অন্যরকম তুই পর্ব ১৬

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত অহনাকে অজ্ঞান অবস্থায় কোলে করে নিজের বাসার ভিতর প্রবেশ করলে অনন্তের মা তা দেখে অবাক হয়ে যায়। অনন্তের মা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বাবা তুই এ মেয়েটাকে কোথায় পেলি?
–মা ও তোমার ছেলের হবু বউ। আমি ওকে ভীষন ভালোবাসি। তাই বাসায় নিয়ে আসলাম। অহনা আমার ঘরেই থাকবে।
অনন্তের কথা শুনে অনন্তের মা অবাক হলো। অনন্তের মা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কিন্তুু মেয়েটা এভাবে অজ্ঞান হয়ে আছে কেন? ওকে এনেছিস ভালো কথা কিন্তুু ওর বাড়ির লোকের কাছে বলে নিয়ে এসেছিস তো?
–আমার অহনাকে নিয়ে আসতে আবার আমার কারও পারমিশন নেওয়ার লাগবে?! সেটা আমি মেনে নিতে পারব না মা। আমি তোমার সাথে পড়ে কথা বলব।
এটা বলেই অনন্ত অহনাকে কোলে নেওয়া অবস্থায় সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে নিজের বিছানায় অহনাকে শোয়াল।
অনন্ত অহনার পাশেই বসে আছে।
অনন্ত মনে মনে বলল
–আমিও দেখে নিব তুই আমাকে ছেড়ে কোথায় পালিয়ে যাস। আমি তোকে সুস্থ করে তুলবোই অহনা। তোর কিছু হতে পারে না। তোর পরিবার তোর যত্ন নিতে পারে নি। যদি যত্ন নিত তাহলে তুই ধীরে ধীরে এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তি না। আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস না। কিন্তুু আমি যে তোকে ভালোবাসি। তাই যদি আমাকে জোর করে হলেও তোকে আমার কাছে রাখতে হয় তাহলে আমি সেটাই করব।
কয়েকটা ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পর অহনার ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরল। অহনা চোখ খুলে সামনে তাকিয়েই অনন্তকে দেখতে পেল।
আজ অহনা অনন্তকে দেখে একটও রাগ করছে না। শুধু অপলক দৃষ্টিতে অহনা অনন্তের দিকে তাকিয়ে আছে। অনন্ত একটা শুকনো হাসি দিয়ে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অহনা শুয়া থেকে উঠে বসতে চাইলে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–খবরদার এখন উঠবি না। একটু বিশ্রাম কর। তারপর আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
অনন্তের কোনো কথা না শুনে অহনা খুব কস্ট করে শুয়া থেকে উঠে বসল। অনন্ত রেগে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি যে বললাম আরেকটু বিশ্রাম নিতে সেটা কি তোর কানে গেল না?
অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি বাসায় যাব। আমাকে বাসায় পৌছে দিবেন স্যার? ঐদিকে আমার মা-বাবা খুব চিন্তা করবে।
–তুই কোথাও যেতে পারবি না অহনা। আজ থেকে তুই আমার বাসায় থাকবি এবং আমার ঘরেই তুই থাকবি। আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি অহনা তুই সারাদিন আমার কথা ভেবেই নিজের এই হাল বানিয়েছিস। আমি সামনে থাকলে তুই আর আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করবি না। তাই যতদিন না তুই সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হবি ততদিন তুই আমার বাসায় আমার সাথে এই রুমেই থাকবি। আমি আংকেল আন্টি কে বলে দিব তুই কয়েকটা দিন আমার সাথে থাকবি। তাহলে আর ওরা তোর জন্য চিন্তা করবে না।
অনন্তের কথা শুনে অহনা ভয়ে ঢুক গিলল। অহনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–মানে কি স্যার? আমি আপনার সাথে একই ঘরে থাকব?! না না না আমি আপনার সাথে এখানে থাকব না। আমি বাসায় যাব। আপনি আমাকে বাসায় পৌছে না দিলে আমি একাই যাব।
অনন্ত এবার খুব জোরে ধমক দিয়ে অহনাকে বলল
–চুপ! একদম চুপ! তুই কোথাও যাবি না। আর হ্যা চিন্তা করিস না। আমি এতটাও খারাপ ছেলেও নই যে তোর সাথে খারাপ কিছু করতে যাব। এবং যদিও তুই পালানোর চেষ্টা করিস তাহলে তোর যে কি হাল আমি করব তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না। তুই এখানে বস। আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
অনন্ত চলে যেতে নিলে অহনার মনটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। অহনা নিঃশ্বাস নিতে কস্ট হতে থাকে। হঠাৎই অহনা অনন্তের ডান হাত নিজের দু হাত দিয়ে চেপে ধরে। অনন্ত অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে নিজের হাতের দিকে লক্ষ্য করে দেখল অহনা তার হাত ধরে রেখেছে। অনন্ত একটু অবাকই হলো। কারণ অহনা অনন্তকে স্পর্শ করা তো দূরের কথা, অহনা সবসময় অনন্তকে দেখলেই এড়িয়ে যেত। অনন্ত আবার পেছনে ফিরে অহনার কাছে এসে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটু মুচকি হেসে অনন্ত অহনাকে বলল
–কি হয়েছে তোর? এভাবে আমাকে যেতে আটকালি কেন? তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি। না খেলে যে তোর শরীর খারাপ করবে।
অহনা হঠাৎই অনন্তকে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ এভাবে অহনা জড়িয়ে ধরায় অনন্ত খুব অবাক হলো। অহনা অনন্তকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে লাগল।অহনার চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ছে৷ হঠাৎই অহনা এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকায় অনন্তের বুকের ভিতরটা কস্টে তোলপাড় হতে লাগল। কেউ যেন অনন্তের বুকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে এমন অনুভব অনন্তের হতে লাগল। আজ প্রথম নিজে অহনা অনন্তকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তুু অনন্ত মনে মনে বলল
–মেয়েটা এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে কেন? ওর কান্না যে আমি সহ্য করতে পারি না!
অনন্ত অহনাকে ছাড়াতে গেলে অহনা আরও শক্ত করে অনন্তকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। অনন্তও অহনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অনন্ত একহাতে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো এভাবে কাঁদছিস কেন? তোর কান্না আমার অসহ্য লাগে। একদম সহ্য করতে পারি না। কান্নাটা থামা বলছি৷
অহনা তবুও কেঁদেই যাচ্ছে। অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। অহনার শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে সেটা অনন্ত অহনাকে জড়িয়ে ধরে স্পষ্ট বুঝতে পারছে। অনন্ত এবার ধমক দিয়ে অহনাকে বলল
–কি হলো কাঁদছিস কেন? তোর কান্না আমার ভালো লাগছে না।
অহনা এবার কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আচ্ছা আমি কেন না চাইতেও সারাদিন আপনার কথা চিন্তা করি বলতে পারবেন? আমার সকাল থেকে রাত আর রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে যায় শুধু আপনার কথাই ভাবতে ভাবতে। আজকে আপনাকে কলেজের সামনে না পেয়ে আমার এত কস্ট কেন হচ্ছিল? আপনার কথা চিন্তা করলে আমার হৃদপিন্ড এত দ্রুত চলে কেন? আচ্ছা আমি যদি একদিন আপনার কথা ভাবতে ভাবতে মরে যাই তাহলে কি আপনি আমায় ভুলে যাবেন? আপনি নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিবেন তাই না? আর আমার কথাও সারাজীবনের জন্য ভুলে যাবেন৷
অনন্তের চোখ জলে ঘোলাটে হয়ে গেছে। যেকোনো সময় টপ করে জল গড়িয়ে পড়বে। কিন্তুু বহু কস্টে চোখের জলগুলো অনন্ত নিজের চোখের মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।
অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলল
–কি হলো কিছু বলছেন না কেন? আমি মরে গেলে আমাকে আপনি ভুলে যাবেন তাই না? তারপর অন্য কাউকে ভালোবাসে বিয়ে করে ফেলবেন ঠিক বললাম তো?
অনন্ত অহনাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে খুব কষিয়ে অহনার গালে ঠাসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। অহনা ছিটকে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল৷ অনন্ত রেগে চিতকার করে অহনাকে বলল
–তোর মরার খুব শখ হয়েছে তাই না? তাহলে ভালো করে শুনে রাখ তুই মরার আগে প্রথমে আমাকে নিজ হাতে মেরে তারপর নিজে মরবি৷ কারণ তোর মৃত্যুটা আমি সহ্য করতে পারব না৷ তুই বুঝতে পেরেছিস আমি তোকে কি বললাম?



#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here