#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৯
.
সাদাদ ভাইয়ের ভয়ংকর গম্ভীর ডাক শুনেই রীতিমত আমার গলা শুকিয়ে আসছে। আচ্ছা উনি আমার উপর এতো রেগে আছে কেন? আমি তো উনার কোন কথা অমান্য করি নি তাহলে? আমি ভাবতে ভাবতে পিছন ফিরলাম। উনার দৃষ্টি আমাতে আবব্ধ। উনি আমার দিকে আসছে আস্তে আস্তে। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু বুকের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি বুকের ধুকপুক শব্দ। হয়তো ভয় থেকেই বিট বেশি দিচ্ছে হৃদপিন্ড। সাদাদ ভাই আবার বলল,
–আমার দিকে তাকাও। নজর নিচের দিকে কেন? ওখানে কি? আমার চোখের দিকে তাকাও। সুবহা! লুক!
আমি ভয়েই মরে যাচ্ছি! আর উনার ওই আগুন ধরানো চোখে তাকালে নির্ঘাত হার্টটা আর আস্ত থাকবে না। কিন্তু তা আর পারলাম কই? উনার গম্ভীর গম্ভীর কথা শুনে আমি শেষ। আস্তে করে চোখ উঠিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যে চোখের পলকও ফেলছে না। দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। খাম্বা! হুহ! আমি হাতে হাত কচলাচ্ছি। উনি আবার বললেন,
–এরকম করছো কেন? আমি কি তোমাকে ধমক দিয়েছি না মেরেছি!
আমি বিড়বিড় করে বললাম,
–হ্যাঁ! পারেন ওই ধমক আর মার দিতেই!
ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি! আমার বিড়বিড় করা কথা সব শুনে নিল বজ্জাতটা! আমাকে এক সমুদ্র লজ্জায় ফেলে বলল,
–আমি কিন্তু ধমক আর মার দেওয়া ছাড়া অন্যকিছুও করতে পারি। ওয়ানা ট্রাই?
আমার চোখ গুলো ড্যাবড্যাব করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। এবার আমতা আমতা করে বললাম,
–আচ্ছা আপনি এতো রেগে আছেন কেন? আমি কি কিছু করেছি? আচ্ছা আপনি আতিথেয়তায় কোন ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন?
উনি আমার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
–নাহ! তুমি কি কিছু করতে পারো নাকি? খালি অন্য ছেলেদের সাথে নাচতে পারো!
কথাটা উনি বেশ জোরেই বলল।
আমি চোখ পাপড়ি ঝাঁকিয়ে বললাম,
–আমি অন্য ছেলেদের সাথে নাচি মানে?
উনি মানে বলেই এগিয়ে আসতে নিলেই এর মধ্যে আমার পিছন থেকে রিফাত ভাইয়া ডাক দেয়। আমি পিছনে ফিরে ভাইয়াকে দেখে কেমন স্বস্তি পেয়েছিলাম তেমনি হঠাৎ করে বিরক্ত হয়েছিলাম।
-আরে সুবহা! তুই এখানে! আমি তোকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ। চল এবার আমাদের টার্ন! ছেলেপক্ষ আমাদের থেকে দুই পয়েন্ট এগিয়ে আছে। তাই আমাদেরই যা একটা করতে হবে। আমি কিছু বলব তার আগেই সাদাদ ভাই বললেন,
–ও যাবে না। আমি ওর সাথে কথা বলছি। আমাদের স্পেস দিন প্লিজ!
এটা কি হলো? উনি যেভাবে স্পেস চাইছেন দেখে মনে হচ্ছে আমি উনার গার্লফ্রেন্ড নয়তো বউ! আমি ভাবতে ভাবতে রিফাত ভাইয়ার জবাব,
-সরি আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না। যাইহোক ভাইয়া ওকে ছেড়ে দিন আমাদের এখন পারফরমেন্স আছে।
রিফাত ভাইয়ার কথার পিঠে সাদাদ ভাই গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
–সুবহা এখন পারফর্ম করবে না। তাই না সুবহা?
উনি আমার দিকে কি এক ভয়ংকর দৃষ্টি দিয়ে রেখেছেন। আমি ভয়েই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম। উনি বাঁকা হাসি দিয়ে রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–এবার তো আমাদের একা ছেড়ে দিন।
রিফাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কেমন করে যেন চলে গেল। আচ্ছা আমার কি দোষ? আমি তো ভয়ে মানা করেছি! আমি মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছি। সাদাদ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
–মুখটা মলিন করে রেখেছো কেন? সুবহা?
আমি এবার উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–আপনিতো ভালো ট্রিক জানেন!
সাদাদ ভাই অবাক হলেন তা তার চেহারায় স্পষ্টত।
–ভালো ট্রিক জানি মানে? কি ট্রিক? কেন?
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বললাম,
–এই যে আমাকে ভয় দেখিয়ে পারফর্ম করতে দিলেন না তাতে তো আপনাদের টিমই জিতে যাবে।
উনি এবার বিষয়টা বুঝলেন। হালকা হেসে বললেন,
–এই জন্য মুখটা এমন করে রেখেছো? তুমি গিয়ে পারফরমেন্স এর জন্য রেডি হও, যাও!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–তাহলে তখন মানা করলেন কেন? শুধু শুধু!
উনি আমার দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকাতেই বললাম,
–না না! আপনি তো ভালোর জন্যই বলেছেন!
উনি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–যাও।
আমি কোনমতে চলে এলাম ওখান থেকে। ঢালাটা রেখে স্টেজের কাছে চলে এলাম।
.
কিন্তু এখন হলো আরেক সমস্যা! রিফাত ভাইয়াকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু এনাউন্সমেন্টও হয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে স্টেজে উঠলাম। চারদিকে তাকিয়ে খুঁজছি কিন্তু রিফাত ভাইয়াকে পেলাম না। সবাই এদিকে হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে রীতিমতো! এর মধ্যেই সব লাইট অফ হয়ে গেলো। শুধু ফোকাস লাইট ছিল আমার উপর। এর মধ্যে সবার হাসাহাসি মুহূর্তে বন্ধ হয়ে ছিল জাগরণ। সবাই ওয়াও, কুল, পার্ফেক্ট ম্যাচ এগুলোই বলছিলো। এর মধ্যে এয় দিল হ্যা মুশকিল গানের টাইটেল সংটা চালু হয়ে গেলো। আমি ডান দিকে তাকাতে দেখি সাদাদ ভাই গাইতে গাইতে আসছে,
” তু! সাফার! মেরা!
হ্যা তুহি মেরি মাঞ্জিল!
তেরে বিনা গুজারা
এয় দিল হ্যা মুশকিল!”
আমি স্তব্ধ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আশ্চর্যের বিষয় গানটা উনি নিজে গাইছেন। তার বাম গালের মাইক্রোফোনটা তারই প্রমান। কি চমৎকার তার গলা! আমার ভাবনার প্রহর কাটলো উনার স্পর্শে! আমার হাত ধরে টেনে উনার বুকের উপর ফেললেন। আমার পুরো শরীরটা যেন অসার হয়ে যাচ্ছে। কোন শক্তিই পাচ্ছি না। উনি আমাকে দেখে বাঁকা হেসে গাইতে আরম্ভ করলেন,
“মুঝে আজমাতি হ্যা তেরি কামি,
মেরি হার কামি তো হ্যা তু লাজমি,
জুনুন হ্যা মেরা
বানু ম্যা তেরি কাবিল
তেরে বিনা গুজারা
এয় দিল হ্যা মুশকিল!”
উনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে সামনে এনে কোমর জড়িয়ে ধরলেন। আমি সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম। এ কি ধরনের অনুভূতি? আমার ভেতরে এক অন্যরকমের অনুভূতি কাজ করছে যা আমি নিজেই বুঝতে পারছি। হঠাৎ করেই উনার দিকে তাকিয়ে আমার চোখ স্থির হয়ে গেলো। শরীরের সকল শক্তিই বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে। আমার সম্পূর্ণ ভার তার উপর। আর উনি আমাকে উনার মনের মতো এদিক থেকে ওদিকে নিচ্ছে তো আবার হুট করে নিজের উপর নিয়ে আসছে!
“ইয়ে রুহ ভি মেরি
ইয়ে জিসম ভি মেরা
উতনা মেরা নেহি
জিতনা হুয়া তেরা
তুনে দিয়া হ্যা জো
ভো দারদ হি সাহি
তুজছে মিলা হ্যা তো
ইনাম হ্যা মেরা
মেরা আসমান ঢুন্ডে তেরি জামিন
মেরি হার কামি কো হ্যা তু লাজমি
জামিন পে না সাহি
তো আসমা মে আ মিল
তেরে বিনা গুজারা
এয় দিল হ্যা মুশকিল!”
উনি আমাকে নিয়ে স্টেপ এর উপর স্টেপ দিচ্ছেন কিন্তু আমার তাতে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। আমি তো তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ব্যস্ত। অবশেষে উনি গান শেষ করলেন। আমার পুরো শরীরে কম্পন দিচ্ছে। তীব্র হাতে তালির শব্দে আমার হুশ আসলো। তাড়াতাড়ি উনার হাতের বাঁধন থেকে ছুটে একবার সবার দিকে তাকিয়ে তৎক্ষনাত স্টেজ থেকে নেমে গেলাম। আপুকে বলে রুমে চলে এলাম। আপাতত এখন একটু একা থাকতে হবে। লজ্জায় গাল দুটো গরম হয়ে উঠেছে যা আমি হাত দিয়ে স্পর্শ করেই বুঝতে পারছি।
.
রুমে এসেও কেমন এক অস্থিরতা কাজ করছে আমার মধ্যে। কি ছিলো এটা? এমন কেন লাগছে আমার? এই প্রথম কোন ছেলে আমার এতোটা কাছে ছিল। কেউ প্রথম আমাকে স্পর্শ করেছে কিন্তু তাকে আমি কিছুই বলতে পারলাম না কেন? কেন যেন উনার ওই দৃষ্টিতে একটা ভরসা খুঁজে পেয়েছিলাম। চোখ বন্ধ করলেই চোখে ভাসছে সেই মুহূর্ত যখন উনি আমার বাম গালের সাথে নিজের ডান গালটা স্পর্শ করেছিলেন। চোখটা খুলে আয়নায় তাকাতেই আমি শিউড়ে উঠলাম।
,
,
,
চলবে………………❤️