অবন্তর আসক্তি পর্ব ১১+১২

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১১
#Sharmin_Akter_Borsha
___________
দেখতে দেখতে দিন কিভাবে পার হয়ে যায় ভাবাই যায় না। কয়েকদিন আগেও যার সাথে কথা বলার জন্য আমি হম্বিতম্বি করতাম, আজ তার সাথে কথা বলার জন্য আমার কোনো হতচকিত করতে হয় না।
আমার অভ্র ভাইয়ের উপর একটা অধিকারবোধ জন্মে গেছে সেটা আমি ঢের বুঝতে পারি, কিন্তু অধিকার টা কিসের সেটা অজানা। তবে তার সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে তার সাথে সময় ব্যয় করতে আমার ভালোলাগে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। সে যখন কথা বলার মধ্যে ফিক করে হেঁসে ফেলে তখন সে হাসি দেখতে আমার ভালোলাগে। সে ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে তাকায় তখনও আমার তাকে দেখতে ভালো লাগে। সে যখন হুট করেই আমার অতি কাছে এসে দাঁড়ায় তখন আমার হৃৎস্পন্দন তিব্র গতিতে বিট করে।
সে যখন কথা বলার মাঝে কথা হারিয়ে ফেলে কপাল চুলকায় তখনও তাকে আমার ভালো লাগে।
মোট কথা সম্পূর্ণ মানুষ টাকেই আমার ভালো লাগে। সময়ের সাথে সাথে সে জেনো আমার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে, ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমার চোখ শুধু তাকেই দেখতে চায়, আমার মন শুধু তার কথাই ভাবে, আমার কান জেনো শুধু তার শীতলাকন্ঠই শুনতে চায়।
________
সাত দিন পর,
নিজের প্রশংসা কিভাবে আদায় করে নিতে হয় অভ্র ভাইয়া খুব ভালো করেই জানে…

পুরো ৩ঘন্টা গাড়িতে ঘুরার পর যখন খিদে লেগেছে প্রকাশ করলাম তখন Slow motion এ গাড়ি ব্রেক করল মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে চোখ দু’টো গোলগোল করে মুখে হাল্কা মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল…

” বর্ষা তোর পেট ভরাতে কি আমার বেশি টাকা লাগবে বল? কত টাকাই বা খাবি! তুই বল তোকে কখনো খাওয়ার জন্য বারণ করছি যখন যা বলছিস তাই তো এনে খাইয়েছি বল আমি কি কিপ্টা কখনো কিপ্টামি করছি? ”

বেশ কিছুক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম ভেতর থেকে এক দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসল।

এখন কারো চোখের দিকে তাকিয়ে এত মানুষের সামনে তাকে কি আর কিপ্টা বলা যায়। চোখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম জানালা দিয়ে বাহিরে এক নজর তাকিয়ে আবারও ওর চোখের দিকে তাকিয়ে জিব দিয়ে হাল্কা ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বললাম।

” নাহহহ… তুমি কিপ্টা হতে যাবে কেন তুমি তো উদার! ”

কথাটা বলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
আরও ২ঘন্টা ঘুরলাম কিন্তু আমার অভ্র উদার ভাইয়া খাওয়ানোর সময় পায় নাই….!
সবার হাতে চিপস আর আইসক্রিম ধরাই দিছে

নিজের প্রশংসা নেওয়া শেষ কিপ্টামি দেখানো শুরু করল।

অভ্র ভাইয়ার মতো এমন কিছু প্রশংসা বাদী মানুষ থাকে যারা নিজেদের প্রশংসা নিজেরাই করে।
কিপ্টুস…..৪ঘন্টা পেটে খিদে নিয়ে ঘুরলাম আর নিজেকে কিপ্টা দাবি করেন না তিনি…

অতিরিক্ত রাগ নিয়ে নিয়ে গাড়ির ডোর খুলে বের হলাম। ঠাসস করে লাগিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলাম। আমার চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ম্যাজাজ টাই পুরো খারাপ করে দিয়েছে। রুমে এসে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলাম বাথরুমে ফ্রেশ হতে, দীর্ঘ সময় শাওয়ার নেওয়ার পর টাওয়াল দিয়ে চুল পেচিয়ে রুমে চলে আসি। সারাদিনের ক্লান্তি ভোড় করেছো ঘুম পাচ্ছে খুব, ঘুমের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

ঘুম ভাঙ্গলো ঠিক সন্ধ্যায়, আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন জানালার থাই খোলা ছিল বলে রুমে সূর্যের আলো আসছিল, এখন সন্ধ্যা হওয়ায় রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিছানায় উঠে বসে এক হাত দিয়ে চোখ ঢলছিলাম। তখনই নজরে পরল রুমের মধ্যে সাদা সাদা কি জেনো একটা হাঁটছে, ভয় পেয়ে দিলাম এক ইয়া জোরে চিৎকার।
‘ আল্লাহ গো মা গো বাবা গো ভূত ‘
চেঁচাতে চেঁচাতে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামলাম। আমার চেচামেচি তে সেও দৌড়াতে শুরু করল সাথে আমিও লাফাচ্ছি এক পর্যায়ে সে আমার পায়ের উপর এসে পরল, আমি তো চিৎকারে জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা এত জোরে চিৎকার দিয়েছি যে বাড়ির সকলে ছুটে এসে দরজায় কড়া নাড়ছে৷ আমি অন্ধকারে দৌঁড়ে দরজা খুলে দেই৷ সামনে কে ছিল না দেখেই তার আষ্টেপৃষ্টের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি। ভয়তে আমার হাত পা কাঁপা-কাঁপি করছে। আমি যে প্রচুর ভয় পেয়েছি তা সকলে আমাকে দেখেই বুঝতে পারছে। সকলে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে? প্রতিত্তোরে কাঁপা কাপা গলায় বলি, ‘ রুমে ভূত ‘

সকলে রুমের মধ্যে উঁকি দেয়, পুরো রুম অন্ধকার তাই আম্মু গিয়ে রুমের লাইট অন করল। বিছানার উপর একটা সাদা বিড়াল বসে রয়েছে। লাইট অন হতেই, ‘ মেউ মেউ ‘ করে ডেকে উঠল।

বিড়ালের ডাক শুনে পেছনে ঘুরে দেখলাম। মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। আচমকা তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাতে গিয়ে নিজেই মেঝেতে পরে গেলাম। দাঁড়িয়ে থাকা আমার পরহেজগারি বোন ও ভাইরা ফিক করে হেঁসে দিলো। অস্ফুটস্বরে কোমড়ে হাত রেখে বলে ফেললাম, ‘ মরার বিড়াল ‘

রাগ দেখিয়ে উঠে দাঁড়ালাম সকলকে উপেক্ষা করে নিজের রুম থেকেই বেরিয়ে গেলাম।
পানি পিপাসায় গলা কাঠ হয়ে যাচ্ছিল। ছুটে আসলাম ফ্রিজের সামনে, নরমালে হাত না দিয়ে দিলাম ডিফে আহহ ইহা কি অবাক করা কান্ড একটা কোন আইসক্রিম দেখে প্রচুর হাসি পেলো। আইসক্রিম টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে আবারও জায়গা মতো রেখে দিলাম।

বুঝতে বাকি নেই রাগ কমানোর জন্যই আইসক্রিম এনেছে, যখনই রাগ অভিমান করি টুক করে আইসক্রিম এনে ফ্রিজে রেখে দেয়। কখনো আমি দেখি আবার কখনো দেখি না। যখন না দেখি তখন সামনে সামনে ঘুরবে আর ফ্রিজ নিয়ে কথা বলবে হুহহ।

কিন্তু এইবার আমি গলবো না সারাদিন ঘুরাইছে কিছুই খাওয়ায় নাই হার কিপ্টা বেডা একখান।
জীবনেও বিয়া হইবো না হুহহহহ, আমার অভিশাপ সবসময় কাজে লাগে।

বলার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ কি বললি তুই ‘

চোখ বড়সড় করে পেছনে তার মুখোমুখি হয়ে ঘুরে থমথমে হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে বিবৃত করতে করতে বললাম, ‘ আহহহ কখন আসছো তুমি ভাইয়া? ‘

‘ তুই যখন বদদোয়া করছিলি। কি বলছিলি আমার জীবনে বিয়ে হবে না? ‘

‘ এই রে আল্লাহ রে শুনে ফেলছে রে। ‘ (মনে মনে)

তারপর অভ্র ভাইয়া যা করলেন সবটা আমার ভাবনার অতিক্রম! সে একহাত দিয়ে আমার

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা করা নিষেধ)#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১২
#Sharmin_Akter_Borsha
_________
‘ সব কিছুর একটা লিমিট থাকে, পেয়েছে টা কি সে আমাকে? ‘ চেচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে নিলাম। এমন ভাবে চেচানো শুনে পুতুল আপু মুন্নী আপু ও তিন্নি আপু রুম থেকে বের হয়ে আসল। আমার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ কি হয়েছে? কে তোকে কি পেয়েছে? ‘

আমি উপর নিচ তাকিয়ে বেক্কেলের মতো প্রশ্ন ছুঁড়লাম, ‘ আমি কখন বলেছি আমাকে কেউ কিছু পেয়েছে? ‘

তিনজনে আঁড়চোখে একে অপরকে দেখে আবারও বলল, ‘ দুই মিনিট আগেই তো চেচিয়ে বললি। ‘

‘ আমি কিছু বলিনি তোমাদের তিনজনের কানে সমস্যা যাও ডাক্তার দেখাও, দুনিয়ার যতগুলা বয়রা সব আমার বংশেই আল্লাহ দিছেন ‘ বলে তাদের সামনে থেকে চলে গেলাম

‘ কি বলে গেলো? ‘ পুতুল আপু বলল।

‘ আমাদের বয়রার সার্টিফিকেট দিয়ে গেলো। ‘ মুন্নী আপু বলল।

‘ ও নিজে পাগল সেটা ও জানে? ‘ তিন্নি আপু বলল।

রুমে এসে ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম। কলেজ যেতে হবে আমার কোনো ভাবেই আজ কলেজ মিস করা যাবে না। রেডি হয়ে কলেজের জন্য বেরিয়ে পরলাম।

একাই আসতে হলো রিয়ার পেটে ব্যাথা তাই বাড়িতে রেস্ট নিচ্ছে। কলেজে এসেও শান্তি নেই একটু ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার আমার বান্ধপী গুলান (বান্ধবী গুলো) আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে। আরও একজন সে আজ কলেজে আসেনি।

নিঝুম: দোস্ত ওইদিন রাস্তায় তোর অভ্র ভাইয়া কে দেখেছি বুঝছিস বাইক কি স্পিডে চালিয়ে যাচ্ছি যা জোস লাগছিল না।

আমি ভ্রু কুঁচকালাম আড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম, ‘ বাইক চালাচ্ছিল আর তুই তাকে দেখে ফেলেছিস? তোর চোখ তো চিলের চোখের থেকেও একধাপ এগিয়ে। ‘

নিঝুম: আরে কি যে বলিস না তুই। আমি বাজারে গিয়েছিলাম আম্মুর সাথে তখন দেখলাম একটা ব্লাক পাঞ্জাবি পরা ছেলের ব্যাক। তো পেছন থেকেই দেখে এতটা ক্রাশিত লাগছিল কি বলবো। তাই আমি ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম মুখ টা দেখার জন্য, মিনিট কয়েকপর সে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে ঘুরলে আমি তাকে দেখে শূন্য ভাসতে লাগলাম। উনার চেহারা দেখে চিনলাম সে তোর অভ্র ভাই আর বলিস না যা কিউট রে কি বলবো আমি।

‘ হইছে হইছে তোর ন্যাকামি বন্ধ কর। ওই মোটামুটি একটু কিউট আর কি ‘

‘ কি বলিস দোস্ত এইসব? তুই তাহলে তাকে ভালো করে দেখিসই নি দেখলে নিশ্চয়ই ক্রাশ খেতি আল্লাহ সে এত কিউট? তুই জানিস তাকে দেখার পর আমার বুকের ভেতর চিলিক পেরে উঠেছিল। মাই লাভ মাই ক্রাশ ‘

ওর কথা আর হজম হচ্ছে না, তাই দুই হাত দিয়ে ওর চুল ধরে টান মারলাম। নিঝুম ব্যাথা পেয়ে, ‘মা গো ‘ বলে চেচিয়ে উঠল৷ স্যার ভ্রু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকালেন কন্ঠকঠোর করে বললেন,

‘ কত দিন বলছি তোমরা চারজন একসাথে বসবে না। তবুও কেন বসো? বের হয়ে যাও আমার ক্লাসরুম থেকে পুরো ক্লাস বাহিরে থাকবে। ‘

এমনিতেই মুড অফ তার উপরে বাঁচাল টার বকবক শোনার থেকে বাহিরে গিয়ে গাছের নিচে বসে বাতাস খাওয়াই ভালো। হনহনিয়ে বের হয়ে চলে আসলাম ক্লাস থেকে, বাহিরে এসেও শান্তি নেই। বাহিরে তীব্র রোদ তার উপরে ফাজিল অসভ্য মেয়ের অভ্র ভাইয়া কে নিয়া গুনগান আমার মাথা গরম করে ফেলছে।

স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেই আমরা তিনজন ঢুকে পরি। বিরক্তি নিয়ে ক্লাস শেষ করলাম।

কলেজ গেইটের সামনে এসেই চরম লেভেলের অবাক হলাম, চোখ জোড়া কপালে উঠে গেলো।
কলেজ গেইটের সামনে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অভ্র ভাইয়া পরনে ব্লু শার্ট, হাতা ফোল্ড করা, কালো প্যান্ট, চুলগুলো কপালের এক পাশে পরে আছে। হাতে মোবাইল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। আমি দেখিনি প্রথমে, দেখেছে নিঝুম ওর নজরে পরতেই চেচিয়ে উঠল, ‘ আরে আমার ক্রাশ ‘

নিঝুমের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনে তাকিয়ে দেখি উনি দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেখতে অবশ্য কিউট লাগছে তাতে আমার কি?
ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম তবুও সে দেখে ফেলছে।
পেছন থেকে ঢেকে বলল, ‘ বর্ষা দাঁড়া ‘

আমি ঠোঁট উল্টো করে দাঁত দিয়ে হাল্কা চাপ দিলাম। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেই। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে নিঝুমকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

‘ কোণ্থে কুত্তার ঘেউঘেউ আওয়াজ আসছে রে? ‘

দোমকা হাওয়ার মতো সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল, ‘ কি বললি তুই? ‘

অবাক হওয়ার মতো ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থেকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,

‘ জি আমাকে বলছেন? ‘

রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ তোকেই বলছি তুই আমাকে কুত্তা কেন বললি? ‘

‘ নিঝুম উনি কে? আর যেইহোক উনাকে বলে দে আমি কারো নাম ধরে বলিনি। আমি জাস্ট কুত কুত্তা বলেছি। আর উনি কি কুত্তা নাকি যে উনার গায়ে লাগছে? ‘

নিঝুম, ‘ দোস্ত ব্লু শার্টে যা জোস লাগছে না রে ‘
নেশালো কন্ঠে আমার কানে কানে বলল।
পেছনে তাকিয়ে ওর পায়ের উপর পা দিয়ে পাড়া দিয়ে ফুসতে লাগলাম। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে কিভাবে আমারই পেছনে আমারই কানে কানে তাকে সুন্দর বলে ননসেন্স। রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলে সে ডেকে বলল,

‘ আমি তোকে পিক করতে আসছি বাইকে উঠ ‘

‘ সকালে চুল ধরে টান মেরেছিলি মনে নেই। কিছুতেই তোর সাথে যাবো না। ‘

‘ কাল অব্ধি আপনি করে বলছিলি আর এখন তুই? ‘

নিঝুম আমাকে টেনে অভ্র ভাইয়ার সামনে থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে আসল কানে কানে আবারও বলল, ‘ দেখ দোস্ত আমার কলিজায় লাগে তুই কেন আমার ওর সাথে এমনে কথা বলছিস? ‘

আমি জেনো আকাশ থেকে পরলাম অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বের হয়ে আসল, ‘ তোর ও মানে? ও তোর কবে হলো? ‘

‘ যবে থেকে আমি ওকে দেখেছি ‘

‘ তুই চুপ করবি নিঝুম সকাল থেকে মাথা খেয়ে ফেলছিস ওই ঘুরেফিরে এক কথাই বলছিস। তোর ও না যা ওর কোলে গিয়ে বসে থাক। আর যদি তাও না হয় গিয়ে বল তোকে বাড়িতে ড্রপ করে দিতে আমার মাথা খাস না। ‘

বলে নিঝুম কে এড়িয়ে হাঁটতে লাগলাম। অসহ্য হয়ে গেছে কি আছে ওই ওর মধ্যে যার জন্য যেই দেখে সেই প্রেমে পরে যায় আজব। নিজের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলছিলাম। হঠাৎ মাথা তুলে রাস্তায় এক নজর তাকাতেই চোখ আঁটকে গেলো। সত্যি সত্যি অভ্র ভাইয়া নিঝুমকে বাইকের পেছনে তুলে বাইক স্পিডে চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকাতে জেনো আরও স্পিড বাড়ালো সাথে নিঝুম আমার উদ্দেশ্যে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো। রাস্তার মাঝে ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি, প্রচুর ম্যাজাজ খারাপ হলো, আমি যাইনি বলে কি আমার ফ্রেন্ড কে নিতে হবে নাকি? আমাকে আর দুই একবার বললেই আমি হয়তো রাজি হয়ে যেতাম। রাগ উঠে গেলো মাত্রারিতিক্ত, আমার মস্তিষ্ক আমাকে জানান দিচ্ছে আমাকেও কিছু একটা করতে হবে হার মানলে চলবে না৷ তখনই রাস্তায় আমার পাশে একটা বাইক এসে থামলো, চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকালাম। ছেলেটার গায়ের রং শ্যামল বর্ণের তবে ফেস কাটিং ওতো টা খেয়াল করিনি। একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। ছেলেটা আমার হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে বাইক স্লো টানছে, আমি কয়েকবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম লোকটার দিকে, খারাপ মনে হলো না তাই আমিও পাত্তা না দিয়ে জোরে পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলাম।

সে আমার সামনে বাইক থামিয়ে বলল, ‘ একা একা যাচ্ছেন চাহিলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি? ‘

আমার মস্তিষ্ক তখন শূন্য মাথায় ঘুরছে তখন অভ্র ভাইয়ার সাথে নিঝুম চলে গেছে। ছেলেটা ড্রপ করার কথা বলার পরপরই আমি কোনো কিছু না ভেবেই একটা অচেনা ছেলার সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলাম। আমি বাইকের পেছনে উঠে বসতেই উনি বাইক স্টার্ট দিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর খেয়াল করলাম আমাদের রাস্তার আনাচে-কানাচেতে কোথাও অভ্র ভাইয়া নেই।

বাড়ির সামনে এসে উনি আমাকে নামিয়ে দিলেন, আমি উনাকে কয়েকবার বাড়িতে আসতে বলেছি কিন্তু তাতে উনি দ্বিধা বোধ করলেন। বললেন, ‘ পরে একদিন সময় করে আসবো। ‘

আমিও মুচকি হেঁসে উনাকে বিদায় জানিয়ে গেইটের ভেতরে ঢুকলাম। দারওয়ান দাদাকে সালাম জানিয়ে চলে আসি।

সিঁড়ি দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে উঠছিলাম। সিঁড়ির উপর পা স্লিপ করে পরে যাই।

‘ বাবা গো ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠি, উপরের রুম থেকে আমার সবগুলো ভাইবোন বের হয়ে আসে। আমি পরে গেছি ছুটে এসে আমাকে তুলে উঠাবে তা না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবগুলো অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে। প্রচুর খারাপ লাগছে আমার পায়ে লাগা ব্যাথার জন্য না৷ আমি পরে গেছি ওরা হাসছে তা দেখেই।

চোখের কার্নিশে এক ফোঁটা অশ্রু জমাট বেঁধেছে। গড়িয়ে পরবে এমন সময় কারো শক্তপোক্ত হাতের হিচকা টানে দাঁড়িয়ে পরলাম। মাথা তুলে দেখবো কে সেটুকুও সময় পাইনি। সে আমাকে দাঁড় করিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে পাঁজাকোলে তুলে নিয়েছে।

সিঁড়ি দিয়ে উঠে সোজা আমার রুমে নিয়ে আসে। রুমের মাঝ বরাবর দাঁড় করিয়ে দেয়। পায়ে আমার এখনও টনটন ব্যাথা করছে। আমাকে ছেড়ে দিয়ে সে দরজা আটকিয়ে দিলো। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো, চোখাচোখি হতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চোখগুলো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। চোখ দিয়ে মানুষকে ধ্বংস করে দিবে এমন। আমি ভীতু কন্ঠে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বলল, ‘ ওই

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here