#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_19 [ সারপ্রাইজ পার্ট ]
থমথমে মুখে বের হয় ইশরাক। অনিন্দিতা কে কিছু চেকাপের জন্য পাঠানো হয়েছে। নির্ভীকের কাছে এসেই দু চারটে কথা শোনাতে ইচ্ছে হয়। নিজের ইচ্ছে কে দমাতে অক্ষম হয় ইশরাক। রাগি কন্ঠে তেঁতে উঠে বলে
” আশ্চর্য! কি করে পারলি এমন টা করতে। আমি ভেবেছিলাম মেন্টালি অনিন্দিতা ভেঙে পরেছে। কিন্তু এখন দেখছি আসক্ত হয়ে পরেছে। শুধু তাই নয় আম ড্যাম সিউর ওর ব্রেন এর নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইনফেক্ট আর কিছু দিন এভাবে চললে ওকে মানসিক হাসপাতালে এডমিট করাতে হবে। ”
” তোর বলা শেষ ? ”
” দেখ নির্ভীক। ”
হাত উঁচিয়ে বাঁধা দেয় নির্ভীক। যথাসম্ভব শান্ত কন্ঠে বলে
” আমাকে বলে লাভ নেই। আমি পাষান। আমি কখনোই অনিন্দিতা কে কাছে ডাকতে পারবো না। তাই ওকে মেন্টালি স্ট্রং করতে হবে তোকে। এট এনি কস্ট।”
” শোন নির্ভীক। অনিন্দিতার পুরো শহর জুড়ে তুই। তোর অবহেলা ওকে এমন মানসিক রোগীর দিকে ধাবিত করেছে। ”
” ভুল বললি। এটা ওনার ভাগ্য আর শাস্তি। ভুল মানুষের প্রেমে পরার শাস্তি। তাছাড়া অনিন্দিতা সেই সব প্রেমি দের মধ্যে একজন, যারা ভালোবাসায় পাগল। কতো শত লোক প্রেম কে কাছে না পেয়ে পাগল হয়ে গেছে। কেঁটে গেছে তাঁদের দিন, অনিন্দিতার দিন ও ঠিক এভাবেই কেঁটে যাবে। ”
” মানুষ তুই ? ”
” একদম ই নয়। আমি অমানুষ আর পাষান , তবে তুই হলি বেইমান। ”
” দেখ নির্ভীক আমাকে যা ইচ্ছে বল আমি মেনে নিবো। কিন্তু আমার বিষয় আর তোর বিষয় টা কি কোনো ভাবে এক ? যেখানে অনিন্দিতা তোকে ছাড়া কিছু বুঝে না সেখানে তুই কি না। ”
কথা বলে না নির্ভীক। চেয়ার থেকে উঠে ট্রেরেস এ চলে আসে। শির শির বাতাসে মেতে উঠে ঘন চুল। আকাশের দিকে নির্লিপ্ত তাকায় ওহ। জীবনে ভালো থাকা খুব জরুরি। ভালোর প্রকারের শেষ নেই। কিন্তু ওহ কোন ভালো থাকছে। অন্যের কাছে ভালো , নাকি ভেতর থেকে ভালো। অদ্ভুত হাসে ছেলেটা। পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখে ইশরাক। বলে
” এমন টা না করলে ও পারতি তুই। আমি জানি তুই কতোটা ‘
” ভুল জানিস তুই। ভুল থেকে বেরিয়ে আয়। এখন যা দেখছিস এটাই একমাত্র সত্যি। ”
” স্যার। ”
নার্স এর ডাকে চেম্বারে আসে ইশরাক আর নির্ভীক। অনিন্দিতার চোখে মুখে বিরক্তি। ইস্টার্ন দুটো রিপোর্ট পেয়ে যাওয়াতে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয় ইশরাক। একটু নিচু হয়ে নির্ভীক বলে
” কি হয়েছে অনিন্দিতা। ”
” নার্স। ঐ মেয়েটা একদম ই বাজে। শাড়ি তে মেডিসিন ফেলে দিয়েছে। ইচ্ছে করছিলো ওখানেই মেরে ফেলি। ”
“এটা এতো পছন্দের শাড়ি আপনার ? ”
” অনেক বেশি পছন্দের। আপনার প্রিয় রঙ যে আমাকে বার বার বিমোহীত করে। আমি নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকি আপনার প্রিয় জিনিসের প্রতি। কিন্তু আপসোস ছুঁতে গেলেই আপনি বাঁধা দেন। পাষান একটা। ”
শেষোক্ত কথায় হেসে ফেলে নির্ভীক। পুরোপুরি মাথা টা গেছে মেয়েটার। আজ কাল একটু বেশি ই পাগলামি হচ্ছে। তবে সেটা অন্য রকম পাগলামি। নির্ভীক গুটি গুটি হাতে অনিন্দিতার হাত টা স্পর্শ করে। অবাক হয় অনিন্দিতা। মনে জাগে প্রেমের বর্ষন। ইশরাকের ডাক কানে আসে না। সে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তমের দিকে। একটা ঝাঁকি পরতেই থতমতো খায় অনিন্দিতা। নির্ভীক বলে
” ডাক্তার আপনাকে ডাকছেন। ”
” ওহহ। ”
” মিস অনিন্দিতা। আপনার সাথে আমি পার্সোনালি কথা বলতে চাই। আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো ? ”
” নির্ভীক ভাই। ”
” ওনার সাথে কথা বলুন সমস্যা নেই। আমি চেম্বারের বাইরেই আছি। ”
” কিন্তু আমি একা। ”
নির্ভীক চলে যায়। অস্বস্তি হয় অনিন্দিতার। আঁচলের কোন মোচরাতে মোচরাতে বলে
” নির্ভীক ভাই ”
” আরে চলে আসবে নির্ভীক। মিস অনিন্দিতা, আপনি জানেন আমি নির্ভীকের ফ্রেন্ড। ”
” জি। ”
” তাহলে তুমি বলেই সমোন্ধন করা যায়। ”
” অবশ্যই। ”
পাশ থেকে কলম তুলে নেয় ইশরাক। কলম ঘোরাতে ঘোরাতে বলে
” নির্ভীক কে ভালোবাসো। ”
” আপনি তো বোধ হয় সব ই জানেন। ”
” হ্যাঁ। আমি সব ই জানি। ”
” তাহলে এই প্রশ্ন। ”
” আহ অনিন্দিতা। বিব্রত কেন হচ্ছো। ”
তেঁতে উঠে অনিন্দিতা। রাগি কন্ঠে বলে
” নির্ভীক ভাই কে ভুলানোর জন্য ওনি আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে তাই না ? আমি বুঝে গেছি। সব টা পানির মতো পরিষ্কার। ”
” অনিন্দিতা। আমার কথা টা শোনো। ”
ছুটে বেরিয়ে যায় অনিন্দিতা। চোখে মুখে আতঙ্ক। হাতের সাহায্যে চোখ মুছে তবে সে চোখ আবারো ভিজে যায়। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে দৌড়াতে থাকে অনিন্দিতা। শেষ করিডোরে এসে নির্ভীক কে পায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট ফুকছিলো ছেলেটা। তখনি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অনিন্দিতা। হাতের সিগারেট টা পরে যায়। হিঁচকি তুলে অনিন্দিতা বলে
” আমি আপনাকে ভুলতে চাই না। আমি আপনাকে ভুলতে চাই না। প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না। আমি আপনাকে ভুলতে চাই না। ”
” অনিন্দিতা , এই অনিন্দিতা। ”
” আমি চলে যাবো। অনেক দূরে চলে যাবো। তবু ও আপনাকে ভুলতে পারবো না। প্লিজ এমন টা করবেন না আপনি। ”
পেছন থেকে ঘুরিয়ে সামনে নিয়ে আসে নির্ভীক। নাক টেনে কাঁদছে মেয়েটা। দুই বাহু তে হাত রেখে নির্ভীক বলে
” একি , আপনি কাঁদছেন।ইস এতো সুন্দর সাজ নষ্ট হয়ে গেল। এখন কিন্তু একদম ই ভালো লাগছে না। ”
” লাগবে না ভালো। আমি শুধু আপানকে ভালোবাসি। আমাকে কেন এমন ভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। বলুন। ”
” অনিন্দিতা। আমি আপনাকে দূরে কেন ঠেলে দিবো। আমাদের সাথে কি কথা হয়েছিলো। আপনি ভদ্র ভাবে ডাক্তার দেখাবেন। ”
” আমাকে ভোলানোর জন্য নিয়ে এসেছেন নির্ভীক ভাই। অথচ কল্পনা করলেন ও না যেই মেয়েটা আপনাকে ভালোবাসে সেই মেয়েটা আপনাকে ভোলার কথা চিন্তা ও করতে পারে না। ”
নির্ভীক থেমে যায়। গাঁ থেকে সিগারেটের গন্ধ নাকে এসে লাগে। অনিন্দিতা বলে
” আপনি সিগারেট খেয়েছেন। ”
” সামনে মদ ও খাবো। ”
” ছিইই ! আপনি , আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না। ”
মাথা চেপে ধরে বসে পরে অনিন্দিতা। আবারো মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে যায়। নির্ভীক আগায় না। যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে অনিন্দিতা। হঠাৎ করেই অনুভব করে ছেলেটা, পৃথিবী তে থাকার থেকে মৃত্যু শ্রেয়। যেখানে প্রিয়তমা কে নিজ হাতে কষ্ট দিতে হয় সেখানে নিজের মৃত্যু কামনা যেন অধিক সুখের ।
.
আসিমের পাশা পাশি হেঁটে চলেছে ইশরাক। একটু আগেই পরিচয় হয়েছে দুজনের। স্বল্প বয়সের ছেলেটা এতো টা বুদ্ধিমান ঠাওর করতে পারে নি ইশরাক। সোডিয়ামের আলো তে আসিমের মায়া ভরা মুখ টা যেন আরো উজ্জল হয়েছে। যে কোনো মেয়ে কয়েক টা হার্ট বিট মিস করে ফেলবে। ইশরাক বলে
” তোমার রূপের প্রশংসা না করে পারলাম না আসিম। ”
মলিন হাসে আসিম। রাস্তায় পরে থাকা টিনের কৌটায় লাথি মেরে বলে
” রূপ তো সৃষ্টিকর্তার দান। সেখানে আমার প্রশংসা করা টা বিলাসিতা করা হলো না ? ”
” বাহ বেশ ভালো কথা জানো তো। ”
” আচ্ছা সে যাই হোক। আপনি ই তো অনির ট্রিটমেন্ট করছেন। ”
” হুম। ”
” কি বুঝলেন ? ”
” পুরোই অন্য রকম কেস। কারন অনিন্দিতার মধ্যে অন্য কোনো পাগলামি নেই। সে সব কিছুই বুঝতে পারছে। এমন কি পরিবারের থেকে নিজের অনুভূতি লুকাতে ও সক্ষম। কে কি চাইছে , বলছে সাধারন মানুষের মতোই সব ধরে ফেলছে। শুধু একটা জায়গা তেই থমকে আছে সেটা হলো নির্ভীক। ”
” এক্সাকলি। নির্ভীক মাহতাব অনির মস্তিষ্ক কে যেন খিচে ধরে আছে। ”
” কিছু টা তেমনি। অনিন্দিতার মেন্টাল কন্ডিশান একদম ভালো নয়। ”
” ওকে সুস্থ করতে হবে। ”
” আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ”
” কিন্তু আপনি তো শুরু তেই ভুল করেছেন ডক্টর ইশরাক । ”
” তোমার কথা বুঝলাম না। ”
” আপনি চিকিৎসা করছেন নির্ভীক স্যার কে ভোলানোর। আর নির্ভীক স্যার ই অনির কাছাকাছি থাকছে। তাহলে অনি কি করে সুস্থ হবে ? কিছু টা এমন হলো না যে কাজ করা হবে তবে ফল যেন শূন্য ই থাকে। ”
আসিমের কথায় বেশ ভাবনায় পরে ইশরাক। ছেলেটার কথায় যুক্তি আছে। আসিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
” নির্ভীক স্যার কে অনির থেকে আলাদা করার ব্যবস্থা করুন। আমার মনে হয় না নির্ভীক স্যার এতে দ্বিমত করবেন। ”
” ওকে। তোমার কথা টা অবশ্য ঠিক। আমি দেখছি কি করা যায়। তো পরে দেখা হচ্ছে। ”
আসিমের হাতে হাত মেলায় ইশরাক। বিদায় জানিয়ে চলে যায় সে। আসিম হেঁটে হেঁটে গান ধরে । যেন সে সুখের সাগরে ভাসছে। জীবনের লড়াই তো চাঁদ কে নিয়েই। গরিব ব্রাহ্মন তো সে ও।
ঘাসের উপর শুইয়ে ছিলো আসিম। হঠাৎ করেই ওর ফোন টা বেজে উঠে। চন্দ্রবিলাশে ব্যাঘাত ঘটতেই ভ্রু কুঁচকে যায়। যুবুথুবু হয়ে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠ কানে আসে। শাহানা কাঁদছে। আসিম বলে
” আন্টি আন্টি কি হয়েছে ? ”
” অনিন্দিতা যেন কেমন করছে। আমি ওকে সামলাতে পারছি না। নির্ভীক রা ও বাসায় নেই। কি করবো বুঝতে পারছি না।”
” আমি এখনি আসছি। ”
কল রেখে ছুটে যায় আসিম। পার্কিং থেকে বাইক নিয়ে অগ্রসর হয় অনিন্দিতার বাসায়। চাঁপা ভয়ে ভেতর টা ছিড়ে যাচ্ছে। আচ্ছা অনিন্দিতার কিছু হবে না তো ?
#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_20
রক্তাক্ত অনিন্দিতা। নিজেকে প্রচন্ড আঘাত করেছে সে। কাঁচের গ্লাস ভেঙে হাতের তালু তে বেশ কিছু টা ক্ষত হয়েছে। আসিম টেনে ধরে ওকে। শাহানা অবিরত কেঁদেই চলেছেন। বুক ফাঁটা আর্তনাদের কারনে আশে পাশের মানুষ জন ও জড়ো হয়েছে। অনিন্দিতার বাহু তে ধাক্কা দেয় আসিম। চেঁচিয়ে বলে
” কি করছিলে অনি ? ”
” কি করবো আমি। ”
” পাগল হয়ে গেছো। ”
” আমি পাগল হয়ে গেছি। আমায় মেরে ফেলো , দয়া করে আমাকে মুক্তি দাও আসিম। আমি আর নিতে পারছি না। এসব কিছু আমি আর নিতে পারছি না। ”
বার বার একি কথা উচ্চারন করে অনিন্দিতা। ঢলে পরে আসিমের কোলে। শাহানা কে সান্ত্বনা দিচ্ছে সকলে। আসিম বলে
” আন্টি ওকে হসপিটালে এডমিট করাতে হবে। অনিন্দিতা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ”
হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে আসিম। অনিন্দিতা কে ইনজেকশন পুস করে রাখা হয়েছে। অন্য কোনো হসপিটালে নয় বরং ইশরাকের কাছেই নিয়ে এসেছে। কেবিন থেকে ইশরাক বের হতেই আসিম বলে
” নির্ভীক স্যার কে সরে যেতে বলুন । না হলে অনি কে বাঁচানো সম্ভব হবে না। ”
” রিলাক্স আমি দেখছি কি করা যায়। ”
” কামন ডক্টর ইশরাক। আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট হতে পারি তবে এমন নয় যে ভাঁজা মাছ উল্টে খেতে জানি না। ছেলে ভোলানো কথা বন্ধ করে ব্যবস্থা করুন। ”
” তুমি বিষয় টা বুঝতে চাইছো না আসিম। নির্ভীক কে অনিন্দিতার প্রয়োজন। ”
” সেটা তখন প্রয়োজন যখন নির্ভীক স্যার অনিন্দিতা কে চাইবেন। এখন ওনি অনির লাইফে কাঁটার মতো। ”
” তুমি ঠিক বলেছো। আমি এখনি নির্ভীকের সাথে কথা বলবো। ”
ইশরাক চলে যায়। ব্যঙ্গ হাসে আসিম। কেবিনের গ্লাস দিয়ে অনিন্দিতা কে দেখতে থাকে। মেয়েটার অবস্থা কি হয়েছে।
শেষ রাতেই কুমিল্লা থেকে ফিরে আসে নির্ভীক। অনিন্দিতার কথা কানে যেতেই সে ছুটে এসেছে। তবে ইশরাক কেবিনে যেতে বাঁধা দেয়। তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে নির্ভীক বলে
” আমাকে যেতে দিচ্ছিস না কেন ? ”
” কারন তোকে ওর কোনো প্রয়োজন নেই। ”
” আমার সাথে ফাজলামি করছিস ? ”
” ফাজলামি নয় এটাই সত্যি। দেখ নির্ভীক তুই থাকলে অনিন্দিতা কখনোই তোর থেকে দূরে যাবে না। তুই তো চাস অনিন্দিতা তোকে ভুলে যাক। তোর প্রতি কোনো মায়া না থাকুক , ঘৃনা করুক ? ”
উত্তর করে না নির্ভীক। ইশরাক কে পাশ কাটিয়ে কেবিনে প্রবেশ করে। কারো পায়ের শব্দ পেয়ে পেছন ঘুরে তাকায় আসিম। অনিন্দিতার হাত মুঠো বন্দী করে ছিলো সে। নির্ভীকের চোখে মুখে বিস্ময়। আসিম এক পলক তাকায় পরক্ষণেই নির্ভীক কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ছেলেটার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অনিন্দিতার দিকে অগ্রসর হয়। কাঁপা হাতে অনিন্দিতার মাথায় স্পর্শ করে। চোখ দুটো ভিজে গেছে। চোখের পাপড়ি গুলো কেমন নেতিয়ে গেছে । অন্তরে হয়েছে রক্তক্ষরণ। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে শুষ্ক ঠোঁট টা অনিন্দিতার কপালে ছোঁয়ায়। তৎক্ষনাৎ নিজেকে সংযত করে এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে আসে। অনিন্দিতার জীবন শেষ হতে দিবে না ওহ। চলে যাবে অনিন্দিতার থেকে। এভাবে কষ্ট পেয়ে মেয়ে টা মরে যাবে।
ওয়েটিং চেয়ারে বসে নির্ভীকের যাওয়া দেখে আসিম।
” চক্রের মতো ঘুরছে কিছু জীবন। কে কাকে চায় বোঝা দায়। কেউ কারো নয়। সব ভালোবাসাই অব্যক্ত রয়। ”
.
আট ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে অনিন্দিতার। প্রচন্ড দূর্বল শরীর উঠাতে বেশ বেগ পেতে হয়। মৃদু আর্তনাদের শব্দ পেতেই ছুটে আসে আসিম। অনিন্দিতা কে উঠে বসতে সাহায্য করে। চকচকে চোখে বলে
” কেমন আছো অনি ? ”
” ভালো। ”
” হসপিটালে থাকতে ভালো লাগে তোমার ? ”
” একদম নয়। ”
” তাহলে এমন কেন করলে ? ”
” মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছিলো খুব। কেমন যেন নেশালো লাগছিলো। হঠাৎ করেই
থমকে যায় অনিন্দিতা। চোখ দুটো এলোমেলো হয়ে ঘোরে। বেড থেকে নেমে যেতেই খপ করে হাত ধরে ফেলে আসিম। ধীর কন্ঠে বলে
” কোথায় যাচ্ছো? ”
” নির্ভীক ভাই ? ”
” চলে গেছেন। ”
” চলে গেছেন ! কোথায় চলে গেছেন ওনি ? আসিম আমাকে যেতে হবে। বলো কোথায় চলে গেছেন নির্ভীক ? ”
” দেশ ছেড়ে চলে গেছেন ওনি। তোমার এই অবস্থা শুনে ও ফিরে আসে নি। ”
” আসিম ! তুমি ভুল জানো। নির্ভীক ভাই আমাকে কথা দিয়েছেন। ওনি আমার সাথে সব সময় থাকবেন। যতো দিন আমার মাথার যন্ত্রণা না যাবে ততো দিন ওনি আমাকে হসপিটালে নিয়ে আসবেন।”
” সে কথা রাখেন নি ওনি। একটু আগেই ওনার ফ্লাইট ছেড়ে দিয়েছে। ”
মেঝে তে বসে পরে অনিন্দিতা। নির্বিকার হয়ে চেয়ে থাকে। আসিমের স্পর্শ পেতেই ডুকরে কেঁদে উঠে। ধীরে ধীরে সে কান্না চিৎকারে পরিনত হয়। যেন কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাবারের অভাবে এখনি মারা যাবে। দু চোখ ভিজে যায় আসিমের। অনিন্দিতার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। নেহাত ই সাউন্ড প্রুফ রুম, না হলে পুরো হসপিটালের লোক জড়ো হতো। অনিন্দিতার অবস্থা শোচনীয়। আসিম বুঝতে পারে এখনি মোক্ষম সুযোগ। সে বলে
” তোমার জন্য একটা চিঠি আছে অনি। নির্ভীক স্যারের চিঠি। ”
” ওনি আমাকে চিঠি দিয়ে গেছেন? ”
” হুমম। ”
চোখ মুছে অনিন্দিতা। মুখে হাসি ফুটেছে মেয়েটার। কেন যেন আসিমের ইচ্ছে হয় না চিঠি টা দেওয়ার। তবে এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না। আসিম বলে
” তোমার জন্য আমার শর্ত আছে অনি। ”
” শর্ত ! কিসের শর্ত ? ”
” আমি জানি না এ চিঠি তে কি লেখা তবে তোমাকে প্রমিস করতে হবে নির্ভীক স্যার এখানে যা লিখেছেন তা তোমাকে মেনে নিতে হবে। ওনি একটা মানুষ অনি। তুমি কেন বুঝো না ওনি তোমাতে বিরক্ত। ”
” আমি তো ওনাকে বিরক্ত করতে চাই নি আসিম। আমি শুধু নিয়ম করে দু বেলা ওনাকে দেখতে চাই। এই টুকু পেলেই হবে।”
” কিন্তু ওনি তো তোমাকে দেখতে চায় না অনি। ”
কোনো কথা বলে না অনিন্দিতা। চিঠি দেখার জন্য মন আকুপাকু করছে। কিছু মুহূর্ত ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সব মেনে নিবে। যা লিখা আছে তাই মেনে নিবে। চিঠি টা বাড়িয়ে দেয় আসিম। শুকনো ঢোক গিলে অনিন্দিতা বলে
” তুমি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াবে আসিম। ”
মাথা ঝাঁকিয়ে ব্যলকনিতে চলে যায় আসিম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে গাঢ় চাহনি দেয়। অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে যায় পুরো শরীর। হিম শীতল বাতাসে গা কেঁপে উঠে। পেছন থেকে অনিন্দিতার উপস্থিতি অনুভব করে। পেছন ফিরতেই অনিন্দিতা বলে
” নির্ভীক ভাই কে জানিয়ে দিও ,অনিন্দিতা তাঁকে কখনো বিরক্ত করবে না। আর কখনো বিরক্ত করবে না। ”
” অনি ! ”
চলে যায় অনিন্দিতা। বেডে শুইয়ে পরে। একদম গুটিশুটি মেরে থাকে। যেন মানসিক রোগী কে কেউ খুব বকে দিয়েছে। যেমন টা ভয়ে গুটিয়ে থাকে মানুষ। চিঠি মেলে আসিম। খুব সুন্দর লেখা নির্ভীকের। এক বার সে লেখায় হাত বুলায় আসিম। পড়া শুরু করে।
” অনিন্দিতা , আপনাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। প্রিয় তো তাকেই বলা যায় যে মানসিক শান্তি প্রদান করে। কিন্তু আপনি নিজে ও মানসিক শান্তি তে নেই আর না আমাকে থাকতে দিয়েছেন। এই যে আপনার অসুস্থতা , আমি অনুভব করি এটার জন্য আমি দায়ী। যদি নির্ভীক নামের কোনো অস্তিত্ব এ পৃথিবী তে না হতো তাহলে আপনি ও সবার মতো সুস্থ জীবন যাপন করতেন। এই মুহুর্তে দাড়িয়ে আমি বুঝতে পেরেছি আপনি আমার জীবনের কাঁটা স্বরূপ । আর আমি আপনার জীবনের অভিশাপ। সম্পর্ক তৈরি হয় আত্মার। আপনার সাথে আমার একটাই সম্পর্ক সেটা হলো মনুষ্যত্ব। ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি আপনাকে। ছোট্ট মেয়েটা কতো শত কথা বলতো আমার সাথে। ভাবতাম এই পিচ্ছি মেয়েটা কে সব সময় আগলে রাখবো।তবে আমার একটি ভাবনায় আপনি প্রেমে পরে যাবেন বুঝে উঠতে পারি নি। প্রেম কোনো পাপ নয়। তবে ভুল মানুষের প্রেমে পরা হলো অন্যায়। আমি আপনাকে দোষারোপ করবো না। আপনি নেহাত ই আবেগে ভেসে যাচ্ছেন। অপর পাশের ব্যক্তিটি কে ভালোবাসেন বলে দাবি করছেন। কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। না হলে এতো টা মানসিক যন্ত্রনা আমায় দিতেন না। আপনি হয়তো বলবেন আমাকে বিরক্ত করছেন না তাহলে ও আমি কেন এগুলো বলছি। এর কারন আমি মানুষ। আপনার এমন অবস্থা দেখে আমার মনে হয় সব টাই আমার জন্য। কোনো ভুল না করে ও অন্যায় কে মাথা পেতে নিলাম। আর একটা কথা আপনি যেমন কাউ কে ভালোবাসেন আমি ও কাউ কে ভালোবাসি। রোজ আমার বন্ধু হলে ও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওর সাথে আগানোর। আপনার বলা কথা গুলো আমাকে ভাবনায় ফেলেছে। আপনি ওকে অপমান করেছেন। সত্যি তো সেদিন খুব অন্যায় হয়েছিলো আমাদের। অতি শীঘ্রই আমি সে অন্যায় কে বাস্তবে পরিনত করবো। শুধু অপেক্ষা সময়ের। আপনি যদি এখন আমাকে মুক্তি দেন তাহলে সত্যি আমি আপনার প্রতি কৃতঙ্গ হবো। দয়া করে অভিনয় বন্ধ করুন। জানি না কোন কারনে এই প্রেমের অভিনয়। আচ্ছা আপনি কি কারো সাথে বাজি রেখেছেন ? প্রেম প্রেম পাগলামি। কিংবা প্রেমের নামে কাঁটা হবেন আমার জীবনে। আপনার ইচ্ছে কিংবা পরিকল্পনা সমস্ত টাই আমি শেষ করে দিলাম। এবার আপনি কি করবেন আমার জানা নেই। শুধু একটা রিকোয়েস্ট এই পাগলামি বন্ধ করুন। আর হ্যাঁ উল্টো কোনো চিন্তা করবেন না। কারন আপনি কিছু করলে সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য পাপের রেখা টেনে দিবেন। যা একজন মানুষ হিসেবে আমি চাই না। কারন আমি নিজেকেভালোবাসি।নিজেকে নিয়ে ভালো থাকুন। আমি ফরেন ব্যাক করছি। ”