আড়ালে_ভালোবাসি পর্ব ৪+৫

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
#পার্ট_৪

আরহান এর সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় সেই ছেলেরা পড়ে আছে আর আরহান সিগারেট ধরিয়ে টান দিচ্ছে । সিগারেটের প্রথম টান দিয়ে সামনের ছেলেটার মাথা পা দিয়ে চেপে ধরে বলে

“তোদের তো খুব সাহস এতবার বললাম ছেড়ে দে যেতে দে কিন্তু না তোদের নিশা কে চাই এখন বুঝ তোর সাহস কি করে হলে নিশা পাখি কে হার্ট করতে চাওয়ার কি হলো বল (চিৎকার করে)

আরহান এর চিৎকারে ছেলেগুলো আরহানএর পা ধরে আকুতি করতে লাগলো

“ভাই আমাদের মাপ করে দেন আর কখনো এমন ভুল হবে না এবারের মত মাপ করে দেন ভাই প্লীজ

আরহান বাকা হেসে বলে

“আমার ডিকশনারি টে ক্ষমা বলে কোনো কিছু নেই তোদের বারণ করছিলাম কিন্তু শুনিস নি এখন বুঝ হয় তোরা নিজেদের মারবি তাহলে আমি তোদের কঠিন মৃত্যু দেবো (চোখ লাল করে)

ছেলে গুলো ভয়তে কাপতে লাগলো বাকা হেসে বলে

“তোদের টাইম শেষ now it’s my time

কথাটা বলে আরহান মদের বোতল ছেলেগুলোর গায়ে ছুড়ে মারে গ্যাস লাইট জ্বালিয়ে দিতে গিয়ে থেমে যায়

“না না এভাবে মারলে হবে না মৃত্যু তো খুব সহজ তোদের এমন কষ্ট দেবো যে বার বার বলবি মৃত্যু এর থেকে ভালো (বাকা হেসে)

ছেলেটা এবার চিৎকার করে বলে

“ভাই আমাকে মেরেন না আমার আব্বু আম্মুর আমি ছাড়া কেউ নেই সত্যি বলছি এইসব ছেড়ে দেবো আর নিশাত মানে ভাবির দিকে আর চোখ তুলে তাকানোর কথা ভাববো না প্লীজ আমাদের ছেড়ে দেন

আরহান লাথি মেরে বলে

“ঠিক আছে ছাড়তে পারি একটা শর্তে

“হ্যা হ্যা সব শর্ত মানতে রাজি যা বলবেন তাই করবো

“তোরা এখন থেকে নিশার উপর নজর রাখবি ওর যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেই সব দেখবি আমি থাকলে সেটা দরকার নেই কিন্ত আমি যদি না থাকি সেইসময়

“আচ্ছা ভাই আমরা সব করবো কাল ভাবির কাছে মাপ চেয়ে নেবো সত্যি বলছি

“তোরা এখন যেতে পারিস

আরহান পকেটে হাত দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়

বারান্দায় আরহান গিটার নিয়ে গান গাচ্ছে

||ভেবেছি তোমায় ভুলে যাবো আমাকে
আমি গুছিয়ে নেবো

অনেক তো হলো আর কত বলো
অশ্রু জ্বলে ব্যাথা লুকাবো

আমি ভালো আছি তুমি ভালো থেকো
আমি ভালো আছি তুমি ভালো থেকেও

ঘুম নেশহীন চোখ আমার
মেঘ আকাশে দুঃখ রাখি

চাঁদ লুকানো একা রাতে
মাটিতে জলে লোকসা কি

অনেক তো হলো আর কত বলো
অশ্রু জলে ব্যাথা লুকাবো

আমি ভালো আছি তুমি ভালো থেকো

(বাকিটা শুনে নিয়েন খুব সুন্দর গান তাহসানের)

আরহান নিশাত এর মুখ মনে করে চোখ বন্ধ করে গান গাইছে । গান শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তখনই পিছন থেকে হাত তালির আওয়াজ ভেসে উঠে

আরহান পিছনে না তাকিয়ে বলে

“তুই এখন এই সময় এখানে কেনো ?

আরিয়ান হাসতে হাসতে বলে

“আমার ভাই যে অন্য দুনিয়ায় আছে সেটা বুঝতে পারছি

“ফাজলামি বাদ দিয়ে আসল কথা বল

“আচ্ছা বল তো তুই লাস্ট কবে গান গাইছিলি (ভ্রু কুচকে)

আরহান কিছু বললো না দেখে আরিয়ান বললো

“জানিস আজ নিশাত কে তুলে আনতে সজীবরা (সকালের ছেলেরা) গিয়েছিল আমি একবার ফোন দি নিশাত কে

“চিন্তা করিস না কিছু হবে না

“তোকে কে বললো (অবাক হয়ে)

আরহান থতমত খেয়ে জবাব দেয়

“না মানে নিশা তো একটাই একশো ওর কথা শুনে বুঝলাম

আরিয়ান কিছু বললো না নিশাত কে ফোন দিল। নিশাত অ্যাসাইনমেন্ট করছিলো তখনই unknown number থেকে ফোন আসাই ধরে

“আসসালমুআলাইকুম কে বলছেন ?

“ওয়ালাইকুম আসসালাম আমি আরিয়ান

“ওহ জি বলুন

“কি করছো ?

“তেমন কিছু না ছোট বোনের assignment করছি

“ওহ আচ্ছা তাহলে করো আর একটু সাবধানে থেকো

“মানে ?

“কিছু না ফ্রেন্ড এর খোজ নেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি যদি কোনো সমস্যা হয় আমাকে জানাবে

“কিন্ত

নিশাত কে আর বলতে না দিয়ে আরিয়ান ফোন রেখে দেয় আর নিশাত ভাবতে থাকে

“পাগল নাকি

“কে পাগল আপু ?

নিশাত পাশে তাকিয়ে দেখে ঈশা শুয়ে ফোন টিপছে নিশাত সরু চোখ করে তাকিয়ে বলে

“তুই না ঘুম পড়ছিলি?

“আমার ঘুম তো কখন ভেঙ্গে গেছে কিন্ত তুমি লিখায় ব্যাস্ত তাই আমাকে দেখতে পাও নি

নিশাত আর কিছু বলল না লিখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।

আরিয়ান ফোন রেখে পিছনে তাকাতে দেখে আরহান ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে

“কিহলো ওই ভাবে কি দেখছিস ??

“নিশার নাম্বার তোর কাছে ?

“হ্যা সকালে দিয়েছিল কেনো ?

” ওর সাথে তোর এত কি ?

“ফ্রেন্ড

“কেনো আর কোনো মেয়ে নেই ?

আরিয়ানের খুব হাসি পাচ্ছে কিন্ত নিজেকে ঠিক করে বলে

“নিশাত আলাদা ওর মতো কেউ নেই

আরহান এর মনে হচ্ছে ছেলে গুলোর মত আরিয়ান কে মেরে ফেলতে কিন্ত এখন পারছে না

“তুই কি ভেবেছিস তোর ভাই হয়ে আমি তোর মনের কথা জানতে পারবো না আমি সব জানি নিশাত কে তুলে আনতে যাওয়া ছেলেদের তুই কিভাবে মেরেছিস তোর উপর আমার নজর আছে নিশাত আসার আগে থেকে এখন শুধু তোকে বুঝাতে হবে ভালোবাসা কি আমার বিশ্বাস নিশাত তোকে ভালো করতে পারবে তোকে একটা সুন্দর জীবন দিতে পারবে বাকিটা আলাহ ইচ্ছায় (মনে মনে )

“তুই এখন যা

“না আজ আমি এখানে থাকবো অ্যান্টি আংকেল কোথায় ?

“যেখানে থাকার কথা সবাই নিজের কাজে ব্যাস্ত (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

আরিয়ান বুঝতে পারলো তাই আর কিছু বাড়ালো না ।

পরের দিন ভার্সিটিতে নিশাত গাছের নিচে বসে আছে আজকে ভার্সিটিতে আসতেই কালকের ছেলে গুলো পা ধরে মাপ চায় কিন্ত নিশাত সব থেকে বেশি অবাক হয়েছে যখন ছেলেগুলো ভাবী ডেকেছে নিশাত সেই থেকে ভাবছে আর নেহা এটা সেটা বলে যাচ্ছে

দূর থেকে কেউ একজন নিশাত কে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তার মুখে হাসি

আরহান অপলক চোখে তাকিয়ে আছে নিশাত এর দিকে নিশাত তো নিজের ভাবনা মগ্ন হটাৎ আরহান এর মেজাজ গরম হয়ে যায় ফিহার কথায়

“বেবি তুমি আমাকে আগের মত হ্যাগ করো না কেনো ? আজ আমাকে কিস করতে হবে kiss me

আরহান রাগী চোখে তাকাতেই ফিহা চুপ হয়ে যায় আরহান সামনে তাকাতেই রাগ আর কোট্রোল করতে পারলো না

নিশাত আর আরিয়ান গল্প করছে আরহান রেগে গাছে জোড়ে বারি দেয়। ফিহা তো ভয়ে শেষ হটাৎ এত রেগে গেলো কেনো সে তো এত সহজে রাগে না ।

আরহান রেগে ফিহা কে বলে

“তোমাকে কতো বার বলেছি আমাকে ফোর্স করবে না কথা কি কানে যায় না সব সময় পিছনে কেনো পড়ে থাকো (চিৎকার করে)

আরহান এর চিৎকারে আশে পাশে সবাই তাকিয়ে আছে ফিহা অবাক হয়ে বলছে

“কি হয়েছে তুমি এভাবে রেগে গেছো কেনো ?

আরহান একবার ফিহার তো একবার নিশাত এর দিকে তাকিয়ে দেখে নিশাত কোথায় একটা যাচ্ছে ।আরহান কথা না বাড়িয়ে চলে যায় ।

ফিহা যেতে নিলে আর যায় না গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে ।

নিশাত লাইবেরি়তে বই দেখছে তখনই একটা ছেলে আসে

“hi নিশাত আমি রবীন

“hi আপনি তো আমার নাম জানেন আমি আর কি বলবো

“হা হা হা তো কেমন আছো ?

” জি ভালো কিছু বলবেন ?

” আমি তোমার ক্লাসে পড়ি তুমি দেখনি হয়তো

” ওহ আচ্ছা (মেকি হাসি দিয়ে)
উফফ এই লোক যায়না কেনো বিরক্তিকর আমার লেট হচ্ছে (মনে মনে)

” তো তোমার নাম্বার কি দেওয়া যাবে ?

” হ্যা why not লিখুন

“হ্যা বলো (ফোন বের করে)

“0123456789 এর মধ্যে আমার নাম্বার আছে কষ্ট করে খুঁজে নিন আমি একটু ব্যাস্ত

নিশাত চলে যেতে গেলে রবিন মুখ মলিন করে বলে

” সোজা বললে হলো দিবে না

“দিলাম তো আর আপনি কি ভাবলেন অপরিচিত একটা ছেলে কে আমি নাম্বার দিয়ে দেবো আমি কেনো কোনো মেয়ে এটা করবেন না আপনারা কিভাবে ছেছরার মত নাম্বার চান (রেগে)

“আসলে আমার ভুল i am sorry

“হুম

নিশাত চলে যেতে গেলে রবিন আবার ডাক দেয়

“আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি

“না ভাই আমার অনেক ফ্রেন্ড আছে আর লাগবে না

” এত অ্যাটিটিউড

“হ্যা অ্যাটিটিউড জানস যখন তাহলে কথা বলতে আসছিস কেনো তোরে কি আমি ডেকে আনছি যে আসো আমার সাথে কথা বলো যতসব নিজে থেকে কথা বলে এখন আবার ঢং করছে আজাইরা নেক্সট টাইম অ্যাটিটিউড গার্ল এর সাথে কথা বলতে আসবি না ফেরেস্তার কাছে যাবি (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে )

নিশাত অন্য পাশে যায় ছেলেটা চলে যায় কেউ একজন আড়াল থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে । এতক্ষণ সব আড়াল থেকে দেখছিল

আরহান পকেটে হাত দিয়ে বাকা হাসে নিশাত বই নিচ্ছিল হটাৎ লাইট অফ হয়ে যায় ।নিশাত কিছুটা ভিতরে তাই বাইরের আলো আসছে হটাৎ কেউ নিশাত কে বুক শপের সাথে চেপে ধরে নিশাতের দুই পাশে হাত রাখে ।

নিশাত কারোর অস্তিত্ব বুঝতে পেরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বলে উঠে

” এখানের কোনো ছেলের সাথে যেনো তোমাকে নেক্সট টাইম কথা বলতে না দেখি যদি আমার কথার খেলাপ হয় তাহলে তোমার এবং ছেলেগুলোর বিপদ বুঝলে নিশা পাখি

“কে আপনি ?

আরহান নিশাতের চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে এই প্রথম
আরহান নিশাত কে স্পর্শ করলো ।নিশাত চুপ হয়ে আছে কিছু বলার শক্তি যেনো নিশাতের নেই এই প্রথম নিশাত কে কোনো ছেলে নিশাতের এত কাছে নিশাতের কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে বুকের ভিতর মনে হচ্ছে কেউ ঢল বাজাচ্ছে ।

আরহান চুলের ভিতর হাত দিয়ে দিয়ে বলে

” কিছু সম্পর্কের নাম হয়না তবু ও বন্ধন হয়ে যায়

কথাটা বলে আরহান কপালে ফু দিয়ে চলে যায় নিশাত বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে মনে হচ্ছে এখনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে

একটু পর লাইট অন হয়ে যায় নিশাত চারিদিক ভালো করে খুঁজে দেখে কেউ নেই নিশাত আর না ভেবে তাড়াতাড়ি বের হতে গেলে দরজার কাছে কারোর সাথে ধাক্কা খায়

নিশাত পড়ে যেতে নিলে সামনের মানুষটার শার্ট খামচে ধরে ফলে বুকে নখের আচর লাগে নিশাত হা করে তাকিয়ে আছে

আরহান মুচকি হেসে পিঠে হাত দিয়ে সোজা করে দাড় করায় নিশাত এখনো শার্ট খামচে দাড়িয়ে আছে

আরহান কাশি দিয়ে বলে

“এভাবে তাকিও না আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে এভাবে দেখবে নজর লেগে যাবে তো

আরহান এর কথায় নিশাত চোখ সরিয়ে নেয় আবার কিছু একটা ভেবে বলে

“আপনি ছিলেন ওই জায়গায় ?

“কোন জায়গায় ?

“লাইবেরিতে আপনি ছিলেন আমার সাথে

“পাগল হলে নাকি আমি তোমার সামনে আমি দাড়িয়ে তাহলে ওখানে যাবো কি করে (মাথা হাত দিয়ে ) জ্বর হইছে নাকি

“আমি ঠিক আছি সত্যি করে বলেন আপনি ছিলেন কি না

“আরে আজব ত তোমাকে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই (রেগে)

“ঠিক আছে ভালো ভাবে বললে হয় রেগে যাওয়ার কি আছে ভুল তো মানুষের জন্য আপনার মত গাধার জন্য

“কি বললে ?

“না না কিছু না

নিশাত চলে যায় আর আরহান নিশাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে বুকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

“বাপরে কি নখ ওকে ব্যাপার না এর শোধ আমি তুলবো (বাকা হেসে )

নিশাত নেহার কাছে গিয়ে বলে আজ ক্লাস করবে না ভালো লাগছে না নেহা আর কিছু বলে না নিশাত কে এগিয়ে দিয়ে নেহা ক্লাসে যায় ।

আরহান আসে এসে বসে আজ ফিহার সাথে বসেনি এতে ফিহা আরো গাল ফুলিয়ে বসে আছে কিন্ত পরক্ষণে ভাবলো আরহান কখনো রাগ ভাঙ্গাবে না তাই তাকে যেতে হবে ফিহা আরহানের পাশে যেতে গেলে আরিয়ান এসে বসে পড়ে

“কি ব্যাপার ব্রো এত খুশি খুশি কেনো ?

আরিয়ানের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে থাকে

“কি হলো মুখে এত হাসি আর এই তোর বুকে এটা কিসের দাগ আবার কার সাথে রাত কাটালী ?

আরিয়ানের কথায় আরহান এর মনে পড়ে।

” অনেক মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়েছি টাইমপাস করেছি কিন্ত তোমার কাছে যেতে মনে হয়েছে বৌধ ভাবে স্পশ করবো অবৈধ ভাবে না । তোমাকে দেখে কেনো অন্য মেয়েদের মত মনে হয় না কেন তোমার কান্না মাখা চোখ বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে কেনো মনে হয় ওই চোখে আর কখনো পানি আসতে দেওয়া যাবে না কেনো এমন হয় (মনে মনে)

আরিয়ান আরহান যে ঝাকিয়ে বলে

“কি ভাবছিস ?

“না কিছু না ক্লাস করতে না

“বাবাহ

আরহান চোখ রাঙাতে আরিয়ান চুপ হয়ে যায় ।

নিশাত বাসায় এসে দরজা আটকিয়ে বসে ভাবছে আজকের কথা কোনো কিছুর সাথে তাল মিলাতে পারছে না সব কিছু ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে

“কে ছিল ওই জায়গায় আর আমার কেনো এমন মনে হচ্ছে ওটা আরহান কেনো ?

“আপু দরজা খুল সেই কখন আসছিস দরজা বন্ধ করে আছিস কেনো খুল না চাচী ফোন করছে (দরজা ধাক্কা দিতে দিতে )

নিশাত চোখ মুখ ঠিক করে দরজা খুলে দেয় ঈশা হুড়মুড় করে ঢুকে বলে

“চাচী আজ তোকে দেবে কখন থেকে ফোন দিচ্ছে ধরিস না কেনো ?

নিশাত কোনো কথা না বলে ফোন ধরতেই কাকীর ঝাড়ি নিশাত চুপ করে সব শুনছে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দেয় ।

কাকীর ফোন রাখতেই নেহার ফোন নিশাতের কাছে সব কিছু যেনো বিরক্তিকর লাগছে তাও ফোন ধরতেই নেহা চিল্লিয়ে উঠে
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
#পার্ট_৫

নিশাত বসে বসে ভাবছে কি করবে ঈশা পাশে বসে চকোলেট খাচ্ছে আর নিশাত কে দেখছে। একটু আগে নেহা ফোন করে বলে ভার্সিটিতে একটা Sir এর রিট্রাইড হবে সেইজন্য একটা অনুষ্ঠান করবে সকল ছাত্র ছাত্রী মিলে সব কাজ করবে ।

“আপু তুমি ওতো টেনশন করো না তো কাকী ঠিক রাজি হয়ে যাবে

“তুই জানিস তাই না ?

“জানি তো নেহা আপু যখন এত করে বলছে আর ভার্সিটিতে কোনো অনুষ্ঠান হলে তুই স্টুডেন্ট হয়ে থাকবি না সেটা কি ভালো দেখায়

“কাকী ওতো রাত পর্যন্ত থাকতে দেবে না আর ভার্সিটিতে কাজ করতে হবে বাড়ির কাজ সামলে আমি কি করবো এই নেহা টা অনেক জেদী

“হুম নেহা আপু ঠিক করছে তুই একটু নেহার আপুর জায়গায় নিজেকে রেখে দেখ আর বাড়ির কাজ আমি সামলে নেবো তুই just তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবি নাহলে কাকী আমাদের দুইজন কে কাচা চিবিয়ে খাবে

“উফফ দেখি কি হয় এখন ভালো লাগছে না সর

“খালি আমাকে বকে হূ (ভেংচি কেটে)

নিশাত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো দাড়াতেই ঠান্ডা বাতাস নিশাত কে ছুয়ে দিল ।নিশাত দুই হাত মেলে লম্বা একটা নিশ্বাস নিল ।

এদিকে বাইরে থেকে কেউ একজন নিশাত কে খুব ভালো ভাবে দেখছে যেনো তার দেখার শেষ নেই।

নিশাত বারান্দায় রাখা একটা বই হাতে পড়তে লাগলো । ছোট থেকে নিশাত গল্পের বই পড়তে খুব পছন্দ করত বাবা_মা মারা যাবার পর আর পড়া হয়নি । ঈশা নিশাতের মত হইছে অল টাইম বই পড়ে যতক্ষণ নিশাত বাড়ি থাকে না ততক্ষণ বই পড়ে । নিশাত বাড়ি আসলে ওর সাথে থাকে ।

নিশাত বই পড়ছে কিন্ত বার বার মনে হচ্ছে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্ত কে ।

নিশাত পড়া বাদ দিয়ে বারান্দার গ্রিলে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকে কাউকে দেখতে পেলো না একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বসে ।

আরহান যখন নিশাত কে দেখতে ব্যাস্ত তখন ওর ফোনে কল আসে। আরহান না দেখে বিরক্তি নিয়ে কল ধরতেই ফিহা কান্না করে বলে

“বেবি তুমি আমার সাথে এমন কেনো করছো ? আমি কি করেছি তুমি সবসময় আমাকে ইগনোর কর রাগ দেখাও কেনো ? (কান্না করতে করতে )

আরহান রেগে উত্তর দেয়

” দেখ ফিহা আমার এখন কথা বলার কোনো মুড পরে কথা বলছি

ফিহা: না তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না প্লীজ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি । একটু বুঝার চেষ্টা করো আমি তোমার জন্য কি করিনি তুমি যা বলছো সব করেছি আরহান প্লীজ এমন করো না আমি মরে যাবো আমরা ত বিয়ে করবো তাই না

ফিহার কথায় আরহান এর বুক ধক করে উঠে

আরহান : সত্যি তো আমি এটা কি করছি না না ফিহা কে এভাবে আমি কষ্ট দিতে পারবো না । আমি ওকে প্রমিজ করেছি বিয়ে করবো শেষে এসে এভাবে না না আরহান আবরার কাউকে কথা দিলে সেই কথার খেলাপ কখনো করে না আর নিশার জন্য আমার ফিলিং না কোনো ফিলিং নেই কোনো ফিলিং নেই (মনে মনে )

ফিহা : কিহলো বেবি কথা বলো প্লীজ

আরহান : আজ রাতে ক্লাবে আসছ তো ?

ফিহা : হা অবশ্যই তুমি বলছো আর আমি আসবো না সেটা কি করে হয় আমি আসবো (খুশিতে গদগদ করে )

আরহান : ওকে রেডী থেকো আমি পিক করতে আসবো

ফিহা : yea sure i love u baby

আরহান: i love u too (নিশাতের দিকে তাকিয়ে )

আরহান ফোন কেটে নিশাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যায় ।

ফিহা কল কেটে মুচকি মুচকি হাসে তখনই কেউ বলে উঠে

“বেবি তুমি কার সাথে কথা বলছিলে ?

ফিহা : কারোর সাথে না বেবি আমাকে যেতে

মহিন : ওহ বেবি আর একটু থাকো এখন তোমাকে ভালোবাসার বাকি আছে (মুচকি হেসে )

ফিহা : কিসের জন্য wait করছো

ফিহা এক টান দিয়ে মহিন (ফিহার বিএফ ) কে নিজের উপর ফেলে ।

এদিকে
জয় বার বার নিশাত কে ফোন দিচ্ছে কিন্ত ধরছে না

(আরিয়ান আহমেদ জয় । অনেকের আরিয়ান গুলিয়ে যাচ্ছে তাই জয় দিলাম এবার সবাই বুঝতে পারবে )

ঈশা এসে নিশাত কে ডাক দে

ঈশা : আপু তোর ফোন বাজছে ?

নিশাত : কে ফোন দিছে ?

ঈশা : দেখ তুই আমি গেলাম

নিশাত ফোন হাতে নিয়ে দেখে জয়ের অনেকগুলো ফোন ।নিশাত আর দেরি না করে ধরে

নিশাত : hello

জয়: নিশাত কখন থেকে ফোন দিচ্ছি কোথায় চাইলে ?

নিশাত : ফোনের কাছে ছিলাম না কোনো জরুরি দরকার ?

জয় : হা না মানে বলছি আরহান কি তোমার ওখানে ? মানে তোমার সাথে কি দেখা হইছে

নিশাত : উনার সাথে তো আমার দেখা হয়নি আমি কখন চলে আসছি

জয় : পরে কি দেখা হইছে ?

নিশাত : না তো কোনো সমস্যা ?

জয় : না ও তো ঘুরতে যাবে আজ যায়নি ভাবলাম তোমার সাথে

নিশাত : আমার সাথে কেনো থাকবে (অবাক হয়ে )

জয় : এমনি বললাম আচ্ছা ভালো থেকো

নিশাত : জি আপনিও

নিশাত কল কেটে দিয়ে ভাবে

নিশাত : লোকটা এমন কেনো একটু বলে গেলে কি ক্ষতি হয় এত irresponsible কেনো ? তবে লোকটা কে দেখে কেনো যেনো আমার খুব মায়া হয় মনে হয় লোকটার অনেক কষ্ট । সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকে কখনো হাসতে দেখিনি (আনমনে )

জয় কল কেটে ভাবতে থাকে

জয় : আরহান নিশাত এর সাথে নেই তো কার সাথে ? যেইসব জায়গায় যায় আজকে যায়নি আজব ব্যাপার কিছু হলো না তো ওর ?

আরহান বাসায় আসতে আরহান এর আম্মু বলে

আম্মু : আমাদের কি একটু বলে যাওয়া যায় না আমরা কতো টেনশন করছিলাম (অস্থির হয়ে )

আরহান সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলে

আরহান : তোমরা আমার জন্য টেনশন করবে লাইক সিরিয়াসলি । নিজেদের কাজ থেকে যদি বিশ্রাম পাও তারপর না হয় আমাকে নিয়ে ভেবো

আম্মু : এভাবে বলছো কেনো ??

আরহান : আম্মু প্লীজ আমি খুব ক্লান্ত আমাকে একটু রেস্ট নিতে দাও

আম্মু : কিন্ত তুমি

আর কিছু বলার আগেই ফোন বেজে উঠে

আরহান : ওই যে তোমার ডাক পড়ছে! নিজের কাজ করো আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আমি এত তাড়াতাড়ি মরবো না (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে )

আম্মু : আরহান ! আমার কথা শুন আরহান

আরহান আর কোনো কথা না শুনে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয় । বিছনায় বসে ভাবতে থাকে কি করবে

ফোন বের করে নিশাতের কিছু ছবি দেখতে থাকে । প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সব ছবি । আরহান এর সব কিছু ঝাফসা লাগছে বুকের না পাশ যেনো খালি খালি লাগছে ।

চোখ বন্ধ করে নিশাতের সব কিছু মনে পড়ছে কেনক এমন হচ্ছে সেটা আরহান এর অজানা

কিছু কিছু অনুভূতি বুঝতে আমাদের সময় লাগে

আরহান : না আমাকে নিজের উপর কন্ট্রোল রাখতে হবে মনের উপর ও । যে মন আমার কথা শুনে না সেই মন রেখে লাভ কি ? এখন থেকে আবার আগের খারাপ আরহান হয়ে যেতে হবে পার্টি ,স্মোক,মেয়ে এইসব আমার জীবন। নিশশ শশা (টেবিলে বাড়ি দিয়ে )

আরহান নিচে তাকিয়ে হটাৎ বলে jrhe

আরহান : আজ থেকে #আড়ালে_ভালোবাসবো

উঠে দাড়িয়ে ফ্রেশ হতে যায় ফ্রেশ হয়ে রেডী হয়ে বেরিয়ে পড়ে ফিহার বাড়ির দিকে ।

ক্লাবে ফিহা আরহান ড্যান্স করছে কিন্ত আরহান এর মন টিকছে না অস্থির লাগছে ।

জয় এসে আরহান কে ডাক দিতেই আরহান কোনো কিছু না ভেবেই জয়ের কাছে যায়

জয় : কোথায় ছিলি কত বার ফোন দিয়েছি

আরহান : ড্রিংক প্লীজ

জয় :আমি তোকে কিছু বলছি

আরহান : আরহান আবরার কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য না

জয় : আরহান

আরহান : হুস বড্ড জ্বালাস

কথাটা বলে অন্য দিকে চলে যায় জয় যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে

নিশাত ছটফট করছে একবার ভাবছে জয়কে ফোন দিবে আবার ভাবছে না কি জানি ভাববে কিন্ত আরহান এর কথা জানার জন্য অস্থির হয়ে আছে

নিশাত : আচ্ছা ওতো ভেবে কি লাভ একবার ফোন করি যদি কোনো বিপদ হয় না না ফোন দি

নিশাত ফোন দিতেই জয় দূরে গিয়ে ফোন ধরে

জয় : হা নিশাত বলো

নিশাত : কি করছেন ?

জয় : বন্ধুদের সাথে আছি তুমি কি করছো ??

নিশাত : তেমন কিছু না আসলে

জয় : কিছু বলবে ?

নিশাত : না মানে

উফফ নিশাত তুই এত ভীতু কবে হলি সোজা কথা বলতে একট সময় (মনে মনে )

জয় : হা বলো

নিশাত : বলছি আপনার ফ্রেন্ড কে কি পেয়েছে ঠিক আছে উনি ??

জয় হেসে দেয়।

জয় : ওহ তাহলে এই জন্য ফোন

নিশাত : তেমন কিছু না আপনি চিন্তিত ছিলেন তাই

জয় : আমি চিন্তিত ছিলাম তাই নাকি নিজের

নিশাত : না তেমন কিছু না ভুল ভাবছেন ।

জয় : আচ্ছা তাই

নিশাত : হা

জয় আসছে আর নিশাতের সাথে কথা বলছে দুর থেকে আরহান তাকিয়ে দেখছে ।

জয় কল রাখতে আরহান বলে

“কার সাথে কথা বলছিলি?

“নিশাত

নিশাত নামটা শুনে আরহান আর কিছু না বলে ফিহার কাছে গিয়ে ড্রেন্স করে ।

রাতে নিশাত ওর কাকার ঘরে যায়

“কাকা তোমার ওষুধ

“এখানে বস তোকে কিছু কথা বলবো যা তোর জানার দরকার

চলবে

(সরি for late সবাই জানেন একবার লিখতে গিয়ে ফোন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here