#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 69
.
.
আন্টি নয়টার দিকে বেল বাঁজালেন।তিনজন মিলে আন্টি আসার অপেক্ষায় ড্রইংরুমে বসে ছিলাম।আমি তো দোয়া দরূদ পড়তে পড়তে প্রায় মরে যাই যাই অবস্থা।ইফাজ একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।ইয়াশ আপুর কোলে চুপচাপ বসে ছিলো।বেলের শব্দে উনি আমাকে ছেড়ে মেইনডোর খুলতে চলে গেলেন।সেই ফাঁকে আমি দ্রুত রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।আপু আমাকে আটকাতে যেয়েও পারলো না।বেডের উপর চুপচাপ পা তুলে বসে পরলাম।কিছুক্ষণ পরই দরজায় নক করা শুরু হলো।আন্টির কন্ঠ ভেসে আসছে বাহির থেকে।
– হিয়া।
– হিয়া,দরজা খোলো।আম্মু দাড়িয়ে আছে।
– ভাবি!
– হিয়া আন্টি দাড়িয়ে আছে।দরজা খোলো।
একে একে সবাই ডাকলো।এদিকে আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি।দরজায় প্রকট জোরে একটা আওয়াজ হলো।এটা নিশ্চিত ইফাজের কাজ।আমি তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে দরজা কাছে গিয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দরজা খুললাম।দরজা খুলেই আমি হাঁ হয়ে গেলাম।ইফাজ আন্টির চোখ ধরে রেখেছেন।মলি আপু অধির আগ্রহে কিছু একটা দেখার অপেক্ষায় আছেন।ইয়াশ দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে আমার পাশে দাড়ালো।উনি আন্টিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে বললেন,
– আম্মু এইমুহূর্তে তুমি যেটা দেখবে সেটা দেখে তুমি মোটেও চিৎকার করবে না।ওকে?
আন্টি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।এদিকে আমার অবস্থা ধীরে ধীরে করুন হচ্ছে।উনি হাত না সড়িয়ে আন্টির কানের কাছে আবার বললেন,
– আম্মু তুমি কিন্তু প্রমিস করেছো….বোকাঝোকা করবে না।
– আচ্ছা বাবা!বললাম তো।
– আম্মু প্রমিস কিন্তু করেছো?
– উফ্!বললাম তো বকবো না।
ইফাজ কি যেনো পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে কাউন্ট করা শুরু করলেন!
– ওকে!ওয়ান…টু…থ্রি…ফোর…ফাইভ..
উনি হাত সড়িয়ে নিলেন।আন্টির চোখ সরাসরি আমার উপর পড়ে দ্রুতই দৃষ্টি পেটের দিকে চলে গেলো!আন্টি “ইন্নালিল্লাহ্!” বলে মুখে হাত চেঁপে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলেন!উনি আন্টিকে পেছন থেকে শক্ত করে ধরে বললেন,
– আম্মু প্লিজ….
– …..
আন্টি স্তব্ধ!মুখে হাত দিয়ে রোবটের মতো দাড়িয়ে আছেন!
– শক্ত হও!তোমার বউমার অবস্থা দেখো,তোমার ভয়ে ঘেঁমে একাকার!
– What is this,Efaaz!!!
আন্টির গলা কাঁপছে!
– আম্মু এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে!সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি এই অবস্থা!আমার কিচ্ছু করার ছিলো না তখন!সিরিয়াসলি!
– থাপ্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো,বেয়াদব ছেলে!সাহস কতবড়!আবার মজা করছে!এই অসভ্য ছেলে,এটা একদিনের জিনিস!!
– সরি আম্মু!
– বেয়াদব!সকালে তুমি এই সারপ্রাইজের কথা বলছিলে?হায়!হায়!মেয়েটার একি অবস্থা হয়েছে!একা একা এতোদিন কিভাবে সম্ভব!
মলি আপু আন্টির হাত ধরে বললেন,
– আন্টি,বেচারী আপনার টেনশনে এতক্ষণ মরে যাচ্ছিলো।প্রবলেম হবে ওর।একটু নরমাল হোন।
– এটা দেখার পরও তুমি আমাকে নরমাল থাকতে বলছো?
– আন্টি ছোট মানুষ!ভুল করে হয়ে গিয়েছে!
– কিহ্!!!ছোট মানুষ?এগুলো ছোট মানুষের কাজ?
আন্টি খুব জোরে জোরে চিৎকার করে কথা বলছেন।রাগে দাঁতে দাঁত চেঁপে আবার বললেন,
– ok!মানলাম হিয়া ছোট,কিন্তু ইফাজ?ইয়াশ খেলার ছঁলে মাঝে মাঝেই বলতো ভাবির পেটে ফুটবল ঢুকে গেছে।ছোট মানুষ বলে তেমন গুরত্ব দিতাম না।বাট এটা কোন ফুটবল ঢুকেছে!!!
– সব দোষ এই ইফাজ অসভ্যটার,আন্টি!ওকে মেরে….
আন্টি হাত উঠিয়ে আপুকে থামিয়ে দিলেন।উনার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।কাছে গিয়ে বললেন,
– কয়মাস?
উনি মাথা নিচু করে বললেন,
– সামনের ২৮তারিখে ডেলিভারি ডেট!
আন্টি উনার কলার ধরে কঠিন ভাষায় কয়েকটা গালি দিয়ে কটমট করে বললেন,
– এখনো যে আমাকে বলিস নি,ওর যদি কিছু হয়ে যেতো তখন আমি সবাইকে কি জবাব দিতাম?ভাবতে পারছিস এখন জানাজানি হলে কি বিচ্ছিরি কান্ড হবে?ছিঃ ছিঃ!এ আমি কাকে পেটে ধরেছি?
উনি গর্বিত কন্ঠে মাথা তুলে বললেন,
– উনাদের কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই!এই কয়েকটা দিন তুমি একাই একটু ম্যানেজ করো,প্লিজ!
– চুপ!একদম চুপ!সাহস কতবড়!আবার মুখে মুখে কথা বলছে।চূড়ান্ত পর্যায়ের সাহস বেড়েছে তোমার,তাইনা?এটা হেলাফেলা করার জিনিস?
আন্টি খুব লাউডে চিৎকার করছেন।যেটা আমার কানের পর্দায় প্রচন্ড বেঁগে আঘাত হেঁনে চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।মাথা ভঁন ভঁন করছে।আন্টি ধপাস্ করে বিছানায় বসে পরলেন।ঠোঁট কামড়াচ্ছেন।ইয়াশ আন্টির চিৎকারে সেই যে একবার আমার পেছনে লুকিয়ে পরেছে,আর বের হওয়ার নাম নেই।আন্টি হ্যান্ডপার্স থেকে ফোন বের করছিলেন,ইফাজ খোঁপ করে আন্টির হাত ধরে বললেন,
– আম্মু,প্লিজ!কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই।আর কয়েকটা দিনই তো,একাই একটু ম্যানেজ করো,প্লিজ!এখন জানালে সবাই তোমার মতো চেঁচামেঁচি শুরু করবে।বাট বেবিরা হওয়ার পর জানালে তখন নাতি-নাতনিদের নিয়েই পড়ে থাকবে।আমাদের কথা ভুলে যাবে।
– আমার সামনে থেকে সরে যা বেয়াদব!
– আম্মু প্লিজ!
– মলি,হিয়ার কাপড়-চোপড় সব গুঁছিয়ে দাও!
আমি কাছে গিয়ে হাত ধরে বললাম,
– মা!
আন্টি কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতে যেয়েও মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন।আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো?ওর কাপড়-চোপড় গুঁছাতে বললাম না?যাও..
আপু দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– মা!
– এইমুহূর্তে কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।
– মা,প্লিজ বাবাকে বলিয়েন না।
– তোমার বাবাকে বলবো মানে বলবোই এন্ড সেটা এক্ষুনি।
আন্টি আঙ্কেলের নাম্বারে ডায়াল করলেন!কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্টি বললেন,
– যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইফাজের ফ্লাটে চলে আসো।
– ….
– কেলেঙ্কারি হয়ে গিয়েছে!ফোনে এতো কিছু বলা সম্ভব না।রাখলাম।
– …
– তোমার গুনধর ছেলে বাবা হচ্ছে!আসার সময় পারলে দশকেজি মিষ্টি কিনে এনো।তোমার ছেলে আর ছেলের বউকে খাওয়াতে হবে তো।কত বড় খুশির খবর!
– ….
– ইয়েস!তোমার হিয়া মা প্রেগন্যান্ট!
– ….
– মাস জিজ্ঞেস করছো তুমি?সামনের ২৮তারিখে তুমি নানাভাই হতে চলেছো!
– ……
– হ্যা!তোমার ছেলের দেখা-সাক্ষাৎ কমে যাওয়ার কারন এটাই!
– …..
– আমারও মাথা কাজ করছে না।এইমুহূর্তে উনাদের না জানানোই বেটার।
আন্টির বলা শেষ কথাটা শুনে মনে মনে আমি ভীষন জোরে একটা আনন্দের চিৎকার দিলাম!অবশেষে আন্টি ইফাজের কথাটা মাথায় ঢুকিয়েছেন!উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বুঝালেন “এসো,দুজন মিলে নাঁচি!”
আন্টি বারবার আঙ্কেলকে বলছেন “আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আসো,রাখছি!”
কিন্তু আদৌও তিনি রাখার নাম নিচ্ছেন না।আন্টি ধঁমক দিয়ে বললেন,
– রাখবে তুমি?
– …
– আমি জানি নাকি?তোমার পুত্রই ভালো জানে।
– ….
– অসহ্য!সব তো ফোনেই শুনে নিচ্ছো!তোমার কথাবার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে তুমি খুব খুশী হয়েছো!ব্যাপার কি?
– ….
– বাহ্!ছেলে বাবা হবে এতে দুঃখ পাওয়ার কি আছে,ভালোই বলেছো!
– …..
– এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।সবদিক বিবেচনা করে কথা বলো,শুধু একটাদিক ভাবলেই তো হবে না!
– ….
হঠাৎ আন্টি হোঁ হোঁ করে হেসে উঠলেন!ওয়াও!আমাদের দুজনের জন্য প্লাস পয়েন্ট!আন্টির মাথা তারমানে ঠান্ডা হয়েছে!আমরা দুজন মুঁচকি হেসে দুজনের দিকে তাকালাম!
.
কিছুক্ষনের মধ্যেই আঙ্কেল ফ্লাটে চলে এলেন।রুমে ঢুকেই আগে ইফাজের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
– কনগ্রাচুলেশন,হ্যান্ডসাম!
উনি হেসে আঙ্কেলকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– খুশি হয়েছো তুমি?
– অফকোর্স!সেটা আর বলতে!তোমার মা কোথায়?
– ওয়াশরুমে!
– ওহ্!
আঙ্কেল উনাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।আমি সালাম দিতেই আঙ্কেল মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– এই না হলে আমার মা!খুব খুশি হয়েছি!
আমি আঙ্কেলের কথা শুনে হাঁ হয়ে গেলাম।উনিই এই বিষয়ে বেশি কড়া ছিলেন,আজ কিনা উনি নিজেই বলছেন খুব খুশি হয়েছেন!!এতো ভালো কেনো সবাই?একেবারে ইফাজের মতো।প্রথমে উনিও তো “না!না!” করে যখন জানতে পারলেন তখন কত্ত খুশি হয়েছিলেন,আঙ্কেলও সেইম!ইফাজ অবশ্য বোকাঝোঁকা করেছিলো একটু বাট আঙ্কেল সেটার ধারের কাছেও যান নি!
আঙ্কেল বললেন,
– তোমার মা’র কথামতো বিশকেজি মিষ্টি কিনে এনেছি!খাবে চলো!
আমি বললাম,
– বাবা,মা’তো দশকেজি আনতে বলেছিলেন।
– তাই নাকি?দেখেছো,
বেশি এক্সাইটমেন্টের জন্য সব ভুলে গিয়েছি!প্রবলেম নেই আমি একাই দশকেজি শেষ করতে পারবো!যেই খবর দিলে আজ!
.
.
(চলবে)