What a হাসবেন্ড পর্ব -২২

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-২২
হঠাৎ ট্যাং ট্যাং শব্দ শুনলাম। দেখলাম আমার ফোনে এলার্ম বাজতেছে। দৌড়ায় গিয়ে এলার্ম বন্ধ করলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম উনি ঘুমাচ্ছে। আল্লাহ বাচাইছে ঘুম ভাঙ্গে নাই, নাইলে উইঠা আমার অবস্থা খারা’প বানায় দিতো। ৫ টা বেজে গেসে। বাবাগো বাবা আজকের রাতটা আমি না ঘুমায় কাটায় দিলাম। এই খাটা’সের ডাইরিটা না পড়লে ঘুমাইতে পারতাম একটু। ডাইরিটা জায়গা মতো রেখে ওনার সামনে দাঁড়ালাম। আহা! কী শান্তিতে ঘুমাইতেছে, উনি আমাকে এতো আগে থেকে চিনতো! কথাটা আগে বলল না কেন? এই নিরামিষ ডাইরিও লেখে জানতাম না🙂। একা একা সেন্টি খাচ্ছি আর ঘুমায় রইসে এমন একটা বেডার দিকে তাকায় আছি। মনোযোগ দিয়ে ওনাকে দেখতেছি। উনি জেগে থাকলে বলতে পারতাম আমার মনোযোগের কথা, ” দেখেন আপনার বউ মনোযোগ দিয়ে আপনাকে দেখতেছে। গর্বিত হন 😇 ”

____________________________

ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে খুব জোরে জোরে ধাক্কাইতেছে, বিরক্ত লাগতেছে। এমনিতেই সারারাত ঘুমাইতে পারি নাই। চোখ খুলে দেখলাম উনি দাঁড়ায় আছে।
-‘ এই কী হইছে? দেখতেছেন না ঘুমাইতেছি ?’
-‘ কয়টা বাজে জানো?’
-‘ কয়টা বাজে?’
-‘ ১২ টা বেজে গেসে ‘
-‘ সকাল ১২ টা বেজে গেসে?’ ( অবাক হয়ে)
-‘ সকাল ১২ টা? সিরিয়াসলি? এখন সকাল? ‘
-‘ মানুষ ঘুম থেকে যখন উঠে তখনই সকাল ‘
-‘ ওও তাই? ঠিকাছে উঠো। এখন যেহেতু সকাল তাই নাস্তা বানাবা ‘
-‘ কীসের নাস্তা? ১২ টা বাজে এখনো নাস্তা খান নাই?’
-‘ না, এখন তো সকাল ‘
-‘ কীসের সকাল? ‘
-‘ তুমিই তো বললা ‘
-‘ সেটা তো শুধু আমার জন্য আপনার জন্য না। আপনার জন্য এখন দুপুর! ‘
বলেই ওয়াশরুমে এসে পড়লাম। আসার সময় দেখলাম উনি আমার কথায় অবাক হয়েছেন। থাক! হোক অবাক। উনি তো আগেও অবাক হয়েছে তাই না? এখন হোক। সারাজীবন হোক। হতে থাকুক।
ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম শ্বাশুড়ি রান্না করছে৷ ওনার দিকে তাকাতেই সেদিনের ঝগড়ার কথা মনে পড়ে গেলো৷ বাবা গো বাবা কী ঝগড়া করে তারা জামাই বউ। শ্বশুর কে ভদ্র ভেবেছিলাম এখন দেখছি সে তার ছেলের থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছেন৷ আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্বাশুড়ি বলল ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসতে সে খাবার দিচ্ছে। খুশিতে গদগদ হয়ে এসে পড়লাম। চেয়ারে বসে ঝুলতেছি আর খাবারের জন্য অপেক্ষা করতেছি। হঠাৎ উনি কোথা থেকে এসে আমার মাথায় বোতল দিয়ে বা’রি দিলো। রেগে কিছু বলবো তখন দেখি আমার শ্বশুর রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছনে। আমি ওনাকে বললাম,’ দেখেন শ্বশুর কোথায় যায় ‘
-‘ যেখানেই যাক তুমি সেদিকে তাকাও কেন? ল’জ্জা করে না মানুষের দিকে তাকাতে? ‘
-‘ আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না। আপনাকে আমি চিনে গেসি ‘
-‘ কীভাবে চিনলে আলু বউ?’
-‘ আমাকে আলু বলবেন না কতবার মানা করছি৷ ‘
-‘ রাগ হও কেন? আলু তো ভালো। আর তোমার সাথেও মিলেও এটা৷ আলুর মতো গোলগাল গুলুগুলু বউ ‘
-‘ আমি মোটা?’
-‘ না গুলুগুলু ‘
-‘ চুপ ‘
-‘ গুলুগুলু আলু বউ 😘’
-‘ ছিঃ 😑 ‘
-‘ গুলুগু…….
আমি ওনার শার্টের কলার ধরে বললাম,’ আমাকে গুলুগুলু বলবেন না ‘
-‘ বলবো ‘
কলার ছেড়ে ইচ্ছামতো চুল টেনে রুমে এসে পড়লাম। আজকে থেকে আমার খাওয়া বন্ধ৷ আমি কিছু খাবো না। আমাকে চিকন হতে হবে। এই গুলুগুলু জীবন আর নয়। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতেছি আর ওনার বলা কথার সাথে মিলাইতেছি,
-‘ আমাকে কী সত্যিই গুলুগুলু লাগে? হ্যাঁ আসলেই তো। ছোটবেলা থেকেই আমি গুলুগুলু। এখন তো বিয়ে হয়েছে আরও মোটা হয়ে গেসি। এখন দেখতে নতুন আলুর মতো লাগে। ছিঃ ছিঃ আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ। এক্সারসাইজ করতে হবে। ‘
কথাগুলো বলেই এক্সারসাইজ করতে লাগলাম। এর আগে ইউটিউবে সুইটস্লিম বেল্ট দেখেছিলাম। মেয়েগুলো কীভাবে এইসব পরে থাকে? আমার দেখেই তো দুনিয়া ফেটে যাচ্ছিলো। এই বেল্ট ফেল্ট আমি পরলে আমার পেটের সব নাড়িভুড়ি বের হয়ে যাবে 😑। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ এইতো আরও লাফাও, তারাতাড়ি বরবটি হয়ে যাও। তোমার ইচ্ছার তো কোনো শেষ নেই। যদি কখনো নায়িকাদের মতো আমার উপর পড়ে যেতে মন চায় তখন তো পড়তে পারবে না। আমি তোমাকে ধরতেও পারবো না। ‘
-‘ এহহহ! ধরতে পারবে না। বললেই হলো? আমি এমন গুলুগুলু থাকবো সারাজীবন, প্রয়োজনে আরও মোটা হবো। এমন মোটা হবো যেন আমার যাওয়া আসায় দরজা ভেঙ্গে যায়। খাটে যেন আপনার জায়গা না হয়। ঘরে যতটুকু রান্না হবে সব আমি খেয়ে ফেলবো। আপনি কী করবেন?’
-‘ কী করবো আর? চিকন দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করবো ‘
-‘ ওই চিকনি চামিলিকে আমি তেলাপোকার জুস খাওয়ায় মা’ইরা ফেলবো৷ খবরদার, আমি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা মুখে আনলে আমি আপনাকে মে’রে ফেলবো৷ একদম মে’রে ফেলবো৷ আমাকে আপনি চিনেন না। ‘
-‘ না চিনি না আজকে প্রথম দেখছি৷ আচ্ছা মুন তোমার নাম কী?’
-‘ আপনার মাথা! ‘
-‘ ওও আচ্ছা ” আপনার মাথা ” আপনি তাহলে চিকন হচ্ছেন না তাইতো? ‘
-‘ আয়ায়ায়ায়ায়া শ্বাশুড়িইইইইই ‘
বলেই শ্বাশুড়ির কাছে গেলাম। গিয়ে বললাম, ‘ আমি চলে যাচ্ছি। আপনার ছেলের সাথে আমি থাকবো। একেবারে চলে যাচ্ছি ‘
পেছন থেকে ওনার গলার আওয়াজ পেলাম। আমি, শ্বাশুড়ি, শ্বশুর তাকালাম। উনি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ গুলুগুলু আলুকে চলে যেতে বলো৷ অনেকদিন বাপের বাড়ি যায় না। ঘুরে আসুক মন ভালো হবে ‘
আমি ওনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘ কীসের অনেকদিন? এইতো সেদিনই তো আপনাকে বিয়ে করলাম ‘
-‘ তুমিই বললে চলে যাবে। ‘
-‘ সাধে কী বলেছি? শ্বাশুড়ি ( শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে)
আপনার ছেলে কী বলে জানেন? আমাকে বলতেছে আমি যদি চিকন না হই তাহলে নাকি উনি আরেকটা বিয়ে করবে। ‘
শ্বাশুড়ি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
-‘ ওর কথা কানে নিও না। আমাকে দেখো কিছু বলতে? একেবারে বো’বার মতো থাকি। কিছু বললেই বলে পাগ’ল। এরা তো জানে না এরাই আসল পাগল। ‘
শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমি শ্বশুরের দিকে তাকালাম।
মুখে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছেন। ভালোমতো তাকায় দেখলাম উনি হাসতেছে। এরা কী হ্যাঁ? এইসব করে কী মজা পায়? দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি ভেটকি মাছের মতো ভেটকাইতেছে। আমি শ্বাশুড়ির রুম থেকে এসে পড়লাম। উনি আমার পেছনে আসতে আসতে বললেন, ‘ কী হলো আমার নামে বিচার দিবা না?’
আমি কিছু বললাম না। শ্বাশুড়ির মতো আমিও বো’বা হয়ে যাবো। উনি আমাকে পাগ’ল বলে না কিন্তু আলু বলে তাও আবার গুলুগুলু আলু। শুধু গুলুগুলু আলু না গুলুগুলু আলু আবার সাথে বউ ও আছে।
.
বারান্দায় সেই কখন এসে দাঁড়িয়েছি শীতে আমার হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। অথচ উনি কম্বল গায়ে জড়িয়ে মোবাইল টিপছে, আহা! আমার কী জামাই! যতো যাই হোক আমি কখনো চিকন হবো না। আর ওনাকেও আরেকটা বিয়ে করতে দিবো না। যদি আরেকবার এই কথা বলে তাহলে একেবারে তেলাপোকা খাওয়ায় দিবো। আর যদি সত্যিই বিয়ে করতে মন চায় তাইলে ওনাকে আবার করবো। দুইবার করে ফেলেছি, প্রয়োজনে হাজারবার করবো, লাখোবার করবো। মনে মনে আরও কয়বার বিয়ে করবো ভাবছিলাম তখনই উনি আমার গায়ে কম্বল দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,
” কতবার বিয়ে করবে এই কথা আর ভাবতে হবে না, আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না, আমি আমার গুলুগুলু আলু বউকে ভালোবাসি ”
.
.
.
চলবে
( ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। অতীত শেষ, এবার বর্তমানের পালা 😢।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here