#অভিমান
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-১৩
পশ্চিমা আকাশে সূর্য ডুবে গেছে। রোদের আলো চলে গিয়ে চাঁদের আলোর প্রতিফলন ঘটছে ধীরে ধীরে । রাহানের ঘরের বারান্দাটা আস্তে আস্তে নিকলুষ অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। অভ্যাসরত প্রতিটা সময়ের মতো কপালে হাত দিয়ে নিজের পছন্দের কাঠের রঙের রকিং চেয়ারটায় বসে দুলছে সে। চোখ নিভৃতে বন্ধ। বন্ধ চোখের তারায় ভেসে উঠছে ঝুমকোকে পাওয়ার পায়তারা। মনে পরছে তিনবছর আগের কথা, যখন সে দেশ ছেড়েছিলো। নিজের কলিজা টাকে ফেলে রেখে বুকে এক আকাশ সম পরিমান কষ্ট নিয়ে চলে গিয়েছিলো দূর দেশ অস্ট্রেলিয়া।
রাহান দেখতো এবং বুঝতে পারতো ঝুমকোর সাথে তাকে দেখে নিয়ন কখনোই খুশি হতো না। তার মুখ একটা চাপা বিষন্নতায় ছেয়ে যেতো। মুখে ফুটতো মিথ্যা হাসি। রাহান সব বুঝতে পারতো। কিন্তু বিচক্ষণ ঝুমকোও কখনো ধরতে পারতো না একমাত্র কাছের বন্ধুর অনুভূতি। রাহান এখন বুঝতে পারে। কিন্তু একটা সময় সেও ভেবেছিলো ঝুমকো বোধ হয় দূর্বল তার অতিপ্রিয় বন্ধুটির প্রতি।
রাহান তো নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে দেশ ছেড়েছিলো। নিজের মনে পাথর চাপা দিয়ে সেই টেক্সট করেছিলো। তাদের সম্পর্কে হাজার ঝগড়া বিবাদ থাকলেও কেউ কখনো ব্রেকাপ শব্দটি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করার সাহস দেখায় নি। কিন্তু রাহান দেখিয়েছিলো। প্রেয়সীর ভালো থাকার জন্য দেখিয়েছিলো। সত্যি রাহান কি বোকামোটাই না করেছে! এটাকে কি বোকামো বলে না কি প্রেয়সীর সুখে সুখান্বিত হওয়া বলে রাহান তা জানে না। সে শুধু জানে সে ভুল করেছিলো। ঝুমকোকে ছাড়া সে নিঃশ্বাসের কথা ভুলে যায়। বাঁচার তো কোনো আশ্বাস ই নেই।
কম তো চেষ্টা করেনি রাহান এই তীক্ষ্ণ নরম মেয়েটাকে ভুলার জন্য। কিন্তু পারে নি। সে ভুলে গিয়েছিলো চাইলেই সব কিছু পারা যায় না। কিছু মানুষ মনের ভেতর শক্ত ভাবে মাটি খুড়ে বসে থাকে। চাইলেও বের করা যায় না।
কপাল থেকে হাত সরিয়ে রাহান স্বগতোক্তির মতো বলল,
“ভুল করে ভালোবেসে ফেলা যায় কিন্তু ভুল করে ভুলা যায় না। জীবনের প্রথম প্রেম ভুল করেই হয়ে যায়। তখন সব ভুল হয়ে যায়!”
______________________________
কাধে খয়েরি রঙের ভেনিটি ব্যাগ ঝুলিয়ে বেগুনি ঢোলা একটা টপস সাথে কালো জিন্স পরে সন্ধ্যায় বেরিয়ে পরেছে ঝুমকো। উদ্দেশ্য নিরুদ্দেশ ভাবে ঘুরা-ফেরা করা। আর কামিনী বেগমের ওষুধ কিনে নিয়ে আসা। আজকাল ঝুমকো বারে যায় না। কেনো যায় না কে জানে? শুধু মনে হয় বারে যাওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে তার। যে মানুষটার অভাবে সে বারে গিয়ে কষ্ট ভুলতো। সে মানুষটাই তো এখন এসে পরেছে। চাইলেই দেখা যাচ্ছে তাকে। নাই বা তার সাথে ঝুমকোর সম্পর্ক হলো তাতে কি? চোখের দেখা টা তো দেখা যাচ্ছে। তাতেই শান্তি!
ঝুমকো রাস্তার কিনার ধরে হেটে যাচ্ছে। আচমকা তার সামনে এসে দাড়ালো সোহেল। ঝুমকো চমকে উঠলো। এই ছেলেটা এমন হঠাৎ করেই এসে পরে। বলা নেই কয়া নেই। হুটহাট। যখন তখন। ঝুমকো মাঝে মাঝে বিস্মিত হয় তো মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়। যেমন এখন! একা একা নিজের সাথে বোঝাপড়ার সময় সোহেলের উপস্থিত হওয়াটা ঝুমকোর চোখে মুখে বিরক্তির আভাস ফুটিয়ে তুলল।
ফর্সা মুখের পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি লম্বার বুদ্ধিমান ছেলেটা দেখতে শুনতে বেশ ভালোই। নিশ্চয়ই যে কোনো মেয়ের প্রেমিক পুরুষ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। মাস্টার্স শেষ করে বড়লোক বাপের ব্যাবসায় বসেছে। নিশ্চয়ই কারোর অথৈ ভালোবাসার পাবার যোগ্য এই ছেলে। ঝুমকো একবার ভালো করে খেয়াল করলো। এমন ভাবে সে আগে কখনো সোহেলকে খেয়াল করে দেখে নি। শুধু একটু ক্যারাক্টারের দোষ বলেই ছেলেটার এতো সুন্দর মুখ আর পারসোনালিটি আড়ালে পরে গেছে। হায় কপাল!
সোহেলকে বিশ্লেষণ করা শেষে ঝুমকো আবার হাটা ধরে। পায়ের গতি ধীর। সোহেলও ঝুমকোর সাথে হেটে যায়। হঠাৎ করে সোহেল কোনো কথা খুঁজে পায় না। ঝুমকোর বিষন্ন মুখটার দিকে তাকালে আজকাল তার বুকে চিনচিন ব্যাথা হয়। কেমন একটা অনুভূতি হয়। যেটা কিছুদিন আগ অবধি ছিলো প্রতিশোধ, আগুন, রাগ। সোহেল বুঝতে পারছে সে অজান্তেই কোনো আশ্চর্য মায়াজালে আটকা পরে যাচ্ছে। যেই মায়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে তার বেগ পেতে হবে।
অনেকক্ষন নিরব ভাবে হাটাচলার পর সোহেল প্রথম প্রশ্ন করলো, ‘শপিং মলে ওভাবে চলে যেতে বললে কেনো?’
সোহেলের কন্ঠে কেমন একটু ছেলেমানুষী আর অভিমানী ছোয়া। ঝুমকো অবাক হয়ে নিজের পা চালানো থামিয়ে দেয়। এমন পারসোনালিটি ইগোস্টিক ছেলের নত এবং বোকা কথা শুনে ঝুমকো বিস্মিত। আবার হাটা শুরু করে সে আস্তে গলায় বলল, ‘এমনি।’
‘মন খারাপ?’
ঝুমকো চমকে উঠে। মনের নিরব সন্ধ্যা রাস্তা এবং বাস্তবে গাড়ির কোলাহল, রাস্তার ধারে ফ্লুরোসেন্ট এর তীক্ষ্ণ আলো, কালো বিষাক্ত ধোয়া, সাথে বিষন্ন মন। মন খারাপের নিরব এই সন্ধ্যায় এই কথাটা যেনো ঝুমকোর জন্য খুব জরুরি ছিলো। সে অতিনিচু গলায় বলল, ‘না।’
‘ওহ।’ সোহেল আর প্রশ্ন করার উৎসাহ দেখালো না। অথচ রাহান হলে এতোক্ষন টেনে হিচড়ে ঝুমকোর পেট থেকে কথা বের করতো। ঝুমকোর মন ভালো করার টেকনিক রাহান দু মিনিটেই বের করে ফেলতো। ঝুমকো আনমনায় হাসলো। সব মানুষ এক রকম হয় না।
অনেকক্ষন আবার পিনপিন নিরবতা। এরপর সোহেল আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা তোমার কি ছেলে পছন্দ না?’
‘মানে?’ ঝুমকো চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করে।
‘মানে, ইউ হেভ নো বয়ফ্রেন্ড, ইভেন নট এ সিংগেল ক্রাশ।’ সোহেল বলল মাথা নিচু করে চোখ মুখ কাচুমাচু করে। যেনো সে ঝুমকোকে আজরাইল এর মতো ভয় পায়।
সোহেলের এমন ভয় মাখা কথায় ঝুমকো খুব হাসলো। এরপর জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি জানো আমার বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি নেই?’
‘আছে বুঝি?’
‘থাকতেই পারে। আমি কি সুন্দর না? আমার বয়ফ্রেন্ড থাকাটা কি অস্বাভাবিক কিছু?’
‘ক্রাশ ও আছে?’
ঝুমকো আবার হাসলো। আশ্চর্য! আজ ছেলেটা এমন বোকা বোকা কথা বলছে কেনো? সোহেল ঝুমকোর হাসির দিকে তাকিয়ে থাকলো। এই মেয়ের প্রতি খুব কিউরিওসিটি হচ্ছে সোহেলের। জানার প্রবল ইচ্ছে এই মেয়েটাকে। কেনো মেয়েটা মদ খায়? কেনো মেয়েটা মাঝে মাঝে কাঁদে? বিরবির করে? এখন কেনো বারে যায় না? কেনো সোহেল কে কিছুদিন থেকে এড়িয়ে চলছে? কার সাথে এতো বিজি থাকে মেয়েটা?
ঝুমকো হাসি থামায়। চোখে চোখ পরে। চার চোখ এক হয়। এর পর কিছুসময় এক মনের উত্তপ্ত বাতাস অন্য মনের অস্বস্থি। কেটে যায় কিছু মুহুর্ত। ঝুমকো চোখ সরিয়ে নেয়। কেশে উঠে। সোহেল আবার প্রশ্ন করে, ‘কি নাম তোমার বয়ফ্রেন্ডের?’
‘নেই।’
‘নেই?’
‘না।’
‘কখনো ছিলো না?’
‘ছিলো একসময়।’
‘এখনো ভালোবাসো?’
প্রশ্নটি ঝুমকোর মনের উত্থাল সাগরের পানি এই তীর থেকে ওই তীরে ক্রমশ বেগে ছুড়ে মারলো। মিথ্যা বলা তার ধাতে নেই। সে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে বলল, ‘হুম বাসি।’
সোহেলের নিঃশ্বাস থেমে গেলো। বুকের ভেতর সজোরে কেউ তবলা বাজাচ্ছে। ব্যথা করছে বুক। আজ কিছুদিন যাবত থেকে এই মেয়েটাকে মনে পরলেই তার বুকের ভেতর তীব্র ব্যাথা হয়। কেনো? সে কি ভালোবেসে ফেলছে এই মেয়েটাকে? সোহেল ভালোবাসছে? এটা কি আদেও সম্ভব। প্লে বয় সোহেল খান ভালোবাসছে? তাও আবার এমন একটা মেয়েকে যে কিনা প্রতি সেকেন্ড তাকে অবজ্ঞা করেছে।
কথাটা বলার পর থেকে ঝুমকোর কেমন যেনো লাগতে শুরু করলো। সে একটু অপ্রতিভ গলায় বলল, ‘তুমি হঠাৎ এতোকিছু জানতে চাইছো কেনো?’
‘না মানে এমনি।’
আরেকটু এগোতেই প্রাপ্তির সাথে দেখা হলো। ঝুমকো হাত নেড়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। প্রাপ্তি এগিয়ে আসলো ওদের দিকে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে এক মুহুর্তের জন্য দেখলো। এই ছেলেটাকে সে চিনে। ঝুমকোর পিছে লেগে থাকতে দেখেছে সবসময়। কিন্তু কখনো কথা বলে নি। নিজের বন্ধুদের সাথে যেমনি হোক বাইরের লোকেদের সাথে সে যথেষ্ট আত্মসম্মান বোধ বজায় রেখে কথা বলে। যেচে কথা বলা তার ধাতে নেই।
সোহেল আগাগোড়া একবার প্রাপ্তিকে দেখে নিলো। ছিপছিপে গড়নের শরীর, মুখে কোনো প্রসাধনী নেই, পাতলা ফিনফিনে ঠোঁট, তীক্ষ্ণ কুচকানো দুটো চোখ। একটা ঝগড়া ঝগড়া ভাব আছে মুখের ভেতর। গাল দুটি চাপা। ভ্রুর নিচে তিল। শ্যামলা মুখখানায় মায়াবী ভাব। এই মেয়েকে সোহেল আগেও দেখেছে কিন্তু এভাবে কখনো খেয়াল করে নি। ঝুমকোর বান্ধবী হিসেবে দেখেছে। কথা বলার ও প্রয়োজন অনুভব করে নি কখনো। কি জানি আজ কি হলো সে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘হ্যালো মিস।’
প্রাপ্তি হাত না ধরেই সালাম দিয়ে খোচা দেওয়ার মতো করে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম।’
সোহেল অপমানে হাত সরিয়ে নিলো। ঝুমকো বলল, ‘তুই এখানে?’
‘টিউশনি করিয়ে যাচ্ছিলাম।’ বলেই প্রাপ্তি আড়চোখে একবার সোহেলের দিকে তাকালো। সে শুনে এসেছে এই ছেলের চরিত্র ভালো না। তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতো। এছাড়াও এই ছেলের ড্যাম কেয়ার আর পারসোনালিটি দেখলে প্রাপ্তির গা কামড়ায়। ঝুমকো বলল, ‘আচ্ছা গাইজ তোমরা কথা বলো আমি নানুমনির জন্য ওষুধ কিনে আনি।’
ঝুমকো চলে গেলো। প্রাপ্তি অনেকবার ঝুমকোর নাম ধরে ডাকলো। শুনলোই না মেয়েটা।
নাকের পাটাতন ফুলিয়ে রেখেছে প্রাপ্তি। সোহেলের কেমন যেনো একটু অস্বস্থি হচ্ছে। চারিপাশের সকল কিছুর অনুভূতি কেমন যেনো বিষাদ! এই মুহুর্তে পাশের জনের উপস্থিতি তার ভালো ঠেকছে না। সে অনুভব করতে পারছে না। অস্বস্থিতে কাদা হয়ে রয়েছে। সোহেল কেশে উঠলো।
‘কি নিয়ে পড়ছেন? মানে কোন ডিপার্টমেন্ট ?’ অনেক কষ্টে জড়তা কাটিয়ে সোহেল বলল।
‘ঝুমকো যা নিয়ে পড়ছে ইংলিশ..সেটা নিয়েই এগোচ্ছি।’ প্রাপ্তি বলল কোনোরকম জড়তা ছাড়াই। কাট কাট গলায়। তারপর আবার ভ্রু কুচকে থাকলো নাক টা উঁচু করে ঝগড়ুটের মতো।
সোহেল কেশে উঠলো। সেও বড্ড বোকা বোকা কথা বলছে। ঝুমকোর বান্ধবী তো ঝুমকোর সাথেই পড়বে। কি যে হলো আজ তার!
‘আচ্ছা? আপনি কি সবসময় এমন মুখ করেই থাকেন? ঝগড়ুটের মতো?’
প্রাপ্তি ভ্রু কুচকে তাকালো। রোষানলে জ্বলে উঠলো। দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘একটা অপরিচিতা মেয়েকে মুখের উপর বলে দিলেন ঝগড়ুটে? ‘
‘কি আশ্চর্য! রেগে যাচ্ছেন আপনি?’ সোহেল বলল অবাক হয়ে।
‘রেগে যাবো না? আপনি একজনকে মুখের উপর বলছেন ঝগড়ুটে আর সে রেগে যাবে না? বলি রাগ কি আপনাকে বলে বলে করবে? আপনাকে যদি বলা হয় আপনি এমন কেনো? প্লে বয়ের মতো?’ প্রাপ্তি আগুনরঙায় মুখ কে লাল বানিয়ে বলল।
সোহেল অনেকটা স্বগতোক্তির মতো বলল, ‘কি আশ্চর্য! এতো রেগে যাওয়ার মতো কি বললাম আমি? ঝগড়ুটের মতো দেখালে ঝগড়ুটে বলবো না?’
প্রাপ্তি সম্পূর্ণটা শুনতে পেলো। সে খ্যাঁক করে বলে উঠলো, ‘তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আমি দেখতে ঝগড়ুটের মতো?’
‘হ্যা তেমন ই।’ নিজের মনে কথাটা বলে পরক্ষণেই সোহেল আবার বলল, ‘না মানে আমি সেভাবে বলি নি।’
কথাটা বলে সোহেল নিজেই আশ্চর্য। আজ সে কেমন মেপে মেপে কথা বলছে। কবে শিখলো এভাবে কথা বলা?
প্রাপ্তি রাগে ফুসতে ফুসতে বলল, ‘আপনি একটা প্লে বয়। একটা ফালতু?’
‘আমি প্লে বয়?’
‘অবশ্যই’
‘ঠিক কি কারনে আপনার মনে হলো আমি প্লে বয়? আমার গায়ে কি সিল মারা আছে?’
‘না নেই। কিন্তু এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে আপনার সারা গায়ে আমি সিল মেরে দেই প্লে বয় হিসেবে।’
‘কি সাংঘাতিক আপনি?? আপনি কি সবসময় এমন অগ্নিমূর্তির ন্যায় আকার ধারন করে থাকেন?’
প্রাপ্তি এবার রেগে গিয়ে তারস্বরে বলল, ‘ওই মিয়া ওই। ওই ফাজিল মিয়া সমস্যা কি আপনার হ্যা? একবার বলেন ঝগড়ুটে আবার বলেন রাগী। আপনি নিজে খুব ভালো?’
‘ভালো না?’ সোহেল কেমন বোকা বোকা গলায় প্রশ্ন করে। আজব ব্যাপার! আজ সে এমন বোকা হয়ে গেলো কেনো? অন্য কোনো সময় হলে সে এই মুহুর্তে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিকে ঠাস করে চর মারতো কিংবা কড়া গলায় অপমানজনক কিছু বলে দিতো। কিন্তু এখন কি হচ্ছে?
প্রাপ্তি দাঁত চিবিয়ে বলল, ‘এই ভাই আপনি কি হ্যাবলা? কি বারবার প্রশ্ন করেন হ্যা? যান তো।’
‘আপনি তো মারাত্মক ঝগড়ুটে।’ সোহেল বলল হালকা তেজি গলায়।
প্রাপ্তি কটমট চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো ঝুমকোর দিকে। কড়া গলায় বলল, ‘ওই শালী তোর হয় নাই ওষুধ কিনা? দোকান কিনতাছস না কি?’
‘যা, হয়ে গেছে।’
‘আমি চলে গেলাম। বাল কোন ফালতু লোকের সাথে দাড় করায় রাখছিস তুই আমারে। সাচ এ হ্যাবলাকান্ত!’
‘হোয়াট? সোহেল হ্যাবলাকান্ত?’ ঝুমকো বলল বিস্মিত চোখে।
‘এমন ভাবে বলতাছো যেনো তোমার জামাই লাগে?’ প্রাপ্তির কাট কাট গলা। ঝুমকো আগুন চোখে তাকিয়ে থাকলো প্রাপ্তির দিকে। দাঁত কটমট করে প্রাপ্তিকে অকথ্য কিছু গালি শুনিয়ে দিলো।
#অভিমান
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-১৪
বৃষ্টির ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ বাতাসে। কাল ঝড় হয়েছে। গতো কয়েক সপ্তাহের অসহনীয় কড়া রোদের উত্তাপ এক নিমিষে কমে গিয়ে সহনীয় হয়ে উঠেছে। রাস্তার ফুটপাত দিয়ে তখন হেটে যাচ্ছে ঝুমকো। প্রাপ্তি রেগে মেগে চলে গেছে। সোহেলও লা পাত্তা। অগ্যতা ঝুমকো নিজের পরিকল্পনা মতো একাই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নিজের মনে মনে বলে ঝুমকো, ‘প্রাপ্তি টা না আসলেই বোকা। সোহেল বলে হ্যাবলাকান্ত? এই মেয়ের মাথায় শুধু গবর। মানুষ চিনে না।’
বিরবির করতে করতেই ঝুমকো একটু থামে। এটা সত্যি সোহেল আজকে একটু অস্বাভাবিক আচরন করেছে। তার চাহনিও একটু অন্যরকম সপ্রতিভ ছিলো আজ। চোখে মুখে লালসা ছিলো না চকচকে ভাব ছিলো না। ছিলো মাদুর্যতা, নরমতা, ভিষণ সপ্রাণ। ঝুমকো ভ্রু কুচকায়। সামনের কোনো গাড়ি থেকে হেড লাইটের আলো প্রচন্ড বেগে আচড়ে পরে তার চোখে মুখে। এই আকস্মিক প্রকান্ড আলো থেকে বাচঁতে ঝুমকো চোখে হাত দেয়। চোখে আলো সয়ে এলে সামনে তাকায়।
গাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে রাহান। সে এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো ঝুমকোর সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে।
গাড়ি থেকে রাহানকে বের হতে দেখে ঝুমকো নড়েচড়ে উঠলো। তারপর হাটা দিলো সামনের দিকে।
রাহান পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কোথায় যাচ্ছো?’
ঝুমকো ত্যারা ভাবে বলে,’জাহান্নামে। যাবে?’
রাহান হেসে বলল, ‘চলো।’
‘ডিসগাস্টিং।’
‘ইউ।’
ঝুমকো রেগে তাকায় রাহানের দিকে। রাহান গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে, ‘উঠুন, নদীর পারে যাই। চলেন।’
‘হাও ফানি….তোমার সাথে যাবো?’
‘অবশ্যই তো কার সাথে যাবে তোমার সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড?’
‘ইয়েস আবসুলোটলি।’
‘গাড়িতে বসো ঝুমকো নাহলে আমি এখন তোমাকে কোলে নেবো।’ দাঁতে দাঁত পিষে রাহান বলল।
ঝুমকো চোখ বড় বড় করলো। কি সাংঘাতিক হুমকি! তার চোখের কোনায় অল্প অল্প জল বিন্দুর রেখাও তৈরি হয়। রাহান মাত্র ঝুমকো বলে ডাকলো! রাহান সচারাচর কখনো ঝুমকো বলে ডাকে না। একমাত্র বেশি রাগ করা ছাড়া। করুক গে রাগ, তাতে আমার কি? কিন্তু সমস্যা হলো এই ভরা রাস্তায় যদি কোলে তুলে তাহলে মান সম্মান সব শেষ। এই ছেলে যা বলে তাই করে। ঝুমকো অনিচ্ছাকৃত ভাবেই উঠে বসলো গাড়িতে।
,
চারিপাশে সমধুর বাতাস..সাথে ঠান্ডা পানির ঝাপটা.. ভাঙা চুড়া একটা নৌকায় নদীতে পা ডুবিয়ে বসে থাকা.. পাশে প্রিয় মানুষ.. প্রিয় মানুষটির কাধ বুক.. আর কি লাগে! জীবনের মধুর মুহুর্ত তো এই! শুধু যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে না ঝুমকো। এই যে বসে আছে সুঠাম দেহের ড্যাশিং হ্যান্ডসাম এট্রাকটিভ যুবক। এক সময়ের সবচেয়ে আপন মানুষটি। যখন ছিলো না কোনো জড়তা। যখন তখন কাধে বুকে মাথা রাখা যেতো। কিন্তু আজ পারা যাচ্ছে না। চাইলেও নিজের আত্মসাৎ বিসর্জন দিয়ে পারা যাচ্ছে না।
রাহান হাটুর একটু নিচ অবধি প্যান্ট গুটিয়ে নিয়েছে। তার ফর্সা পায়ের কালো লোম গুলো ঝুমকোর ভেতরে কাপন ধরাচ্ছে। থেকে থেকে বার বার ঝুমকো আড়চোখে সেই পানিতে ডুবানো পায়ের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার রাহানের বুকের দিকে তাকাচ্ছে। রাহান কেশে উঠলো। ঝুমকো অন্যদিকে তাকালো। রাহান ক্ষীণ স্বরে বলল, ‘এতো রাতে বাইরে কি করছিলে?’
ঝুমকো কথার উত্তর দিলো না। সে ঘুরতে বেরিয়েছিলো। তা স্বার্থক! বরং আরো বেশি স্বার্থক। এই রাতের আধারে…চাঁদের মিস্টি রুপালি আলোয়…পাশে বসা গোপন ভালোবাসার মানুষটির সাথে নদীর পানির ছলাৎ ছলাৎ মিস্টি শব্দ উপভোগ করা….সত্যি স্বার্থক ঝুমকোর আজকের অপ্রতুল ঘরের বাইরে বের হওয়া। হঠাৎ কি হলো, দূর আকাশের গাঢ় নীল তাঁরকাখচিত জমিনের দিকে তাকিয়ে খুব আদুরে সুরে ঝুমকো বলে উঠলো,
‘ওই যে দুটো তারা! সেই দুটো আমার বাবা মা। আর মাঝখানে যেটা সেটা হলো আমার নানুভাই। নানুভাই না ভীষণ খারাপ! সবসময় আমার বাবা-মার মাঝখানে আসে। ওদের এক হতেই দেয় না। দিলেও মেনে নেয় না।’
ঝুমকো ছোটো মানুষের মতো কথা বলে। একদম আদুরে পুতুলের মতো। তার পুতুল পুতুল গাল দুটো চাঁদের আলোয় চকচক করে। ঘন পল্লব বিশিষ্ট চোখ দুটি বারবার পলক ফেলে। রাহানের ভিষন ভালো লাগে! ও এক হাত দিয়ে কাছে টেনে নেয় ঝুমকোকে। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। ঝুমকোর খোলা মসৃণ চুল গুলোতে হাত রেখে চুমু দেয়।
ঝুমকো আদুরে বিড়ালের মতো রাহানের বুকের সাথে লেপ্টে যায়। তার আরাম লাগছে। বুকের ভেতর ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। ঝুমকোর কপালে একটা তপ্ত চুমু দিয়ে রাহান বলল, ‘জানো ঝুম..?’
‘না..’
‘অনেক কিছুই জানো না।’
‘হুম, না বললে জানবো কি করে?’
‘বেশ তবে জানাই?’
‘জানাও।’
রাহান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, ❝ভালোবাসা দু ধরনের হয়। এক, তার খুশির জন্য নিজের ভালোবাসা ছেড়ে দেওয়া। দুই, নিজের জন্য নিজের ভালোবাসা আকড়ে ধরা।❞
ঝুমকো রাহানের বুক থেকে সরে এলো। কিছুক্ষন প্রগাঢ় নিস্তব্ধতার পর রাহান আবার বলে উঠলো,
‘আমি এক নাম্বারটা বেছে নিয়েছিলাম ঝুমকোলতা..। কারন আমার কাছে মনে হয়েছিলো তোমাকে অসুখী করার মতো ক্ষমতা আল্লাহ আমায় দেয় নি। তোমার সুখে আমি আমার জান হাজির করতে পারবো। স্বার্থপর হতে পারবো তবে তোমার জন্য, নিজের জন্য না।’
‘এসব কেনো বলছো রাহান?’
‘বলছি কারন….’ রাহান থেমে গিয়ে বলল, ‘এমনি।’
সে রাতে তাদের আর বসা হলো না। ভালোবাসার বুলি শুনানো হলো না। রাহান পারলো না সত্যি বলে ঝুমকোর মন ভেঙে দিতে। নির্বিকারে ঝুমকোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসলো সে।
এর মাঝে কেটে গেলো এক মাস। রাহান আগের মতো ঝুমকোকে ডিস্টার্ব করে না। দেখা করে না। কথা বলে না। নিস্তব্ধ নিবীড় রাতে ঝুমকো শুধু একা একা কাঁদে ঠিক আগের দিনগুলোর মতো। বালিশ চাঁদর খামচে কাদে! তবুও রাহানের সাথে যোগাযোগ করে না। স্ট্রং ইগো বলে কথা!
এদিকে সোহেল আছে টানাপোড়ায়। ঝুমকোর সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমে এসেছে। তার কেমন শূন্যতা লাগে। অপেক্ষা করতে করতে সে ক্লান্ত। ঝুমকোর বাড়িতে কোনো দিন যাওয়া হয় নি বলে হুটহাট এখন যেতেও পারে না। সব দিক থেকে সে আটকে আছে। প্রাপ্তির সাথে দেখা হয়েছিলো এর মাঝে তিনদিন। স্বভাবরতই কুশল বিনিময় করতে করতে তা ঝগড়াই পরিণত হয়েছে। সোহেল বুঝে না, এই প্রাপ্তি মেয়েটাকে দেখলেই তার মাথায় শূয়ো পোকা কামড়ায়। সে আবোলতাবোল কথা বলে। প্রাপ্তিকে রাগানোর প্রবল উৎকন্ঠা কাজ করে তার মাঝে।
আজ বিকালে ঝুমকো বের হয়েছে। পনেরো দিন পর সে দুনিয়া দেখলো। প্রাপ্তির সাথে গিয়ে সব কার্যক্রম সেরে এসেছে মাস্টার্স এ ভর্তির হওয়ার। লাইফটার একটা মোড় এবার নেওয়া দরকার বলেই তার মনে হয়। বিকেল হয়ে এসেছে প্রায়। প্রাপ্তির সাথে ঘুরাঘুরি করতে করতে কখন দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে গেছে টের পাওয়া যায় নি।
সোহেলের মাস্টার্স শেষ। ঝুমকো বারেও যায় না। কাজেই সোহেলের সাথে ভারসিটি, বার সব জায়গায় দেখা সাক্ষাৎ অফ। কিন্তু আজ নির্জন রাস্তা দিয়ে দু বান্ধবী হেটে যাওয়ার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বশতই দেখা হলো সোহেলের সাথে। প্রাপ্তি ভ্রু কুচকে তারস্বরে বলল,
‘এই ব্যাটা কি তোর পেছনে স্পাই লাগাইছে তুই যেখানে ওই সেইখানে? এই পনেরো দিনে তো তেমন দেখা যায় নাই। মাত্র তিনদিন দেখা হইছে আমার সাথে।’
‘জানি না। বাদ দে। ভালো হয়ে গেছে মনে হয়। মুখশ্রীতে পরিবর্তন এসেছে। স্বভাব ও ভালো হয়ে এসেছে আমি খোঁজ পেয়েছি।’ ঝুমকো বলল চাপাস্বরে।
সোহেল ওদের দিকে এগিয়ে হেসে হাসি মুখে বলল,
‘কেমন আছো ঝুমকো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি?’
‘এই তো চলছে। কি করছো এখানে?’
‘এই তো ঘুরাঘুরি করতে বেরিয়েছিলাম।’
‘ওহ। খেয়েছো দুপুরে?’
‘না খাওয়া হয় নি।’
‘চলো তাহলে। আমিও কাজের চাপে খেতে পারি নি। রেসটুরেন্টে যাওয়া যাক।’
প্রাপ্তি আড়চোখে দেখছে সোহেলকে। সুঠাম দেহের এই যুবকের হাসি মুখ দেখে তার গা জ্বলে যাচ্ছে। সোহেল প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, ‘তুমিও আসো।’
প্রাপ্তি মুখটাকে কাচুমাচু করে বলল, ‘নো থ্যাংকস। ঝুমকো আমি গেলাম।’
সোহেল তখন একটা গা জ্বালানো কথা বলল, ‘আরে চলো না। এখন আর কোথায় যাবে? থাকো তো মেসে। মেসে এই বিকালে তোমার জন্য কেউ খাবার নিয়ে বসে নেই।’
প্রাপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘আপনাকে দেখতে বলেছে কেউ? আর তাছাড়া আমার মিল দেওয়া আছে। আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।’
‘চিন্তা করবো না বলছো?’
‘হ্যা।’
‘ওকে।’
‘আরে তোমরা ঝগড়া করছো কেনো? সোহেল তুমি ঝগড়া শিখেছো কবে থেকে? আর প্রাপ্তি তুই বা এমন করছিস কেনো? চল।’ ঝুমকো বলল আদেশস্বরুপ।
‘ওকে দেখলে আমার ভেতর থেকে আপনা আপনি ঝগড়া আসে কি যে করি!’ সোহেল বিরবির করে বলে।
‘হ্যা?’ ঝুমকো জিজ্ঞেস করলো।
‘কিছু না চলো। মিস.ঝগড়ুটে মহিলা চলুন।’
প্রাপ্তি দাঁতে দাঁত লাগিয়ে গেলো।
রেসটুরেন্ট থেকে ঝুমকো বের হয়ে পরেছে একটু আগে৷ প্রাপ্তি আর সোহেলের খাওয়া এখনো শেষ হয় নি। ঝুমকো বেরিয়ে এসেছে রাহানের টেক্সট পেয়ে। সে লিখে পাঠিয়েছে, ‘ইউ আর সাচ এ হিপোক্রেটিস গার্ল।’ মেসেজ টা পড়ার সাথে সাথে ঝুমকোর গলায় খাবার আটকে গেছে। দীর্ঘ এক মাস পর ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে এই বার্তা সে কখনো আশা করে নি। কি করেছে কি ঝুমকো হ্যা? খাবার আর গলা দিয়ে নামলো না। চোখের কোনায় জমো হতে লাগলো বিন্দু বিন্দু জল। আর এক মুহুর্ত থাকলে সেখানেই গড়গড় করে পরতো।
‘জরুরি কাজ আছে’ বলে তারাহুরো করে ওদের রেখে বেরিয়ে এসেছে ঝুমকো। ভারী অভিমানে বুক উদ্বেল। শপথ করেছে এই বেয়াদব লোকটার সাথে আর কক্ষনো যোগাযোগ করবে না সে। লোকটা ভিষণ খারাপ। মানুষকে কষ্ট দিতে দু বার ভাবে না।
ঝুমকো খেয়াল করলো তার সামনে খুব জোরে সোরে ব্রেক কষলো একটা লাল মার্সিডিজ বেঞ্জ কার। ঝুমকো চমকে পিছিয়ে গেলো। গাড়ির ব্ল্যাক মিরর টা খুলতেই দেখা গেলো শক্ত চোয়ালের লাল মুখের অংশীদারী রাহানকে। গায়ে তার মেরুন কালারে শার্ট আর ক্রিম কালারের প্যান্ট। চোখে সি গ্রিন কালারের একটা সানগ্লাস। ঝুমকো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রাহান শব্দ করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো৷ ঝুমকোর হাতের কবজি শক্ত করে মুচড়িয়ে ধরে বসিয়ে দিলো ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটাতে। দরজায় লাথি দিয়ে শব্দ করে লাগালো। কেপে উঠলো পুরো গাড়ি। কেপে উঠলো ঝুমকো।
এতোক্ষনের শপথ ভুলে গেলো ভয়ে৷ রাহানের ওই আগুন মুখের দিকে তাকালেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। যেনো ঝুমকো বড়সড় কোনো অন্যায় করে ফেলেছে। তবুও অনেক কষ্টে আক্রোশের ন্যায় অভিনয় করে ঝুমকো বলল,
‘এসব হচ্ছে কি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে? গাড়ি থামাও আমি নামবো।’
রাহান গাড়ি থামায় না। তার চোয়াল আরো শক্ত হয়ে উঠে। শ্যামলা রং কঠিন হয়। গাল ডেবে যায়। ঠোঁট আরেক ঠোঁটের মাঝে বন্ধী। রাহান যখন ভয়ানক ভাবে রেগে থাকে তখন সে ঠোঁট চেপে রাখে। এখনও তাই করছে। ঝুমকো জানে। সে সারা রাস্তা প্রশ্ন করলো না। তার ভরসা আছে এই লোকটা আর যাই হোক ঝুমকোর কোনো ক্ষতি করবে না।
গাড়ি চলছে খুব স্পীডে। একসময় গতি ধীর হয়ে এলো। গাড়ির সামনে আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হলো একটা পুরোনো বিল্ডিং। গাড়িটা থামলো সেই বিল্ডিংয়ের সামনে। সাদা চুন দেয়া দেয়াল। খসে খসে দেয়াল থেকে পরে গেছে চামড়া। ভেতরের সিমেন্ট দৃশ্যমান। একটা সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা, ‘কাজী অফিস।’
ঝুমকো চমকে উঠলো। চট করে তাকালো রাহানের দিকে। কিন্তু রাহান নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। ঝুমকোর চোখ পানিতে ভরে উঠলো। হাত পা অজানায় কাপতে লাগলো। পাশে বসা মানুষটিকে খুব অচেনা লাগতে শুরু করলো।
চলবে❤️
চলবে❤️