অবন্তর আসক্তি পর্ব ৯+১০

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_০৯
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_________
‘ S O R R Y ‘

ফ্যানটা অফ ছিল, তাই কাগজটা দিয়েই গায়ে বাতাস করছিলাম। ইচ্ছে করছিল কাগজটা ধুয়ে ধুয়ে পানি খাই। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় তাই আপাতত বাতাস খাচ্ছি। রুমের মধ্যে বৃষ্টি এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ বাড়ির পেছনের দিকটায় যা তোর জন্য অপেক্ষা করছে ‘

আমিও অস্ফুটস্বরে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম, ‘ কে অপেক্ষা করছে? আরে বলে তো যা কে অপেক্ষা করছে? ‘

কিছু না বলেই চলে গেলো, জানাই হলো না কে অপেক্ষা করছে এত সকালে আমার জন্য? বলে বিছানা থেকে উঠতে যাবো তখন দেয়ালের ঘড়ির উপর চোখ আঁটকে গেলো। সকাল ১০টা বাজে, আর আমি কি না ভাবছিলাম এখনো সূর্যের আলোয় ফুটেনি। মাথায় হাত দিয়ে তারাহুরো করে উঠে দৌঁড়ে বাথরুমে চলে গেলাম। এখন আমি ঢের বুঝতে পারছি কে অপেক্ষা করছে আমার জন্য আজও গেলে বকা খাবো ধ্যাত ভাল্লাগে না। বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে পরলাম। নাস্তা করার জন্য মা অবশ্য ডেকেছিল কিন্তু আমার ওত সময় নেই বলে ছুটে যাই। আঙিনায় গিয়ে আহিতা মাহিরা রিয়া কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম কানের কাছে বিড়বিড় করে কেউ একজন বলল, ‘ সরি ‘
আমি ঠোঁটের উপর আলতো ভাবে কামড় বসিয়ে পেছনে ঘুরে দাঁড়ালাম। সে তার দুই হাত পেছনের দিকটায় নিয়ে মুঠি বন্ধ করে আমার দিকে ঝুঁকে রয়েছে। আমি ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে আছি। সে আবারও মৃদুস্বরে বলল,
‘ সরি ‘

আমি মুখ ভেংচি কেটে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখন অভ্র ভাইয়া আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে তার সামনে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

‘ আমার দেওয়া আইসক্রিম নিয়েছিস, তাহলে আমার বলা সরি কেনো নিচ্ছিস না? ‘

ও মোর খোদা মানে কি সে তখন দেখে ফেলছিল। আল্লাহ আমি চোখ জোড়া রসগোল্লার মতো বড়বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে মনে এক শুকনো ঢোক গিলে ফেললাম, তার মুখের উপর আমতা আমতা করে বলি,

‘ হা,হাত ছাড়ুন আমার, আমাকে কলেজে যেতে হবে। ‘

অভ্র ভাইয়া ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়, তৎপর হাত ছেড়ে দেয়, আমি তার সামনে থেকে চলে আসলে, সে পিছু ডেকে বলে উঠে,

‘ শুক্রবারেও তোর কলেজ খোলা থাকে? ‘

‘ What the ফাউ প্রশ্ন শুক্রবারে আবার কলেজ কার খোলা থাকে? ‘

মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লাম।
অভ্র ভাইয়া দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে দেয়, ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে আমার দিকেই হেঁটে আসছে। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি, সে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ আজ শুক্রবার ‘

‘ আজ শুক্রবার ইশশ ভুলেই গেছি। মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গেছে। ‘ মনে মনে,

মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম মাথা তুলে সামনে তাকাতে দেখলাম সে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতটাই কাছে যা দেখলে যে কেউই ভাবতে বাধ্য হবে আমরা হয়তো লিপকিস।
ইয়াক, আমি তার চোখের দিকে এক নজর তাকিয়ে উল্টো দিকে দিলাম দৌঁড়, সে বেআক্কেলের মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। আমি রুমের মধ্যে ঢুকে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকের উপর এক হাত দিয়ে চাপ দিলাম। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন টিপছে বৃষ্টি, আমি তেড়েমেড়ে ওর পাশে গিয়ে ধুম করে দিলাম পিঠের উপর এক কিল, পিঠের উপর হাত দিয়ে ‘ ওরে বাবা গো ‘ বলে চিৎকার করে উঠে বসল বৃষ্টি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেচিয়ে বলল, ‘ মারলি কেন শাঁকচুন্নি? ‘

বিছানার উপর উঠে বসে ওর হাতে গুঁতো দিয়ে বললাম, ‘ কে ডাকছে আমায়?

সে ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে বলল, ‘ কেন অভ্র ভাইয়া ‘

অভ্র নামটা শোনার পর দিলাম আরও এক ঘাত কাঁধের উপর বসাইয়া।
_______
তীক্ষ্ণ রৌদে বসে রয়েছি ছাঁদে, আজ তিন দিন পর রুম থেকে বের হইছি। লজ্জায় রুমেই লুকিয়ে ছিলাম, না জানি আবার কখন সামনে পরে যাবে, আবারও আইসক্রিম নিয়ে কথা বলবে তখন কি হবে ভেবেই রুম থেকে বের হইনি। কিন্তু আজ বের হয়ে বড়সড় শকট খেলাম। জানতে পারলাম দুইদিন আগেই অভ্র ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে চলে গেছে, শুনেই বুকের বা পাশে চিলিক পেরে উঠল, সে চলে গেছে শুনে আমার খুশি হওয়ার কথা অথচ আমার মুড অফ হয়ে গেলো। তখন থেকেই মনমরা হয়ে রৌদ্রে বসে রয়েছি। ভালোই লাগছে না কোনো কিছু মনে হচ্ছে কি জেনো মিসিং,, অভ্র ভাইয়ার ফেলে দেওয়া আইসক্রিম টা আমি আজও খাইনি, রেখে দিয়েছি ফ্রিজে রোজ তা দুইবার করে দেখে আবারও আগের ন্যায় ফ্রিজে রেখে দেই, জানি না কেনো দেখতে ভালো লাগে, হঠাৎ মাথার উপর একরাশ ছায়া উদয় হলো। মাথা উপর দিকে তুললাম দেখার জন্য এত কড়া রোদে ছায়া কোত্থেকে আসলো? মাথা উপরে তুলতেই দেখলাম একটা ছাতা, আর ছাতাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অভ্র ভাইয়া।
উনাকে দেখেই ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে পরি। অস্ফুটস্বরে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে,

‘ আপনি কোণ্থেকা আইলেন? ‘

অভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল, ‘ মানে? ‘

আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘ না মানে হচ্ছে আপনি না চলে গিয়েছিলেন তাই আর কি? ‘

বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ এত রোদে ছাঁদে বসে আছিস কেন? ‘

আমি বললাম, ‘ ভালো লাগছিল ‘

‘ আমার মোটেও ভালো লাগেনি! ‘

‘ কিহহ? ‘

‘ কিছু না! এই নে! ‘

উনার কথা শুনে উনার মুখের উপর থেকে হাতের দিকে তাকালাম। এক হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে অন্য হাত দিয়ে ছাতা ধরে রাখছে, ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম। একটা কোণ আইসক্রিম আমি তাতে চোখ বুলিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লাম।

‘ আইসক্রিম কি আমার জন্য? ‘

সে কন্ঠ কঠোর করে বলল, ‘ না এখানে তো আরও কেউ আছে তারজন্য আনছি। ‘

উনার কথা শুনে চুপসে গেলাম আমি, চোখ দু’টো ছোটছোট করে তাকিয়ে রইলাম। সে আবারও চোখ দিয়ে ইশারা করল হাতের দিকে, যাতে আইসক্রিম টা আমি নেই। আমি না নিয়েই ইতস্ততভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি হয়তো কিছু আন্দাজ করেছেন, নিঃশ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে বলল,

‘ তুই যদি ও-ই দিনের ঘটনার জন্য আপসেট হয়ে থাকিস তাহলে শোন, আমি ওইদিন ভুল করে তোর রুমে চলে গিয়েছিলাম আর দরজা টাও খোলা ছিল তাই সেরকম পাত্তা না দিয়ে ঢুকে পরে ছিলাম। আর বিশ্বাস কর আমি তোর দিকে তাকাইনি। কোনো কিছুই খেয়াল করিনি। আমার তেমন ইন্টারেস্ট ও নেই না ছিল। আমি সব মেয়েকেই সম্মান করি। কারো প্রতি কুদৃষ্টি আমার নেই, তাই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছি, আইসক্রিম টা তোর জন্য নিবি প্লিজ। ‘

এইভাবে বললে না নিয়ে থাকা যায়। মনে মনে প্রচুর হাসি পাচ্ছে তবুও হাসি কন্ট্রোল রাখার চেষ্টা করে হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে দিলাম দৌঁড়, রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ হাতে আইসক্রিম নিয়ে বসে রইলাম পরক্ষণেই টের পেলাম আস্তে আস্তে আইসক্রিম গলে যাচ্ছে। কি কপাল একদম ফাটা কপাল, গলা আইসক্রিম খেতে হলো।

বিকেলে ফ্রিজ খুলে দেখলাম আমার আইসক্রিম নাই গেলো কোই আমার আইসক্রিম কিছুক্ষণ চিল্লা চিল্লি করার পর, মুন্নী আপু আইসক্রিম খেতে খেতে এদিকেই আসল, আমি তার আইসক্রিমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লাম, ‘ এই আইসক্রিম কার কোথা থেকে নিছিস? ‘

মুন্নী আপু সাধারণ ভাবেই জবাব দিলো, ‘ কেন ফ্রিজ থেকে, অনেক দিন ধরেই দেখছিলাম। কেউ খাচ্ছিল না তাই আমিই খাচ্ছি। ‘

‘ হারামী কুত্তী রাক্ষসী ডাইনি ‘ বলে তেড়েমেড়ে ওর সামনে গিয়ে সোজা ওর গলা টিপে ধরলাম। সাহস হয় কি করে আমার অভ্র ভাইয়ার দেওয়া আইসক্রিম ওর খাওয়ার? ও আমার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে, তখনই পুতুল আপু সেখানে চলে আসল। আমার হাত থেকে ওকে ছাড়িয়ে বলল, ‘ কি হয়েছে ওর গলা টিপে ধরছিস কেন? ‘

‘ আমার আইসক্রিম খাইছে কেন ও? ‘

‘ একটা আইসক্রিমের জন্য বোন মেরে ফেলছিলি? ‘

‘ ও খাবে কেন আইসক্রিম? ‘

‘ বোইন বিশ্বাস কর তোর আইসক্রিম জানলে আমি টাচ ও করতাম না। ‘

‘ এক তুই আর এক রিমা, একজনের আইসক্রিম আরেকজনের চকোলেট উফফ পারিস ও তোরা দু’জন ‘

বলে মুন্নী আপুকে নিয়ে চলে গেলো।

সন্ধ্যার পর,

বিছানার উপর আরাম করে বসে মোবাইল স্ক্রল করছিল! আমি রুমে প্রবেশ করে বললাম।

” একটা কথা ছিল ”

আমার দিকে না তাকিয়েই ফোন স্ক্রল করতে করতেই উত্তর দিলো অভ্র।

” যা বলবি তারাতাড়ি বলে বিদায় হো ”

হেব্বি মেজাজ গরম হলো অপমান করল নাকি Insult

দাঁত কিলবিলিয়ে বললাম।

” আমি তোমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখবো নায়ক তুমি থাকবা ”

ফোনের স্কিন থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো দাঁতে দাঁত চেপে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল.!

” নায়িকা কে? ”

আমিও দাঁত কেলিয়ে হেঁসে লজ্জা মাখা মুখ করে মৃদুস্বরে প্রতিউত্তরে জানালাম!

“কেন আমি?”

সে কিছুক্ষণ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার পর যা বলল ইচ্ছা করছিল চুলগুলো ধরে টেনে একটা একটা ছিঁড়ে ফেলি।

” তোর গল্পে আমার নাম দিলে আমার নামের অপমান করা হবে ভুলেও এ কাজ করবি না তারপরেও যদি করিস জরিমানা দিবি ১০হাজার টাকা এখন যা ফুট আমার রুম থেকে ”

কথাটা বলে আবারও ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত হয়ে পরল। বেশ কিছুক্ষণ আঁড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে মনে ভাবলাম।

উনার নামে তো আমার তিনটা গল্প আছে আর সেটা যদি উনি জানেন তাহলে কি আমাকে জরিমানা তিন গুন দিতে হবে…

Like seriously তিন দশে ত্রিশ হাজার
What the ফাউ কথা
_______
মুখ ভেংচি কেটে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। রাতে আমাকে বলা হলো অভ্র ভাইয়াকে ডেকে আনার জন্য, রাতে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দরজার সাথে ধাক্কা লেগে হাত থেকে ফোনটা ফ্লোরে পরে গেলো। ফোনটা তুলতে তুলতে বললাম।
নিজে পরে গেলো এত কষ্ট হয় না যতটা না তুই পরে গেলে হয়।

চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে ফোন স্ক্রোল করছিল অভ্র ভাইয়া। এতদূর থেকে আমার কথা শুনে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ঠোঁট চিবিয়ে চিবিয়ে বলল!

তুই পরে গেলে তোর কষ্ট হয় না বর্ষা? চল আমার সাথে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো এখন তোকে!

What the ফাউ কথা চোখ দু’টো থেকে চারটা হয়ে গেলো ডেবডেব করে তাকিয়ে রইলাম অভ্র ভাইয়ার দিকে সাথে সাথে একটা ঢোক গিলে উল্টো দিকে৷ না তাকিয়েই দিলাম দৌঁড় অন্ধের মতো দরজার সাথে বাড়ি খেয়ে ফ্লোরে পরে গেলাম।

আমাকে পরতে দেখে অভ্র ভাইয়া ফোনটা টেবিলের উপর রেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল সাথে দুই হাত দিয়ে শার্টের কলার ঠিকঠাক করল তারপর আমার সামনে এসে দাঁড়াল। কোই মনে মনে ভাবছিলাম এই বুঝি কোমড়ে হাত রেখে ফিল্মি স্টাইলে টেনে তুলবে।
কিন্তু হলো উল্টো আমার দিকে একটু ঝুঁকে বসে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল!

অন্ধের মতো দৌঁড়ালে এমনই হয় জংলী। এখন বল এখানে কেন আসছিস?

আমি এক হাত দিয়ে আরেক হাত কচলাতে কচলাতে বললাম।

আম্মু ডাকছে গিলতে না মানে খেতে..!

আমার কথা শুনে অভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে “বড় আম্মু ডাকছে” বলে উঠে দাঁড়িয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আমি বোকার মতো বসে অভ্র ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

What the শেষে কি না জংলী এত অপমান।

হাত দুটো উপরের দিকে তুলে মুখ দিয়ে চেঁচিয়ে বললাম, ‘ আল্লাহ ধৈর্য দান করেন আমাকে ‘
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১০
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
___________
সময় তখন রাত ৯টা বেজে ১৫মিনিট মার্চ মাসের ৫তারিখ হঠাৎ ফোনে রিং বেজে উঠল চার্জ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম কে কল দিলো।

ফোনের স্কিনে ঝলঝল করে উঠল একটা নাম.. (বজ্জাত ম্যাক্স প্রো)
চার্জ থেকে ফোনটা খুলে হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলাম হ্যালো বলতেই ফোনের বিপরীত পাশ থেকে মিষ্টি মধুর কন্ঠে ভেসে আসল সে বলল।

” রেডি থাকিস তোর জন্য একটা গিফট নিয়ে আসছি ”

আহা গিফটের কথা শুনে তো আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে লাফাতে শুরু করলাম। বরাবরই আমি গিফট পেতে বড্ড ভালোবাসি। অধিক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন আসবে সে সাথে নিয়ে গিফট…!

দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষার পর উনার আগমন ঘঠল। উনাকে দেখে বুকের মধ্যে চিলিক দিয়ে উঠল মনে মনে খুশিতে পাগল পারা হয়ে গেছি দুই হাত পেছনে করে এগিয়ে আসছে আমার দিকে আহ কি যে শান্তি লাগছে এ যে কি রকম অনূভুতি বলে বোঝানো যাবে না।
সে আমার সামনে এসে টেডি স্টাইল ভাব দাঁড়িয়ে বলল।

” বর্ষা আমার দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দে আর চোখ বন্ধ কর ”

আমিও খুশি মনে দুই হাত বাড়িয়ে দিলাম সাথে চোখ বন্ধ করে নিলাম। হাতের উপর কিছু একটা রাখল বুঝলাম চোখ দু’টো মিটমিট করছে কি দেখার জন্য এমন সময় আমার সামনে থাকা ব্যক্তি টা কন্ঠ কঠোর করে বলে উঠল..

” এইবার চোখ খোল আর দেখ পছন্দ হয়েছে কি-না? ”

চোখ খুলে যা দেখলাম মেজাজ টাই বিগড়ে গেলো। উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেচিয়ে বললাম।

” এইগুলো কি হাহহ এইগুলো কোনো গিফট হলো যত্তসব ফাউল জিনিস ”

সে জেনো হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবে এমন অবস্থা এতদিন উনার হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখলেও আজ দেখতে বিরক্ত লাগছে খুব রাগ হচ্ছে উনার উপর ইচ্ছে করছে সবগুলো জিনিস উনার মাথার উপর মারি।

আমার দিকে ঝুঁকে সে হালকা মৃদু হেঁসে বলল…

” বাড়ির কোনো কাজই তো করিস না! এইগুলো দিয়ে ছোটো আম্মুর একটু হেল্প করিস সবগুলো কাজের জিনিস ”

কথাগুলো বলে একটা চোখ টিপ দিলো সাথে হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

উনার হাসি দেখে ইচ্ছে করছে উনার লম্বা লম্বা চুলগুলো টেনে টেনে ছিঁড়তে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে চিৎকার দিলাম।

” অভ্র ভাইয়া ”

কতগুলা চা ছাঁকনি ডাল হুডুনি চামচ এগুলা কেমন গিফট আরও কিছু আছে যার নাম আমি জানিই না।

অতঃপর রাগে দুইদিন উনার সাথে কথা বলিনি।

এদিকে উনার কড়া নিষেধ।

প্রয়োজন ছাড়া যখন তখন উনার রুমে যাওয়া যাবে না। কিন্তু মন যে মানে না ডিলে যে সহে না। আমার খুব দেখতে ইচ্ছা করছে উনাকে কি করি কিভাবে যাই উনার রুমে ভাবতে ভাবতে আম্মু ডেকে বলল।

‘ বর্ষা এদিকে আয় তো শুনে যা। ‘
‘ কি হইছে আমি পারতাম না যাইতে কোনো জায়গায়!’
রুম থেকে ফুচি দিয়ে বাইরে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
‘ সব সময় কাজের জন্য বাহিরে আমাকে পাঠাতে হবে কেন বাড়িতে তো দামড়া দামড়া পোলাপানের অভাব নাই তাদের বলতে পারো না। ‘
‘ তোকে বাইরে যেতে ডাকছি কে বলছে? তোর অভ্র ভাইকে ডেকে নিয়ে আয়! তোর দাদার রুমে আসতে বল গিয়ে। ‘

আহ আহ আহ কি বললা আম্মু আবারও বলো তো?

মনে হলো কানে একটু বেশি শুনেছি তাই আবারও শুনতে চাইলাম আম্মু ও একই কথা বলল। আমি তো হেব্বি মহা খুশি প্রয়োজন পেয়ে গেছি। রুম থেকে দৌঁড়ে বের হলাম। কলিংবেল চাপতেই বড় আম্মু দরজা খুলে দিলো। বড় আম্মুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রশ্ন ছুড়ে মারলাম।

‘ অভ্র ভাইয়া কোই? ‘
আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বড় আম্মু একটু জ্ঞান দিলো।
‘ তোকে কতবার বলছি অভ্রকে ভাইয়া বলতে কিন্তু তুই শুনিস না সেই নাম ধরেই ডাকিস জানিস অভ্র তোর কত বড় আর তোদের সব ভাই বোনদের থেকেও বড় আর তুই ওকেই নাম ধরে ডাকিস’
বিশ্বাস করো তোমরা একটুও মজা লাগতে ছিলো জ্ঞান গুলো শুনতে। কপাল ভাজ করে চোখ ছোটো-ছোটো করে ভ্রু কুঁচকে অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কন্ঠ কঠোর করে আবারও একই প্রশ্ন করলাম। (হাতে একটা ছুড়ি থাকলে ভালো হতো ছুড়িটা মুখের সামনে ধরে বললে হেব্বি লাগতো তখন)

‘ কোথায়? ‘
‘ গিয়ে দেখ ওর রুমেই আছে হয় তো’
কথাটা বলতে দেরি আমার ছুটতে দেরি হয়নি। রুমের সামনে এসে রুমের মধ্যে ফুচি দেই কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছিল আমাকে রুমের মধ্যে আসতে দেখেই হাত থেকে ফোনটা কানের সাথে চেপে ধরল। আর এমন ভাবে ভাব ধরে কথা বলছে মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে পিরিত করতাছে। বেলকনির সামনে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে কান পেতে শুনছিলাম কি কি বলে। কিন্তু তার আগেই ধরা পরে যাই।

হঠাৎ সামনে এসে দাড়ালো আমি তো উনাকে দেখে থুতুমুতু খেয়ে যাই ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।
” তুই চোরের মতো আমার রুমে ঢুকে আড়ি পেতে কথা গিলছিস?’
‘আমি মোটেও চোরের মতো ঢুকিনি”
‘তোকে না বলছি প্রয়োজন ছাড়া আমার রুমে আসবি না’
‘ প্রয়োজন আছে তাই আসছি’
‘কি প্রয়োজন?’

‘কি প্রয়োজন সেটা পরে বলবো এখন তুমি এটা বলো এত ফিসফিস করে কার সাথে কথা বলছিলে?’
‘ আমি কার সাথে কথা বলছিলাম তোকে কেন বলবো তাড় ছিঁড়া সর সামনে থেকে আর কেনো আসছিস সেটা বল।’

কথাটা বলে সামনে থেকে চলে যাচ্ছিল। আমারও প্রচুর রাগ হলো। পেছন থেকে হাত ধরে দিলাম টান।
আল্লাহ গো, আত্মা টা একটুর জন্য বের হয়ে যায় নাই। হাতির মতো একটা শরীর আমার উপরে এসে পরল।
হঠাৎ ওইভাবে টান দেওয়াতে অভ্র ভাই তাল সামলাতে পারে নাই। এসে সোজা আমার উপরে আর আমি সোজা নিচে পরে গেলাম। উনি আমার থেকে অনেক লম্বা। ফ্লোরে পরার পরেই উনার ঠোঁট জোড়া গিয়ে আমার কপালে লাগল। আমি তো চোখ বড়বড় করে চাইলাম। ২মিনিট দু’জনেই বেকুব হয়ে রইলাম। তারাহুরো করে লাফ দিয়ে উঠে বলল।

‘ বের হো তুই রুম থেকে শীগ্রই বের হো’

ফ্লোরে শুয়েই নেকা কন্ঠে বলছিলাম।
‘ আমার মাজাটা বুঝি ভেঙেই গেছে’

আমার কথা শুনে উনি মাথা ঘুরালেন অন্য দিকে তাকিয়ে কপালে আঙুল দিয়ে চুলকালো। তারপর হুট করেই আমার হাত ধরে টান দিলো। মুহুর্তেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। হাত ছেড়ে দিয়ে বলল।

‘ এখন যা আমার রুম থেকে, আর এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবি না। ‘

আমি ভ্রু উঁচু করে চোখ দু’টো ছোটো-ছোটো করে বললাম।

‘ বলে দিবো এখনই বলে দিবো সবার আগে বড় আম্মুকে বলবো। ‘
কথাটা বলেই দিলাম দৌঁড়, সে-ও দিলো দৌঁড় আমার পেছন পেছন। আমি দৌঁড়ে কিচেনে চলে গেলাম পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম। ‘ বড় আম্মু তোমার ছেলে আমার কপ..’
আর কিছু বলার আগেই উনি এসে আমার মুখ চেপে ধরল। বড় আম্মুর উদ্দেশ্যে বলল।
‘ কিছু না আম্মু পড়তে বসবে না বলেছিলো তাই আমি’
‘ আমার এখন অনেক কাজ তোরা যা এখান থেকে।’
আমাকে টানতে টানতে বাড়ির বাহিরে নিয়ে আসলো আর বলল।

‘ তোর মাথার কি সব গুলো তাড় সত্যি সত্যি ছিঁড়া না-কি? তুই এই কথা আম্মুকে বলতে গেছিলি? ‘
‘ ৫০০০ টাকা দাও তাহলে আর কাউকে বলবো না পাক্কা প্রমিজ’
‘ ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেবো আবারও একই কথা বললে যা এখান থেকা।’

কথাটা বলে মুখের উপর দরজা আঁটকে দিলো। আমিও কম কিসের বারবার বেল বাজালাম বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে ধমক দিয়ে বলল!

‘ কি হইছে? যাবি নাকি থাপ্পড় খাবি? ‘
উনার ধমক শুনে চোখে পানি চলে আসলো। মাথা নিচু করে অভিমানী সুরে বললাম।

‘ আম্মু ডাকতে পাঠিয়েছে দাদা তোমাকে উনার রুমে ডেকেছে এখনই.!’
কথাটা বলতে বলতে চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল সেটা আর তার চোখ এড়ালো না। আমি পেছনে ঘুরে ছুটে দৌঁড় দিলাম। পেছন থেকে সে ডেকেছিল কয়েকবার কিন্তু আমি পিছুডাকে পাত্তা দেইনি…!
___________
একটু আগে আইসক্রিম কিনতে দোকানে গেছিলাম।
আমি দোকানদারের কাছে আইসক্রিম চাইলাম আমার পাশে একজন সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে ছিল সে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল..

” পাইলট আছে? ”

আমি তো রীতিমতো উনার কথায় অবাক হই পাইলট এয়ারপোর্টে না থেকে দোকানে কি করবে?
নিজের কৌতূহল কমানোর জন্য জিজ্ঞেস করেই ফেলি।

” আপনি পাইলট এখানে কোথা থেকে পাবেন পাইলট তো এয়ারপোর্টে পাবেন। ” ঠিক সেই সময় পেছন থেকে গম্ভীর কারো কন্ঠে ভেসে আসলো সে বলল।

” তুই কি এখানে আইসক্রিম নিতে আসছিস নাকি পাইলট নিয়ে সমালোচনা করতে আসছিস কোনটা? ”

জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে পেছনে ঘুরে তাকালাম আর বললাম।

” ওই আসলে উনি পা পা পাইলট বললেন তো তাই ”

প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টেডি স্টাইলে বলল।

” পাইলট সিগারেটের নাম তুই এখন যাবি এখান থেকে না-কি পাইলট খেয়েই যাবি ”

আর কি আইসক্রিম নিয়ে দিলাম দৌঁড় আর কি দাঁড়িয়ে থাকা যায়।
তবে পাইলট যে সিগারেটের নাম অভ্র ভাইয়া না বললে জানতামই না।
________
পরেরদিন সকালে,

সিঁড়ি দিয়ে গান গাইতে গাইতে নামছিলাম…
আমি: বন্ধু তুই লোকাল বাস বন্ধু তুই লোকাল বাস আদর কইরা!

তখন-ই পেছন দিয়ে কেউ একজন ডাক দিয়ে বলে উঠে.

– ওই ফাঁটা বাঁশ…

প্রচুর পরিমানে ম্যাজাজ গরম হলো পেছনে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে রাগী ভাব নিয়ে কন্ঠ কঠোর করে প্রশ্ন ছুড়লাম।

আমি: কি হইছে?
– কিছু হয় নাই শুনে যা!
আমি: পারতাম না যাও ফোটো…

বলে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে আবারও বলে উঠে।।

– ওই জংলী..!

দুই হাত মাথার উপর তুলে মুঠি বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ জোড়া বন্ধ করলাম। প্রচুর রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছিল হেঁটে গিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সাথে টপকাই কিন্তু তা তো সম্ভব না। কিছু না বলে আবারও চলে যাবো তখন পেছন থেকেও মিষ্টি কন্ঠে বলল।

– ওই শোন না প্লিজ শোনে যা তোকে একটা অনেক ইমপোর্টেন্ট কথা বলার আছে অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম বলবো….

পেছনে ঘুরে তাকালাম অপলকভাবে তাকিয়ে রইলাম মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটতাছে না জানি কি বলবে দৌঁড়ে সামনে গেলাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম।

আমি: কি বলবা বলো!

– ভাবছি কিভাবে বলবো?

আমি- বলো না চান্দু কতদিন ধরে তো এটাই শুনতে চাচ্ছি, (মনে মনে)

– বলতে চাচ্ছিলাম আমি তোকে…

আমি- হ্যাঁ হ্যাঁ বলো আরে পরে বলো!

– আমি তোকে গত মাসে ৩হাজার টাকা হাওলাত দিছিলাম এখনও টাকা ফেরত দেস না কেন..?

What the ফাউ কথা।
ভাবছিলাম কি আর বললো ডা কি।
আর কি কোনোরকম বাহানা বানিয়ে কেটে পরলাম সামনে থেকে।
________
বিকেলে মিষ্টি রোদে একা একা ছাঁদে দাড়িয়ে নিজের লম্বা শার্টের লম্বা হাতা ফোল্ড করছিল আমি পেছন থেকে গিয়ে হুট করে বলে উঠলাম,

‘ আব্রাহাম ভাই অনেক রোমান্টিক সাথে কিউট ও আমার উনাকে খুব ভাল্লাগে ‘

জাস্ট এটুকুই বলছিলাম।
প্রতিউত্তরে কোনো কিছু না বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠাসসস করে কষে গালে এক থাপ্পড় মারে।

তাল সামলাতে না পেরে ছাঁদে পরে গেলাম। হাত ধরে টেনে তুলে রাগে গজগজ করতে করতে বলে।

কি রোমান্টিকতা করছে তোর সাথে যে তোর কাছে ওই ছেলেকে রোমান্টিক লাগলো। আমি কি রোমান্টিক না কি হলো বল চুপ করে আছিস কেন? আর কে এই আব্রাহাম কথা বলবি নাকি থাপ্পড় খাবি আরও?

এত জোরে কেউ মারে? কোনো কথা পুরো না শুইনাই থাপ্পড় মারলা।

এই নেকা কান্না করবি না সোজাসুজি বল আব্রাহাম কে?

চোখ ছোটো-ছোটো করে বেবিফেস বানিয়ে অভিমানী স্বরে বললাম।

” আমার নেক্সট গল্পের নায়কের নাম ”

আমার কথা শুনে অভ্র ভাই হাত দিয়ে তার চোখগুলো কিছুটা চেপে ধরে।

আর চোখে খুলে দেখল আমি নাই।
থাপ্পড় আর খেতে চাই না বাবা🥺 থাকলে সিউর আরও একটা মারতো।

আমি চলে আসার পরও কিছুক্ষণ সে সেথায় দাঁড়িয়ে থাকে। মনে মনে আমাকে কয়েকটা থাপ্পড় হয়তো মেরেছিল
________
সামনেই রোজার মাস, আর আমি ও আমার সকল বোনরা মিলে প্রতিবার রোজার আগে সম্পূর্ণ বাড়ির কাজকর্ম করি। ধূলোবালি পরিস্কার করি। পুরো বাড়ি একদম চকচক করে ফেলি আজও তাই করলাম।
সারাদিন বাড়ির সমস্ত কাজ নিজ হাতে করি যা দেখে সে খুশি হয়।
কাজ শেষে রুমেই যাচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে ঢেকে বলল…

‘ ওই জংলী দাঁড়া.. ‘

সারাদিনের ক্লান্তি বিরক্তিতে পরিনত হলো। এক হ্রাস বিরক্তি নিয়ে পেছনে তাকালাম। তারপর উনি যা বললেন আমি তো পুরাই টাস্কি খাইয়া গেছি। দুই হাত পকেটে গুঁজে হেঁটে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে তাকিয়ে রইলাম। আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন।

‘ আজ সারাদিন অনেক কাজ করছিস তোরও তো কিছু প্রাপ্য ‘

‘ মানে? ‘ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়লাম।

সে তার পকেট থেকে মুঠ করে হাত বের করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল..

‘ হাত মেল..’
‘ কেন? ‘

কিছুটা বিরক্ত হলো সেটা তার কপাল ভাজ করা দেখেই বুঝে যাই। তারপর নিজেই হাত টান দিয়ে নিয়ে নিজের হাত থেকে কিছু একটা গুঁজে দিয়ে হাতের মুঠি বন্ধ করে দেয় আর বলে…

‘ সারাদিন এত কাজ করছিস আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে এটা তোর বকছিস আইসক্রিম কিনে খাইছ.. ‘

বলে সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো। আমি তো মহা খুশি হাতের মুঠি খুলে যা দেখলাম পুরো অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল।

বকসিস তাও মাত্র ৫ টাকা
What the কিপ্টুস মার্কা ছেড়া

রুমে আর ঢুকা হলো না। পিছু ছুটে গেলাম ঠাসস করে দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকলাম আর জিজ্ঞেস করলাম।

‘ এই টা কি? ‘
‘ কেনো তুই জানিস টা এটা কি? ‘
‘ আমি জানি এটা কি কিন্তু ৫ টাকা কেন আজকাল কার যুগে ৫ টাকার আইসক্রিম আছে নাকি ৫ টাকা কেউ দেয়? ‘ হেবি ক্ষেপে গেছি

উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে আবারও বললেন।
‘ তুই জানিস, আমাদের সময় আমাদের ১টাকা করে দিতো আর দেখ আমি তো তাও তোকে ৫ টাকা দিছি এখন যা ফোট ডিস্টার্ব করিস না! ‘

মাত্রারিক্ত রাগ ও ক্ষোভ নিয়ে ওর টাকা ওর বিছানার উপর ছুড়ে মেরে হনহনিয়ে চলে আসলাম। সে-ও পেছনে দৌঁড়ে আসল আর বলল।

‘ আচ্ছা সরি! একটু মজা করছি এখন চল তোকে আইসক্রিম কিনে দেই। ‘
বলে এক মিনিটও দাঁড়ালো না বাড়ির বাহিরে চলে গেলো। আমিও কম কিসের আমার সাথে মজা করার সাজা তো পেতে হবে🙄
ভেবেই সবগুলা ভাইবোন জড়ো করলাম এই বলে
‘ কিপ্টুস আজকে সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াবে’
সবাই খাওয়ার লোভে আমার সাথে লাফাতে লাফাতে গেলো বাড়ির আন্ডা বাচ্চা গুড়া গাঁড়া সব গেলো। দোকান থেকে একটা আইসক্রিম কিনে পেছনে ঘুরে ৪৪০ বোল্টের শকট খেলেন অভ্র ভাই 🤣
সবাই হাত বাড়িয়ে দেয় তার দিকে। সে কিছুক্ষণ দাঁত কটমট করতে করতে আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর সবাইকে হাসি মুখেই আইসক্রিম কিননা দিলো। দোকানে বিল দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো হেবি লোস হয়ে গেলো।
সব গুলা এক সাথে বাড়ির উঠানে বসে আইসক্রিমের উপরের কাগজ টা খোলে পেছনের দিকে ছুঁড়ে ফেললাম। সবগুলো এক সাথেই পরেছে আমাদের এইদিকে আইসক্রিম খাওয়া প্রায় শেষ তখনই সে কোথা থেকে জেনো উদয় হলো। আমাদের দিকেই আসিতে ছিলেন চোখ উপরে ছিল তাই নিচে খেয়াল করেনি। আইসক্রিম লেগে থাকা কাগজে পারা দিতেই পা পিছলে ফরত করে পরে যায়। সবাই হরবরিয়ে পেছনে তাকালাম তাকে পরে থাকতে দেখে হাসতে হাসতে আমাদের জান দফারফা

একেই বলে যেমন কর্ম তেমন ফল কিপ্টুস বেডা বলে দিলাম সব উড়াধুড়া দৌঁড়

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)
#চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here