অতৃপ্তির মাঝে তৃপ্তিময় সে পর্ব -৩২+৩৩

#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব- ৩২+৩৩
___________________
৭০.
–“আমি আদ্রিন তোমাকে জীবিত রাখবো না,যদি একটা বাক্যও মিথ্যা প্রমাণিত হয়।সব ইনফরমেশনের লিংক চাই আমার।”
ভরাট,ভয়ংকর পুরুষালি কন্ঠটা পরিচিত মিটিংরুমে উপস্থিত সকলের।এক ঝামেলা না পেরুতেই আরেক ঝামেলার আগমন।অফিসের কিছু হিসাবে গরমিল।বড় মাপের টাকা গায়েব।পরের ডিলে এই টাকাটা অফিসের লকারে জমা ছিলো।এখন নেই।অবাক করার কথা হলো,এই টাকাগুলো কাল রাত অবধি ছিলো অক্ষত। সিকিউরিটি আবু কাশেমকে সন্দেহ করে আদ্রিন।কিন্তু, লোকটা নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে।সাথে জানায় কবির নামের ভদ্রলোক কয়েকদিন যাবত লকারের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল। এতেই তেজে উঠে আদ্রিন।কবির লোকটা তার পরিচিত।কোম্পানি চালু হওয়ার পর থেকেই তার অফিসে কবিরের আগমন।
কবির নিতান্তই ভদ্র।কখনো চোখ তুলে কথা বলেনি আদ্রিনের সমেত।মেয়েও বিয়ে দিয়েছে এই বছর।তারপরই রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন প্রায় দূর্বল।এই লোক এমন কাজ করবে বলে বিশ্বাস হয় না আদ্রিনের।হুংকার ছাড়ে সে কাশেমের জবাবে।

তন্ময় দাঁড়িয়ে মন দিয়ে তথ্য প্রযুক্তিতে চালু লোকটার কাজ দেখছে।প্রায় আধা ঘন্টা যাবত চেষ্টা চলছে ফুটেজ উদ্ধারের কিন্তু সব মুছে দেওয়া।স্ক্রিন ঝিলমিল করছে সাদা কালো রঙে।দক্ষ লোকটাও হার মেনে যাচ্ছে।অসম্ভব ঠেকছে তার নিকট এই কাজ।অতঃপর হার মানলো সে,
–“আ’ইম সরি স্যার,বাট আমি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারছি না।যে এই ফুটেজ মুচেছে সে একটা অংশ রাখেনি উদ্ধার করার।”
তার কথা শেষে কাশেম বলে উঠে,
–“আমি কবিরকে আমি সিসিটিভি অফিসে কয়েকবার আসা যাওয়া করতে দেখেছি।”

আদ্রিন রাগী দৃষ্টিতে ঝাঁঝরা করে কাশেমকে।সে বিচলিত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে মুহূর্তেই।

আদ্রিন বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা কপাল ঘষে।রোলিং চেয়ারে হেলান দিয়ে শুধায়,
–“এখন কি করা যায়?”
–“পুলিশ কেইস করাই একমাত্র সমাধান মনে হচ্ছে।এছাড়া উপায় দেখছি না।”
তন্ময় জবাব দেয়।
–“স্যার,পুলিশ কেইস করতেই হবে।আপনার ইনভেস্টমেন্ট ছিলো সেই টাকাগুলো।আপনার এতো বছরের কষ্টের সিংহভাগ টাকাগুলো ছিলো লকারে ইনভেস্টমেন্টের জন্যে।ভাবতেই খারাপ লাগছে।”
মিটিং রুমে নিরবতা।প্রমাণ ছাড়া কাউকে ওপেনলি দোষ দেওয়া নিতান্তই আইন বিরোধী কাজ।আদ্রিন নিজেই বেখবর।তার এতো মোটা অংকের টাকা ছিল মেহনাতের কামায়।তবে,তার মুখে পেরেশানির “প” ও সে দেখাচ্ছে না।নির্ভেজাল ভঙ্গিতে কেবল শুনছে সবার কথা।

তন্ময় খানিক্ষণ চুপ থেকে মুখ খুললো,
–“স্যার,এসিপিকে ফোন দিবো?”

আদ্রিন বিনা দ্বিধায় জবাব দেয়,
–“দরকার নেই।আমি ব্যক্তিগতভাবে কবিরের সাথে আলাপ করতে চাই।এখন সবাই কাজে ফিরুন।”
মিটিং রুমের সবাই উঠে পড়ে।সালাম দিয়ে বিদায় জানায়।থেকে যায় কেবল আদ্রিন এবং তন্ময়।
আদ্রিনের ভাবভঙ্গি উপলদ্ধি করতে না পেরে তন্ময় বলে,
–“স্যার,কেস কেনো করছেন না?”
–“ডিটেকটিভ সিনুকে ফোন দাও।সবকিছু আমার সামনেই ডিটেইলস এ বলো।”
আদ্রিনের প্যাচানো কথায় হাসে তন্ময়।তার হাসিতে আদ্রিনের অধরও স্ফীত হয়।
–“স্যার,আপনি…”
–“কালপ্রিট অফিসেরই একজন।তাই,ওদের সামনে পুলিশের নাম নিলে কায়দা পাল্টাবে।এমন ভাব করো যেনো আমরা কেস করবো না।”
আদ্রিন টেবিলের উপরের পেপারওয়েট ঘুরায়।

তন্ময় সব বুঝে অল্প।তার স্যারকে বুঝা যতো কঠিন তার চেয়ে কঠিন তার স্যারের গুটির চাল বুঝা।
তন্ময় ডিটেক্টিভ সিনুকে ফোন করে।সবটা জানায়।অভিযান চালাতে বলে নিভৃতে। অতি গোপনে।

হিসাবের ফাইলের স্তূপ পড়েছে আদ্রিনের টেবিলে।সম্মুখে অফিসের তিনজন বিশ্বস্ত লোকেরা ফাইল চেক করছে।কর্মচারীদের বিভিন্ন সময়ে হিসাবের পাল্লা মেলাতে ব্যস্ত।প্রায় সবটার হিসাব মিলছে আর সেসব ফাইল দেয় আদ্রিনকে।আদ্রিন পুনরায় হিসাব মেলাচ্ছে।কবিরের রেকর্ড চেক করলো আদ্রিন।গরমিল নেই। অন্যের প্রতি সন্দেহের তালিকা ভারী হয়।বাকি সকলের ফাইল চেক করা আরম্ভ হয় আবারও।

কাজের চাপে দুপুরের খাবারের সময় গড়িয়েছে।পিয়ন কয়েকবার খাবার সাধলেও আদ্রিন খায়নি। সে বেজায় চিন্তিত।তার এতো বছরের কষ্টের ফল গায়েব।বাহিরে প্রকাশ না করলেও ভেতরটা ঠিক তার শঙ্কিত।
মোবাইল ধরার সময়টুকু তার ছিলো না।তৃপ্তির কথা মনের গভীরে উঁকি দিলেও যোগাযোগ করতে পারেনি। মাত্রারিক্ত ভাবনায় তার মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ অফিসের কাজে মগ্ন।সে জানে,তার বউটা নিরাপদ তার বাসায়।

লিফট থামে গ্রাউন্ড ফ্লোরে।সন্ধ্যা গড়িয়ে তিমিরের আক্রোশ ধরণীতে।তন্ময় গাড়ি বের করছে।উদ্দেশ্য তাদের হাসপাতাল।কবিরের সাথে আলাপ করা।গাড়ি থামে আদ্রিনের সম্মুখে।যেই না উঠবে সে গাড়িতে,
অমনি ফোনকল আসে।অচেনা নাম্বার।সময় নিয়ে রিসিভ করে।গাড়িতে বসে। অপর পক্ষের মানুষটা “বি হেলদি” হসপিটালের প্রফেসর।সে নিচু সুরেই জবাব দেয়,
–“জবাব কবির আর নেই।স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হয়েছে উনার।”
ভ্রু কুঁচকে যায় আদ্রিনের।কথা শেষে ফোন কাটে।বিচলিত ভঙ্গিতে তন্ময় প্রশ্ন করে,
–“কিভাবে মারা গেলো?”
–“স্ট্রোক।”
আদ্রিনের সহজ জবাব।
–“এর মানে কি কবিরই কাজটা করেছে? যার কারণে ভয়ে বা শঙ্কায় সে স্ট্রোক করলো?”
তন্ময়ের প্রশ্নে আদ্রিন ভাবুক হয়।মাথায় একে একে সকল দৃশ্য ঘুরে।এই লোক এহেন কাজ করতে পারে!উত্তর মিলছে না।সকালে যেটা নিয়ে সে কনফিডেন্ট ছিলো,এখন তা আর নেই।লোকটার সাথে কেনো আদ্রিন আগে কথা বললো না?
দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে আদ্রিনের,
–“এখন আর এক সুতা বিশ্বাস হচ্ছে না কারো প্রতি।গাড়ি ঘুরাও অফিসে যাবো।কবিরের কেবিনে তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।”
______________
সারাটা দিন তৃপ্তি দেখা পায়নি আদ্রিনের।সকালে ঘুম ভেঙেছিলো রিয়ানার ডাকে।সেই থেকে কেবল খাওয়ার সময়টা সে নিচে নেমেছিলো।বাকি সময় সাফার সাথে রুমে ব্যয় করেছে।শেষবার আদ্রিনকে ফোন করেও তার হাদিস পায়নি।শুনেছে সকালেই বেরিয়েছে অফিসের জন্যে।আর ফিরেনি।তার অফিসে নাকি কিসের ঝামেলা।রুমে উপস্থিত বইয়ের সেলফে চোখ বুলায় সে। হাতে নেয় বিখ্যাত সাহিত্যিকদের বিখ্যাত বইগুলো।বিছানায় বসে সেসব নিয়ে।সময় কাটছে না।তার শাশুড়ি বিকালে এসে তাকে একবার দেখেছিলো, বিদায়ও জানিয়েছে।ভদ্র মহিলা বেশ ব্যস্ত মানুষ।তবে,তৃপ্তি খুশি।ইনায়ার ব্যবহার আগের মতো নেই।অনেকটা পরিবর্তিত।

বই নিয়ে ভালোই সময় কাটছিলো তৃপ্তির।মাঝে এসে হাজির হয় রিয়ানা।তৃপ্তির হাত ধরে বলে,
–“আসো নিচে।সাফার বাবা এসেছে।সবাই আড্ডা দিচ্ছে।”
তৃপ্তি মাথা নাড়ে। বই গুছিয়ে মাথায় ঘোমটা টানে।নতুন বউ সে।হালকা লজ্জা লাগছে তার।নিচে নামতেই সকলের অবয়ব ভেসে উঠে। চাচীরাও আছেন। রাফি উঠে জায়গা দেয় তৃপ্তিকে।সেথায় রিয়ানা এবং তৃপ্তি দুজনই বসে।

সময় কাটে বেশ দ্রুত।রাতের খাবারের ব্যাবস্থা করলে ছেলেরা উঠে খেতে যায়।তৃপ্তি সাফার সাথে আদুরে খেলায় মগ্ন।হঠাৎই আদ্রিনের এক আত্মীয় বলে উঠে,
–“শুনেছি,আদ্রিনের অফিসে বিরাট লস হয়েছে।নতুন বউ তো দেখি কুফা।আসতে না আসতে ছেলেটার কাজে ধ্বস নেমেছে।”
তৃপ্তি জ্বলে উঠে প্রদীপের ন্যায়,
–“আমার জন্যে উনার ক্ষতি হয়েছে?”
–“তা আর বলতে?খালা থেকে ব্যাপারটা শুনে আমার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।”
আত্মীয়ের কথায় দাদী ক্রোধে দিশেহারা হয়,
–“এই জামিলা তুমি এমনিও বেশি কথা বলো।আমি কি বললাম?”

–“দেখুন আন্টি, যা হয় সেটার জন্যে আমরা কেউ দায়ী থাকি না।আর আদ্রিনের অফিসে যেটা হয়েছে এতে আমার কি দোষ?আমি অবলা বধূ না যে,আপনি আমাকে দোষ দিবেন আর আমি চুপ থাকবো!”
তৃপ্তি সাহস দেখিয়ে কথাগুলো বলে।বিনা দোষে সে দোষী হবে কেনো?যদিও মুখের ভাষা শক্ত তার,কিন্তু শশুরবাড়িতে এমন পরিস্থিতে পড়ে তার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে যেনো।

সেই আত্মীয় কিছুই বললো না।দাদী তাকে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়।

রিয়ানা এসে তৃপ্তির কাঁধে হাত রাখে,
–“কিছু মনে করো না।”
–“করিনি আপু।”
স্মিত হাসে তৃপ্তি।রিয়ানা খুশি হয়।তার ভাই তার যোগ্যতা অনুযায়ী মেয়েকেই বউ করেছে।

৭১.
আদ্রিনের অফিসে ঝামেলা হয়েছে বলে জানতো তৃপ্তি। কিন্তু তা এতো বড় ঝামেলা শুনে ঘুম উবে গেলো তৃপ্তির।ছেলেটা এখনো আসেনি।ঘড়ির কাঁটায় দেড়টা।তার রাতের খাবার রুমেই রাখা।শুনেছে প্রায়শই তার খাবার রুমে থাকে,যেনো সে অফিস থেকে ফিরে খাবার খেতে পারে।নাহলে আগ বাড়িয়ে সে কখনোই নিচে যায়না খাবার খেতে।
তৃপ্তি মোবাইল হাতে নেয়।ফোন করে আদ্রিনকে।মোবাইল বন্ধ। বারোটার দিকে ইনায়া এসে তাকে চিন্তা করতে মানা করে।আদ্রিন অফিসে আছে এটাও জানায়।আড়মোড়া ভাঙে তৃপ্তি।গায়ে কম্বল টেনে নেয়।
আয়েশী ভঙ্গিতে আধ শোয়া হয়।প্রিয়তমের অপেক্ষায় না আসা ঘুমটাও আঁখিতে এসে হানা দেয়।চোখ বুঁজে তৃপ্তি।তন্দ্রায় তলিয়ে যাওয়ার পূর্বে ভেসে উঠে আদ্রিনের মুখশ্রী।আদুরে গলায় তার প্রিয় ডাক “মেহেবুবা”টাও যেনো কানে বেজে উঠে।
___________
আদ্রিন ফিরে প্রায় মিনিট চল্লিশ পর।শার্টের হাতা কুনই পর্যন্ত উঠানো।বুকের উপর তিনটা বোতাম খোলা।সর্বপ্রথম নজর যায় তার বিছানায় শয়নরত রমণীর পানে।মেয়েটা ঘুমে বেখবর।সারাদিনের দুশ্চিন্তা কি ঘুঁচে গেলো আদ্রিনের? নেশা লেগে যায় চোখে।শাড়ি কে পড়তে বলেছে মেয়েটাকে?আঁচলের খবর নেই।কম্বলটা অগোছালো।এমন গোছালো মেয়ে ঘুমের পর এতটা অগোছালো হয় কিভাবে আয়ত্বে আসে না আদ্রিনের।আলগোছে হাসে সে।আজ তাকে ঠিকভাবে শুইয়ে দিলো না।তৃপ্তির বুকের গভীরতায় উষ্ণ স্পর্শ দেয় সে।তৃপ্তি নড়লো কিন্তু ঘুম ভাঙলো না তার।আদ্রিন নেষাক্ত দৃষ্টিতে চেয়ে। ফিসফিসিয়ে বলে,
–‘”আমার জান।”

শুনলো না তৃপ্তি।ভ্রু জোড়া এক করে আবারও আরামের ঘুমে তন্দ্রাচ্ছন্ন সে।

পরক্ষণে উঠে ফ্রেশ হয় আদ্রিন। ভাতটুকু খায়।মোবাইল নিয়ে বসে পড়ে।একে একে সব খবর আসতে থাকে তার মোবাইলে।কবিরকে সন্দেহ করে সে কি কোনো ভুল করছে?এতো টাকা তার,কই গেলো?কে বা গায়েব করলো!নিয়ে যাওয়ার সময় নিশ্চয় গার্ডের দেখার কথা।তারা বলছে এমন সন্দেহভাজন কিছুই দেখেনি।বাদ বাকি পার্কিংয়ের সিসিটিভিও মুছে ফেলা হয়েছে।অদ্ভুত পীড়া হচ্ছে তার মস্তিষ্কে।বিজনেস বন্ধ হোক সমস্যা নেই তার।সেভিংস আছে তার ব্যাংকে,এটা দিয়ে নতুন কিছু করা যাবে।সমস্যা একটাই তার।অফিসের কর্মচারীরা।যারা সেই প্রথম থেকে তার সাথে থেকেছে।তাদের মোটা অংকের বেতন সে নতুন বিজনেসে কিভাবেই বা দিবে!
ভাবলো,আদ্রিন অনেক ভাবলো।যতো যায় হোক,এই বিজনেস আদ্রিন বন্ধ হতে দিবে না।কম টাকা ইনভেস্ট করবে সে।তাও এই বিজনেস আর সেই কর্মচারীদের নিরাশ করবে না সে ইহকালে।
তন্ময়কে মেসেজ পাঠালো, আগামীকাল যেনো ডিটেক্টিভ তাকে একটা সুসংবাদ দেয়।যদিও আদ্রিন জানে এটা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।কিন্তু,মন মানে না।ভেতরকার সেই কালপ্রিট কে,অতিদ্রুত সেটা জানতে চায় আদ্রিন।
.
অজানা ভয়ংকর স্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায় তৃপ্তির।দৃষ্টি অর্ধেক মেলতেই তার পাশের জায়গাটা খালি দেখে।বুকটা মুচড়ে উঠে।লোকটা কি এখনো ফিরেনি? তখনই তার চোখ আটকে যায় স্টাডি টেবিলের সাথে অ্যাটাচ করা চেয়ারে বসে থাকা আদ্রিনে।তার উদাম পিঠ, ঘাড়, মাথার পেছনের অংশ দৃশ্যমান।ঘুম কোথায় পালালো যেনো।হুড়মুড়িয়ে উঠে সে।
কম্পিত সুরে “আদ্রিন” বলেই দ্রুত হেঁটে যায় লোকটার পানে। ঘাড় বাঁকিয়ে আদ্রিন পেছনে ফিরতে ফিরতেই সে আবিষ্কার করে তৃপ্তি তার ঘাড় জড়িয়ে তারই কোলে বসে পড়লো।মেয়েটা মুখ গুঁজে দিলো প্রিয়তমের উন্মুক্ত বুকে।সেথায় গাঢ় চুম্বন শেষে তৃপ্তি মাথা উঠায়।ভাঙ্গা স্বরে বলে,
–“সারাটা দিন কি আমার কথা মনে পড়েনি?আমি কল করেছিলাম।”

আদ্রিনের জবাব নেই।সে ব্যস্ত সদ্য ঘুম থেকে জাগ্রত ফোলা চোখের অধিকারিণীকে। যার উপর তার সম্পূর্ণ হালাল অধিকার আছে। জবাব না পেয়ে তৃপ্তি আরো কাছ ঘেঁষে গালে হাত রাখে আদ্রিনের,
–“কি হয়েছে?শুনলাম,অফিসে নাকি ঝামেলা চলছে?”

–“কিছু হয়নি।ঘুম থেকে উঠে আসলে কেনো?এইভাবে ঘুম ভেঙে গেলে মাথা ব্যথা করবে।”
আদ্রিনের হাত পৌঁছে যায় প্রেয়সীর কোমরে।আরো কাছে টানে সে তার অর্ধাঙ্গিনীকে।
–“আরে আরে, শাড়ির অবস্থা খারাপ হচ্ছে।”
লজ্জা পায় তৃপ্তি।সত্যিই শাড়ির অবস্থা বেহাল।
আদ্রিন বাঁকা হাসে।আরো এলোমেলো করে,হেসেই বলে,
–“হোক।”
তৃপ্তির গালজোড়া রক্তিম হয়।মুহূর্তেই অনুভব করে তার হালাল প্রেমিকের গভীরতম ছোঁয়া।

বাঁধা দেওয়ার জন্যে মুখ খুলতে চাইলে,তাও বন্ধ করে আদ্রিন।প্রেয়সীর অধরে গুঁজে দেয় নিজ পুরুষালি অধর।বেহাল তৃপ্তি হুঁশ খোয়ায়।
ধারালো নখ বিঁধে যায় আদ্রিনের উদাম পিঠে।
কয়েক পল বাদে বাঁধন মুক্ত হতেই তৃপ্তি উঠে পড়ে আদ্রিনের কোল হতে।সম্মুখে অগ্রসর হতেই তার লম্বা আঁচল হাতে পেঁচিয়ে ধরে আদ্রিন।থেমে যায় তৃপ্তি।অজানা অনুভূতিতে পেটে অনাকাঙ্ক্ষিত মোচড় অনুভব করছে।ভাঙ্গা কণ্ঠে সে আদ্রিনকে অনুরোধ করে,
–“ছাড়ুন প্লিজ!”

আদ্রিন উঠে দাঁড়ায়।আঁচলে টান পড়তেই তার বুকে গিয়ে ঠেকে তৃপ্তি।আবারও নিজ উদরে অনুভব করে আদ্রিনের বেসামাল স্পর্শ।ফিচেল কণ্ঠে আদ্রিন শুধায়,
–“মনে হয় না আজকে তোমার প্লিজটা রাখতে পারবো জান।কিন্তু,তুমি না চাইলে…চাও…”
এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আদ্রিনের শব্দগুলো।ভেতরটায় যে তার তুফান চলছে।

তৃপ্তি নিশ্চুপ থাকায় আদ্রিন আরো ঘনিষ্ট হয় তৃপ্তির সহিত।শ্বাস প্রশ্বাসে তার বড্ড তেজ। গালে অধর ছোঁয়ায় সে তৃপ্তির।মেয়েটার আঁখি ছলছল।একটু বিচলিত হচ্ছে সে।পরক্ষণে আদ্রিন বেসামাল হয়,কোলে তুলে তাকে।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আদ্রিন তার পানে চেয়ে।তৃপ্তি সবটা বুঝে,সায় দেয় সে আদ্রিনের কথায়।জড়িয়ে ধরে তার গলা।সেথায় নিজের কোমল অধরের স্পর্শ পেতেই সবটা আয়ত্বে আসে তার প্রেমিকের।আদ্রিনের গভীরতায় মুড়ে যায় তৃপ্তির সত্তা।

তৃপ্তির ভেজা চুল বালিশে ছড়িয়ে দিয়েছে আদ্রিন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তৃপ্তি জড়োসড়ো ভঙ্গিতে আদ্রিনের অবয়বে লেপ্টে আছে।সারা শরীর জ্বলছে।যেনো আগুনের তাপ লেগেছে এখনই।
–“খারাপ লাগছে?পেইনকিলার খেতে বললাম, খাওনি।”
–“লাগছে না।”
তৃপ্তি নিচু সুরে জবাব দেয়।
–“তাহলে ফিসফিস করে কান্না করছো কেনো?”
আদ্রিন হাসে প্রশ্ন শেষে।
তৃপ্তি মাথা উঠায় রুমে অবলোকন করছে নীল রঙের লাইটের হালকা রশ্মি।সেই আলোতেই সে লোকটার প্রশান্তিমাখা মুখশ্রী দেখতে পাচ্ছে।এই মুখটা দেখে কিভাবে সে বলবে,তার খারাপ লাগছে!আদ্রিন মাথা নিচু করে কপালে কপাল ঠেকায়,
–“মিথ্যা বলছো কেনো?এইযে মোটা মোটা চোখের পানি।”
–“একটু ব্যথা হচ্ছে।”
–“আমি পেইন কিলার দিচ্ছি।খেয়ে নাও মেহেবুবা।”
আদ্রিন উঠতে নিলে তৃপ্তি তার গায়ের উপর হাত মেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
–“ঘুমাবো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকুন।আপনি পাশে থাকলে আমি সব সহ্য করে নিবো,আদ্রিন।”

আদ্রিন হেসে উঠে সন্তর্পনে।খুব কাছ থেকে এই হাসি উপলব্ধি করে তৃপ্তি।বড্ড সুদর্শন তার প্রিয়তম।শরীরের খাঁজে খাঁজে যেনো মুগ্ধতা বিদ্যমান।সব কিছুতে লোকটা কেনো তার প্রতি এতো যত্নশীল!সে ভীষণ ভাগ্যবতী।
আদ্রিনের হাতের আঙ্গুলের ভাঁজ পৌঁছে যায় আবারও প্রেয়সীর ভেজা চুলে।আদুরে স্পর্শে মেয়েটার ঘুম আনার চেষ্টায় সে।সারাদিনের ধকল,চিন্তা সব তার এই মুহূর্তে ফিঁকে মনে হচ্ছে।মেয়েটা পাশে থাকলেই তার সকল ক্লান্তি,চিন্তা বুড়ো আঙ্গুল দেখায় তাকে।অতঃপর আয়েশী ভঙ্গিতে তৃপ্তির মাথার তালুতে নিজ চিবুক স্পর্শ করে সে বলে,
–“আমার জীবনের সকল অতৃপ্তির মাঝে তৃপ্তিময় হয়ে আসার জন্যে,ধন্যবাদ তোমাকে মেহেবুবা।”

#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব-৩৩
_________________
৭২.
–“আদ্রিন,তোর সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।সকাল থেকে তোকে ফোনে পাচ্ছে না বললো।জরুরি কাজে তোকে খুঁজছে। তন্ময়ও এসেছে।”
রিয়ানা কথার পিছে দরজায় কড়া নাড়ে।
মস্তিষ্ক সচল হয় আদ্রিনের।চোখ বুঁজে থাকা অবস্থায় সব কথা স্পষ্ট শুনে।মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়।তন্ময় তাকে ফোন করলেও চলতো।সকালে বাসায় আসাটা আদ্রিনের পছন্দ হয়নি।তন্ময় তো তার প্রকৃতি সম্পর্কে জানে। তন্ময়কে আসার অনুমতি দিলেও বাহিরের লোককে সে বাড়িতে তেমন একটা এলাউ করে না।গম্ভীর কণ্ঠে আদ্রিন তার বোনকে জবাব দেয়,
–“তন্ময়কে বলো আমাকে ফোন দিতে।”
–“তোর ফোন বন্ধ বলেই বাসায় এসেছে উনারা।একজনকে দেখে ডিটেক্টিভ মনে হচ্ছিলো।”
রিয়ানা থামে।ভাইয়ের কথার জন্যে অপেক্ষা করে।

ডিটেক্টিভার কথা শুনে তন্দ্রা ছুটে আদ্রিনের।উঠতে চেয়েও পারলো না।তার বাম বাহুতে তৃপ্তির মাথা আটকে।মেয়েটা ঘুম এখনো।বোনকে অপেক্ষা না করিয়ে আদ্রিন জবাব দেয়,
–“বিশ মিনিটে আসছি।গার্ডেনে বসাতে বলো তাদের।সার্ভেন্ট পাঠাও।তুমি যেও না।”
–“জানি তো ভাই।”
রিয়ানা হাসে। সার্ভেন্টকে আদ্রিনের নির্দেশনা দিতে যায়।তার ভাইটা অন্যরকম।ঘরের মেয়েদের অহেতুক বাহিরের লোকের সামনে যাওয়া তার সহ্য হয়না।ভাইয়ের এই দিকটা রিয়ানার সবচেয়ে পছন্দের।

আদ্রিন উঠলো না।তৃপ্তির অবয়বে তার দৃষ্টি আটকে। অপর দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে মেয়েটা।একদম গুটিয়ে আছে। অবশ্য আদ্রিনের তালুতে সে একহাত গুঁজে রেখেছে সাবধানে।আদ্রিন তাকে পেছন হতেই আগলিয়ে জড়িয়ে আছে।অন্য হাতে তৃপ্তিকে সোজা করতে চাইলে খেয়াল করে মেয়েটার শরীর ঠান্ডা।গায়ে কম্বল নেই।তাই হয়তো এমন গুঁজে ছিলো।আদ্রিনের হাত এতক্ষণ যাবত তৃপ্তির উদরে আটকে থাকায়,সে জায়গাটা উষ্ণ।বাদবাকি অবয়ব তার হিম।চিন্তা হয় আদ্রিনের।সর্দি না হয়ে বসে।কম্বল ছড়িয়ে দিলো সে তৃপ্তির অবয়বে।ধীরে তার মাথার নিচে হতে হাত সরায়।আলগোছে নিজ অধর স্পর্শ করে তৃপ্তির মাথার কিনারায়।
দ্রুত উঠে গোসল সাড়ে আদ্রিন।চটজলদি তৈরি হয়ে নিচে নামে। হাতে বিদ্যমান পাওয়ার ব্যাংক দ্বারা মোবাইল চার্জ হচ্ছে।নিচে সকল পরিবার বর্গ তাকে নাস্তা করতে বললেও সে জানায়,তৃপ্তি উঠলে একসাথে খাবে।
তার এই কথায়, চাচীরা মুখ টিপে হাসলো বটে।সকলে খাওয়ার রুমে চলে যায়।
পরোয়া করেনি আদ্রিন,বড় কদম ফেলে গার্ডেনে পৌঁছায়।

আদ্রিনকে দেখে তন্ময় শুরুতেই বলে,
–“সরি স্যার,আপনি ফোন ধরছিলেন না।বাসায় না এসে উপায় ছিলো না।”
–“ইটস ওকে।”
কথা শেষে আদ্রিন ফিরে ডিটেক্টিভ সিনুর পানে,
–“এনি নিউজ?”(কোনো খবর)?

সিনু ল্যাপটপ চালু করে।গার্ড কাশেমের সকল ফুটেজ ক্লিয়ার। কাল অব্দি যে সিসিটিভি ফুটেজ কেউ উদ্ধার করতে অক্ষম ছিলো সেখানে আজ এমন ফুটেজ দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় আদ্রিনের,
–“সিসিটিভি ফুটেজ!কিভাবে পসিবল এটা?”
–“আমার ফ্রেন্ড জনি, আইসিটিটিতে টপার। ফরেইনে সকল ব্ল্যাংক সিসিটিভি ফুটেজ পাঠিয়েছিলাম।সে আজ সকালে উদ্ধার করে দিলো।এইখানে একটা লিংক ছিলো।মূলত ঐটাই উদ্ধার করার ক্ষমতা সাধারণ এক্সপার্টের চোখেও পড়ে না। জনি,বেশ দুর্দান্ত।”
(কাল্পনিক ব্যাখ্যা)
আদ্রিনের মুখভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি।কিভাবে উদ্ধার হয়েছে সেটা বিষয় নয়।সিসিটিভিতে কি হচ্ছে এটাই তার মুর্দা বিষয়।
কাশেমের পাশাপাশি কবিরকে দেখা যাচ্ছে।দুইজনই লকার থেকে টাকা তুলে।এরপর ছাদের সিসিটিভি সতেজ হয়।এতো এতো টাকা বড় এক পানির ট্যাংকে ঢালে।সাথে মিক্স করে ক্যামিকেল।কিছু সময় বাদে সেখান থেকে কাশেম উদ্ধার করে কাগজের থকথকে অংশ।আবারও বাকি টাকা একই কায়দায় নষ্ট করে।পরে সেই থকথকে টাকার অংশবিশেষ পানি দ্বারা পরিষ্কার করে দুজন।টাকার মান শেষ হয়,পানির লাইন দ্বারা বয়ে,নামে নালায়।আদ্রিনের সকল মেহনতের ফল শেষ নালায় ভেসে।এতো টাকা নষ্টের পাপের ভয়ে কান্না করে কবির। তা দেখে এলোপাথাড়ি কয়েক ঘা মার দেয় কাশেম তাকে। কবিরকে শাসানোর দৃশ্য দেখা যায়। ছাদের সবকিছু পরিষ্কার করে দুজনে।এই ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ স্থগিত হয়।
পরের ঘটনা তন্ময় বলে,
–“সিসিটিভি ফুটেজের এতটুকু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে স্যার।আর পরের ঘটনা তো জানেন।রাতের আঁধারে সিসিটিভির আলোতে তাদের স্পষ্ট দেখা যাবে এটা তারা ভাবেনি।আর সিসিটিভি নষ্ট করার চেষ্টাও করেছে।চেষ্টা নয়, নষ্ট করেছে।বাংলাদেশী এক্সপার্টও উদ্ধারে সক্ষম হয়নি।এখন কাশেমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।”

আদ্রিনের কপালের রগ ফুলে উঠে।তার কষ্টের ফল নেই। জলে ধুয়ে সমাপ্তি টেনেছে।এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় লস। ঘাড়ে হাত বুলায় আদ্রিন।কিছু বলার পূর্বে তার চাচা পেছন থেকে বলে,
–“ওহ মাই গড,আদ্রিন! তোমার এত টাকা লস হয়েছে?কিভাবে?লোকটাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না।”
আদ্রিন ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে ফিরে।রাফির বাবা দাঁড়িয়ে।মুখভঙ্গি পেরেশানিতে ভরপুর।আদ্রিনের ব্যাপারে উনাকে এতটা চিন্তিত হওয়াটা হজম হচ্ছে না তার।গম্ভীর গলায় সে জবাব দেয়,
–“লস আমার কিছু বাঁকা করতে পারবে না।আমি আমার কাজ সামলে নিবো চাচ্চু।”

রাফির বাবা হেসে স্থান ত্যাগ করে।যেতে যেতে ফোন চাপে।ফোন করে একজনকে।

আদ্রিন নিজ ভাবনায় মশগুল।সে থানায় ফোন দেয়।নিজ পরিচয় দিয়ে পুলিশকে নিজ বাসায় আসতে বলে।সবাই একসাথে যাবে অফিসে।রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে হওয়ায় সুসম্পর্ক আছে তার উপরের স্তরের মানুষের সহিত।আদ্রিন পরিহিত শার্টের কলার ঠিক করে।ভেতরটা অন্যরকম।টাকার ব্যাপারটা মনে আসলে তার অস্থিরতা কাজ করে।অফিসে ট্যাকেল দেওয়াটা খুব রোমাঞ্চকর হবে এখন।ঘুরে তাকে দাঁড়াতে হবেই।পিছুটান রাখবে না কোনো।
বাসা থেকে নাস্তা এনে টেবিলে রাখে সার্ভেন্ট।

–“খেয়ে নাও তোমরা।”
আদ্রিন নিজ কথা শেষে উঠে পড়ে।তন্ময় জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
–“স্যার,আপনি?”
–“পরে।”
আদ্রিন হাঁটতে থাকে গার্ডেনে।সিকিউরিটি গার্ডকে ইশারায় ডাকে।বাড়ির ভেতর হতে সিগারেট আনায়।নির্দ্বিধায় ফুঁকতে থাকে।কবিরকে জোর করে সবটা করিয়েছে কাশেম এটা স্পষ্ট।কিন্তু,কাশেম কার সাহসে এতবড় কাজটা করলো!রাতের বেলা কাশেম ছাড়া কেউ অফিসের ভেতরে চেক করে না কিছু।ব্যাবসা শুরু পর হতে কাশেম তার দায়িত্ব নির্দিষ্ট সৎ উদ্দেশ্যে পালন করেছে।তাহলে এবার কি হলো? কার কথায় আদ্রিনের বিশ্বাস ভেঙেছে?
পকেটে এক হাত পুরে অন্যহাতের দু আঙুলের ভাঁজে সিগারেট আটকে রেখে ভাবনায় মশগুল সে।খানিক বাদে গার্ড আসে তার নিকট,
–“পুলিশ এসেছে।”
তন্ময় আর সিনু ততক্ষণে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।পুলিশের সাথে যাওয়ার অপেক্ষা করলো না।কাশেমকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না এই বিষয়ে।

আদ্রিন হাতের মুঠোয় জ্বলন্ত সিগারেট নিভিয়ে নেয়।প্রধান ফটকের সম্মুখে যায়।পুলিশের সাথে কথা বলে।দুইজন সিভিল ড্রেসে এসেছে।তারাই মূলত আদ্রিনের সাথে অফিসের ভেতরে যাবে। যাতে কাশেম কিছুই টের না পায়।

দূরে অবস্থিত ঘরে আদ্রিনের কক্ষের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি আড়ালে দেখছিল সবটা।গোসল শেষে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছি সেল।রাত থেকে পেটের নিচ অংশে পীড়া হচ্ছিল,সেটা এখনো বিদ্যমান।উদরে আলতো করে হাত স্পর্শ করে তৃপ্তি।হঠাৎই দৃষ্টি গোলাকার আকৃতি ধারণ করে।পুলিশের একজন আদ্রিনের হাতে হাতকড়া এগিয়ে নিলে তৃপ্তি চিৎকার দিয়ে উঠে আদ্রিনের নাম ধরে। কাঁচে ঘেরাও করা ব্যালকনির বাহিরে শব্দ যায়নি তৃপ্তির।কাঁচটা নামানো যায় এটাও ভুলে বসেছে সে।জানালা দিয়েও সে আদ্রিনের সাথে কথা বলতে পারতো।কিন্তু,মেয়েটার বুদ্ধি লোপ পায়।দ্রুত ছুট লাগায়।পুরো বাড়ি সাফ মনে হলো তার।অবশ্য বাড়ি বেশ বড় আয়তনের। কোনো রুমে কেউ আটকে থাকলেও জানবে না।
সিঁড়ি বেয়ে নেমেও কাউকে দেখেনি তৃপ্তি।মেয়েটা এটাই বুঝেনি সবাই ডাইনিংয়ে আছে।

অশ্রুজলে গাল ছেপে যায় তৃপ্তির।আদ্রিনকে কেনো গ্রেফতার করছে!
সে বাহিরের দিকে যেতে যেতেই ধাক্কা লাগে তার কারো সাথে।বেশ জোরেই দৌড়াচ্ছিল তৃপ্তি।ফলস্বরূপ পড়ে যেতে নেয়।কিন্তু,পড়ে না।আদ্রিন তার পিঠের নিচে হাত দিয়ে সামলে নেয়।অফিসারদের গার্ডেনে বসিয়ে নাস্তা খাওয়ার অনুরোধ করে সে বাসায় ফিরছিলো।

তৃপ্তির এমন ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে অস্থির হয় আদ্রিন,
–“কি হয়েছে?দৌড়াচ্ছিলে কেনো?”
তৃপ্তির দৃষ্টিতে আদ্রিনকে দেখে সুখ পায়।মেয়েটা কেঁদে উঠে শব্দ করে।বিচলিত হয় আদ্রিন।তার দুগালে হাত রেখে শুধায়,
–“কান্না কেনো?”
তৃপ্তি কথা বলেনি একটিও।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদ্রিনকে।বুঝেনি আদ্রিন কিছু।তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে ফের জিজ্ঞাসা করে,
–“আরে বলবে তো কি হলো? ছুটছিলে কেনো?”
তৃপ্তির কান্না থামেনি।সে ভয় পেয়েছে। লোকটাতে তার জান আটকে।এক মুহূর্তের জন্যে কি ভেবেছে সে!
কয়েকজন সার্ভেন্ট তাদের এমন অবস্থায় অবলোকন করে মুচকি হেসে নিজ রাস্তা মাপে।

–“তৃপ্তি?কাদঁছো কেনো রে বাবা!”

–“আমি ভেবেছি পুলিশ আপনাকে এরেস্ট করবে।ভয় পেয়েছিলাম।”
তৃপ্তির বোকামিতে হাসে আদ্রিন,
–“উপর থেকে লুকিয়ে আমাকে দেখা হচ্ছিলো?”
আদ্রিনের বুক মাঝারে উপর নিচ মাথা নাড়ায় তৃপ্তি।
–“শান্ত হও।”
আদ্রিনের স্নেহের সুর।
–“হাতকড়া কেনো এগিয়ে দিয়েছে উনারা?”
তৃপ্তি মাথা তুলে প্রশ্ন করে।

–“এমনি দেখতে চেয়েছিলাম আমি।”
বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা জলের আস্তরণ মুছে দেয় আদ্রিন।
তৃপ্তি ছোট্ট করে বলে,
–“ওহ।”
–“এমন স্ট্রং মেয়ে,আমার বেলায় কেঁদেকুটে হয়রান হয় ভাবতেই অবাক লাগে।”
আদ্রিনের ঠাট্টার সুর ঠিকই বুঝে তৃপ্তি।মুখ ফুটে বলতে পারলো না,
–“আপনি আমার সব আদ্রিন।আপনাকে হারানোর ভয় আমার সবচেয়ে বড় ভয়।”

নিশ্চুপ থাকায় আদ্রিন তার গাল টেনে বলে,
–“উনারা বাহিরে আছেন,গার্ডেনে।চাচু কথা বলছে।চলো নাস্তা খাবে।”
তৃপ্তি সমর্থন জানায়।এইভাবে হুট করে ব্যথার বিপরীতে দৌড় দেওয়ায় ব্যথা বাড়ে তৃপ্তির।পেটের নিচু অংশে চিনচিন করছে।তার ধীরে হাঁটা, পেটে হাত চেপে রাখা লক্ষ্য করে আদ্রিন।বাহু টেনে দাঁড় করায়,
–“ব্যথা কমেনি?”
–“কমেছে।”
–“হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে?স্পষ্ট দেখছি তুমি ধীরে হাঁটছো। মিথ্যে কেনো বলছো?”
আদ্রিনের কণ্ঠে তেজ।
–“ঠিক হবে।আপনি চিন্তা করবেন না।”
–“আমার সব চিন্তা তোকে নিয়েই।রাতে পেইনকিলার খেলে এই অবস্থা হতো?নাস্তা সেরে খাবি।আচ্ছা আমি দেখবো ব্যাপারটা।”
আদ্রিনের কথায় দমে যায় তৃপ্তি।পরক্ষণে নিজ গলায় স্পর্শ অনুভব করে সে।আদ্রিনের চুল টেনে সরাতে চায়।পারে না।আদ্রিন নিজ ইচ্ছা পেশ করে সরে।ভেজা গলা শাড়ি দ্বারা মুছে তৃপ্তি।
আদ্রিন কিছু ব্যক্ত করলো না।লোকটা রেগেছে বুঝতে বেগ পায়নি তৃপ্তি।খাবার টেবিলে তৃপ্তির কান্নারত চেহারা দেখে,ইনায়া এবং রিয়ানা প্রশ্ন করতে গিয়েও করে না আদ্রিনকে লক্ষ্য করে।আদ্রিনের মুখশ্রীতে কঠিন রাগ ছেপে।

৭৩.
নাস্তা শেষ করে আদ্রিন ঝটপট।টেবিলে সকলে উপস্থিত।কয়কজন আত্মীয় আছে।তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে আদ্রিন বলে উঠে,
–“রুমে আসবে নাস্তা শেষে।”
–“জ্বী।”
তৃপ্তি জবাব দেয়।

সে যেতেই ইনায়া হেসে বলে,
–“একসাথে নাস্তা আমার ছেলেটা খুব কম খায়।আজকে সে একসাথে নাস্তা করবে আশা করিনি।তোমাকে ধন্যবাদ।”
বিনিময়ে তৃপ্তি হাসে,
–“ধন্যবাদ দিবেন না,আম্মি।আপনার ছেলে আপনাকে ভালোবাসে।”
–“জানি।কিন্তু কিছু কারণে দূরত্ব এসেছে।”
ইনায়া দুঃখভরা কণ্ঠে বলে।
তৃপ্তি পাঁচ মিনিটে নাস্তা গিলে।উদরে হাত চেপে সকলের আড়ালে ধীরে হেঁটে কক্ষে যায়।মুহূর্তেই উপলব্ধি করে আদ্রিন দেওয়ালে ঘুষি দেয়।গমগমে সুরে চিল্লিয়ে উঠে,
–“এক্সিডেন্ট হয়েছে!গাড়ির নম্বর সিসিটিভিতে উঠেছে?”

অপর পাশে জবাব দিলে আদ্রিন আরো তেতিয়ে উঠে,
–“এটা জেনে শুনে করানো হয়েছে।যেনো সিসিটিভিতে কিছু না উঠে।আমি আসছি।ছাড়বো না কাউকে। সিনুকে কাজে লাগাও।প্রশাসনিক ভবনের সেই ঘটনাতেও ইনভলব করো ওকে।”
ফোন কাটে আদ্রিন।পূর্ব হতেই তৈরি ছিলো সে।কেবল বাকি ডান হাতের শার্টের বোতাম লাগানো।সেই কাজ সম্পাদন করতে করতে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে।তৃপ্তির হাত টেনে বিছানায় বসায়।পেইনকিলার নিয়ে তার মুখে পুরে দেয়,
–“আমার কথা শুনলে এতো কষ্ট হতো না।”
তৃপ্তি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আদ্রিনের ভেতরে কিছু চলছে।অন্য কোনো বিষয়ে আদ্রিন পেরেশান।
তৃপ্তি দুহাতে আগলে নেয় আদ্রিনের গাল,
–“কি হয়েছে?বেশি চিন্তিত লাগছে আপনাকে।”
আদ্রিনের মন খারাপ সব উগলে এলো।ছেলেটা নিজ দূর্বলতা দেখায় না। তৃপ্তিকেও দেখাবে না।সব মন খারাপ মাটিতে পিষে সে তৃপ্তির হাতে অধর ছুঁয়ে দেয়।বাকি ভালোবাসার বোঝাপড়া শেষে ছাড়ে সে তৃপ্তিকে।উপদেশের সুরে বলে,
–“ফিরতে দেরী হবে।খেয়ে নিও। ব্যথা হলে আপুকে বলবে।চুপ করে থাকবে না।”
তৃপ্তি হাঁপাচ্ছে।আদ্রিনের কাঁধে তার মাথা ঠেকানো।পরক্ষণে আদ্রিনের ফোন এলে তৃপ্তি উঠে।আদ্রিন ইশারায় বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে যায় কক্ষ হতে। খানিক্ষণ আগের ঘটনার জন্যে তৃপ্তির তনু তিরতির করে।আদ্রিনের একেক স্পর্শ যেনো মাদকতায় ঘেরা।
——–
বিকালের দিকে অলস সময় পার করে তৃপ্তি।সাফার জ্বর।রিয়ানা তাই নিষেধ করেছে তার নিকট যেতে।ভাইরাস জ্বর দ্রুত ছড়ায়।তৃপ্তি বার কয়েক চেষ্টা করেছে রুমে যেতে।কিন্তু,রিয়ানা মানেনি। দাদীও বাঁধ সাধে।নতুন বউ এইভাবে অসুস্থ হওয়াটা সুবিধার না।তৃপ্তি দাদীর কক্ষে যায়।দাদী খুশি হয় বেশ।আদ্রিনের নানান কাহিনী বলে।তৃপ্তি মজা পাচ্ছে।কয়েকবার হাসতে হাসতেই কুপোকাত হয়।আদ্রিনের ছোটকালের বর্ণনার সাথে এখনের বর্ণনায় ঘোর অমিল।ইনায়ার সহিত তার মনোমালিন্যের কথাটাও দাদী জানায়।আবারও পরিবেশ থমথমে হয়।
দাদী পরিবেশকে আরো গম্ভীর করে আদ্রিনের ব্যবসায়িক লসের কথা জানিয়ে।বুক ভার হয় তৃপ্তির।এতো চাপ কিভাবে সহ্য করছে তার প্রাণ ভোমরা! তৃপ্তির আঁখি ছলছল দেখে দাদী হাত বুলায় তার মাথায়,
–“কান্না করার কিছু না।আমার নাতি অনেক শক্ত। ওরে ভাঙা সহজ না।”
হঠাৎই তৃপ্তির ফোনে কল আসে।বাড়ি থেকে ফোন।
দুটো রিং পড়তেই রিসিভ করে,
–“হ্যাঁ, লাভি বলো।”
অপর পাশ হতে চামেলী বলে,
–“তোর দিদার শরীর ভালো না।তোকে দেখতে চাচ্ছে।”
–“আসছি আমি।”
হদতন্ত হয় তৃপ্তি।দাদীকে ব্যাপারটা জানায়।দাদী চিন্তিত সুরে বলে,
–“চলো বউমা।আমি যাবো তোমার সাথে।”
–“ঠিকাছে দাদী।”
তৃপ্তি তাড়াহুড়োয় যে কাপড়ে ছিলো তেমনই দাদীর সাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।সাথে যায় মিনাও।

ঐ বাড়ির সবাই অ্যাপায়ন করে আদ্রিনের দাদী এবং চাচীকে।তৃপ্তির দীদা ঘুমানো অব্দি তৃপ্তির হাত ধরেছিলো। প্রবীণ মহিলা নাতনিকে পেয়ে খুশি হয়েছিল বেজায়।যাওয়ার বেলায় আদ্রিনের দাদী তৃপ্তিকে বলে,
–“আজ থেকে যাও। কাল গাড়ি পাঠাবো।”
তৃপ্তির মনে আসে আদ্রিনের কথা।তাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তৃপ্তির জন্যে সুখকর হবে না।সে বিনা দ্বিধায় দাদীকে জবাব দেয়,
–“উনাকে জানায়নি দাদী আমি এইখানে।উনি ফোন ধরছেন না।”
–“তন্ময়কে দাও।”
দাদীর কথায় তৃপ্তি বলে,
–“কথা হয়েছে।উনারা ভীষণ ব্যস্ত।”
তাদের কথায় অর্ক বলে উঠে,
–“তুই আরেকটু থাক।কাকা আসছে।”
তৃপ্তির বাবা দোকানের কাজে মেয়েকে দেখতে আসেনি।এখন আসছে।এইদিকে আদ্রিনের দাদীরও শরীর অস্থির লাগছে।
–“বৌমা তুমি ভাইয়ের সাথে এসে যেও।আমি মিনাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি।”
তৃপ্তি সম্মতি জানালে উনারা চলে যান।

বসার ঘরে তৃপ্তি প্রিয়কে কোলে নিয়ে বসে।বোনকে কাছে পেয়ে প্রিয়ের সুখের অন্ত নেই।সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো গমগমে।আবারও ফোন বাজে তৃপ্তির।আদ্রিন ফোন করেছে।ভিড় থেকে বেরিয়ে পেছনের দিকে যায় মেয়েটা।বাহিরে শীতল পবন।আকাশে বড় চাঁদ।ফোন কানে দিতেই ভেসে আসে আদ্রিনের কণ্ঠ,
–“রেডি হয়ে থেকো।আমি আসছি।”
–“আপনি এতদূর থেকে আসবেন?অর্ক দাদা নিয়ে যাবে আমাকে।”
তৃপ্তির কথার পরোয়া করেনি আদ্রিন,
–“বিশ মিনিটে আসছি।”
–“ডিনার রেডি করবো তাহলে?”
তৃপ্তির কথায় আদ্রিনের কণ্ঠ নরম হয়।কেমন ফিসফিসিয়ে বলে,
–“ডিনার করেছি অফিসে।তবে,অন্য ডিনার এখনো বাকি আছে।”
ফিচেল হাসিটা শ্রবণে এড়িয়ে যায়নি তৃপ্তির।লোকটা ঠোঁটকাটা।লজ্জাহীন।এইদিকে সেই বাক্যে তৃপ্তির গাল রক্তিম হয়।ফোন কাটে মেয়েটা।নির্লজ্জ ছেলেটাকে কি বা উত্তর দিবে?

আদ্রিনের আসার ব্যাপারটা তৃপ্তি বাবাকে জানায়।অরিত্রন একটু বেজার হলেও কিছু বলে না।মেয়েটা যে এখন সম্পূর্ণ আদ্রিনের।

সত্যি মিনিট বিশেক পরে আদ্রিন আসে।ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়েই প্রিয়কে আদর করে। প্রিয়র জন্যে আনা চকলেটের বাক্স হাতে দেয়,
–“তোমার জন্যে প্রিয়।”
প্রিয় খুশি হয়।হাত বাড়িয়ে নেয়,
–“এত্তগুলো চকলেট!ভাইয়া তুমি বেস্ট।”
চামেলী চোখ রাঙায়,
–“আপনি করে বলো,প্রিয়।”
আদ্রিন প্রিয়র মাথায় হাত বুলায়,
–“সমস্যা নেই।”

তৃপ্তি সকল থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায় আদ্রিনের সমেত।তন্ময় ড্রাইভিংয়ে।পেছনের সিটে আদ্রিন এবং তৃপ্তি।তার কাঁধের উপর হাত এলিয়ে আদ্রিন সিটে হেলান দেয়।রাস্তায় আঁধার ঘুটঘুটে।চারিদিকে বৃহৎ গাছের ছায়ার কারণে চাঁদের আলো এই রাস্তায় আসতে বেগ পাচ্ছে।কেবল গাড়ির হেডলাইট জ্বলছে মিটমিটিয়ে।পেছনের সিটে দুজনের অবয়ব ছাড়া কিছু দৃশ্যমান নয়।অবয়ব দুটিও অস্পষ্ট।তারা মেইন সড়কে না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাচ্ছে।প্রধান সড়ক নিরাপদ নয়।কাশেম বেঁচে নেই।কালপ্রিট বের করার তদন্ত চলছে।
আদ্রিন তার পাশে থাকা অর্ধাঙ্গীর উপর কিছুতেই রিস্ক নিতে পারবে না।জানালার ধারে বসা তৃপ্তির নিকট এগিয়ে যায় সে।তার কাঁধে মাথা রাখে।হাত পৌঁছে যায় প্রিয়তমার শাড়ির ভাঁজে।তৃপ্তি চমকালো,হচকালো।বিস্ফোরিত নজরে তাকালো। আঁধারে সবকিছু ধোঁয়াশা। সামনে সিট থাকায় তাদের অবয়ব ঢেকে আছে সন্তর্পনে।তাই তাদের অবলোকন করা অসম্ভব কাজ।আদ্রিনের হাত সরাতে চাইলে আদ্রিন মাথা উঠায়। ফিসফিসিয়ে নিঃশব্দে বলে,
–“মাথায় হাত বুলিয়ে দাও,জান।তোমার ছোঁয়ায় আমার সকল ক্লান্তি শেষ হয়।আমি ফিরে পায় আমার শক্তি।”

চলবে…..
কপি করা নিষেধ।
আমার গল্পের আগের গ্রুপটা নিশ্চল।ঐটার কোনো দায়ভার আমার নেই।নতুন গ্রুপ খোলা হয়েছে কমেন্টে দিবো লিংক।সবাই জয়েন হবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here