#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৭
গভীর রাত সময়টা অজানা।ঘড়ি দেখলে বলা যাবে কটা বাজে।রুপ্সিতা আলিফের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।আলিফ একহাতে রুপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে রুপ্সিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।দৃষ্টি তার রুপ্সিতার মুখপানে আবদ্ধ।অজস্র মায়া জড়িয়ে আছে এই মুখটিতে।আনমনেই আলিফ রুপ্সিতার কপালে গভীর চুমু এঁকে দুহাতে নিজের বুকের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নেয়।
প্রতিদিনের ন্যায় ভোরের দিকে রুপ্সিতার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আলিফের বাহুডোরে আবিষ্কার করে।নিজের জায়গায় স্থির থেকেই আলিফের আর নিজের দিকে তাকায়।এতদিন এদের মাঝখানে বর্ডার না থাকলেও দুজন খাটের দু’মাথায় অবস্থান করতো আর এখন একে অপরের একদম কাছাকাছি।এতটাই কাছাকাছি যে আলিফের হার্টের কম্পনরত ধ্বনি রুপ্সিতার কানে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।আলিফের উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে কালরাতের কথা মনে পড়ে গেলো রুপ্সিতার।ভালোলাগা আর লজ্জা মিশ্রিত হাসি ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠতেই দুহাতে মুখ ঢেকে নেয় রুপ্সিতা।
কিছু একটা মনে পড়তেই রুপ্সিতা চট করে মুখ থেকে হাত সরিয়ে খুব সাবধানে আলিফের হাতের বাধন থেকে সরে আসে।আযান হয়ে গেছে অনেক আগেই তাই রুপ্সিতা দেরি করতে চাইছেনা।দ্রুত গোসল সেরে নামায আদায় করতে হবে।চটজলদি গোসল সেরে আলিফকে ডাকতে গিয়ে বাধলো বিপত্তি।আলিফকে ডাকতে কেমন লজ্জা লাগছে আজ।লজ্জাকে একপাশে ঠেলে রেখে মৃদুস্বরে আলিফকে ডাকতে লাগলো নামাযতো পড়তে হবে।
এই যে শুনছেন?আলিফ উঠুন!
আলিফ নড়েচড়ে উঠে ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,উমম!ঘুমোতে দাও না।
রুপ্সিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,আগে উঠে নামায পড়ে নিন।নামাযের সময় চলে যাচ্ছে।না উঠলে কিন্তু গায়ে জগের পানি ঢেলে দেবো।
আলিফ লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে নামে।ওয়াশরুম যেতে যেতে বলে তোমার খবর আছে আগে নামায পড়ে নিই।
রুপ্সিতা নামায শেষ করে খাটে হেলান দিয়ে বসলো।আলিফও গোসল সেরে নামায পড়ে নিলো।খাটে গিয়ে রুপ্সিতাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে রুপ্সিতার দুহাত চেপে ধরে বলল,কি বলেছিলে যেন?আমার গায়ে পানি ঢেলে দিবে?আচ্ছা চলো পানি ঢালতে হবেনা দুজনের যাতে আবার শাওয়ার নেওয়া লাগে সেই ব্যবস্থাই করি।রুপ্সিতা চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে বলল,একদম না।উঠুন আমার উপর থেকে অসভ্য লোক কোথাকার!
আলিফ সরে না গিয়ে রুপ্সিতার উপর আরেকটু ভর ছেড়ে দিয়ে ঘোরলাগা কন্ঠে বলে উঠে,তাহলে একটু অসভ্যতামি করাই যায় নাকি?রুপ্সিতার জান যায় যায় অবস্থা।আলিফ রুপ্সিতার গলায় মুখ গুঁজে আছে।আলিফের শ্বাস-প্রশ্বাস গিয়ে রুপ্সিতার ঘাড়ে পড়ছে।রুপ্সিতা আলিফকে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে।আলিফ রুপ্সিতার ঘাড়ের দিকে কামড়ে ধরতেই রুপ্সিতা মৃদু চিৎকার করে উঠে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,কালরাত থেকেই আমাকে কামড়ে শেষ করেছেন এখনইও কামড়াচ্ছেন রাক্ষস কোথাকার।
আলিফ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,আর আমার শরীরে যে অজস্র নখের আচড় আছে সেগুলো কে দিয়েছে?
রুপ্সিতা আমতা আমতা করে বলছে,আব আমি আমি কিজানি?
আলিফ আবারও রুপ্সিতার গলায় বাইট দিতেই রুপ্সিতা চেঁচিয়ে বলে উঠে,আমি আমি দিয়েছি।
আলিফ মুচকি হেসে বাইট দেওয়া স্থানে আলতো ঠোঁট ছোঁয়ায়।রুপ্সিতা চোখজোড়া বন্ধ করে নিতেই আলিফ আরো গাঢ় চুম্বনে লিপ্ত হয়।
সকালের নাস্তা সেরে আলিফ আর আরিফ নিজেদের অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে।ইরিন সানিকে খাবার খাওয়াচ্ছে রুপ্সিতা টিভি দেখছে বসে বসে।
বিকেলে আলিফ বাসায় এসে দেখে রুপ্সিতা নিজের পায়ের দিকে তাকাচ্ছে আবার মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাচ্ছে।আলিফ অফিসের ব্যাগ রেখে জিজ্ঞেস করলো,এভাবে কি দেখতেছো?
রুপ্সিতা ঠোঁট উল্টে বলল,পায়ে তিল থাকলে নাকি বিদেশে যায় আমার পায়েতো একটা নয় দুটো তিল আছে তাহলে আমি বিদেশে গেলাম কখন?
আলিফ রুপ্সিতার ঠোঁট উল্টানো দেখে হেসে দিয়ে বলে,ঠিক আছে আমরাও বিদেশে যাবো যখন আমাদের ব্যাটেলিয়নরা পৃথিবীতে আসবে।
রুপ্সিতা চোখ বড় বড় করে বলল,ব্যাটেলিয়নরা মানে?আপনি কয়টার কথা বলতেছেন ডজন খানেক নয়তো?
আলিফ চোখ ছোট ছোট করে বলল,তুমিইতো বললে দুজনের কথা।একজন রালিফ একজন আলিফা তাহলে ব্যাটেলিয়নরা হলো না?
রুপ্সিতা বলল,ওহ আচ্ছা!আমিতো ভেবেছিলাম আপনি ডজন খানেকের কথা বলছেন।আলিফ দাঁত কেলিয়ে বলল,ডজন খানেক হলেও আমার সমস্যা নেই।
রুপ্সিতা একটা বালিস নিয়ে আলিফের দিকে ছুড়ে মারে।আলিফ ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
—————————
মাঝখানে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।রুপ্সিতার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা চলে এসেছে।কিছুদিন বাদেই পরীক্ষা শুরু হবে।এখন পুরোদমে পড়ালেখা করছে ওর পড়ালেখার ব্যাপারে আলিফ ও বেশ জোরদার দিচ্ছে।
রিতার চেহারার রং দিন দিন কমেই চলেছে।অথচ প্রেগন্যান্সির সময়টাতে মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় কিন্তু রিতার ক্ষেত্রে ঠিক তার বিপরীত।খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করেনা সারাদিন চাুপচাপ থাকে।শোভনের সাথেও ঠিক করে কথা বলেনা শোভন ও নিজের প্রয়োজন ছাড়া কথা বলার চেষ্টা করেনা।মাঝে মাঝেই রিতা ঢুকরে কেঁদে ওঠে রুপ্সিতার সাথে করা অন্যায়ের কথা মনে করে।ইচ্ছে করে একবার বোনটার সাথে কথা বলতে কিন্তু কোন মুখে কথা বলবে?শোভনের বিষয়টা কাউকেই জানাতে পারছেনা সে রুপ্সিতার সংসার ভাঙার ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে।একবার বোনের সাথে অন্যায় করে দ্বিতীয় বার তার সংসার ভাঙার কারণ হতে চায় না রিতা।
শোভন!শোভন!
শোভন বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো নিচ থেকে মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে শোভনের পিলে চমকে উঠে।তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,সাথী!তুমি এখানে কি করছো?বাবা মা কি মনে করবে তাদের পুত্রবধূ বিয়ের আগে বাসায় এসে এরকম চিল্লাচিল্লি করলে।আসো আমার সাথে বেরিয়ে আসো বাবা মা কেউ এখনো দেখেনি।সাথী শোভনের হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,কোথাও যাবো না আমি।আজ তোর মুখোশ খুলে দিয়ে তারপর আমি এখান থেকে যাবো।ডাক কোথায় আছে তোর বাবা,মা,বউ।
সাথীর কথা শুনে আলিফ চমকে উঠে বলে,বউ?আর তুমি কিসের মুখোশ খোলার কথা বলছো?
সাথী দাঁতে দাঁত পিষে বলল,একদম ন্যাকামি করবেনা।আমি সবকিছু জেনে গিয়েছি তোমার কয়টা মেয়ের সাথে এরকম রিলেশন আছে।বাড়িতে বউ রেখে এসব করতে লজ্জা লাগেনা?
এতক্ষণে শোভনের বাবা মা,রিতা নিচে নেমে এসেছে।
তাদেরকে দেখে শোভন সাথীকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।সাথী চিৎকার করে বলছে আমি আজ তোমার মুখোশ উন্মোচন করা ছাড়া কোথাও যাবোনা।রিতা সাথীকে দেখে চমকে উঠে ওর যতদূর মনে হয় শোভনের সাথে দুই মিনিটের ভিডিও ক্লিপে এই মেয়েটাই ছিলো।শোভনের বাবা মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন তাদের কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা।সাথী শোভনের বাবা মায়ের সামনে গিয়ে বলে,ছেলে জন্ম দিয়েছেন অথচ ছেলে কি কি করে বেড়াচ্ছে সে খবর রাখছেন না।রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে আর তুমি!তোমার স্বামী যে তোমাকে রেখে বাইরে মেয়েদেরকে নিয়ে ফূর্তি করে যাচ্ছে,দিনের পর দিন তোমাকে ঠকিয়ে যাচ্ছে সেখবর রাখো তুমি?
স্টপ সাথী!আই সেইড স্টপ!চিল্লিয়ে বলে উঠলো শোভন।তারচেয়ে দ্বিগুন জোরে চিল্লিয়ে সাথী বলল,তুমি চুপ থাকো।
তারপর একেরপর এক ঘটনা গুলো বলতে থাকে।
এই ছেলে একটা মেয়েবাজ।মেয়েদেরকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে বিয়ে করবে বলে বেড পর্যন্ত নিয়ে যায়।নিজের ঘরে বউ রেখে অন্যনারীতে আসক্ত হয় শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য।আমাকেও বিয়ে করবে বলে আমার সব কিছু কেঁড়ে নিয়েছে।কথাটা বলতেই সাথীর চোখ পানিতে টলমল করে উঠে।আমি কিছুই জানতাম না প্রথমে যখন আমার ফ্রেন্ড ইশান আমাকে এগুলো বলেছিলো তখন আমি কিছু বিশ্বাস করিনি।উল্টো ইশানকে যা ইচ্ছে তাই বলে অপমান করেছি।তারপরেও ইশান থেমে থাকেনি যেসকল মেয়েদের সাথে শোভনের সম্পর্ক ছিলো ওদেরকে একসাথ করে আমাকেও সেখানে নিয়ে যায়।সবার বলা ইনফরমেশনে ইশানের কথাগুলো মিলে যায়।পরে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি শোভন বিবাহিত তার উপর ওর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।মেয়েগুলো দ্বিতীয়বার শোভনের সামনে আসতে চায় না তাই আমি একাই এসেছি।
শোভন ওর মা বাবার কাছে গিয়ে বলে এই মেয়ে সব মিথ্যা বলতেছে।তোমারা কিছু বিশ্বাস করবেনা।শোভানের বাবা মার মাথা হ্যাং হয়ে আছে কি শুনছে নিজের ছেলের নামে এগুলো।তাদের এসব কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছেনা।তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছেনা।
এবার রিতা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,কিছুই মিথ্যা না সব সত্যি কথা।ওই জানোয়ার আমার বোনের সাথেও একই কাজ করার চেষ্টা করেছিলো।আমার বোন রাজি না হওয়ায় আমার বোনকে সবার চোখে নিচ আর ছোট করেছে।এতদিন আমি চুপ ছিলাম কারণ ওই জানোয়ার আমার মুখ বন্ধ রেখেছিলো।আমি মুখ খুললে আমার বোনের সংসার ভাঙতেও দু’বার ভাবতোনা।
এবার ওই জানোয়ারের চরম শাস্তির ব্যবস্থা করবো।
শোভন আর কাউকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলো না।ডাইনিং থেকে ফল কাটার ছুরি হাতে নিয়ে পেছন থেকে সাথীর গলায় চেপে ধরলো।আর একটা কথা বললে তোকে এখানেই শেষ করে দেবো।রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,তোকেতো আমি পরে দেখে নেবো দেখি এবার কিকরে নিজের বোনের সম্মান আর সংসার দুইটাই টেকাতে পারিস।
শোভনের বাবা মায়ের এতক্ষণেও ছেলের প্রতি যে বিশ্বাস ছিলো তা শোভনের এই মুহূর্তে করা কাজে ভেঙে চূর্ণ হয়ে গেছে।শোভনের বাবা এগিয়ে আসতে নিলেই শোভন জবাব দিলো,একদম না কেউ জায়গা থেকে নড়বেনা।আমার কথার হেরফের হলে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবো সবগুলোকে।সবাই আতঙ্কিত হয়ে আছে।শোভনের বাবা মায়ের নিজেদের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে এই ছেলেকে দুনিয়ার মুখ দেখিয়ে।
সাথীর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি।শোভন সাথীকে হাসতে দেখে বলল,মরার ভয়ে পাগল হয়ে গেলি নাকি?
সাথী ঠোঁটেের কোনে আগের মতোই হাসি স্থির রেখে বলল তোর জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে সেজন্যই হাসছি।
শোভন ভড়কে গেলো সাথীর কথায়।সারপ্রাইজ মানেতো নিশ্চয়ই সাথী কিছু একটা প্ল্যান করে রেখেছে।
শোভন সাথীর গলায় ছুরিটা আরেকটু চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,কি প্ল্যান করেছিস বল নয়তো আর এক সেকেন্ডও বাঁচার সুযোগ পাবিনা।
সাথী শান্ত স্বরে জবাব দেয়,রিল্যাক্স!এতো তাড়া কিসের?আরেকটু অপেক্ষা কর দেখবি সারপ্রাইজ তোর সামনে।
#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৮
সাথী বয়েজ ভেতরে এসো তোমরা বলতেই ইশান কতগুলো ছেলেপুলে নিয়ে শোভনের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
এতগুলো ছেলেকে একসাথে দেখে সেদিকে আতঙ্কিত চোখে একবার তাকিয়ে শোভন সাথীর দিকে তাকায়।
সাথী ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলল,পুলিশে দিলেতো একদিন না একদিন বেরিয়ে যাবি তার আগে একটু আদর যত্ন করে নিই যাতে জীবনের চলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলিস।তারপর নাহয় পুলিশের হেফাজতে রাখা যাবে তোকে।
শোভন রুপ্সিতার গলায় ছুরি চেপে ধরে রেখে নিজের ফোন বের করে কাউকে কল দিতে দিতে সাথীকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুই কাজটা ভালো করলিনা সাথী।
রিতা,শোভনের বাবা মা সবাই নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান সাবধানে পেছন থেকে শোভনের হাত চেপে ধরে ছুরিটা ফেলে দিতেই সাথী সরে আসে।তারপর শোভনের নাক বরাবর ঘুষি মেরে বলল,কাকে কল দিতে যাচ্ছিলি?শোভন সিটকে দু’পা সরে যায়।
ইশান ছেলেগুলোকে ইশারা করতেই সবাই মিলে শোভনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে মারতে থাকে।
ইশান দাঁতে দাঁত পিষে বলল,এমন ভাবে মারবে যাতে ভেতরে যখম হবে কিন্তু উপর দিয়ে দেখলে তেমনটা বোঝাই যাবেনা।সালার মেশিনের এমন অবস্থা করবি যাতে দ্বিতীয়বার কোনো মেয়ের কাছাকাছি যাওয়ার কথাও না ভাবতে পারে।নিজের অক্ষমতার কথা ভেবে ফিরে আসে।
একসাথে এতগুলো ছেলের মার সহ্য করতে না পেরে শোভন চিৎকার করছে।একজন দুপায়ের মাঝ বরাবর লাথি মারতেই শোভন এক গগনবিধারী চিৎকার করে উঠে মা বলে।
শোভনের বাবা মা,রিতা সবার চোখে পানি কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেনা।শোভন চিৎকার করে বলছে,বাবা-মা আমি মরে যাচ্ছি আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচাও।আমি আর কখনো এসব খারাপ কাজ করবোনা একেবারে ভালো হয়ে যাবো।শোভনের বাবা মা ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।ছেলের এই অবস্থা দেখে কষ্ট হচ্ছে তারচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এমন একটা নরপিশাচকে জন্ম দিয়েছে বলে।
শোভন আর্তনাদ করে বলছে,মা তোমার আল্লাহর দোহাই লাগে এদেরকে থামাও।আমি ভালো হয়ে যাবো।শোভনের মা কটাক্ষ করে বললেন,কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয়না তেমনি তোর মতো কিছু পশুও কোনদিন ভালো হবেনা।
একই জায়গায় অন্যজন পা দিয়ে আঘাত করতে শোভনের চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম।গলার স্বর বের হচ্ছেনা অতি কষ্ট রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,রিতা আমি তোমার স্বামী তোমার সন্তানের বাবা।আমার কিছু হলে তুমি বিধবা হয়ে যাবে আমাদের সন্তান এতিম হয়ে যাবে।
রিতা চিৎকার করে বলছে,লাগবেনা আমার তোর মতো স্বামী,আমার সন্তানের ও এমন বাবার দরকার নেই।আমার সন্তানের জীবনে যাতে কোনদিন তোর মতো জানোয়ারের ছায়াও না পড়ে সেই চেষ্টাই করবো আমি।
অবশেষে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে শোভনের দেহ।হালকা একটু শ্বাস উঠা নামা করছে।ইশান সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে এবার এটাকে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে একটু রিকভার হলেই পুলিশের হেফাজতে দিয়ে দেবো।এমন অবস্থা হয়েছে জেল থেকে ছাড়া পেলেও কোনদিন সচলভাবে চলাফেরা করতে পারবেনা।ইশান ছেলেগুলোকে নিয়ে চলে যায় সাথে শোভনকেও নিয়ে যায়।
শোভনের বাবা মা,রিতা ফ্লোরে বসে কাঁদছে।সাথী রিতার কাঁধে হাত দিতেই রিতা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।সাথীর চোখেও পানি।রিতা কাঁদছে স্বামীর কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে আর সাথী কাঁদছে প্রেমিকের কাছে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে।
আমাদের সমাজে কিছু মেয়ের এরকম ভুলের কারণে পরে তাদেরকে পস্তাতে হয়।সমাজের চোখে নিজেতো ছোট হয় সাথে বাবা মায়ের মুখও ছোট করে।যে মানুষটা তোমাকে ভালোবাসবে সে কোনোদিন তোমার শরীরের দিকে নজর দিবেনা।সে তোমাকে হালালভাবে গ্রহন করতে চাইবে।আফসোস এই ছোট্ট কথাটা মেয়েরা বুঝেনা।মিথ্যা ভালোবাসার বশবর্তী হয়ে বিলিয়ে দেয় নিজেকে।
রুপ্সি আমার নীল রঙের টিশার্ট টা কি করেছো?
রুপ্সিতা সানিকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকেছে মাত্র তখনই আলিফ টিশার্টের কথা জিজ্ঞেস করে উঠলো।রুপ্সিতা আমতা আমতা করে বলল,আব আমি কি জানি আপনার নীল টিশার্ট কোথায়?
আলিফ বিরক্তি নিয়ে বলে তুমিইতো টিশার্ট টা দিনে একশবার জামার উপর দিয়ে পড়ো।
রুপ্সিতা চোরের মতো মুখ এদিক ওদিক করে বলল,তো?তাই বলেকি আমাকে জানতে হবে নাকি টিশার্ট এখন কোথায় আছে?
আসলে রুপ্সিতা টিশার্ট টা পড়ে খাটের উপর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হাটুর নিচে পড়ে টিশার্টের বুক পকেটের জায়গায় অনেক খানি ছিঁড়ে গেছে।আলিফের গায়ের মাপের টিশার্ট রুপ্সিতার গায়েতো বড় হবেই তার উপর গেছে হামাগুড়ি দিয়ে নামতে।
রুপ্সিতার মুখের ভাবগতি বুঝার চেষ্টা করে আলিফ বলল,কি করেছো টিশার্ট বলো!আমি কিছু বলবোনা।
রুপ্সিতা হাসার চেষ্টা করে বলল,আমি সত্যিই জানিনা টিশার্ট টা কোথায় তাহলে বলবো কিভাবে?
সানি একবার আলিফের মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার রুপ্সিতার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
এরপর রুপ্সিতার কোল থেকে নেমে রুপ্সিতার পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে বইয়ের চিপা থেকে আলিফের টি-শার্ট বের করে আনে।রুপ্সিতা বইয়ের চিপায় রেখেছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টিশার্টের কিছু অংশ বেরিয়েছিলো।আলিফ সানির হাত থেকে টিশার্ট নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখে বুকপকেটের জায়গায় অনেকখানি ছিঁড়ে আছে।রুপ্সিতার দিকে তাকতেই রুপ্সিতা একটা কেবলাহাসি দিয়ে বলে,সত্যি বলছি আমি কিছু জানিনা।
আলিফ মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলল,আমার টিশার্ট ছিঁড়ে ফেলার অপরাধে আজ তোমাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।রুপ্সিতা সানিকে নিয়ে রুম থেকে কেটে পড়তে চাইলে আলিফ রুপ্সিতার হাত চেপে ধরে সানিকে বলে,বাবা দেখে আসোতো তোমার আম্মু তোমাকে কেন ডাকছে?
সানি ভ্রু কুচকে বলল,কই আমিতো শুনলাম না?সাথে রুপ্সিতা ও তাল মিলিয়ে বলল,একদম!আমিওতো শুনলাম না।
আলিফ মুখটাকে ইনোসেন্ট করে সানিকে বলল,কিন্তু চাচ্চু তো স্পষ্ট শুনলাম।তুমিই বলো চাচ্চু কি তোমাকে মিথ্যে বলছে?
সানি মাথা নেড়ে না জানিয়ে ভাবুকের মতো গালে আঙ্গুল দিয়ে ভাবতে ভাবতে চলে গেলো।
আলিফ দরজা আটকে দিয়ে রুপ্সিতাকে খপ করে দুহাতে চেপে ধরলো।রুপ্সিতা ছটপট করে নাক টেনে বলল,একটা টিশার্টের জন্য আপনি আমাকে এখন শাস্তি দিবেন?
আলিফ ঠোঁট টিপে হেসে বলল,হুম!ভুল যখন করেছো শাস্তিতো পেতেই হবে।আলিফ রুপ্সিতার দিকে এগিয়ে আসছে রুপ্সিতা পিছিয়ে যেতে যেতে ভাবছে না জানি আজকে আমার গাল দুটো ঠাটিয়ে চড় মেরে ফাটিয়ে দেয়।আলিফ রুপ্সিতার একেবারে সামনে আসতেই রুপ্সিতা চোখদুটো বন্ধ করে নিয়ে মিনমিন করে বলে আস্তে মারবেন প্লিজ।
আলিফ রুপ্সিতার বন্ধ চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে তারপর হুট করে রুপ্সিতার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে আস্তে করে কামড়ে ধরে।রুপ্সিতা চমকে উঠে চোখ মেলে তাকায়।তখনই রুপ্সিতার মুঠোফোন তীব্রগতিতে আওয়াজ করে উঠে।আচমকা এরকম আওয়াজে আলিফ রুপ্সিতাকে ছেড়ে সিটকে সরে যায়।অতঃপর ফোনের দিকে তাকাতেই রাজ্যের বিরক্তি এসে আলিফের চোখে মুখে ভর করে।এই ফোন আওয়াজ তোলার আর সময় পেলোনা এখনই কল আসতে হলো?
রুপ্সিতা মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় রিতা কল করেছে।কেননা ওই ঘটনার পর থেকে রিতা কখনো রুপ্সিতাকে কল দেয়নি।কল ধরবে কি ধরবেনা ভাবছে রুপ্সিতা।এরমাঝে একবার কল কেটে গিয়ে আবার কল আসে।রুপ্সিতার আকাশ-পাতাল ভাবনার মাঝে আলিফ বলে উঠে,কল ধরছো না কেন?
রুপ্সিতা হ্যাঁ ধরছি বলে কল রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায়।এখন কল রিসিভ না করলে আলিফ নানান প্রশ্ন শুরু করতো।
ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে রিতার ভাঙা ভাঙা কন্ঠস্বর শুনতে পায় রুপ্সিতা।
রুপা!
রুপ্সিতা চোখ বন্ধ করে নেয়।কতদিন পর নিজের বোনের মুখে এই ডাকটি শুনলো।
রিতা আবারো বলে উঠে,রুপা একটু শোভনের বাসায় আসতে পারবি কালকে?তোর আসাটা খুব জরুরী।আমি বাবা মাকেও আসতে বলেছি প্লিজ তুই আসিস।
রুপ্সিতা কেন জিজ্ঞেস করতেই রিতা কেঁদে উঠে বলে,আসলেই সব জানতে পারবি প্লিজ আয়না একবার।
রুপ্সিতা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,তুই কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে সব ঠিকঠাক আছেতো?
কিচ্ছু ঠিক নেই তুই একবার আয় প্লিজ।আসলে সব জানতে পারবি বলেই রিতা কল কেটে দিলো।নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টায় আছে রিতা।
রুপ্সিতা হ্যালো,হ্যালো করে যাচ্ছে যখন বুঝতে পারলো কল কেটে গেছে তখন ফোন সামনে এনে আনমনেই বলল,আজব তো!এভাবে কল কেটে দিলো কেন?
কিছুতেই রুপ্সিতার মন শান্ত হচ্ছেনা তাই বার কয়েক রিতার নাম্বারে ডায়েল করতেই প্রতিবার কল বেজে কেটে যাচ্ছে।ওপাশ থেকে কেউ তুলছেনা।
শেষে ব্যর্থ হয়ে রুপ্সিতা রুমে ফিরে আসে।ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে রিতা কেন ওকে কাল যেতে বলল আর কাঁদছেইবা কেন?এসব ভাবতে ভাবতে রুপ্সিতা খাটের সাথে বাড়ি খাওয়ার আগেই আলিফ ধরে ফেলে।রুপ্সিতাকে ধমকে বলে,কি ভাবো সারাদিন?এক্ষুনিতো পায়ে লেগে যেতো।রুপ্সিতা সামনে তাকিয়ে আবার আলিফের দিকে তাকায়।
আপু কল করেছে।আমাকে কাল একবার যেতে বলেছে ওদের বাসায়।ও কাঁদছেও কিন্তু কারণ বলছেনা।বলেছে কালকে আমি গেলেই নাকি সব বলবে।আলিফ রুপ্সিতাকে খাটে বসিয়ে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে এত চিন্তা করতে হবেনা।আমি তোমাকে কাল তোমার আপুর বাসায় দিয়ে তারপর অফিসে যাবো।এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
শুয়ে শুয়ে ও রুপ্সিতা রিতার কথা নিয়ে চিন্তা করছে।আলিফ পেছন থেকে রুপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে কোমল কন্ঠে বলল,রুপ্সি!
রুপ্সিতা জবাব দিলো,হুহ!
আলিফ রুপ্সিতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,এখনো চিন্তা করছো তুমি?
রুপ্সিতা বলল,নাহ মানে আমি
আলিফ রুপ্সিতাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,কালকে তো যাচ্ছোই তাহলে এত চিন্তা কিসের?যত চিন্তা তুমি সবাইকে নিয়ে করো তার এক পার্সেন্ট তোমার এই বরটাকে নিয়ে করলেই পারো।আলিফের কথা শুনে রুপ্সিতা হেসে দেয়।আলিফ রুপ্সিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলল,এখন ঘুমাও।রুপ্সিতাও আলিফের পিঠে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
#চলবে……..।
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)
#চলবে……..।
(আজকের পর্ব পড়ে অন্তত মন্তব্য করে যাবেন।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)