#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫
আয়াজ আমাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামান।গাড়ির আসার শব্দে বাড়ির ভিতর আহিন এসে দেখে যায়।তার কিছুক্ষণ পর আম্মু বের হয়ে আসে।আম্মুকে দেখে আয়াজ বের হন গাড়ি থেকে।উনি গিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলছেন।আমি ভয়তে আর বের হয়নি।আমি শুধু দেখতে ছিলাম উনাদের।কিছুক্ষন পর আয়াজ এসে আমায় গাড়ি থেকে বের হতে বলেন।আমি উনার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলি,
“না না আমি যাবো না আব্বু আমায় মেরেই ফেলবে,আয়াজ চুলুন বাসায় ফিরে যাই।আপনি আম্মুর কাছ থেকে আমার কাগজ পত্রগুলো নিয়ে আসুন”
উনি এবার আমায় ধমক দিয়ে বলেন,”চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে আসো”
আমি দ্রুত গাড়ি থেকে নামলাম।গাড়ি থেকে নামতেই উনি আমার হাত ধরে আম্মুর সামনে নিয়ে গেলেন।আম্মুকে দেখে কান্নাগুলো দলাপাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরতেই আমি হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলাম।আম্মু আমায় শান্ত করতে লাগলেন।আম্মুর চোখেও পানি।আম্মু আমার গালে হাত দিয়ে বলেন,
“কি রে বোকা মেয়ে তুই এইভাবে কাঁদছিস কেনো”
আমার আবারও কান্না পেয়ে গেলো।ফুঁফিয়ে উঠলাম।আম্মু আমাকে সোজা ধার করিয়ে দিয়ে বলে,
“বাবা তুমি ওকে নিয়ে আসো আমি ভেতরে গেলাম”
আম্মু ভেতরে চলে গেলেন।আমার কান্না এখনো থামেনি।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।উনি চোখের পানিগুলো মুছে দিলেন।গালে হাত দিয়ে আমায় বললেন,
“তাকাও আমার দিকে”
আমি তাকালাম না তাও।উনি এবার ধমক দিয়ে বললেন,”তাকাতে বলছি আমি”
আমি দ্রুত উনার দিকে তাকালাম।উনি আমায় শান্ত কন্ঠে বললেন,
“আমি সব ঠিক করে দেবো।তোমার আর আমার নামে যেই কলঙ্ক দিয়েছে এই গ্রামবাসী তা ভুল প্রমানিত করবো।তুমি চিন্তা করো না।আর এতো কাঁদলে তুমিতো অসুস্থ হয়ে যাবা”
আমি উনার কথায় বললাম,”আপনি সত্যিই সব ভুল প্রমান করে দিবেন?আমি আর কাঁদবো না। কিন্তু আপনি আম্মুকে কি বললেন,যে আম্মু আব্বুর কাছে না শুনেই আমাদের এইখানে থাকতে দিয়েছে”
“ও তোমার না জানলেও চলবে এখন চলো তো ভিতরে। আমার সামনে আর কখনো কাঁদবে না ঠিক আছে”
“আচ্ছা ঠিক আছে”
উনি আমার হাত ধরে বাড়ির বেতরে ঢুকলেন।আম্মু উনাকে আমাদের ড্রইংরুমের সোফায় বসতে বলে রান্নাঘরে চলে গেলো।উনি তখন ও আমার হাত ধরে ছিলেন।আমি উনাকে আস্তে আস্তে বললাম,
“হাতটা ছাড়ুন,আম্মুর কাছে যাবো”
উনি ফোন দেখতিছিলেন।আমার দিকে তাকিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন,”তাড়াতাড়ি আসবে,যাও!”
আমি উনার কাছ থেকে আম্মুর কাছে চলে আসলাম।আম্মুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরতে দেখে বলে,
“ছাড় মা এখন,যা জামাইকে এই শরবত আর নাস্তা দিয়ে আয়।”
আমি আম্মুর হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে বললাম,”আহিন কই আম্মু ওকে তো দেখছি না”
আম্মু রান্না করতে করতে বললো,”ও মনে হয় রাফিনদের বাসায় গিয়েছে”
“আম্মু আব্বু কখন আসবে”
আম্মু রান্না থামিয়ে আমার দিকে তাকালো।আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“তুই টেনশন করিস না মা।কিছু হবে না তোর বাবাকে আমি বোঝাবো”
আমি আর কিছু না বলে ট্রে নিয়ে আয়াজের কাছে চলে আসলাম।উনি এখনো ফোন দেখছেন।আমি ট্রে টা টেবিলে রেখে বললাম,,
“খেয়ে নিন আম্মু দিয়েছে”
উনি ফোন রেখে খাবারের ট্রের দিকে একবার তাকিয়ে আমাকে বললেন,
“আমি এতো খাবার তো খেতে পারবো না”
“তাহলে আমি আম্মুকে বলে আসি আপনি এতো খাবার খেতে পারবেন না”
উনি আমায় বললেন,”দিয়ে আসা লাগবে না এখন তুমিও আমার সাথে খাবে”
আমাকে আর কথা বলার সুযোগ দিলেন না উনি।নুডলস মুখে পুড়ে দিলেন আর নিজেও খেলেন।আমি কোনোমতে গিলে উনার কটমট চোখে তাকিয়ে বললাম,
“কি করলেন এটা আপনি!আমি কি বলেছি আমি খাবো”
উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,,”আমি এতো খাবার একা খেতে পারবো না তাই তোমাকেও খেতে হবে”
আমি রাগে ফোসফাস করতে লাগলাম।উনি আমায় জোড় করে খাইয়ে দিলেন আর নিজেও খেলেন।খাওয়া শেষ হতেই আহিন লাফাতে লাফাতে বাড়ির ভেতরে ঢুকল।সামনে তাকাতে আমাকে দেখে আমার কাছে ছুটে এলো।আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম।আহিন আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“আপা তুই এসেছিল,জানিস আমার এই কয়দিন তোকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হয়েছে।আমি তোকে খুব মিস করেছি।আচ্ছা আপা তুই আসলি কখন”
আহিন কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে থামল।ও এমনই প্রচুর কথা বলে,সাথে আমিও।আমি ওকে বললাম,,
“আরে আস্তে আস্তে বল আমার ময়না পাখি,এতো তাড়া কিসের।আর আমি একটু আগেই এসেছি।”
ওর হয়তো আমার পেছনে বসে থাকা আয়াজের দিকে চোখ গেল।আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
“আপা পিছনের লোকটা কে তখন দেখেছিলাম।সেদিন তোমাকে সাথে করে নিয়ে গেছিলোনা”
আমি উনার দিকে একবার তাকালাম,উনি আমাদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন।আমি মুচকি হেসে বললাম,
“উনি আমার বর হয় আর তোর দুলাভাই বুঝলি এখন থেকে ভাইয়া বলে ডাকবি”
আহিন কি বুঝলো কে জানে কিন্তু আমায় শক্ত করে ঝাপটে ধরে বলল,
“উনাকে আমি ভাইয়া বলবো না।উনি খুব পচা আমার কাছ থেকে তোমাকে নিয়ে গেছে”
“উনি পচা না উনি খুব ভলো।তুমি উনার সাথে কথা বলো গিয়ে ময়না পাখি”
আহিন যেতে চাইল না কিন্তু আমি চোখের ইশারা দিয়ে আবার যেতে বললাম।আহিন কাছে যেতেই আয়াজ ওকে টেনে নিয়ে গল্প করা শুরু করল আমি সিঙ্গেল সোফায় বসে ওদের কান্ড দেখছিলাম।উনি কিছুক্ষণ গল্প করার পর আহিনকে একটা চকলেট দিল।আহিনও খুশি মনে নিয়ে নিল।
আম্মু উনাকে নিয়ে আমার রুমে যেতে বলল।আমি উনাকে বললাম,,
“চলুন ফ্রেশ হবেন অনেক সময় এসেছেন”
উনি তখনও আহিনের সাথে কথা বলছিল।মনে হচ্ছিল উনি আমার কথা শুনেইনি।আমি আহিনকে উনার কাছ থেকে টেনে পড়তে পাঠিয়ে দিলাম তারপর উনাকে চমার রুমে নিয়ে আসলাম।কতোগুলো দিন পর আমি আবার আমার রুমে এসেছি।উনি বেডের উপর বসে আমাকে বললেন,
“তুমি যে ফ্রেশ হতে নিয়ে আসলে আমাকে,আমাদের জামাকাপড় তো গাড়িতেই রয়ে গেছে।”
আমি উনাকে বললাম,”আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি”
আমি রুমের বাহিরে যাবো তখনই উনি আমার হাত টান দিলেন আমি উনার দিকে ফিরে বললাম,,”কি হয়েছে!হাত টেনে ধরলেন কেনো”
উনি আমার হাত ধরে রুম থেকে বের হতে হতে বললেন,,”তোমার একা যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই আমিও যাবো তোমার সাথে।চলো”
উনি আর আমি গিয়ে জামাকাপড়ের ব্যাগ আর উনি ফল মিষ্টি এনেছিলেন সেগুলোও নিয়ে আসলাম।উনি আম্মুর হাতে সেগুলো দিয়ে বললেন,
“এগুলো আপনাদের জন্য আম্মু”
আম্মু বললেন,,”এগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল বাবা”
উনি হেসে বললেন,,,”প্রথমবার শশুড়বাড়ী এসেছি কিছু না নিয়ে আসলে হয় বলুন”
আম্মু উনার কথায় মুচকি হাসলেন।আম্মু সবকিছু নিয়ে চলে গেলেন রান্নাঘরে।আমি উনাকে আবার আমার রুমে নিয়ে এসেছি।উনাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়ে আমিও ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম।শাড়ি পড়ে এসেছিলাম।উনি ফ্রেশ হয়ে এসে আবার ফোন দেখতে লাগলেন বেডের উপর বোসে।আমি জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ দেখতে লাগলাম আর ভাবতে থাকি,,আমি জানি আব্বু কখনো আমাদের মেনে নিবে না।আব্বু সবসময় সত্যি আর প্রমানে বিশ্বাস করেন।তাই আমরা যতক্ষণ প্রমান না করতে পারবো যে আমাদের কেউ ফাসাতে চেয়েছিল ততক্ষণ আব্বু আমায় না এই বাড়িতে থাকতে দেবে আর না আমার মুখ দেখবেন।শিক্ষক মানুষ সত্যির সাথেই আপশ করেন।যেখানে গ্রামের কয়েকজন মিলে দেখেছিলেন আমাদের।আমাকে অপমান করুক সমস্যা নেই কিন্তু উনাকে অপমান করলে আমি মানতে পারব না যেখানে উনার কোনো দোষই নেই।
আম্মুর ডাকে ঘোর কাটল।আম্মু খেতে ডাকছেন।আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,,”এখন কয়টা বাজে?”
উনি নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে দেখে আময়া বললেন,”৯টা বাজে”
আব্বুর তো এতোক্ষণে চলে আসার কথা তাহলে আসছে না কেনো।আমি আর কিছু না ভেবে আয়াজকে বললাম,,
“চলুন আম্মু ডাকছে”
তাই বলে আমি চলে আসলাম উনিও আমার পিছনে পিছনে আসলেন আম্মু আমাদের দেখে বসতে বললো।উনিও বসে পড়লেন।আমিও বসলাম।আহিন আমার পাশে বসে ছিল,কিন্তু হুট করে ও আয়াজের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম।তারপর আম্মু খাবার বেড়ে দিলেন।আয়াজ অল্প নিল আমিও কারণ দু’জনই সন্ধ্যায় নাস্তা করছি।আমি খেতে খেতে বললাম,,
“আম্মু আব্বু এখনো আসলো না যে”
“উনি তো গ্রামের বাইরে গেছেন,উনার কি কাজ আছে তাই”
আমি আর কথা বাড়ালাম না খেয়েদেয়ে আম্মুর কাছে গিয়ে বসলাম।আয়াজ রুমে চলে গেছেন।আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,,
“জামাই কি তোকে কষ্ট দেয় মা,বিয়েটা তো নিজের মতে করেনি”
আমি হেসে বললাম,,”আম্মু উনি অনেক ভালো।আমার অনেক খেয়াল রাখে,আর উনিই রান্না করেন।আমাকে তো রান্না ঘরের ধারেকাছেও যেতে দেয় না।”
আম্মু হেসে বললেন,,”আচ্ছা ঠিক আছে এখন যা জামাইয়ের কছে”
“আরেকটু থাকি না”
আম্মু আমাকে ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠিয়ে দিলেন।কিন্তু আমি ঘুমাবো কোথায়।ওখানে নাহয় দুইটা রুম ছিল।কিন্তু এখানে তো আর রুম নেই।আমি বেডের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম এগুলো।উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।
আমি মন খারাপ করে বললাম,,”আমি কোথায় ঘুমাবো”
উনি এবার হয়তো বুঝতে পারলেন আমার এতোসময় গভীর চিন্তার কারন।উনি মুচকি হেসে বললেন,,,”বেডেই ঘুমাবা তুমি”
“তাহলে আপনি কোথায় ঘুমাবেন”
“কেনো বেডে”
“আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারব না”
“কেনো কি হয়েছে আমি তোমার হ্যাসবেন্ড হই তাহলে ঘুমাতে সমস্যা কই”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,,”মানে সমস্যা নেই তো কিন্তু আমার অস্বস্তি হবে”
উনি মুচকি হেসে বললেন,,”একদিন একটু কষ্ট করো কালকে বিকালেই আমরা চলে যাবো”
আমি আর কথা বললাম না।চলে যাওয়ার কথা বলতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।আমি উনাকে বললাম,,”ছাদে যাবেন”
উনি ফোনটা পকেটে ভরে বললেন,,”হ্যাঁ চলো”
আমি আর উনি চুপিচুপি করে ছাদে গেলাম।আকাশটা দেখতে লাগলাম ছাদের উপর বসে।উনিও আমার পাশে বসে পড়লেন।
চলবে……?
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)