#রিপোস্ট
#অন্তরালের_কথা
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৪৮
.
.
” শুনেছ, কি বলেছে? তুমি এভাবে উল্টো শ্বাস নিও না। যতটা সম্ভব নিচের দিকে প্রেশার দাও। দেখবে খুব দ্রুত শান্তির পাবে। ”
” মা…..! ”
একটি কথাও যেন তানহার কান দিয়ে প্রবেশ করছে না। কেবল চোখ দিয়ে আগুনের কুন্ডুলি বের হচ্ছে তার। আর গলা দিয়ে বের হচ্ছে বুক ভাঙা আর্তনাদ। তারপরও তানহা নিজের আপ্রাণ চেষ্টা করেই যাচ্ছে নিজের সন্তানের জন্য।
চেষ্টা করতে করতে একপর্যায়ে তানহার চোখ দুটো বুজে আসে আর জন্ম নেয় তার ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান।
.
তানহার চিৎকার শুনে সহ্য করতে না পেরে অতল ওযূ করে বসে পড়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে। দু রাকাত করে করে নামায পড়ে আর বুক ভাসিয়ে কাঁদে সেজদায় পড়ে। এটাই যে একমাত্র পন্থা তার সকল বিপদ দূর হবার। তার স্ত্রী ও তার সন্তানকে বুকে ফিরে পাবার।
সেজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদতে কাঁদতে একসময় তার কানে ভেসে আসে ফজরের আযান। সেই সাথে ভেসে আসে নিদ্রার আওয়াজ। সেজদা শেষে উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে দৌড়িয়ে আসে ঘরের বাহিরে। নিদ্রার বলা কথাগুলো শুনে যেন থমকে যায় তার পুরো পৃথিবী। পায়ের তলার মাটি যেন সরে যায় তার। সারা শরীর অসার হয়ে আসলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ছুটে যায় এম্বুল্যান্সের কাছে।
.
দুটি হসপিটাল রিফিউজ করা সত্ত্বেও অতল ছুঁটছে তৃতীয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সে যে কিছুতেই তার মেয়েকে হারিয়ে যেতে দিতে পারবে না। কত স্বাদ-ই না ছিল এই মেয়েকে ঘিরে তার ও তানহার। সে কি করে পারবে সেই সব শখ আহ্লাদ ধুলোয় মিশিয়ে দিতে! তার যে সেই ক্ষমতা নেই।
এম্বুল্যান্সের সিটে বসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে চোখের জল ফেলছে আর আল্লাহ আল্লাহ করছে অতল। পাশ থেকে অতলের কাঁধে হাত রেখে কান্নাভেজা কন্ঠে আনিস খন্দকার বলল,
” নার্সের কথার সাথে তো দুটো হসপিটালের ডক্টরের কথার মিল পেয়েছিস। তাহলে কেন এভাবে ছুঁটে বেড়াচ্ছিস? কেন তানহাকে শেষবারের মত তার মেয়েকে কোলে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছিস না? ”
” আমি যে আরও দেখতে চাই বাবা। আমার বিশ্বাস আমার মেয়ে এই বুকেই থাকবে। কোত্থাও যাবে না, কোত্থাও না। ”
ছেলের চোখের জল দেখে অতলের বাবা আনিস খন্দকার নিজেও কেঁদে দিল। বলল,
” হসপিটালে চলে এসেছি। ”
মেয়েকে বুকে শক্ত করে ধরে ছুটে চলল হসপিটালের ভেতর। ইমারজেন্সি বিভাগে যেতেই ডক্টর পেয়ে গেল অতল। বলল,
” আমার মেয়ে..আমার মেয়েটা চোখ খুলছে না, কাঁদছে না প্লিজ ডক্টর প্লিজ আপনি কিছু একটা করুন। আমার ছোট্ট পরী টাকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিন। ”
ডক্টর বাচ্চাকে দেখেই বুঝে গেল নবজাতকের কেস। অতলের কাঁধে হাত রেখে নার্সকে দিয়ে বাচ্চাকে ভেতরে নিয়ে গেল।
মিনিট দশেক পার হতেই অতলের ডাক পড়ল ভেতরে। চোখের জল মুছে ভেতরে গিয়ে দাঁড়াতেই ডক্টর বলল,
” ডেলিভারি কি বাড়িতে হয়েছে? ”
” জ্বি। আসলে আমার স্ত্রীর ডেলিভারির ডেট আরও মাস খানেক পরে। কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ করেই এমন অবস্থা হলো যে, এম্বুল্যান্স আনা সত্ত্বেও হসপিটালে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। ”
” ও আচ্ছা। ”
” হুম। কিন্তু এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন? আর আমার মেয়েরই বা কি অবস্থা কিছুই তো বললেন না। ”
ডক্টর ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
” স্যরি, শি ইজ নো মোর! ”
কথাটি শোনামাত্র আরও একটিবার যেন অতল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। ডক্টর বলল,
” পরীক্ষা করে যতটুকু বুঝতে পারলাম বেবি হওয়ার সময়ই মারা গিয়েছে। বেবির গলার ভাজে হালকা দাগ পড়ে আছে দেখুন। নরমাল ডেলিভারিতে আজকাল প্রায় এ সমস্যাটি হয়ে থাকে। পেশেন্ট অর্থাৎ আপনার ওয়াইফ হয়তো প্রসবকালে উল্টো শ্বাস নিচ্ছিল আর ঠিক সেসময় বেবি মুখীতে চলে আসে। আর উল্টো শ্বাস নেয়ার সাথে সাথে দু’হাড়ের মাঝে বেবির গলা চাপ খেয়ে যায়। হাড় নরম থাকায় সে চাপ সহ্য করতে না পেরে সেই মুহূর্তেই বেবি মারা যায়। ”
অতলের মুখে কোনো কথা নেই। এই একটি ঘটনা তিন তিনটে জায়গায় শুনে যেন তার সয়ে গিয়েছে। ডক্টরকে কিছু না বলে মেয়েকে কোলে তুলে নিল। আর এগুতে লাগলো সামনের দিকে।
.
মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে তানহা। মুখে কথা নেই, চোখে জল নেই শুধু তাকিয়ে রয়েছে মেয়ের ছোট্ট মুখটির দিকে। একবার মেয়ের পাতলা চুলগুলোকে ঠিক করে দিচ্ছে, তো একবার নিজের ওড়না দিয়ে মেয়ের ছোট ছোট হাত-পা মুছে দিচ্ছে।
তানহার কাঁধে হাত রেখে ভাঙা গলায় অতল বলল,
” তুমি কাঁদছ না কেন তানহা? কেন এভাবে চুপটি করে বসে আছ? তোমার কোলে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চিহ্ন চোখ বুজে আছে দেখতে পারছ না? কি দেখতে পারছ না তুমি? তারপরও কেন কাঁদছ না? কেন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে চোখের বিষ গুলো ঝেড়ে ফেলছ না? তুমি কি বুঝতে পারছ না এই মুহুর্তটি তোমার জীবদ্দশায় আর ফিরে পাবে না! ”
পেছন থেকে নিদ্রা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” ভাইয়া শান্ত হোন। এরকম করবেন না ভাইয়া। আপনি এরকম করলে আপুর কি হবে? আপু তো মরেই যাবে। ”
” তুমি আমাকে বলছ কেন? হ্যাঁ, আমাকে বলছ কেন? তোমার আপুকে বুঝাতে পারছ না, কি বুঝাতে পারছ না? ওকে বুঝিয়ে বলো আমাদের মেয়ে মারা গিয়েছে। আমাদের পাখি ধরা দিয়েও ফাঁকি দিয়েছে। আমাদের পাখি খাঁচা শূন্য করে চলে গিয়েছে। ”
হেঁচকি তুলে তানহা চিৎকার করে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” না…. সব মিথ্যে। সব সব সব মিথ্যে… তোমরা সবাই মিথ্যে বলছ। অতল তুমি মিথ্যে বলছ। আমার মেয়ে মারা যায়নি। আমার সোনা কখনোই আমাকে রেখে যেতে পারে না। পেটে কি এমনি এমনি ধরেছি নাকি, কষ্ট হয়নি পেটে ধরতে, কষ্ট হয়নি এতগুলো মাস পার করতে! এত কষ্টের পরেও ময়না যখন আমার কোল জুড়ে এসে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে তুমি বলছ আমার সোনার ময়না চলে গিয়েছে। আমার কষ্টের কোনো দাম নেই, কি দাম নেই? ময়না যেতে চাইলেই আমি যেতে দিব! কখনোই না, আমি আমার ময়নাকে ঝাপটে ধরে বসে থাকব। কোত্থাও যেতে দিব না, তোমার কাছেও না। ”
অতল বলল,
” তুমি কেন বুঝতে পারছ না, আমাদের পাখি নেই। আমাদের ফাঁকি দিয়ে…”
” প্লিজ অতল, তোমার এই কথা আমার ভালো লাগছে না। তুমি যাও, যাও আমার সামনে থেকে। ”
অতল কিছু বলার আগেই অতলের বাবা আনিস খন্দকার বলল,
” অতল! এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এর থেকে বেশি দেরি করা ঠিক হবে না। বাচ্চাকে কোলে নেয় যেতে হবে আমাদের
বাবার কথা শুনতেই অতল কান্নায় ভেঙে পড়ল। মেঝেতে বসে বলল,
” আমি কি করে পারব আমার সন্তানকে মাটির ঘরে রেখে আসতে! ও বাবা, বলো না কি করে পারব? ওই দেখো আমি নিজ হাতে আমার পাখির জন্য দোলনা কিনেছি ওকে দোলাবো বলে। সেই আমি, আমার এই হাত দিয়েই কি করে পারব দোলনার বদলে আমার পাখিকে মাটিতে শোয়াতে? আমি যে পারব না বাবা, আমি পারব না। ”
” কষ্ট কি তোরা একাই পাচ্ছিস, আমরা পাচ্ছি না? আজ যেখানে আমার কবর খুড়ার কথা সে জায়গায় আমার নাতনির কবর খুড়ছে। বেঁচে থাকতে এটা কত বড় কষ্ট জানিস? ”
তানহা চিৎকার করে বলল,
” আপনারা কি পাগল হয়ে গিয়েছেন? মেয়েটা আমার দুচোখ মেলে তাকালোই না, সে জায়গায় আপনারা কবর খুড়ার কথা বলছেন! মুখে বাঁধল না কথাটি বলতে? বুক কাঁপল কথাটি ভাবতে? ”
অতলের মা মরিয়ম বেগম তানহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” নিজেকে শক্ত করো মা, নিজেকে শক্ত করো। আল্লাহর দেয়া নিয়তিকে মেনে নাও। নইলে যে আল্লাহ নারাজ হয়ে যাবে।”
” কিন্তু মা… ”
” বাহিরে লোকজন চলে এসেছে। জানাজার ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে। মেয়েকে শেষবারের মতো দেখে অতলের কোলে দিয়ে দাও মা। ”
” মা আপনি এসব কী বলছেন? আমার জীবিত মেয়েকে আমি কি করে জানাজার জন্য দিব? ”
” তোমার মেয়ে জীবিত না তানহা। সে যে দুনিয়ার আলো দেখার আগেই জীবনের আলো নিভিয়ে দিয়েছে। ”
” না…… মা আপনি এসব বলবেন না। আমি সহ্য করতে পারছি না। ”
তানহার কোল থেকে মেয়েকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেল অতল। চোখের জল ফেলে তানহাকে জড়িয়ে ধরে মাঝে মেয়েকে রেখে বলল,
” আমাদের পাখি চলে যাচ্ছে তানহা, চিরতরে চলে যাচ্ছে। ”
” তোমার পায়ে ধরি অতল আমার মেয়েকে নিয়ে যেয়েও না। আমি আমার মেয়েকে ছাড়া বাঁচব না। প্লিজ অতল.. প্লিজ। ”
অতল কিচ্ছু বলতে পারল না কেবল মৃত মেয়ের কপালে ঠোঁট লাগিয়ে চোখের জলে কপাল ভরিয়ে দিতে লাগল।
.
ভরা সন্ধ্যায় তুমুল বৃষ্টির মাঝে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে নিদ্রা। তবে পাশে কেউ নেই, যে কি-না মাথার উপর শত কদম ফুলে বিছিয়ে থাকা গাছ থেকে একগুচ্ছ কদম ফুল ছিঁড়ে নিদ্রার হাতে তুলে দিবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা উঁচু করে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো নিদ্রা। মাথার উপর ছায়া জাতীয় কিছু অনুভব করতেই নিদ্রা ভালো ভাবে তাকায়। দেখে একটি কালো রঙের ছাতা তার মাথার উপর। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে তানহা দাঁড়িয়ে। চোখমুখ হাসোজ্জল করে বলল,
” আপু তুমি? কখন এসেছ! আর কার সাথে এসেছ, ভাইয়া নিয়ে এসেছে বুঝি? তুমি যে আসবে আমাদের বলোনি কেন? ”
” আরে বাবা একসাথে কত প্রশ্ন করিস তুই? আস্তেধীরে করতে পারিস না?আর হ্যাঁ, তোর ভাইয়া নিয়ে এসেছে। ”
” তো আসার আগে আমাদের জানিয়ে আসোনি কেন? অন্তত তোমাদের ঘরটা তো গুছিয়ে রাখতে পারতাম। ”
” সে না-হয় গুছিয়ে রাখতি তবে এখন যেরকম খুশি হয়েছিস তখন কি সেরকম খুশি হতে পারতি? পারতিস না। সারপ্রাইজ পাওয়ার খুশিটাই আলাদা। ”
” এটা ঠিক বলেছ আপু। ”
” জানি, কিন্তু তুই এই শরীর নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন? তাও আবার এই সন্ধ্যেবেলা! বুকে ভয় টয় বলে কিছু নেই নাকি? ”
” ভয় যে আমি পাই না সেটা কি আজও বুঝোনি? ”
” আমি সেই ভয়ের কথা বলিনি নিদ্রা। তোর ভেতর যে একজন আছে আমি তার কথা বলছি। এই শরীরে এমনিতেই বেশিক্ষণ ভিজে থাকা উচিৎ নয়, তার উপর আবার এই সন্ধ্যেবেলা। যদি তোর ঠান্ডা লেগে যায়, অসুস্থ হয়ে যাস তখন তো বাচ্চারও সমস্যা হবে তাই না? ”
” হুম। ”
” তাহলে কেন তুই এভাবে ভিজছিলি? ”
” সামান্য খানি ভিজলে কিছু হয় না আপু। ”
” কে বলেছে হয় না? আর যদি সত্যি নাও-হয় তারপরও তো এই দিনগুলোতে সাবধানে থাকতে হয় তাই না? যে নিজ ইচ্ছায় চলে গিয়েছে তার কথা মনে করতে গিয়ে, যে আসছে দুনিয়াতে তার কথা ভুলে গেলে কি চলবে? ”
” এত সাবধানে থেকে কি হবে আপু যে যাওয়ার সেতো এমনি এমনি যাবে। তুমি আর ভাইয়াতো কম সাবধান থাকোনি তাহলে কেন তোমাদের কোল আজ খালি বলো। ”
মেয়ের কথা মনে পড়তেই বুকটা হাহাকারে ভরে গেল তানহার। কোনোমতে কাঁপা গলায় বলল,
” যা ঘরে যা, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জামা চেঞ্জ করে নেয়। ”
বলেই তানহা হনহন করে চলে গেল নিচের দিকে।
.
তানহাকে জানালার গ্রিল ধরে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অতল বলল,
” মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছ যে? কি হয়েছে তোমার? ”
” আমাদের মেয়েটা থাকলে এখন হয়তো দাঁড়ানোর চেষ্টা করতো কিংবা দাঁড়াতে পারতো। তাই না? ”
অতলের মুখটা চুপসে গেল। মনে মনে বলল,
” মনের মাঝে অসীম যন্ত্রণা নিয়েও যে ভয়ে এ সাতটি মাস তানহাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকেছি, সেই কারণটি কি আবারও কাল হয়ে দাঁড়াবে আমাদের মাঝে? ”
অতলকে চুপ থাকতে দেখে তানহা বলল,
” ভয় পেয়েও না। আমি আর পাগলামো করব না, তোমায় কষ্ট দিব না। আমিতো কেবল তোমায় জিজ্ঞেস করেছিলাম। ”
” হুম। তবে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে আমার সামনেই সেসকল কষ্ট উগলে ফেল। দেখবে মনটা ভালো লাগবে। ”
” আর তুমি কোথায় উগলাবে শুনি। ”
” ছেলেমানুষদের না অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। পরিবার-পরিজন, মা, বাবা, বউ এরা সবাই তার উপর নির্ভরশীল। সে ছেলেটিই যদি কোনোকিছু মনে করে কাঁদে সবার কি হাল হবে বলো। আর প্রকাশ করাতেই যে শান্তি কিংবা ভালোবাসার প্রমাণ ঘটে তা তো নয়, প্রকাশ না করলেও মনের মাঝে অনেক ব্যাথা থাকে যা মেয়েদের মতো উগলিয়ে বের করা যায় না। ”
” আমাদের জীবনটা কতটা অগোছালো হয়ে গেল তাই না? ”
” হুম। জীবনটা যে একটা গিরগিটির ন্যায়। সুযোগ বুঝে যখন যেভাবে ইচ্ছে হবে সাজিয়ে দিবে। এতে কারো ভালো হোক কিংবা খারাপ তাতে তার কী! ”
” হুম। ”
আবারও জানালার বাহিরে মুখ ফিরিয়ে নিল তানহা। বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির পানি ঝড়ে পড়ছে তানহার হাতের উপর। যে হাত দিয়ে গ্রিল ধরা। পেছন থেকে অতল এসে তানহাকে ঘুরিয়ে নিল নিজের দিকে। মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো তানহাকে। বলল,
” মন খারাপ করো না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আল্লাহর করা কাজের উপর ভরসা রাখতে হয়, কখনো মন খারাপ করতে নেই। ”
” হুম। ”
” সুখ, দুঃখ, কষ্ট এসব মিলিয়েই মানুষের জীবন। এসব নিয়ে বসে থাকলে যে হবে না। আল্লাহর দেয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তকেই হাসি মুখে নিতে হবে। ”
” হুম। ”
” তাই বলছি কি পুরনো স্মৃতি মনে করে কষ্ট পেয়েও না। তবে হ্যাঁ, নিজেদের সন্তান যেহেতু মনে পড়বেই। তাই বলে এভাবে ভেঙে পড়ো না প্লিজ। তোমার খুশির মাঝেই যে আমাদের খুশি। ”
” এভাবেই আমার পাশে থেকো সারাজীবন অতল। ”
” সারাজীবন থাকব বলেই তো ওয়াদা করেছিলাম। মনে পড়ে কি? ”
” হুম। ”
” আচ্ছা, তুমিতো এটা এখনো অবধি বললে না যে, আজ কোন জরুরি তলবে আমাকে জোড়পূর্বক এখানে নিয়ে এসেছ? ”
.
.
চলবে…..