What a হাসবেন্ড পর্ব বোনাস

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#বোনাস_পর্ব
ভ্রমণ এই জীনিসটার প্রতি আমার কোনো সময়ই আগ্রহ ছিলো না, আর কখনো হবে কীনা জানিও না। আমি আমার রুমে থাকতে অনেক বেশি পছন্দ করি। একা থাকতে পছন্দ করি। বন্ধুরা সাজেক থেকে এসেই আমাকে ধরলো। ওদের এইসব আমার অনেক বিরক্ত লাগে, কিছু থেকে কিছু হলেই কি’লায় একেবারে বারোটা বাজিয় দেয়। বিরক্ত হয়ে বলে দিলাম, ‘এইসব ঘুরাঘুরি আমার পছন্দ না’
আমার কথা শুনে ওরা বলল, ‘ আমাদের সাথে তো গেলি না, মনে রাখিস। অ’ভি’শা’প দিলাম! তোর বউ প্রচুর, মা”রাত্মক, ভয়ংক’র পরিমানে ভ্রমণ প্রিয় হবে। তখন তোকে তোর বউ বেঁধে ঝুলাইতে ঝুলাইতে ঘুরাবে। ‘ -”
.
এরপর আর কিছু লিখা নেই। মুন কতগুলো পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখলো আর কোনো লেখা নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ২.১৭ বাজে। হৃদয় ঘুমুচ্ছে৷ মুন আবারও ডাইরির কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টালো। ডাইরির একেবারে শেষের দিকে লেখা পেলো। ও আবারও পড়তে আরম্ভ করলো৷
” আজ অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। পড়ালেখা, টিউশনি সব মিলিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। আমি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমি আজ অনেক খুশি৷ ইদানীং আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে আমি বুঝতে পারছি৷ আগের মতো গম্ভীরমুখো নেই আমি। একটু আকটু ঘুরাঘুরি করি। আর প্রতিদিন একবার হলেও ওই রাস্তায় যাই৷ আমার এখনো ওই আঙ্কেলটার কথা মনে আছে। সেদিনের পর আর দেখা হয় নি ওনার সাথে। ওই ঝালমুড়ি ঘটনার পর থেকে আমি আর ওই রাস্তায় যেতাম না। মেয়েটাকে আমার সম্পুর্ন বিরক্ত লাগতো৷ বেশি দরকার হলে ঘুরে একঘন্টা দেরি করে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতাম তাও ওই রাস্তায় যেতাম না। এভাবে প্রায় অনেকদিন কে’টে যায়। মেয়েটার কথাও প্রায় ভুলে গেছিলাম। হঠাৎ একদিন আব্বু আমার হাতে একটা ব্রিফকেস ধরিয়ে দিয়ে বলল যাত্রাবাড়ী যেতে। ইচ্ছা না থাকলেও বের হলাম। যাওয়ার সময় কোনো সমস্যা হলো না কিন্তু আসার সময় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হলো। বাস ন’ষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আধাঘন্টা পর ড্রাইভার বলল বাস ঠিক হয় নি আমাদের সবাইকে অন্য বাসে উঠিয়ে দিবে। ড্রাইভার আমাদের একটা বাসে উঠিয়ে দিলেন। বাসে উঠে প্রথমেই একেবারে শেষের সীটে বসা একটা মেয়েকে দেখলাম। না এমনটা না যে বাসে আর কেউ ছিলো। বাসভর্তি মানুষ ছিলো, এরমধ্যে যে কয়েকটা সীট খালি ছিলো সেগুলোতে আমরা বসে পড়লাম। লোকজন ড্রাইভারের উপর অনেক ক্ষেপেছিল। বাসে জায়গা না থাকা সত্ত্বেও কেন যাত্রী নিলো? এই সেই অনেক ঝগড়া হলো। আমি আবার এইসব ঝামেলার মধ্যে নেই। একটা খালি সীট পেয়ে সেটাতে তারাতাড়ি বসে পড়লাম আর এমনভাব করলাম যেন আমি আগে থেকেই এই বাসে ছিলাম। এতো চাপাচাপিতে আমার অবস্থা খা’রাপ হয়ে গেলো। আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে সরে দাঁড়াতে বললাম। লোকজন তখনও ঝগড়া করছে। তাদের সাথে আমিও যোগ দিলাম। ড্রাইভারকে বললাম, ‘এই আপনার কী কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই? বাসভর্তি থাকার পরও কীভাবে লোকজন উঠালেন? ‘
আমার কথা শুনে অনেকে আমার দিকে তাকালো। একজন বলে উঠলো,’ আপনিও তো আমাদের সাথে ছিলেন! খালি সীট পেয়ে বসে গেছেন। এখন আবার আমাদের উপর চিল্লাচ্ছেন। ‘
পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেলো। এমন পরিস্থিতিতে আমি জীবনে পড়িনি। এমন কাজও জীবনে করিনি। ওনার এই কথার পর কী বলা উচিৎ? আমি কিছু বলবো তার আগেই আমার পেছনে বসা একজন লোক বলল, ‘ এই ছেলেটা আগে থেকেই এখানে বসেছিলো৷ আমি দেখেছি। এইসব কথা বলে মানুষজনদের বিব্রত কেন করছেন? ‘
লোকটার এমন কথায় আমি ভীষণ অবাক হলাম। আমি আগে থেকে ছিলাম?সত্যিই? কিন্তু কীভাবে?
সন্দিহান হয়ে পেছনে তাকাতেই মধ্যেবয়স্ক লোকটা ভূবণভোলানো এক হাসি দিলো। সাথে সাথে আমি ভরকে গেলাম। তারাতাড়ি সোজা হয়ে বসলাম। লোকটা মিথ্যে বলল কেন?
অনেকক্ষণ পর আমি আবার পিছনে তাকালাম। সবাই যখন ঝগড়া করতে ব্যস্ত তখন পেছনে একটা মেয়ে হে হে করে হাসছে। বাসে উঠেই ওকে দেখেছি। চেহারাটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছি?
আমি খুব বিরক্ত হয়ে মেয়েটাকে দেখতে লাগলাম। একটু পর বিরক্ত দৃষ্টি মেয়েটার দিকে নিক্ষে’প করছি, হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। দেখলাম পেছনে বসা সেই লোকটা হাসছেন। কেন যেন আমার ওনাকে ভয় করছে। আমি নিজেকে সামলে মনে সাহস যুগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আমরা কী একে অপরকে চিনি?’
লোকটা হাসতে হাসতে বলল, ‘ না তো। ‘
-‘ তাহলে হাসছেন যে? ‘
-‘ আপনি কী আমাকে চেনেন? ‘
-‘ না তো। ‘
-‘ তাহলে আমার দিকে কিছুক্ষণ পর পর তাকাচ্ছেন কেন?’
আমি আবারও সোজা হয়ে বসলাম। লোকটা আমার সাথে এভাবে কথা বলছে কেন?জিজ্ঞেস করবো? পেছনে ফিরে দেখলাম উনি এখনো হাসছেন। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আপনি তখন মিথ্যে বললেন কেন?’
-‘ আপনিও তো মিথ্যে বলেছেন ‘
-‘ আপনি সত্যিটা বলতে পারতেন ‘
-‘ হ্যাঁ, কিন্তু বলিনি। ‘
-‘ কেন? ‘
-‘ জেনে শুনে কাউকে বিপ’দে ফেলতে তো আমি পারি না। আপনি ইচ্ছে করে বাসে আসেন নি, সমস্যা হয়েছে দেখেই এসেছেন। এই একটা সীট খালি ছিলো, সীটটা আপনার ভাগ্যে ছিলো তাই বসেছেন। ‘
-‘ কিন্তু আপনি তো বললেন যে আমি আগে থেকেই ছিলাম। আমাকে দেখেছেন আপনি । আমি তো ছিলাম না। এটা বললেন কেন?’
লোকটা একগাল হেঁসে বললেন, ‘ মাঝেমধ্যে বা’টপারি করতে ভালোই লাগে, বুঝলেন!’
ওনার কথায় আমি অবাক হলাম। লোকটা কী বোঝাতে চাইলো? এরপর আরও কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর শুনলাম উনি কার সাথে যেন কথা বলছেন। তাকিয়ে দেখলাম ওই মেয়েটা৷ লোকটাও মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।মনে হচ্ছে এরা একে অপরকে চেনে। অনেকক্ষণ কথা বলার পর লোকটা হঠাৎ মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করলো। আমি শুনলাম মেয়েটা বলছে, ‘ আমার নাম মুন ‘
সাথে সাথে আমি পেছনে তাকালাম। মেয়েটাকে ভালোমতো দেখলাম। হ্যাঁ হ্যাঁ এইতো সেই চেহারা, এইজন্যই তো চেনা চেনা লেগেছে। ওইদিকে যাওয়া বন্ধ করেছি অনেকদিন, প্রায় ৪ বছর। মেয়েটা বড় হয়ে গেছে। চেহারায়ও অনেক পরিবর্তন এখন আর বাচ্চাভাব টা নেই। তাই চিনতে পারিনি। যাই হোক মেয়েটা আমাকে চেনে না। মেয়েটা এখনও আগের মতো চঞ্চল! আচরণে পরিবর্তন আসে নি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমি সোজা হয়ে বসলাম। আমার পেছনে বসা লোকটা আমাকে বলল, ‘ মেয়েটাকে চিনেন আপনি?’
আমি বললাম, ‘ না, ওইরকম চিনি না। কিন্তু দেখেছি এর আগে। ‘
-‘ ওও। মেয়েটা অনেক প্রানবন্ত, চমৎকার ‘
আমি ওনার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম। মধ্যবয়স্ক বা মুরুব্বিরা সাধারণত চঞ্চল মেয়েদের পছন্দ করে না, আর উনি প্রশংসা করছেন? মেয়েটাকে আমারই তো বিরক্ত লাগে। আমি লোকটাকে ও কী করেছে আগে সব বললাম। আমার কথা শুনে লোকটা অনেক হাসলো। আমি অবাক হয়ে কেবল ওনাকে দেখছি। আমি বললাম,’ দেখেছেন মেয়েটা কেমন!’
উনি বললেন, ‘ যেমন ভেবেছি এর থেকেও চমৎকার ‘
-‘ কী বলছেন! ওই ঝালমুড়িওয়ালার অপ’মান করলো এতোকিছু করলো আর আপনি বলছেন চমৎকার! ‘
-‘ হ্যাঁ,অবশ্যই চমৎকার! তুমি মেয়েটাকে কতোটুকু চেনো? দূর থেকে শুধু ফাজলামো গুলো দেখেছো৷ এরপর ওর আরেকটু খোজ নিয়ে দেখতে যে আসলে ঘটনা কী! ওই ঝালমুড়িওয়ালা কোথায় এখন?’
-‘ জানি না ‘
-‘ খোজ নিয়ে দেখা উচিৎ ছিলো। একটা মানুষকে উপর থেকে শুধু দেখে সম্পুর্ন মানুষটাকে চেনা যায় না। তুমি মেয়েটার সম্পর্কে যেমন বলছো এমনও হতে পারে আমিও তোমার সম্পর্কে তোমাকে নিয়ে এমন কিছু ভাবছি যেটা তুমি নও। একটু আগে কী করেছো ভুলে গেলে কী?’
-‘ না, ভুলিনি। আমি কখনো এমন করি না। আজ কীভাবে যেন হয়ে গেলো। ‘
-‘ হ্যাঁ, সেটাই। কাউকে এইভাবে জাজ় করা যায় না কখনো। ‘
-‘ আচ্ছা ধরেন, আপনার সামনে কেউ দোকান থেকে কিছু চু’রি করে নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে মানুষজন তাকে চো’র বললে সেটা কী দোষের?’
-‘ হ্যাঁ, অবশ্যই ‘
-‘ কীহ!!’
-‘ কেউ কখনো অযথা চু’রি করে না। নিজের নাম খা’রাপ করে না। ‘
-‘ মেয়েটার এইসব করার পেছনে কারণ? ‘
-‘ তা তো আমি জানি না। কিন্তু ওই ঝালমুড়িওয়ালা যদি মেয়েটাকে একটু আলু দিতো তাহলে কী হতো? ‘
চলবে……

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here