#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__১২
বেশ কিছুক্ষন লাগলো আমার স্বাভাবিক হতে ৷ কিন্তু কিছুক্ষন যাবত আরিহানকে নজরে পরলো না ৷ গেলো কই? একটু আশেপাশে তাকাতেই দেখি আরিহান জয়ের সাথে কথা বলছেন ৷ আমি আর কিছু না ভেবে অনুষ্ঠানে এটেনশান ফোকাস করলাম ৷
নিধির বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে ওকে বিদায় দিয়ে আরিহানের সাথে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ গাড়ি চলছে আপন গতিতে ৷ হঠাৎ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখি রাস্তার ওই পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ অনেকটা দূরে তাই চেহারাটা বুঝতে পারছি না ৷
তবুও যতটুকু বুঝতে পারছি ছেলেটাকে সায়ানের মতো দেখতে ৷ ওই দিকে তাকিয়ে আমি হাত নাড়িয়ে আরিহানকে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : গাড়ি থামান গাড়ি থামান ৷
আরিহান : কেন??
কাশফিয়া : আগে থামান না ৷
উনি সাইডে গিয়ে ব্রেক করে গাড়ি থামালেন ৷ আমি নামতে যাবো তখনি আরিহান আমার হাত ধরে আমাকে ঘুরিয়ে বললেন,,,,,
আরিহান : আরে কি হয়েছে? নামছো কেন??
কাশফিয়া : হাতটা ছাড়ুন নাহলে ও চলে যাবে ৷
আরিহান : কে চলে যাবে?
কাশফিয়া : সায়ান ৷
আরিহান : কিহ?? ও এখানে কীভাবে আসবে?
কাশফিয়া : না আসার কি আছে?
আরিহান : কোথায় দেখেছো? দেখাও দেখি ৷
আমি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললাম,,,”ওই দিকে”
আরিহান : কোথায়? কেউ তো নেই ৷
আমি ওই দিকটায় তাকালাম যেখানে সায়ানকে দেখতে পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু ওখানে সায়ান কেন একটা মানুষও নেই ৷ আশেপাশে তাকিয়েও সায়ান কে পেলাম না ৷
আরিহান : ভুল দেখেছো হয়তো ৷ চুপ করে বসো ৷
এই বলেই উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷ নিজের চোখকে কীভাবে ভুল প্রমানিত করবো? আমি শিউর ও ছিল ওখানে ৷ কিন্তু গেলো কোথায়? কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে হারিয়ে যাওয়া ব্যপারটা হজম করতে পারছি না ৷ আনমনেই বললাম,,,,,
কাশফিয়া : না আমি ভুল দেখি নি ৷ একদম ঠিক আর স্পষ্ট ভাবে দেখেছি ৷
আরিহান : ওই বিষয় ছাড়ো ৷ আর ভাবতে হবে না ৷
ওনার কথা শুনে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবার বললাম,,,,,
কাশফিয়া : আপনাদের বন্ধুত্বটা ঠিক কীভাবে বা কী কারণে নষ্ট হয়েছে আরিহান?
হঠাৎ এরকম কথা হয়তো আশা করেন নি উনি আমার মুখে ৷ ড্রাইভিং করা অবস্থায়ই অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে ৷ আমি কৌতুহল দৃষ্টিতে চেয়ে আছি ৷ সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,
আরিহান : সেসব জেনে তুমি কি করবা?
কাশফিয়া : জানতে কি পারি না আমি?
আরিহান : যেহেতু সায়ান তোমাকে সেসব কিছুই বলে নি ৷ তাই আমিও বলতে চাচ্ছি না ৷ বলার দরকার হলে সায়ান তোমাকে বলবে আমি না ৷
কাশফিয়া : আপনি বললে কি হবে?
আরিহান : আমি চাচ্ছি না তাই ৷ আর ওসব জেনেও তোমার লাভ নেই ৷ শুধু শুধু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে ৷
বলেই গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে গেলেন ৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখি বাড়িতে চলে এসেছি আমরা ৷ তাই আমিও নেমে ভেতরে চলে গেলাম ৷ কিন্তু আরিহানের শেষ কথাটা মাথায় ঢুকলো না ৷ কি বলতে চাইলেন উনি? কার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হবে? আর কিসের জন্য?
ফ্রেশ হয়ে খাটে বসলাম ৷ মোবাইল হাতে নিয়ে আব্বুর নাম্বার ডায়াল করে কল দিলাম ৷ কল রিসিভ হলে সাথে সাথে বললাম,,,,,,
কাশফিয়া : হ্যালো আব্বু? কেমন আছো?
আব্বু : কাশফি তুই কোথায় মা? তুই ঠিক আছিস তো?
কাশফিয়া : আমি ঠিক আছি আর ভালো আছি ৷ তোমরা কেমন আছো?
আব্বু : তোকে ছাড়া ভালো নেই রে মা ৷
কাশফিয়া : শোনো আব্বু এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না ৷ ভালো থাকতে হবে ৷ একটু চেষ্টা করো ৷ আর জিজ্ঞেস করো না প্লিজ যে আমি কোথায় আছি? সময় হলে সব বলবো তোমাদের ৷ একটু অপেক্ষা করো শুধু ৷ বিশ্বাস আছে না আমার প্রতি?
আব্বু : সেই বিশ্বাস নিয়েই তো বেঁচে আছি এখনো ৷
কাশফিয়া : এসব কি কথা বলো তো? শোনো নিজের খেয়াল রাখবে আর আম্মুকেও দেখে রেখো ৷ আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
আব্বু : বলে ফেল ৷
কাশফিয়া : সায়ান কি ফুপ্পিদের কাছে আছে?
আব্বু : না ৷ আজ দুদিন যাবত সায়ান নিখোঁজ ৷ দুদিন আগে যে বললো কাজী অফিসে তোকে নিয়ে এসে বিয়ে করবে ৷ সেই কথা বলেই বাইরে যায় আর আসে নি ৷ আমরা তো গিয়েছিলাম কাজী অফিসে ৷ কিন্তু তোরা কেউই আসিস নি ৷
কাশফিয়া : এখনো বাড়ি ফিরে নি?
আব্বু : নারে মা ওর কোনো খোঁজ নেই ৷ তোর ফুপ্পি তো ভেঙ্গে পরেছে ৷ ছেলেটা কই গেলো বলতো?
কাশফিয়া : চিন্তা করো না আব্বু সব ঠিক হয়ে যাবে ৷ আমি দেখছি কি করা যায় ৷ তুমি বাড়ির সবার আর নিজের খেয়াল রেখো ৷ আর সায়ান বাড়ি ফিরলে বা ওকে কোথাও দেখলে আমাকে বলবা ৷ ঠিক আছে?
আব্বু : আচ্ছা ৷ তুই নিজের খেয়াল রাখিস আর সাবধানে থাকিস ৷
কাশফিয়া : রাখি তাহলে ৷ কোনো রকম স্ট্রেস নিবা না ৷
আব্বু : হুম আচ্ছা ৷ (বলেই কল কেটে দিলো)
আরিহান যদি সায়ানকে নিজের কাছে আটকিয়েই রাখেন তাহলে তো সায়ান পালিয়ে গেছে ৷ কালকের ফোন কলে সেটাই বলা হয়েছে ৷ আর পালিয়ে গেলে কোথায় গেলো? বাড়িতে কেন গেলো না? এভাবে ইচ্ছা করে হারিয়ে যাওয়ার মানে কি? কি করতে চাইছে সায়ান?
সায়ানের নাম্বারে কল দিলাম ৷ কিন্তু ফোন বন্ধ ৷ কি করতে চাইছে এভাবে কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ তখনি দরজায় নক পরলো ৷ দরজা খুলে দেখি আখি দাঁড়িয়ে আছে ৷ আমাকে দেখে ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওকে টেনে ভিতরে এনে দরজা লাগিয়ে দিলাম ৷ ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
আখি : কি হয়েছে? এরকমভাবে…?
কাশফিয়া : হুশশ…কোনো কথা বলো না চুপচাপ খাটে গিয়ে বসো ৷
আখি : কিন্তু কেন?
কাশফিয়া : আগে বসো বলছি ৷
ও খাটে গিয়ে বসলো ৷ আমি জানালা দরজা সব বন্ধ করে এসে ওর পাশে বসে একটা দম নিলাম ৷ সেটা দেখে আখি বললো,,,,
আখি : কি হয়েছে? বলবে?
কাশফিয়া : হুম বলবো বলবো ৷ তোমাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো ৷ ঠিক ঠিক উত্তর দিবে ৷ মানে যতটুকু জানো সব বলবে প্লিজ ৷
আখি : অাচ্ছা ঠিক আছে ৷
কাশফিয়া : আরিহানকে কিন্তু বলা যাবে না ৷ শুধু আরিহান না ৷ তুমি আর আমি এর বাহিরে কাউকেই কিছু বলা যাবে না ৷ কোনো কিন্তু না প্লিজ ৷
আখি : আচ্ছা কিন্তু কি বলবে?
কাশফিয়া : আরিহানের মা বাবা কোথায়?
আমার কথা শুনে আখি মাথা নিচু করে রইলো ৷
কাশফিয়া : প্লিজ আখি বলো ৷ আমার জানা খুব জরুরি ৷
আখি : ভাইয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না ৷ ভাইয়ার মা বাবার সম্পর্কেও আমি তেমন জানিনা ৷
কাশফিয়া : যতটুকু জানো ততটুকুই বলো ৷
আখি : ভাইয়াকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অনেক রেগে যায় ৷ তাই আমি কখনো এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করি নি তাকে ৷ কিন্তু
কাশফিয়া : কি??
আখি : প্রত্যেকমাসে একবার হলেও ভাইয়ার সাথে দেখা করতে একটা লোক আসে ৷
কাশফিয়া : কে সেই লোক?
আখি : আমি শিউর জানিনা ৷ কিন্তু ভাইয়া ওই লোকটাকে ড্যাড বলে ডাকে ৷
কাশফিয়া : তাহলে ওই লোকটাই আরিহানের বাবা?
আখি : হয়তো?
কাশফিয়া : হয়তো না আমি শিউর ৷ তুমি দেখেছো না তাকে?
আখি : হুম ৷
কাশফিয়া : ওকে ৷ সেটা ঠিক আছে ৷ তাহলে আরিহান আলাদা থাকে কেন তাদের থেকে?
আখি : আমি তো জানিনা ৷
কাশফিয়া : আরিহানের মাকে দেখেছো?
আখি : না ৷ তবে ভাইয়ার ফোনে একটা কল আসে যেইটার কারণে অনেক রেগে যায় ৷ আর যা ইচ্ছা তাই বলে ফোনের ওপাশের জনকে ৷
কাশফিয়া : কার কল?
আখি : আমি যতোটুকু জানি বলেছি ৷ এর বেশি কিছুই জানা নেই আমার ৷ ভাইয়া কখনোই তার মায়ের কথা আমার সামনে বলে নি ৷
কাশফিয়া : এতোটুকুই যথেষ্ট ৷ তবে যা বুঝতে পারছি ৷ আরিহানের বাবার সাথে সম্পর্কটা যতোটুকু ভালো ৷ আরিহানের মায়ের সাথে ততটুকুও ভালো না ৷ তবে পুরোটা জানতে হবে আমার ৷ তার জন্য তোমার সাহায্য লাগবে আমার ৷
আখি : আমি আছি তোমার সাথে সবসময় ৷ তবে ভাইয়া জানতে পারলে অনেক রেগে যাবে ৷
কাশফিয়া : জানতে পারবে না ৷ কিন্তু চেষ্টা করতে হবে ৷ আর জানলেও সামনাসামনি জিজ্ঞেস করবো ৷ আরেকটা কথা সায়ানকে চিনো তুমি?
আখি : না ও কে?
কাশফিয়া : আরিহানের ফ্রেন্ড ৷
আখি : না আমি জানিনা ৷
কাশফিয়া : আচ্ছা ঠিক আছে ৷ কোনো সমস্যা নেই ৷ আরিহানের কোনো ডায়রি বা এলবাম আছে? যার থেকে ওনার মা বাবা সম্পর্কে কোনো সূত্র পাওয়া যাবে৷
আখি : ভাইয়ার রুমটা একবার চেক করতে পারো ৷ পেলেও পেয়ে যেতে পারো ৷
কাশফিয়া : হুম সেটাই করতে হবে ৷
আখি : আমি আসি তাহলে ৷
কাশফিয়া : হুম যাও ৷
আখি চলে গেলো ৷ কি এমন কারণ যার জন্য এতটা রাগ আরিহান আরিহানের মায়ের প্রতি ৷ এদিকে ওনার মা বাবা আর অন্য দিকে সায়ান ৷ কীভাবে জানতে পারবো আমি এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর?
পরেরদিন সকালে…
চুপিচুপি আমার রুম থেকে বেরিয়ে আরিহানের রুমের দিকে যেতে লাগলাম ৷ আরিহান অফিসে গিয়েছেন ৷ আর এই সময়েই আমি আরিহানের ঘর সার্চ করতে যাচ্ছি যদি কিছু পাই ৷
আরিহানের রুমের সামনে আসতেই আখিকে দেখতে পেলাম ৷ দ্রুত পা ফেলে আখির কাছে গিয়ে ওকে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : কোনো কথা না ৷ নিচে গিয়ে খেয়াল রাখো আরিহান আসে কি না? যখনি আসবে আমাকে একটা ম্যাসেজ করে দিবা যে আরিহান আসছেন ৷ আমি একটু দেখি কিছু পাই কি না ওনার রুমে ৷
আখি : ভয় করছে ৷ যদি…?
কাশফিয়া : ভয় পেলে চলবে না ৷ মনে সাহস রাখো ৷ যাও এতো কথা বলার টাইম নেই ৷
আখি মাথা নাড়িয়ে ‘আচ্ছা’ বলে নিচে চলে গেলো ৷ আমি তাড়াতাড়ি রুমের ভিতর ঢুকে পরলাম ৷ যত সময় যাচ্ছে তত ভয় বাড়ছে ৷ তবুও সাহস নিয়ে চারপাশে হালকা ভাবে চোখ বুলিয়ে নিলাম ৷ একে একে আলমারি, ওয়ারড্রপ, টেবিলের আনাচে কানাচে সব জায়গায় খুজলাম ৷ তবে কোনো কিছুই পেলাম না ৷
একটা সূত্রও পেলাম না যেটার দ্বারা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবো ৷ একটাও সূত্র কি নেই এই রুমে? হঠাৎ চোখ গেলো একটা বইয়ের দিকে ৷ সিম্পল বইগুলোর থেকে একদম অন্যরকম ৷ বইটা হাতে নিতে যাবো তখনি ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো ৷ ম্যাসেজটা ওপেন করে দেখি আখির ম্যাসেজ ৷
ম্যাসেজে লিখা,,,,”আপু তুমি পালাও ৷ ভাইয়া রুমে যাচ্ছে ৷ পালাও তাড়াতাড়ি পালাও ৷”
এখন আমার অবস্থা হয়েছে এই রকম যে ওখানে যাবো? নাকি এখানে যাবো? ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ৷ যতই বলি ভয় পেলে চলবে না ৷ ভয় পাচ্ছিই কিন্তু এখন কি করব আমি?
কোনো রকমে রুমের চারপাশে দৌঁড়িয়েও লুকানোর কোনো জায়গা পেলাম না ৷ তাই বাধ্য হয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে পরলাম ৷ নিচে থেকেই দেখতে পেলাম একজোড়া পা আমার দিকে এগিয়ে আসছে ৷ সেটা যে আরিহান স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি ৷
হাত থেকে কি যেনো একটা খাটে ফেললেন ৷ আর ধাম করে একটা শব্দ হলো ৷ যেহেতু আমি খাটের নিচে তাই শব্দটা একটু অন্যরকম শুনতে পেয়েছি ৷ আরিহান খাটের চারপাশে দুই তিন বার চক্কর দিলেন ৷
এতো ঘুরছেন কেন? বুঝতে পারছি না ৷ উনি ঘুরে ওয়াশরুমে যেতে লাগলেন ঠিক তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠলো ৷ কথায় আছে না? যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় ৷ আমার ক্ষেত্রেও তাই ৷ ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ৷ এখন কি হবে আমার?
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,