real love পর্ব ৯,১০

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 9+10
.
.
উনি আমাকে আগের থেকেও আরো বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন”আই লাভ ইউ,বউ!”
হঠাৎ উনার মুখে বউ ডাকটা শুনে আমার পুরো শরীর আবেশে ছেয়ে গেলো।কথাটা উনি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন।এই মুহূর্তে উনাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এই কাজটা এই মুহূর্তে আমি করলে উনি নির্ঘাত আমাকে আর ছাড়বেন না।আজ আর আমার যাওয়া হবে না।তাই আমি চুপচাপ উনারটাই উপভোগ করলাম।
হঠাৎ উনি আমার গলায় উনার খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা গাল দিয়ে স্লাইড করতে শুরু করলেন!হঠাৎ এরকম করাতে আমার সারা শরীর কেপেঁ উঠলো!নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে!গলা কাপঁছে!পুরো শরীরের লোমগুলো দাড়িয়ে পড়ছে!
উনাকে বলতেও পারছি না”প্লিজ,ছাড়ুন!আমি মরে যাচ্ছি!”
আমি চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে আস্তে করে উনার বুকে ধাক্কা দিলাম।এমনভাবে ধাক্কা দিলাম মনে হলো পিপঁড়াকে আঙুল দিয়ে টোকা দিলাম।উনি হয়তোবা টেরই পাননি আমি যে উনাকে ধাক্কা দিলাম।
উনি আমার ঘাড়ে মুখ রেখেই বললেন,
– ড্রাইভার আঙ্কেলকে সাথে আনলেই ভালো হতো।আমি যে আজ ড্রাইভিং করতে পারবো না।এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।
উনি কথাগুলো আমার গলায় ঠোটঁ লাগিয়ে রেখেই বললেন।উনার ঠোটেঁর স্পর্শে পুরো শরীর শিহরিত হলো।আজ প্রথম আমার শরীরের কোনো একটা অংশ উনার ঠোঁটের স্পর্শ পেলো!কি অদ্ভুত ফিলিংস!এক একটা স্পর্শে পুরো শরীর কেপেঁ কেপেঁ উঠলো!
.
উনি আমার গলা থেকে মুখ উঠিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমার কপালের সাথে উনার কপাল লাগিয়ে,নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বললেন,
– সারপ্রাইজটার ডোজ একেবারে হাই লেভেলের ছিলো।এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছি না।
কথাটা উনি এমনভাবে বললেন,মনে হচ্ছে একটু আগে নেশা করে এসেছেন!
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় আস্তে করে বললাম,
– প্লিজ,এখন ছাড়ুন!অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে।
উনি দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললেন,
– হুম!…..বলেই আমাকে ছেড়ে উনি উনার সিটের সাথে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ চোঁখ বন্ধ করে রাখলেন।
উনি যতক্ষণ চোঁখ বন্ধ করে ছিলেন ততক্ষণই আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।ফর্সা গাল তার উপর খোঁচা খোঁচা দাড়ি!একসাইড থেকে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছিলো!
.
উনি চোখ খোলার সাথে সাথেই আমি অন্যদিকে তাকালাম।
হঠাৎ আমার ডানহাতটা শক্ত করে ধরে হাতের উল্টোপাশে একটা চুমো খেলেন।তারপর হাতের তালুতে আরেকটা চুমো খেলেন।আমি তো উনার কান্ড দেখে অবাক!
কিছুক্ষণ পর আমার কোলের মধ্যে যত্ন করে আলতোভাবে আমার হাতটা রাখলেন।আমার সিটবেল্টটা পরিয়ে দিয়ে নিজে সিটবেল্ট পরে গাড়ি স্টার্স্ট দিলেন।
আমি নিজের শাড়ির আচঁল নিয়ে খেলছি আর আনমনে বাহিরে তাকিয়ে আছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে মেইন রোডে আসলাম।
কিছুক্ষন পর পরই উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন।আমি বাহিরে তাকিয়ে থাকলেও উনাকে ঠিকই দেখতে পাচ্ছিলাম।
.
– বউ!
হঠাৎ উনি আমাকে বউ বলে ডাকলেন।
“বউ”ডাকটা শুনেই আমি চমকে উঠলাম!অদ্ভুত কন্ঠে তিনি ডাকলেন।সেই নেশা নেশা কন্ঠ!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম!
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে সামনে তাকিয়ে বললেন,
– জানো?একটা জিনিস যে আমাদের মধ্যে মিসিং?
আমি আমাকে আর উনাকে ভালোভাবে দেখে বললাম,
– কি?
উনি আমার পেটে উনার বামহাতটা রেখে বললেন,
– আমাদের বেবি!
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় নিচের দিকে তাকালাম।
একদিকে উনার হাত আমার পেটে,অন্যদিকে উনার মুখে বেবিদের কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যায় যায় অবস্থা।
আমি কম্পিত কন্ঠে আস্তে করে উত্তর দিলাম,
– আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি।আপাতত কোনোকিছু মিসিং নেই।
উনি দুষ্টু হাসি হেসে বললেন,
– আমি ওটা মিন করিনি।
আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– তাহলে?
– তুমি এখন যেভাবে শাড়ি পরা অবস্থায় বসে আছো তোমাকে পুরো বউ বউ লাগছে।যাস্ট তোমার কোলে যদি আমাদের একটা ছোট্টবাবু থাকতো তাহলে তোমাকে একদম পারফেক্ট লাগতো।
উনার কথা শুনে লজ্জায় না পারছি উনার দিকে তাকাতে আর না পারছি উনাকে চুপ করতে।
.
উনি আবার বললেন,
– তোমার দিকে ফার্স্ট যেদিন তাকিয়েছিলাম তুমিও সেদিন আমার দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে।উফ্!কি অদ্ভুত ছিলো তোমার সেই চোখ ফিরিয়ে নেয়াটা!নেক্সট্ টাইম একটাবারের জন্যও তাকাও নি।যেই জিনিসটা আমার সবথেকে বেশি ভালো লেগেছিলো।কারন অন্যসব মেয়েগুলো যখন আমার দিকে তাকাতো ওরা বারবার তাকাতো।যেই জিনিসটা তুমি করোনি।
উনার কথাগুলো আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম।আমি কোনো কথা না বলে বাহিরে তাকালাম।
.
প্রায় ছয়ঘন্টা একটানা ড্রাইভ করার পর উনি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালেন।
উনি নিজে গাড়ি থেকে নেমে আমার সাইডের দরজা খুলে আমাকে হাত ধরে নামালেন।রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে চারপাশে একবার চোখ বুলালাম।অদ্ভুত একটা নিরবতা বিরাজ করছে রেস্টুরেন্টের মধ্যে।নিভু নিভু লাইটিং।সামান্য দূরের একটা টেবিলে এক জোড়া কাঁপল বসেছিলো।উনি আমার হাত ধরে সাইডের কোর্ণারের টেবিলে নিয়ে গেলো।যেখানে ডিস্টার্ব করার কোনো অপশন নেই।কিছুক্ষণ পর ওয়েটার এসে অর্ডার নিয়ে গেলো।আমি দেয়ালের পাশে বসে আছি।উনি আমার ডানপাশে বসে আছেন।দেয়ালের সাথে অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত পিকচার লাগানো ছিলো।হালকা আলোতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো।আমি হাতের কনুই টেবিলের উপর রেখে থুতনী হাতের উল্টোপাশে ভর করে পিকচারগুলো দেখছিলাম।
হঠাৎ আমার বামসাইডের কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়েই চমকে উঠলাম।এটা আর কারোর স্পর্শ নয়।উনার হাতের স্পর্শ।আমি দ্রুত টেবিল থেকে হাত নামিয়ে শাড়ির উপর দিয়ে উনার হাতের উপর আমার হাত রাখলাম।পুরো শরীর কাপছেঁ আমার।আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উপরে উঠিয়ে ইশারায় বললেন “কি হয়েছে?”
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আস্তে করে বললাম,
– সুড়ঁসুড়িঁ লাগছে।ছাড়ুন।
উনার স্পর্শে আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না!বুকের ভেতর কাপঁছিলো!
উনি আমার কথা শুনে আগের থেকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে উনার একদম কাছে নিয়ে গেলেন।তারপর বললেন,
– এখন লাগছে সুড়ঁসুড়িঁ?
আমি মাথা নাড়িয়ে “না” বললাম।
.
হঠাৎ ওয়েটারকে এদিকে আসতে দেখে আমি সামান্য সড়তে নিলে উনি আরো শক্ত করে উনার সাথে চেপে ধরেন।উনার এরকম কান্ড দেখে আমি অবাক হচ্ছি।আমার নিশ্বাস আটকে আসছে!
আমি উনাকে আস্তে করে বললাম,
– ছাড়ুন,এদিকেই আসছে!
– তো?
আমি আর কোনো কথা না বলে আমার শাড়ি দিয়ে আমার কোমড়ের উপর রাখা উনার হাতটা ঢেকে দিলাম।উনি আমার এরকম কান্ড দেখে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে হেসে ওয়েটারকে বিদায় দিলো।
.
উনি আমার সামনে খাবার দিলেন।আমি চামচটা ঠিকমতো ধরতেও পারছি না।আমার হাত প্রচন্ড কাঁপছে।
হঠাৎ উনি আমার হাত থেকে চামচটা নিয়ে বললেন,
– আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
আমি কোনো কথা না বলে উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিউট করে একটা হাসি দিয়ে আমার কপালে চুমো খেলেন।উনার চুমো খাওয়া দেখে আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম।উনি আবার হাসলেন।
তারপর খাবার আমার মুখের সামনে নিয়ে বললেন,
– নাও,হা করো।
আমি হা করলাম।
এভাবে উনি একবার আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।আবার নিজে খাচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর আমি বললাম,
– আর খাবোনা।
আমার কথা শুনে উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এভাবে খাও দেখেই তো শরীরের এই অবস্থা।নাও হা করো।
– পেট ভরে গেছে।আপনি খান।
আমার কথা শুনে হঠাৎ উনি আমার পেটে হাত দিয়ে স্লাইড করে বললো,
– কই!এখনও তো খালি।
হঠাৎ উনার এরকম স্পর্শে আমার পেটসহ সারা শরীর কেপেঁ উঠলো।আমি কিচ্ছু বলতে পারলাম না!চোখ দুটো খুলে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।ইচ্ছে করছিলো চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের সুখের রাজ্যে হারিয়ে যায়।

Part:10
.
আমি চুপচাপ বসে আছি।উনি নিরালায় সব খাবার সাবাড় করে দিচ্ছেন।উনারটা সহ আমারটা খাচ্ছেন।পেটের মধ্যে এতো জায়গা থাকে কই!উনার তো ভুড়িও নেই।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিঙ্গেস করলাম,
– আপনার ওয়েট কত?
আমার কথাটা শুনে উনি ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– 86।কেনো?
আমি অবাক হয়ে উনাকে জিঙ্গেস করলাম,
– এতো বেশি!
– কোথায় বেশি?একদম পারফেক্ট।যারা লম্বা বেশি তাদের ওয়েটও বেশি হয়।আর একজন পুরুষ মানুষের ওয়েট বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
.
উনি আবার আগের ন্যায় খেতে খেতে আমাকে জিঙ্গেস করলেন,
– তোমার কত?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম,
– 46…
আমার কথা শুনে উনি চমকে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– What!seriously?
– হুম।
উনি হঠাৎ আমার মুখের সামনে খাবার ধরে বললেন,
– দেখি হা করো।
উনার কান্ড দেখে আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– প্লিজ!আপনি খান,আমি খাবো না।
– মাইর দিবো একটা।খেলেই কি মানুষ মোটা হয়ে যায় নাকি?আর শরীরের পুষ্টি বলেও তো একটা ব্যাপার আছে।কই,আমি এতো খাই তারপরও তো মোটা হই না।
– আপনি তো জিম করেন।
– তো?তুমিও করবা।
– ছিঃ!আমাকে কেমন দেখাবে আপনি ভাবতে পারছেন?
– যথেষ্ট ভালো দেখাবে।
– ধ্যাৎ!আমি বাসায় যাবো।আপনি তাড়াতাড়ি শেষ করুন।
– তোমাকে বিয়েটা করি।তারপর দেখবো তুমি স্লিম থাকো কিভাবে!
.
উনার কথাটা শুনে আমার হেচঁকি উঠলো।উনি পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
– গলা শুকিয়ে গেলো নাকি কথাটা শুনে?
আমি পানিটা খেয়ে উঠে দাড়ালাম।উনি আমার কোমড় ধরে আবার বসিয়ে দিলেন।তারপর বললেন,
– টাইম লাগবে না।অলরেডি কমপ্লিট খাওয়া।
আমি অসহায়ের মত অন্যদিকে ফিরে বসে রইলাম।
.
.
উনি আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজে গাড়িতে বসলেন।
.
আমি সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম।উনি এভাবে আমাকে দেখে জিঙ্গেস করলেন,
– ঘুম পাচ্ছে?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম।
– ওকে,আমি আস্তে ড্রাইভ করছি।
আমি উনার কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বললাম,
– না না।দরকার নেই।এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে।
– চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরো।
– আমার ঘুম চলে গেছে।আপনি তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করুন।
– ওকে।আমি তাড়াতাড়ি করছি।বাট তোমার ঘুম পেলে ঘুমোতে পারো।প্রবলেম নেই।
আমি “হুম” বলে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকালাম।
.
হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো।আমি ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলাম নাফিসা ফোন করেছে।
আমি রিসিভ করে বললাম,
– হুম,বল।
– এখনও রাস্তায়?
– হুম।জানিসই তো কত দূর।
– আম্মু বার বার ফোন করতে বলছিলো।তাই করলাম।
– আমি পৌছালে ফোন করে জানাবো।এখন রাখি।
– আচ্ছা।বাই।
.
আমি ফোনটা রাখতে নিয়েও রাখলাম না।শিফাপুকে ফোন দিলাম।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ধরলো।
আমি বললাম,
– হ্যালো আপু….
– হুম,কেমন আছিস?
– ভালো।শুনো না,আমি কিন্তু আজ আসছি।তোমরা দাদুর বাসায় আজ রাতে আমার জন্য ওয়েট করবা।আমি বারোটার মধ্যেই চলে আসবো।
আমার হঠাৎ এভাবে আসার কথা শুনে আপু নিশ্চয় অবাক হয়েছে।আপু অবাক কন্ঠেই বললো,
– মানে?হঠাৎ এভাবে?তোর কলেজও তো মনে হয় খোলা।আর চাচ্চুও…..
আমি আপুকে থামিয়ে বললাম,
– আমি একা আসছি উনার সাথে।আমাকে রাতে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে উনি চলে যাবে।
– উনি মানে,ইফাজ?
– হুম।এখন আর কিছু জিঙ্গেস করো না।রাখছি।
– আচ্ছা, দেখেশুনে আছিস।
আমি কল কেটে ফোনটা রেখে দিয়ে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম।
উনি বললেন,
– সরাসরি তুমি ওই বাসায় যাবে এখন?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম।
– আমার তো তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্লান ছিলো।
– কাল সকাল সকাল আপনি এসে আমাকে নিয়ে যাবেন।তখন যেয়ে বাবুকে দেখে আসবো।
উনি আমার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
– ওকে।
.
আমার এবার সত্যি ঘুম পাচ্ছে।আমি সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
.
হঠাৎ আমার মনে হচ্ছে আমাকে কেউ উপরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।চোখ খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারছি না।তবুও চেষ্টা করেই গেলাম।আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।আবছা আবছা দৃষ্টিতে দেখলাম উপরে আকাশ।একটা চাঁদও আছে দেখছি।জোছনায় চারপাশের সবকিছু দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ ইফাজকে দেখতে পেলাম আমার মুখের উপর।হালকা হালকা দেখতে পেলাম উনি সামনে আগাচ্ছেন কিন্তু আমি উনার সামনে সামনে ভেসে বেরাচ্ছি।আমি চোখটা আবার বন্ধ করে এক ঝটকায় খুলে ফেললাম।ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– কি?ম্যাডামের ঘুম ভেঙ্গেছে?
– আমি কই?এভাবে ভাসছি কেনো আমি?
– হেই পাগলি!ভাসছো কোথায়?তোমাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।আমরা চলে এসেছি।
.
আমি অবাক হয়ে চারপাশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলাম।হঠাৎ উনি আমাকে ফেলে দেওয়ার ভান করে খোপ করে ধরে ফেললেন।
ভয়ে আমি চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।উনি আমার কপালে ছোট্ট করে এক কিস করে বললেন,
– কি টিয়াপাখি! ভয় পেয়েছো?
আমি চোখ খুলে মাথা নাড়িয়ে “হুম” বললাম।
উনি আমাকে শক্ত করে উনার বুকের গভীরে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– এতোই সহজ!এই বুক থেকে পড়ে যাওয়া!
উনার কথা শুনে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।উনার দিকে একবার তাকালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিউট একটা হাসি দিলেন।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– গাড়িটা এ্যাপার্টমেন্ট পর্যন্ত নিয়ে আসলেই পারতেন।শুধু শুধু আমাকে…..
– একদম চুপ!
উনার ধমক শুনে আমি আর কথা বাড়ালাম না।আস্তে করে উনার বুকে মাথা রেখে গভীরভাবে চোখ বন্ধ করলাম।খুব যত্ন করে আগলে রেখেছেন উনার বুকে।ইস্!এই বুক থেকে যদি আর উঠতে না হতো!
.
হঠাৎ আমার মনে হলো আমি উপরে ভেসে যাচ্ছি।কিছুক্ষণ নিরব থাকলাম।হ্যা!এবার সত্যি সত্যি ভাসছি!
আচমোকা চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম।তারপর চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আমি লিফ্টের মধ্যে!
.
ওহ!লিফ্ট উপরে উঠছে।আমি ভাবলাম আমি হাওয়ায় ভাসছি।
.
দাদুর বাসার সামনে যেয়ে উনি মাত্রই কলিংবেল চাপ দিবে।সাথে সাথেই আমি খোপ করে উনার হাত ধরে ফেলি।তারপর আস্তে করে বললাম,
– করছেন কি?আমাকে আগে কোল থেকে নামান।
আমার কথা শুনে উনি আমাকে একটু উপরে তুলে আমার নাকের সাথে নাক ঘষে বললেন,
– ওহ্ সরি!একদম ভুলে গিয়েছি!
.
উনার কান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে উনার কোল থেকে নামার চেষ্টা করলাম।
আমার এরকম তাড়াহুড়ো দেখে উনি বললেন,
– রিলেক্স!নামাচ্ছি তো।
.
উনার কোল থেকে নামার পর কলিংবেল বাজালাম।কিছুক্ষণ পর আপু চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুললো।আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললো,
– তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
– সরি আপু,তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম।
– ধুর পাগলি!
আপু আমাকে ছেড়ে দিয়ে ইফাজকে বললো,
– বাহিরে দাড়িয়ে আছেন কেনো ভাইয়া? ভেতরে আসেন।
ইফাজ মাথার চুল ঝাকিয়ে বললো,
– এখনই আমাকে বাসায় যেতে হবে।অলরেডি সাড়ে বারোটা বেজে গেছে।কাল তো এমনিতেই আসবো ওকে নিতে।তখন যা করার করো।আসছি।
.
উনার কথা শুনে আমি অবাক হলাম!এতো রাত হয়ে গেছে!রেস্টুরেন্ট থেকে সাড়ে নয়টার দিকে গাড়িতে উঠেছিলাম।এখন বাজে সাড়ে বারোটা।তারমানে পাক্কা তিন ঘন্টা আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম অথচ উনি একটাবারের জন্যও ডাকেন নি!
.
আমি উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললেন “কি?”
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
.
হঠাৎ আপু আমাকে রেখেই ভেতরে গেলো।যাওয়ার সময় বলে গেলো “বিদায় দিয়ে আয়”।
আমি তো আপুর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।আমি আপুর কথামতো চুপচাপ উনাকে বললাম,
– দেখাশুনে যাবেন।আর যাওয়ার পর ফোন করে জানাবেন।
উনাকে কথাটা বলেই আমি ভেতরে ঢুকতে যাবো সেই মুহূর্তে উনি আচমোকা আমার হাত ধরে টান দিয়ে উনার বুকের সাথে একদম মিশিয়ে ফেললেন।
.
উনার কান্ড দেখে ভয়ে আমি চিৎকার দিতে যেয়েও দেয় নি।ওহ্ মাই গড!এই মুহূর্তে যদি আপু থাকতো কি হতো!
.
উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,
– তোমার আপু আমাদের প্রাইভেসি দিয়ে গেলো এমনি এমনি!
.
উনার কথাটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। এই কারনে তখন ওই কথাটা বলে ওভাবে চলে গেলো আপু!
.
উনি আমার পিঠে স্লাইড করতে করতে বললো,
– কাল তাহলে দেখা হচ্ছে?এখন যেতে হবে।
উনার কথা শুনে আমি উনার বুক থেকে মাথা তুলে ” হুম” বললাম।
তারপর আমি নিজেই উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
– আর লেট করা চলবে না।অনেক রাত হয়ে গেছে।এখন রওনা দিন।আর বাসায় পৌছানোর পর ফোন দিবেন কিন্তু।
.
আমার কথা শুনে উনি আমার গাল ধরে কপালে একটা চুমো দিয়ে বললো,
– ওকে।
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here