#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব-১৬
#লেখিকা–ইসরাত বিনতে ইসহাক
আমি নিরবে চোখের পানি বিশর্জন দিচ্ছি।
শরীফ বললেন এই পিচ্চি এভাবে কাঁদছ কেন? মাত্র তো কয়েক মাসের ব্যাপার…..
আমি কিছু বলছি না চুপ শুধু শুনে আছি।
শরীফ বললেন, আমি তো আবার এসে তোমাকে নিয়ে যাবো। এখন নিয়ে যেতে পারবোনা কারণ, আমি যাওয়ার পর কাগজ পত্র ঠিক করবো কোয়ার্টার পাওয়ার জন্য। অবশ্য বেশি সময় লাগবে না, কিন্তু কোয়ার্টার পেয়ে প্রথমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।এবং কিছু ফার্নিচার আনতে হবে, না হয় তো থাকা যাবে না।
শরীফা তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি??
শরীফ দেখলো শরীফা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। পাগলী মেয়ে একটা, এতো ঘুম কাতুরে যে কাঁদার মাঝেও ঘুম…
শরীফ শরীফা কে কুলে করে, রুমে এনে বেডে শুয়ে দেয়। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বারোটা ছুঁই ছুঁই। তাই আর বিলম্ব না করে নিজেও শুয়ে পড়ল,ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে।শরীফা অন্ধকার ভয় পায় তাই ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়।
অতঃপর শরীফ তার পিচ্চি বউ কে জরিয়ে নিয়ে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি, আমি উনার বুকে মাথা রেখে গুটিয়ে শুয়ে আছি।আর উনি ও ঘুমের মধ্যে থেকেও আমাকে জড়িয়ে রেখেছেন। মনে হচ্ছে এ যেন এক শান্তির স্থান। এখানে আমি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। এখানে থাকলে কেউ আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। একদম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না।
অলস ভঙ্গিতে এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে, না আর থাকা যাবে না।
উনার হাত ছাড়িয়ে, উঠতে সক্ষম হলাম। কিন্তু এখন উনাকে উঠাতেই আমার বারোটা বেজে যাবে। তবুও ডাকছি এই যে শুনছেন? উঠুন তারাতাড়ি নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
উনি বললেন শরীফা একটু ঘুমাতে দাও। তাহলে কি আপনি নামাজ পড়বেন না? পড়বো একটুখানি ঘুমিয়ে নেই। একদম না উঠুন বলছি। আচ্ছা তাহলে আদর করে উঠাও? আবার দুষ্টু কথা বলছেন?
এবার আমি উঠে পানির গ্লাস হাতে নিলাম উনাকে ভয় দেখানোর জন্য।
এই যে আপনি উঠবেন নাকি এই পানি গুলো আপনার মাথায় ডালবো? জানেন তো হাদীসে আছে স্বামী বা স্ত্রী কেউ যদি নামাজ পড়তে না উঠে তাহলে পানি ডেলে তাদের উঠানোর কথা বলা হয়েছে,,,,সো আমি এখন….
এই না না,, আমি উঠছি।
এই বলে শরীফ উঠে বসলেন। আমি উনার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
_________
আজকে আমি আর শরীফ ফারজানা আপুর শ্বশুড় বাড়ি যাবো। গতকাল ফারজানা আপু আর উনার বর আমাদের ইনভাইট করেছেন। এরকম ভাবে বলেছেন না গিয়ে পারছি না যেতেই হবে।
মেহের আপু আর সাইফ কে আমাদের সাথে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা যাবে না বললো। তাই আমাদের দুজনকেই যেতে হচ্ছে।
যাওয়ার পথে শরীফ বললেন,চলো কফি হাউস থেকে কফি খেয়ে যাই তাহলে ফুরফুরে লাগবে। আমি আচ্ছা চলেন।
গেলাম কফি হাউসে,
শরীফ অনেক গল্প করছে,এই কফি হাউস নিয়ে। উনি ছুটিতে আসলেই নাকি এখানে ফ্রেন্ডদের সাথে আসেন কফি খেতে প্লাস ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা দিতে। কফি হাউস টা অনেক সুন্দর দেখতে। খুব সুন্দর করে সাজানো, মনে হয় যেন আমি প্রকৃতির সুন্দর্যে এখানে বসেই উপভোগ করতে পারবো। আসলে সাজানো টা কৃত্রিম কিন্তু মনে হয় বাস্তব।
আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে আসে,তাই শরীফ কে বলে আমি নেকাব ভালো করে সেট করতে কমন রুমে এলাম।
আয়নায় নেকাব ঠিক করে বের হলাম।
শরীফ এর কাছে যেতে পা বাড়াতেই দেখলাম শরীফ কে একটি মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম, তাদের এই অবস্থায় দেখে। তাদের সামনে যাওয়ার ইচ্ছা বা শক্তি কোন টাই আমি পাচ্ছি না।
শরীফ কে ছাড়িয়ে মেয়ে টা খুব হেসে কথা বলছে। তবে শরীফের এক হাত ধরে আছে।
এই মুহূর্তে নিজেকে ওদের কাবাবের হাড্ডি মনে হচ্ছে, আমি হয়তো তাদের বিরক্তির কারণ হতে পারি। তাই তাদের সামনে যাওয়ার কোন মানেই হয় না।
অপরদিকে…
হেই শরীফ দোস্ত কেমন আছিস? কতো দিন পর তোর সাথে দেখা? খুবই আনএক্সপেক্ট ছিল। হুম আসলেই লিজা। তোকে তো প্রথমে চিনতেই পারিনি।তো কি খবর? কলেজের পড়াশোনা শেষ না করেই তো বিয়ে কবে বিদেশে চলে গেলি। দোস্ত কি করবো, আব্বু আম্মুর ইচ্ছেতেই বিয়ে করতে হয়। পরে আর কি করা ওর বেশিরভাগ সময় আমেরিকা থাকতে হয়। তাই আমাকে ও যেতে হলো।
আচ্ছা তো এখানে একাই এসেছিস? না আমার বউ কে নিয়ে এসেছি।ওয়াও তুই বিয়ে করেছিস ?হ্যা রে এইতো কিছুদিন হলো। তো ভাবী কোথায়?মিট করাবি না? হুম নিশ্চই।
কিন্তু ও এখনও আসছে না কেন, বুঝতে পারছি না। আচ্ছা আমরা কথা বলি,দেখি ভাবী আসে কিনা। আচ্ছা, তো বেবি আছে তোর? হুম, একটা মেয়ে আছে। কোথায়? ওরা আসছে,ওর পাপার সাথে গিয়েছে কি যেন কিনার বায়না ধরেছে তো সেটাই কিনতে গেল। আমি বললাম এখানে আমি কফি খেয়ে আসি, তোমরা যাও।
আচ্ছা, তোর বাবার বাসা তো এখানে কোথাও,তাই না?? হুম,চল না ভাবী কে নিয়ে বাসায়। আজকে হবে না,এক জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছি আমরা। তাই অন্য কোন দিন যাবো। আচ্ছা ঠিক আছে।
আচ্ছা ভাবী এখনও আসছে না কেন?
তখন লিজার ফোনে কল আসে।
লিজা কথা কলে কথা বলে, শরীফ কে বলে দোস্ত ডোন্ট মাইন্ড, আমাকে যেতে হবে,ও কল করছে। শরীফ বললো আরে না না ঠিক আছে তুই যা। না হয় দুলাভাই রেগে যাবেন। তুই ও না,,,,
তারপর লিজা বিদায় নিয়ে চলে যায়।
এদিকে আমি দূর থেকে দেখলাম তাদের হাসি হাসি কথা বলা। বেশ বুঝতে পারছি এখন আর আমার দাম নেই উনার কাছে।থাকবেই বা কি করে? আমি তো ঐ মেয়েটার মতো পোশাক আশাক পরি না। এরকম ওয়েস্টান ড্রেস পরে চুল গুলো লাল লাল করলে হয়তো উনি অন্য কোন মেয়ের সাথে এভাবে সম্পর্ক করতেন না।
আমার ভাবনার মাঝে মেয়ে টা চলে গেল। আমি এবার উনার কাছে এলাম।
শরীফা তুমি এতক্ষণ কি করছিলে?
আমি আসতেই শরীফ বললেন।কাজ ছিল। ওহহ আচ্ছা, তাহলে চলো যাওয়া যাক। অনেক সময় তো পার হয়ে গেল।
আমার আরো খারাপ লাগলো, উনি একটাবার মেয়েটার কথা আমাকে বললেন না পর্যন্ত। আমি ও কিছু জিজ্ঞাসা করবো না,দেখি উনি কতো দিন এসব করে বেরান।
ফারজানা আপুর বাসায় যেতে একটা সিএনজি নিলেন উনি।সারা রাস্তা আমি বাহিরে তাকিয়ে আসি। একটা কথা ও বলিনি উনার সাথে, উনি নানা রকম কথা বলেছেন। আমার খুব রাগ হচ্ছিল, কিছু বললেই উল্টো পাল্টা কিছু বলে দিতাম তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে হয়।
ফারজানা আপুর বাসায় পৌঁছাতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে।
খুব সুন্দর বাসা আপু দের।
ফারজানা আপু দেখেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আর অভিমানী সূরে বললেন শরীফা তুমি আমার বিয়েতে আসলে না কেন? আমি বললাম আপু তুমি ও তো আমাদের বিয়েতে আসলে না? আসলে শরীফা তখন একটু সিক ছিলাম আমি,তাই আর কি। আচ্ছা তাই বুঝতে পারছি। আমি তো খালামনি হবো কিছু দিন পর তাই না? ফারজানা আপু বললেন হুম, দোয়া কইরো শরীফা ও যেন সহীহ সালামতে পৃথিবীর আলো দেখতে পারে।
জ্বি আপু তা করি সবসময়।
তো শরীফা তোমরা কি প্লান করলে? কিসের প্লান আপু?আরে বোকা মেয়ে বেবি নিয়ে কি প্লান করলে? আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
আপু বললেন ওলে বাবা রে বোন আমার লজ্জা রাঙ্গা হয়ে,লাল নীল সবুজ হয়ে গেছে। তখন ফারজানা আপুর শ্বাশুড়ি মা আমাদের খাবার খেতে ডাকেন।
আমরা ও চলে গেলাম ডাইনিং এ ।
ফারজানা আপুর শ্বশুড় বাড়ির লোকজন রা খুবই ভালো। আপুর জা ও খুব মিশুক, আমি যেতে না যেতেই আমার সাথে খুব সুন্দর মিশে গেছেন। আর উনার একটা ছোট্ট ছেলে আছে, আমি গিয়েই ওকে কোলে নিয়ে নেই। ছোট বেবিদের আমার খুব ভালো লাগে।আর ও তো মা শা আল্লাহ কিউটের ডিব্বা একটা।
মা এবং দুই ভাই আর তাদের ব্উ দের নিয়ে হাসি খুশি পরিবার তাদের।দেখে খুব ভালো লাগলো ফারজানা আপু খুব সুখী এরকম পরিবার পেয়ে।
শরীফ আর ফারজানা আপুর বর মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসতেই আমরা সবাই এক সাথে খাবার খেতে বসি।
খাবার খাওয়া শেষ করে সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছি। আমি সবার সাথে হাসি হাসি মুখ করে কথা বলছি ঠিকই কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে সকালের ঘটনার জন্য।
তাই বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছি আর ফারজানা আপু,বলছে শরীফা তোমার কি কোন কিছুর জন্য আপসেট?
না না আপু আমি ঠিক আছি।
ফারজানা আপু আর তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদের কিছুতেই যেতে দিবেন বলছেন। ফারজানা আপু আরও আগেই বলেছে আজকে থাকতেই হবে।
তাই আমরা থেকে গেলাম।
সবার কথা বার্তা শেষে আমাদের থাকার জন্য যে গ্যাস্ট রুম দেওয়া হয়েছে, সেখানে এসে আমি শুয়ে পরলাম। একটু ও ভালো লাগছে না আমার। সারাক্ষণ মাথায় ঐ মেয়েটার কথা ঘুরছে। শরীফ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন।
উনার স্পর্শ গুলো আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না। খুব অসহ্য লাগছে।
কি হয়েছে শরীফা?
তুমি সকাল থেকে কেমন যেন মনমরা হয়ে আছো, আমার সাথে ও ঠিক করে কথা বলছো না।কি হয়েছে তোমার?কিছু হয়নি আমার। তাহলে এভাবে আছো কেন? অসুস্থ লাগছে না তো?বলো আমাকে? না বললে বুঝবো কিভাবে আমি।
আপনার কিছু বুঝতে হবে না। আপনি যাকে বুঝার তাকে গিয়ে বুঝুন। কি বলছো এসব,কাকে বুঝবো আমি? তুমি ছাড়া কি আমার আর কোন বউ আছে??…..
#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব-১৭
#লেখিকা–ইসরাত বিনতে ইসহাক
তুমি ছাড়া কি আমার আর কোন বউ আছে??…..
আমি জানি না, আমার ভালো লাগছে না। আমাকে প্লিজ একা থাকতে দিন। এরকম বললে তো হবে না শরীফা, তোমার প্রবলেম না বললে তার সমাধান আমি কি করে করবো?
রেগে মেগে এক পর্যায়ে বলে দিলাম,
মেয়েটির সাথে তো খুব হেসে হেসে কথা বলছিলেন, তাহলে তাকে কেন বিয়ে করলেন না? বলুন কেন বিয়ে করলেন না? আমাকে কেন এতো কিছু করে বিয়ে করলেন?
তুমি লিজা কে নিয়ে আমাকে সন্দেহ করছো?আর সে জন্যই আমার সাথে এরকম বিহেভিয়ার করছো।ও আমার যাস্ট ফ্রেন্ড। তাহলে কি আমি আপনার যাস্ট বউ?
শরীফা এসব কি বলছো তুমি? লিজা আমার কলেজ ফ্রেন্ড।ও বিদেশে থাকে আর ওর স্বামী সন্তান সংসার সব আছে।আর তুমি কিনা ওকে জড়িয়ে আমাকে সন্দেহ করছো?
মানে? স্বামী সন্তান সংসার??
হ্যা ঠিক শুনেছো। তাহলে উনি আপনাকে ঐ ভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলেন কেন? এটা বিদেশের কালচার। তুমি এটা দেখেই এতো কিছু ভেবে বসে আছো?
এসব কালচার ফালচার আমি বুঝতে চাই না অন্য কোন মেয়ে কেন আপনাকে জড়িয়ে ধরবে আমার কষ্ট হয় না বুঝি? এই বলে কেঁদে দিলাম।
তুমি আবার কাঁদছ? বলেছিলাম না আমার সামনে কাঁদবে না। তাহলে কি অন্য কোথাও কাঁদবো? না কাঁদবেই না। এরকম কিছু দেখলে আমার কান্না আসবেই।
তুমি আমাকে একবার জিজ্ঞাসা করতে পারতে? তারপর দেখতে আমি কি বলি?আর কোন সময় নিজের মন মতো ভেবে আমাকে ভুল বুঝবে না।কিছু হলে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে।
এভাবে নিজের মধ্যে কথা চেপে রাখলে কখনো সমাধান পাবে না। উল্টো কষ্ট পাবে, তাই সবসময় বলে দিবে। মনে থাকবে?
মাথা নিচু করে বললাম ঠিক আছে কিন্তু কোন মেয়ে আপনাকে এরকম জড়িয়ে ধরতে আসলে আমি তার চুল ছিড়বো।
হা হা হা… আচ্ছা তাই?
এরকম আর হবে না, একদম ডিরেক্ট বলে দেব আমার বউ দেখলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে তাই,,,,
তার মানে আপনার ও ওসবে ইচ্ছে আছে? শুধু আমি নিষেধ করছি বলে,,, আপনার সাথে আমি আর কোন কথাই বলবো না।
এই বলে রুম থেকে বের হয়ে যেতেই, শরীফ আমাকে পাঁজাকোলে করে বেডে শুয়ে দিলেন।
আমার গালে আঁকিবুঁকি করতে করতে বললেন আমার পিচ্চি বউটার এতো রাগ জানতাম না তো? আচ্ছা বাবা স্যরি। আমি এভাবে বলবো যে আমার এসব পছন্দ না, ঠিক আছে।
আমি রাগ করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। এবার তো মাফ করো,,,
এই শরীফা,,, কিছু তো বলো? তুমি এভাবে থাকলে আমার ভালো লাগে বলো? আমি কিন্তু সিলেট চলে যাবো ছুটি শেষ হওয়ার আগেই।
একদম না।
তাহলে কথা বলো। আমি ঘুমাবো। না এখন ঘুমানো চলবে না, এখন আমার ইয়ে পাচ্ছে,,
একদম না, আমি ঘুমাবো মানে ঘুমাবো। তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন বলো তো? আমার সাথে থেকে ও একটু কিছু শিখলে না।
উফফ আপনি না, আপনার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।
এবার দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়লাম। তবে উনি আমাকে উনার বুকে না নিয়ে ঘুমাতে ভুললেন না। আমি ও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম, আমার সবচেয়ে শান্তির স্থানে।
__________
পড়ন্ত বিকেলে ঘুরার মজাই আলাদা,
আমি শরীফ, ফারজানা আপু,তার বর এবং ফারজানা আপুর জা সাথে জায়ান মুস্তাফি মানে ফারজানা আপুর জায়ের পুচকো ছেলে।ওকে আমি কোলে করে রেখেছে।
আমরা সবাই ঘুরতে এসেছি। ফারজানা আপুর শ্বশুড় বাসার পাশেই। যেখানে ভয়ে গেছে একটি ছোট নদী।
আমি আর শরীফ তাদের থেকে কিছু টা দূরে বসে আছি। তাঁরা হয়তো আমাদের স্পেস দিতেই একটু দূরে বেঞ্চে বসে কথা বার্তা বলছে।
আমি আর শরীফ ঘাসের উপর বসে নদীতে পা ডুবিয়ে রেখেছি।আর আমার কোলে জায়ান চুপটি করে বসে আছে।
আমি জায়ানের সাথে বিভিন্ন কথা বলছি আর ও খিলখিল করে হাসছে। আমাদের এরকম দেখে শরীফ বললেন আমি ভাবছি তোমাকে ও একজন জায়ানের মতো ছেলে এনে দিব।
না ছেলে না মেয়ে,,,
এই বলে লজ্জায় জিভে কামড় দিলাম।
শরীফ আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন আচ্ছা তাই না??? আমি আর লজ্জায় কিছু বলতে পারছি না। আচ্ছা লজ্জাবতী এবার চলুন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।
আসার পথে বায়না ধরলাম আইসক্রিম খাবো, কিন্তু শরীফ বলে অন্য কিছু খেতে হবে। আইসক্রিম খেলে নাকি ঠান্ডা লেগে যাবে তাই কিনে দিবে না। আমার সাথে ফারজানা আপু ও বায়না ধরেছে আইসক্রিম খাবে বলে।
আপুর বর পরেছে বিপদে।
আপু তো প্রেগন্যান্ট, আপু আরও আগেই ঠান্ডা খাওয়া নিষেধ।বেবির প্রবলেম হতে পারে। আপুর কথা বিবেচনা করে বললাম আচ্ছা তাহলে আমারা এর পরিবর্তে যা চাই তা দিবেন কিনা বলেন??
ফারজানা আপু ফিসফিস করে বললো শরীফা অন্য কিছু মানে? আইসক্রিম ই তো বেটার ছিল।
আমি বললাম আপু তোমার এখন ঠান্ডা খাওয়া একদম ঠিক হবে না,আর আমাকেও বাঁদর আর্মি টা খেতে দিবে না।
তাই আমরা এই সুযোগে যা যা ইচ্ছে সব নিয়ে নিবো বুঝলে? শরীফা তোমার বুদ্ধি টা কিন্তু দারুন। আমাদের সাথে ভাবি কে মানে ফারজানা আপুর জা কে জয়েন করলাম।ভাবী বললেন তোমাদের ভাইয়া থাকলে আর ভালো হতো ওর পকেট ও খালি করা যেত।
আমি আর ফারজানা আপু হেসে দিলাম। ভাবীর কথায়, জায়ান কি বুঝলো জানিনা ও তো খিলখিল করে হেসে উঠলো।
শরীফ আর ফারজানা আপুর বর এসে বললেন কি ব্যাপার তোমরা কিছু নিবে নাকি বাসায় চলে যাবো?
আমরা বললাম না না এই তো নিচ্ছি।
এলাকা টা শহরমুখী হওয়াতে এখানে বেশ বড় বড় দোকান পাট রয়েছে। আমরা ঘুরে ঘুরে খুব দামী দামী বিভিন্ন রকমের চকলেট বিস্কেট আর অনেক কিছু নিলাম।
এবার বের হয়ে বললাম আমাদের হয়ে গেছে।
শরীফ বললেন আর কিছু লাগলে নিয়ে নাও।
ভাইয়া ও বললেন আরো কিছু লাগলে নিয়ে নাও সবাই।
আমরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। মানে এতো কিছু নিলাম তারপর ও এরা আরো নিতে বলছে। আমাদের কেনাকাটা দেখে কোথায় ভয় পাবে ভাবছি তা না উল্টো দ্যাত সব প্লান মাটি করে দিল।
তিন জনেই মন খারাপ করে বাসায় চলে এলাম।
রুমে এসে সব কিছু ছুরে মারলাম বেডে,একটু রাগ করলে কি এমন হতো?
শরীফ এসে বললেন, কি ব্যাপার পিচ্চি মনে হচ্ছে আবার কোন কারণে রেগে আছে? আপনি এমন কেন? কেমন? একদম ভালো না। আচ্ছা তো আবার কি করলাম? না কিছু না।
মনে মনে ভাবছি বলা যাবে না এই ব্যাপারে না হয় এখন মজা নিবে।
তাই বললাম, না আপনি অনেক ভালো, অনেক কিউট।সে আমি সবসময় ই কিউট। আমার কলিগ মেয়েরা নাকি আমার অনেক পাগল অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি।
কি বললেন আপনি?রাগি লুক নিয়ে তাকাই উনার দিকে? উনি আমতা আমতা করে বললেন কই কিছু না তো, আমি কি কিছু বলেছি নাকি? আমি তো কিছুই বলিনি।
তাহলে কি আমি ভুল শুনেছি? হয়তো তাই, আচ্ছা পিচ্চি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো কেমন ? আবার আমাকে পিচ্চি বলছেন? আপনাকে তো আমি,,,
শরীফ দৌড়ে পালালেন।
এদিকে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
একবার যাই শুধু উনার কোয়ার্টারে তারপর মজা বুঝাবো।নিশ্চই সেজে গুজে অফিসে যায়, তার জন্যই মেয়েরা হয়তো চোখ দিয়ে গিলে খায়।ঐ শাকচুন্নী গুলো কে বলি হারি ছেলে দেখলেই তোদের তাকাতে হবে? পছন্দ করতে হবে??
______
খুব ভালো লাগলো ফারজানা আপুর বাসায় গিয়ে। এরপরের দিন আমরা সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে চলে আসি।তারা তো আসতেই দিবে না। আমারা এক প্রকার জোর করেই চলে আসি।
জায়ান কে খুব মিস করছি।ও খুব মিশে থাকতো আমার সাথে।
বাসায় এসে মেহের আপুর সাথে সব কিছু বললাম,জায়ানের কথা বলতেই আপু বললেন তাহলে ভাবীমনি তুমি আমাকে ফুফি বানিয়ে দাও তাহলেই জায়ানের মতো বেবি পেয়ে যাবে।আপু আপনি না,,, আমি ভুল কি বললাম বলো?
ভাই বোন গুলো এরকম হয়েছে কিছুই তাদের আটকায় না বলতে।
তবে মেহের আপুর কথা টা ভাবতেই আমার অন্য রকম সিহরন বইছে । মানে আমার বেবি থাকবে,, ছোট ছোট হাত পা নাক চোখ থাকবে।আদো আদো কথা বলবে,সব কিছুই অন্য রকম এক ভালো লাগা।
রাতে ছোট ছাদে দোলনায় বসে আছি তখন শরীফ কে বললাম,
আমি মা হতে চাই। উনি আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আমি কি এমন কথা বললাম যে উনি এভাবে হাসছেন?
আমি কিন্তু সিরিয়াস বলেছি, আপনি হাসছেন কেন?হাসবো না?এক পিচ্চি বলছে সে নাকি মা হতে চায়। তো এরকম হাস্যকর কথা শুনলে কার হাসি পাবে না বলো? আমি মোটেও পিচ্চি না । পিচ্চিরা এরকমই সব সময় নিজেদের বড় মনে করে। আমি এবার খুব রেগে যাবো কিন্তু।
আচ্ছা স্যরি, তুমি এখনো অনেক ছোট। কয়েক বছর যাক তারপর দেখা যাবে।
আমি আর কিছু না বলে মনে মনে ভাবছি, এতো দিন আমি অপেক্ষা করতে পারবো না।
আগামীকাল তো আমি চলে যাবো,
তাই এটা তোমার জন্য। কি এটা?খুলেই দেখো না। প্যাকেট টা খুলে দেখলাম একটা স্মার্টফোন। এটা আমার? হুম, সবার নাম্বার সেভ করে দিয়েছি।অন্য কারো ফোন দিয়ে তো যখন তখন কথা বলতে পারবে না তাই। আমি যখনি সময় পাবো তখনি কল করবো। সবসময় কাছে কাছে রাখবে ফোন টা ঠিক আছে? চেষ্টা করবো।
আমি এতো গুলো দিন কিভাবে থাকবো? দেখতে দেখতে সময় চলে যাবে,মা বাবা সাইফ ওদের সাথে কথা বলবে,দেখবে কখন সময় চলে যাচ্ছে বুঝতে ও পারবে না।
তারপর শরীফ বললেন আগামীকাল তো চলে যাবো,
আজ রাতটা দিবে আমায় ?
তোমার ভালোবাসায় ডুবে যেতে চাই আজ। সাথে নিজের ভালোবাসার অনুভূতিগুলোও দেখাতে চাই তোমাকে।
শরীফের এহেন প্রস্তাবে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। কারণ এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো সাধ্য আমার নেই।
আমার নিরবতা সম্মতির লক্ষণ বুঝে নিয়ে শরীফ আমাকে পাঁজাকোলে করে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালেন।,,,,,
#চলবে….
#চলবে…..