Unexpected_lover
part_04
#Rimy_Islam
তিনি কি বাড়ির সবার সাথেই একরোখা আচরণ করেন? তাহলে এমন একজনের সাথে পুরো জীবন কাটাবো কিভাবে? ভাবতেই চোখে জল এসে পড়ে। এ ছাড়া কোনো উপায় কি আছে! নেই তো!
দুই বছর পূর্বে,
আজ আমার বড় বোন শিলার জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে বিশাল বড় ঘরের। আমাদের মতো মধ্যম ঘরের মেয়ের জন্য এত বড় সম্বন্ধ আসার পেছনে মূল ভূমিকা আমার মামার। মামার বাড়ির লোকদের অনেক উঁচু স্তরের লোকের সাথে উঠাবসা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন মামা। ইতোমধ্যে নাকি ছেলের কাছে আপুর ছবিও
পাঠানো হয়েছে। ওদিক থেকে হ্যাঁ সূচক উত্তর এসেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার ছেলেটা কেমন সেটা আমার অজানা। শিলা আপু সেই তখন থেকে ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
” এই বর্ষা! তোর ছেলেকে একবার দেখা দরকার ছিল রে। ছবি আছে এখনো, একবার দেখতে পারিস।”
আমি মুখ বেঁকে বললাম,
” তোমার বর তুমি দেখো। সংসার করবে তুমি। তোমার পছন্দেই আমি খুশি। তাছাড়া আগে দেখে আকর্ষণ হারাতে চাই না। একেবারে বিয়ের দিন দেখবো। ”
“ছেলের ফোন নাম্বার দিয়েছেন মামা। কথা বলি একটু, কি বলিস?”
” তোমার ইচ্ছে। ”
আপা টানা একঘন্টা কথা বলে এসে জানালো আগামীকাল ছেলের সাথে দেখা করতে যাবে। ছেলের নাম মুনতাসির। এর বেশি কিছু জানি না। জানতে চাইও না। পরদিন সকালে ঠিক সময়ে গেলাম। বেশ অবাক হই যখন দেখি একটা রোগা,পাতলা ছেলে নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করছে।
” সিরিয়াসলি আপু! এই ছেলে তোমার কেমনে পছন্দ হয়?”
” আরে ধুর! এইটা ছেলের রিলেটিভ হবে হয়তো। ছেলে মাশাল্লাহ হিরোর চেয়ে কম নয়।”
আমরা সামনে গিয়ে ছেলেটার সাথে কথা বলে জানতে পারি মুনতাসির সাহেব আসেননি। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই তথ্য জানাতেই ছেলেটা এসেছে। শিলা আপু খুব গোমড়া করে আমার হাত ধরে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো,
” ধনীর দুলাল বিয়ে করার এই এক জ্বালা। নিজের দাম থাকে না। দেখেছিস কেমন অপমান করলো আমাকে! ফোন করে জানালে আমরা আসতাম না। এত দূর এসে এভাবে অপমান করে কি বুঝালো ছেলেটা? বিয়ে করবো না এই ছেলেকে। পরে দেখা যাবে ছেলের নারী সংক্রান্ত প্রবলেমও আছে।”
আমি হাসলাম। শিলা আপু খুব সেনসিটিভ। বিশেষ করে মানুষকে সন্দেহের প্রবণতা একটু বেশিই মনে হয়। সেদিনের সব প্ল্যান বাদ দিয়ে আমরা বাড়ি চলে যায়।
আচ্ছা শিলা আপু কেমন আছে? অনেক সুখে আছে হয়তো। আমি বাড়ি থেকে চলে আসার আগে একটা দীর্ঘ চিঠি তার জন্য ফেলে এসেছি। যেন বাড়িতে আমাকে নিয়ে তান্ডব না হয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
বর্তমান,
মিতি কেঁদে কেঁদে চোখের জলে বন্যা করে ফেলছে। আমি শান্তনা দিলাম। কিছুতেই কাজ হলো না। এরপর অনিব এসে তবেই কাজ হলো।
উনি বললেন,
” মিতি স্যরি রে। তুই মাকে একটুও সাহায্য করিস না কাজে। তার উপর এত বেশি বকিস যে কোথায় কি বলতে হয় বুঝিস না। এদিকে কাজের প্রেসার, সব মিলে তোর উপর রাগটা ঝেড়ে ফেলেছি। এমন আর হবে না সোনা বোন আমার। মাফ করে দে?”
মিতি হেসে বললো,
” ব্যাপার না ভাইয়া। তুমি মাফ চেয়েছো, আমি খুশি হয়ে গেছি। ”
” এরপর থেকে সাবধানে কথা বলবি।”
” হুম। ”
মিতি তাড়াহুড়ো করে ঘর ছেড়ে চলে যায়। এদিকে আমার মনে খটকা। মিতিকে শাসনের পেছনে মূল কারণ তবে আমি! আমাকে সবকিছু বলে দেয়ায় উনি রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু এটা এমন কি যে গোপন করতে হবে?
আমি সন্দেহপ্রবল নজরে তাকিয়ে বলি,
” মিতিকে বকলেন কেন? আমাকে আপনার ওই এক্স গার্লফ্রেন্ড আর বিয়ে ভাঙা কথা বলেছে বলে? কিন্তু আপনি শুনলেন কিভাবে? রুমে তো অন্য কেউ ছিল না?”
অনিব চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বললো,
” এত আধুনিক যুগে এমন বাড়িতে সি.সি টি.ভি থাকবে না? চব্বিশ ঘন্টা তোমাকে দেখে রাখবো এত সময় আছে? শর্টকাট মাধ্যম তো আছেই।”
আমি রুমের চারপাশে ভালোমতো চোখ বুলিয়ে চলেছি। কিছুই নজরে পড়ছে না। হতাশ হয়ে বললাম,
” কিছু দেখছি না তো! কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন?”
অনিব সজোরে হেসে বললেন,
” এত ছোট মাথায় বেশি চাপ নিও না। মাথা ফেটে যাবে। খুঁজতে থাকো, যদি পাও আমাকে বলো। কেমন?”
তিনি চলে যেতেই আমি পুরো ঘর হন্যে হয়ে খুঁজলাম। কোথায় কিছু পেলাম না। আচ্ছা, আমাকে এখন সর্বদা কারো নজরে থাকতে হবে? উঠে, বসে এমনকি শুয়েও শান্তি নেই। একটা মানুষকে সর্বক্ষণ কেউ সব এ্যঙ্গেলে দেখছে ভাবলেই মাথায় রাগ তরতর করে উঠে পড়ছে। যেনো আমি কোনো নমুনা, যাকে গবেষণাগারে সারাক্ষণ বিশেষ সংরক্ষণ মাধ্যমে রাখছেন। কি এক আশ্চর্য মানুষ!
আজ আমার গায়ে হলুদ সন্ধ্যা। আমার বললে ভুল হয়, আমাদের হবে। সাধারণত ছেলে মেয়ের বাড়ি ভিন্ন হলেও আমাদের ক্ষেত্রে একই বাড়িতে থেকে সব হচ্ছে। বাড়ির সামনের খোলা ময়দানে দুটো মঞ্চ করা হয়েছে। একটাতে ছেলে বসবে, অন্যটায় মেয়ে। আমি ইতোমধ্যে বসে পড়েছি। ঠিক আমার মুখোমুখি বেশ খালিক দূরে অপরটায় অনিব বসে আছেন। মধ্যখানে একটা লম্বা সাদা পর্দা ঝুলছে। ফলে কেউ কাউকে ঠিকমতো দেখতে না পেলেও আবছা অবয়ব বেশ টের পাচ্ছি। চারিদিকে অসংখ্য লাইটের আলো চোখে পড়ায় খুব বিরক্ত বোধ করলেও সর্বদা মুখে কৃত্রিম হাসি বেশ ঝুলিয়ে রেখেছি।
হলুদ মাখার সময় দিতি ভুলবশত আমার চোখের ভেতরে লাগিয়ে দেয়। চোখ জ্বলতে শুরু করে। তাকাতে পারছি না। পাশ থেকে কেউ একজন দৌড়ে এলো।
” সর তুই। একটু দেখে কাজ করতে শিখলি না। কাজের কোনো ছিরি নেই। যা পানি আন।”
কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলেও তাকাতে পারলাম না। বন্ধ চোখেও অনিবের মুখচ্ছবি যেন স্পষ্ট আমার কাছে। তিনি এক হাতে পানি নিয়ে অপর হাতে আমার চোখ টেনে ধরে ছিঁটা দিতে লাগলেন।
আর বলতে থাকেন,
” চোখ একটু টেনে রাখো। বন্ধ করলে ময়লা দূর হবে না। জ্বালা করবে বেশি। ভাগ্য ভালো মরিচ ডলে দেয়নি, হলুদই দিয়েছে। দু’বোনকে কোনো ভরসা নেই। হলুদের জায়গায় যে মরিচ দিবে না!
আমি এমন অবস্থায়ও না হেসে পারি না। হাসতে হাসতে বললাম,
” এত খারাপ ব্যবহার করবেন না প্লিজ। ওরা এখনো ছোট। আর এটা সামান্য একটা ব্যাপার। ঠিক হয়ে যাবে। দেখুন, অনেকটা ঠিক বোধ করছি।”
” এটা যে কত বড় কিছু তুমি বুঝবে না বর্ষা। ”
কি! আমি থমকিত চিত্তে ভাবতে থাকি, কেন এত মায়া আমার জন্য! প্রথমে আমাকে বিয়ে করতে চাইলেন, মেনে নিলাম। কখনো বা খারাপ আচরণ করেন, কখনোবা ভালো। বারে বারে নতুন রঙে সামনে আসেন। একি মানুষকে প্রতিবার নতুনভাবে জানছি, বুঝছি, দেখছি। আর কত কি জানা বাকি আছে?
হয়তো বিয়ের পর আরো অনেক নতুন তথ্য জানতে পারবো।
চলবে…………