#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_৫
#লেখিকা_N_K_Orni
— আপু মা তোকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে তাই না? আমি সব জেনে গেছি।
— বাদ দে না এসব ভাই। যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে।
এদিকে তিনা তার বাবাকে বলল,
— বাবা তুমি বিশ্রাম নেও। আমি একটু দেখে আসি ওরা কি বলছে? আমি তাড়াতাড়িই চলে আসব।
— আচ্ছা যা।
তিনা দ্রুত বেরিয়ে ওদের কাছে গেল।
— তিহান ভাইয়া তুই আপুকে কি বলতে এভাবে নিয়ে এলি?
তিনাকে এখানে দেখে তানিশা অবাক হয়ে বলল,
— তিনা তুই এখানে এসেছিস কেন? ওখানে বাবা একা আছে তো।
— তুই চিন্তা করিস না আপু। বাবাকে আমি বলেই এসেছি।
তিহান এবার তিনার দিকে তাকিয়ে কিছুটা রেগে বলে উঠল,
— মা যে আপুকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে সেটা তুই আমাকে বলিসনি কেন? তুই আমাকে একবার বললে আমি যে যেভাবেই হোক বিয়েটা আটকাতাম।
তিনা মাথা নিচু করে বলল,
— আমি পরে জেনেছি ভাইয়া। আমি আগে থেকে জানতে পারলে তোকে কল দিয়ে ঠিকই বলতাম। আর তাছাড়া বিয়েটা হয়েছে ভালোই হয়েছে। নাহলে তো মা আপুকে ওই রোহানের সাথে বিয়ে দিয়ে দিত।
— কি বলছিস তুই? বিয়েটা হয়ে কীভাবে ভালো হয়? মানছি যে ওই রোহান খারাপ। কিন্তু যে টাকা দিয়ে বিয়ে করেছে সে নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো হবে না সেটা আমি ভালো করেই জানি।
— তুই না জেনেই ভুল বলছিস ভাইয়া। আপুর বিয়ে ইফাদ ভাইয়ার সাথে হয়েছে।
তিনার কথা শুনে তিহান চোখ বড়ো বড়ো করে বলে উঠল,
— কি? ইফাদ ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ে হয়েছে?
— হ্যাঁ সেটাই তো তোকে বারবার বলতে চাইছিলাম।
তানিশা এতোক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে ওদের দুজনের কথা শুনছিল। এবার সে চুপ করে না থেকে বলে উঠল,
— তোদের দুজনের কথা শেষ? আর তোদের রোহানকে নিয়ে সমস্যা কোথায়?
— অনেক সমস্যা আপু। ওই রোহানকে আমার একদমই পছন্দ না। আর ইফাদ ভাইয়া অনেক ভালো। জানো আপু আমি প্রথম থেকেই চাইতাম ইফাদ ভাইয়াই তোমাকে বিয়ে করুক। আমার মনে হয় তিনাও এটাই চাইত। কি বলিস তিনা?
তিনা তখন দাঁত বের করে হেসে বলল,
— একদম।
তিনার কথা শুনে তিহান ওকে দেখিয়ে বলল,
— দেখলে আপু। তিনাও খুশি তোমার বিয়েতে। যাই এতো বছর পর মা একটা ভালো কাজ করল। ভুল করে হলেও তোমাকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিয়েছে।
তানিশা এবার ভ্রু কুচকে বলল,
— এতো তাড়াতাড়ি মত বদলে ফেললি। তুই তো একটু আগেও বললি যে টাকা দিয়ে বিয়ে করেছে সে নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো হবে না।
— তখন তো আর জানতাম না যে ওটা ইফাদ ভাইয়া ছিল।
তানিশা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
— ওই ইফাদও খুব একটা ভালো না। আমাকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করেছে। যাইহোক, এবার চল বাবার কাছে যাই। বাবা অনেকক্ষণ একা আছেন।
— হুম চলো।
এরপর ওরা তিনজন আজাদ সাহেবের রুমে গেলেন। মিসেস নায়রা হসপিটালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে এসে দাঁড়ান। তখনই কেউ কলিং বেল বাজালো। মিসেস নায়রা এবার বিরক্ত হয়ে বললেন,
— এই যাওয়ার মূহুর্তে আবার কে এলো? ধুর! ভালো লাগেনা।
মিসেস নায়রা বিরক্তি থাকা সত্ত্বেও দরজা খুললেন। তিনি দরজার খুলে দেখলেন একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ছেলেটাকে দেখে আরও বিরক্ত হলেন।
— রোহান তুমি এখন এখানে কি করছ?
রোহান ভেতরে এসে বলল,
— আন্টি কোথাও যাওয়ার জন্য বের হচ্ছেন নাকি?
— আমার স্বামী অসুস্থ। তাহলে নিশ্চয়ই আমি এখন হসপিটালে যাব?
— ওহ। তা তানিশা কই? ও কি হসপিটালেই আছে?
— তানিশার কথা মাথা থেকে ছেড়ে ফেলো। ওকে ভুলে গিয়ে নতুন কাউকে বিয়ে করে নেও।
— কিন্তু কেন? আপনি হঠাৎ এই কথা বলছেন কেন?
— তানিশার বিয়ে হয়ে গেছে কালকে। তাই তোমার ওকে ভুলে যাওয়াই ভালো।
ওনার কথা শুনে রোহান অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কিই! আপনি তানিশাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন? কীভাবে পারলেন এটা? আপনি তো আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে তানিশাকে আমার সাথে বিয়ে দিবেন। তাহলে এখন কেন অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন?
— তার আগে বলো তুমি কালকে কোথায় ছিলে? তোমাকে এতো বার কল দিলাম। যেই শুনলে তানিশার বাবা অসুস্থ তখনই সব প্রেম ভালোবাসা চলে গেল। ওই সময় কতো সাহায্যের দরকার ছিল! ইফাদ আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। ওর এই সাহায্যের বদলে আমি ওর সাথে তানিশার বিয়ে দিয়েছি। তুমি তো আমার ফোনও ধরোনি।
— তাই বলে আপনি টাকার জন্য তানিশাকে ওই ইফাদের কাছে বিয়ে দিলেন।
— হুম দিলাম। তোমার যা ইচ্ছা ওই ইফাদের কাছে গিয়ে করো। এখন আমাকে যেতে দেও।
রোহান রাগে মনে মনে বলে উঠল,
— কাজটা ঠিক করলেন না আন্টি। আমি এর প্রতিশোধ ঠিকই নেব।
এরপর রোহান ওখান থেকে রেগে বেরিয়ে গেল। মিসেস নায়রা রোহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেঙ্চি দিলেন। তারপর হসপিটালে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলেন। তানিশা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার বাবার কাছেই ছিল। তানিশার মা আসার পর তিহান বাসায় চলে যায়। তানিশা সন্ধ্যার একটু পর যাওয়ার জন্য হসপিটাল থেকে বের হলো। সে বের হয়ে দেখল ফাহিম যায়নি, ওখানেই আছে। তানিশা ফাহিমের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠল,
— ভাইয়া আপনি এখানে? আপনি বাসায় যাননি?
এতোক্ষণ এখানে ছিলেন?
— এতোক্ষণ এখানে ছিলাম ঠিক তা নয়। আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম। একটু আগে আবার ফিরে এসেছি। স্যারের পুরো অডার আছে যে আপনাকে নিয়েই যেন ফিরি। এখন চলেন বাসায় যাই। আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমাকে আবার স্যারের কাছে যেতে হবে।
— ওহ আচ্ছা চলেন।
এরপর ফাহিম তানিশাকে বাসায় নামিয়ে দিল। তানিশা রুমে বসে ভাবতে লাগল বিকালের কথা। তার বাবার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে তার। তার বাবা একেই অসুস্থ তারপর যদি উনি বিয়ের কথা শোনেন তখন কি হবে ও সেটাই ভেবে পারছে না। সে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— বাবা তো একদিন ঠিক বিয়ের কথা জানতে পারবেন। তখন কি হবে? বাবা তো ইফাদকে একদমই মেনে নিবে না। কিন্তু অন্য ভাবে বিয়েটা হলেও ইফাদ তো আমার স্বামী। তখন আমি কি করব? একদিকে স্বামী একদিকে বাবা।
নাহ তানিশা আর ভাবতে পারছে না। তার মাথায় খুব ব্যথা হচ্ছে। তানিশা উঠে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এলো। তারপর এসে শুয়ে পড়ল। রাতে ইফাদ ফিরে এলো। সে রুমে এসে দেখল তানিশা শুয়ে আছে। সে তানিশার মুখের দিকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল যে সে ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে। ইফাদকে এমন করতে দেখে তানিশা বলে উঠল,
— এখানে কি কোনো আলোচনা সভা চলছে যে আপনি উঁকি দিয়ে দেখছেন?
ইফাদ তানিশার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে তানিশা ভ্রু কুচকে উঠে বসল। ইফাদ ফ্রেশ হয়ে এসে রুম বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে দরজায় নক করল। তানিশা তাকে আসতে বলল। সে ভেতরে এসে বলল,
— ম্যাম স্যার আপনাকে ডিনার করার জন্য ডাকছেন। আপনি আমার সাথে আসুন।
তানিশা ওই মেয়েটার সাথে চলে গেল। খাওয়ার পর তানিশা রুমে এসেই বারান্দায় চলে গেল। তখন ইফাদ ওখানে এসে তানিশাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )