অন্যরকম তুই পর্ব ১৫

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃDoraemon
অহনার শরীর ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকে। এতটাই দূর্বল হতে থাকে যে অহনার শ্বাস নিতেও কস্ট হয়। অনন্ত কলেজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পর ক্লাসের কোনো ছেলে-মেয়েই অহনার সাথে কথা বলে না। কেমন যেন এড়িয়ে চলে এবং বাজে ব্যবহার করে। কলেজের শিক্ষকরাও অহনার প্রতি ধীরে ধীরে প্রচুর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আজ কলেজে অহনা পড়া পারে নি বলে কলেজের শিক্ষক অহনাকে সবার সামনে অনেক বকাঝকা করে। বকাঝকাগুলো অহনার বুকে কাঁটার মতো বাঁধে৷ ধীরে ধীরে সবার অবহেলার স্বীকার হচ্ছে অহনা৷ আগে তো সবাই অহনাকে অবহেলা করতই এখন যেন আরও বেশি বেশি করে অবহেলা করে। কলেজ ছুটি হওয়ার পর আজ অহনা অনন্তকে কোথাও দেখতে পেল না৷ অনন্তকে কোথাও দেখতে না পেয়ে অহনার মনে শূন্যতা অনুভব হতে লাগল। অহনা মনে মনে বলল
–আজ দানব স্যারটা আসল না কেন? অন্যসময় তো আমাকে বিরক্ত করতে, অনেক জ্বালাতন করতে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আজ কোথাও তাকে দেখতে পাচ্ছি না! আর আমিও না কিসব ভাবছি! মানুষ স্বভাবতই পরিবর্তনশীল। মানুষ বদলাতেও সময় লাগে না। তাই আজ থেকে উনিও হয়তোবা আর আমাকে বিরক্ত করবেন না। আমিও তো তাকে কম অপমান করি নি। আসলে আমার মতো পঁচা মেয়েকে কেউই ভালোবাসে না।
অহনা রাস্তায় হাঁটছে। রাস্তায় হাঁটার সময় অহনার বুকে অসম্ভব ব্যথা করছে। অহনার মাথাটাও ভীষণ ঘুরছে। অহনা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে কেউ ওকে ধরে ফেলে। অহনা চোখটা অল্প উপরে তুলেই অহনার মনটা অজানা খুশিতে ভরে উঠল৷ অহনা অস্পষ্ট কন্ঠে বলল
–স.. স.. স্যার।
অহনার চোখটা মুহূর্তের মাঝেই বন্ধ হয়ে গেল। অনন্ত অহনার শরীরে হাত দিয়ে দেখল অহনার জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। অহনার মুখটাও কেমন শুকিয়ে আছে৷ চোখের নিচেও কালি পড়ে গেছে।এটা অনন্তের বুকের ভিতর কেমন ভয় কাজ করতে লাগল। অনন্ত অহনার গাল ধরে চিন্তিত স্বরে অহনাকে একনাগারে ডাকতে লাগল
–অহনা এই অহনা তোর কি হয়েছে?! কথা বলছিস না কেন?! এই অহনা চোখ খুলে আমার দিকে তাকা? দেখ তোর অনন্ত স্যার এসেছে? কি হলো কথা বলছিস না কেন? আমার উপর অভিমান করলি বুঝি?
অনন্ত বুঝতে পারল অহনা জ্ঞান হারিয়েছে। অন্তত অহনাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেখানে অহনাকে চেকআপ করে ডাক্তার অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–রোগী আপনার কে হয়?
অনন্ত কোনো কিছু না ভেবেই ডাক্তারকে বলল
–ও আমার স্ত্রী। ও আমার জীবন মরণ সব। প্লিজ ডাক্তার বলুন অহনার তেমন কিছু হয় নি তো?
ডাক্তার বেশ গম্ভীর গলায় অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনার ওয়াইফের জ্ঞান হারিয়েছে কারণ উনি দীর্ঘ দিন যাবত হার্টের দূর্বলতায় আক্রান্ত। তারওপর উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি সারাদিন চিন্তায় থাকেন। তাই উনার হৃদস্পন্দন ধীরে ধীরে কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আপনার ওয়াইফ যেকোনো সময়ই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারেন।
ডাক্তারের কথা শুনে অনন্ত ডাক্তারের কলার চেপে ধরে বলল
–আমার অহনার কিছু হবে না। আর একবার যদি আমার অহনাকে নিয়ে আপনি উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন তাহলে আপনাকে এখানে পুতে দিতে আমার দু মিনিটও লাগবে না। আমি বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যান আরমান আহমেদের একমাত্র ছেলে অনন্ত আহমেদ এবার নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন আমাকে? আমি চাইলে সব করতে পারি। খুন করতেও আমার হাত একবারও কাঁপবে না
ডাক্তার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
–স্যা স্যার স্যার আপনি? আপনাকে আসলে আগে চিনতে পারি নি। আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার।
–আমার অহনাকে মরে যাওয়ার কথা বলার আগে হাজার বার ভেবে বলবেন। আমার স্ত্রীর কিছু হতে পারে না। বুঝতে পেরেছেন আপনি?
অনন্তের চিতকার করা কন্ঠে ডাক্তারের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। নার্সরাও ভয়ে রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি করছে।
অনন্ত অহনাকে বেড থেকে কোলে তোলে নিয়ে চলে গেল। নার্সরা ভয়ে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার উনি কে ছিলেন?
— শুনতেই তো পেলে কে ছিল! আর সবচেয়ে ভয়ংকর রাগী যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে তা হলো অনন্ত আহমেদ। শুনেছিলাম খুব কম বয়সে বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে বাবার বিজনেস না সামলে চাকরি করছিলেন। একদম অবাধ্য ছেলে যাকে বলে। মা -বাবার কথাও উনি শুনেন না। উনার ভয়ে এলাকাও কাঁপে। আমি উনাকে আগে চিনতে না পারলেও এখন হারে হারে চিনেছি!
নার্সরা আবারও বলে উঠল
–কিন্তুু যতই রাগী ভয়ানক হোক না কেন উনি কিন্তুু দেখতে হেব্বি সুন্দর। কিন্তুু উনার স্ত্রী কত লাকি হয়েও এখন অসুস্থতায় ভুগছে।
অনন্ত অহনাকে গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে অনন্তের নিজের বাসায়। অনন্ত অহনাকে তার পাশের সিটে বসিয়েছে। অহনার এখনো জ্ঞান ফিরে নি। অনন্ত অহনার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তুু গাড়ি চালানোতে বেশি মন না দিয়ে অনন্ত অহনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনন্তের চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ছে সেটা অহনা এখন দেখতে পারছে না। অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–আমাকে ছেড়ে তুই চলে যেতে চাইছিস অহনা?! কিন্তুু আমি তোকে আমার কাছ থেকে কোথাও যেতে দিব না। তোকে ছাড়া আমি কি করে বাঁচব? বেঈমান মেয়ে এত ভালোবাসি তোকে তবুও তুই বুঝিস না। তোকে এবার থেকে আমি আমার কাছেই রাখবো। আমার কাছ থেকে কোথাও যেতে দিব না তোকে। তুই চাইলেও তোকে আমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে দিব না। তোর মরণকেও আমি মেরে ফেলব। দরকার হলে আমি নিজে মরব কিন্তুু তোকে মরতে দিব না।



#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here