real love পর্ব ৬

#Real_Love♥
#Oniya_chowdhury
Part: 06
.
.
কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছিলাম সাত দিনের।কিন্তু ছুটি কাটিয়েছি নয়দিনের।আমার কপালে যে শনি আছে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
.
চিটাগং আসার পর এক মুহূর্তের জন্যও আব্বু রেস্ট নিতে দেই নি।একটার দিকে চিটাগাং পৌছালাম।ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিয়ে উঠতে উঠতেই চারটা বেজে গেলো।পাচঁটায় আমার ইকোনোমিক্স কোচিং ছিলো।একটা দিন না গেলে কি এমন ক্ষতি হতো।আব্বু জোর করে কোচিং এ পাঠালো।কোচিং থেকে বাসায় এসেও শান্তি পেলাম না।আম্মু বললো সাতটার দিকে তোর ইংলিশ স্যার আসবে।কথাটা শুনেই আমি তো আম্মুর সাথে পুরো ঝগড়া লাগিয়ে দিলাম।পেয়েছে কি এরা!আমি কি মানুষ না!কিন্তু ঝগড়া বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।আম্মু জানালো আব্বু নাকি স্যারকে ফোন করে আসতে বলেছে।
.
ইফাজ আর আংকেল আজ সকালে দেশে আসছে।আমি আগামিকাল চিটাগাং আসতে চেয়েছিলাম।তাহলে আজ উনার সাথে দেখা করতে পারতাম। উনি যেদিন দেশে ফিরবে সেদিন আমার শাড়ী পরে উনার সাথে দেখা করার কথা ছিলো।কথাটা রাখতে পারি নি।আব্বুকে ইফাজের সাথে দেখা করার ব্যাপারটা সিক্রেট রেখে অন্য সবভাবে বুঝিয়েও কাজ হয়নি।আব্বুর একটাই কথা”অনেকদিন আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটিয়েছো।এখন পড়াশোনায় মন দাও।”
.
উনি এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ীতে উঠেই সরাসরি আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলেছিলো।কিন্তু আমি যখন জানালাম আমি গাড়ীতে চিটাগাং চলে যাচ্ছি।তখন উনি শুধু বলেছিলো”এভাবে আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছো তো,করাও।সময় আমারও আসবে।সব শোধ করে নিবো।তখন তোমার কোনো মানা শুনবো না।”উনার এই কথাটা শোনার পর উনার সাথে দেখা করার ইচ্ছাটাও ভয়ে চলে গেছে।কারন উনি কি কি করার ক্ষমতা রাখে সেটা এই কয়েকদিনে উনার কথার মাধ্যমেই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
.
আমি আর নাফিসা ইংলিশ স্যারের অপেক্ষায় আছি আর বসে বসে গল্প করছি।সাতটা বাজার আরো এগারো মিনিট বাকি।সেই মুহূর্তে উনার ফোন আসলো।পাশ থেকে নাফিসা বললো,
– কে রে?
– উনি।
নাফিসা ঢং করে বললো,
– ও আচ্ছা।
তারপর বললো,
– দেখি দে তো আমি কথা বলব।
– একদম না।
আমি মাত্রই উঠে বেলকনিতে যাবো সেই মুহূর্তে ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।
.
রিসিভ করে গলার স্বর কিছুটা আমার মতো করে বললো,
– হ্যালো।
ওর কান্ড দেখে আমি হাসছি কারন আমি ফোন রিসিভ করেই ফার্স্টে সালাম দেই যেটা ও করে নি।
.
ওপাশ থেকে উনি কি বললো শুনতে পেলাম না।
নাফিসা বললো,
– স্যরি,আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছো?
ওর সালাম দেওয়া শুনে আমি হাসলাম।ইফাজ তারমানে ধরতে পেরেছে সালামের ব্যাপারটা।কিন্তু নাফিসার বলা”কেমন আছো”শুনে আমার তো মাথায় হাত।আমি সবসময় উনাকে আপনি বলে সম্বোধন করি।
.
ইফাজ কি বুঝতে পারছে না এটা যে আমি না?আমি নাফিসাকে ফোনের ভলিউমটা বাড়াতে বললাম।ও তাই করলো।
.
– ভালো আছি।তুমি কেমন আছো জানু?
হায় হায়!উনি কি টের পেয়েই মজা করে জানু বললো নাকি সত্যি সত্যি!নাফিসা আমার দিকে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।আমি নাফিসার হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও এমনভাবে ফোনটা ধরে রেখেছে যে আমার ফোন ভাঙবে কিন্তু ও ছাড়বে না।বাধ্য হয়ে চুপচাপ তাদের প্রেমের আলাপন শুনলাম।
.
নাফিসা বললো,
– এইতো জান ভালো।
ছিঃ আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।নাফিসাও জান বললো।
ইফাজ বললো,
– তো কি করো সোনা?আজ না আমাদের ডেটে যাওয়ার কথা ছিলো।তুমি কথা দিয়ে কিন্তু কথা রাখলে না।আমি কত কষ্ট করে হোটেলের রুমটা ম্যানেজ করলাম।কত্ত এক্সাইটেড ছিলাম,জানো তুমি?
.
ওহ্ মাই গড!!!উনি এসব কি বলছেন!উনার কথা শুনে আমার মাথাটা পুরো হ্যাং হয়ে গেলো।নাফিসা উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি লজ্জায় কি করবো না করবো ভেবে পাচ্ছি না।
.
নাফিসা ফোনটা কানের কাছ থেকে একটু দূরে নিয়ে আমাকে বললো,
– আপু,উনি এসব কি বলছেন!সিরিয়াসলি?
– নো নো।ছিঃ বিয়ের আগে এইসব।নাউযুবিল্লাহ্।
.
নাফিসা ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললো,
– এখন স্যার আসবে।পরে কথা হবে।এখন বাই।
– ওকে শালি বাই।এখন দয়া করে ফোনটা তোমার বোনকে দাও।
উনার কথা শুনে নাফিসা জিহ্বায় কামড় দিয়ে ফোনটা আমার দিকে ছুড়েঁ ফেললো।আর একটুর জন্য আমার ফোনটা ফ্লোরে পড়ে নি।কোনোরকমে ধরে ফেলেছি।
.
আমি আমার রুমে এসে কানের কাছে ফোনটা নিয়ে চুপচাপ বসে আছি।উনিও দেখি কোনো কথা বলছেন না।
.
আমি বললাম,
– কি হলো?চুপ কেনো?
– তুমি চুপ তাই আমিও চুপ।
– তখন নাফিসাকে ওইসব কেনো বললেন?
– কোনসব?
– ওইতো হোটেল,রুম বুক,ডেট।
– ঠিকই তো বলেছি তোমার সাথে তো সত্যিই আজ ডেটে যাওয়ার কথা ছিলো।
– কিহ্!এরকম কোনো কথা ছিলো না।
– সত্যিই কি ছিলো না?
– হুম।হয়তোবা অন্য কারোর সাথে ছিলো আমার সাথে না।
– থাপ্পড় দিবো একটা!কিসব বলছো!
– আপনি বললেন তাই আমিও বললাম।
– আমি তোমাকে নিয়ে বলেছি, তুমিও আমাকে নিয়ে বলতে।এরকম কথা সেকেন্ড টাইম যেনো না শুনি।
– আচ্ছা, ঠিক আছে।আর শুনুন…
– কি?
– আপুর এখন কি অবস্থা।
– এইতো এখন মোটামোটি ভালোই আছে।আমি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা হসপিটালে চলে এসেছি।আপুকে দেখলাম শুয়ে শুয়ে দোয়া দরুদ পড়ছে।
– ওহ্…
– আমার কি মনে হয় জানো?
– কি?
– আমার মনে হচ্ছে আপুর টুইন্স বেবি হবে।
– মানে?হঠাৎ আপনার এরকম মনে হচ্ছে কেনো?
– আপুর পেট দেখে কেনো জানি মনে হচ্ছে।ভিতরে নিশ্চয় দুটো গুঁতোগুঁতি করছে।
– আমার জানামতে ছেলেবাবু পেটে থাকলে নাকি পেট বড় বড় লাগে।একটা বইয়ে পড়েছি।
– বাব্বাহ্!এইসব বইও তুমি পড়।এত্ত ফার্স্ট? আমার জন্য ভালোই হলো।আমার বেবিদের…..
– উফ্!এটা ওসব বই ছিলো না।একটা ইসলামিক বই ছিলো।এখন রাখছি স্যার এসেছে।
আমি কোনোরকমে স্যারের নাম বলে ফোনটা রাখার চেষ্টা করলাম।কারন এখন উনি আবার উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করতে পারেন,সেই ভয়ে।তখন উনার কথা শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
.
হঠাৎ উনি বললেন,
– তোমাকে একবার কাছে পাই,তারপর দেখি তুমি লজ্জা কই রাখো!তোমার সামনে তোমার লজ্জাকে আমি মেরে ফেলবো।ফোনের মধ্যে তো কিছুই করতে পারবো না।রাতে কিন্তু ফোন দিবো।ফোন আশেপাশেই রেখো।
– আচ্ছা,বাই।
– হুম,টেক কেয়ার!
.
.
– কি হলো?কাটছো না কেনো?
– হুম!কাটছি!
সাথে সাথেই ফোনটা কেটে দিলাম।ভালোই লাগছিলো দুজনের নিরবতা!
.
বেডের উপর ফোনটা রেখে নাফিসার কাছে গেলাম।ও বসে বসে টিভি দেখছিলো।এখনও স্যার আসে নি।আমি কিছুটা অবাক হলাম।স্যার তো অলওয়েজ রাইট টাইমে আসে।
.
আমি নাফিসাকে বললাম,
– কি রে টিভি দেখছিস যে?
– স্যার আজ আসবে না।
– সিরিয়াসলি!
– ইয়েস!
.
আমি তো মহাখুশি।কেনো যেনো আজ প্রাইভেট পড়ার মুড একদম ছিলো না।আগে যখন ক্লাস সেভেন এইটে পড়তাম তখন অলওয়েজ এই দোয়াটাই করতাম”আল্লাহ আজ যেনো স্যার না আসে।”
.
রাত সাড়ে দশটার দিকে ইফাজ ভিডিও কল করলো।আমি রিসিভ করতেই আমার চোখ উজ্জল হয়ে উঠলো।ইফাজের কোলে একটা বেবি।ইফাজের এক হাতে বেবি অন্যহাতে ফোন।
.
ইফাজের ঠোঁটে হাসি। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটো উপরে উঠিয়ে বললো,
– ছেলে হয়েছে।তোমার গেস ঠিক ছিলো।
আমি”আলহামদুলিল্লাহ্”বলে ফোনের স্ক্রিনের উপর দিয়েই বাবুর গালে টাচ্ করে চুমো খেলাম।
.
আমার কান্ড দেখে উনি বললো,
– এভাবে হবে না।কাছে এসে আদর করতে হবে।
– ঢাকা আসি তারপর।এখন এভাবেই আদর করবো।
– আমি চিটাগাং গিয়ে যদি তোমাকে নিয়ে আসি তোমার কি কোনো প্রবলেম হবে?
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
– মানে?
– শুনো নি?
– হুম,বাট এটা কখনো পসিবল না।আব্বু কখনোই মানবে না।
– আংকেলের কথা বাদ দাও।আংকেলকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।তোমার মতামত জানতে চেয়েছি।
– আমি তো এক পায়ে দাড়িয়ে।…বলেই হাসলাম।
আবার বললাম,
– যদি আব্বুকে রাজি করাতে পারেন তাহলে আমার আর কোনো কথা নেই।
উনি অসম্ভব খুশি হয়ে বললেন,
– সত্যি!
– হুম,তিন সত্যি।
– ওকে।রেডি থেকো।আমি কালই আসছি।
আমি মুচকি হাসলাম।কিন্তু মনের ভেতর কেনো যেনো ধুকধুক করছে।
.
আম্মু আর নাফিসাকেও বাবুকে দেখালাম।উনি আম্মুর সাথেও কিছুক্ষণ কথা বললেন।আম্মুকে এটাও জানালো কাল যে আমাকে নিতে আসছে।আম্মু তো খুব খুশি।আজ রাতে আম্মুর ঘুম আসবে কিনা সন্দেহ।প্রথম মেয়ে জামাই আসবে বলে কথা।
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here