আবছায়া পর্ব ৪

আবছায়া
writer::প্রিয়া

কলিজা ফেটে যাচ্ছে ইনায়ার, কি করে এতো কঠিন শর্ত ওকে দিতে পারলো ওর ভাই।
মুখ বুঝে তবুও চুপ করে রইলো ইনায়া।
তখনি ইকরাম বলে উঠলো।

-তুই কি জানিস আইজান আর ওর মা,বাবা ওই বাড়ির আশ্রিত

:আশ্রিত মানে কি?

-তুই কি জানিস না নাকি যেনো ও অভিনয় করছিস।

‘আমি সত্যি ও জানিনা ভাইয়া।

-বাহ এরকম একটা ছেলের সাথে প্রেম করেছিস আবার অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছিস যে কিনা এতো বড় সত্য গোপন করলো।

‘কি বলতে চাইছো সোজাসুজি বলো।

-আইজান যে বাড়িতে থাকে ওইটা ওদের বাড়ি না।
আইজানের বাবা ছিলেন ওই বাড়িয় কেয়ারটেকার ওই বাড়ির মালকিন উনার এক মেয়ে স্বামী নেই।উনারা আইজানের বাবা কে খুবই আপন ভাবতো।
সেই মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবার পর ওই মহিলা একা হয়ে গেলেন।
তাই সঙ্গ দেয়ার জন্য গ্রাম থেকে আইজান আর ওর মাকে এই বাড়িতে এনে তুলেন আইজানের বাবা।
আর ওই মহিলা যাকে আইজান ফুফু বলে তিনি খুব সহজে ওদের আপন করে নিলেন।
উনারর বিশাল সম্পত্তি এখন আইজানরা ভোগ করছে।

এইসব কিছু শুনে যেনো ইনায়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।এতো বড় সত্য আইজান লুকিয়েছে।

ইনায়া উঠে রুমে চলে গেলো।
সবাই আফসোস করছে ইনায়ার জন্য এতো বড় বোকামি কেনো করছে মেয়েটা।

ইনায়া রুমে গিয়ে পায়চারি করছে আইজান কে ফোন দিবে কি দিবে না ভাবতে ভাবতে ফোন দিলো।
রিং হওয়া মাত্র আইজান ফোন রিসিভ করলো।

-মিস করছিলে বুঝি।

‘হুম

-কতোটা মিস করছিলে বাবু।

‘দেখা করতে পারবে বিকালে।

-এক্ষুণি আসি।

‘না বিকালে লেকের পাশে এসো।

-ওকে।

ইনায়া কল কেটে দিলো।
বিকেল হতে বেড়িয়ে পড়লো লেকের উদ্দেশ্যে।
সবাই তখন যার যার কাজে ব্যস্ত আনায়া কে বলে ও বেড়িয়ে যায়।

লেক বেশিদূরে না অল্প একটু রিকশা করে গেলে ৫মিনিট হেঁটে গেলে ১০মিনিট।

প্রতিদিন হেঁটে যায় কিন্তু আজ পা চলছে না তাই রিকশা করেই গেলো।

দূর থেকে আইজানের গাড়ি দেখা যাচ্ছে।
গাড়িতে হেলান দিয়ে আইজান দাঁড়িয়ে আজ ব্লাক ফুলহাতা শার্ট পড়েছে।
ব্লু জিন্স প্যান্ট,প্রতিদিনের মতো আজও স্পাইক করা চুল।

রিকশা থেকে নেমে আইজানের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায় ইনায়া।
মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে।

-কি হলো গো মুখ এমন হুতুমপেঁচার মতো করে রেখেছো কেনো।

‘কিছু জরুরি কথা আছে সামনের দিকে চলো।

-আগে বলো কি হয়েছে বাড়িতে আবার কেউ গালি দিয়েছে মেরেছে।

‘না

-ইনয়া বলো এরকম লাগছে কেনো।

ইনায়া আইজানে হাত চেপে ধরে টান দিতে গেলেই আইজান চিৎকার করে উঠে।
সাথে সাথে ইনায়া হাত ছেড়ে আইজানের দিকে তাকায়।আইজান তখন হাত ঝাড়ছিলো।

-কি হয়েছে হাতে।

‘কই কিছু না।সামনের দিকে যাবে বলেছিলে না।
এসো।

-আইজান হাতে কি হয়েছে মারামারি করেছো।

‘উফফ না তো পাখি।

আইজান হেঁটে হেঁটে লেকের কাছে চলে গেলো।ইনায়া পিছন পিছন গেলো।

-আইজান হাত দেখাও।

‘কিছু হয়নি পাগলি।

-তুমি দেখাবে কি না।

‘কিছু না।

-আমি যাচ্ছি।

‘দাঁড়াও।

আইজান শার্টের হাত উপরে তুলে ইনায়া তাকিয়ে দেখে হাত কাপড় দিয়ে পেছানো।

ইনায়া হাতের কাপড় খুলে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়।

হাতের মধ্যে চারটা কাঁটা টান, টানগুলো পুরোপুরিভাবে ধাঁবানো।

-কি করেছে এসব।

‘সরি পাগলি রাগ করিস না।
কাল তোমার এতো কষ্ট দেখার পর আর নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারিনি।
তুমি ব্যথা পাচ্ছো আর আমি পাবো না তাই কি করে হয়।

-তাই বলে এসব করবে।

‘বিশ্বাস করো তুমি যা আঘাত পেয়েছো সেই কষ্টের কাছে এই আঘাত কিছুই না।

তুমি শরীরে তোমার ভাইয়ের দেয়া প্রতিটা আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।
আমার মনে হয়েছিলো আমার পুরো শরীর যদি কেঁটে ফেলি তা ও কম হবে।

-ইতর, কুত্তা কেনো করলি এরকম।
ইনায়া কেঁদে কেঁদে হাত পা ছুড়ে আঘাত করছে আইজান।

আইজান ইনায়া কে সামলানোর জন্য শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো।

কিছুক্ষণ পর ইনায়া শান্ত হলো।

-এবার বলো কি জরুরী কথা।

যা বলতে এসেছিলো তা আর এখন বলতে পারছে না ইনায়া।কি করে বলবে এই পাগল ছেলে যদি আর কিছু করে বসে।

-দুপুরে খাওনি নিশ্চয়।

‘কি করে খাবো।আপনার ফোন পেয়ে তো ছুটে আসলাম।

-চলো খেয়ে নিবে।

আইজানের গাড়িতে করে সামনের একটা রেষ্টুরেন্টে দুজন খেতে গেলো।
আইজান খাচ্ছে ইনায়া বসে বসে দেখছে।এরমধ্যে আইজানে ফোন আসলো।

ফুফিমা লেখা।

-আসসালামু আলাইকুম ফুফিমা।
আইজান লাউডস্পিকার দিলো।

‘তুই কই গেছিস না খেয়ে।দুপুরে আমি তোর সাথে খাই জানিস না।ঘুমে ছিলে তাই ডাকিনি।

-সরি সরি আমার বাচ্চাটা আমি রেষ্টুরেন্টে খাচ্ছি আপনার বউমার সাথে।

‘ওহ এখন আর মায়ের প্রয়োজন নেই।

-বললাত তো সরি ফুফিমা।

উনি ফোন কেটে দিলেন।

-তোমার ফুফি তোমায় খুব আদর করেন তাই না।

-হ্যাঁ ইনয়া নিজের ফুফি ও এতো ভালোবাসতো কি না জানিনা।

না জানার ভান করে ইনায়া জানতে চাইলো।

-তোমার নিজের ফুফি না।

‘না এই গল্প অন্যদিন বলবো।

-এতোদিন বলোনি তো।

‘সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম।

আইজান নিজে থেকে যখন বলছে অন্যদিন বলবে তাই আর ইনায়া জোর করেনি।

-তোমার পরিবারকে নিয়ে আসার জন্য বলছেন ভাইয়া আর বাবা।

‘সত্যি!!!

-হুম সত্যি।

-উহ হো এতোক্ষণে এই খুশির খবর দিলে।
কাল নিয়ে আসি।সামনের মাসে ফুফি লন্ডন চলে যাবেন।

‘কাল না পরশু আসো আমি বাড়িতে বলে দিবো।

-কি যে খুশি লাগছে ডান্স করতে মন চাইছে।

‘এতো খুশির কি হলো।

-কি বললা তুমি তোমাকে আমি বউ করে পাবো আর খুশি হবো না।

-পাগল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here