The_Terrible_Lover part 11

#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__১১

সকাল ৮ টা বাজে ৷ নিজেকে একটু ফ্রেশ করতে এই বাড়ির বাহিরে চলে এলাম একটু হাঁটবো বলে ৷ পালানোর উপায় অনেক আছে আমার কাছে ৷ কিন্তু শুধু শুধু এসব করেও বা লাভ কি? আরিহান তো ঠিকই খুজে বের করবেন আমায় ৷

কয়েকটা ফুল গাছে হাত বুলিয়ে যাচ্ছি ৷ এই ফুল গুলো কি সুন্দর খোলা আকাশের নিচে থাকতে পারে ৷ আজ দুদিন পর আমি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি ৷ আরিহান তো আমাকে আটকেই রেখেছে তার কাছে ৷ তার পার্মিশান ছাড়া এক পা ও নড়া যাবে না ৷ এই ভেবে ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেললাম আমি ৷

হঠাৎ মনে হলো আমার পেছনে কেউ আছে ৷ পেছন ঘুরে দেখলাম নাহ কেউ নেই ৷ কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ দেখছে আমাকে, ফোলো করছে ৷ কিন্তু কে? একটু সামনে এগিয়ে গেলাম ৷ যত এগোচ্ছি ততই ভয় বাড়ছে ৷ দূর থেকেই বললাম,,,,”কে? কে ওখানে??”

আমার কথা শুনে একটা গাছের পিছন থেকে একটা লোক দৌঁড়ে পালালো ৷ তার গা একটা লম্বা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল ৷ তাকে দৌঁড়ে যেতে দেখে আমিও তাকে ডাকতে ডাকতে তার পিছু পিছু গেলাম ৷ কিন্তু হঠাৎ পায়ের সাথে কিছু একটা বেজে পরে গেলাম আমি ৷ সামনে তাকিয়ে দেখি লোকটা চলে গেছে ৷ কিন্তু কে ছিল সে? চেহারাটাও দেখতে পেলাম নাহ ৷

আস্তে করে উঠে ওই দিকে এগিয়ে গিয়েও পেলাম না তাকে ৷ বাড়ির ভেতরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম ৷ রুমের মধ্যে এদিক থেকে ওদিক তো ওদিক থেকে এদিক পায়চারী করছি আমি ৷ উদ্দেশ্য আরিহানের সাথে কথা বলতে হবে আমার ৷ কিন্তু কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না ৷ কাল যা হলো আমার তো ওনার সামনে যেতেই গিলটি ফিল হচ্ছে ৷

এক বুক সাহস নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আরিহানের রুমের দিকে গেলাম ৷ একবার বাহির থেকে নক করলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে একটু খুলে ভিতরে গেলাম ৷ পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে ৷ আরেকটু সামনে যেতেই রুমের লাইট জ্বলে উঠলো ৷ হঠাৎ করে এরকম হওয়ায় কিছুটা চমকে গেলাম আমি ৷ পিছনে তাকিয়ে দেখি আরিহান দাঁড়িয়ে আছেন ৷

আমাকে একবার দেখে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন,,,,,

আরিহান : এখানে কেন এসেছো?

আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,

কাশফিয়া : আআসলে আআমি না মানে আমারর এএকটা কথা আছে ৷

টাওয়ালটা বিছানায় ছুড়ে মেরে এক হাত দিয়ে চুলগুলো একটু ঝেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,,,,

আরিহান : হুম বলো ৷ ঠিক ভাবে বলো ৷ এভাবে কথা বলছো কেন?

কাশফিয়া : কিছু না ৷ আসলে আমি ভার্সিটি যেতে চাচ্ছি ৷

উনি চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন ৷ আমি মাথা নিচু করে বললাম,,,,,,

কাশফিয়া : আমার এভাবে বাড়িতে একা থাকতে ভালো লাগে না ৷ বোরিং লাগে তাই ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বলছি ৷

আরিহান : তো ভার্সিটি গেলে তোমার ভালো লাগবে? যদি সায়ানের সাথে বিয়ে হতো তাহলে কীভাবে যেতে??

কাশফিয়া : বিয়ের পর যেতাম অবশ্যই ৷

আরিহান : ও যেতে দিতো কি?

কাশফিয়া : না যেতে দেয়ার কি আছে? আব্বুকে তো বলেই রেখেছিলাম বিয়ের পর স্টাডি কমপ্লিট করবো আমি ৷ কিন্তু এখন? প্লিজ না করবেন না আমি ভার্সিটি যেতে চাই ৷

আরিহান : তুমি চাইলেই হবে না ৷ তুমি যেতে পারবে না ৷ নিজের রুমের যাও ৷ গো!!

কাশফিয়া : কিন্তু আমি…

আরিহান : রুমে যেতে বলেছি তো নাকি? (ধমকে)
যাও রুমে যাও ৷ এ নিয়ে আর কথা না ৷

রুমে যেতে নিলেই পেছন থেকে উনি বললেন,,,,

আরিহান : শোনো? এদিকে এসো ৷

আমি পিছনে ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ উনি আমার কাছে এসে হাতে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললেন,,,,,,

আরিহান : তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো ৷ নিচে ওয়েট করছি আমি ৷

কাশফিয়া : কিন্তু কেন?

আরিহান : তোমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না ৷ যাও রেডি হতে যাও ৷

কাশফিয়া : আরে…?

আরিহান : একটা কথা একবার বললে বুঝো না…না?
(ধমকে)

ধুর ভাবলাম কি আর হলো কি? ওই রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম ৷ ব্যাগটা রেখে ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম ৷ “ওই ছেলেটাকে কি জন্মের সময় তেতো করলা খাওয়ানো হয়েছিল নাকি? হয়েছিল হয়েছিল নাহলে এতো তিতা কথা কেমনে বলে ৷ কথায় কথায় ধমকি দেয় ৷ ভালোভাবে বললেও ধমক মারে ৷ ইচ্ছা তো করতেছিল মাথায় নিয়ে এক আছাড় মারি ৷”

বিড়বিড় করতে করতে চোখ গেলো ব্যাগের দিকে ৷ ব্যাগটা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ একটু দেখে ভিতরে হাত দিলাম ৷ একটা কালো জরজেট শাড়ি যেটার চারদিকে গোল্ডেন স্টোন সাজানো ৷ বড় একটা প্যাকেটে দুই হাতের জন্য কালো কাচের চুড়ি ৷ একটা বক্সে কান আর গলার সেট ৷ আর রয়েছে একটা গোলাপ ফুল ৷

সবকিছুই অনেক সুন্দর ৷ ব্যাগের মধ্যে আরো একবার হাত ঢুকিয়ে দেখি একটা নিউ ফোন প্যাক করা ৷ বক্সের থেকে খুলে ফোনটা হাতে নিলাম ৷ আমার সবচেয়ে বেশি জরুরি তো একটা মোবাইল ৷ সেটা পেয়ে গেছি ৷ আর দেরি না করে শাড়িটা পরে নিলাম ৷

চোখে কালো কাজল, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক ৷ দুই হাত ভর্তি চুড়ি ৷ গলার আর কানের সেটটা পরে নিলাম ৷ চুল গুলো খোপা করে গোলাপ ফুলটা খোপার একসাইডে গেঁথে দিলাম ৷ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছি নিজেকে ৷ তখনি আয়না দিয়ে পিছনে কাউকে দেখতে পেয়ে পিছনে তাকালাম ৷ আখির আমার কাছে এসে বললো,,,,,

আখি : মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে ৷ ভাইয়া ডাকছে যাও ৷

কাশফিয়া : হুম ৷

নিচে নেমে বাড়ির বাহিরে চলে এলাম ৷ আরিহান গাড়ির দরজা খুলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপ- ছিলেন ৷ আমাকে আসতে দেখে উনি একপলক আমার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন ৷ আমিও আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসলাম ৷ উনি সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷

কোথায় যাচ্ছি জানিনা ৷ জিজ্ঞেস করলেও বলবেন না ৷ জানা আছে ৷ কিন্তু একবারও তাকালেন না আমার দিকে ৷ গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম আমি ৷ মায়া বাড়িয়ে লাভ কি? যেখানে মায়া কাটাতে শিখতে হয় ৷ আমি বুঝতে পারছি আমি আরিহানের উপর দুর্বল হয়ে পরছি ৷ কিন্তু এরকমটা হলে তো হবে না ৷ আমি নিজের জীবনের সাথে ওনাকে জড়াতে চাচ্ছি না ৷ তবুও সেটা কেন জানি পারছি নাহ ৷

গাড়ি থামিয়ে আমাকে নিয়ে ভিতরে গেলেন আরিহান ৷ আশেপাশে তাকিয়ে যতটুকু বুঝতে পারলাম আমরা কোনো কমিউনিটি সেন্টারে এসেছি ৷ কিন্তু কেন? ভিতরে যেতেই মনে হলো কোনো বিয়ে বাড়িতে এসেছি ৷ আরিহানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম আমি ৷ উনি আমাকে ইশারা করে সামনে তাকাতে বললেন ৷

নেভিব্লু কালার লেহেঙ্গা পরে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে ৷ যতটুকু বুঝতে পারছি মেয়েটা কনে ৷ কিন্তু চেহারা দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি ৷ ও এসে জড়িয়ে ধরলো আমাকে ৷ আমি বললাম,,,,,

কাশফিয়া : বুঝতে পারছি না ৷ কি হচ্ছে? নিধি তুই এভাবে এখানে কেন??

নিধি : দোস্ত গতকাল বিয়ে হয়েছে আমার ৷

কাশফিয়া : কিইইই??

নিধি : আরে হ্যাঁ ৷ জানি তো এখন আমাকে ইচ্ছা মতো পানি ছাড়া ধুবি ৷ তাতে আমার কি?

কাশফিয়া : নিধির বাচ্চা তুই বিয়ে করলি আমাকে বললি না? (রেগে)

নিধি : ওই আমার কোনো বাচ্চা নেই ৷ আর তোকে কি বলব রে? নিজের পরিবারকেই তো বলতে পারি নি ৷

কাশফিয়া : মানে কি?

নিধি : পালিয়ে বিয়ে করছি ৷

কাশফিয়া : সিরিয়াসলি? তোর শরীর ঠিক আছে তো? আচ্ছা তো তোর বর কই ৷ আর পালিয়েই বা বিয়ে করলি কেন?

নিধি : আব্বু ছেলে ঠিক করে রেখেছিল তাই ৷ আর আমার বরটা জানি কই গেলো ৷

কাশফিয়া : ছেলের নাম কি?

নিধি : জয় ৷

কাশফিয়া : জয়?? আই এম জাস্ট শকড ৷ যাইহোক বিয়ে যখন করেছিস ৷ ভালো থাকিস ৷ তবে রেগে আছি তোর উপর ৷

নিধি : সরি জানু ৷ আচ্ছা আমি স্টেজে যাই ৷

কাশফিয়া : হুম ৷

আরিহান : নাও এটা দিয়ে আসো তোমার বেস্টুকে ৷

একটা গিফ্ট বক্স এগিয়ে দিয়ে আরিহান আমাকে বললেন ৷ ওনার কথায় ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

কাশফিয়া : আপনি কিনেছেন, আপনার জিনিস আপনি দিবেন ৷ আমি কেন দিব?

আরিহান : আমার সব কিছুই তো তোমার ৷

কাশফিয়া : জ্বীইইইই নায়ায়ায়া ৷

আরিহান : জ্বীই হ্যাঁ ৷ নাও ৷

কাশফিয়া : বললাম তো আমি পারবো না ৷ নিজে গিয়ে দিয়ে আসুন ৷

বলেই অন্য দিকে তাকালাম আমি ৷ উনি আমার কাছে ফিসফিস করে বললেন,,,,,

আরিহান : এই না কে আমি হ্যাঁ করে দিব দেখো!!

বলেই সোজা স্টেজের দিকে চলে গেলেন ৷ আমি হা হয়ে দেখছি ৷ কি এটিটিউড নিয়ে চলে গেলেন উনি ৷ আমিও দেখবো কি করে হ্যাঁ করেন আপনি ৷ আপনি জেদি হলে, আমিও কম জেদি নই ৷ যা চেয়েছি তাই করেছি ৷ সেখানে আমি আপনার বলা কথাগুলো বলবো? প্রশ্নই উঠে না ৷

হাতের ফোনটা বেজে উঠায় ওখান থেকে সাইডে চলে এলাম আমি ৷ রিসিভ করে কানে ধরে “হ্যালো, হ্যালো” বললাম ৷ কিন্তু ওপাশের থেকে কোনো কথাই কানে এলো না ৷ মানে ওপাশের লোকটা কিছু না বলেই কেটে দিল ৷ পিছন ঘুরে যেতে নিলেই তিনটা ছেলে পথ আটকে দাঁড়ালো ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,

কাশফিয়া : কককি হয়েছে? পপথ ছাড়ুন ৷ যেতে দিন ৷

ছেলেগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে আমার দিকে আগাতে লাগলো ৷ আমি পিছিয়ে যেতে লাগলাম ৷ পিছন ঘুরে দৌঁড় দিবো তখনি ধাক্কা খেলাম কারো সাথে ৷ তাকিয়ে দেখি আরিহান ৷ চোখ গুলো রাগে লাল হয়ে গেছে ওনার ৷ আমার হাত ধরে শক্ত করে ধরে তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে ছেলেগুলোকে বললেন,,,,,

আরিহান : ওখানেই থাক ৷ এখানে আসবি তো জানে মরবি ৷

ওনার কথা শুনে ছেলে গুলো দাঁড়িয়ে গেলো ৷ এই কথাটার মাঝে যে কি পরিমাণ রাগ ছিল বুঝতে পারছি আমি ৷ আমাকে ভিতরে নিয়ে এসে স্টেজে নিধির পাশে বসিয়ে দিয়ে নিধিকে বললো,,,,

আরিহান : আমি যতক্ষন পর্যন্ত না আসছি কাশফিয়াকে একটু দেখো রেখো ৷

নিধি মাথা নাড়িয়ে বললো,,,”আচ্ছা ভাইয়া” উনি চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে আমি বললাম,,,,

কাশফিয়া : কোথায় যাচ্ছেন?

আরিহান : আমি আসছি ৷ এখান থেকে একটুও নড়লে তোমার খবর আছে ৷

বলেই চলে গেলেন ৷ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি ৷ দুই বান্ধবি কিছুক্ষন কথা বললাম ৷ ঠিক তখনি ফোনে টোং করে একটা ম্যাসেজ এলো ৷ ফোনটা অন করে ম্যাসেজে গিয়ে দেখি তিনটা ছেলের ছবি ৷

যেই তিনটা ছেলে একটু আগে আমার কাছে এসেছিল ৷ এই ছেলে তিনটাকেও ওইভাবেই মারা হয়েছে যেভাবে এর আগে দুইটা ছেলেকে মারা হয়েছিল ৷ কতটা নৃশংস ভাবে মারা হয়েছে ৷ ছবিটা দেখে হাত পা কাঁপতে লাগলো আমার ৷ ছোট থেকেই এসবে আমার ফোবিয়া হয় ৷ কাঁটা ছিড়া দেখলে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় ৷

এখনও তার ব্যতিক্রম না ৷ হাত পা কাঁপতে লাগলো ৷ আর সেটা দেখে নিধি বলতে লাগলো,,,,,

নিধি : কি হয়েছে তোর? হঠাৎ করে কি…??

কাশফিয়া : পপপপপপানিই!!

নিধি : দাঁড়া দাঁড়া দিচ্ছি ৷

হাত বাড়িয়ে একটা গ্লাস নিয়ে আমাকে দিলো ৷ এক চুমুকে পুরো পানিটা খেয়ে নিলাম ৷ তবুও শান্ত হতে পারছি না ৷ সেই দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ৷ কে করছে এরকম? আর কেন করছে? নিধি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,

নিধি : কি হয়েছে? কি দেখে ভয় পেয়েছিস তুই??

আমি চুপ করে রইলাম ৷

নিধি : তুই না বললে আমি বুঝবো কীভাবে? বল না ৷

কাশফিয়া : কককিছু না ৷

নিধি : আচ্ছা ঠিক আছে ৷ শান্ত হ ৷ আমি আছি তো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here