#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৬
— আচ্ছা এইচএসসি পরীক্ষার তো প্রায় এক মাস হয়েই যাবে। তুমি কোন কোচিং এ এডমিশন নিয়েছো ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য?
আদ্রিশের কথায় মাথা নিচু করে ফেললো আয়ানা। কি বলবে সে এখন? অনেক ক’ষ্টে সে এতদূর এসেছে। পড়েছে কম বেতনের স্কুল, কলেজে। আর এডমিশন এর জন্য কোনো কোচিং এ ভর্তি হতে গেলে তো এক মুঠ টাকার প্রয়োজন। কে দিবে তাকে এতো টাকা? সৎ বাবা কে একবার কোচিং এ ভর্তি করানোর কথা বলতেই খে*কি’য়ে উঠেন তিনি। মুখের উপর বলে দিয়েছেন একটা টাকাও তিনি দিবেন না। আয়ানার পিছনে তিনি অনেক টাকা নষ্ট করেছেন। আর কোনো টাকা খরচ করবেন না। সেদিন খুব কেঁ’দেছিলো আয়ানা। বাবা না থাকলে যে একটা সন্তানের জীবন ন’র’কী’য় হয়ে যায় তা হারে হারে টের পেয়েছে সে।
এরপর থেকে সে পাঠ্য বইগুলো ভালো করে পড়ছে। কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিয়েছে মেডিকেল এডমিশন এ কি ধরণের প্রশ্ন হয়। সেভাবেই নিজে থেকে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। যতটুকু নিজে থেকে পারা যায়। রিয়া আয়ানার অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলো। আয়ানার ইচ্ছা আর মেধা দেখে তার খুব ইচ্ছা করতো আয়ানা কে সাহায্য করতে। কিন্তু সে নিজেও যে গরীব ঘরের সন্তান। তারপরও সে নিজের এক আত্মীয়ের ছেলের সাথে যোগাযোগ করে তার কাছ থেকে পুরোনো কিছু মেডিকেল এডমিশনের বই জোগাড় করে দেয় আয়ানা কে। যেদিন রিয়া, আয়ানা কে বই গুলো দিয়েছিলো সেদিনও কেঁ’দেছিলো আয়ানা। তবে সুখের কা’ন্না। অনেকক্ষন রিয়া কে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। এমন বান্ধুবী পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।
আয়ানা কে চিন্তায় মগ্ন দেখে তার কপালে টো’কা দিলো আদ্রিশ। ভাবনার মাঝে কপালে টো’কা পড়ায় চমকে উঠলো সে। আদ্রিশ বললো,
— এতো কি ভাবো হ্যা? কিছু বললেই ভাবনার সাগরে ডু’বে যাও। এরপর থেকে কিছু জিজ্ঞেস করলে আগে আমার উত্তর দিবে তারপর নিজের ভাবনা খুলে বসবে।
আদ্রিশের কথায় আয়ানা বে’ক্ক’ল বনে গেলো। ভাবনা যখন আসবে তখনই না ভাববে! নাকি ভাবনা কে উঠিয়ে রাখবে তারপর ফ্রি টাইমে ভাবতে বসবে।
— তোহ বলেন ম্যাডাম কোন কোচিং এ ভর্তি হয়েছেন?
আয়ানা চোখ নামিয়ে নিচু স্বরে জবাব দিলো,
— কোনো কোচিং এ না।
আয়ানার কথায় অবাক হলো আদ্রিশ। হালকা চি’ল্লি’য়ে বললো,
— হোয়াট? আর মাত্র কয় দিনই বা বাকি আছে। আর তুমি এখনো কোথাও ভর্তি হও নি স্টু’পি’ড। কিসের অপেক্ষা করছিলে? আর আমার জানামতে তোমরা তো এতটাও দরিদ্র ফ্যামিলির নও যে কোচিং এ ভর্তি হওয়ার সামর্থ নেই।
আয়ানা কি বলবে ভেবে পেলো না। তাই মাথা নিচু করে চু’প’টি করে দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিশ কিছুক্ষন আয়ানার মুখ পর্যবেক্ষণ করে বুঝলো নিশ্চই কোনো কারণ আছে যা আয়ানা বলতে চাচ্ছে না। তাই আর আয়ানা কে ঘা’টা’লো না আদ্রিশ। বললো,
— তোমার সার্টিফিকেট, জরুরী কাগজপত্র নিয়ে এসেছো?
আয়ানা না বোধক মাথা নাড়লো। আদ্রিশ ফোঁ’স করে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
— আমার জানামতে আজ রিসেপশন শেষে তোমাদের বাড়িতে যাওয়া হবে। তখন সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসবে। আগামীকাল তোমাকে কোচিং এ ভর্তি করে দিবো। তবে শর্ত একটাই, জান লাগিয়ে পড়বে। মাথায় রাখবে ভালো কোনো জায়গায় তোমার চান্স পেতে হবেই হবে।
আদ্রিশের কথায় আয়ানার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। আয়ানা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলো পড়াশোনা করার। কিন্তু তার স্বামী আর শ্বশুর বাড়ির লোক যে তাকে পড়াশোনা করতে দিবে ভেবে আয়ানার মন টা আনন্দে নেচে উঠলো। আদ্রিশ নিজের কথা শেষ করে বেলকনি থেকে যেতেই আনন্দে কয়েকটা লা’ফ দিলো আয়ানা। কিন্তু বেলকনির ডোরে আদ্রিশ কে দেখে চো’র ধরা পড়ার মতো দাঁড়িয়ে গেলো সে। মুখের হাসি নি’ভে গেলো। আয়ানার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে ভীষণ হাসি পেলো আদ্রিশের। নিজের হাসি কে নিয়ন্ত্রণ করে গম্ভীর গলায় আয়ানা কে বললো,
— শুধু ব্যা*ঙে’র মতো লা’ফা’লে হবে না,অনেক অনেক পড়াশোনা করতে হবে। বুঝতে পেরেছেন বাচ্চা? শুধু শুধু বাচ্চা বলি নাই।
আয়ানা আদ্রিশের কথায় মা’রা’ত্ম’ক লজ্জা পেলো। এভাবে ধরা পড়ে যাবে বুঝতে পারে নি সে। নিজের চঞ্চলতা সে কখনো কারোর সামনে প্রকাশ করে না। সবসময় গম্ভীর চুপচাপ থাকে। তারমানে এই নয় যে তার মাঝে চঞ্চলতা নেই। একসময় সে চঞ্চল ছিলো। অনেক বেশিই হাসি খুশি ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এমন বানিয়ে দিয়েছে।
আদ্রিশ আয়ানার কপালে আরেকটা টো’কা দিলো। এবার বিরক্ত হলো আয়ানা। রা’গ করে মনে মনে বলতে লাগলো, ‘বারবার কপালে টো’কা দেয় কেনো? আমি বুঝি ব্য’থা পাই না!’ আদ্রিশ বললো,
— বারবার কোন ভাবনার জগতে হারিয়ে যান আপনি? এক ফুটের বাচ্চা, তার নাকি আবার এতো চিন্তা। যেটা বলতে এসেছিলাম, বোরিং লাগলে আনিকার কাছে যেতে পারো। তুমি রেস্ট করছো ভেবে সে একাই ট’ই’ট’ই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এবার আর দাঁড়ালো না আদ্রিশ। সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আদ্রিশ তার ভালো লাগার কথা চিন্তা করছে ভেবে ভীষণ ভালো লাগলো আয়ানার। কিন্তু তাকে এক ফুটের বাচ্চা কেনো বললো। তার উচ্চতা ৫.৪ ফুট। সে কেনো এক ফুটের বাচ্চা হতে যাবে ভেবে গাল ফুলালো সে। তাকে টি’ট’কা’রি মে*রে’ছে আদ্রিশ বুঝে আসলো তার।
———
রিসেপশন শেষে আয়ানাদের বাড়িতে এসেছে আয়ানা-আদ্রিশ আর মীরা-আহিল। গাড়ি থেকে নেমে ভ’য়ে ভ’য়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো আয়ানা। আয়ানার থমথমে মুখ, ভ’য়া’র্ত চাহনি গভীরভাবে অবলোকন করলো আদ্রিশ।
ভিতরে প্রবেশ করতেই মীরার বাবা মাহমুদ সাহেব এগিয়ে আসলেন। মেয়ে আর মেয়ের জামাই কে বুকে জড়িয়ে নিলেন। সৌজন্যতার খাতিরে আদ্রিশ কেও জড়িয়ে ধরলেন। কুশল বিনিময় করলেন। কিন্তু আয়ানার দিকে তাকিয়েও দেখলেন না। এসব দেখে মন ব্য’থি’ত হলো আয়ানার। খুব করে নিজের বাবার কমতি অনুভব করলো সে। সেই ব্য’থা কিছুটা কমলো মায়ের জড়িয়ে ধরায়।
অনামিকা বেগম অ’শ্রু’শি’ক্ত চোখে এগিয়ে এসে দুই মেয়ে কে সযত্নে বুকে জড়িয়ে নিলেন। বড্ড ভালোবাসেন তিনি দুই মেয়ে কে। হয়তো আয়ানা কে একটু বেশিই ভালোবাসেন কারণ মেয়েটা এতটুকু বয়সে অনেক ক’ষ্ট স’হ্য করেছে। তিনি মন ভরে দুই মেয়ের জন্য দোয়া করেছেন যেনো তার মেয়ে দুটো সুখে থাকে। তার মতো ভাগ্য যেনো কারোর না হয়।
অনামিকা বেগম দুই মেয়ে কে ছেড়ে জামাইদের ভালো ম’ন্দ জিজ্ঞেস করলেন। তারপর ড্রয়িং রুমে এনে বসালেন সবাইকে। আশেপাশের কিছু মানুষ ও এসেছে নতুন জামাই বউ দেখতে। আয়ানা দৃষ্টি এদিক ওদিক ঘো’রাতেই তার চোখে পড়লো সাহেরা বানুর মেয়ে সারার উপর। যে এখন আদ্রিশ কে দেখতে ব্যস্ত। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিশের দিকে। ব্যাপার টা ভালো লাগলো না আয়ানার। সারাও সাহেরা বানুর মতো হিং*সু’ক স্বভাবের। তার ভালো স’হ্য করতে পারে না।
একবার কলেজের একটা ক্লাস টেস্টে প্রথম হওয়ায় স্যার পুরস্কার স্বরূপ একটা কলম দিয়েছিলো আয়ানা কে। কলম টা পেয়ে ভীষণ আনন্দিত হয়েছিল আয়ানা। আর কলম টা দেখতেও খুব কিউট ছিলো। কোনো ভাবে কলম টা সারার নজরে পড়ে যায় আর সে কলম টা নিতে চায়। কিন্তু আয়ানা কলম দিতে চায় নি বলে সাহেরা বানুর কাছে বি’চা’র দেয় সারা। সাহেরা বানু তাকে নানাভাবে অ’প’মা’ন করে কলম টা কে’রে নিয়ে সারা কে দিয়ে দেয়। আর এখন সেই সারা আদ্রিশের দিকে নজর দিচ্ছে। মনের মধ্যে একটা ভ’য় কাজ করতে লাগলো আয়ানার।
সারা তার মাকে টে’নে আড়ালে নিয়ে গেলো। সাহেরা বানু বি’র’ক্ত হয়ে বললেন,
— কি সমস্যা এভাবে নিয়ে আসলি কেনো?
সারা দাঁতে দাঁত চে’পে বললো,
— মা তুমি তো বলেছিলো আয়ানার কোনো বুড়োর সাথে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কই ছেলে তো অনেক সুন্দর। সাথে শুনছি সে নাকি ডাক্তার ও।
সাহেরা বানু নাক ছি’ট’কে বললেন,
— তাই তো দেখছি। আমিও তো জানতাম ছেলে বুড়ো। আর বিয়ের সময় ছেলে কে দেখার ও সুযোগ পাই নি। নাহলে কখনোই ওই মেয়ের সাথে এতো ভালো ছেলের বিয়ে হতে দিতাম না। কোনো না কোনো ভাবে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম।
মায়ের কথায় আ*স’কা’রা পেয়ে আয়ানাকে অ*পদ’স্ত করার ফ’ন্দি আটতে লাগলো সারা।
চলবে?
(