#রিপোস্ট
#অন্তরালের_কথা
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৬
.
.
বলেই তানহা কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে শুয়ে পড়ল। মেঝেতে শুয়ে পড়ার সাথে সাথে তানহার মনে পড়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা অতলের কথা। আর ভাবলো, ” সেই মানুষটির যে কোনো দোষ নেই এই সবকিছুর মাঝে। তানহা নিজেই তো মানুষটিকে এই ঝামেলার মাঝে বেঁধেছে। তাহলে কেন সে এভাবে কষ্ট পাবে? সে তো কষ্ট পাওয়ার কথা না। ”
ভেবেই তানহা মুহূর্তের মাঝে শোয়া থেকে উঠে বসে। আস্তে করে দাঁড়িয়ে লাগেজ খুলে একসেট কাপড় নেয়। তারপর ধীর পায়ে এগুতে থাকে ওয়াশরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
.
অতল রুম থেকে বেরিয়ে দরজা বাহির থেকে চাপিয়ে বাহিরেই দাঁড়িয়ে রইলো। তবে কতক্ষণ বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে সে ! তাই একা একাই দরজার সামনে পায়চারী করতে লাগলো। পায়চারী করার সময় অতলের মনে পড়লো তার একমাত্র ছোট ভাই তিহানের কথা। মুখটা বেশ ভাড় হয়ে গেল। যে তিহান ছোট থেকে তার বিয়ে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনে ছিল সেই তিহানই তার বিয়েতে ছিল না। বিয়েতে হাসি, মজা, ঠাট্টা করা তো দূরের কথা অতলের কবুল বলার মুহুর্ত টাতেও ছিল না। অবশ্য অতলের এখানে কোনো দোষ নেই। সে তার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে তিহানের সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু পারেনি। নিজের ফোন, বাবার ফোন, তাদের আত্মীয়স্বজনদের ফোন দিয়েও তিহানকে মিনিমাম করেকশো ফোন দিয়েছে। এমনকি বিয়ের আসরে বসে কবুল বলার আগ মুহূর্তেও তিহানকে ফোন দিয়েছে কিন্তু বরাবরের মতো সেবারও ফোনের রিং বেজে কেটে গিয়েছে। তিহান ফোন রিসিভ করেনি। তাই অতল বাধ্য হয় নিজের আপন ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে।
অতল কথাগুলো মনের মাঝে আওরাতে আওরাতেই পায়জামার পকেট থেকে মোবাইল বের করে। মোবাইলের লক খুলতেই সামনে থেকে কেউ আসার শব্দ পায় অতল। মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের বাড়ির কেয়ারটেকার মিরাজ কাকা এদিকে আসছে। অতল বলল,
” কী ব্যাপার মিরাজ কাকা! এতরাতে এদিকে এসেছেন যে ঘুমোননি এখনো? ”
” না অতল বাবা। আমার যে এখনো বহু কাজ বাকি রয়েছে। ”
” এত কাজ কাজ যে করেন নিজের বয়সের দিকে তাকিয়েছেন? কম তো হলো না। এবার অন্তত নিজের শরীরের দিকে লক্ষ করুন। ”
মৃদু হেসে মিরাজ বললেন,
” সবার যে সবকিছু লক্ষ করতে নেই। আচ্ছা সে কথা বাদ দাও। তুমি বলো, তুমি এতরাতে নিজের বাসর ঘর ছেড়ে এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কী করছ? ”
” কী আর করবো তেমন কিছুই না। তবে ঘরে একটু নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম করছিল। বলতে পারো সিগনালই নেই, তাই আর কি বাহিরে বের হয়েছিলাম। তিহান কে কল দেয়ার জন্যে। এমনিতেই তো ভাইটা আমার বিয়েতে ছিল না, হয়তো বিয়ের কথা জানেও না। তাই তিহানকে ফোন দিচ্ছিলাম সব খুলে বলতে। ”
” ও তবে তিহান বাবার সাথে কথা বলতে এই মুহুর্তে তোমার ফোন লাগবে না। ”
” ফোন লাগবে না মানে! ”
” হুম, তিহান বাবা তো তোমরা আসার কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে এসেছে। এখন হয়তো নিজের ঘরে আছে। তুমি চাইলে ওর ঘরে গিয়েই কথা বলতে পারো। ”
“ওহ্! আচ্ছা কাকা তাহলে তাই করি। ”
” হুম, আমিও তাহলে যাই। কাজগুলো যে শেষ করতে হবে। ”
” আচ্ছা কাকা। ”
মিরাজ কাকা যেতেই অতল পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো। পেছনে ঘুরতেই দেখে তানহা কেবলই দরজা খুলেছে। তাই অতল মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
” আমার আসতে কিছুক্ষণ দেরি হবে। তুমি অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে পড়ো। এমনিতেই সারাদিন বিশ্রাম করতে পারোনি তারউপর বেশি রাত জেগে থাকলে পরে অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই দ্রুত শুয়ে পড়াটাই তোমার জন্য ভালো হবে। মন ও শরীর দুটোতেই স্বস্তি খুঁজে পাবে। বুঝতে পেরেছ? ”
” জ্বি। ”
” ওহ্! আরেকটি কথা। বিছানা তো ফুলের পাপড়ি তে ভরপুর। তাই তুমি একটু কষ্ট করে হাত দিয়ে তোমার পাশ থেকে ফুলগুলো সরিয়ে নিও। নাহলে ঘুমোতে তোমার প্রবলেম হবে। ”
” জ্বি, আচ্ছা। ”
” আর ঘুমোনোর সময় দরজা ভেতর থেকে লাগানোর প্রয়োজন নেই। কেউ আসবে না ঘরে। তুমি শুধু ভেতর থেকে চাপিয়ে রেখো যাতে, আমি নিজে থেকে বাহির থেকে খুলতে পারি। কেমন? ”
” জ্বি, আচ্ছা। ”
” তাহলে আমি চললাম তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। ”
” হুম। তবে…!”
” তবে কি বলো! ”
” না মানে…বিছানার কোন পাশে শুতাম যদি সেটা বলে দিতেন! মানে আপনি যে পাশে শুবেন তার বিপরীত পাশেই তো শুতে হবে তাই আর কি…”
অতল তানহার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর শান্ত গলায় বলল,
” আজ থেকে কোনোকিছুই আমার একার বরাদ্দকৃত না। আমার যা সব তোমার। তাই তুমি শোয়ার পর যে জায়গা অবশিষ্ট থাকবে সেটাতেই না-হয় আমি শুয়ে পড়বো। এখন যাও শুয়ে পড়ো। ”
কথাটি বলেই অতল চলে যেতে লাগলো। একটিবারের জন্যও পেছনে ফিরে তাকালো না তবে, অতলের শেষ কথাগুলো যে তানহাকে অনেক ভাবাচ্ছে! সে বিষয়ে তানহার কোনো দ্বিধা নেই।
দরজা ভেতর থেকে কিছুটা চাপিয়ে অতলের কথা মতো ঘরের মাঝে চলে এলো তানহা। তবে তার যে ঘুমোতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছে না, আর না ইচ্ছে করছে বিছানায় বসে থাকতে। তানহার যে মনের মাঝে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এক ভয় কাজ করছে।
এক’পা দু’পা করে ঘরের দক্ষিণ পাশটায় যেতে লাগে তানহা। দক্ষিণ পাশে যে এক বড়সড় জানালা রয়েছে। আর সেই জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করছে বাহিরের দমকা হাওয়া।
জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে জানালার গ্রিলের দু’পাশে দু-হাত দিয়ে ধরে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পশ্চিম আকাশের বুকে জেগে থাকা হাজারো তারার মাঝে উজ্জ্বলতায় ভরপুর তারা টির দিকে তাকিয়ে তানহা মনে মনে ভাবে,
” আজকের এই রাতটি কি অন্যরকম হতে পারতো না? অবশ্যই পারতো। তবে কেন এমন হলো? ভালোবেসেছিল দু’জন দু’জনাকে। কোনো অপরাধ তো করেনি! আর না করেছিল ভালোবাসা নামক কোনো নোংরামি। তাহলে কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে তারা দু’জন? শুধু যে তারা দু’জন শাস্তি পাবে তাতো নয়। আজ থেকে যে আরও একজনের শাস্তি ভোগ করা শুরু হবে তাদের সাথে সাথে। তাও আবার সেই তৃতীয় ব্যক্তির অজানার মাঝে থেকেই। কারণ তৃতীয় ব্যাক্তিটি যে কখনোই তানহার ভালোবাসা পাবে না, না পাবে মায়া মমতা আর না তৈরি হবে কোনো সম্পর্কের টান। শুধুই সৃষ্টি হবে এক দোটানা পূর্ণ সম্পর্ক। যেখানে নেই কোনো সুন্দর সুখময় ভবিষ্যৎ শুধু রয়েছে কষ্টে পরিপূর্ণ ভবিষ্যৎ। যে কষ্টের আদৌ সমাপ্তি আছে কি-না তানহা জানে না। ”
ভেবেই চোখ বুজে ফেললো তানহা। চোখের কোন বেয়ে যে এখনি জল গড়িয়ে পড়বে সেই ভয়ে! তানহা যে চায় না আর চোখের জল ফেলতে কিন্তু চোখের জল কি আর তার কথা শুনে! আর না তার কষ্ট বুঝে.. সে তো তার আপন গতিতে এগিয়ে চলে।
চোখের কোন বেয়ে পড়া নোনা জলের বিন্দু বিন্দু কণাগুলো মুছে আবারো চোখ মেলে তাকায়। বাহিরের ঠান্ডা শীতল হাওয়া তানহার সারা শরীরে এসে ছুঁয়ে যায়। তবে এ ছুঁয়ে যাওয়া যে তানহার মনে শান্তি বিরাজের জন্য নয়। এ ছুঁয়ে যাওয়া যে তানহার মনের ভেতরে জমিয়ে রাখা কষ্টগুলোকে ক্ষতবিক্ষত করে নতুন ভাবে মাথা চাড়া দেয়ার জন্য। কারণ এ শীতল হাওয়ার সাথেও যে জড়িয়ে রয়েছে তিহানের সাথে সময় কাটানোর বহু স্মৃতি। আর কিছু মনের অগোচরে বুনা স্বপ্ন।
তবে তানহার জন্য সে সব স্বপ্ন যে শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল। আজকের পর থেকে তিহান যে তার হবার নয়। তিহান যে শুধুই অতীত। যে অতীত কখনো ভবিষ্যৎ হবার নয়। আর অতল যে তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। যাকে অস্বীকার করা তানহার সাধ্যের ভেতর নয়। তাই মনে মনে ভাবল,
” যাকে তার পক্ষে অস্বীকার করার মতো নয়, তাকে তানহা কি করে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে? সে চাইলেও যে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অতলের যে তার প্রতি সেই অধিকার রয়েছে। হয়তো মানবতার খাতিরে আজ তাকে অতল সময় দিয়েছে। তবে কাল… কাল কি সময় দিবে? কাল যদি সে তার অধিকারের জোরে পুরুষত্ব ফলাতে আসে! তখন…তখন কি তানহা পারবে তার সম্মান রক্ষা করতে? হয়তো পারবে আবার হয়তো পারবে না। ”
.
বেশ খানিকটা সময় ধরে তিহানের রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে অতল। তবে তিহানের কোনো সাড়াশব্দ নেই। অতলের বেশ চিন্তা হচ্ছে কিন্তু, অতল দরজার জোরে ধাক্কাতে চেয়েও পারছে না। যদি বাবা মা দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে চলে আসে সে ভয়ে! তাই আস্তে করেই দরজা ধাক্কাচ্ছে অতল কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। অতল ধীরে ধীরে নিজের হুশ হারিয়ে ফেলছে ভয়ে। তার ধাক্কানোর ধরন ও গলার আওয়াজ জোরে হতে হতে এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, অতলদের পাশের বাড়ির মানুষও হয়তো সেই আওয়াজ শুনে দৌড়ে চলে আসবে। দু’হাত দিয়ে সমানে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে অতল আর উত্তেজিত গলায় বলছে,
” তিহান ! তিহান ! শুনছিস আমার কথা? এই তিহান….! তিহান ! দরজাটা খুলে দেয় না ভাই। আমার যে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে বুঝতে পারছিস না? আমার হাত পা কাঁপছে ভাই। প্লিজ দরজাটা খোল। ”
অতল চিৎকার করে এই ক’টা কথাই বলে যাচ্ছে বারবার। কিন্তু তিহানের কোনো পাত্তা পাচ্ছে না। ভয়ে তার হাত পা ক্রমশ অবশ হয়ে আসতে থাকে। আর পারছে না সে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে। তার ধৈর্য্যের বাঁধ যে ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এলোপাথাড়ে ধাক্কাতে থাকে অতল। তার শরীরের যতটুকু শক্তি ছিল সবটুকু দিয়ে সে চেষ্টা করেছে দরজা ভেঙে তার ভাইয়ের কাছে যেতে। তার হাত দুটো লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে। অতল মনে মনে ভাবলো,
” এভাবে দরজা ধাক্কালে যে হবে না। কিছু একটা করতে হবে তাকে। এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট করেছে সে তবে আর না। এবার যা করার দ্রুত করতে হবে তা না হলে হয়তো তাদের বিরাট বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ”
সে দৌড়ে গেল নিচের স্টোর রুমে। স্টোর রুমে যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে। সেখান থেকে একটি লোহার রট হাতে নিয়ে দৌঁড় এলো অতল। দরজার সামনে এসে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে সমানে দরজায় বারি দিতে থাকে। তাতেও কোনো লাভ হয় না তবে ক্ষানিকটা গর্ত হয় দরজার এক কোণে। হুট করে অতলের মনে হলো মিরাজ কাকার ঘরে তো ড্রিল মেশিন আছে। ক’দিন আগেই সে কিনেছিল তার বাড়িতে নেবার জন্য। আর তাদের দরজাও কাঠের। তাই ড্রিল মেশিন দিয়ে সহজেই কিছু অংশ কাটা যাবে। হাতে থাকা রট টি মেঝেতে রেখে দৌঁড়ে যায় সিঁড়ির দিকে। আর চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
” মিরাজ কাকা! মিরাজ কাকা! ধ্যাত… কোথায় গেল এই মুহূর্তে? এই মিরাজ কাকা! ”
” অতল বাবা ডাকছ আমায় ? ”
” কোথায় গিয়েছিলেন ? সেই কখন ধরে ডাকছি। ”
” আসলে হয়েছে কি…”
” কি হয়েছে সেটা পড়ে বলুন। আগে আপনি আপনার ঘর থেকে ড্রিল মেশিন নিয়ে উপরে তিহানের ঘরের দিকে আসুন।”
” ড্রিল মেশিন নিয়ে তিহান বাবার ঘরের দিকে…. আমি ঠিক বুঝলাম না তোমার কথা। ”
” আপনাকে বুঝতে হবে না। আপনাকে যা বলা হয়েছে শুধু সেটাই করুন। ”
এদিকে বড় ছেলে অতলের ভয়ার্ত কন্ঠে চিৎকার করে কথা বলার আওয়াজ শুনে ঘরে থেকে বেরিয়ে আসে বাবা আনিস খন্দকার ও মা মরিয়ম বেগম দু’জনেই।
অতলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” কি হয়েছে অতল ? তুই এতরাতে নিজের ঘরে বিশ্রাম না নিয়ে তিহানের ঘরের সামনে কি করছিস ? ”
এদিকে মরিয়ম বেগম বড় ছেলে অতলকে নিজের বাসর ঘর ছেড়ে ছোট ছেলে তিহানের বন্ধ দরজার সামনে অস্থির মনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,
” ভেতরে.. ভেতরে কে আমার তিহান? ও কখন এসেছে? ও আমার সাথে দেখা করেনি কেন? আর ও ভেতরে থাকলেও হয়তো ঘুমোচ্ছে তুই ওর ঘুম নষ্ট করে দরজা কেন ভাঙছিস? ”
” জানি না মা, আমি কিচ্ছু জানি না। তবে ও যে ঘুমোচ্ছে না সেটা আমি জানি। অনেকবার দরজা ধাক্কা দিয়েছি কিন্তু তিহানের যে টু শব্দটি পাচ্ছি না। ”
অতল মা’কে কথাগুলো বলার মাঝেই মিরাজ কাকা এসে পড়লেন। বললেন,
” অতল বাবা এই নাও ড্রিল মেশিন। ”
মিরাজ কাকার মেশিন আনতে দেরি হলেও অতলের মেশিনটি হাতে নিতে সময় লাগেনি।
দরজার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ছিটকিনি বরাবর ছিদ্র করতে লাগল অতল। প্রায় একহাত যাওয়ার মতো চারকোনা আকারে ছিদ্র করেই ড্রিল মেশিন রেখে দেয়। দরজা থেকে আলাদা হওয়া কাঠের চারকোনা অংশটি বের করে মেঝেতে রাখে তারপর অতল নিজের ডান হাত ছিদ্র দিয়ে ডুকিয়ে ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি খুলে দরজা ঠেলে ঢুকতেই সবার দম যায় যায় অবস্থা।
রুমের ভেতরে থাকা তিহানের অবস্থা দেখে মরিয়ম বেগম এক চিৎকার দিয়ে সেই মুহুর্তেই অতলের গায়ে ঢলে পড়ে যায়।
আনিস খন্দকার বুকে হাত দ্রুত শ্বাস নিতে শুরু করেন। তার কষ্ট হলেও সেই কষ্টকে সে প্রাধান্য না দিয়ে ছোট ছেলে তিহানের কাছে যান। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে। বাস্তবে তো এরকম ঘটনা অনেক দেখেছেন সে। তবে সে এটা ভাবতে পারেনি বেঁচে থাকতে তারই পরিবারে তারই কোনো সন্তানের এরকম অবস্থা নিজের এ দুচোখ দিয়ে দেখতে হবে। তাও আবার ছোট থেকে বড় করে যুবক ছেলের তালিকায় নাম দেবার পর।
.
.
চলবে….