#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত অহনাকে তার বাসায় পৌছে দিল৷ এবং ঠিক সেদিনই অনন্ত কলেজে গিয়ে তার শিক্ষক পেশাটা ছেড়ে দিল। প্রিন্সিপাল অনন্তকে অনেক জোর করেছিল চাকরিটা না ছাড়তে কিন্তুু অনন্ত শুনে নি। প্রিন্সিপাল ছিল অনন্তের বাবার ভালো বন্ধু। সব স্যারদেরও অনন্তকে চাকরিটা ছাড়তে নিষেধ করে কিন্তুু অনন্ত কারও কথা শুনল না। অনন্তের চাকরি ছাড়ার সংবাদ শুনে অধিকাংশ মেয়েই কেঁদে দিল। কারণ তারা অনন্তকে ভীষণ ভালোবাসত৷ অনন্তের বাবার কাছে প্রিন্সিপাল খবরটা দিল যে অনন্ত চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। অনন্তের বাবা খুশি কারণ এখন সে ছেলেকে ব্যবসার সবকিছু বুঝিয়ে নিজে আরাম করবে। আজ অনন্তকে বেশ মুক্ত লাগছে। বাসায় গিয়ে অনন্ত বেডরুমের সোফায় বসে পড়ে। আজ অনন্তের মনটা খুব হালকা লাগছে। হঠাৎই অনন্ত পাগলের মতো হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে অনন্ত নিজে নিজেই বলতে লাগল
–আমি জানি অহনা তুই আমাকে এখনোও মন থেকে মেনে নিতে পারিস নি। আমার ভালোবাসার পরীক্ষা চাইছিস তুই। দেখ অহনা আজ আমি আমার শখের পেশাটাও তোর জন্য খুব অনায়াসেই ছেড়ে দিলাম। কারণ বড্ড ভালোবাসি যে তোকে। কি করব আমি বল আমি যে নিজের ভালোবাসাটা ঠিক করে প্রকাশ করতে পারি না। তাই নিজের অজান্তেই তোকে ভয়ংকর শাস্তি দিয়ে নিজেকেই এর থেকেও ভয়ংকর শাস্তি দিতাম। যদি কোনো একদিন আসে যে তুই আমার জীবনটা চাস আমি তোকে আমার জীবনটাও দিয়ে দিতে পারব। কিন্তুু তোকে আমি আমার কাছ থেকে কখনোও দূরে যেতে দিব না। তুই চাইলেও আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবি না অহনা। একমাত্র আমার মৃত্যু হলে তুই আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবি তার আগে না।
তারপর অনন্ত কাঁদতে লাগল।
অনন্তের মা দরজার আড়াল থেকে সব শুনে ফেলল। অনন্তের মা ভিতরে এসে অনন্তের মাথায় হাত রাখল। অনন্তের মা অনন্তকে দেখে চমকে উঠল। তারপর তাড়াতাড়ি অনন্ত নিজের চোখের পানি মুছে নিল। অনন্তের কান্না দেখে অনন্তের মায়ের চোখেও পানি। অনন্তের মা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বাবা তুই কাঁদছিস কেন? একটু আগে খবর পেলাম তুই নাকি তোর চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিস? কেন করলি তুই এটা?
অনন্ত একটা হাসি দিয়ে অনন্তের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–মা তুমিও না কি যে বল! আমি এবার থেকে বাবার বিজনেসটায় দেখাশোনা করব। বাবার এতগুলো বিজনেসের চাপ বাবা কি একা সামলাতে পারে! তাই তো নিজে থেকে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। এবার থেকে বাবার ব্যবসার কাজে আমি খুব মন দিব।
–কিন্তুু আমার তো এটা মনে হচ্ছে না বাবা। তুই তো তোর বাবার টাকায় চলতে চাস নি। তুই তো নিজের পায়ে দাঁড়াবি বলেই তোর পছন্দের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করলি। তাহলে হঠাৎই তোর বাবার বিজনেসের কাজে! আমার ব্যাপারটা কেমন সন্দেহ লাগছে। তুই কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস? বল না বাবা কি হয়েছে? মাকে বলবি না?
–মা আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত।
অনন্তের মা অনন্তকে আর কিছু না বলে চলে গেল। অনন্ত আবারও হাসতে লাগল। পাগলের মতো হাসতে লাগল। অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–কেন আমার সাথে তুই ছলনা করছিস অহনা? আমি এতটাও বোকা নই যে তোর ছলনা ধরতে পারব না। তুই আমার কাছ থেকে মুক্তি পেতেই আমাকে কলেজ থেকে বিদায় করাতে চাইলি। কিন্তুু তুই জানিস না এই অনন্ত তোর জন্য সব করতে পারে। আর এটাতো সামান্য একটা চাকরি! আমার মনে তো আমি সেদিনই তোকে জায়গা দিয়েছি যেদিন আমি তোকে প্রথম দেখেছি। ভালোবাসাটা না বড়ই অদ্ভুত একবার মনে আসলে সেটা আর সহজে মন থেকে যায় না।
অনন্ত একটা গিটার নিয়ে মনের ভিতর থেকে গান গাইতে থাকে
“🎶আমার মনের মাঝে এসেছিস যে তুই,, কিভাবে নিজের থেকে দূরে রাখব তোকে 🎶
🎶হৃদয়ের ভিতর, গহীন মাঝে,,
রেখেছি যে আমি তোকে যতন করে🎶
🎶ভীষণ ভালোবাসি তোকে,,ভালোবাসি তোকে🎶
🎶আমার কাছে যে অন্যরকম তুই,, আমার মনের খাঁচায় রাখবো তোকে,, নিজের কাছ থেকে কখনো তোকে দূরে যেতে দিব না🎶
🎶শেষ নিস্বাস অবধি ভালোবেসে যাবো তোকে,, একদিন তুই বুঝতে পারবি আমি কি ছিলাম🎶
🎶আমার কাছে যে সবার থেকে আলাদা তুই,, একদম অন্যরকম তুই🎶
🎶তোর দু চোখে তাকালে আমি নিজের শান্তি খোঁজে পাই🎶
🎶আমার কাছ থেকে তোকে কখনো দূরে যেতে দিব না🎶
🎶আমার কাছে অন্যরকম তুই,, সবার থেকে তুই অন্যতমা🎶
অনন্ত অহনার একটা ছবি বুকে নিয়ে নিজের অজান্তেই চোখের জল ফেলে ঘুমিয়ে পড়ল৷
ঐদিকে অহনা বাসায় এসে নিজের রুমের ঘরের দরজা বন্ধ করে মনের আনন্দে নাঁচানাঁচি করছে। অহনার কাছে খবর আসে অনন্ত চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। অহনা হাসতে হাসতে চিতকার করে বলতে থাকল
— আমি পেরেছি ঐ শয়তান দানবটার হাত থেকে মুক্ত হতে। এখন কলেজে কেউ আমাকে অপমান করবে না। কেউ আমাকে আর জালাতন করবে না। হা হা হা ঐ শয়তান দানবটা কত বোকা! কি করে দানবটা বিশ্বাস করল যে এত অপমানের পর আমি তাকে ভালোবাসব! এ জীবন থাকতেও কোনোদিন আমি ঐ দানবটাকে ভালোবাসব না। কোনোদিনও না।
।
।
।
#চলবে…
[আমার গল্পে প্রেম,ভালোবাসা, কস্ট, বেদনা সব থাকবে🙂। গল্পটা সবার কেমন লাগছে বলবেন😉]