অনুভূতিহীণ পর্ব -১৩+১৪

#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সকাল ৮ টা। নাস্তা শেষে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রিদ। রিদের বাবা এখনো অফিসে যায় নি। সোফায় বসে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছে। আজকাল পত্রিকা খুললেই খুন, ধর্ষণ, অপহরনের নিউজ ভেষে উঠে।
বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হওয়ার সময় বাবা পেছন থেকে ডেকে বললো,
– রিদ শোন, তোর সাথে কথা আছে।
রিদ এসে বাবার পাশে বসে বললো,
– জ্বি বাবা বলো।
– আরশির পরিক্ষার আর কয়দিন বাকি আছে?
– মাস খানেক আছে বাবা।
উনি পত্রিকা টা রেখে বললো,
– শুনলাম তোকে নাকি আজকাল কারা যেন হুমকি-ধামকি দেয়?
বাবার মুখে এমন কথায় চমকে উঠে রিদ। হুমকি-ধামকির বিষয় গুলো তো তার আর অগন্তুকের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। বাবা এতো কিছু জানলো কিভাবে।
রিদ আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– ক কই না তো বাবা, তোমাকে কে বললো এসব।
কিন্তু উনি ছেলের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বললো,
– কোনো সমস্যা হলে নির্জনকে বলবি সে সব সামলে নিবে। নিজে আগ বাড়িয়ে কোনো ঝামেলায় জড়াতে যাস না। যা এখন।

বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রিদ। মাথায় ঢুকছে না এতো কিছু বাবা জানলো কিভাবে?
,
,
বাড়িতে বড় চাচি এসেছে। উনি একটু এক রোগা প্রকৃতির মানুষ। নিজে যা বুঝে তাই। আমি ওকে সালাম দিয়ে কথা বলে মাকে ডাকতে গেলাম। এতোটুকু পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিলো। তবে ওই যে এক রোগা প্রকৃতির। আগের মতো পায়ে ধরে সালাম না করার ঘোর বিরোধ তার।

মায়ের সাথে বসে বসে গল্প করছে। আর আমাকে পাঠানো হয়েছে তাদের জন্য চা বানাতে।
বড় চাচি সোফার এক পাশে আরাম করে বসে মাকে বললো,
– আরুকে দেখতে এলাম। গত কাল রাতে খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি আরুকে নিয়ে। তার মানে এটা নিশ্চিত সামনে আরুর একটা বিপদ ঘটতে চললো।

আমি চা বানাতে বানাতে তাদের কথা গুলো শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো। বড় চাচির এই একটা কথা সত্যি। তিনি কাউকে নিয়ে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখলে তা সত্যি হয়ে যায়। প্রথমে আমি এটা বিশ্বাস করতাম না।
কয়েক বছর আগেও তিনি ঠিক এই ভাবে বলেছিলেন। আমার মেঝো কাকার ছেলে অভি ভাইয়া। তাকে নিয়ে নাকি কি খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্নে দেখেছিলেন, রাস্তা পার পওয়ার সময় অভি ভাইয়াকে বড় একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়েছে।
অভি ভাইয়া এসবে বিশ্বাস করতো না। মেঝো চাচি অনেক বারণ করেছিলো কয়েকদিন ঘর থেকে রের না হতে। কিন্তু অভি ভাই শুনলো না। বাইক দিয়ে চলে গেলো তার কোন বন্ধু ফোন করেছিলো ওখানে। ঠিক ওই দিনই বড় একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মেরেছিলো অভি ভাইয়াকে। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় সে।
যার কারণে মেঝো চাচা তিন রাত গাছের সাথে বেধে রেখেছিলো চাচিকে। আর বলছিলো, তুই আর কোনো দিন ঘুমাবি না।
তারপর থেকেই অলক্ষুনে মহিলা বললে এলাকার সবাই তাকে এক নামে চিনে।

আমি তাদের সামনে চা রেখে চুপচাপ সেখান থেকে সরে গেলাম। স্বপ্নের বর্ণনা শুনার ইচ্ছা নেই আমার। যদি তার স্বপ্ন টা খুব ভয়ঙ্কর হয় তাহলে আমার ঘুমটাই হারাম হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং না শোনাই ভালো। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
,
,
আপুকে আজ এই বাড়িতে নিয়ে আসছে বাবা। আপু অন্তঃসত্ত্বা, ৭ মাস হতে চললো। মা বললো, এখানে এসে কয়দিন থেকে যেতে। আপুর নাম আর আমার নাম মিলিয়ে রাখা হয়েছিলো। আরশি আর আপুর নাম আরিশা। আবার দুজনকে ডাকা হতো এক নামে, আরু। আরু বললে আমরা দুজনই সাড়া দিতাম। তাই পরবর্তিতে আপুকে পুরো নাম ধরেই ডাকতো। আর আমাকে আরু বলে।

আপুকে নিয়ে আসছে, এতে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি আমি৷ কতো দিন দুই বোন মিলে এক সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। আজ অনেক রাত অব্দি আড্ডা দিবো দুজন।

মা রান্না করছিলো। আমি রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাড়ালাম। মা আমার আমার দিকে চেয়ে বললো,
– কিরে কিছু বলবি?
– আমাকে রান্না শিখাও মা।
– তোর না কয়দিন পর এক্সাম? এখন পড়ায় মন দে। এসব পরেও শিখতে পারবি। সারা জীবনই তো তোকে বলে এসেছি রান্নাটা শিখতে কিন্তু তখন তো শুনলি না আমার কথা।
আমি চুপচাপ মায়ের পাশে দাড়িয়ে আছি। মা আমার দিকে চেলে বললো,
– চেয়ারম্যান এর ছেলে এখন তোকে ডিস্টার্ব করে?
আমি দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বললাম, আগের মতো না।
মা রান্না করায় মনোযোগ দিয়ে বললো,
– তবুও সাবধানে থাকবি। দুই দিন পর চেয়ারম্যান ইলেকশন। হয়তো এই কারণে চুপ আছে। আর রিদকে কিছু বলিস না। এতে আরো ঝামেলা বাড়বে। সুন্দর ভাবে এক্সাম টা শেষ করে নে। এর পর আর কোনো চিন্তা নেই।

আমি মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম। রুমে আপু বসে আছে। আমি ছোট একটা প্লেটে আপেল কেটে আপুর কাছে নিয়ে গেলাম। আপুর পাশে বসে প্লেট টা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম। তুই কিন্তু আগের থেকে মুটি হয়ে যাচ্ছিস আপু।
আমার কথায় একটু হাসলো আপু। সাথে আমিও হেসে দিলাম। আমি খুব আগ্রহ দৃষ্টিতে আপুর দিকে চেয়ে বললাম,
– এই সময়টায় কেমন লাগে আপু? মানে অনুভুতিটা কেমন? আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে।
আপু পেটে হাত রেখে বললো,
– সব অনুভুতি মুখে বলে প্রকাশ করা যায় না রে। অনুভুতি টা আমি অনুভব করতে পারি প্রকাশ করতে পারি না। তুই কখনো আমার যায়গায় আসলে তার পর বুঝবি।
আমি মনে মনে বললাম, আমার আর তোমার যায়গায় আসা হবেনা। যেই নিরামিষের কাছে তুলে দিয়েছো, একবার হাত ধরলে তিন বার সরি বলে।
আপু আপেল খেতে খেতে বললো,
– কিছু বললি?
আমি কথা খুজে না পেয়ে বললাম,
– নাহ্ কিছু না।
,
,
এখন আর আগের মতো প্রতিদিন কলেজে যাওয়া হয় না। সত্যি বলতে ভয়েই যাই না। তবে আজ যাবো। একটা কারণ আছে। খুব জরুরি কারণ। আজ রেডি হয়ে নিজেই সাবিহাদের বারি চলে গেলাম। গিয়ে দেখি কল পাড়ে বসে কাপ প্রিচ পরিষ্কার করছে সে। আমাকে দেখে খুশি হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কারণ শেষ কবে ওদের বাসায় এসেছিলাম জানা নেই।
বারির সামনে একটা বড় বড়ই গাছ। বারো মাস বড়ই ধরে। আর অপর পাশে তাদের ঘর। চার পাশে ইটের দেওয়াল আর উপরে টিনের চান। আর ঘরের সামনেই একটা খোলা মেলা বারান্দা। মাঝে মধ্যে ওখানে বসে আড্ডা দেয় সবাই।
ওখানে একটা চেয়ার টেনে বসে আছি আমি। সাবিহা কিছু বড়ই আমার সামনে দিয়ে গেলো। আমি খেতে খেতে সে রেডি হয়ে যাবে।

দুজনই একসাথে চললাম কলেজের উদ্দেশ্যে। সাবিহা আমায় তাড়া দিতে দিতে কতোবার বললো,
– আজকে কি এমন গুরুত্ব পূর্ণ কাজ? যে জোর করে হলেও কলেজে নিয়ে যাচ্ছিস?
আমি চুপচাপ রইলাম কিছু বললাম না। রিক্সা থামাতে বললাম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।
– চল ক্ষুদা লাগছে কিছু খাই।
সাবিহা মাথা নিচু করে বললো,
– আমার কাছে টাকা নেই তো।
আমি একটু হেসে বললাম,
– আমার কাছে আছে চল।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে সাবিহাকে বললাম,
– চোখ বন্ধ কর।
– কেন?
– কর না,,,,
– আচ্ছা,,,,,
– আমি না বলা অব্দি খুলবি না।
আমি সব কিছু আগে থেকেই রেডি করে সাবিহাদের বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষন পর বললাম, চোখ খোল বান্ধবি।
সাবিহা চোখ খুলতেই অবাক হয়ে গেলো। তার সামনে রাখা একটি কেক। আর তার মাঝে লেখা,, Happy birthday too Kolixa…..
হুট করেই সাবিহা আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কারণ লাইফে ফাস্ট টাইম এমন সারপ্রাইজ পেয়েছে সে। কখনো কখনো তার জন্মদিনের কথা তার নিজেরও মনে ছিলো না।
আজ হটাৎ এমন সারপ্রাইজ পাবে তা হয়তো ভাবতেও পারেনি সে।
– তোর সাথে থাকলে আমার প্রতিটা সময়ই ভালো কাটে দোস্ত। কেন যে আমাদের মেয়েদের ফ্রেন্ডশিপ গুলোতে বিবাহ নামক শব্দটায় দেয়াল তৈরি করে ফেলে? সারা জীবন এক সাথে থাকতে পারলে কি এমন ক্ষতি হতো?
#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– বাবা আমি আরশিকে বিয়ে করবো, সব কিছুর আয়োজন করেন আপনি।
বাবার সামনে দাড়িয়ে সোজাসুজি ভাবে কথাটা বললো আসিফ।
তার বাবা চেয়ার ছেরে উঠে বসে বললো,
– মানে কি এইসবের? তোর বুদ্ধি সুদ্ধি কি দিন দিন হাওয়া হয়ে যাচ্ছে? আর দুই দিন গেলে তিন দিনের দিন ইলেকশন। আর তুই এখনও এসব নিয়ে পরে আছিস? এই দুই একদিন আপাততো ওসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। সব কিছুরই একটা সময় আছে।
আসিফ রাগে গ্লাস আছড়ে মে*রে বললো,
– তোমার না অনেক ক্ষমতা? আমি আরশিকে তুলে নিয়ে আসবো, বাকিটা তুমিই সামলে নিবে।
চেয়ারম্যান সাহেব তার গালে একটা চ*র বসিয়ে বলে,
– বয়স হয়েছে ঠিকই বুদ্ধি এখনো হাটুর নিচে। দুই দিন পর ইলেকশন এর পর শপথ গ্রহন করতেও কম করে ১-২ মাস লেগে যাবে। এই সময়টাকে কোনো ঝামেলা হলে বুঝছিস না কি হবে? এখন এখান থেকে যা, সব কিছুরই একটা সময় আছে। আর দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছে? বিয়ে হয়ে গেছে শুনেও ওই মেয়েটার পেছন পেছন ঘুরছিস? এর আগেও তো দুইটা রে*প কেস ছিলো তোর। সব ধামা চাপা দিয়ে রেখেছি দেখে সাহস খুব বেড়ে গেছে না?
– এই কয়েক গ্রামে ওর মতো মেয়ে আমার চোখে দ্বিতীয় টা পড়েনি। আমার তো ওকেই চাই।
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো আসিফ।
,
,
আমি আর সাবিহা তখন বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে আসিফ এসে একটা বাইক নিয়ে রিক্সার সামনে দাড়ালো। ভুয়ে বুকটা ধুক ধুক করতে লাগলো আমার। আসিফের পেছনে আরেকটা ছেলে বসা। হুট করে আসিফ এসে আমার হাত ধরে রিক্সা থেকে নামিয়ে নিলো। হাতটা মুচড়ে তার থেকে ছাড়িয়ে নিলাম আমি। তেজস্ব গলায় বললাম,
– আপনার কারণে কি আমি পরিক্ষাটাও দিতে পারবো না? কি শুরু করেছেন আপনি? বাবার পাওয়ার আছে দেখে কি যা ইচ্ছা তাই করবেন? এসব কে ভালোবাসা বলে না। এর আগেও তো দুইটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে প্রমান লুকিয়ে বাবার পাওয়ারে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই বলে আমাকেও ওসব মেয়েদের মতো ভেবেছেন? যে যা ইচ্ছা করে বেচে যাবেন? আমার স্বামী, শশুর এদের কিছু বলছি না তার মানে এই না যে আমি ভয়ে বলছি না। আমি বাবার বাড়ি, শশুর বাড়ি সবার সম্মানের কথা ভেবে চুপ আছি। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন তো, দুই পা উপর করে ঝুলিয়ে মাঝখান দিয়ে উপর নিচে ফে*রে ফেলবো একধম।

আসিফ কিছু না বলে চুপচাপ বাইকে গিয়ে বসলো। আরশির কথা গুলো শুনে না। আমজাদ চৌধুরির গাড়ি দেখে চলে যাচ্ছে সে। আমজাদ চৌধুরি তাদের বিপক্ষ দলের পার্থী। এই সময়ে বিপক্ষ দলের কাছে কোনো বিষয়ে হার মানতে চায় না সে। তাই চুপচাপ বাইক নিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।

সাবিহা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হুট করে আমার এমন রেগে যাওয়াটা হয়তো মানিয়ে নিতে পারছে না সে। সে কি মানিয়ে নিবে? আমার নিজেরই তো হাত পা কাঁপছে। হুট করে রেগে কি থেকে কি বলে ফেললাম তা নিজেই বুঝতে পারছি না। এই জন্যই বুঝি সবাই বলে,
“সোজা মানুষেরর খারা কো*প। এরা সহজে রাগে না,
আর রেগে গেলে কাউকে খু*ন করে ফেলতেও দুই বার ভাবে না। ”
,
,
রাত ৯ টা। গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটে চললো আসিফের বাবা আরিফ সাহেব। হাত পা ভাঙা অবস্থায় হসপিটালে শুয়ে আছে আসিফ। আরিফ সাহেব উত্তেজিত হয়ে তার পাশে গিয়ে বসে বললো,
– এমন কি করে হলো আমার ছেলের? কে করেছে এই কাজ? কার এতো বড় সাহস।
ওনার মাঝে পুরোপুরি উত্তেজনা ভাব।
আসিফ বেডে শুয়ে থাকা অবস্থায় বাবাকে বললো,
– কে মে*রেছে দেখতে পাইনি বাবা। হুট করে জ্বিনের মতো এসে ধাবা মেরে ধরে, মে*রে চলে গেলো বুঝতেই পারিনি।
আারিফ সাহেব একটু রেগে ছেলেকে ঝাড়ি মেরে বললো,
– তোর শুধু মাথাটাই আছে, মাথার ভিতরে যে কিছু থাকা দরকার তা একটুওু নেই।

মাথায় হুডি পরা একটা ছেলে। হসপিটালে গ্লাস ভেদ করে আসিফের দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। এর পর চুপচাপ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো। আসিফ কে মুখে ঘুষি মারার সময় তার দাতের আঘাতে হাতও কে*টে গেছে কিছুটা। তাই হাত বেন্ডেজ করতে হসপিটালে এসেছিলো সেই অগন্তুক। মাথায় হুডি পরা মুখে মাক্স। চেহারা টা দেখতে পায়নি কেও। হাত দিয়ে একটা গাড়ি দার করিয়ে চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো, অচেনা।
,
,
পড়ায় মন বসছেনা, সারা শরির জুড়ে একটা অস্থিরতা ভাব আমার। বিকেলে আসিফের সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো তার। আর সন্ধার পর আসিফকে কারা মেরে হাত পা ভেঙে হসপিটালে তুললো। ব্যাপার টা কিছুতেই মাথায় ঢুকছেনা আমার। আচ্ছা রিদ ভাইয়ে এমন টা করেনি তো? ধুর কিসব ভাবছি আমি। ওর মতো একটা মানুষ কি করে এমনটা করবে? আর এখানেই বা কি করে আসবে?
মুহুর্তেই ফোনটা বের করে একটা কল দিলাম তাকে। মন টা উত্তেজিত হয়ে আছে খুব।
ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই বললাম,
– কোথায় আপনি?
সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– এতোক্ষন হসপিটালে ছিলাম, এখন বাসায় ফিরলাম।
– আপনি সত্যিই এখন বাসায়?
– তো তোমাকে মিথ্যা বলতে যাবো কেন?
– আচ্ছা আমি ভিডিও কল দিচ্ছি। সবাইকে দেখবো আমি।
ওনি কিছু বলার আগেই আমি কল কে*টে ভিডিও কল দিলাম। ওনি রিসিভ করে বললো,
– কি হয়েচ্ছে হটাৎ, তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন? এ্যানি প্রব্লেম?
ওনি হয়তো একটু আগে গোসল করেছে তাই একটু ভেজা টাইপের আগোছালো। আর একটু পরই মামিকে দেখে একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম আমি। তার মানে সে সত্যিই বাসায়। ওহ্, থ্যাংক গড। সে এমনটা করেনি। কারণ সে করলে এতো দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারতো না। কারণ এখান থেকে তার বাড়ি কম করে হলেও ৫-৬ ঘন্টার রাস্তা৷ তাহলে কে করেছে এমন? মনে প্রশ্ন জাগছে।
তবে যেই করুক। রিদ ভাইয়া এসবে নাই এটাই অনেক।
,
,
নির্বাচন শেষ হলো। পূর্বের মতো এবারও আরিফ সাহেব হলো চেয়ারম্যান। তবে ছেলের অবস্থা করুন। গত দশ দিন ধরে শোয়া থেকেই উঠতে পারেনি। হয়তো ঠিক হতে আরো কয়েকদিন লেগে যেতে পারে।

দেখতে দেখতে আমাদের এক্সাম শুরু হয়ে গেলো। এই এক দেড় মাসে আসিফ এখন পুরোপুরি সুস্থ।
আমার সাইড ম্যানও ছিলো একটা ছেলে। কি আজিব। ছেলেটা প্রথমদিনই পরিক্ষার হলে আমার সামনে কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছিলো। তার মা নাকি অসুস্থ, মৃত্যুর পথযাত্রি। আর তার মায়ের শেষ ইচ্ছে হলো ছেলেকে ইন্টার পাশ করানো। ছেলেটা আমার কাছে কান্নাকাটি করে বললো,
– আপনি কি চান না আপু আমার মায়ের শেষ ইচ্ছে টা পুরন হোক।
আমার একটু মায়া হলো। নিজে যা লিখতাম, ছেলেটাকেও তা দেখাতাম। ছেলেটা দেরি না করে দ্রুত লিখে ফেলতো। ব্যাপার টা আমার একটু ভালো লেগেছিলো যে ছেলেটা খুব দ্রুত আমার সাথে সাথে লিখে খেলতে পারে।

কিন্তু আমার রাগ হলো পরিক্ষার শেষ দিন। যখন বের হল থেকে বের হতেই ছেলেটার কথা গুলো শুনলাম।
– আরে দোস্ত পরিক্ষা তো এবার একধম ফাটিয়ে দিয়েছি, দেখিস এ+ এবার কেও থামাতে পারবে না।
আমরা পাশ দিয়ে যেতে সাবিহা বললো,
– খুব ভালো ভাইয়া, অন্তত আপনার মায়ের শেষ ইচ্ছেটা তো পুরণ হবে। মৃ*ত্যুর পথযাত্রি মা কে খুশি করতে পারবেন এটাই তো অনেক।
পাশ থেকে ছেলেটার এক বন্ধু বললো,
– কিসের মৃ*ত্যুর পথযাত্রি কিসের শেষ ইচ্ছে?
এতটুকু বলতেই ছেলেটা তার বন্ধুর মুক চে*পে ধরে অন্য দিকে নিয়ে গেলো। ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম আমি৷ সেদিন কতো ন্যাকা কান্নাই না কাঁদছিলো।
,
,
আজকে হেটে হেটে বাসায় যাবো আমরা। আর কখনো হয়তো এভাবে এক সাথে কলেজে আসা হবে না আমাদের। হয়তো কাল কিংবা পরশু আমাকে নিয়ে চলে যাবে শশুর বাড়ি। বাবার মাঝে তো আজকে থেকেই অত্তেজনা দেখতে পেয়েছি। কালকে থেকে আয়োজন শুরু করে দিবে। পরিক্ষা শেষ এখানে আর রাখতে চায় না আমাকে। ভয় হয় খুব।

রাস্তার পাশে দাড়িয়ে রইলো সাবিহা। আমি গেলাম আইসক্রিম নিয়ে আসতে। গীষ্ম পেড়িয়ে বর্ষা চলছে। তবুও রোদ উঠতে তাপ থাকে অনেক। রোদ থেকে আড়াল করতে চাইছি নিজেকে বার বার। কপালের উপর হাত রেখে সাবিহার দিকে তাকালাম। আইসক্রিম নিয়ে রাস্তা পার হতেই হুট করে একটা গাড়ি এসে ব্রেক করে আমার সামনে। ভয়ে আইসক্রিম দুইটা নিচে পরে গেলো। কলিজা শুকিয়ে গেলো মুহুর্তেই। কিছু বুঝে উঠার আগেই। কয়েকটা ছেলে নেমে আমায় গাড়িতে তুলে নিলো। আবার চলে গেলো। মুখ চে*পে ধরার চিৎকারও করতে পারলাম না।
হুট করে এমন একটা কান্ড ঘটে যাওয়ায় ঠায় দাড়িয়ে আছে সাবিহা। কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। যাই হোক আরশিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আর কারা নিয়ে যাচ্ছে এটা আগে দেখতে হবে।
খেয়াল করলো সামনে দিয়ে একটা খালি সি’এন’জি যাচ্ছে। সাবিহা ওটাকে থামিয়ে উটে গেলো। বললো, সামনে চলা মাইক্রো টাকে ফলো করতে।
যতই যাচ্ছে ততোই রাস্তা টা অচেনা মনে হচ্ছে। তবুও সাবিহা বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বোর্ড গুলো দেখে জায়গার নাম মনে রাখছে।

একটা নির্জন জায়গায় একটা ছোট বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামে। আরশিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো তারা।
তখন প্রায় বিকেল হয়ে এলো। আজ শেষ দিন ভেবে আড্ডা দিতে দিতে অনেক টা সময় পার হয়ে গেছে। এর পর এই ঘটনা।
মাথা কাজ করছে না সাবিহা’র। আশে পাশে তাকিয়ে তেমন কিছু চোখে পরছে না। একটু দুরেই একটা মরা ঢাল ভেঙে পরে আছে। সাবিহা এগিয়ে গিয়ে ওটা তুলে নেয়। পা দিয়ে চেপে ধরে ভে*ঙে ওটাকে একটা লাঠির মতো করে নেয়। তার একটাই চিন্তা, যে করেই হোক আরশিকে বাচাতে হবে। ম*রলে দুজন এক সাথেই ম*রবো।
এই ছোট লাঠি দিয়ে কি বা হবে? না সে নিজেও আজ তাদের শিকার হবে?

To be continue…….
To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here