আকাশী পর্ব ২০

“আকাশী”
পর্ব ২০.

‘শুন, তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?’
‘ভালো।’
‘শুধুই ভালো? বন্ধুবান্ধব তো সম্ভবত অনেক বানিয়েছিস।’
‘তেমন না ফারাবি। তোর মতো কেউ কি অতো অন্তরঙ্গ হতে পারে? আপসোস হলো, তুই এসএসএসির পর থেকে আর আমার সাথে পড়তে পারলি না।’
‘আমার কথা ছাড়। বিয়ে তো একদিন হওয়ারই ছিল। তা হয়ে গেল। কিন্তু খবর তো নিলি না।’
‘খবর নেওয়ার কি কোনো মাধ্যম রেখেছিলি? এই একবছরে কতবারই না তোদের ওদিকে গেলাম। কোনোবারই তুই আসতি না। তোর মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করা ছাড়া আর উপায় বাঁচত না। উনি কি আমার কথা বলেননি?’
‘বলেছে। এমনি তোকে পরীক্ষা করছিলাম। আচ্ছা বল না, কলেজ লাইফ অনেক মজার তাই না?’
‘হুঁ, খুবই। আমরা বন্ধুবান্ধবরা পড়াশোনার পাশাপাশি কত জায়গায় না যাই! তাছাড়া পাশাপাশি এমন অনেক কিছু হয়েছে, যেগুলোর কারণে একদিন মাথা উঁচিয়ে বলতে পারব, আমার কলেজ লাইফ বোরিং না।’ আকাশী মিটিমিটি হাসল, ‘কলেজ শুরু করার মাস তিনেক পর প্রায়ই দেখতাম কিছু ছেলে আমাকে ফলো করে। এমনকি আমাদের বাড়ি পর্যন্ত আমার পিছু নিয়ে এসেছে। তুই তো জানিস, এই এলাকার চিনি না এমন মানুষ খুব কম। তাই তাদের বুঝতে দেরি হয়নি। একবার তো আমি ওদের ছল করে কাদায়ও ফেলেছিলাম। তবু একটা ছেলে হার মানেনি। প্রায়ই হাবার মতো চেয়ে থাকত। শুনলাম, কলেজে কিছু ছাত্র ভণ্ড নেতা সাজে, তাদের মাঝের একজন ছিল সে। নাম নাফিস। ওর জন্যই আমাকে কলেজের অনেকেই চিনত, যাদের আমি চিনি না। একদিন আমি কলেজের মাঠে ছেলেটির সামনা-সামনি দাঁড়িয়েছিলাম। সবাই হা করে চেয়ে ছিল। আমি খুব নম্র হয়ে বললাম, আমার পিছু ছেড়ে পড়াশোনায় মন দিন। আমার মতো মেয়ে জীবনে অনেক পাবেন। কিন্তু পড়াশোনার এই সঠিক সময়টা আর পাবেন না। তাই এই মূল্যবান সময়কে ধরে রাখার চেষ্টা করুন, এমন কোনো মেয়ের পিছু লাগবেন না যার কাছে আপনার জন্য টাইম নেই।’
‘তারপর কী হলো?’
‘ছেলেটা এখনও মাঝে মাঝে চেয়ে থাকে। কিন্তু আগের মতো উত্যক্ত করে না। মানে বাইক নিয়ে আমাকে ফলো করে না। আশা করা যায়, শীঘ্রই সে তার লক্ষ্যকে চিনতে পারবে।’
‘তুই মেয়েটা এখনও আগের মতো রয়ে গেলি। অন্য কোনো মেয়ে হলে স্বাধীনতা পেয়ে লাগামহীন হয়ে পড়ত।’
আকাশী আর ফারাবি বহুদিন পর সাক্ষাত করায় গালগল্প জুড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি কাজও করছে। অনুষ্ঠান হিসেবে অনেক মানুষ এসেছে। আকাশীরা অনিকের মা’কে সাহায্য করে দিচ্ছে। কাজের লোক আনা হলেও কাজের পরিমাণ বেশি। আকাশী মাঝে মাঝে চেয়ে দেখে এককোণায় সালমা টুকটাক কাজ করছে। সালমা অনিকের ছোট বোন। আকাশীর চেয়ে মাস ছয় সাতেকের বড়। এই মেয়েটি অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা ছিল। ছোটবেলা থেকে কাউকেই সে পছন্দ করত না। মা’কে একদমই করত না। তার এক খালাকে সে খুব পছন্দ করত। নিঃসঙ্গ এই খালা তাকে তাঁর কাছে নিয়ে গিয়ে মানুষ করতে শুরু করেন। মাঝে মাঝে এখানে যতবারই সে আসে, তার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝা যায়, সে এখনও কাউকে তেমন পছন্দ করে না। তবে অনিকের সাথে সালমার কিছুটা জমে, দু’জনের বয়সে কেবল বছর দেড়েকের ফারাক হওয়ায়। সালমার রং অনিকের চেয়ে উজ্জ্বল, আকাশীর চেয়ে অত্যধিক ফর্সা। কিন্তু মুখে মায়া খুবই কম। কিছু মানুষের মুখ বা ভাবভঙ্গি দেখেও অনেকের কাছে তাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু এই মেয়েটি ওই দলে অন্তর্ভুক্ত নয়।
আকাশী আপেলের প্লেট এগিয়ে দিয়েছিল। সে নেয়নি। কিন্তু সৌজন্যের জন্য না-ও বলেনি। আকাশীর কাছে অনেকটা দৃষ্টিকটু লাগল, যার কারণে সে মেয়েটিকে কাজ করতে ডাকছেই না।
রাত নয়টার আগে খাবারের আয়োজন হয়ে গেল। দুপুরে এক পশলা আয়োজন ছিল। দুপুরের দাওয়াত ছিল মাহমুদের পক্ষ থেকে আর এখনের আয়োজন ফারুকের পক্ষ থেকে। যথারীতিতে লোকের সমাগম শুরু হলে বড় একটা বৈঠক বসানো হয়। মাইকও আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে সামাজিক কাজকর্মে জড়িত অনেকেই বক্তৃতা দিয়েছে। স্টেজে অনিক আর ফারুক বসে আছে। তাদের পাশে মাহমুদ অপূর্বের সাথে বসে আছেন। সবার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর ফারুক বক্তৃতা দিতে এলেন। তখন চারিদিকটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। যে ফয়সালা নিয়ে আজকের আয়োজন, তা নিয়ে তিনি কথা বলবেন। আকাশী প্যান্ডেলের পর্দার একপাশে দাঁড়িয়ে রইল আরও কিছু মেয়ের সাথে। ওখান থেকে দেখা যাচ্ছে রোগা ফারুক চাচা মাইকের সামনে এসে কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলেন। এতে কেন যেন তাঁর প্রতি সকলের শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেছে।
তিনি সবাইকে সালাম দিয়ে ধীরভাবে বলতে শুরু করলেন, ‘আজ আপনারা এসেছেন, আমার খুব ভালো লাগছে। আপনারা জানেন, দুপুরের আয়োজনটা আমার ছোট ভাইয়ের সমতুল্য মাহমুদ করেছে। এখনেরটা আমি তার মতো বড় করে করতে পারিনি। তবে নিরাশও করব না। থাক ওসব কথা। আপনাদের সবারই মালুম আছে, আমাদের এই বাড়ির নাম যিনি প্রথম রাখেন, তাঁর মতো ধনী এখানে তখন আর কেউ ছিল না। তাঁর যাওয়ার পর আমাদের বাড়িটাতে কোনো বিশেষ লোক উঠেনি। অনেক বছর পর আমার চরিত্র দেখে কিছু বুজুর্গ আমাকে তাঁর আসনে বসিয়ে দিলেন। মাহমুদের মতো টাকাকড়ি আমার নেই। তবু যথাসাধ্য চেষ্টা করে গেছি। এখন আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। এই সামাজিক কাজকর্ম এখন আর আমার দ্বারা হচ্ছে না। আমার অনিকও বড় হয়নি। তাছাড়া আমাদের গ্রামে যোগ্য লোক হিসেবে আপনারা মাহমুদকে চেনেন। ও সবসময় আমার পরবর্তীতে এই জায়গায় অবদান রেখেছে। এখন আমার পদ ওর হতে চলেছে। এখন থেকে আমার স্থলে আপনারা চেয়ারম্যান হিসেবে ওকে পাবেন। সে খুব ভালো একটা মানুষ। আমি আশা করছি, আপনারা তাকে আপন করে নেবেন।’
ফারুক আরও কিছুক্ষণ বক্তৃতা দেওয়ার পর মাহমুদকে বক্তৃতা দিতে আসতে বললেন। তিনি লোকের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার পর বললেন, ‘ফারুক ভাই সভাভঙ্গের আগে একটা ঘোষণা দিতে চেয়েছিলেন। ওটার কথা আমাকে বলেননি। সবশেষে স্টেজেই আমার অনুমতি নিয়ে বলবেন বলেছিলেন। আমি উনাকে আবার মাইকের সামনে আসতে অনুরোধ করছি।’
ফারুক ওঠে এসে মাইকের সামনে বললেন, ‘আমি চাই এই গ্রামের নামটা পরিবর্তন করতে। চেয়ারম্যান পদের শেষ এই সময়ে আমি শেষবারের মতো ক্ষমতা দিয়ে এটাই করতে চাই। আপনারা কী বলেন?’
চারিদিকে গুঞ্জন উঠল। ঘাটের পুনঃনির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আকাশী বাড়ির নাম নিয়ে বিরোধিতা করার পর প্রায় সকলের মনেই আন্দোলিত হচ্ছিল, আসলেই এই বাড়ির নাম পাল্টানো উচিত। তাই আজ ফারুকের কথার দ্বিমত কারো পক্ষ থেকেই আসছে না। মাহমুদ বাড়ির প্রায় খবরাখবরই রাখেন বিধায় বললেন, ‘কেন নয়? আপনার ক্ষমতা সবসময় থাকবে। আপনি চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে কখনও ছোট করে দেখেননি। বরং ভাইয়ের মতো করে দেখেছেন। আপনার নির্ণয়ই শিরোধার্য।’
ফারুক ম্লান হেসে বললেন, ‘একটি জায়গা তখনই প্রচারিত-প্রসারিত হয়, যখন তা কোনো পদবি অর্জন করে। আমাদের বাড়িতে বিগত বছরগুলোতে যা সংঘটিত হয়েছে, তা অনুসারে আমাদের আশেপাশের গ্রামের ওই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা হচ্ছে। আমাদের এই বাড়িটা এখন কতই না পরিবর্তিত হয়েছে। আগে কি এমন ছিল? আগে মেয়েরা বেশিদিন পড়তে পারত না। ঘর থেকে বেরুতে পারত না। সবকিছুর কত পরিবর্তন এসেছে! দেখাদেখিতে আশেপাশের জায়গাগুলোও অমন হয়ে যাচ্ছে। এসবের পেছনে প্রকৃতপক্ষে যার হাত, একদিন তার চরিত্রেই প্রশ্ন তোলা হলো। সেদিন আমার বুকে অনেক লেগেছে। আকাশী আমার মেয়ে না হলেও আমার মেয়ের চেয়ে কম ছিল না। ও বাড়ির ভালোর জন্য কত কতবারই না দৌড়ে আমার কাছে এই-সেই সমস্যা নিয়ে এসেছে। তার চরিত্র নিয়ে যারা এখনও খারাপ কিছু ভাবে, তাদের বলে দিই, আমরা কেউই সম্পূর্ণ পবিত্র নই, সবাই নোংরা। এই নোংরা মস্তিষ্কে কেউ ভালো বিচারবুদ্ধি আনতে চাইলে আমাদের তাকে বাধা দেওয়া মানে আমাদের বিবেককে আরও নোংরা করা। ও যা-ভালো কিছু করেছে, তা নিয়ে কেউ শুকরিয়া আদায় করতে আসেননি। উল্টো তার দোষ নিয়েই মাথা ঘামিয়ে ফিরলেন। অথচ ভাবলেন না, এই মেয়ের কারণেই সেদিনের আত্মহত্যা করা তাসফিয়ার মতো অনেক মেয়েকেই এখনের জন্য আগামীর জন্য বেঁচে গেছে। এই বাড়িতে যতটুকু আত্মিক উন্নতি হয়েছে, ততটুকুতেই আকাশীর অবদান অনস্বীকার্য। তাই আমি এই বাড়িটা তার নামে করে দিয়ে যেতে চাই। আগামীতে আমাদের বাড়ির সামনে ফারুক একটা গেট তৈরি করবেন। আমি চাই, নামের উদ্বোধনি তখনই হোক। কারো কি আপত্তি আছে? মাহমুদ, তোমার আছে?’
মাহমুদ বললেন, ‘আমার আপত্তি কেন থাকবে? আকাশী সত্যিই এর যোগ্য। বাড়ির নাম কোনো মন্দ স্ত্রীর নামে হওয়ার চেয়ে ঢের ভালো কোনো ভালো মেয়ের নামে হওয়া। আপনি একদম উচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
আকাশী নির্বাক হয়ে একদিকে দাঁড়িয়েছিল। সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাত তালি দিচ্ছে। সে কী করবে কেমন প্রতিক্রিয়া দেবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে কেবলই চাইছে এই দ্বিধাজনক সময়টা পার হয়ে যাক। হঠাৎই এতো বড় হয়ে যাওয়া যেন মনে লজ্জা এনে দেয়। সত্যিই এই বাড়ি তার নামে হবে? আকাশীর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। আজ বাবা থাকলে গর্বে তাঁর চোখ ভরে যেত। সে ঝাপসা চোখে দেখল, লোকের ভিড়ে আজম দাঁড়িয়ে তার দিকে চেয়ে আছেন। তাঁর মুখে তৃপ্তির হাসি লেগে আছে। তাঁকে অনেক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। এই যেন পবিত্র কোনো জায়গা থেকে নেমে এসেছেন। আকাশীর অনেক খুশি লাগছে। সে খুশি চোখের পানি হয়ে গড়িয়ে পড়ল। না, এই দ্বিধাজনক সময়টা যেন নাই কাটুক। এভাবে বাবাকে কি আর কখনও দেখা যাবে? ভেবে আকাশী দৌড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে গেল। তারপর থেমে যায়। বাবা নেই। কোনো মানুষও এখন নেই। কিছুক্ষণ আগেই সভাভঙ্গ হয়ে গিয়ে সকলে খেতে চলে গেছে। আকাশীর তবু বোধ হচ্ছে, আজম আশেপাশেই আছেন, তাকে আশীর্বাদ করছেন। কাঁধে কারো আঙুলের মৃদু টোকা অনুভব করে আকাশী চোখ মুছল। পেছনে ফিরে দেখল অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে।
‘কাঁদছ কেন? এতবড় উপাধি কি মন বিশ্বাস করতে চাইছে না?’
‘কবে এলেন?’
‘বাহ্! আমি তো কালই চলে এসেছি। তুমিই বোধ হয় দেখনি।’
‘আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আর এখন বাবার কথা ভেবে দুঃখ হচ্ছিল। আজকের দিনে তিনি থাকলে…’ আকাশী প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে ঠাট্টার সুরে বলল, ‘কী ব্যাপার? আজ আমার সাথে এরূপ ভদ্রভাবে কথা বলছেন কেন?’
‘মানে? বাড়িটা যার নামে হতে চলেছে, তার কান্না দেখে ছুটে আসা কি বড় অপরাধের ছিল?’
আকাশী হাসল, ‘না। আপনি তো আবার শহরে গিয়ে যে বদলে গেলেন।’
অপূর্ব বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুমি আবার তখনের প্রসঙ্গ তুলিয়ো না-তো, যখন তোমাকে কাদায় ফেলেছিলাম।’
অপুর্ব পুনরায় আগের মতো হয়ে যাওয়ায় আকাশী হাসল।
‘হাসছ কেন?’ পরক্ষণে ব্যস্ত হয়ে অপূর্ব বলল, ‘আচ্ছা শোন, বাবা বলতে বলেছেন, তুমি যাতে বাকি লোকদের সাথে না খাও। তোমার দাওয়াত আজ আমাদের বাসায়, আমাদের সাথে। বুঝলে?’
আকাশী মাথা ঈষৎ হেলিয়ে সায় দিলো। অপূর্ব চলে যাওয়ার সময় কী ভেবে ফিরে এসে বলল, ‘আমি ভেবেছি, তোমাকে স্রেফ শাড়িতেই সুন্দর দেখায়। লং ফ্রকেও যে এতটা ভালো দেখায় তা জানতাম না।’
অপূর্ব কথাটা নিচু স্বরে বলায় আকাশী খেয়াল না করে বলল, ‘কী বললেন?’
অপূর্ব ইতস্তত করে বলল, কিছু না। তারপর দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল। আকাশী কিছুই বুঝতে পারল না।
অন্দরমহলে খাবারের বড় আয়োজন করা হয়েছিল। আশেপাশের গ্রামেরও নামী কিছু লোক এতে শরিক হয়েছে। আকাশী সবার সাথেই পরিচিত হয়। খাওয়ার পর্ব শেষে জয়ের সাথে তার দেখা হলো। সে বলল, ‘বাড়ির সেলিব্রেটির কাছে যদি সময় হয়, তিনি কি আমার সাথে একটু রাস্তায় এই সময় হাঁটতে যাবেন?’
‘কোন সেলিব্রেটি? তাকে গিয়ে কথাটা বলুন। কারণ আমি তাকে চিনি না।’
‘আহ্! বুঝো না কেন? আচ্ছা, চলো তো।’
আকাশীর মত আর না নিয়ে একপ্রকার টেনেই তাকে নিয়ে জয় ক্ষেতের পাশের রাস্তায় উঠল। আকাশী কোনোক্রমেই বুঝতে দিলো না, জয়কে নিয়ে সে কী চিন্তা-ভাবনা রাখে। পৃথিবীতে এমন লোকের সংখ্যা হয়তো অনেক বেশি, যারা সবসময় একজনকে ভালোবেসে যেতে পারে না। এটা হয়তো তাদের দোষ নয়। এই কারণে আকাশী জয়কে খারাপ ভাবে না। সে খারাপ হলে এই কয়েকবছর পরও তার সাথে বছর কয়েক আগের একটা রাতের মতো সময় কাটাতে চাইত না। জয়ের নীরবে হাঁটা দেখে আকাশীর একটা কথাই কানে বাজছিল, অপূর্ব ভাইয়া বলেছিলেন, জয় বোধ হয় এখন তাকে পছন্দ করে।
আকাশীরা হাঁটতে লাগল। জয় মাঝে মাঝে দু’একটা কথা বলছে। আকাশী ওই কথাকে টেনে ব্যাখ্যা করে কোনোভাবে এই সময়টা পার করতে চাইছে। এমন সময় তারা খামারের পাশের তালগাছের নিচে আসতেই আকাশী কান খাঁড়া করে রাখল। এই বুঝি, জয় ভাইয়া কোনো রেকর্ডিং বাজিয়ে না দেন। তার পরিবর্তে শা করে এক বাতাস ধেয়ে এলো। আকাশী ভীত হয়ে ফিরে দেখল, বাইকের লাইট জ্বলছে। অপূর্ব কিছুক্ষণ আকাশীর দিকে আর কিছুক্ষণ জয়ের দিকে তাকাচ্ছে। বাইক দেখে এই সময় তাতে চড়ার জন্য আকাশীর লোভ জন্মায়। পরক্ষণে সেদিনের কাদায় ফেলার কথা মনে করে সে চুপ হয়ে রইল।
অপূর্ব বলল, ‘তোমরা এখানে কী করছ?’
অন্ধকারে জয়ের ফুঁসিয়ে ওঠা দেখা গেল না। অপূর্ব আর জয়ের মাঝে সবসময় রেষারেষির একটা অধ্যায় থেকে এসেছে। কারণ অপূর্বের বাবা জয়কে আর জয়ের বাবা অপূর্বকে বেশি পছন্দ করে। উভয়ের কাছে তা পছন্দ নয়। তাই এই সময় অপূর্বের নাক গলানো জয়ের মোটেই পছন্দ হলো না।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here