অনুভূতিরা শীর্ষে পর্ব শেষ

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_২৩
.
সকাল সকাল সবাই ব্যস্ত। কারন আজ রুবায়েত ভাইয়ার বিয়ে! আর আমার….উহুম! নাম মাত্র বিয়ে, বলেই আমার মনে হয়। আবার অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায়, “যার বিয়ে তার হুশ নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই!” আমার ক্ষেত্রে কথাটা খাটলেও আমার উনির ক্ষেত্রে খাটে না। সে সব কিছু নিয়েই সিরিয়াস। কাল রাতে এতো এতো নাচ গানের মধ্যমণিই ছিলাম আমি। আমাকে ঘিরেই ছিল যতশত কান্ড। ইভেন আমার শান্তশিষ্ট ভোলাভালা ভাইও কাল নাচ গান করেছে। আর আমার কথা বাদই দিলাম। তাই তো সকাল ৯ টা বাজে, এখনো আমি কুম্ভকর্ণের মতো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছি। মা এসে অনেকক্ষন ডেকে গেছে কিন্তু মনে হয় না তাতে আমার কোন প্রকার নড়চড় হয়েছে। অতঃপর রুবাপু এসে আদুরে ভাবে ডেকে উঠিয়ে পুরো বসিয়ে দিলো। কিন্তু যেই আবারও ঘুমোতে যাবো অমনি আপুর কথায়” সাদাদ পাশের রুমে, দেখেছি এই রুমের দিকেই আসছে!” ব্যস! আমার সাধের ঘুম টাটা বাই করে চলে গেছে।

.
দুইদিনে একটা জিনিস বেশ ভালো হয়েছে যে কিটকেট এর সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গেছে। ছানাটা অনেক কিউট! ওকে কিছুতেই ইগনোর করা যাবে না। আমার কোলে উঠে একদম বাচ্চাদের মতো সেটিয়ে থাকে। যেই আমি জীবনেও কুকুর পছন্দ করতাম না সে কি না একটা কুকুরকেই প্যাট হিসেবে রেখেছে। সাদাদ বরাবরই একজন পশুপাখি প্রেমী। রাস্তায় তার সাথে বের হলে বুঝা যায়।

আম্মু আর আপু জোর করে গোসল করতে পাঠিয়েছে! এই শীতের সকালে কি জন্য যে গোসল করতে হবে তাইই বুঝি না, আমি তো প্রতিদিন দুপুরে গোসল করি। তাও তাদের ঠেলাঠেলির জন্য গেলাম। বের হয়ে এসে দেখি আপু খাবার নিয়ে এসেছে। আমিও চুপচাপ খাওয়া শুরু করলাম। এই বিয়েতে সবচেয়ে বেশি খুশি আপু! সে আমাকে তার সাথে পাবে ভাবতেই নাকি খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করে তার। এখন আমাকে রেডি করে দিয়ে আপু আমার চলে যাবে তার শ্বশুরবাড়ি। বিকেলে ওখান থেকে বরযাত্রী হয়ে সেন্টারে যাবে। যতই হোক সে এখন ওই বাড়ির বউ।

.
প্রথমে কিছু মনে না হলেও এখন মনে হচ্ছে বুকের ভেতর তুমুল ঝড় শুরু হয়ে গেছে। যত বেলা যাচ্ছে তত মনে হচ্ছে আজ থেকেই আমার ভয়ের সাথে আমার থাকতে হবে। এখনো ভাবি আমি যে একটা সময় সাদাদকে দেখলেই পালাতাম সেই সবার প্রিয় সাদাদ ভাই আমার বর। একটু পর থেকে আমি তার হয়ে যাবো। আজ আমাকে রেড ভেলভেট কালারের একটা ভারী লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। তার সাথে ম্যাচিং করে হিজাব। এটা আমার বর মশাইয়ের নির্দেশ। সে চায় না তার বউয়ের সাজ সে ব্যতিত অন্য কেউ দেখুক। কাজেই এই পদ্ধতি। আমার সাজ কম্পলিট হতেই বিছানায় বসে আছি। কিটকেট আমার পাশেই বসা। এর মধ্যেই ভাইয়া রুমে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমিও হেসে ভাইয়ার হাত ধরলাম। ভাই বোন একসাথে এগিয়ে গেলাম।

.
সেন্টারে আমাদের গাড়ি থামতেই আমাকে নামতে বারণ করা হলো। কিছুক্ষন পর আমার বর মশাইকে দেখতে পেলাম। সে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আশেপাশে প্রেস মিডিয়ার অভাব নেই। যতই হোক রাজনীতিবিদ মোঃ সাদাদ রহমান সাদ এর বিয়ে বলে কথা! সাদাদ এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে তার পাশাপাশি দাঁড় করালো। সবার সাথেই কুশলবিনিময় শেষ করে আমাকে নিয়ে ভিতরের দিকে চলল। তার পড়নে গোল্ডেন শেরওয়ানী। কিন্তু উনিই হয়তো প্রথম বর যার মাথায় পাগড়ী নেই। আপুর বিয়ে তে কথায় কথায় বলে ফেলেছিলাম বরদের পাগড়ীতে একদম মানায় না, বোকা বোকা লাগে। উনি যে কথাটা মাথায় গেঁথে নিবেন কে জানতো। তবে সত্যি তাকে অনেক বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে। আমার বর তো হিহি!

এখানে এসে আইসক্রিমের স্টল দেখে দৌড় দিতে নিয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য খারাপ সাদাদ হাতটা শক্ত করে রেখেছে। আমি ঠোঁট উলটে তাকাতেই মুচকি হেসে বলল,

–ওই স্টলটা তোমার জন্যই রেখেছি নয়তো কোন পাগলে এই শীতে আইসক্রিম রাখে? ইতিমধ্যে মাথা খারাপ উপাধি পেয়ে ফেলেছি। এখন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো। বিয়ে শেষে খাবে।

আমি অস্থির গলায় বললাম,

–যদি শেষ হয়ে যায়?

সাদাদ অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো। আমিও বুঝতে পেরেছি বেশ বোকার মতো একটা কথা বলেছি। কিন্তু কি আর করার বলে তো ফেলেইছি। সাদাদ আমাকে নিয়ে স্টেজে চলে গেলো। পাশাপাশি বিপরীত মুখী বসার জায়গা। দুইটা পার্ট আলাদা করেছে একটা বিশাল পর্দার মাধ্যমে। পর্দাটা অস্বচ্ছ। আমাকে আর সাদিয়া আপুকে পাশাপাশি বসানো হলো। আর ওইপাশে ভাইয়া আর সাদাদ।

সকল নিয়ম কানুন মেনে রেজিস্টারে স্বাক্ষর করতে দেওয়া হলো। আমি কাবিননামাটা ভালো করে পড়ে তবেই স্বাক্ষর করেছি। আমাকে দেখে সাদাদ মুচকি হেসেছে। অতঃপর ধর্মীয় নীতিতেও আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়। সবার মুখে হাসি। আশ্চর্য ভাবে সেই আপুকে আমি আর কোন অকেশনে খুঁজে পাই নি। জানি না এতে আমার সাথে কোন যোগসূত্র আছে নাকি!

বিয়ে শেষে আমাকে সাদাদকে আর ভাইয়া ভাবিকে পাশাপাশি বসানো হলো। বিয়ের সময় আমার আর সাদিয়া আপুর মাথায় দোপাট্টা দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘোমটা এখনো আছে। প্রথমে ভাইয়াকে ভাবির মুখ দেখে কিছু বলতে বলা হলে সে বলে,

-আমি আমার ঘরের ক্যাপ্টেনকে দেখতে পাচ্ছি!

ভাইয়ার কথায় সবাই হেসে দেয়। সে একজন আর্মি মানুষ! তার জন্য ইহাই একটা রোমান্টিক কথা! আমার সাদাদকে যখন বলা হলো, সে এক দৃষ্টিতে আয়নায় আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর এক নেশা ধরানো কন্ঠে বলে,

–“আমি দেখি আমার রুপকথাকে,
যে লুকিয়ে আছে আমার হৃদদেশে!
দেখি আমার কবিতাকে,
যে আছে সেই ছদ্মবেশে!
দেখি আমার হুরকে
যার জন্য আমার অনুভূতিরা শীর্ষে!!”

আমি অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে। হ্যাঁ এই পুরুষটি আমার! একান্তই আমার!

_______________সমাপ্ত_______________

(অবশেষে শেষ হলো “অনুভূতিরা শীর্ষে” এর পথচলা। কিন্তু তবুও শেষ হয় নি। এর দ্বিতীয় ধাপ আসবে। যেহেতু এখন আমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত, তাই আপাতত কোন গল্পই দিবো না। হ্যাঁ মাঝে মাঝে ধুমকেতুর মতো আমার দেখা পাওয়া যাবে অনুগল্পের মাধ্যমে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। জানতে অজান্তে কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে বিনয়ের সাথে বলবো আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। সামনে এইচএসসি পরিক্ষা আর এডমিশন পরিক্ষা, সবার দোয়াই আমার কাম্য। আর আশা করবো এই উপন্যাসের ১ম ধাপ সম্পর্কে কিছু বলে যাবেন। শেষ হয়ে গেছে বলে মন খারাপ করবেন না। আমি এটাকে আপাতদর্শনে শেষ করেছি। এর দ্বিতীয় ধাপ আসবে। ততদিন সবাই ভালো থাকবেন। নিজের ও প্রিয়জনের খেয়াল রাখবেন।)

♥শুভ সমাপ্তি♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here