু ভাইয়ের সাথে মারামারি মিস করছিলো না।উনিও কম না,টিভি অন করে এইটুকু একটা পিচ্চির সাথে মারামারিতে মেঁতে উঠেছেন।ফোনের ভাইব্রেশনে সাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করলাম।নাফিসা কল করেছে।নাফিসা প্রায় চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
– আপু,সর্বনাশ হয়ে গেছে!
আমি বসে বললাম,
– কি হয়েছে?
– তোমার শ্বাশুড়ি মনে হয় জেনে গিয়েছে তুমি যে এতোদিন ফ্লাটে ছিলে।
– মানে!জানলো কিভাবে?
– একটু আগে উনি আম্মুকে ফোন করে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করছিলেন।সেই ফাঁকে তোমাকে নিয়ে হয়তোবা কথা উঠেছিলো।লাষ্ট আম্মুর বলা “হিয়াকে কতবার আসতে বললাম,আপনাকে ছেড়ে আসতে চাচ্ছিলো না।”কথাটা শুনেই আমি দ্রুত রুমে এসে তোমাকে ফোন দিলাম।
আমি নাফিসাকে থামিয়ে বললাম,
– তুই জানলি কিভাবে কাল উনি আসছেন?
– মন বলছে রে আপু মন বলছে।
– ফোন রাখ তুই।
নাফিসা রাখলো না ফোন।বললো,
– মিথ্যা কখনো চাঁপা থাকে না আপু!
কথাটা শুনেই আমার বুক কেঁপে উঠলো।আমি দ্রুত ফোন কাটলাম।আপুর দিকে তাকাতেই আপু আমার হাত ধরে বললেন,
– কি হয়েছে?এরকম দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?
– কাল মা আসছে।
– what!!!
ইফাজ চিৎকার দিয়ে উঠলো!আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকালাম।মলি আপু বললেন,
– এতোদিন কেনো ধরা পরলে না?
– এতোদিন তো মা ভেবেছিলেন আমি আম্মুর সাথেই আছি,সেজন্য আম্মুকে ফোন না করে আমাকে ফোন করেই সবার খবর নিতেন।কিন্তু আজ?
– এখন কি হবে?ইশ্!এখন তো বোঝা যায়!কত্ত ফুঁলেছে!
আমি কিচ্ছু ভাবতে পারলাম না।শুঁয়ে পরলাম।উনি আমার কাছে এসে বললেন,
– এটা নিয়ে আবার সারারাত টেনশন করে শরীর খারাপ করো না।যা হবে কাল দেখা যাবে।
– ইফাজ ঠিকই বলেছে হিয়া।এখন টেনশন করে কোনো লাভ হবে না।
– বাবু আসার পর জানলে তখন একটা কথা ছিলো।খুব ভালোভাবে সবাইকে ম্যানেজ করতে পারতাম কিন্তু এখন কিভাবে?এই বুড়ো বয়সে সবগুলোর বোকা খেতে হবে।ছিঃ!ভাবা যায়!
– বাবু আসার পর কিভাবে ম্যানেজ করতি?
মলি আপু জিজ্ঞেস করলেন।উনি আয়েশ করে বসে বললেন,
– বুঝলি না?বাবুকে সবগুলোর কোলে দিয়ে বলতাম “নাও,তোমাদের নাতি-নাতনি!” নাতি-নাতনিদের দেখলে তখন আমাদের বোকা দেওয়ার কথা একেবারে ভুলে যেতো!
আমি বললাম,
– আমার শরীর খারাপ করছে খুব!
উনি রেগে গিয়ে বললেন,
– হিয়া?উফ্,এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারছি না।বারবার মানা করছি এইসব ফালতু টেনশন না নিতে,তবুও!
.
ইয়াশ কাছে আসতে চাচ্ছিলো কিন্তু ইফাজ আসতে দিচ্ছিলো না।”তোমার ভাবি অসুস্থ”বলে বার বার আটকাচ্ছিলেন।আমি হাত বাড়িয়ে ইয়াশকে কাছে ডাকতেই ইয়াশ লাফ দিয়ে ইফাজের কোল থেকে নেমে আমার পাশে এসে বসলো।আমি হাত মেলে দিলাম,ইয়াশ হাতের উপর শুঁয়ে আলতোভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।মলি আপু ইফাজকে বকাবকি করতে নিষেধ করলেন।আপু পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলানো শুরু করলো।

ভোর চারটায় প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।একটু নড়তেই শ্বাসকষ্টের কারন টের পেলাম।পেছন থেকে উনি আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন।মানুষটা এমন কেনো!!আমি প্রেগন্যান্ট জানা সত্ত্বেও সেই আগের নিয়মেই জড়িয়ে ধরে রাত পার করছেন!শক্ত করে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরে রাখা উনার ডানহাতটা সরিয়ে দিতেই উনি একটু নড়লেন।কিন্তু উঠলেন না।আমি জোরে জোরে কিছুক্ষণ শান্তির নিশ্বাস নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলাম।
সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে দেখলাম সেই এক অবস্থায়ই উনি শুঁয়ে আছেন।আমি উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ইয়াশের রুমে গেলাম।ইয়াশের আজ অফডে,নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।মলি আপুও এখনো উঠে নি।আজ সবার ঘুমের রোগ ধরলো নাকি?তুলিও এখন পর্যন্ত আসে নি।তুলিও নিশ্চিত ঘুমোচ্ছে।আমি ইয়াশের পাশে শুঁয়ে কপালে চুঁমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলাম।ততক্ষণে আপু উঠে পরেছেন।হাই তুলতে তুলতে বললেন,
– তুমি এখানে?
– মাত্র আসলাম।
– ইফাজ কই?
– ঘুমোচ্ছে।
আপু ভ্রুঁ কুচঁকালেন।
– ও ঘুমোচ্ছে তুমি এখানে কেনো?যাও ওর কাছে।
– ছিলাম তো।ভালো লাগছিলো না তাই একটু আসলাম।
আপু আর কিছু বললেন না।উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।পাশের রুম থেকে ইফাজের চিৎকার ভেসে এলো!
“হিয়া,টিয়া,হিয়াপাখি,টিয়াপাখি, বউ,ওগো” সব একসাথে বলে বলে ডাকছেন।মেজাজটা বিগড়ে গেলো!ডাকার নমুনা কি?আপু ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বললেন,
– যাও,ডাক পড়েছে।ইয়াশের কাছে আমি আছি।
– ডাকুক!
ইফাজ রুম থেকে চিৎকার করে বললেন,
– আম্মু ফোন করে জানালো আম্মু রওনা দিয়েছে,টিয়াপাখি!এখন কি করবে?
কথাটা শোনামাত্রই আমি দ্রুত উঠে বসলাম!আপু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
– তোমার ফেসটা আমাকে ধার দাও!আমি একদিনের জন্য ইফাজের হিয়া সাঁজি!আন্টি চলে যাওয়ার পর আবার নিয়ে নিও!
আমি অসহায়ভাবে আপুর দিকে তাকালাম।আপু হেসে আমার গাল টেনে বললেন,
– মজা করছিলাম ইফাজের টিয়াপাখি!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here