#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_১১
#লেখিকা_N_K_Orni
— এদিকে সব শেষ হয়ে গেছে!
তানিশা বিরক্ত হয়ে বলল,
— কি হয়েছে সেটা তো বলবি? যতবার জিজ্ঞাসা করছি ততবার শুধু কথা ঘুরাচ্ছিস।
— আরে আমার কি দোষ? আমি তো তোদের বলার জন্যই ডেকেছি। এখন তো এমনিই বলব। একটু তো ধৈর্য্য ধর।
নেহা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
— এবার তো বল।
নাবিলা বিছানায় বসে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে উঠল,
— বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে।
নাবিলার কথা শুনে তানিশা অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কি বলিস? কবে ঠিক করল?
— কালকে। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
— জানি তো। তুই নতুন রিলেশনে গেলি বেশিদিনও হয়নি। আর এখন বিয়ে তো তুই করতেই চাইবি না। এটাই স্বাভাবিক।
— আরে এই জন্য না। আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না। আমি যদি তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলি তাহলে নতুন নতুন রিলেশনে যাব কীভাবে?
নাবিলার কথা শুনে তানিশা আর নেহা একে অপরের দিকে তাকাল।
— এই তানিশা তুই শুধু শুধু আমাকে এখানে নিয়ে এলি। আমার অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেল।
— আমার কি দোষ? আমি কি আগে থেকে এসব জানতাম নাকি?
— তোরা এভাবে বলছিস কেন? আমি তো তোদের কাছে সাহায্যই চেয়েছি।
তানিশা এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
— আমি বলি কি তুই বিয়েটা করে ফেল এতেই ভালো হবে।
— না প্লিজ এমন বলিস না। আমি এখন বিয়েটা করতে চাই না। প্লিজ তোরা কিছু একটা প্লান কর।
— আমরা ছাড়া আরও অনেকেই আছে। তুই বরং ওদের বল। ওরা তোকে অবশ্যই সাহায্য করবে।
নাবিলা তানিশাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে বসাল। তারপর ও নিজে বসে বলল,
— সে উপায় নেই। আমার বাসায় লোক তোরা বাদে বাকিদের খুব একটা পছন্দ করে না। আর তোরা তো জানিসই আমার বাড়ির লোক কেমন?
নেহা এবার মুখ কালো করে বলল,
— এটা তুই ঠিক বলেছিস। তোর বাসার লোক আসলেই কেমন বিশেষ করে তোর ওই ভাই।
নেহার কথা শুনে তানিশা ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকাল। নেহা কথা ঘোরানোর জন্য বলে উঠল,
— এই তোর বিয়ের আর কয় মাস সময় আছে? আমরা নাহয় ভেবে দেখব কি করা যায়?
নাবিলা অসহায় হয়ে বলে উঠল,
— মাস জিজ্ঞাসা করছিস? আরে এক সপ্তাহও নেই। এই শুক্রবারেই বিয়ে।
— কিই! এতো তাড়াতাড়ি কেন? তুই আঙ্গেলের কাছে সময় চাইতে পারিসনি?
— তার আর কোনো উপায় নেই। ছেলের বাড়ির লোকই তাড়াতাড়ি বিয়েটা দিতে চায়। আর বাবাও ওদের কথায় রাজি হয়ে গেছে। আমি বলে কোনো লাভ হয়নি।
— তাহলে আর কি করবি? বিয়েটা করে ফেল। এখন এসব প্রেমের চিন্তা বাদ দে। আর নাহলে সাহস করে আঙ্কেলকে বল যে তুই বিয়ে করবি না।
— তোরা এমনভাবে বলিস না। আমি কোথায় যাব তাহলে?
নেহা এবার পাশ থেকে বলে উঠল,
— কেন তুই জানিস না? বিয়ের পর তুই তোর হাসবেন্ডের সাথে তার বাড়িতে যাবি।
নাবিলা এবার ওকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাবিলার আম্মু বাইরে থেকে দরজায় নক করলেন। তিনি বাইরে থেকে বলে উঠলেন,
— কিরে দরজা লাগিয়ে তোরা কি এতো গল্প করিস? দরজা খোল তাড়াতাড়ি। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
নাবিলা আর উপায় না পেয়ে দরজা খুলে দিল। নাবিলা দরজা খুলে দিতে উনি ভেতরে প্রবেশ করলেন তারপর নেহা আর তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— তানিশা, নেহা তোমরা আসো খেয়ে নেবে। অনেক দেরী হয়ে গেছে। আর নাবিলা তুইও আয়।
তানিশা এবার ঘড়ির দিকে তাকাল।
— না আন্টি আমরা এখন খাব না। আমাদের বাসায় যেতে হবে।
— হ্যাঁ আন্টি তানিশা ঠিকই বলেছে। অনেক দেরী হয়ে গেছে। এবার বাসায় যাওয়া দরকার।
— না। তোমরা খেয়ে তারপর বাসায় যাবে। এখন চুপচাপ আমার সাথে এসো।
পাশ নাবিলা বলে উঠল,
— চল প্লিজ বেশি সময় লাগবে না।
ওদের জোড়াজুড়িতে নেহা আর তানিশা রাজি হয়ে গেল। যেতে যেতে নাবিলার আম্মু বলে উঠলেন,
— এই নেহা, তানিশা তোমরা শুক্রবার সকালে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। জানোই তো ওইদিন কিন্তু নাবিলার বিয়ে। নাবিলা বলেছে তো তোমাদের?
— হ্যাঁ বলেছে।
নেহা আর তানিশা ওদের বাসায় লান্স করে বাসায় চলে এলো। তানিশা বাসায় আসতেই ওর মা এসে দরজা খুলে দিলেন। তিনি তানিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলেন,
— কিরে এতো দেরী করে এলি কেন?
তানিশা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
— তোমাকে তো বলেই গেছিলাম যে আজকে কলেজের পর নাবিলার বাসায় যাব। তাহলে কেন আবার দেরী হওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করছ?
— তাই বলে এতো দেরী?
— হ্যাঁ কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে গেল। তারপর আবার অনেক বেজে গেছে তাই নাবিলার আম্মু না খাইয়ে ছাড়ল না।
— ওহ। তা হঠাৎ নাবিলার বাসায় গেলি? কোনো দরকার ছিল?
— নাবিলাই আমাদের ফোন করে ওর বাসায় যেতে বলেছিল। আসলে এই শুক্রবার ওর বিয়ে। তাই বিয়েতে যাওয়ার জন্য বলল।
— ওহ। দেখলি নাবিলারও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তোর যে কবে বিয়েটা হবে?
তানিশা আর কথা বাড়ালো না। ওখান থেকে সোজা রুমে চলে এলো। সন্ধ্যায় তানিশা নেহাকে কল দিল।
— এই নেহা কি ভাবলি? পরশুই তো নাবিলার বিয়ে। এখন আমরা কীভাবেই বা বিয়েটা আটকাবো?
— সেটাই। তাছাড়া সময়ও তো বেশিদিন নেই। বেশি সময় হলেও বিষয়টা নিয়ে ভাবা যেত। কিন্তু এখন তো কিছুই করার নেই। কিন্তু একটা বিষয় বুঝলাম না যে এরা এতো তাড়াতাড়ি কেন বিয়ে দিতে চাইছে?
— এটা আমার মাথায়ও ঘুরছে। যাইহোক, এখন কি করবি বল?
— কি আর করব? বান্ধবীর বিয়েতে আনন্দ করব।
— কিন্তু নাবিলা…
— আরে ওর কথা বাদ দে। আর কতো রিলেশন করবে! এসবের থেকে বিয়ে করে নিক সেটাই ভালো।
— কথাটা ভুল বলিসনি তুই। কিন্তু ওকে কি বলবি?
— বলব যে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারিনি।
— আচ্ছা।
শুক্রবার সকালে তানিশা তাড়াতাড়ি নাবিলার বাসায় চলে গেল। সে ওখানে গিয়ে দেখল নেহাও এসে গেছে। তানিশা আর নেহা নাবিলাকে ওদের সাজানো কথাই বলল। কিন্তু নাবিলা ওদের আরেকটা চেষ্টা করতে বলল। তানিশা এসব থেকে এড়ানোর জন্য নাবিলার আম্মুর কাছে চলে গেল।
— আন্টি কোনো কিছুতে সাহায্য লাগলে আমাকে বলেন?
— আমার কোনো সাহায্য লাগবে না। তুমি বরং নাবিলার কাছে গিয়ে বসো।
তানিশা সুযোগ বুঝে বলে উঠল,
— আন্টি একটা প্রশ্ন করব?
— হ্যাঁ হ্যাঁ করো সমস্যা নেই।
— আন্টি আপনারা হঠাৎ করেই নাবিলার বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেললেন যে?
নাবিলার আম্মু মুখ তুলে বললেন,
— আসলে এভাবে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আমাদেরও ছিল না। কিন্তু ছেলের বাড়ির লোকেরাই তাড়া দিল। আর ওর বাবারও ছেলেকে বেশ পছন্দ হয়েছিল। তাই আর না করেনি।
— ওহ। আচ্ছা আন্টি আমি আসি। কোনো দরকার লাগলে আমাকে বলেন।
বলেই তানিশা আবার নাবিলার কাছে চলে গেল। দুপুরের আগে বরপক্ষরা চলে এলো। তানিশা তখন নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
— চল দেখে আসি নাবিলার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে?
তানিশার কথা শুনে নেহা বলে উঠল,
— নাবিলা তুই এখানে থাক। আমরা দেখি কোনো ব্যবস্থা করতে পারি কিনা।
— আচ্ছা।
তানিশা আর নেহা ওখান থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর নাবিলার হবু স্বামীকে দেখার জন্য গেল। বরবেশে থাকা ছেলেটাকে দেখে ওদের দুজনের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )