অনেক সাধনার পরে পর্ব -২৪+২৫+২৬

#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

[২৪]

বৃহঃস্পতিবার হওয়ায় আজ অফিস, স্কুল-কলেজের হাফ টাইম। সেই সুবাধে দুপুর সাড়ে বারোটায় ক্লাস শেষ হয়েছে শেফালী। কলেজের পাশে সাড়ি বদ্ধ কয়েকটা বিশাল বৃক্ষ আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে শেফালী। হাতে তার লাচ্ছি। কলেজ ছুটি হয়েছে প্রায় অনেকক্ষণ। এতোক্ষণে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কমে গেছে একদম। হাতে গুনা কয়েকজন ছেলে ও যাতায়াতকারী যাত্রী দেখা যাচ্ছে। শেফালী হাত ঘড়ির দিকে নজর বুলালো। ঘড়ির কাটা প্রায় একটা ছুঁই ছুঁই। মূলত সে অপেক্ষা করছে রাকিবের। কলেজের সামনে বেশ কয়েকবার রাকিবের সাথে দেখা হয়েছে তার। কলেজের রাস্তার অপর পাশে রাকিবের অফিস। আজও নিশ্চয় এখানে দেখা হবে। কাল এতো বড় সত্ত্য জানার পর থেকে শেফালীর মন আকুল-পাকুল হয়ে আছে এই ভেবে যে কখন শায়েস্তা করবে শয়তান ছেলে কে। দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তায় তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে।
.

রাস্তার এক পাশে ফুটপাত ধরে হাঁটছে রাকিব। পিছনে তার আন্ডারে কর্মরত একজন যুবক। বয়স তারই সমান বোধহয়। হয়তো জন্ম তারিখ খুঁজলে দেখা যাবে মাস চারেক বড় তার থেকে। তবে কথাবার্তা কেমন জানি বোকা প্রকৃতির। তবে মন একদম পানির মতো পরিষ্কার। সবসময় হাস্যউজ্জল থাকতে প্রছন্দ করে। যা রাকিবের কাছে অত্যন্ত ভালো লাগে। ছেলেটিকে পছন্দ করে রাকিব। নিজের বন্ধুর মতোই ভাবে। তবে মাঝে মাঝে তার বোকামোতে বড্ড রাগ উঠে এবং ধমকানিও দিয়ে ফেলে সে। এখনও তাই করছে। শনিবারের নতুন প্রজেক্ট কিভাবে শুরু করবে তা নিয়ে ডিসকাস করছে ও হাঁটছে। আরেকটু সামনে এসেই দুজন নিজেদের বাড়িতে চলে যাবে। যতোটুকু জায়গা পর্যন্ত একসাথে যাওয়া যায়, ততোটুকুই যাচ্ছে।

‘স্যার আপনি বিয়ে করবেন কবে?’

হঠাৎ আব্দুল্লাহ-র এমন উদ্ভট কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরলো রাকিব। ভ্রুঁ উঁচিয়ে তাকালো তার দিকে। তাকে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে থমথমে খেলো আব্দুল্লাহ। ইতস্ততবোধ করে বললো, ‘ না মানে, দাঁড়ি রাখবো ভাবছিলাম। যদি তাড়াতাড়ি করেন তাহলে এখন রাখবো না।’

রাকিব চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘আমার বিয়ের সাথে তোমার দাঁড়ি রাখার সম্পর্ক কি?’

দাঁত কেলিয়ে হাসলো আব্দুল্লাহ। বললো, ‘মানে স্যার বুঝেনই তো। বিয়ে বাড়ি মানে সুন্দর সুন্দর মেয়ের আগমন। এখন দাঁড়ি রাখলাম আর আপনার বিয়ে হলো এখুনি। তাহলে তো বিয়ে বাড়িতে আমাকে বয়স্ক বয়স্ক লাগবে। কেউ পছন্দ করবে না। তাই আপনি বিয়ে করবেন কবে জেনে দাঁড়ি রাখবো।

নিচের ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হেসে উঠলো রাকিব। উষ্ঠধয়ে হাসি রেখেই বললো, তুমি কি জানো? ক্লিন শেভ করলে মেয়েরা ডেসিং মুরগি বলে ডাকে?’

আব্দুল্লাহর মুখখানি মুহূর্তেই কালো হয়ে গেলো। তার এমন রিয়েকশন দেখে হেসে উঠলো রাকিব। বললো, ‘মেয়েরা বোধহয় চাপ দাঁড়ি পছন্দ করে। তুমি দাঁড়ি সাইজ করে রাখতে পারো।’

‘স্যার শখে শখে বলি শুধু। অফিসে তো এলাউ করবে না।’

‘ব্যাপার না। আমাদের অফিসে এই সুযোগটা দেওয়া আছে।’
.
রাস্তার অপর পাশে রাকিবকে দেখতে পেয়ে চোখ বড়বড় করে তাকালো শেফালী। হাতে থাকা খালি লাচ্ছির বোতলটা ফেলে দৌড় দিলো একটা। সাথে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগলো, ‘ওই হ্যালো চাপাবাজ? ডিজিটাল ফকির?’

পরিচিত কন্ঠ শুনে কপাল কুঁচকালো রাকিব। পিছু ফিরে দেখলো শেফালী তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু তার থেকেও দ্বিগুণ বেশি অবাক হলো শেফালীকে নিজ ইচ্ছায় তার কাছে আসতে দেখে। তার উপর আবার কি বলে ডাকছে? চাপাবাজ? ডিজিটাল ফকির?’

শেফালী এক দৌড়ে রাকিবের সামনে এসে হাটুতে হাতের ভর দিয়ে হাঁপাতে লাগলো। জোড়ে জোড়ে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। পরনে তার ইউনিফর্ম। চুল গুলো দুই পাশে বেনী করে রাখা। সূর্যের অতিরিক্ত তাপ ও গরমে ঘেমে আছে একদম। এক দৃষ্টিতে শেফালীকে দেখছিলো রাকিব। মেয়েটা এতো কিউট কেন?কথা বলার সাথে সাথে ভেসে উঠা গালের টুলটা আরো জুউশ। সব চেয়ে সুন্দরী এই মেয়ে। নিঃসন্দেহে সকল সৌন্দর্যের অধিকারিণী।

শেফালী জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে বলল, ‘হ্যালো ডিজিটাল ফকির। হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে গেলেন যে?’

প্রতিক্রিয়া দেখালো না রাকিব। পূর্বের ন্যায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শেফালীর দিকে। মেয়েটিকে দেখায় এতোটাই ব্যস্ত যে তার কথা কান অব্ধি যায়নি রাকিবের।

রাকিবের এমন চাহনী দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো শেফালী। তার সামনে হাত নিয়ে তুলি বাজিয়ে বললো, ‘হ্যালো? বয়ড়া হয়ে গেলেন নাকি? শুনতে পারছেন তো?’

শেফালীর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো রাকিবের। হকচকিয়ে গেলো সে। পাশে তাকিয়ে দেখলো আব্দুল্লাহ তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে আগে কখনো পরেনি। মুখ খানি তার থমথমে হয়ে গেছে। আমতা আমতা করে বললো, ‘আব্,, হ্যাঁ! বলো.. কি।’

শেফালী চোখ বিজ্ঞব্যক্তিদের মতো ছোট ছোট করে বললো, ‘ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে কি দেখছিলেন? আশ্চর্য মানুষ আপনি।’

শেফালীর কথা শুনে আরো হতভম্ব হয়ে গেলো রাকিব। বলে কি এই পাগল মেয়ে? আড় চোখে আব্দুল্লাহর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখনো ঠোঁট চেপে হাসছে। লজ্জা পেলো কিছুটা। হায় আল্লাহ! নিজের এসিস্টেন্টের সামনে এভাবে অপমানিত হতে হবে ভাবতে পারিনি। তবুও নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলো। কথার প্রসংজ্ঞ ঘুরাতে বললো, ‘আব্ কি বলতে এসেছো বলো।’

শেফালী একটা ভ্রুঁ উঁচিয়ে তাকালো। বুকে দুই হাত গুঁজে প্রশ্ন করলো, ‘কাল রাতে কল দিয়েছিলাম ধরেন কি কেন?’

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসলো আব্দুল্লাহ। তার স্যার একটা কলেজ পড়ুয়া বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করছে। এই জন্যই স্যার কবে বিয়ে করবে বলছে না? হয়তো মেয়েটা ভার্সিটিতে উঠার পর করবে। ওয়াহ্! মেয়েটা বেশ ভালো ও চঞ্চল বুঝায় যাচ্ছে। মানিয়েছে বটে। মনে মনে এসব ভাবছে আর হাসছে।

রাকিবের এখনো অস্বস্তি লাগছে। আব্দুল্লাহর মিটমিট হাসি দেখে আরো বেশি অস্বস্তিতে পরেছে সে। শেফালীর কথার গুরুত্ব দেয়নি তেমন। বরঞ্চ ইতস্তত করে বললো, ‘ওহ আচ্ছা। কল দিয়েছিলে নাকি?’

তার এমন বেখাপ্পা উত্তর শুনে কপালে পরপর কয়েকটা ভাজ পরলো শেফালীর। চোখ ঘুরিয়ে পাশের লোকটার দিকে তাকালো। দেখলো লোকটা মিটমিট করে হাসছে। দুজনের ড্রেস-আপ দেখে বুঝতে পারলো তারা অফিস থেকে ফিরেছে। লোকটা নিশ্চয় তারই অফিসের লোক। রাকিবের এমন অস্বস্তির কারণ এতোক্ষণে ধরতে পারলো। শেফালী একবার মনে মনে ভাবলো ওই লোকটার সামনে ফকিরটাকে ধুয়ে দিলে কেমন হবে? পরোক্ষনে ভাবলো না থাক। প্রত্যেক মানুষেরই একটা প্রেস্টিজ আছে। ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কি করবে। আজ নাহয় থাক। ব্যাপারটা নিয়ে পরে দেখা যাবে। তাই উপরে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো, ‘আচ্ছা। অফিস থেকে এসেছেন নিশ্চয়? বাড়িতে গিয়ে কল দিবেন। মনে থাকে যেন।’

শেষের কথাটা বলে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। এবার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো রাকিব। ফুঁশ করে স্বস্থির নিশ্বাস ছুঁড়ে একটা। আব্দুল্লাহর দিকে তাকাতেই সে বলে উঠলো, ‘স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড? বাহ্ খুব সুন্দর। মেইড ফর ইচ আদার।’

হাস্যউজ্জল চেহারায় বললো আব্দুল্লাহ। ধমকে উঠলো রাকিব, ‘সবসময় বেশি কথা বলো কেন তুমি? চুপচাপ বাসায় যাও। শনিবার অফিসে দেখা হবে।’

মুখ কালো করার বদলে আরো প্রছন্ন হাসলো আব্দুল্লাহ। স্যার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ধরা পরেছে তার সামনে। খুব গোপন একটা খবর সে জানতে পেরেছে ভেবেই তার ঈদ ঈদ লাগছে। তাই মন খারাপের বদলে হাসছে।

রাকিব চোখ ঘুরিয়ে শেফালীর চলে যাবার দিকে তাকালো। আব্দুল্লাহর কথাটা কানে বাজলো আবারো। ‘মেইড ফর ইচ আদার!’ আনমনে আলতো ভাবে হেসে উঠলো সে।
.

বৃহঃস্পতিবার সন্ধ্যায় মনিরার গায়ের হলুদ। শুক্রবার বিয়ে। সেই সুবাধে মিতালী হালকা লাল-কমলা পাড়ের হলুদ শাড়ি পরলো একটা। চুল গুলো বেনী করে খোঁপা করলো। খোঁপার মাঝে গোলাপ ফুল দিয়ে, চারপাশে বেলিফুল দিয়ে সাজিয়ে দিলো আমেনা। মুখে দিলো কহাল্কা প্রসাধনী। সাজানো শেষে আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখলো মিতালী। চেহারায় তার মিষ্টি মিষ্টি একটা ভাব আছে। মুচকি একটা হাসি দিলো। আমেনা কাজলের কৌটা থেকে আঙ্গুলে কাজল নিয়ে মিতালীর ডান কানের পিছে টিপ দিয়ে দিয়ে বললেন, ‘মাশা আল্লাহ।’

শেফালী পড়ার টেবিলে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে আপেল খাচ্ছিলো। মুখের আপেল চিবুতে চিবুতে বলে উঠলো, ‘আম্মা? বিয়ে তো কাল। আজই এতো সুন্দর করে সাজিয়ে দিলে কাল কি করবে?’

আমেনা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘মাশা আল্লাহ বল।’ শেফালী মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, ‘মাশা আল্লাহ!’

আমেনা মিতালীর সামনের চুল গুলো ঠিক করে বললেন, ‘সাবধানে যাবে। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে তোমার বাবাকে জানাবে তাহলে গিয়ে নিয়ে আসবে। একা আসার দরকার নেই।’

‘খামোখা চিন্তা করতে হবে না। আমি একাই আসতে পারবো।’

আমেনা চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন, ‘চুপ করো। বললাম তো দরকার নেই।’

‘আম্মা প্লিজ? আব্বুকে কষ্ট দিবো কেন? একা একাই তো আসতে পারবো তাই না? আব্বু বরং তখন বিশ্রাম নিবে। টেনশন নিও না। একা আসতে পারবো!’

শেফালী বললো, ‘উফফ আম্মু? বুবু তো বড়। নিজের চলা নিজে চলতে পারে। তুমি টেনশন নিও না। চিল!’

আমেনা আর প্রতিত্তুর করলো না। সম্মতি দিলেন মেয়েদের কথায়। অতঃপর মিতালী বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে। শেফালী ও জুলফিকার বিয়ের দিন যাবে। যেহেতু মনিরা মিতালীর বেষ্টফ্রেন্ড; সেহেতু তাকে গায়ের হলুদে যাওয়া বাধ্যতামূলক করেছে মনিরা। মিতালী বিয়ের দিন বাবা ও বোনের সাথে যেতে চেয়েছিলো। এক প্রকার বাধ্য হয়ে মনিরার কথা রাখতে যাচ্ছে সে।

ধুমসে আয়োজন হয়েছে গায়ের হলুদে। চারপাশ একদম ইলাস্টিকের হলুদফুল ও গাঁদাফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। চারপাশে রঙবেরঙের বাত্তিতে ঝিকমিক করছে। কোলাহলপূর্ণ কমিনিটি সেন্টারের তৃতীয় ফ্লোর। সেখানে মনিরা হলুদ লেহেঙ্গা পরে স্টেজের মাঝে বসে আছে। তাকে ঘিরে রেখেছে আত্মীয়স্বজন। মিতালী দূর থেকে দেখলো মনিরা কে। চেহারায় তার প্রাপ্তির হাসি। এই হাসি হলো পূর্ণতার হাসি। এই হাসি ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাবার হাসি। প্রসন্ন হাসলো মিতালী। শাড়ির আঁচল এক হাতে ধরে এগিয়ে স্টেজের কাছে আসলো। মনিরা তাকে দেখে মহা খুশি হলো। ইশারায় পাশে আসার অনুরোধ করলে মিতালী উঠে তার পাশে বসলো। যেহেতু মনিরা মিতালী বেষ্টফ্রেন্ড। সেহেতু মিতালীকে মনিরার পরিবারের সবাই চিনে। সেই সুবাধে তাদের ফ্যামিলিতেও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। মিতালী হাতে কাচা হলুদ নিয়ে মনিরার গালে ছুঁয়ে দিলো। তারপর ছোট একটা গিফট বক্স হাতে ধরিয়ে দিলো। মনিরা এক্সাইটেড হয়ে গিফট বক্সটা খুলে দেখলো ছোট সাদা পাথরের দুইটা ইয়ারিং। কয়েকমাস আগে মনিরা এই ইয়ারিং দুটো পছন্দ করেছিল। কিন্তু তখন টাকা না থাকায় নিতে পারেনি। সেইগুলো আজ মিতালী তাকে দিলো। পছন্দ হলো বেশ। জড়িয়ে ধরলো একে অপরকে। অতঃপর বেশ কয়েকটা ছবি তুললো দুজন। হাত ঘড়িতে সময় দেখলো মিতালী। ঘড়ির কাটা রাত আটটা ছুঁই ছুঁই। বাসায় ফিরতে হবে। তাই নিজে হলুদ লাগানো শেষে মনিরাকে বলে উঠলো, ‘হলুদ লাগানো তো শেষ। আমি এখন আসি।’

‘মানে? এসেছিস তো মাত্রই। খাওয়া দাওয়া করে যাবি না? এটা কোনো কথা?’

‘ তোর কথা রাখতে আমি এসেছি। তুই তো জানিস রাতে বাহিরে যাই না। তাছাড়া প্রবলেম হবে বাসায়। আমি এখন যাই হ্যাঁ। কাল আবারো দেখে হবে। ‘

‘তাই বলে না খেয়ে যাবি? কিছু তো খা।’

মনিরার কথা রক্ষার্থে মিতালী অল্প খাবার খেয়ে নিলো। ঘড়িতে সময় দেখলো প্রায় নয়টা। বিলম্ব করলো না আর। মনিরা ও তার পরিবার কে বিদায় দিয়ে বেড়িয়ে এলো কমিনিটি সেন্টার থেকে। বাহিরে এসে দেখলো রাস্তা একদম ফাঁকা। কিছু মানুষের আনাগোনা ছাড়া একদম নির্জন। সোডিয়ামের আলোতে রাস্তাঘাট আলোকিত। এতো তাড়াতাড়ি গাড়ি শূন্যতায় পরলো? আজিব ব্যাপার। বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকালো মিতালী। বেশ কিছুসময় অপেক্ষা করলো কিন্তু গাড়ির হদিস পেলো না। যাও দুই-একটা পেয়েছে ড্রাইভার তার এলাকায় যাবে না। হতাশ হলো মিতালী। এক পর্যায়ে পায়ে হেঁটে সামনে আগানোর ইচ্ছাপোষন করলো এবং তাই করলো সে। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় বেশখানিকটা রাস্তা চলে এসেছে। তখুনি হঠাৎ পাশে কেউ তুমুল বেগে বাইকের ব্রেক কষেছে। হঠাৎ আকর্স্মিক ঘটনায় ভরকে গেলো মিতালী। মুখশ্রী দুই হাতে ঢেকে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘আআআ’#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

[২৫]

মাথার হেলমেড খুলে বাইক থেকে নামলো অংকুর। অস্থির পায়ে এগিয়ে এসে মিতালীর সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘মিলি? ঠিক আছো তুমি?’

পরিচিত কন্ঠ শুনে মুখ থেকে হাত দুটো সরালো মিতালী। সামনে অংকুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ছুঁড়লো একটা। ভয়ার্ত চোখে শুকনো ঢুক গিলে বলল, ‘এভাবে কেউ আসে? ভয় পেয়েছি আমি।’

মিতালীর ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখে অংকুরের হার্টবিট দ্রুত বেগে চলতে লাগলো। অপরাধবোধ কাজ করলো মনে। আরেকটু হলে এক্সি:ডেন্টে হয়ে যেতো। ভাবতেই বুকটা ধক করে উঠছে। কলিজা কাঁপছে তার। চেহারা মলিন করে বললো, ‘স্যরি।’

ফুঁশ করে একটা লম্বা শ্বাস ফেললো মিতালী। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস করলো। আরেকটু হলে প্রাণ পাখি উড়াল মারতো। হঠাৎ এমন ঘটনায় প্রচুর ভয় পেয়েছে মিতালী। ঘেমে গেছে সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। অংকুরের কথার প্রতিত্তুর করলো না। নিশ্চুপ রইলো সে। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো।

‘বোকা মেয়ে। রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে হয় জানো না? মাঝখান দিয়ে হাঁটছিলে কেন?’

অংকুরের কথা শুনে অসাড় হলো মিতালী। পিটপিট করে তাকিয়ে থেকে কণ্ঠস্বর নিচু করে বললো, ‘খালি রাস্তা ছিলো তাই..’

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই অংকুর হালকা রাগি ও বিরক্তি মিশ্রিত গলায় বলে উঠলো, ‘ধুরু, রাস্তা খালি বলেই কি মাঝখান দিয়ে হাঁটতে? ভাজ্ঞিস ব্রেক দিতে পেরেছি। নাহলে কি হতো ভেবেছো একবার? শা:লা বিয়ের আগেই বউ-হারা হতাম।’

হতবাক হলো মিতালী। অংকুরের প্রথম কথায় কাচুমুচু হলেও শেষের কথা শুনে ভরকে গেলো। এই ছেলে এতো বেশি কথা বলতে পারে। ঠোঁট উলটে মুখ কালো করে তাকিয়ে রইলো।

‘তুমি কি মনিরার গায়ের হলুদে এসেছো? মানে ওবাইদুর কে চিনো?’

অংকুরের প্রশ্ন শুনে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো মিতালী। কাপালে পরলো সূক্ষ্ম ভাজ। ওবাইদুর আর মনিরাকে কিভাবে চিনে অংকুর? তারা কি পূর্ব পরিচিত? জানার আগ্রহ হলো তার। তাই বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ। মনিরা আমার বেষ্টফ্রেন্ড। আর্ট কোচিং’এ আমরা তিনজন একসাথে কোচিং করি। তাই আমরা পরিচিত। কিন্তু আপনি ওদের চিনেন কিভাবে?’

অংকুর ঠোঁটে হাসি রেখে বলল, ‘ওবাইদুর আমার ফুফাতো ভাই হয়।’

‘আপন?’

‘হ্যাঁ।’

প্রশ্ন করা বন্ধ করলো মিতালী। চোখ ফিরিয়ে নিলো অংকুরের থেকে। রাস্তার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো গাড়ি নেই। হাত ঘড়ির দিকে তাকালে দেখতে পায় প্রায় সাড়ে নয়টা। সময় এতো দ্রুত চলে যায়? নাকি ঘড়ির কাটা দ্রুত অতিবাহিত হয়? বুঝে আসলো না মিতালীর। বিরক্ত হলো প্রচুর। দেড়ি হয়ে গেছে অনেক। এতো দেড়ি করে বাসায় কখনো ফিরেনি সে। তাই মনে এতো অস্থিরতা।

‘স্টেজে মনিরাকে হলুদ লাগাচ্ছিলে। তোমাকে এখানে দেখে অনেক অবাক হয়েছিলাম। কথা বলার জন্য কাছে আসার আগেই একটা কাজ পরলো। কাজ শেষ করে এসে তোমাকে আর পেলাম না। তাই তাড়াতাড়ি বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পরি। আমি তো ভেবেছিলাম গাড়িতে আছো কিন্তু না। গাধাদের মতো রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছিলে। বেকুব মেয়ে। ভাবছি বুদ্ধি একটু হলেও আছে কিন্তু এখন দেখছি তার ছিটেফোঁটা কিছুই নেই।’

অপমানে মিতালীর মুখখানি থমথমে হয়ে গেলো। কিঞ্চিৎ পরিমানের রাগ হলো অংকুরের উপর। বিরক্তি নিয়ে তাকালো অংকুরের দিকে। মুখ কালো করে সামনে এগুতে লাগলো। রাগ হলো। বিরক্ত লাগলো। অভিমান পুষলো মনে। পেয়েছে টা কি তাকে? গাধা বলতে পারলো এতো সহজে? সবসময় তার কথায় কেন শুনবো আমি? কিছুদিন আগেও কথার প্রসঙ্গে গাধা বলেছিল। আর আজ। রাগ শরিরে আরো তিরতির করে বেঁড়ে গেলো। ফুঁশ করে নিশ্বাস ছুঁড়তে ছুঁড়তে হাঁটতে লাগলো।

‘আরেহ্? যাচ্ছো কোথায়? মিতালী?’

পিছু ডাকলো অংকুর। মিতালীর সঙ্গে-সঙ্গে সে নিজেও পা চালালো। পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললো, ‘আমার সাথে আসো আমি বাসায় দিয়ে আসি।’

প্রতিত্তুর করলো না মিতালী। দাঁতে দাঁত চেঁপে ধরলো। দ্রুততার সাথে পা চালাতে লাগলো। অংকুরের উপর রাগ হচ্ছে তার। ভীষণ রকমের রাগ হচ্ছে। আজ থেকে এই ছেলের সাথে ভুলেও কথা বলবে না সে। এই ভেবেই পণ করলো তার মন। কিন্তু তা আর হলো না। অংকুর তার পিছু আসতে আসতে বললো, ‘ আমার সাথে আসো। আমি পৌঁছে দিচ্ছি।’

দ্বিগুণ রাগ হলো মিতালীর। দাঁড়িয়ে পরলো তাৎক্ষনাৎ। কন্ঠস্বরে রাগ প্রকাশ করে বলে উঠলো, ‘আপনার সাথে যাবো কেন? কে আপনি?’

‘আমি কে সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে। এখন আমার সাথে আসো পৌঁছে দেই।’

মিতালীর কাটকাট প্রতিত্তুর, ‘আমি আপনার সাথে যাবো না।’

‘আশ্চর্য! হঠাৎ কি হয়েছে তোমার? বাইকে উঠো এখুনি।’ অবাক হয়ে হালকা ধমকে বলে উঠলো অংকুর। মিতালী প্রথমের ন্যায় আবারো বললো,

‘বললাম তো আমি যাবো না। খবরদার এই গাধা মেয়ের পিছু আসবেন না একদম। আপনি আপনার মতো যান।’

দাঁড়ালো না মিতালী। রাগি গলায় কথা গুলো বলে সামনের দিকে যেতে লাগলো। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো অংকুর। বিস্মিত হলো সে। গাধা বলায় মিতালী এভাবে রেগে গেলো? বাহ্! ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হেসে উঠলো সে। পিছনে এসে বাইকে বসে স্টার্ট দিয়ে ধীরে ধীরে মিতালীর পাশে চালাতে লাগলো। বলল, ‘মহারানীর নাকের আগায় ভীষণ রাগ। কথায় কথায় রেগে নাক-গাল ফুলিয়ে লাল করে ফেলে। একদম টমেটোর মতো। হাহা!’

হাঁটার মাঝেই বিরক্তিবোধ করলো মিতালী। কটমট চোখে তাকালো। তার এমন চাহনীতে অংকুর বলে উঠলো, ‘এই দেখো মেয়ে এমনিতেই মাঝরাত। তার উপর এভাবে তাকালে আরো ভয় লাগে। লাইক শাঁকচুন্নি।’

ভ্রুঁ কুঁচকে চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো মিতালীর। শরিরে রাগ আবারো তিরতির করে বেড়ে গেলো। দাঁড়িয়ে পরলো তাৎক্ষনাৎ। কিড়মিড় করে কোমড়ে এক হাত রেখে তাকালো। ‘শাঁকচুন্নি’ বলে নিজেই ভ্যাবাচেকা খেলো অংকুর। হকচকিয়ে গেলো মিতালীর এমন চাহনীতে। বাইক থামিয়ে কাছুমাছু চেহারায় তাকালো। অপরাধীর মতো বলে উঠলো, ‘ডাবল সরি। ভুলে মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে। তুমি তো জানো আমার মুখ একদম কন্ট্রোললেস। রাগ করে না আমার সোনা জান! উফ আবার। সরি! ধ্যাৎ!’

অংকুরের কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে নাকি রাগ করবে কিছুই বুঝে আসছে না মিতালীর। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। অংকুরের চেহারা দেখে হাসি ধরে রাখতে পারলো না। রাগ ভুলে হুহা করে হেসে উঠলো। হাসি তার থামছে না। স্বস্থির নিশ্বাস ছুঁড়লো অংকুর। যাক বাবা রাগ ভেঙ্গেছে। প্রফুল্লিত, সন্তুষ্টি এবং প্রাপ্তির হাসি ঠোঁটে রেখে তাকিয়ে দেখতে লাগলো মিতালীর খিলখিলিয়ে হাসিটা। বুকের বা-পাশে ঢিপঢিপ করে হৃদযন্ত্রটা চলছে। আবারো নতুন করে প্রেমে পরতে বাধ্য করলো এই মেয়ে।

মৃদু হাসলো অংকুর। বুকের বাম পাশে এক হাত রেখে বললো, ‘সোনালু ফুলের সৌন্দর্য হেরে গেলো তোমার সৌন্দর্যের কাছে। শুনো গো হলুদিয়া মেয়ে, তোমার প্রেমে ভীষণ বাঁজে ভাবে ফেঁসে গেছি। মুক্তি চাই না আমি।’

অসাড় হলো মিতালী। হাসি থামিয়ে মনোরম চোখে তাকালো অংকুরের দিকে। অংকুরের আঁখি যুগলে স্পষ্ট মুগ্ধতা দেখতে পেলো সে। লজ্জাভূতি হলো মিতালী। দৃষ্টি সরিয়ে নিলো তাৎক্ষনাৎ। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে লজ্জা মিশ্রিত মুখ অংকুরের চোখের অগোচরে নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু তা আর হলো না। তার লজ্জামাখা মুখশ্রী সম্পূর্ণ অংকুরের দৃষ্টিপাত হয়েছে। মিষ্টি একটা হাসি দিলো অংকুর। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,

‘ম্যাডাম, বাইকের পিছনের সিটটা খালি ছিলো এতোদিন। আজ তুমি-ই হবে আমার প্রথম যাত্রী। তুমি-ই হবে শেষ। এই জায়গা তোমার জন্য বরাদ্দ। আর কারোর নয়। এবার চটজলদি উঠে পরো তো।’

মুচকি একটা হাসি দিলো মিতালী। বিনা সংকোচে অংকুরের কাধে এক হাত রেখে বাইকের পিছনের সিটে উঠে বসলো। আলতোভাবে প্রাপ্তির হাসি দিলো অংকুর। ঠোঁটে হাসি রেখেই বাইক স্টার্ট দিলো। মুহূর্তেই দমকা হাওয়া শরিরে শীতলতা বয়ে দিলো। যান্ত্রিক গাড়িটা চলতে লাগলো নির্জন রাস্তা ধরে। চারপাশ নিঝুম। ঝিঁঝিঁ পোকাদের ডাকে মুখরিত পরিবেশ। জ্যোৎস্নায় আলোকিত রাস্তা। সোডিয়ামের কৃতিম আলো তো আছেই। প্রফুল্লিত অংকুরের মন। আলতো গলায় গান গাইতে লাগলো – ‘চির অধরা’

‘তোমার চিরচেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে
এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়তো যাবো হারিয়ে
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছে জড়িয়ে
একবার শুধু একটিবার হাতটা দাও বাড়িয়ে
ডাকবেনা তুমি আমায় জানি কোনোদিন
তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন
হবেনা মলিন…

ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়।
ভুলগুলো জমিয়ে রেখে বুকের মণিকোঠায়
আপন মনের আড়াল থেকে..
ভালবাসবো তোমায়।
ভালবাসবো তোমায়।’
.

দীর্ঘপথ অতিক্রম করে নিদিষ্ট ঠিকানায় এসে পৌঁছালো দুজন। বাসার সামনে বাইক থামালে মিতালী নেমে দাঁড়ালো। অংকুর বাইকেই বসে রইলো। নিশ্চুপ সে। এক সাথে কাটানো মুহূর্তটা খুব করে উপভোগ করে অংকুর। যখুনি বিদায়ের সময় আসে; তখুনি বিষন্ন হয় তার অবুঝ মন। অল্প সময়ের বিদায়ের কারণে বুকে বড্ড পিড়া হয়। প্রতিটা ক্ষণে-ক্ষণে ভীষণ ভাবে মিস করা হয় মেয়েটাকে। দূরে রাখতে ইচ্ছে করে না একদম। এই দূরত্ব ঘুচাতে চায় সে। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়। তবে তার আগে মিতালীর সম্মতির প্রয়োজন। আচ্ছা রাজি হবে তো মিতালী?

হলুদ শাড়ির আঁচলটা টেনে সামনে এনে ধরলো মিতালী। মুখের দুপাশে পরে থাকা চুল গুলো ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলের সাহায্যে সরালো। গলা হালকা ঝেড়ে পরিষ্কার করে মুখ খুললো, ‘ধন্যবাদ!’

ভ্রুঁ কুঁচকালো অংকুর। বুকে দুই হাত গুঁজে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘এতোটা রাস্তা নিয়ে এসেছি কি শুধুই ধন্যবাদ পাবার জন্য? ছিঃ মিতালী! তুমি কিপটামি করতে পারলে আমার সাথে?’

হতবাক হয়ে গেলো মিতালী। মুখ হা করে তাকিয়ে রইলো অংকুরের দিকে। চোখেমুখে তার বিস্ময়কর ভাস্যমান। অস্ফুটিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘মানে? এখানে কিপটামির কি দেখলেন?’

অংকুর আড় চোখে তাকিয়ে উত্তরে বললো, ‘না মানে! বিনীময়ে তোমার হাতের স্প্রেশাল চায়ের অফার টা তো দিতেই পারো।’

অল্প শব্দে হেসে ফেললো মিতালী। মুক্ত ঝড়ার মতো শব্দ করে উঠলো তার খিলখিল করা হাসি। চোখে-মুখে হাসি রেখেই প্রতিত্তুর করলো, ‘ঠিক আছে হবে যাবে। কবে লাগবে বলেন?’

‘আমি তো পারি না এখুনি তোমার হাতের চা খাই। কিন্তু তা তো সম্ভব না। ওবাইদুরের বিয়ে তাই কালও হবে না। তার চেয়ে বরং পরশুদিন সকালে মাঠে চা নিয়ে আসবে। এক সাথে সেকেন্ড টি-ডেইট হব্বে। পাক্কা?’

অংকুরের কথা শুনে ঠোঁট টিপে মুচকি হাসলো মিতালী। মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো। অর্থাৎ ‘পাক্কা!’ মহা খুশি হলো অংকুর। হাত ঘড়ির দিকে সময় দেখলো মিতালী। অতঃপর বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসলো। মিতালী চলে যাবার পর অংকুর পকেট থেকে মোবাইল বের করে রাকিব কে একটা ম্যাসেজ দিল। তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
.

রাত হয়ে এসেছে। অথচ মিতালী এখনো বাসায় আসলো না। তাই একটু চিন্তিত জুলফিকার। প্রতিবার রাতের মতো এবারো মিতালীর রুমের বারান্দায় বসে আছেন তিনি। হাতে তার সকালের দৈনিক পত্রিকা। সকালে ব্যস্ততার কারণে সম্পূর্ণ পড়া হয়ে উঠেনা কখনোই। বিকেলে কিংবা রাতে যখনই অবসর হন, তখন বাকি টা পড়ে সম্পন্ন করেন। আজও পত্রিকা হাতে নিয়ে মিতালীর বারান্দায় বসে পড়ছিলেন আর অপেক্ষা করছিলেন মিতালীর আসার। বাইকের আওয়াজ কানে আসায় পত্রিকা থেকে চোখ তুলে বাড়ির গেইটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যেহেতু উনারা থাকেন দুই তলায়, সেহেতু দেখতে অসুবিধে হয়নি। মিতালীকে একটা ছেলের বাইক থেকে নামতে দেখে গম্ভীর হলেন তিনি। ব্যাপার প্রথমে সাধারন ব্যাপার হিসেবে নিজের আমলে নিলেও পরবর্তীতে যখন দেখলেন মিতালী হেসে হেসে কথা বলছে তখন কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাজ পরলো তার। মিতালীর বন্ধুবান্ধব সবার সম্পর্কে অবগত তিনি। ব্যস্ত থাকলেও মেয়েদের ব্যাপারে বেশ মনোযোগী। একটুও হেলফেল করেন না। আজ মিতালীর সঙ্গে অন্য অপরিচিত ছেলেকে দেখে প্রকাণ্ড বিস্মিত হলেন। চিন্তিত হলেন। কে এই ছেলে? ভাবনার জগতে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেই বেড়িয়ে গেলেন মেয়ের রুম থেকে। অর্থাৎ বুঝতে দিতে চাননি যে তিনি মিতালীর রুমে ছিলেন এতোক্ষণ।#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

[২৬]

জাঁকজমক ভাবে চলে বিয়ের বাড়ি। তুমুল রূপে ব্যস্ত প্রতিটি সদস্য। রঙবেরঙের বাতি জ্বলজ্বল করছে। বাতাসে ভেসে আসছে মিষ্টি ঘ্রাণ। ইলাস্টিক ফুল দিয়ে সাজানো পরিবেশ। কাচা ফুলের ঘ্রাণে মু-মু করছে চারপাশ। মিতালী ও শেফালী এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জুলফিকার অন্যত্র দাঁড়িয়ে মনিরার বাবার সঙ্গে আলাপ জমাচ্ছে। দূরে স্টেজের মাঝে বসে আছে মনিরা। চোখে মুখে তার স্পষ্ট খুশির ঝিলিক। ভালোবাসার মানুষটাকে আজ সে লিখিত ভাবে তার নিজের করে পাবে। এর চেয়ে খুশি বোধহয় দুনিয়াতে আর একটাও নেই। মুচকি হাসলো মিতালী। শেফালী কিছুটা দূরে তার বান্ধুবি কে দেখে বলে উঠলো, ‘বুবু? ওই দেখো নাফিজা। তুমি থাকো আমি নাফিজার কাছে যাই।’

‘ঠিক আছে। যা!’

সম্মতি পেয়ে শেফালী তার লেহেঙ্গা উঠিয়ে পা বাড়ালো তার বান্ধুবির দিকে। একা দাঁড়িয়ে রইলো মিতালী। চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো ডেকুরেশনের কাজ। পরনে তার কালো-লাল-খয়েরী সংমিশ্রনের একটা শাড়ি। শেফালী তার জন্য পছন্দ করে কিনেছে। বিয়েতে সে মায়ের হলুদ-লাল শাড়িটা পরে আসতে চেয়েছিল। এই নিয়ে শেফালী কিছুটা ক্যাঁচক্যাঁচ করেছে। শেফালীর মতে গায়ের হলুদে ওই শাড়ি মানানসই। যেহেতু বিয়েতে যাবে সেহেতু রঙিন শাড়ি পরে যেতেই হবে। শেফালীর মন রক্ষার্থে তারই দেওয়া শাড়িটা পরে এসেছে সে। সাজ টাও মূলত শেফালী সাজিয়ে দিয়েছে। বেশ মিষ্টি লাগছে তাকে।

যখন পুরো-দমে চারপাশ দেখতে ব্যস্ত তখুনি পিছন থেকে কেউ ‘ভোউউউ’ করে উঠলো। ভরকে গেলো মিতালী। চকমে উঠলো সে। বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো। অতঃপর কপাট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘সবসময় এমন ফাজলামি করেন কেন? আপনি কি বাচ্চা? বড় হোন নাই?’

দাঁত কেলিয়ে হাসলো অংকুর। এক হাতে মাথা চুলকে বললো, ‘এখনো বোধহয় বাচ্চা। যদি বড় হতাম তাহলে আরো আগেই বিয়ে দিতে দিতো আম্মু।’

অসন্তষ্টির চোখে তাকালো মিতালী। প্রতিত্তুর করলো না। বুকে দুই হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে রইলো। অংকুর তার পুরো আপাতমস্তষ্ক দেখলো ভালো করে। লাল কালো সংমিশ্রনের শাড়ির আঁচলটা বেশ লম্বা। মাটি ছুঁই ছুঁই। হালকা মেক’আপে ভারি মিষ্টি লাগছে। কিন্তু! সোজা চুল গুলো কারেন্টের হিট দিয়ে কুঁকড়ানো স্টাইল করে রেখেছে। হেয়ার স্টাইলটা পছন্দ হলো না অংকুরের। ভ্রুঁ বাঁকা করে বলে উঠলো, ‘হুদাই ক্যান সোজা চুল গুলা ত্যাড়াব্যাকা করছো? পেত্নী পেত্নী লাগতাছে।’

অংকুরের কথা শুনে মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেলো মিতালী। হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অংকুরের দিকে। বিরক্তি হলো কিছুটা। কপাল কুঁচকে বলে উঠলো, ‘এখানে কেন আপনি? সামনে থেকে যান এখুনি। নয়তো পেত্নীদের মতোই আপনার মাথার চুল ছিঁড়বো বসে।’

‘আশ্চর্য! আমার ভাইয়ের বিয়ে আমি আসবো না? আর চুল ছিঁড়লে লস টা কার হবে? অবশ্যই তোমার হবে। মানুষ বলবে মিতালীর জামাই টাকলা। ভালো লাগবে শুনতে?’

হতাশ হয়ে নিজের কপাল চাপড়ালো মিতালী। দশ লাইন বেশি কথা বলা অংকুরের স্বভাব। এই ছেলেকে নিয়ে সে আর পারে না। ফুঁশ করে নিশ্বাস ছুঁড়লো একটা।

দুজনকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো রাকিব। হাতের কালো ফিতার ঘড়ি লাগাতে লাগাতে অংকুরের পাশে এসে দাঁড়ালো সে। তাকে দেখেই অংকুর প্রছন্ন একটা হাসি দিলো। তারপর মিতালীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বললো, ‘মিলি? আমার ভাই রাকিব।’

রাকিব বিনয়ীর সাথে সালাম দিয়ে বললো, ‘কেমন আছেন?’

মিতালী প্রতিত্তরে মিষ্টি হেসে বললো, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?’

‘জি ভালো। আপনাকে আমি প্রথম থেকেই চিনি। তাছাড়া অংকুর যেভাবে আপনার কথা দিনরাত বলে, ধরতে গেলে আপনার সম্পর্কে সবই আমার জানা। হাহা!’

মিতালী উত্তরে বোকা বোকা হাসি দিল একটা। অস্বস্তি লাগছে তার। অচেনা একটা ছেলের কাছে তার সম্পর্কে সব বলতে হয়েছে অংকুরের? আসলেই অংকুর একটা বাঁচাল প্রকৃতির লোক। আলতোভাবে হাসলো মিতালী। রাকিবের সাথে বেশ কিছুক্ষণ সাবলীল ভাবে আলাপ আলোচনা করলো। সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই দূর থেকে লক্ষ্য করেছেন জুলফিকার। দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেও মেয়ে দুটোর উপর নজর রেখেছেন। দুইজন ছেলের সাথে মিতালীকে এভাবে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে কিছুটা অবাক হলেন। নিজেও পরিচিত হতে এগিয়ে আসলেন মেয়ের দিকে।

বাবাকে দেখে জড়সড় হলো মিতালী। জুলফিকারের মুখ হাসিখুশি দেখে নিজেও স্মিতি হাসলো। অংকুর মিতালীর বাবাকে চিনে। তাই পরিচিত হতে খুব সাবলীল ভাবে হাত বাড়িয়ে সালাম দিলো। জুলফিকার হাত মিলিয়ে পরিচিত হলেন। সাথে রাকিবও হাত মিলিয়ে সালাম দিলে জুলফিকার বললেন, ‘সেদিন বোধহয় তোমার সাথে দেখা হয়েছিলো? তাই তো?’

রাকিব ঠোঁট টেনে হাসলো। জুলফিকার কে এখানে দেখে বিস্মিত হয়েছিলো সে। তার থেকেও বেশি বিস্মিত হয়েছে যখন জানতে পারলো মিতালীর বাবা। তার মানে শেফালী ও মিতালী দুই বোন? ভুলে চক্রে বেয়াইনের প্রেমে পরলাম? বাহ্, দুই ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি একই জায়গায়। মনে মনে হাসলো রাকিব। উপরে স্বাভাবিক ভাবে উত্তরে বললো, ‘হ্যাঁ। মনে রেখেছেন আমাকে?’

প্রছন্ন হাসলেন জুলফিকার, ‘বয়স হলেও এতো তাড়াতাড়ি ভুলার অভ্যেস এখনো হয়নি আমার। এখনো সব মনে রাখতে পারি।’

প্রতিত্তুরে অংকুর ও রাকিব দুইজনই হাসলো। জুলফিকার মিতালীর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘শেফালী কোথায়? দেখছি না যে।’

মিতালী আশেপাশে তাকিয়ে উত্তর দিলো, ‘এখানেই তো ছিল। আচ্ছা আমি দেখছি কোথায়।’

জুলফিকার মাথা দুলিয়ে ইশারা করলেন যেন ডাকতে যায়। মেয়েটা দিন দিন বড় হওয়ার বদলে বাচ্চা হচ্ছে। কখন কি করে বসে বিশ্বাস নেই। তবে যাই করে না কেন কখনো অন্যায় করবে না এটা জুলফিকারের বিশ্বাস। তবুও দেখে রাখা উচিত মেয়েদের। তিনি দুই মেয়ের ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস। চোখ তুলে অংকুরের দিকে তাকালেন। কাল রাতে অংকুরই ছিলো সেই ছেলেটা। যে মিতালীকে বাসার কাছে নামিয়ে দিয়ে গেছে। দেখতে বেশ ভালো ও সুদর্শন বটে। স্বভাব-চরিত্র কেমন? ওরা কি একে অপরকে পছন্দ করে? চিন্তিত হলেন জুলফিকার। অংকুরকে প্রশ্ন করলেন, ‘তা এখন কি করছো? পড়াশোনা কত দূর পর্যন্ত?’

অংকুর বললো, ‘পড়াশোনা শেষ। বর্তমানে আইটি কোম্পানির সিআইও [CIO]’

জুলফিকার মাথা দুলালেন। সন্দেহ প্রগাঢ় হলো তার। অংকুরের পাশাপাশি রাকিবকেও বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন জুলফিকার। দুইজনই খুব সুন্দর করে কথা বলছে তার সাথে। তাদের এই বিনম্র ব্যবহারে সন্তুষ্ট হলেন জুলফিকার। তবে একটা ব্যাপারে এখনো তিনি দ্বিধায় আছেন। অংকুর ও মিতালী কি শুধুই বন্ধু? নাকি এর থেকেও বেশি কিছু? তবে তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে তারা একে অপরকে পছন্দ করে। সঠিক ভাবে জানার জন্য আরো কিছু প্রশ্ন করতে লাগলেন। অতঃপর বলেই ফেললেন,

‘মিতালীর সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে?’

সতর্কভাবে তাকালো অংকুর। মিতালীর বাবা যে কিছুটা আচ্ করতে পেরেছে তা বুঝতে পারলো সে। যেভাবেই হোক এই ইন্টার্ভিউ তে তাকে উত্তীর্ণ হতেই হবে। বিসিএস পরিক্ষার মতোই সিরিয়াস একটা পরিক্ষা। নিঃশব্দে তপ্ত শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক হলো। বললো, ‘বড় মাঠের পাশে দেখা হয়েছিল। সেখান থেকেই পরিচয় আরকি।’

‘তোমরা কি একে অপরকে পছন্দ করো? মিথ্যে বলবে না। কোনো সম্পর্কে আছো তোমরা?

জুলফিকারের গম্ভীর কন্ঠ। অংকুর প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খেলো। তবুও অস্থির না হয়ে ভদ্রতার সাথে উত্তর দিলো, ‘সাধারন ভাবেই পরিচয় আমাদের। মিতালীর কথা জানি না। তবে আমার দিক দিয়ে উত্তর হ্যাঁ। মিতালীকে প্রেমের প্রস্তাব দেইনি। কারণ বিয়ে করতে চাই প্রেম না। এইদিকের ঝামেলা শেষ হলেই ভেবেছিলাম আপনাদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাবো।’

জুলফিকার নিশ্চিত হলেন। তার সন্দেহই সঠিক হলো। অংকুর মিতালীকে পছন্দ করে। সন্তুষ্ট হলো মন অংকুরের স্পষ্টভাষী প্রতিত্তুর শুনে। তার নিজেও পছন্দ হলো অংকুরকে। মিতালীর পছন্দ হলে তার আপত্তি নেই।
.

আশেপাশে তাকিয়ে শেফালী কে খুঁজতে লাগলো মিতালী। পেলো না। চারপাশে মহিলাদের গিজগিজ। শেফালী কে খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ ভুলবশত একজন মহিলার সাথে ধাক্কা লাগলো তার। মিতালী সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভুল স্বীকার করে মাফ চাইলো, ‘স্যরি আন্টি। দেখতে পাইনি। ব্যাথা পেয়েছেন আপনি?’

সুপ্তি এক হাতে নিজের ডান বাহুতে ধরে রাখলেন। অল্প ব্যাথা পেয়েছে তবুও বেশি আমলে নিলেন না। বললেন, ‘না ব্যাথা পাইনি।’

মিতালী আবারো বললো, ‘স্যরি আন্টি। আসলে আমার বোন কে খুঁজছিলাম তাই একটু তাড়াই আছি। দেখতে পাইনি। আমি সত্যি অনেক দুঃখিত।’

‘আরেহ্ বোকা মেয়ে বারবার মাফ চাইছো কেন? ব্যাপার না। কি নাম তোমার?’

নির্মল প্রসন্ন হাসি দিলো মিতালী। বললো, ‘মিতালী হাসনাত।’

‘বাহ্, যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি সুন্দর নাম।’

সুপ্তির পিছনে তারই এক আত্মীয় ছিলো। সে বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ চেহারার কাটিং তো সুন্দর। তবে আরেকটু চিকন হলে আরো ভাল্লাগতো।’

হাস্যউজ্জ্বল চেহারা মলিন হয়ে গেলো মিতালী। কিন্তু উপরে ঠোঁটে স্মিতি হাসি রেখে নিজেকে স্বাভাবিক বুঝানোর চেষ্টা করলো। সুপ্তি হলেন সহজ সরল মনের মানুষ। মুখে যা, অন্তরেও তা। তাই কোনো কথা বলার সময় ভাবেন না। যা মনে আসে তা মুখের উপর বলে দেয়। আজও তাই হলো। মহিলার কথার সাথে নিজেও সরল মনে বলে উঠলেন, ‘হ্যাঁ তা ঠিক বলছো। আজকালকার দিনে এমন মাঝে মাঝে হয়। কারোর তো আবার বাচ্চা হওয়ার সময় শরিরে পানি এসে পরে। আবার কেউ বিয়ের আগেই। তবে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তোমার বিয়ে হইছে?’

মিতালী মাথা এপাশ থেকে ওপাশ নাড়িয়ে ‘ না ‘ জানালো। আফসোস করলেন সুপ্তি। বলে উঠলেন, ‘হয়। অনেকে বিয়ার আগে থেকেই মোটা হয়। বলি মা কিছু মনে কইরো না। খাওয়া দাওয়াটা একটু কন্ট্রোল কইরো। তাইলে দেখবা কয়দিনে শরির ঠিক হইয়া যাইবো। তাইলে আরো সুন্দর লাগবো তোমারে।’

সুপ্তি হেসে হেসে বললেন কথাগুলো। মিতালীও প্রতি উত্তরে স্মিতি হাসলো। মহিলাটি যে তাকে অপদস্থ করতে বলেনি। বুঝতে পারলো সে। মাইন্ড করলো না। তাছাড়া তার অভ্যেস আছে। এইসব কথাবার্তা শুনে যথেষ্ট অভ্যেস তার আছে। এই কথার বুলির সাথে মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে।

‘আমার মেয়ে খাবে কি খাবে না সেটা আপনাকে বলতে হবে না। আমার মেয়ে যেমন আছে তেমনি সুন্দর। এই নিয়ে আপনি নাক না গলালেও চলবে।’

জুলফিকারের গম্ভীর গলার কন্ঠ শুনে পিলে চমকে উঠলো মিতালী। তড়িঘড়ি করে পিছনে ফিরে তাকালো। বাবার রাগি চেহারা দেখে ভীতিগ্রস্ত হলো।

মাত্রই অংকুর ও রাকিবের সাথে কথোপকথনের সমাপ্তি ঘটিয়ে এসেছিলো জুলফিকার। দুর্ভাগ্যবশত সুপ্তির শেষের কথা গুলো সম্পূর্ণই তার কর্ণপাত হয়েছে। নিজের মেয়েকে নিয়ে এমন কূটক্তি শুনে রাগান্বিত হলেন তিনি। গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন কথাটি।

পুরুষ মানু্ষের মুখে এমন কথা শুনে গায়ে লাগলো সুপ্তির। কণ্ঠস্বর কিছুটা রুক্ষভাষী করে বললেন, ‘আশ্চর্য! নাক গলানোর কি দেখলেন? আমি কি খারাপ কিছু বলেছি?’

জুলফিকারের কাটকাট উত্তর, ‘যেখানে আমার মেয়েকে নিয়ে কোনো কথা বলার অধিকার আপনার নেই। সেখানে সে খাবে কি খাবে না তা আপনি বলার কে?’

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেন সুপ্তি। কিছুটা অপমানিত বোধ করলেন। দাঁতে দাঁত পিষে গলার আওয়াজ একটু উঁচু করে বলে উঠলেন, ‘আপনার মেয়েকে আমি খারাপ কিছু বলিনি। যা সত্যি তাই বলেছি। অযথা আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে আসছেন কেন?

চলমান..

চলমান..

চলমান..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here