#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__১৩
আরিহান একটু একটু করে এগিয়ে আসছেন এদিকে ৷ ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলেছি আমি ৷ দুই হাত দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে বসে আছি ৷ হঠাৎ একটা কথা শুনে মুখ থেকে হাত সড়িয়ে আরিহানের দিকে তাকালাম ৷
— ভাইয়া?
আখির কথা শুনে আরিহান খাটের নিচে উঁকি দিয়ে দেখতে গিয়েও থেমে গেল ৷ ঘাড় ঘুরিয়ে আখির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,
আরিহান : কি?
আখি : ততুই কি করছিস এখানে? আমার তোর সাথে কথা আছে একটু আয় তো ৷
আরিহানের হাত ধরে টানতে টানতে বললো আখি ৷
আরিহান : আরে কি কথা বল? এভাবে টানছিস কেন?
আখি : আরে তোকে একটা জিনিস দেখাবো…আয় না!!
এই বলে আখি আরিহানকে টানতে টানতে বেলকনিতে নিয়ে গেল ৷
আরিহান : কি হয়েছে? কি? কি দেখাবি? এভাবে টানাটানি করছিস কেন?
আখি : আরে ওইদিকে দেখতো ওইটা কি??
বলেই আখি ওর বাম হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিলো ৷ আর আরিহানকে ওই জায়গায় তাকাতে বললো ৷ আরিহান আখির হাত বরাবর তাকানোর পর আখি ওর ডান হাত পিছনে নাড়িয়ে কাশফিয়াকে যাওয়ার জন্য বললো ৷
আমি এতক্ষন আখির সব কাজ দেখছিলাম ৷ হাত নাড়ানোর সাথে সাথে আমি খাটের নিচ থেকে কোনো রকমে বেরিয়ে রুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে এলাম ৷ নিজের রুমে এসে ধাম করে বিছানায় বসে হাপাতে লাগলাম ৷ কি ছিল এগুলা??
এদিকে…
আরিহান : কই কি কিছুই তো নেই ৷
আখি একবার পিছনে ঘুরে খাটের দিকটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ৷ তারপর হাত নামিয়ে আরিহানকে বললো,,,,,
আখি : জানি তো ৷ ওখানে আর কি থাকবে? তুই থাক ৷ আমার আবার কাজ আছে ৷ জোর বাঁচা বেঁচে গেছি আল্লাহ ৷
বলেই আখি দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ৷ এদিকে আরিহান আখির কাজের কিছুই বুঝলো না ৷ প্রথমে কি বললো আবার শেষে কি বললো? পুরো রুমটা চেক করেও কাউকে পেল না ৷ হঠাৎ পায়ের সাথে কিছু একটা লাগলো ৷ পা সড়িয়ে নিচে দেখে একটা ‘ইয়ার রিং’ পরে আছে ৷ সেটা হাতে নিয়ে বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বললো,,,,
আরিহান : ওহ তো এই ব্যাপার!!
__________
রুমে বসে বসে হাপাচ্ছি তখনি চোখ গেল আখির দিকে ৷ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেচারিও হাপাচ্ছে ৷ ও না থাকলে আজ পুরাই ধরা খেয়ে যেতাম ৷ আখি আমার পাশে এসে বসে বললো,,,
আখি : খুব জোর বেঁচে গেছি ৷ ধরা পরলে কি হতো? বুঝতে পারছো?
কাশফিয়া : কি আর হতো?
আখি : কিছু পেলে কি?
কাশফিয়া : তোমার ভাইয়া তার কাছে একটাও সূত্র রাখে নি ৷ বুঝতে পারছো কতটা চালাক উনি? সারা রুম খুঁজেও কিছু পাই নি ৷ একটা বই পেয়েছিলাম সেটাও দেখতে পারি নি আরিহানের জন্য ৷
আখি : এখন কি হবে?
কাশফিয়া : কি আবার হবে? মাথায় কিছুই ঢুকতেছে না৷
আখি : একটা উপায় আছে ৷
কাশফিয়া : কি? (ভ্রু কুচকে)
আখি : ভাইয়ার বাবার সাথে কথা বললেই তো সব জানা যাবে ৷
কাশফিয়া : তা ঠিক ৷ প্রত্যেক মাসে যেহেতু আসে এই বারও আসবে ৷ তো যখন আসবে তখন কথা বলে নেয়া যাবে ৷
আখি : এতো সহজ না যতটা তুমি ভাবছো ৷ ভাইয়া ওই লোকটার ধারে কাছেও যেতে দেয় না কাউকে যখন উনি আসেন ৷ আর আলাদা ভাবে কথা বলা তো কোনো ভাবেই সম্ভব না ৷
কাশফিয়া : আরিহানের বাবার বাড়ির এড্রেস জানো তুমি?
আখি : না ৷
কাশফিয়া : তাহলে…কীভাবে? কি?…কিছু তো একটা করতেই হবে ৷ পুরো বিষয়টাতো জানতে হবে ৷ কে বলবে?…কে বলবে?…কে জানে?…কিভাবে জানবো?…উমম…পেয়েছি!!.
আখি : কি পেয়েছো?
কাশফিয়া : সব প্রশ্নের উত্তর একজনের কাছেই আছে ৷
আখি : কে সে?
কাশফিয়া : জয় ৷
আখি : এই জয়টা আবার কে?
কাশফিয়া : আরে আস্তে বলো ৷ কোন দিক থেকে কে কি বুঝে যাবে তার কোনো ঠিক নেই ৷
আখি : আচ্ছা কে ও? আর কীভাবে জানবে সব?
কাশফিয়া : দেখতে থাকো ৷ শুধু জয়ের সাথে কথা বলতে পারলেই চলে ৷ সেই উপায়টাও বের করতে হবে৷
আখি : সাবধানে করো সব ৷ আচ্ছা তোমার আরেক কানের দুল কোথায়?
কাশফিয়া : মানে?
এই বলেই আয়নার সামনে গিয়ে দেখি এক কানে একটা দুল আরেকটা নেই ৷ ভয়ে ভয়ে বললাম,,,,
কাশফিয়া : খেয়েছে এখন আমার কি হবে?
আখি : কি হয়েছে?
কাশফিয়া : দৌঁড়ে আসার সময় কোনো ভাবে রিংটা পরে গিয়েছে হয়তো ৷ যদি আরিহান পেয়ে যায় তো?
আখি : আমি কি জানি?
বলেই আখি একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ওর এমন বিহেভে আমি অবাক হয়ে গেলাম ৷ মানেটা কি? বিপদের সময় কেউ পাশে থাকে না ৷ আমাকে ফেলেই চলে গেলো মেয়েটা ৷ চটপট অন্য দুলটা খুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম ৷ বাই এনি চান্স আরিহান পেলেও ওটা আমার না ৷
____________
বিকালে…
বিছানার উপর হেলান দিয়ে বসে হাতের ফোনটা ঘুরিয়ে যাচ্ছি ৷ আর অপেক্ষা করছি একটা ম্যাসেজের জন্য ৷ একটু আগে আম্মুকে ফোন করে বলেছি নিধির নাম্বারটা ম্যাসেজ করে দিতে ৷ তার কারণ আমার নিধির নাম্বার মুখস্ত নেই আর এই ফোনেও ওর নাম্বারটা নেই ৷
তাই বসে আছি কখন ম্যাসেজ আসবে? আর কখন ফোন করবো? এমন সময়ই রুমে হাজির হলেন আরিহান ৷ তাকে দেখে আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেছে ৷ চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছি ৷ উনি আমার সামনে এসে বেডের সাইডের টি টেবিলে ওনার হাতের ট্রেটা রেখে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন ৷
তার পড়নে কুকিং এপ্রোন, হাতে হোয়াইট গ্লাভস, মাথায় কুকিং ক্যাপ ৷ যেরকমটা শেফরা পরে থাকে ৷ আমার কাছে ওনাকে শেফ না পুরো একটা জোকার লাগছে ৷ এভাবে ওনাকে দেখে ফিক করে হেসে দিলাম আমি ৷ হাসতে হাসতে বললাম,,,,
কাশফিয়া : কি পরেছেন এগুলা? আপনাকে দেখেই হাসি পাচ্ছে আমার ৷
কোনো রকমে হাসি থামিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছেন আমার দিকে ৷ ওনার এরকম তাকানো দেখে অস্বস্তি লাগলো আমার ৷ তাই বললাম,,,,
কাশফিয়া : কি হয়েছে? ওভাবে কি দেখছেন?
আরিহান : তোমাকে ৷
কাশফিয়া : আব…কেন এসেছেন এখানে?
সেই একই ভাবে চুপ করে তাকিয়ে রইলেন ৷ তা দেখে আমি জোরে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : কেন এসেছেন??
আরিহান : চিল্লাচ্ছো কেন? শুনতে পাচ্ছি তো নাকি ৷
কাশফিয়া : ছাই শুনতে পেয়েছেন ৷ বয়রা কোথাকার ৷ (বিড়বিড় করে)
আরিহান : কি বললে??
কাশফিয়া : আপনার মাথা ৷
আরিহান : কিহ!!
কাশফিয়া : কই কি? কিছুই তো না ৷
আরিহান : নাও খেয়ে দেখো ৷ (কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে)
কাশফিয়া : কে বানিয়েছে?
আরিহান : তোমার হবু বর ৷
কাশফিয়া : ওই আপনি আমার কোন জন্মের হবু বর?
আরিহান : যতগুলো আছে সবগুলোর ৷ নাও ধরো ৷
কাশফিয়া : না আমি খাবো না ৷ কি না কি মিশিয়ে এনেছেন ৷
আরিহান : ওহ রিয়ালি? তো আমি একটু খেয়ে দেখাই?
তারপর নাহয় তুমি খেয়ো?
আমি ওনার হাত থেকে কাপটা নিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : লাগবে না ৷ আমার কফি শুধু আমিই খাবো৷
বলেই একটা চুমুক দিলাম ৷ উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কৌতুহল হয়ে ৷ থাকারই কথা ওনার বানানো প্রথম এটা যেটা সবার আগে আমিই খেয়েছি ৷ ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,,,,
কাশফিয়া : নট ব্যাড ৷
আরিহান : শুধু এটুকুই? ভালো হয়নি তাইতো?
কাশফিয়া : আরে মন খারাপ করার কি আছে? এবার ভালো হয় নি তো কি হয়েছে? পরের বার ভালো হবে ৷ বাট আমি তো বলি নি নট গুড ৷ উল্টো মিনিং বের করেন কেন সব কিছুর? অনেক ভালো হয়েছে ৷ অসাধারণ ৷
আরিহান : সত্যি?
কাশফিয়া : হুম ৷ বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখুন ৷
কাপটা ওনার দিকে এগিয়ে দিয়েও আবার ফিরিয়ে নিলাম ৷ সেটা দেখে উনি বললেন,,,
আরিহান : কি হয়েছে? দাও ৷
কাশফিয়া : না এটা আমি খাবো ৷ আপনি গিয়ে আরেক কাপ বানিয়ে নিয়ে আসুন ৷
আরিহান : কেন? আমি এটাই খাবো দাও ৷
কাশফিয়া : না…অন্য…
আমাকে বলতে না দিয়ে আমার হাত থেকে কফির কাপটা টেনে নিয়ে গেলেন ৷ আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে খেয়েছি উনি সেখানেই মুখ লাগিয়ে এক চুমুক খেয়ে তৃপ্তি নিয়ে ‘আহহহ’ করে উঠলেন ৷ আমি ওনার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম ৷ উনি শব্দ করে আরেকবার চুমুক দিয়ে খেয়ে বললেন,,,,
আরিহান : ঠিক বলেছো ৷ অনেক ভালো হয়েছে ৷
কাপটা রেখে খাটের মাঝখানে এসে আমার সামনাসামনি বসে বললেন,,,,
আরিহান : মুখ ঘুরিয়ে নিলে কেন?
কাশফিয়া : আমার মুখ আমি যা ইচ্ছা তাই করবো ৷
আরিহান : ওহ তো এর কারণটা কি?
কাশফিয়া : কোনো কারণ নেই ৷ রুমে থেকে বের হন ৷
উনি চুপ করে বসে রইলেন ৷
কাশফিয়া : কি হলো? যান!!
আরিহান : কি বললে? (উত্তেজিত হয়ে)
কাশফিয়া : কককই কি?
আরিহান : একটু আগে কি বললে?
কাশফিয়া : ধুর কি বলেছি আমি? পাগল হয়ে গেছেন? রুম থেকে যান তো ৷
উনি বুকে হাত দিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : হায়!! জান বলেছো তুমি আমাকে?
কাশফিয়া : হ্যাঁ যেতে…এই কি? যেতে বলেছি যেতে ৷ জান বলি নি ৷
আরিহান : বলেছো বলেছো ৷
একটা বালিশ নিয়ে ওনার দিকে ছুড়ে মেরে বললাম,,,,
কাশফিয়া : যাবেন আপনি?
আরিহান : কোথায় যাবো গো?
কাশফিয়া : জাহান্নামে যান ৷ বের হন তো ৷ গিরগিটির মতো রঙ বদলান আপনি বুঝেছেন? কখন কি মুডে থাকেন বোঝা বড় দায় ৷
আরিহান : আমাকে একটু বুঝো তাহলেই হবে ৷
বলেই বিছানা থেকে নেমে গেলেন ৷
কাশফিয়া : পারবো না ৷
আরিহান : বলেছি না? ওই না কে আমি হ্যাঁ করে দিব ৷
কাশফিয়া : কচু করবেন যান তো ৷
আরিহান : এতো বার জান জান করছো কেন বলো তো? আমার তো লজ্জা করছে নাকি ৷
কাশফিয়া : ইউ…
উনি দরজার কাছে দৌঁড়ে গেলে ওনার দিকে আরেকটা বালিশ ছুড়ে দিলাম ৷ আর উনি সেটা ক্যাচ করে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : আই এম ইউর জান ৷
বলেই বাহিরে চলে গেলেন ৷ ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকেই আনমনেই হেসে দিলাম আমি ৷
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ৷ চোখ সরিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বললাম,,,,
কাশফিয়া : হ্যালো কে?
নিধি : জানু চিনতে পারছিস না আমাকে?
কাশফিয়া : তুই? নাম্বার পেলি কই?
নিধি : আন্টি ফোন দিয়ে বলেছে তোকে ফোন দিতে আর তোর নাম্বারও দিয়েছে ৷ তো কি বলবি তুই?
কাশফিয়া : বলছি ৷ তার আগে বল তোরা সবাই কেমন আছিস?
নিধি : আলহামদুলিল্লাহ ৷ তুই??
কাশফিয়া : হুম ভালোই ৷ জয় ভাইয়া আছে?
নিধি : ওকে দিয়ে তুই কি করবি? অফিসে গিয়েছে তো৷
কাশফিয়া : তোকে বলবো সব ৷ একটু অপেক্ষা কর ৷ ভাইয়া বাসায় আসলে বলিস ৷ তার সাথে কথা আছে আমার ৷
নিধি : আচ্ছা ঠিক আছে ৷
এভাবে আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলাম আমি ৷ একমাত্র জয় ভাইয়াই পারবে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে ৷ তার জন্য আমার তার সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে যে করেই হোক ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
(আরিহান আর কাশফিয়ার বিয়ের জন্য দেখছি সবাই পাগল হয়ে গেছেন ৷ 🙄 বলছি কি আরেকটু অপেক্ষা করলে হয় না? যাইহোক নেক্সট পর্বে একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ রয়েছে ৷ সেটা কি হতে পারে? গেইস করুন ৷ আর গল্প কেমন হচ্ছে বলবেন ৷ ধন্যবাদ❤)