What a হাসবেন্ড পর্ব -১৬

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-১৬
ছাদে একা দাঁড়ায় আছি। ওনাকে বলছি একটু পর যেন আসে। এসে আমাকে পেছন থেকে যেন জড়িয়ে ধরে। আকাশের দিকে তাকিয়ে গান গাইতেছি,,,
নিশিরাত বাকা চাঁদ……..
হঠাৎই মনে হলো আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে তাকাতেই দেখলাম কালো একটা ছায়া। লাফিয়ে দূরে সরে গেলাম। ওরে বাবা বলে চিল্লায় উঠতেই হাসির শব্দ পেলাম। দেখলাম উনি হাসতেছে। আমি রেগে বললাম,
-‘ কী সমস্যা? ‘
-‘ আরেএএ, তুমিই তো বলেছিলে ‘
-‘ কী বলেছিলাম? ‘
-‘ এই যে তোমার হাসব্যান্ড তোমাকে ভয় দেখাবে ‘
আমার মনে পড়লো হঠাৎ,, ও আচ্ছা। আমি আমার ডিব্বায় লিখছিলাম যে আমার ভবিষ্যৎ জামাই আমাকে ছাদে নিয়ে ভ’য় দেখাবে এরপর সে খিলখিল করে হাসবে৷ এটাই উনি করতে চেয়েছেন। এদিকে আমার রুহ টা উড়ি উড়ি যায় অবস্থা!
আমাকে অবাক করে উনি আমার আঙুলে একটা আংটি পরিয়ে দিলেন। আমি সন্দিহান চোখে ওনাকে দেখলাম একবার, আরেকবার আংটিটাকে দেখলাম।
-‘ এটা কীসের?’
-‘ মানে?’
-‘ দেখতে তো হীরা হীরা লাগতেছে কিন্তু এটা আসলেই হীরা নাকি ইমিডিশন? ‘
-‘ কীহ!! ইমিডিশন টা আবার কী?’
-‘ আরেএএ জানেন না কী? ওই যে পানি ধুয়ে দেয় ‘
-‘ শাট আপ! দেখে বুঝো না এটা কী? উচ্চারণ পারো না তো বলো কেন? বে’ক্কে’ল কোথাকার! ‘
-‘ এই এই একদম অপ’মান করবেন না, সাবধানে কথা বলেন ‘
-‘ চুপ করো! মুডটাই ন’ষ্ট করে দিসে ‘
বিরবির করতে করতে চলে গেলো। আরে বেডা! আমি তো একটু সতর্কতা অবলম্বন করছিলাম, রাগ হওয়ার কী আছে এখানে? আমাকে জড়িয়েও ধরলো না। কতবড় বা’ট’পা’র!
-‘ ওইইইই আমাকে আপনি জড়িয়ে ধরেন নাই ‘
আমার কথা শুনে উনি পেছনে তাকালো। বলল,
-‘ ল’জ্জা করে না? একটা নাবালক ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে বলছো ‘
-‘ কীসের ল’জ্জা? আমি আমার জামাইকে বলছি। আর কীসের নাবালক? বুইড়া বেডা! এ আবার নাবালক দাবি করে আবার নিজেকে। ঢং দেখলে বাচি না ‘
-‘ সম্মান দিয়ে কথা বলো। আমি তোমার বড় ‘
-‘ জানি তো! আপনি বুইড়া বেডা ‘
-‘ চুপ! বেয়া’দব মেয়ে ‘
-‘ সরেন তো! মুডটা খারা’প করে দিসেন। আর জীবনেও জড়িয়ে ধরতে বলবো না। এর থেকে ভালো হতো যদি আমি সাগরকে বিয়ে করতাম। কমসেকম এমন ঝগড়া হতো না ‘
কথাগুলো বলে চলে আসলাম। পেছনে একটুও তাকালাম না। ওনার সাথে আমি আর কথা বলবো না। রুমে এসে আংটিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
.
সকালবেলা,,,
মনে হচ্ছে আমি পানি শুয়ে আছি। হাল্কা হাল্কা শীতও লাগতেছে৷ চোখ মেলে দেখি উনি হাতে জগ নিয়ে দাঁড়ায় আছে। প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো।
-‘ মুখ নাই আপনার? ‘
-‘ না, নাই। ‘
-‘ জানি তো! বো’বা হয়ে গেছেন ‘
-‘ নিয়ম হলো ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়া। ‘
-‘ আমি জানতামই না ‘
-‘ না জানলে জেনে নাও। আর ওঠো! ‘
-‘ উঠবো না। আজকে আমি সারাদিন ঘুমাবো ‘
-‘ ঠিকাছে ঘুমাও ‘
বলেই জগের পানি আমার উপর ঢেলে দিলো। আমি রেগে ওনার দিকে তাকায় আছি। উনি চোখ নামাও বলে চলে গেলেন। বিয়ের আগে আম্মুর সাথে ঝগড়া হলে বলতাম যে ” একবার খালি বিয়ে করি এরপর আর বাপের বাড়ি আসবো না। ” কিন্তু এখন বলতে মন চাচ্ছে ” একবার বাপের বাড়ি যাই আর শ্বশুরবাড়ি আসবো না ”
.
ভেজা শরীরে ওভাবেই বসে আছি, হঠাৎ উনি রুমে আসলেন আমাকে বসে থাকতে দেখে বললেন, ‘এতো ঘাড়ত্যাড়া কেন তুমি? ‘
অন্যদিকে মুখ করে বসে আছি। ওনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নাই।
-‘ আমি তোমাকে কিছু বলছি!’
আমি ফ্যানের দিকে তাকায় থাকলাম। একটু পর উনি আমার সামনে দাড়ালেন। হাত পেছনে। হাতে কী? ওও আংটি টা হয়তো! যতো যাইহোক আমি আংটি টা নিবো না। আমি ভাব নিয়ে অন্যদিকে ফিরবো তখনই উনি আমার দিকে কী যেন একটা ছু’ড়ে দিলো৷ মূহুর্তেই ভিজে একাকার হয়ে গেলাম। উনি বললেন, ‘ এবার তো উঠবে ‘
বলে হাতের মগ টা বাথরুমে রেখে আসলো। এর মাথাটা ভেঙ্গে দিতে পারতাম একটু তাহলে শান্তি লাগতো। উনি আবারও বললেন, ‘কী হলো বসে আছো কেন? ‘
আমি উঠে বাথরুমে চলে আসলাম। শাওয়ার ছেড়ে বসে থাকলাম কতক্ষণ। ঠান্ডা পানিতে মাথাটা যদি একটু ঠান্ডা হয়। একটু পর বাথরুমের দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেলো। ওনার কণ্ঠ শুনলাম। মুন মুন বলে পা’গল বানিয়ে দিচ্ছে। আমার নামটা মুন কে রাখছিলো? নাম ছাড়া থাকলে মনে হয় ভালো লাগতো একটু। উনি জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছেন। দরজা খুলে ওনাকে ভেতরে এনে ভিজিয়ে দিলাম। এরপর জোরে একটা কামড় দিলাম৷ উনি “আয়ায়ায়ায়া” বলে চিল্লাইয়া উঠলো। আমি আবারও কামড় দিলাম। উনি আবারও চিল্লাইয়া উঠলো। এরপর বের হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। চাদর, বালিশ সব উঠিয়ে ফেললাম। বালিশগুলো রোদে দিতে হবে, তাই ছাদে রেখে আসলাম। রান্নাঘরে শ্বাশুড়ি ননদ মিলে নাস্তা বানাচ্ছে। আমি একটু উঁকি দিয়ে এসে পড়লাম। রুমে এসে দেখলাম উনি শার্ট-প্যান্ট পরে সাহেব হয়ে গেছেন। দুই হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে রাখছে। আমাকে দেখে কী যেন বিরবির করে চলে গেলো। ভাবসাবে বুঝলাম নিশ্চয় আমাকে “রা’ক্ষস ” বলেছেন। খাওয়ার সময় ওনার পাশে বসতেই চোখ গেলো ওনার গলায়। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে কামড় দিয়েছিলাম। আহ! কামড় টা সার্থক হয়েছে বোধহয়!

___________________

সারাদিন এই সেই করে কে’টে গেলো৷ বিকেলে ননদের সাথে মুভি দেখলাম। মেজাজ এখন অনেক ফুরফুরা৷ ভেটকি মাছের মতো ভেটকাচ্ছি। রাতে উনি আসলেন কিন্তু আমার সাথে কথা বললেন না। শুনিয়ে বললাম, ‘ কেউ আমার সাথে যদি কথা বলতে না চায় তো না বলুক। আমি তেলাবো না। আমার এতো তেল নাই। তেল দাম বেড়ে গেছে ‘
উনি কিছু বললেন না। মন খারা’প করে জানালার ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। উনি লাইট অফ করে দিলেন। হয়তো ঘুমিয়ে পড়বেন এখন। থাক! ঘুমাক। সব করলো উনি আর আমি রাগ করলেই দোষ? যাবো না। কথাও বলবো না।

” রাগ করার অধিকার শুধু বউদের, জামাইদের না ”
বিয়ে করার আগে এই কথা ওনাকে শোনানো উচিৎ ছিলো। ফোনের রিংটোন থেকে শুরু করে এলার্মেও এটা সেট করা উচিৎ ছিলো, যেন ওনার মনে থাকে। নিজের নামের থেকে বেশি এই কথা মনে রাখা উচিৎ!
আনমনে কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাৎ আমাকে কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
.
.
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েচজে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here