হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ৫+৬

#হঠাৎ_ভালোবাসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
মুমুর্ষিরা শাহরীন
Part-5

সকালে প্রীতি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অন্য এক জায়গায় আবিষ্কার করলো।প্রথমে ভয় পেলো অজানা জায়গা দেখে কিন্তু পরে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো নীলাভ ওর দিকে গরুর মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে।

ভয় পেয়ে প্রীতি বুকে থু থু দিলো আর একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে আড়মোড়া ভাঙলো।হাতে ব্যাথা পেলে একটু শব্দ করে উঠলো।

নীলাভ এখনো প্রীতির দিকে তেমন ভাবেই তাকিয়ে আছে।প্রীতি হাই তুলছিলো সেটা অফ করে আড়চোখে নীলাভের দিকে তাকিয়ে বলল,

-এমন গরুর মতো তাকায় আছেন কেন?😒

নীলাভের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।

প্রীতি সারারুমে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,

-আমি এখানে কেনো?এটা কোথায়?

নীলাভ কিছু না বলে দাতে দাত চেপে আছে।বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে সে একটু পর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-ঝামেলা তোমার কাছে আসে না কি তুমি ঝামেলা বয়ে আনো?

প্রীতি বিরক্তিতে নীলাভের দিকে তাকালো।নিজের হাত টা দেখতে দেখতে বলল,

-হাত খুব ব্যাথা করছে।ঘুম ও পাচ্ছে।খিদাও লাগছে।রাতেও খাই নাই।ফোন ও পাইতাছি না।শাওয়ার ও নিতে মন চাইতাছে। এখন এতোসব জরুরি কাজ ফেলে আপনার এই আজাইরা কথার উত্তরের টাইম নাই আমার কাছে।

সাথে সাথে নীলাভ চিল্লিয়ে উঠলো,

-আমার কথা আজাইরা হ্যা ?জানো কালকে রাতে কি অবস্থা হইছিলো তোমার ?এতো রাতে কোনো সুস্থ মেয়ে মানুষ বাইরে বের হয়?

প্রীতি কানে হাত দিলো নীলাভের এমন চিতকারে।তারপর চোখ মুখ খিচে বলল,

-ঝামেলা আমার পিছু না ছাড়লে কি করবো আমি।

নীলাভ -ঠিক.. তাই তো।মানে আমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই তোমার ঝামেলা লাইগে আছে।একবার গুন্ডা একবার রেললাইনের নিচে একবার গাড়ির নিচে চাপা পড়া আরেকবার মাতাল ছিনতাইকারীর হাতে পড়া।

প্রীতি গাল ফুলিয়ে বসে রইল।

নীলাভ -এই গাল ফুলানি, ঝামেলা আর সারাদিন পকপক করা এই তিনটা ছাড়া আর কি পারো তুমি?বাই দা ওয়ে তোমার বিড়াল কই?🤨

প্রীতি দায়সারাভাবে জবাব দিলো,

-চলে গেছে।

নীলাভ ভ্রু কুচকে বলল,

-কেমনে?

প্রীতি মুখে একটা দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল,

-আমি যখন কাল গাড়ির নিচে চাপা পড়ছিলাম।তখন কই জানি চইলে গেছে।😕

নীলাভ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
-যার জন্য নিজের জীবন তুচ্ছ করছিলা।বিপদের সময় সেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে।

প্রীতি -হমম।

নীলাভ-ধরো তোমার ফোন।আমি নিজের কাছে রাখছিলাম।

প্রীতি ফোন পেয়ে খুশিতে বলল,

-থ্যাকিউ আমি ভাবছিলাম ওরা ফোন নিয়ে নিছে।

নীলাভ ওয়াসরুমে গেলো ফ্রেস হতে প্রীতি নীলাভের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। নীলাভ ওয়াসরুমে একবার ঢুকেও আবার বেরিয়ে এলো।প্রীতির দিকে তাকিয়ে শাসানো গলায় বলল,

-আগামী পাচদিন তুমি আমার সাথেই থাকবা। এই রিসোর্টের ম্যানেজারকে বলছিলাম আরেকটা রুম দিতে কিন্তু আর কোনো রুম খালি নাই।আর এই মুহুর্তে অন্য কোনো রিসোর্টে যেতে ইচ্ছা করছে না।আর তোমাকে তো আমি আর একা ছাড়তেই পারবো না।আগামী পাচদিন ঘুরে টুরে তোমাকে তোমার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে এসে তবেই আমার শান্তি।

প্রীতি উৎফুল্ল হয়ে বলল,

-সত্যি।

নীলাভ-না মিথ্যা।

বলেই নীলাভ ওয়াসরুমে ঢুকলো।প্রীতি নীলাভের কথায় পাত্তা দিলো না।ও তো কাটা হাত টা ঠিক ভাবে রেখে আরেক হাত দিয়ে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে🥴

নীলাভ ওয়াসরুমে গিয়ে বিরবির করে বলল,

-আল্লাহই জানে পাচদিন পর আমি সুস্থ থাকি কি না?আবার পাবনায় ই যাওয়ার লাগে না কি আমার?

নীলাভ শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো প্রীতি বসে বসে ফোনে লুঙ্গি ডান্স গান ছেড়ে দিয়ে এক হাত দিয়ে উথাল-পাতাল করছে।মানে নাচছে আর কি।

নীলাভ ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে ডেসিন টেবিলের সামনে গেলো।

ওমনি প্রীতি এমন জোরে এক চিতকার দিলো।নীলাভ লাফিয়ে উঠলো।

প্রীতি চিৎকার দিয়ে কম্বলের ভেতর ঢুকে গেছে।নীলাভ হা করে প্রীতির দিকে চেয়ে বলল,

-এমন চিৎকার দিলা কেন?পাগলা কুকুরে কামড় দিছে?

প্রীতি -না।

নীলাভ-তাহলে?

প্রীতি -আপনি এমন জামা কাপড় ছাড়া কেনো?

নীলাভ নিজেকে একবার স্ক্যান করে নিজেই লজ্জা পেলো।আসলে এটা ওর স্বভাব।তোয়ালে পড়ে বের হওয়া।রুমে যে প্রীতি আছে তা খেয়ালই নেই ওর।তাও নীলাভ বলল,

-কই আমি জামা কাপড় ছাড়া আমি তো তোয়ালে পড়ে আছি দুইটা। একটা নিচে পড়ছি আরেকটা গলা দিয়ে ঝুলায় দিছি।

প্রীতি রেগে জবাব দিলো,

-তা আপনি কি এখন সব খুলে বসে থাকতে চান?

নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,

-হুদাই একটা।

আবার নীলাভ মুখ ঘুরে সামনে তাকালো।হঠাৎ কি মনে করে ওর ঠোঁটে দুষ্ট হাসি ফুটে উঠলো।
ও পা টিপে টিপে প্রীতির কাছে গেলো।

প্রীতির উপর থেকে কম্বলটা টান মেরে সরিয়ে দিলো।

সাথে সাথে প্রীতি চিৎকার করে নীলাভ কে জড়িয়ে ধরে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রইলো।

ঘটনার আকস্মিকতায় নীলাভ অবাক।ও চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো করে সামনে দেয়ালে তাকিয়ে আছে।বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে।সাথে ওর মনে হচ্ছে নিজের মাথায় একটা বারি দিতে।কে বলেছিলো এভাবে কম্বল টা সরাতে?তাহলে আজ আর এ পরিস্থিতি হতো না?

নীলাভ বিরক্তিতে প্রীতিকে নিজের কাছে থেকে সরালো।আর বলল,

-একদম কাছে আসবা না।

প্রীতি -আপনিও একদম এডভান্টেজ নিবেন না।

নীলাভ -আমি এডভান্টেজ নেই?

পরমুহূর্তেই নীলাভ বলল,

-ঠিক আমি এডভান্টেজ নেই।মানে আমি তোমার সাথে কথা কেনো বলি?‍ধ্যাত। তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেও এখন প্রচুর বকবক করি।

প্রীতি -হুহ😤

,

নীলাভ-কি খাবা অর্ডার দেই।

প্রীতি -যা ইচ্ছা।আজকে কই কই ঘুরতে যাবো?

নীলাভ খাবার অর্ডার দিয়ে এসে প্রীতির পাশে বসে বলল,

-কোথাও না রেস্ট নেও।এমনি অনেক রক্ত পড়ছে আজকে বের হইলে আবার সেন্সলেস হয়ে যাবা।

প্রীতি মন খারাপ করে বলল,

-তাহলে হাতে আর মাত্র ৪ দিন সময়।

নীলাভ-উহু…কে বলল ৪ দিন সময় হাতে? আর মাত্র ৩ দিন সময় ৪দিনের দিন তো আমরা বের হয়ে যাবো ঢাকার উদ্দেশ্যে।

প্রীতি হালকা চেচিয়ে বলল,

-কি????

নীলাভ ফোন টিপতে টিপতে উত্তর দিলো,

-হমম।এই তিনদিন আমার নিলগিরি নিলাচল মেঘলা আর স্বর্ণমন্দির যাবো।

প্রীতি -মানে কি?আমরা নাফাখুম রেমাক্রি ফলস দেবতা পাহাড় এগুলা কোথাও যাবো না?

নীলাভ ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল,

-না…তোমারে এগুলা ঝর্না তারপর নদী টদীতে নিয়ে যাই তারপর তুমি এক ঝাপ দেও আর ভেসে যাও গা।পরে বলবা আমি তো গোসল করার জন্য ঝাপ দিছিলাম আমি ভাইসে চলে যাচ্ছি কেনো?এমনি পাহাড়ে নিয়ে যাচ্ছি তাই তো আমার ভয় লাগতাছে না জানি কখন কি করো তুমি? তোমারে আমি এক বিন্দু পরিমান বিশ্বাস ও করি না।

প্রীতি গাল ফুলিয়ে জবাব দিলো,

-আমি ঝর্ণা দেখবো।

নীলাভ-আমি নিয়ে যাবো না।একা যাইতে পারলে যাও।

প্রীতি-আপনি ই নিয়ে যাবেন।

নীলাভ- না।

প্রীতি -হমম।

নীলাভ-না।

প্রীতি -প্লিজ..

নীলাভ-না বলছি না।

প্রীতি ঠোঁট উল্টে বলল,

-প্লিজ….নিয়ে যান আমার অনেক শখ। প্লিজ নিয়ে যান।বাড়ি থেকে কি পালায় আসছি এমনি এমনি? আর বান্দরবান এসে ঝর্ণা দেখবো না।এটা কেমনে সম্ভব।প্লিজ নিয়ে চলেন কোনো জায়গায়।

নীলাভ প্রীতির এমন অসহায় মুখ দেখে বলল,

-আচ্ছা দেখি একটা শৈলপ্রপাতে নিয়ে যাবো নি

প্রীতির মুখে খুশিদ ঝলক,

-সত্যি?

নীলাভ-হমম….

প্রীতি সাথে সাথে ইয়েয়ে বলে চেচিয়ে নীলাভ কে জড়িয়ে ধরলো।নীলাভ কেশে ফেলল প্রীতির এমন আচরনে।প্রীতি লজ্জা পেয়ে সরে গেলো।নীলাভ কাশার ভঙ্গি করে অন্যদিক ফিরে গেলো।

নীলাভের অন্যদিকে ফেরা দেখেই প্রীতি নখ কামড়ে ব্লাশিং হতে লাগলো।

রাতে প্রীতি বিছানায় আর নীলাভ সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

_________________________

পরেরদিন সকাল ৬টা,

নীলাভ ওয়েট করছে প্রীতির জন্য।আর একটু পরই ওরা যাত্রা শুরু করবে নিলগিরির উদ্দেশ্যে।

নীলাভ ঘড়ির টাইম দেখছে আর বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকাচ্ছে বার বার।

মেয়ে মানুষ মানে আসলেই দেরি।

অপেক্ষার অবসন ঘটিয়ে এসে পড়লো প্রীতি।

নীলাভ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।হঠাৎ ওর চোখ আটকে গেলো প্রীতির দিকে।প্রীতি একটা জিন্স আর উপরে সাদা গেনজি পরেছে।মাথার চুল উচু করে বাধা হাতের এক পাশে হ্যান্ডব্যাগ একদম টুরিস্ট লাগছে।

নীলাভ এগিয়ে গিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,

-ড্রেস চেঞ্জ করে এসো।

প্রীতি চোখ কুচকে তাকালো।

নীলাভ -গেঞ্জি পালটে লং কোনো ড্রেস পড়ে এসো।

প্রীতি ঠোঁট উল্টে বলল,

-আর পারবনা হাতে ব্যাথা পাই বার বার।

নীলাভ-তুমি যাবা না কি আমি চেঞ্জ করায় দিবো।

প্রীতি চোখ বড় বড় করে রুমে দোড় দিলো।

প্রীতি চলে যেতেই নীলাভ হুসে আসলো।নিজেকে নিজেই বলছে,

-What’s wrong with you Nilav?মেয়েটা যা ইচ্ছে পরুক তোর এতো জ্বলে কেন?তোর কি সমস্যা।তুই কেন এই মেয়েটাকে নিয়ে এতো ভাবিস?

প্রীতি ড্রেস পালটে একটা লং ওয়ানপিস পড়ে এলো।

এরপর ওরা ওদের যাত্রা শুরু করলো।

নীলগিরি গিয়ে ওরা একটা পাহাড়ের উপর রিসোর্ট বুক করল।

ঘরে গিয়েই প্রীতি ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।আর বলল,

-এতো উচুতে পাহাড়ের উপরে কোনো পাগল রিসোর্ট বানায়?উফফ..মাগো আমার পা….

পায়ে হাত দিয়ে বলল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে একা একাই বিরবির করে বলল,

-আমি মনে হয় পঙ্গুই হয়ে যাবো।হাত পা সব জায়গায় শুধু ব্যাথা আর ব্যাথা।

নীলাভ একবার প্রীতির দিকে তাকিয়ে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এলো।নীলাভ ওয়াসরুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে প্রীতি বলল,

-রিসেপশনে আপনি হাসবেন্ড ওয়াইফ কেন বললেন?

নীলাভ বারান্দার সামনে থেকে পর্দা সরাতে সরাতে বলল,

-কারন এই রিসোর্ট টা কাপলদের জন্য শুধু আর এটাই আমার খুব বেশি পছন্দ হইছিলো।

বারান্দাতে থাই গ্লাস দেওয়া।পর্দা সরাতেই এক টুকরো মিস্টি আলো গ্লাস ভেদ করে ঘরে ঢুকলো।প্রীতি তো স্তব্ধ হয়ে গেছে।বিছানা ছেড়ে উঠে নাচানাচি শুরু করে দিছে।আর বলছে,

-ওয়াও এতো সুন্দর এতো সুন্দর।……আমি এতো সুন্দর জায়গা আগে কখনো দেখি নি।

বারান্দায় গিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে মিস্টি হেসে প্রীতি বলল,

-জায়গাটা এতো কেনো সুন্দর?

নীলাভ কিছু না বলে প্রীতির পাশে দাড়ালো।

বারান্দা দিয়ে আশেপাশের ইয়া বড় বড় পাহাড় দেখা যায়।পাহাড়ের মাথায় মেঘ ভাসছে। আকাশ টা স্বচ্ছ নীল।হালকা কুয়াশায় আচ্ছন্ন সারা প্রকৃতি।

প্রীতির চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে খুশিতে।

নীলাভ অবাক চোখে প্রীতির দিকে তাকিয়ে ভাবছে।
-এতো নরম ও মানুষ হয় না কি?এইটুকুতেই চোখে পানি?মেয়েটা সত্যি খুব অদ্ভুত।

নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,

-তুমি সত্যি খুব ভালো।

প্রীতি হঠাৎ নীলাভের এমন কথা শুনে তাকালো।ভ্রু নাচিয়ে বলল,

-কিছু খাইছেন না কি?

নীলাভ এক ভ্রু উপরে তুলে বলল,

-মানে?

প্রীতি চোখ মুখ কুচকে বলল,

-না মানে?আমারে ভালো বলতাছেন……
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-6

প্রীতি চোখ মুখ কুচকে বলল,

-না মানে..আমারে ভালো বলতাছেন মেয়াদবিহীন গাঞ্জা খাইছেন না কি?😣

নীলাভ রেগে বলল,

-ইউ…..

সাথে সাথে প্রীতি দু হাত দিয়ে নিজের দু কান চেপে ধরে বলল,

-স্যরি স্যরি চিল্লায়েন না প্লিজ। আসলে আপনি সারাদিন আমার সাথে ঝগড়া করেন আবার এখন আপনি আমাকে ভালো বলছেন তাই আর কি একটু কনফিউশান এ পড়ে গিয়েছিলাম।

নীলাভ রেগে ঠাস করে বারান্দায় গ্লাস লাগিয়ে ভেতরে এসে পড়লো।প্রীতি হাফ ছেড়ে বাচলো।ও আবার প্রকৃতি দেখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

রিসোর্ট টা একটা পাহাড়ের একদম উপরে। রিসোর্টে যাওয়ার জন্য পাহাড় কেটে কেটে সিড়ি বানানো হয়েছে।
প্রীতি চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে ওদের বান্দরবান থেকে নিলগিরি আসার সময়টুকুকে ভাবতে লাগলো,

ওরা চাদের গাড়ি দিয়ে এসেছে।

কি সুন্দর সেই প্রকৃতি।আশেপাশে সবুজ তরতাজা গাছপালা।রাস্তা আঁকাবাকা।গাড়ি একবার উপরে উঠছে আবার একদম নিচে যাচ্ছে।যতবার গাড়ি উপর নিচে উঠছে নামছে বুকটা ঢিপঢিপ করে প্রীতি বারবার খামচে ধরছে নীলাভকে।বেচারা নীলাভ প্রতি বার প্রীতিকে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রীতি আবার খামচে ধরছে।খামচাতে খামচাতে নীলাভের হাতটাই শেষ করে ফেলেছে।

রাস্তার দু ধারে মাঝে মাঝে খাদ পড়ছে।আবার মাঝে মাঝে দু একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে।আবার পাহাড়।আবার গাড়ি এমন এংগেলে বেকে ঘুরছে যেনো একটু হলেই একদম খাদে গিয়ে পড়বে।প্রীতি সারারাস্তা নীলাভের হাত খামচে ধরে প্রকৃতি দেখে এসেছে।আর নীলাভ ফোন টিপতে টিপতে।

এতো এতো পাহাড়… দেখে প্রীতি একদম হা হয়ে আছে।ও বিস্ময়ে কি বলবে তাই ভুলে গেছে।এতো এতো সবুজ!চারপাশ শুধু সবুজ আর সবুজ আকাশে মেঘ…মাঝে মাঝে কিছু উচু পাহাড়ে মেঘ ছুয়ে যাচ্ছে।কি অপূর্ব দৃশ্য! রাস্তার দু পাশে নানানধরণের বাহারি রঙের পাহাড়ি ছোটো ছোটো ফুল।

প্রীতি হঠাৎ নীলাভের বাহু হালকা করে ধরে তার কাধে নিজের মাথাটা এলিয়ে দিলো।আর বলল,

-এতো এতো সুন্দর কেনো জায়গাটা?জাস্ট কিছু বলার নেই।এতো সুন্দর ও কি জায়গা হয়?

প্রীতির গাড় বাদামি চোখে উজ্জ্বলতা। চোখে মুখে খুশি।বড় চঞ্চল সে দুটি চোখ।সবকিছু জানার কৌতুহল সে চোখে।

নীলাভ কিছুক্ষণ প্রীতির দিকে তাকিয়ে থাকলো।কি ভেবে যেনো প্রীতির মাথাটা আর তার কাধ থেকে সরালো না।একটু মুচকি হেসে বলল,

-এই টুকুতে এতো খুশি এতো প্রাণচঞ্চলতা তাহলে নিলগিরি নীলাচল মেঘলা গিয়ে কি করবে?

প্রীতি -জানি না..আমি শুধু এটা জানি যে আমি এখন দু চোখ ভরে এই সুন্দর সবুজ নীল আবার মেঘে ভরা পাহাড় গুলো দেখবো।

বলেই প্রীতি গাড়ি থেকে মাথাটা বের করলো।

সাথে সাথে নীলাভ প্রীতির মাথাটা তাড়াতাড়ি ভেতরে আনলো আর একটু ধমকের সুরে বলল,

-পাগল না কি তুমি? জানো,রাস্তা কতোটা রিস্কি?পাহাড়ি রাস্তা এটা।এমন পাহাড় তুমি সারা বান্দরবানের দেখবা।মাথা বের করে দেখতে হবে না।চুপচাপ বসো।ঝামেলা একটা।

প্রীতি গাল ফুলিয়ে বসে রইল।

আঁকাবাঁকা অনেকটা পথ পেরিয়ে তারা এসে পড়লো নিলগিরি।

প্রীতি চোখ খুলল।

ভাবনা থেকে বেরিয়ে চারিপাশ টা দেখে আবার মিস্টি করে হাসলো।ওর সাথে সাথে যেনো প্রকৃতিও হাসছে।মুহুর্তেই যেনো সব প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে।প্রীতি নিজের ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হাসলো।ওর শুধু হাসতে ইচ্ছে করছে।শুধুই হাসতে ইচ্ছে করছে।বুক ভরে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে যে নিশ্বাস ঢাকার কোথাও নেওয়া যায় না।প্রীতি নিজের গাড় বাদামী চোখ গুলো দিয়ে সবকিছু দেখতে লাগলো আর ভাবলো,

-আচ্ছা আমার চোখেই কি এতো সুন্দর লাগছে পাহাড় গুলা?না কি সবার চোখেই এমন লাগে?এতো এতো সুন্দর ও কি প্রকৃতি হয়?আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া।

এতো মেঘ…….পাহাড়ের উপর শুধু সাদা আর সাদা। তুলোর মতো উড়ছে যেনো। তার মধ্যে মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে ঘাড় সবুজ পাহাড়। কি যেনো ভেবে প্রীতি দৌড়ে ভেতরে গেলো।

ব্যাগ লন্ডবন্ড করে কি যেনো খুজে চলেছে।কিন্তু পাচ্ছে না।নীলাভ কই থেকে যেনো আসলো।বাইরে গিয়েছিলো ও।এসে দেখলো প্রীতি এমন করে ঘর ছিল্লাবিল্লা করতাছে।

নীলাভ এসে প্রীতির হাত ধরে বলল,

-কি খুজছো?

প্রীতি নীলাভের দিকে তাকালো।নীলাভ চমকে উঠলো। হঠাৎ কি এমন হলো যে, মেয়েটার চোখে পানি।এই ঘাড় বাদামি চোখে যে পানি মানায় না।একদম ই মানায় না।শুধু হাসি মানায় যে।প্রীতি এবার ধরা গলায় বলে উঠলো,

-আমার ক্যামেরাটা কোথায় দেখেছেন?ওটা না পাচ্ছি না।আমার খুব ফেবারিট ক্যামেরা। আমি যদি কোথাও যাই তখন সেটা আমার সঙ্গে করে নিয়ে যাই।আশেপাশের সবকিছু ছবি তুলি।যখন আমার খুব মন খারাপ থাকে সেটা থেকে আমি ছবি দেখি আমার ফেমিলি মেম্বারদের ছবি দেখি।আমার ক্যামেরাটা কোথায় বলুন না?

কথা গুলো এক নাগাড়ে বলেই প্রীতি বেডে বসে কান্না করতে লাগলো।

নীলাভ হাটু ভেঙে প্রীতির সামনে বসে বলল,

-দেখো তো এটা কি তোমার?

প্রীতি চোখ তুলে তাকালো।গাল বেয়ে পানি পড়ছে এখনো মেয়েটার।প্রীতি এক মুহুর্তেই লাফিয়ে উঠে বলল,

-ইয়েস ইয়েস এটাই তো আমার।আমার…..আমার ক্যামেরা।

ক্যামেরা টা বুকে জড়িয়ে ধরে প্রীতি হেসে ফেলল।তারপর ক্যামেরা টা চেক করতে লাগলো সব ঠিক আছে কি না।

নীলাভ প্রীতির কাজ কর্ম দেখে ভাবলো,

-মেয়েটাকে বুঝা সত্যি বড় দায়।এই এক্ষুনি, মেয়েটা সামান্য কারনে নাকের জলে চোখের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছিলো।আবার এখন সামান্য কারনেই হাসছে।মেয়েটার চাওয়াটাই খুব সামান্য যেটা তার চেহারাতে ভেসে উঠে। খুব নরম মনের একটা মেয়ে।সাথে খুব ইমোশনালও।

নীলাভ নিজের অজান্তেই মাথা চুলকে হেসে ফেলল।

প্রীতি নিজের ক্যামেরা টা চেক করতে করতে বলল,

-কই ছিলো ক্যামেরাটা?

নীলাভ -কই ছিলো আর?একটা পিচ্চি নিয়ে গেছিলো।

প্রীতি -মানে?

নীলাভ-মানে হলো,তুমি যে দরজা খুলে রেখে বারান্দায় গিয়ে বসে আছিলা তখন আমিও একটু ওয়াসরুমে গেছিলাম।

ওয়াসরুম থেকে এসে দেখি একটা পিচ্চি পা টিপে টিপে ক্যামেরা টা আমাদের রুম থেকে নিয়ে যাচ্ছে।পিচ্চি মানুষ তো তাই বুঝে নি। পছন্দ হয়েছে নিয়ে গেছে হয়তো বা।

প্রীতি -ইন্টারেস্টিং তো…তারপর? তারপর কি হলো?

নীলাভ – তারপর আমি গিয়ে পিচ্চিটার কাছ থেকে ক্যামেরা টা নিতে চাইলাম পিচ্চি টা কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।সে কি কান্না!বাপরে বাপ…আমি তো বারবার বলছিলাম,

-বাপ আমার থাম তোর ক্যামেরা আমি নিবো না তাও কাদিস না।

শেষে পিচ্চিটার মা বাবা ছুটে আসলো।তারাও পিচ্চিটার কাছে থেকে ক্যামেরা নিতে পারছে না।শক্ত করে ধরে ছিলো পিচ্চিটা।পরে বুঝিয়ে শুনিয়ে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে দিছে।

প্রীতি -হাহাহাহা…ভালো লাগছে অনেক।

নীলাভ-ভালো লাগছে মানে?আমি কি তোমাকে স্টরি শুনাইলাম না কি?তুমি হইছো এক ঝামেলা তোমার জিনিসপত্র গুলা হইছে আরেক ঝামেলা, ভেজাল, প্যারা বুঝছো?

প্রীতি -এতো বুঝে কাজ নেই।হুহ…

বলেই প্রীতি বারান্দায় চলে গেলো ছবি তুলবে বলে।

নীলাভ ও বারান্দায় গেলো।বারান্দায় গিয়ে দেখলো প্রীতি ছবি তুলছে।একবার ক্যামেরা বাকা করে একবার নিজে বাকা হয়ে আবার সোজা হয়ে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে।
নীলাভ আনমনে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে প্রীতির একটা ছবি তুলে নিলো।

যেটাতে প্রীতি ক্যামেরাটাতে একটা চোখ রেখে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হাসছে।চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।জামার পার্ট সহ উড়ছে।

নীলাভ ছবিটা তুলে ভাবলো,

-হঠাত এর ছবি কেন তুললাম?এর ছবি দিয়ে আমি কি করবো?

তারপর ডিলিট করতে গেলো।আবার কি মনে করে আর ডিলিট করলো না।ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো।

প্রীতি ছবি তুলা শেষ করে বলল,

-আপনি ক্যামেরা আনেন নাই?

নীলাভ-এনেছি।

প্রীতি -ওওও…ছবি তুলবেন না?

নীলাভ-মেন মেন জিনিসের ছবি তুলবো।এখন চলো ব্রেকফাস্ট করে আসি।

প্রীতি -আচ্ছা যাবো।তার আগে এটা বলেন আপনি ওই শৈলপ্রপাতে আমাকে কখন নিয়ে যাবেন?আমার আর তর সইতাছে না।

নীলাভ-কালকে নিলাচল যাওয়ার পথে দেখিয়ে নিয়ে যাবো নি।এখন চলো।

প্রীতি -হমম চলুন…

রিসোর্টের পাশে একটা ক্যাফেটেরিয়া আছে সেখানেই ওরা সকালের নাস্তা করছে।

খেতে খেতে প্রীতি বলল,

-আমার না অনেক ক্যারাসিনের গন্ধ শুকতে ইচ্ছা করছে।😂

নীলাভের গলায় খাবার আটকে গেলো প্রীতির এমন কথা শুনে।বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে ও প্রীতির দিকে।এই মুহুর্তে ওর মনে একটা কথাই আসছে আর তা হলো,মেয়েটা পাবনা ফেরত পাগল। ওরে ভুল করে ওর বাবা মা রাস্তায় ছেড়ে দিছে।তা না হলে কি কেউ হুটহাট এ কথা বলে?ক্যারোসিন!লাইক সিরিয়াসলি এটার ও গন্ধ কারোর শুকতে ইচ্ছা করে?

নীলাভের এমন চাহনি দেখে প্রীতি চোখ ঘুরিয়ে বলল,

-এমন ভাবে তাকায় আছেন কেনো?

নীলাভ আবুলের মতো বলল,

-তুমি কি ক্যারাসিন খাও?

প্রীতি হেসে বলল,

-ওমা ক্যারাসিন খাবো কেনো? ক্যারাসিন কি খাওয়ার জিনিস?

নীলাভ দাতে দাত চেপে বলল,

-তা ক্যারাসিন কি গন্ধ নেওয়ার জিনিস?

প্রীতি খাবার মুখে চিবাতে চিবাতে বলল,

-হমম….ক্যারাসিনের গন্ধ তো আমার সেই ভালো লাগে।মনে হয় খেয়েই ফেলি।কেনো আপনার ভালো লাগে না?

নীলাভ-আমি তোমার মতো পাবনা ফেরত পাগল নই🙄তা শুনি আর কি কি প্রিয় জিনিস আছে তোমার?

প্রীতি উৎফুল্ল হয়ে বলল,

-শুনবেন,আচ্ছা শুনেন তাইলে।ক্যারাসিনের গন্ধ, তারপর জুতো কালি করেন না আপনারা? সেই কালির গন্ধ তো ওয়াও, জাস্ট ওসাম। মনে হয় একবারে খায়ে ফেলি।আমি তো বাসায় মাঝে মাঝেই কালি আর ক্যারাসিন নাকের সামনে নিয়ে গন্ধ শুকি।তারপর নতুন জুতার গন্ধ ভালো লাগে😂রং এর গন্ধ ভালো লাগে,প্লাস্টিকের নতুন পুতুলের গন্ধ ভালো…………..

প্রীতির কথার মাঝেই নীলাভ ওকে থামিয়ে দিলো।মুখে হাত দিয়ে বলল,

-আমি একটু আসছি।

এই বলে গিয়ে বমি করে আসলো।অবস্থা পুরাই খারাপ ওর।গিয়ে আবার প্রীতির সামনে বসলো।প্রীতি কিছু বলতে ধরলেই ওকে থামিয়ে দিয়ে নীলাভ বলল,

-সিরিয়াসলি এগুলা গন্ধ কারো ভালো লাগে?জুতার গন্ধ লাইক সিরিয়াসলি?তোমার সত্যি চিকিৎসা করা প্রয়োজন আশেপাশে কোনো ডাক্তার বা হসপিটাল থাকলে আমি ই তোমাকে চিকিৎসা করাইতাম।

প্রীতি নীলাভের কথায় পাত্তা না দিয়ে খেতে খেতে বলল,

-রতনে রতন চিনে।আপনি কি বুঝবেন?জীবনে কখনো এগুলা গন্ধ শুকে দেখছিলেন?একবার দেইখেন আর নাক থেকে সরাইতেই ইচ্ছা করবো না।

নীলাভ চেয়ারে গা টা এলিয়ে দিয়ে বলল,

-ঠিক রতনে রতন চিনে।ঠিক তেমনি জুতার কালি, ক্যারাসিন এরা মাথামোটা মানুষ গুলারে চিনে।

প্রীতি -হুহ……..😒

নীলাভ ও প্রীতির দেখাদেখি করল,

-হুহ……..😒

চলবে🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here