#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-২০
ভাগ্যটা আমার ভালো নাকি খা’রা’প জানি না কিন্তু মেয়েটাকে প্রতিদিন দেখতাম। ওই রাস্তায়, ওই ঝালমুড়িওয়ালার ওখানে। সাথে একটা মেয়েকে নিয়ে আসবে আর বকবক করবে।
.
একদিন আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে বলল ওরা এসে নাকি আমার খবর করবে। ওভাবে পালিয়ে এসেছি কেন? এই সেই অনেক কথা বলল।
আমি কেবল হু হা করে ফোন রেখে দিলাম।
আব্বুর একটা কাজের জন্য পরেরদিন আমাকে কুমিল্লা যেতে হলো। কাজ শেষ করে ফিরে আসলাম বাসায়। বিকেলের দিকে আমার বোন হৃদি বলল,
-‘ ভাইয়া আমাকে বাহিরে নিয়ে যাবা?’
-‘ কেন?’
-‘ ফুচকা খাবো ‘
-‘ এইসব খেয়ে খেয়ে মোটা হচ্ছিস। পরে দেখিস কেউ বিয়ে করবে না ‘
ও ন্যাকা কান্না করতে করতে আম্মুর কাছে গেলো। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, ‘ আম্মু বলেছে তোমাকে বাহিরে যেতে ‘
-‘ কেন?’
-‘ আমি ফুচকা খাবো তাই ‘
-‘ পারবো না ‘
-‘ আমাকে না নিলে গেলে তোমার ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন ধুলোর সাথে মিশে যাবে ‘
-‘ থাপ্প’ড় খাবি ‘
-‘ তাহলে নিয়ে চলো ‘
বলেই নাচতে নাচতে চলে গেলো। খুব ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার, এখন সেইদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ! একদিন সফল হবো।
________________
অনেক চিল্লাচিল্লির পর আমি হৃদিকে নিয়ে বের হলাম। সে তো প্রচুর খুশি, রাস্তা দেখে শুধু নাচতে পারতেছে না। হঠাৎ ও বলল, ‘ ভাইয়া আজ ফুচকা না ঝালমুড়ি খাবো। তোমাদের কলেজে যাওয়ার রাস্তার ঝালমুড়ি৷ ‘
আমার হঠাৎ ওই মেয়েটার কথা মনে পড়লো। আমাদের কলেজের ওইদিকে ওই ঝালমুড়ি তারমানে ওই মেয়ের সাথে দেখা হবে? মোবাইলে দেখলাম ৪ টা বাজে, মেয়েটাকে ২টার দিকে ওইদিকে দেখতাম। এখন যদি আবার দেখি!
হৃদিকে নিয়ে ওই রাস্তায় গেলাম। ঝালমুড়ি কিনে দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা কোথাও নেই। এরইমধ্যে হৃদির খাওয়া শেষ ঝালমুড়িওয়ালাকে টাকা দিতে উনি বললেন, ‘ তুমি ওইদিন কিছু না বললে মানুষগুলো আমাকে মাই’রা ফালাইতো। মাইয়াডা অনেক ব’জ্জা’ত ‘
আমি সুযোগ বুঝে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটার নাম।
উনি বললেন,’ লগের মাইয়ায় তো মুন ডাক দেয়, ওইটাই ‘
-‘ মেয়েটাকে তা’ড়িয়ে দিতে পারেন না? এতো ফা’জিল!’
এটা বলায় উনি বললেন ও নাকি এর আগেও এইসব করেছিলো। ঝালমুড়ি দিবে না বললে রাস্তায় কান্নাকাটি শুরু করে দেয় তাই দিতেই হয়। উনি আরও বললেন মেয়েটা নাকি জামাকাপড়ের মতো ঝালমুড়িও দামদর করে কিনে। প্রথম প্রথম ঝালমুড়ি খেয়ে খুচরা ১০ টাকা চাইতো। বলতো ৭ টাকা ফেরত দেন। খুচরা না দিলে টাকা না দিয়েই চলে যেতো। এরপর থেকে প্রতিদিন ওনার উপর ওই মেয়ের অত্যা’চার চলতে থাকে। মেয়েটার মা এসে ধম’ক দিলেও কাজ হয় না, সে ঝালমুড়ি ছাড়া কোথাও যাবে না, আর শুধু ঝালমুড়ি না ঝালমুড়ির সাথে আলু বেশি না দিলে চিল্লায় রাস্তা উঠায় ফেলে। এইসব শুনে আমি আর বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। হৃদিকে নিয়ে এসে পড়লাম। আসার সময় লোকটাকে বললাম, এইখানে যেন আর না আসে। লোকটা ইশারায় কী যেন বলল, আমি বুঝলাম না।
পরেরদিন ওই রাস্তা দিয়ে আসার সময় আবার মেয়েটাকে দেখলাম এইদিকেই আসছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ২.৩৭ বাজে। স্কুল ছুটি দিলেই এইখানে আসে। ঝালমুড়িওয়ালা ওকে দেখে না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে। ঝালমুড়িওয়ালাকে চলে যেতে দেখে ও দৌড়ে সেদিকে গেলো।
-‘ ও মামা কই যান ‘
-‘ বাড়ি ‘
-‘ কেন? আমি ঝালমুড়ির জন্য আসলাম আর আপনি চলে যাচ্ছেন! এই কাজটা কী করে করলেন আপনি? আপনার একটাবারও কী কাজটা করতে বুকটা কেঁপে উঠে নি?’
-‘ দেখো মেয়ে এইসব রঙঢঙ আর চলবে না। আমি আর ঝালমুড়ি বেচবো না ‘
-‘ কেন?’
-‘ এমনিই ‘
-‘ আপনি এ কাজ করতে পারেন না ‘
-‘ পারি। এই যে করছি ‘
-‘ এমন অনৈ’তি’ক কাজ আমি মানবো না। ঝালমুড়ি না বেচলে আমি খাবো কী?’
-‘ কে তোমার মা তোমাকে খাওয়ায় না?’
-‘ না, খেতে দেয় না। সকালে ঠান্ডা ভাত দেয়, দুপুরে গরম ভাত দেয়, আর রাতে নরমাল ভাত দেয় ‘
-‘ ভালো তো৷ তাইলে আর তোমার ঝালমুড়ি লাগবে না ‘
-‘ না লাগবে। এইগুলো খাই বলেই তো লাগে। সকালে ঠান্ডা ভাত মানে বুঝেন? ফ্রিজ থেকে নামানো ঠান্ডা! আইসলেন্ডেও এমন ঠান্ডা নাই ভাত যতো ঠান্ডা। আর গরম ভাত বুঝেন? চৈত্র মাসের মতো গরম! চৈত্র মাসেও এতো গরম পড়ে না ভাত যতো গরম। আর নরমাল ভাত বুঝেন? ‘
-‘ থাক! আমার বুঝে কাজ নাই। নাও তুমি ঝালমুড়িই খাও। বুঝতে পারছি তোমার মা তোমারে ভালো কিছু খাইতে দেয় না। ‘
-‘ হ্যাঁ, একদম দেয় না 😐 ‘
-‘ এমন বেঈ’মা’ন পোলাপান জানি কারো ঘরে না হয় ‘
-‘ কী বললেন মামু?’
-‘ কই কিছু না তো 🙂 ‘
-‘ ওওওও ‘
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ঝালমুড়িওয়ালা বলল, ‘তুমি না বলছিলি তোমার কোন আঙ্কেল বলে মা’রা গেসে। ‘
মেয়েটা ভাবুক হয়ে বলল,’ হ্যাঁ! বলছিলাম মা’রা যেতে পারে ‘
-‘ মা’রা গেসে বলছো’
-‘ আরেএ না’
-‘ কালই তো বললা ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য। আমাকে তুমি ওইজন্য আঙ্কেল ডাকো ‘
-‘ কিন্তু আমি তো তোমাকে মামা ডাকি ‘
-‘ কাল তো…..
-‘ আরে না না। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আসলে বয়সের কারণে এমন হয় আমি বুঝি। আমি তোমাকে মামাই ডাকি সবসময়। আর কাল যে আঙ্কেলের কথা বলছিলাম সে ম’রতে ম’রতে বেঁচে গেসে কীভাবে জানি। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে ম’রে যাবে কিন্তু ম’রে নি। বেঁচে আছে। তুমি নিজেই তো আমাকে বললা তোমার কোন আঙ্কেল বলে মা’রা গেসে তাই তুমি ফ্রীতে ঝালমুড়ি দিচ্ছো।’
-‘ কীহ! আমার? আঙ্কেল? মা’রা গেসে? কবে?’
-‘ ওমা কালই তো বললেন! আপনার মনে নেই? এইজন্যই তো বললাম আপনার বয়স হয়েছে৷ কিছু মনে থাকে না ‘
-‘ আমার কোনো আঙ্কেল নাই মা’
-‘ কেন ভাই? কেন নাই?’
-‘ জানি না বইন ‘
-‘ খুঁজে দেইখেন আপনি, আছে হয়তো ‘
-‘ না থাক!’
-‘ ঠিকাছে, তাহলে আসি আমি। কাল আসবো। ‘
বলেই চলে গেলো। ঝালমুড়িওয়ালা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমি দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি৷ আমি কথা বলার ভাষা হারি’য়ে ফেলেছি। কিছু আমার আর বলার নাই। হঠাৎ মেয়েটা আবারও আসলো৷
-‘ মামা, আপনি বলছিলেন না চলে যাবেন? ‘
-‘ হ্যাঁ! বলেছিলাম ‘
-‘ যাবেন না প্লিজ! আপনি চলে গেলে আমরা সবাই আপনার হাতের ঝালমুড়ি মিস করবো ‘
-‘ বাড়িতে মুড়ি দিয়া তরকারি মাখায় খাবা ‘
-‘ না বাসার টা মজা না। আপনার টা মজা ‘
-‘ তবুও অভ্যাস করো। আমি না থাকলে কী করবা?’
-‘ আর আপনি ঝালমুড়ি না বেচলে কী করবেন? কী খাবেন?’
-‘ আইসক্রিম আর নাহলে হাওয়াই মিঠাই ‘
-‘ আইসক্রিম? ওয়াও, আমার জন্য চকলেট ফ্লেভার আনবেন। ঠিকাছে তাহলে আমি আপনাকে যেটা আনতে বলবো আপনি সেটা আনবেন। তাহলে এখন থেকে আপনি আইসক্রিমওয়ালা! ‘
-‘ ভাবছি আইসক্রিম আনবো না হাওয়াই মিঠাই আনবো ‘
-‘ ওও, আচ্ছা তাহলে তো আরও ভালো। হাওয়াই মিঠাই আমার খুব প্রিয়৷ ঠিকাছে আনেন। আমাকে কিন্তু ডিসকাউন্ট দেওয়া লাগবে মামা আমি আপনার নিয়মিত কাস্টমার ‘
-‘ না থাক! ভাবছি এইগুলোর কোনোটাই আনবো না। ঝালমুড়িই আনবো! ‘
-‘ ও😍, থ্যাংকস! কাল তাহলে দেখা হচ্ছে আমাদের। বাই! আঙ্কেল আমার জন্য বেশি করে আলু আনবেন প্লিজ ‘
দৌড়ে চলে গেলো মেয়েটা। লোকটা বসে বসে বলল, ‘ ভাবছি আমি আর আসবোই না। কিছুই বেচবো না। ‘
গাড়ি নিয়ে কী যেন বলতে চলে গেলো। আমিও এসে পড়লাম।
.
চলবে😔
(