Unexpected_lover
Last_part
#Rimy_Islam
টিমটিমে মাথা ব্যাথা নিয়ে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করলাম। আমি এখানে কেন? মনে মনে ভাবি, শিলা আপুর সাথে হাতিরঝিলে বসে গল্প করছিলাম। আপু তার কুটনৈতিক প্রস্তাব রাখে,সে অনিবের লাইনে ইন করতে চায় আমাকে আউট করে। এরপর মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। কি করছি এখানে? ব্রেন স্ট্রোক করেছি নাকি? সন্দেহে ভরা মনে হাজারো প্রশ্ন। বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি। আজব! অসুস্থ একটা মানুষের পাশে কেউ নেই! অন্তত অনিবের থাকা উচিত ছিল। সেও নেই। এতই অবহেলিত আমি! সত্যি কি অনিবও আমাকে আর চায় না? আমি অভিমানী সুরে কাঁদতে থাকি। এদিকে কখন অনিব এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি।
” আজিব মেয়ে! এত খুশির মুহূর্তে কেউ কাঁদে? ”
এবার আরও অবাক আমি। এই লোক আমাকে আজিব বলে নিজেই আজবের কারখানা হয়ে বসে আছে। আমার জীবনে এ যাবৎ এমন কি কিছু ঘটেছে যাতে আমি খুশিতে আটখান হয়ে নাচবো! ঘটেনি তো! তাহলে উনি কেন বলছেন এত খুশির মুহুর্ত?
“একটু ঝেড়ে বলেন তো কি হয়েছে? আপনি আর আপু কি করেছেন আমার সাথে যে একবেলায় হসপিটালে চলে এলাম?”
অনিব ভ্রূ কুঁচকে ছোট ছোট চোখ করে বললো,
” লজ্জা থাকলে এই কথা বলতে না। মাথা ঘুরে পড়লে তুমি আর দোষ হলো আমার আর শিলার?”
” কেন জ্বলে বুঝি আপনার? পুরনো প্রেম জেগে উঠেছে বুঝি?”
” নতুন কে-ই সামলাতে পারছি না।পুরনো নিয়ে কখন ভাব্বো? বাদ দাও,তোমার রিলিজ হয়ে গেছে। বাসায় চলো।”
” এমা! কেবল তো ভর্তি হলাম। এত তাড়াতাড়ি রিলিজ কেন দিলো ওরা? ঠিকমতো চেকাপ করেনি নাকি? আমার তো এখনো কেমন বমি বমি ভাব হচ্ছে। ”
” ওটা দ্বিতীয় কেউ থাকলে এমন হয়। এখন তো তোমার একার ইচ্ছাতে সব হবে না। চলবে ওর ইচ্ছাতে।”
এই লোক তলে তলে শিলা আপুকে বাড়িতে ঢুকানোর পুরো ফন্দি এঁটে বসে আছে। সব এখন ওই খারাপ আত্মা মেয়ের কথামতো হবে! হসপিটাল থেকে রিলিজ নেয়ার আগে ডক্টরের সাথে দেখা হলো। ডক্টর বেশ বয়স্ক মহিলা।তিনি আমাকে বললেন,
” তুমি এখন সাবধানে চলবে। প্রথম তিনমাস আর শেষ তিন মাস খুব সাবধান। ”
” আমার কি বড় কোনো অসুখ হয়েছে ডাক্তার?” -ভয়ে ভয়ে বলি। আমার গলা শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। না জানি কি অসুখ হলো আমার?
ডক্টর হেসে বললেন,
“তুমি প্রেগনেন্ট। ভালো থেকো কেমন? কোনো প্রয়োজনে আমাকে ফোন করবে। ভিজিটিং কার্ড তোমার হাজবেন্ডকে দিয়েছি।”
ডক্টর চলে যেতে আমি অনিবের দিকে তেজি রাগ নিয়ে তাকাতে দেখি উনি মুচকি হাসছেন। সব রাগ ফুস হয়ে গলে গেল। তবুও মেকি রাগ নিয়ে বললাম,
” এত ঘুরাই পেঁচায় না বলে সরাসরি কেন বলেননি আমাকে? এত বড় দুঃখের খবর! আমি এখন কি করব? কোথায় যাবো? বাচ্চা এলো তো এতো, এত বাদ দিয়ে আপনার বাচ্চা আমার পেটে?পোড়া কপাল! ”
অনিব আমাকে ফট করে কোলে তুলে নিলো। তাঁর মুখ থেকে হাসি খসে পড়ছে। গম্ভীর, মুডি ছেলেটা আজ ভেতর থেকে প্রাণ খুলে আসছে যেন। তাহলে অনিব আমার প্রেগনেন্ট হওয়ার খবরে খুশি?ধূর! কিসব ভাবছি! এটাও উনার কোনো চাল। ঠিক ঠিক বাসায় নিতে পারলেই আবার শাস্তি পর্ব শুরু হবে। খুব চিনি উনাকে।কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিলেন। তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালু করলেন। আমি গাল ফুলিয়ে বসে আছি। আজ এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো। অনিব কি পারে আর আমি কি পারি। স্ট্রিট ফুলের দোকানের পাশে হঠাৎ গাড়ি দাঁড় করালেন। এরপর নেমে পড়লেন। আমি গ্লাস নামিয়ে লক্ষ্য করছি উনি ফুলের দোকানের সবচেয়ে বড় তোড়াটা নিলেন। কার জন্য? শিলা নামক মহিলার জন্য? তলে তলে জল এতদূর গড়িয়েছে! অনিব পুনরায় গাড়িতে বসে। আমার দিকে তাকিয়ে এখনো হেসে চলেছেন আমি আড়চোখে তা বেশ টের পাচ্ছি। আচমকা ফুলের তোড়া আমার দিকে ধরে বললেন,
” হ্যাপি ম্যারেজ ডে মাই সুইট ওয়াইফ।”
আমি পুরা শকড। এত বড় সড় ঝটকা আমি সহ্য করবো কিভাবে? শ্বাসকষ্টের মতো বুকে জালাপোড়া করছে। হাঁপানির রুগী হয়ে গেলাম নাতো!ঢোক গিলে বলি,
” মাথা পুরো গেছে! আজ কেন ম্যারেজ ডে হতে যাবে? ”
” জানি তো। ”
অনিব পরশ ভালবাসায় আমার একটা হাত ধরে বললেন,
” মনে করো আজকেই আমাদের নতুন করে বিয়ে হয়েছে। আজ থেকে আমাদের সম্পর্কের বরণ কাল শুরু। এতদিন যা করেছি, যা হয়েছে সব ভুল ছিল। শুদ্ধ হবে এখন থেকে।”
” তাহলে আপনার শিলার কি হবে?”
” পুকুরের পানিতে নাকানি-চুবানি খাওয়াবো। ”
” সর্বনাশ! আপু যে সাঁতার পারে না!”
” সেই জন্যই তো এই ফন্দি এঁটেছি। সাপ মরবে লাঠিও ভাঙবে না।”
” ফাজলামি করছেন আবার? শিলা আপু আমার ক্ষতি করেছে। আপনাকে তো কিছু করেনি। বরং ভালবাসে আপনাকে। অযথা কেন মারতে যাবেন ওকে?”
অনিব সিরিয়াস মুখ করে বললো,
” আমি সব জানি শিলা কি করেছে। সবকিছুর জন্য দ্বায়ী সে। আমার প্রকৃত প্রেম তো তুমি বর্ষা। চিনতে একটু বিলম্ব ঘটেছে এই আর কি! ”
আমি হতবিহ্বল হয়ে বলি,
” আপনি লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন? কই আপনাকে তো দেখলাম না কোথাও?”
” পাগলি মেয়ে! লুকিয়ে শুনতে যাবো কেন?তুমিই তো বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের ফোনের রেকর্ডিং চালু রেখেছিলে। তোমার ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে দেখতে গিয়ে সব শুনেছি। তুমি আর বোকা নেই। বেশ চালাক হয়ে গেছ।”
এবার আমার মাথায় খেলেছে। আমিতো ভুলেই গেছিলাম। শিলা আপুর সব পর্দা ফাঁস করতে আমি সব কথোপকথন ফোনে রেকর্ড করে ফেলি। পরবর্তীতে অনিবকে শুনাতে পারবো ভেবে। তার আগেই উনি নিজ উদ্যেগে শুনে ফেলেছেন! যাক শুনেছেন এই বড়।
আমি খুশিতে বাকহারা। ছলছল চোখে বললাম,
” এখন কি করবেন?”
” ধানমন্ডি লেকের পাড়ে যাবো। শিলাকেও আসতে বলেছি। বাকিটা ওখানে গেলেই দেখতে পারবে।”
আমি উসফুস করছি। আর তর সইছে না!কখন পৌঁছে নতুন ড্রামা দেখবো! দেখতে দেখতে আমার লেকের কাছে পৌঁছে গেলাম। শিলা আপু ওখানেই ছিলো। সাথে দুলাভাইকেও এনেছে দেখছি! আস্ত ছাগল মেয়ে! নিজের অপমানের দৃশ্য বরকে না দেখালে হতো না!
আমাদের দেখে আপু চমকে উঠার পাশাপাশি বিরক্ত হলো। কেমন বেরস মুখে বললো,
” বর্ষাকে এনেছ যে? বোঝাবুঝি আমাদের তিনজনের। ও এখানে কি করবে?”
অনিব সেকথায় কান না দিয়ে বলেন,
” শিলা, তুমি সাঁতার পারো?”
” এ কেমন প্রশ্ন? না- পারিনা।”
” তাহলে ভালোই হলো।”
আমি মিটিমিটি হাসছি। এবার হাসতে হাসতে পড়ে যাবার মতো অবস্থা। আহারে বেচারি আপু! কি অপমানটাই না হবে! স্বামী, সংসার, প্রেমিক সবই হারাবে। আপু হাজবেন্ড কিছু বলছে না। অনিবের সাথে আপু যেভাবে কথা বলছে তাতে এতক্ষণে উনার রাগে ফায়ার হবার কথা। অথচ উনি নির্বিকার।
অনিব, দীপ্ত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” তুমি হেল্প করবে নাকি আমি সব করব?”
ভদ্রলোক বললেন,
” এতদূর সব যখন তোমার প্ল্যানে চলছে,তখন বাকিটাও তুমিই পারবে। আমাকে নিরব দর্শক থাকতে দাও।”
“ওকে ডান।”
শিলা আপু লেকের পাড় ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার কিছু বুঝে উঠার আগেই অনিব এক ধাক্কায় পানিতে ফেলে দিলো। ময়লা পানিতে আপু কেমন অসহায় হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। পাড়ের কাছের পানির গভীরতা কম থাকায় ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে যে অপমানটা সে হলো,মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ভুলবে না। আশপাশের দোকানি, রাস্তার লোক এসে এক প্রকার জটকা পেকে গেছে। লোকজন এসে পড়ায় অনিব জোর গলায় বললো,
” আরে কি পাগল নাকি মেয়েটা?”
একটা লেক এসে বললো,
” ভাই কি হয়েছে? ”
” আরে ভাই বইলেন না। মেয়েটা হঠাৎ দৌঁড়ায় এসে পানিতে ঝাপ দিলো। সুসাইড কেস মনে হয়। ”
লোকজনের শোরগোল দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। আপু পড়ি মরি করে ততক্ষণে পানি থেকে উঠে এসেছে। সর্বাঙ্গে কাদায় মাখামাখি। টুপটুপ করে গা থেকে অনর্গল পানি ঝরছে। চুলগুলো এলোমেলো লেপ্টে রয়েছে। সত্যিই আপুকে কেমন পাগলি পাগলি লাগছে। আপু থতমত ভঙ্গিতে রাগে কটকট করে বললো,
” এত বড় সাহস তোমার অনিব? আমাকে পানিতে ফেললে? এই তুমি কিছু বলো।”
শেষ কথাটি আপুর হাজবেন্ডকে উদ্দেশ্য করে বলা। দীপ্ত সাহেব বলেন,
” আমি যা করার করেই ফেলেছি। সামনের সপ্তাহে ডিভোর্স পেপার হাতে পেয়ে যাবে। কেন এই প্রশ্ন ভুলেও করোনা। সামান্য অপমান হয়েছ। প্রশ্ন করলে এর চেয়ে বেশি অপমান হতে হবে।”
শিলা আপু যা বোঝার বুঝে নিলো। তার কর্মকান্ড সকলের বোধগম্য হয়েছে বুঝতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। হাত জোড় করে বললো,
” প্লিজ এমন করোনা। আমরা সুখে সংসার করবো। অনিব কি বলেছে জানিনা। কিন্তু ওর কথায় তুমি বিশ্বাস করলে ভুল করবে। আমাদের সুখের সংসার অন্যের ঠুংকো যুক্তিতে ভেঙো না প্লিজ। একটা সুযোগ দাও।”
দীপ্ত সাহেব নিজ মতে অটুট থাকলেন।আপু কাকুতি-মিনতি করেও কোনো কাজ হয়নি।আপুকে ফেলে চলে আসতে আমরা বাধ্য হই। অনিব আর আমার নতুন জীবনের সূচনা হলো একজন মানুষের জীবনের ইতি টেনে।যদিও এমনটা কখনো চাইনি। মানুষের কপাল নিজ দোষেই পুড়ে। সর্বদা যারা পরহিংসায় মশগুল থাকে তারা কখনো নিজে সুখী হতে পারে না। যেহেতু নিজে সুখী না,সেহেতু মানুষকেও সুখে দেখতে চায় না।
মোরাল- অপরের জন্য ভালো চিন্তা করতে না পারলে অন্তত খারাপ চিন্তা করা উচিত নয়।
সমাপ্ত…………….
( গল্প শেষ। আপনারা শিলার শাস্তিতে খুশি তো? আর অপেক্ষা করুন আমার নতুন গল্পের। কতক্ষণ ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন)