#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২২
বিকালে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে রিপা। মনের ভিতরে এক বিন্দু পরিমাণ ও শান্তি নেই। জীবনে যে ভুলটা করেছে সে ভুলের কোন ক্ষমা নেই। ইচ্ছা করছে নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে। বাঁচতে ইচ্ছা করছেনা তার। ইমরানের মনের ভিতরে যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে সেটা এত সহজে মুছে ফেলা সম্ভব না। তবুও সে আমার সামনে রীতিমত ভালো থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে নিজেই শকড হয়ে যায় একটা মানুষ কীভাবে এত কিছু সহ্য করছে। নিজের দিক থেকে ও ভেবে দেখেছি আমি হলে কী এমন বউকে মেনে নিতাম?? যে কিনা অন্য পুরুষের সাথে রাত কাটিয়ে এসেছে। তার কাছে যেতে তো ঘৃণা লাগবে। কিন্তু ইমরান আলদা একজন মানুষ। ভালো মানুষই বলতে গেলে। ইমরানের প্রতি দিনদিন রিপার সম্মান যা ছিলো তার থেকে ২ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
.
.
রাত ১১ টার দিকে ইমরান রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে রিপার পাশে বসলো। রিপা উল্টো দিকে পাশ করে শুয়ে আছে।
-“রিপা খেতে আসো।
-“নিশ্চুপ।
-“রিপা কী হলো তোমাকে ডাকছি শুনছো না??
-“গম্ভির গলায় বললো,,আমার ক্ষিদে নেই।
-“ক্ষিদে নেই বললেই হলো নাকি! আসো। আমার অনেক ক্ষিদে পেয়েছে।
-“তুমি গিয়ে ইতির সাথে খেয়ে নাও।
-“ইতির সাথে খাবো মানে??
-“বাহ্ রে। কী বলছি বুঝতে পারছোনা??
-‘না। তুমি কী বলতে চাচ্ছো বুঝিয়ে বলো।
-“শোন তুমি বাচ্চা না যে আমি কী বলছি তুমি বুঝতে পারছোনা। ইতির সাথে যে তখন ইটিস পিটিস করলে সেটা তো ভালোই বুঝতে পারছো।
ইমরানের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। কী বলবে বুঝতে পারছেনা। তবুও বলে,,রিপা কী বলছো তুমি?? তোমার মাথা কী ঠিক আছে??
-“আমি দিব্বি ঠিকি আছি। তুমি অভিনয় করোনা।
আমি ভালো করেই সব বুঝতে পারছি।
হঠ্যাৎ করে ইমরান স্তব্ধ হয়ে যায়। আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায়না।
ইমরান কোন কথা না বলেই বালিশ নিয়ে সোফার উপরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
সোফার উপরে শুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। রিপার কথাগুলো সে মেনে নিতে পারছেনা। রিপা ইতির সাথে তাকে সন্দেহ করছে??
ইতিকে সে ছোট বোনের মতো দেখে আর তাকে নিয়ে রিপা এত নোংরা কথা বলতে পারলো।
.
.
কিছুক্ষণ পরেই রিপা এসে বসলো ইমরানের পাশে। তারপর ইমরানের কপালে হাত রেখে বলে,,
-“চলো ভাত খাবে।
-“ক্ষিদে নেই।
-“ক্ষিদে নেই কথাটা আর শুনতে চাচ্ছিনা।
কথাটা বলেই ইমরানের হাতটা ধরে টেনে তুলে খাওয়ার টেবিলে গেলো। প্লেটে খাবার বেড়ে ইমরানের পাশে বসে ইমরানকে খাইয়ে দিলো। প্রথমে খেতে না চাইলে ও রিপার জোরাজুরিতে আর না খেয়ে থাকতে পারেনি। খাওয়া শেষ হলে ইমরানকে সাথে নিয়ে রুমে গেলো।
.
.
ইমরান শুয়ে পড়লো অন্য পাশ করে।
ইমরান কোন কথা বলছেনা দেখে রিপা স্পষ্ট বুঝতে পারলো ইমরান রাগ করে আছে। ইমরান রাগ করলে রিপা বুঝতে পারে যে সে রাগ করে আছে।
ইমরান তুমি কী আমার উপরে রাগ করে আছো??
-“ইমরান স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,,,না। তোমার সাথে রাগ করার কী আছে?? আমি তো আমার নিজের সাথে রাগ করেছি।
-“মানুষ কী নিজের উপরে কখন ও রাগ করে??
-‘মানুষ করে কিনা জানিনা। তবে আমি আমার নিজের উপরে ভীষণ রাগ করে আছি।
-“নিশ্চুপ রিপা।
.
.
সকালবেলা রিপার আগেই ঘুম ভাঙে ইমরানের। আড়মোড়া দিতেই দরজায় ঠকঠক শব্দে শোয়া থেকে উঠে দরজাটা খুলে দিয়ে লজ্জায় কুকড়ে গেলো। ইমরান খালি গায়ে লুঙ্গি পড়ে সামনে আসে। ইতিকে দেখেই বেলকুনি দিয়ে রিপার ওড়নাটা গায়ে পেঁচিয়ে বলে,, কী রে তুই এত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলি যে?
-“ঘুম আসছিলো না তাই আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। তাই তোমার জন্য হালকা কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করেছি।
-“এসবের কী দরকার ছিলো?? তাছাড়া রিপা উঠে বানাতো।
-“না ভাইয়া আমি ফ্রি ছিলাম তাই বানালাম। তুমি এখন ফ্রেশ হয়ে আসো আমি টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছি।
.
.
ইমরান ফ্রেশ হয়ে এসে রিপার কপালে চুমো এঁকে দিয়ে নাস্তার টেবিলে বসলো। প্লেটে ৪ টা রুটি রাখা ছিলো। ইমরান গেলে ২ পিচ রুটি নিয়ে ইমরানের প্লেটে দিলো আর বাকি ২ পিচ রুটি ইতি খেতে নিলো।
ইমরানের বিষয়টা কেমন জানি লাগলো। সন্দেহ দূর করতে বললো,,,
-“ইতি আমার জন্য ২ পিচ রুটি বানিয়েছিস কিন্তু আজকে তো আমার পেটে অনেক ক্ষিদে পেয়েছে। আর কী রুটি আছে??
ইতি আমতা আমতা করে নিজের প্লেট থেকে ১ পিচ রুটি ইমরানের প্লেটে দিলো।
আরে ইতি কী করছিস এটা! তোরটা তুই খা। রিপার জন্য রাখছিস না সেখান থেকে দে।
-“ভাবীর জন্য তো বানাইনি।
-“কী বলিস? রিপা তাহলে কী খাবে??
-“আমি তো রুটি বানাতে পারিনা তাই আন্দাজ পাইনি ভাইয়া।
-“ইমরান গালে হাত দিয়ে রুটির দিকে তাকিয়ে ভাবছে যে রুটি বানাতে পারেনা তার রুটি এমন গোল কী করে হয়?? তার মানে ইতি মিথ্যা কথা বলছে।
ইমরান খাওয়া শেষ না করেই উঠে গেলো।
একি ইমরান ভাইয়া তুমি পুরোটা শেষ করলে না যে?
-“খেতে ইচ্ছা করছেনা।
.
ইমরান রুমে গিয়ে রেডী হয়ে রিপাকে ডাক দিলো।
-“এই রিপা শোন। আমি অফিসে যাচ্ছি ফিরতে দেরী হতে পারে। তুমি কোন চিন্তা করোনা। নিজের দিকে খেয়াল রেখো।
আর হ্যাঁ আরেকটা কথা।
চোখ খুলে তাকায় রিপা। কী কথা??
-“ইতির থেকে দূরে থেকো।
-“মানে??
-“বেশী মানে মানে করোনা। যা বলছি তাই শুনো। আর আমি এসে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।
-“ঠিকাছে। আল্লাহ হাফেজ।
.
.
ইমরান বাসা থেকে নেমে গাড়ি বের করে স্টার্ট দিলো। কিছুদূর যাওয়ার পরেই মোবাইলটা বেজে উঠলো।
স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই তুহিনের নামটা ভেসে উঠলো।
কলটা রিসিভ করে,,,
-“হ্যাঁ বল।
-“তুই কোথায় ইমরান??
-“আমি তো রাস্তায়। একটা কাজ আছে তার জন্য একটু আগে বের হলাম। কাজটা সেরে তারপরে অফিসে যাবো। কিন্তু তোর আশেপাশে গাড়ির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে কেন?? তুই কোথায়?
-“আমি এখন হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
-“কেন?
-“রাহাতের পিছু পিছু গিয়েছিলাম গতকাল রাতে। কোন বাসায় উঠেছে সেটা দেখেছি।
-“সত্যি।
-“হুম।
-“কিন্তু ইমরান আমার যেটা মনে হচ্ছে সেটা হলো রাহাত যে কোন একটা বুদ্ধি পাকাচ্ছে। সে রাতে কাকে যেনো ফোনে বলছিলো একটা ভিডিও ক্লিপের ডিস্ক বানানো লাগবে। মোবাইলে রাখাটা নিরাপদ না। তুই টাকার চিন্তা করিস না যত টাকা লাগবে আমি দিবো।
.
.
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে ইমরানের। কী বলিস তুই এসব??রাহাত এতটা নোংরা মেন্টালিটির আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমি তো ভেবেছিলাম সেদিনের থ্রেড দেওয়ার পরে সে হয় ডিলিট করবে না হলে আমার কাছে দিবে। কিন্তু এখন তো দেখছি ওর কলিজাটা অনেক বড়।
হারামজাদাকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত যতক্ষণ নড়ে ততোক্ষণ না পিটানো পর্যন্ত আমার গায়ের জ্বালা মিটবেনা। অনেক সহ্য করেছি আর না।
তুহিন দোস্ত তোর সাথে দেখা করতে চাই। অফিসে বসে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ করা যাবেনা। তুই চায়না প্যালেসে আসতে পারবি??
-“কী যে বলিস তুই। হুম পারবো। আমি আসছি তুই ও জলদী আয়। আবার অফিসে যেতে হবে আজকে অডিটর আসবে অডিট করতে। সময় মতো যদি না পৌছাতে পারি তাহলে স্যার আজকে শরবত বানিয়ে খেয়ে নিবে আর সাথে চাকরীটা ও যাবে।
মিনিট দশেক পরে দুজনে চায়না প্যালেসের সামনে পৌঁছে গেলো।
ইমরান কফির মগ সামনে নিয়ে বসে আছে। মাথার ভিতরে ভিডিও টার কথা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। যেভাবেই হোক ডিস্ক হওয়ার আগেই মোবাইল থেকে ভিডিওটা ডিলিট করতে হবে। না হলে সমাজের চোখে রিপা পতিতা হিসাবে চিহ্নিত হবে। আর আমি বেঁচে থাকতে কিছুতেই এটা হতে দিবোনা। যেভাবেই হোক আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।
-“কী রে ইমরান তুই কোথায় হারাইয়া গেলি। কফি তো একদম ঠান্ডা হয়ে জলে পরিণত হলো।
কল্পনার রাজ্য থেকে বেড়িয়ে এসে কফির মগটা হাতে নিয়ে ঠান্ডা মগে চুমুক দিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেললো।
তুহিন তো পুরোই শকড!
ইমরানের গায়ে হাত দিয়ে বললো,,,
-“তুই কী ঠিক আছিস?? তোকে আমি এতদিনে যা চিনেছি এমন ঠান্ডা কফি খাওয়ার ছেলে তো তুই না। কী হয়েছে আমাকে খুলে বলতো। তুই কী নিয়ে এত চিন্তা করিস?? আর ভিডিও টা কীসের??
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখটা তুলে কোন মতে তুহিনের দিকে তাকালো।
-“ইমরান কী হয়েছে বলনা??
-“রাহাত রিপাকে ব্লক মেইল করছে।
-“হতবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,,,ভাবীকে ব্লাক মেইল করছে কেনো??
.
.
-“আসলে তুহিন কী বলবো লজ্জার কথা। কথায় আছে না থুথু যদি উপরে ফেলা হয় তাহলে কিন্তু সেটা নিজের গায়েই পরবে। রিপা একটা ভুল করে ফেলেছে আর সেই ভুলের কারণে আমাদের সম্মানটা আজ ভাসমান অবস্থায় আছে। যেকোন সময়ে ডুবে যাবে।
কিন্তু দোস্ত সেদিন রাতে আমি পিছনের কথাগুলো বারবার মনে করতে চেষ্টা করেছি। অনেক ভেবেছি,,, যে রিপা আমাকে এতটা ভালোবাসে সে কেনো অন্য পুরুষের কাছে গিয়েছে।
পরে আমি যেটা উপলদ্ধি করতে পেরেছি সেটা হলো রিপার অন্য পুরুষদের প্রতিটি ঝোকার কারণটা আমিই ছিলাম। আমি শুরু থেকে রিপাকে ঠিকমতো সময় দেইনি। টাকার অহংকারে রিপাকে পদে পদে অপমাণ করেছি। কী করতো মেয়েটি?? এদিকে রাহাত যে জাল বিছিয়ে ছিলো অবশেষে সেই জালে জড়িয়ে পড়েছে রিপা। আর কীভাবে সেটা সে বুঝতে ও পারেনি। যখন বুঝতে পারলো ততোক্ষণে তো সব কিছু হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে গেলো কথাটা বলতে বলতেই ইমরানের চোখ পানিতে ভরে গেলো।
-‘ইমরান তোকে আর কিছু বলতে হবেনা। আমি বুঝে গেছি আমাকে এখন কী করতে হবে। আগে ভিডিও ক্লিপটা মোবাইল থেকে ডিলিট করতে হবে। তারপরে শালাকে ইচ্ছা মতো কেলাবো যাতে বাপের নামটাই ভুলে যায়।
-“হ্যাঁ। তুহিন তুই এটার কিছু একটা কর। হয় আমি বাঁচবো না হয় রাহাত।
-“বুঝেছি দোস্ত। তুই কোন চিন্তা করিস না। খবিশটাকে আমি দেখছি। মনে কর তোর কাজ হয়ে গেছে।
.
ইমরান তুহিনকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
তোর এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবোনা।
-“দেখ ইমরান এভাবে বললে আমি কোন কাজ করবোনা।
-“আচ্ছা বাবা স্যরি।
ইমরান এখন অফিসে চল না হলে দেরী হয়ে যাবে।
.
কফি শপ থেকে বেড়িয়ে দুজনে গাড়িতে করে রওনা দিলো।
.
চলবে……………..