#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৭
— কিরে আয়ানা? ঠিকই তো বড়লোক, হ্যান্ডসাম ছেলে কে নিজের রূপের জা’লে ফাঁ*সি’য়ে নিলি দেখি। তা কিভাবে ফাঁ*সা’লি শুনি? এমনিতে তো এমন ভা’ন করিস যেনো ভা’জা মাছ উল্টে খেতে জানিস না। আর সময় মতো ঠিকই ছক্কা মা*র’লি। বাই দা ওয়ে, তোর জামাই টা কিন্তু সেই সুন্দর। আবার ডাক্তার ও বলে। তা কিভাবে প’টা’লি? আমাকেও কিছু টিপস দে।
হঠাৎ এমন ধরণের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো আয়ানা। পিছনে ঘুরে দেখলো সাহেরা বানুর মেয়ে সারা দাঁড়িয়ে আছে। সেই কথাগুলো ছু*ড়ে দিয়েছে বুঝতে বাকি রইলো না আয়ানার। ছাদে থাকা নিজের ছোট ঘরে এসেছিলো আয়ানা। হয়তো এই ঘরে কোনো বিলাসিতা, আরাম নেই। কিন্তু জীবনের এতগুলো বছর তো এই ছোট রুমেই কা*টিয়েছে সে। তার সকল আনন্দ, ক’ষ্ট, হাসি, কা’ন্নার সাক্ষী তো এই রুম টাই। তাই সকলের কথার ফাঁকে উঠে নিজের রুমটায় চলে এসেছে সে। আর এখানে আসতেই যে সারার বা*জে ব্যবহারের শি*কার হতে হবে বুঝতে পারে নি আয়ানা।
আয়ানা কে উঠে আসতে দেখে তার পিছু পিছু এসেছে সারা। আয়ানা কে অ’প’মা’ন করার একটা সুযোগও ছাড়তে চায় না সে। সারার কথায় মাথা নিচু করে ফেললো আয়ানা। সারা তারচেয়ে বয়সে বড়। তাই তাকে কখনোই অ’স’ম্মা’ন করতে চায় নি আয়ানা। তাই আজও চুপচাপ সারার কথা হজম করে নিলো সে। এসব শোনার অভ্যাস তার বহু আগে থেকে আছে। সাহেরা বানু তাকে উঠতে বসতে এসব কথা শোনাতেন।
আয়ানা কে জবাব না দিতে দেখে তার হাতটা শ’ক্ত করে চে’পে ধরলো সারা। আয়ানার ভালো ঘরে বিয়ে হয়েছে দেখে স’হ্য হচ্ছে না সারার। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষের বসবাস রয়েছে যারা অন্যের ভালো স’হ্য করতে পারে না। সারাও হয়তো তাদের অন্তর্গত।
এতো শ’ক্ত করে হাত ধরায় ব্য’থা’য় গু’ঙি’য়ে উঠলো আয়ানা। চোখের কোণে জল জমে গেলো। সারা দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো,
— কি হলো বল। কথা বলিস না কেনো? নিজের কু*কী’র্তি বলতে লজ্জা লাগছে? করার সময় তো লজ্জা লাগে নি। মীরাপুর শ্বশুর বাড়ির লোকেদের ভালোই তো ব’শ করেছিলি। তারা তোর সাথে জিজুর বড় ভাইয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য মীরাপুর বিয়ে ভা*ঙতে প্রস্তুত ছিলো। লজ্জা লাগে নি এসব করতে?
— ওর লজ্জা লেগেছে কি না সেটা পড়ে দেখবেন। আগে এটা বলুন আপনার লজ্জা লাগছে না ওর সাথে এমন ব্যবহার করতে? আপনার সা’হস কি করে হলো আমার ওয়াইফের গায়ে হাত দেয়ার। হাউ ডে*য়ার ইউ? আপনি কে ওর কাছ থেকে কৈফিয়ত চাওয়ার?
আচমকা কারোর কঠিন গলায় বলা কথায় হাত আলগা হয়ে গেলো সারার। আয়ানার হাত ছেড়ে ভ*য়া’র্ত দৃষ্টিতে পিছে ফিরে চাইলো। আদ্রিশের ক’ঠো’র দৃষ্টি দেখে দমে গেলো সারা। তুতলিয়ে বললো,
— আ,, আসলে আ,, আমি তো…
সারা কে থামিয়ে দিয়ে আদ্রিশ ফের ক’ঠো’র গলায় বললো,
— আপনার আসলে নকলে শোনার সময় আমার নেই। সোজা কথা বলছি, কান খুলে শুনে রাখুন। আগে হয়তো সে আপনার বোন ছিলো। তাই যা খুশি তাই করেছেন। কিন্তু এখন সে আমার ওয়াইফ। আর আমার ওয়াইফ কে কেউ আ*ঘা’ত করবে বা অ’প’মা’ন করবে ; এটা আমি মোটেও স’হ্য করবো না। যে এমন টা করবে তাকে ভে*ঙে গু*ড়িয়ে দিবো। এই আদ্রিশ কে যতটা সোজা ভাবছেন, আমি ততটা সোজা নই। এমনিতেই কাউকে অকারণে আ*ঘা’ত করা হলে তা আমার স’হ্য হয় না। আর আ*ঘা’ত যদি আমার পরিবারের কোনো সদস্যের উপরে আসে তাহলে বুঝতেই পারছেন সামনের ব্যক্তির আমি কি হাল করতে পারি। কোনো রকমের ঝামেলা না চাইলে চুপচাপ এখান থেকে চলে যান। আর ভবিষ্যতে কখনো আমার ওয়াইফের সাথে misb*ehave করার কথা মাথায় ও আনবেন না।
আদ্রিশের বাঁকা হাসি আর র*ক্তা*ক্ত চাহনি দেখে ভ’য়ে ঢোক গিললো সারা। আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সারা বেরিয়ে যেতেই আয়ানার কাছে এগিয়ে আসলো আদ্রিশ। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আয়ানা। হাতের যেখানে চে’পে ধরেছিলো সেই জায়গা টা লাল হয়ে আছে। চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে। তাকে আড়ালে অ’প’মা’ন করলে সে স’হ্য করে নেয়। কিন্তু আদ্রিশ তাকে অ’প’মা’নি’ত হতে দেখেছে ভেবে লজ্জায় কা’ন্না আসছে তার।
আদ্রিশ আয়ানার হাতের লাল হওয়া জায়গা টা শ’ক্ত করে চে’পে ধরলো। অবাক, অ’শ্রুশিক্ত চোখে আদ্রিশের পানে চাইলো আয়ানা। তার ব্য’থা লাগছে কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের হচ্ছে না। আদ্রিশ আয়ানার দিকে রা’গী চোখে তাকিয়ে বললো,
— ওই মেয়ে তোমাকে ই*ন্সা’ল্ট করলো, আ*ঘা’ত করলো তাও কিছু বললে না কেনো স্টু’পি’ড? কে দিয়েছে ওকে এমন ব্যবহার করার অধিকার? কেনো কিছু বলো নি?
আদ্রিশের ধ’ম’কে কেঁ’পে উঠলো আয়ানা। ভ’য়ে চোখের পাতা বন্ধ করে ফেললো। কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,
— সারাপু আমার তুলনায় বয়সে বড়। আমি চাই না তাকে অ*সম্মান করতে।
আদ্রিশ আয়ানার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
— সম্মান তাকেই দিতে শেখো, যে সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। ওই মেয়ে কখনোই তোমার শুভাকাঙ্খী হতে পারে না। মানুষ কে যতো বলার সুযোগ দিবে, তারা ততো বেশি বলবে। তাই প্র’তি’রো’ধ করতে শেখো। তোমাকে বাঁচানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না। কেউই না। নিজেকেই ল*ড়ে যেতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মো’কা’বি’লা করে সেই পরিস্তিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর অ’ন্যা’য় কারীকে কখনোই প্রশ্রয় দিবে না। তোমার জীবনে আগে কেমন পরিস্থিতি ছিলো আমি জানি না। আর জানতেও চাচ্ছি না। তবে এখন তুমি আমাদের পরিবারের অংশ। কোনো অ*প’রা’ধ ছাড়া কেউ যদি তোমাকে কিছু বলে তাহলে মোটেও স’হ্য করবে না। নিজেকে শ’ক্ত করে গড়ে তোলো যেনো কেউ তোমাকে কিছু বলার আগে দশ বার ভাবতে বাধ্য হয়। মনে রাখবে আমার পুরো পরিবার তোমার সাথে আছে।
আদ্রিশ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তার একটা ইম্পরট্যান্ট কল আসায় সে ড্রয়িং রুম থেকে উঠে ছাদে চলে আসে কল রিসিভ করতে। আর এখানে এসে এসব দেখে আর চুপ থাকতে পারে নি। আদ্রিশের বুঝে আসছে না আয়ানার পরিবার আয়ানার সাথে এমন ব্যবহার কেনো করছে। কই মীরার সাথে তো তারা এমন করে না। তার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘু’র’ছে। কিন্তু জবাব কে দিবে?
আদ্রিশ রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো আয়ানা। মনে মনে ভাবলো তবে কি তার জীবন পাল্টে যেতে চলেছে? সুখপাখি কি তাহলে ধরা দিলো বলে?
আগে কখনো সারার উপর কথা বলার ক্ষমতা আয়ানার ছিলো না। সারা কে কিছু বললে সে মাহমুদ সাহেব কে বলে দিতো। আর মাহমুদ সাহেব কথায় কথায় বলতো, তিনি আর আয়ানা কে রাখবেন না। রাস্তায় ছু*ড়ে ফে*ল’বে’ন। তাই নিজের শেষ আশ্রয় টুকু ধরে রাখার জন্য তাকে চুপচাপ থাকতে হতো। সব অ*ত্যা’চা’র, সব অ’প’মা’ন স’হ্য করে যেতে হতো। তার মা ও তার পক্ষে কিছু বলতে পারতো না। কারণ তাঁদের মা মেয়ের শেষ আশ্রয় তো এটাই ছিলো।
আয়ানা ঠিক করলো এবার থেকে আর কাউকেই ছাড় দিবে না। অনেক স’হ্য করেছে। এবার সময় এসেছে নিজেকে বদলাবার।
———-
মাহমুদ সাহেবের সাথে অনেক ত*র্কা’ত*র্কি’র পর নিজের রুম ছাড়তে রাজী হলেন সাহেরা বানু। আয়ানাদের বাড়িতে ভালো রুম চারটা আর আয়ানার রুম নিয়ে মোট পাঁচটা রুম আছে। চারটা রুমের একটাতে মাহমুদ সাহেব আর অনামিকা বেগম থাকেন। একটা রুম মীরার। আর বাকি দুটো রুম সারা আর সাহেরা বানু দ’খ’ল করে রাখে। সাহেরা বানুর স্বামী বিদেশে থাকে বলে সে সারা বছর মেয়ে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতেই পড়ে থাকে। সারা চাইলে সাহেরা বানুর সাথে এক রুমেই থাকতে পারে কারণ রুমগুলো যথেষ্ট বড়। কিন্তু তারা মা মেয়ে ইচ্ছে করে দুই রুম দ’খ’ল করে থাকে যাতে আয়ানা কে বাধ্য হয়ে ছাদের খু’পড়ি টাইপ ঘরে থাকতে হয়। মাহমুদ সাহেব ভেবেছিলেন সারার রুম টাতে আয়ানা কে থাকতে দিবেন। তাই সাহেরা বানু আর সারা পরিকল্পনা করে দুই রুম নিজেরা নিয়ে নেন। কিন্তু আজ আয়ানা জামাইসহ এ বাড়িতে এসেছে, তার উপর জামাই মীরার জামাইয়ের বড় ভাই। তাকে কিভাবে ওই খু’পড়ি ঘরে থাকতে দিবেন ভেবে মাহমুদ সাহেব নিজের বোন সাহেরা কে বলে এক রাতের জন্য রুম টা ছাড়তে। নাহলে শ্বশুর বাড়িতে মীরার অ’প’মা’ন হতে পারে। সাহেরা বানুর তো এমনিতেই আয়ানা কে স’হ্য হচ্ছে না। আয়ানা এতো বড় বাড়ি, এতো ভালো ছেলের বউ হয়েছে দেখে তার মাথা টা রা*গে জ্ব*লে যাচ্ছে। আর তার উপর রুম ছাড়তে বলায় ভীষণ রে’গে যান তিনি। মাহমুদ সাহেব অনেক ভাবে বুঝানোর পর শেষমেষ তিনি রাজী হোন রুম ছাড়তে।
চলবে?
(।)