#আবেগময়_সম্পর্ক
#৯ম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
মেহুল আকাশের অফিসে এসেছে প্রথমবারের মতো। সে অবশ্য নিজের ইচ্ছাতে আসে নি। আকাশই তাকে নিয়ে এসেছে। আজ নাকি আকাশের অফিসে সবাই তাদের পরিবার নিয়ে আসবে। একটা ছোটোখাটো পার্টি আছে। মেহুলের কোলে আছে রায়ান। সেও এসেছে এই পার্টিতে।
আকাশ তার সব কলিগদের সাথে মেহুলের পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই মেহুলের সাথে কুশল বিনিময় করে। সবকিছু ভালোই ছিল। কিন্তু ঝামেলা ঘটে তখন যখন আকাশের এক কলিগের স্ত্রী মেহুলকে নিয়ে একপ্রকার উপহাস করে বলে, “আচ্ছা আপনি এভাবে একজন বিবাহিত পুরুষ, যার একটা ছেলেও আছে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন কেন? নিশ্চয়ই টাকার জন্য।”
সেই মহিলার সাথে তাল মিলিয়ে আরেকজন বলে ওঠে, “তা নয়তো আবার কি। আজকাল কার মেয়েদের তো টাকা হলেই চলে। টাকা থাকলে এরা এক পা কবরে ফেলে দেওয়া বুড়োকেও বিয়ে করতে পারে।”
এসব অপমানজনক কথা সহ্য হলো না মেহুলের। তাই সে প্রতিবাদ করে বলল,“আমি শুনেছি যে নিজে যেমন সে বাকি সবাইকেও তার মতোই ভাবে। তাই আমার মনে হয় আপনারাই টাকার জন্য আপনাদের স্বামীকে বিয়ে করেছেন এবং আমার ব্যাপারেও সেটাই ভাবছেন।”
মেহুলের এই প্রতিবাদ সহ্য হলো না তাদের। তার মধ্যে একজন ছিল আকাশের উচ্চপদস্থ অফিসারের স্ত্রী। তিনি মেহুলকে ভয় দেখিয়ে বললেন, “এই মেয়ে একদম মুখে মুখে কথা বলবে না। তুমি আমাকে চেনো? না চেনো না। আমি কি করতে পারি সেটাও তুমি জানো না। আমি যদি নিজের স্বামীকে বলি তাহলে তিনি তোমার স্বামীর চাকরি কেড়ে নিতে পারেন। তাই আমার সামনে মুখ সামলে কথা বলবে।”
মেহুল অনেক বেশি সাহসী৷ তাই ঐ মহিলার এমন হুমকিতেও ভয় না পেয়ে মেহুল বলল, “আমার স্বামী নিজের যোগ্যতায় জবটা পেয়েছে, আপনার স্বামীর পা চেটে নয়। তাই আমার কোন প্রয়োজন নেই আপনাকে ভয় পেয়ে চলার।”
এবার মহিলা রেগে গিয়ে তার স্বামীকে ডেকে পাঠালো। সেই মহিলার স্বামী এসে উপস্থিত হলে মহিলাটা নাটক করে বলে, “জানো এই মেয়েটা আমাকে বলেছে আমি নাকি টাকার জন্য মানে টাকার লোভে পড়ে তোমাকে বিয়ে করেছি। কত বড় সাহস ওর। জানো ও তোমার আন্ডারে কাজ করা আকাশ হোসাইনের স্ত্রী।”
আকাশের সিনিয়র কর্মকর্তা আকাশকে ডেকে পাঠান। আকাশ সেখানে উপস্থিত হলে তিনি বলেন, “এসব আমি কি শুনছি? তোমার স্ত্রী কোন সাহসে আমার স্ত্রীকে বলে সে টাকার লোভে আমাকে বিয়ে করেছে। কেমন মেয়েকে বিয়ে করেছ যে কোন ম্যানার্স শেখে নি। এমন মেয়েকে নিয়ে আবার পার্টিতেও এসেছ।”
আকাশ মাথা নিচু করে থাকে। মেহুলের কথা কিছু বলার বদলে সে উলটো বলে, “সরি স্যার। আমি আমার স্ত্রীর হয়ে ক্ষমা চাইছি। আমি ওকে বলে দেব যেন এরপর থেকে এমন ভুল না করে।”
মেহুল আকাশকে এভাবে ক্ষমা চাইতে দেখে বলে, “তুমি ক্ষমা চাইছো কেন? আমি তো কোন ভুল করিনি। ইন ফ্যাক্ট, আমি আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলিনি। ওনারাই তো প্রথমে শুরু করেছেন।”
আকাশ মেহুলকে চোখের ইশারায় চুপ করতে বলে। কিন্তু মেহুল চুপ থাকে না। বরাবরই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে সে। আকাশের সিনিয়রের স্ত্রী মেহুলকে বলেন, “এই মেয়ে তুমি এখনো কোন মুখে এত কথা বলছ। তোমার তো উচিৎ আমার পা ধরে ক্ষমা চাওয়া।”
মেহুলের রাগ এবার মাথায় উঠে যায়। সে ঐ মহিলার সামনে গিয়ে রাগী গলায় বলে, “আমি আপনার বাড়ির কাজের লোক নই যে আমার সাথে এমন ব্যবহার করবেন। আমি কেন আপনার পা ধরে ক্ষমা চাইব? নিজের স্বামীর চাকরি বাঁচানোর থেকেও নিজের আত্মসম্মান আমার কাছে বড়।”
মেহুল রায়ানকে সাথে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। আকাশ তার পেছনে এসে বলে, “এটা কি করলে তুমি? ওনাদের সাথে এমন ব্যবহার করলে কেন? এখন তোমার জন্য যদি আমার চাকরি..”
মেহুল তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “কেমন স্বামী আপনি? যার কাছে নিজের স্ত্রীর সম্মানের থেকে নিজের চাকরি বড় হয়। আপনার তো উচিৎ ছিল আমার হয়ে দুটো কথা বলা তা না করে আপনি ক্ষমা চাইলেন এখন আবার আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছেন।”
আকাশ বলে, “সবসময় প্রতিবাদ করতে নেই। এখন যদি আমার চাকরিটা চলে যায় তখন আমার ফ্যামিলির কি হবে? আমার চাকরির উপর নির্ভর করেই পুরো পরিবার চলে।”
মেহুল কোন কথা না বলে চলে আসে সেখান থেকে। আকাশ নিজেই নিজের সাথে বিড়বিড় করে বলতে থাকে, “আবারও কি তবে আমার এই মুখ বুজে সব মেনে নেওয়ার স্বভাবের কারণেই আমার সংসার ভাঙতে চলেছে?”
❤️
আমিনা আক্তার মেহুলের কাছ থেকে আকাশের অফিসে কি কি ঘটেছে সব শুনলেন। সব শুনে তিনি বললেন, “আমি বুঝতে পারছি তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে। আমার ছেলের হয়েও আমি কোন ওকালতি করব না। আসলে কি বলো তো আমার ছেলে ছোট থেকেই সহজ সরল আর ভীতু স্বভাবের। ও সবকিছু খুব সহজে মেনে নেয়, কাউকে খুব সহজে বিশ্বাস করে নেয়। ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেই তো জীবনে একবার ভয়ংকর ভাবে ঠকে গেছে ও।”
মেহুলের কৌতুহল হয় এই বিষয়ে জানার জন্য। তাই সে প্রশ্ন করে, “কাকে বিশ্বাস করে ঠকে গিয়েছিল আপনার ছেলে? আমাকে বলুন প্লিজ।”
আমিনা আক্তার কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আশিক চলে আসে। আশিক এসে তাদের কথার মাঝে ফোড়ন কে*টে বলে, “একটা খবর শুনেছ?”
আমিনা আক্তার ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুই আবার কোন সত্য শুনে এলি রে?”
আশিক সোফায় পা তুলে বসে বলে, “অন্তর চৌধুরী বিয়ের পিড়িতে বসতে চলেছেন।”
আমিনা আক্তার বলেন, “তোকে কে বলল এই কথা?”
“আজ দেখলাম পার্কে একটা মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ লাগছিল।”
কথা এখানেই থেমে যায়। আমিনা আক্তার মেহুলকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যান। কারণ রাতের রান্না করতে হবে। আমিনা আক্তার রান্না করেন আর মেহুল সবজি কা*টে। সময় এভাবেই অতিবাহিত হয়। রাতের ডিনার করতে আসে আকাশ। মেহুল আকাশের সাথে কোন বাক্য বিনিময় করে না। আকাশ কথা বলার চেষ্টা করলেও মেহুল পাত্তা দেয়না।
রুমে এসে মেহুল ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে রায়ানকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে থাকে। রায়ান ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেলে মেহুলও তার পাশে শুয়ে পড়ে। আকাশ মেহুলকে বলে, “তুমি কি এখনো রাগ করে আছ আমার উপরে?”
“না রাগ করবো কেন? আমার রাগ করা কি শোভা পায়? আমার রাগ তো নাজায়েজ। আমি তো রোবট। তাই আমার কোন অনুভূতি নেই।”
আকাশ নিজের স্বপক্ষে বলে, “আমি কি করবো বলতে পারো? আমার চাকরি বাঁচানোটা তো অনেক বেশি দরকার ছিল।”
“একজন স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করা তার স্বামীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর যেই স্বামী সেই দায়িত্ব পালন করতে না পারে না সে স্বামী নামের কলংক।”
আকাশ কথাটা শুনে ক্ষেপে যায়। সাথে সাথে মেহুলের কাছ থেকে সরে আসে আর বলে, “তোমরা সব মেয়েরাই এক। তোমাদের স্বভাবই হলো ত্যাড়া। কিচ্ছু বুঝতে চাও না। কি ভাবো কি তোমরা ছেলেদেরকে? ছেলেদের কত কি সামাল দিয়ে চলতে হয় জানো?”
মেহুল বলে, “এত হাইপার হয় না। তুমি শান্ত হও।”
আকাশ মেহুলকে আবার কাছে টেনে নেয়।
#চলবে#আবেগময়_সম্পর্ক
#১০ম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
মেহুল ও আকাশের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। এরপর কয়েকদিন সবকিছু ভালো যায়। তারপর নতুন সমস্যা দেখা দেয়।
মেহুল একদিন রায়ানকে স্কুল থেকে নিতে যাওয়ার সময় দেখতে পায় তার বোন পিহুকে। পিহু একটি পার্কে দাঁড়িয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছিল। মেহুলের খটকা লাগে বিষয়টা নিয়ে। কারণ সে তার মায়ের কাছে শুনেছিল পিহু নাকি গত কয়েকদিন থেকে অনেক বদলে গেছে। আজকাল নাকি সারাদিন ফোনে ডুব দিয়ে থাকে। লুকিয়ে লুকিয়ে কারো সাথে কথা বলে। আবার অনেক রাত করে বাড়ি তেও ফেরে সে। এসব কারণে মেহুলেরও সন্দেহ হয় পিহুর উপর। তাই মেহুল ব্যাপারটা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।
একটু পরেই একটা বড় গাড়ি এসে পিহুর সামনে দাঁড়ায়। পিহুও সেই গাড়িটার দিকে তাকিয়ে হাসে। যেন এই গাড়ির জন্যই এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল সে। মেহুল তখন পর্যন্ত গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ কর ছিল সব কিছু। গাড়িটাকে দেখেই তার মনে একটু একটু সন্দেহ জাগতে শুরু করে। মেহুল কিছু ক্ষণ ভেবে বলে, “এই গাড়ি টাকে আমি কোথায় যেন দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। খুব চেনা চেনা লাগছে যে। কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটাই ঠিক মনে করতে পারছি না।”
এদিকে পিহু আর অপেক্ষা না করে গাড়িটাতে উঠে পড়ে। পিহু গাড়িতে ওঠামাত্রই অন্তর তাকে বলে, “তুমি কতক্ষণ ধরে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে সুইটহার্ট? বেশি কষ্ট হয়নি তো।”
পিহু অন্তরের বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে, “একদম কষ্ট হয়নি। তুমি আমার কথা ভেবো না। চলো এখন আমাদের আজকের ডেটে যাই। তোমাকে যখন ভালোবাসি তখন এই কিছু সময় তো কিছুই না। তোমার জন্য আজীবন অপেক্ষা করতে রাজি আছি।”
অন্তর গাড়িটা স্টার্ট দেয়। মেহুলের এবার একটু একটু করে মনে পড়ে। সে বলে, “এটা অন্তর চৌধুরীর গাড়ি না? সেটাই তো মনে হচ্ছে আমার। তাহলে কি পিহু অন্তর চৌধুরীর সাথে…”
এরপরেই মেহুলের মনে পড়ে যায় কয়েকদিন আগের কথা। সেদিন রাতে আশিকও তো এই কথা টাই বলেছিল যে সে দেখেছে অন্তর চৌধুরী নাকি কোন একটা মেয়ের সাথে কয়দিন থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়া মেহুলের তো সেই কথাটাও মনে পড়ে যায় যে অন্তরকে প্রথম দেখেই পিহু কিভাবে হা করে তাকিয়ে ছিল।
মেহুল এবার বলে, “ঐ অন্তর চৌধুরীকে আমার ভালো মানুষ বলে মন হয় না। জানি না উনি পিহুকে নিয়ে কোথায় যাছেন। আমাকে আগে নিজের বোনকে এই বিপদ থেকে বাঁচাতে হবে। তারপর অন্যকিছু ভাবা যাবে।”
মেহুল একটি রিকশাকে দাঁড় করায়। তারপর রিকশাওয়ালাকে বলে, “ঐ সামনে যেই বড় কালো গাড়িটাকে দেখা যাচ্ছে সেই গাড়ি টাকে ফলো করুন তো।”
রিকশা ওয়ালা বলেন, “মাফ করবেন ম্যাডাম কিন্তু এসব ফলো টলো করতে পারব না। এগুলা অনেক ঝামেলার কাম।”
মেহুল বলে, “আপনাকে দ্বিগুণ ভাড়া দেবো তবুও বলছি আপনি ঐ গাড়িটাকে ফলো করুন। একজনের জীবন জড়িয়ে আছে।”
দ্বিগুণ ভাড়ার কথা শুনে রিকশা ওয়ালা আর আপত্তি করে না। বিনা বাক্যে সামনের গাড়িটাকে ফলো করতে থাকে। মেহুল উত্তেজিত ছিল কি হয় সেটা দেখার জন্য।
অন্যদিকে পিহু গাড়ির লুকিং গ্লাসে খেয়াল করে একটা রিকশা অনেকক্ষণ ধরে তাদের পেছনে আসছে। পিহু আরো ভালো করে লক্ষ্য রাখতে থাকে। একসময় অন্তরকে বিষয়টা জানিয়ে বলে, “তুমি খেয়াল করেছ ঐ রিকশা টা অনেক ক্ষণ ধরেই আমাদের কে ফলো করছে।”
অন্তর বলে, “ও তাই। দাঁড়াও আমি ব্যাপারটা ভালো ভাবে দেখছি। হয়তো কোন সমাধান করলেও করতে পারব।”
অন্তর রিকশাটার দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখতে পায় সেখানে মেহুল বসে আছে। অন্তর তখন পিহুকে বিষয়টা জানিয়ে বলে, “তোমার বোনকে দেখলাম রিকশার মধ্যে। কি করব এখন?”
পিহু বলে, “মেহুল আপি? ওহ সিট। তুমি একটা কাজ করো আরো জোরে গাড়ি চালাও তো। যাতে আপি আমাদের ধরতে না পারে। কারণ আপি যদি সবটা জানতে পারে তাহলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে৷ ফাস্ট চালাও।”
পিহুর কথা শুনে অন্তর খুব জোরে গাড়ি চালাতে থাকে। মেহুলও রিকশা ওয়ালা কে বলে, “আপনি একটু জোরে রিকশা চালান। গাড়িটা যেন চোখের বাইরে যেতে না পারে।”
কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে রিকশা জ্যামে আটকে যায়। সেই সুযোগে অন্তর আর পিহু গাড়িতে করে দূরে যায়। মেহুল হতাশ হয়ে রিকশা থেকে নেমে যায়। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে ফুটপাত দিয়ে রাস্তা পার হয়।
❤️
পিহুকে একটি রেস্টুরেন্টের বাইরে আটক করে মেহুল। তারপর পিহুর একটার পর একটা থা*প্পড় দেয়। পিহু পুরো বোকা বনে যায়। মেহুল ক্ষান্ত না হয়ে বলে, “তুই এত সাহস কোথায় পেলি? কি ভেবেছিলি আমি কি জানতে বা বুঝতে পারব না। আমি তোর বড় বোন পিহু। তোর থেকে কিছু বছর হলেও দুনিয়া বেশি দেখেছি। বল ঐ অন্তর চৌধুরীর সাথে তুই কি করছিলি।”
পিহু প্রথমে অস্বীকার করে বলে, “তোর বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে আপি। আমার অন্তর চৌধুরীর সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”
কিন্তু মেহুল পিহু ও অন্তরের ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি দেখায়। যা সে রেস্টুরেন্টের ভেতরে অনেক গোপনে তুলেছে। পিহুকে ছবিগুলো দেখিয়ে বলে,“এবারও কি অস্বীকার করবি তুই?”
পিহু এবার কোন রাকঢাক না রেখে বলে, “হ্যাঁ আমি অন্তরের সাথে রিলেশন করি। তাতে তোর কি সমস্যা। নিজে তো টাকার লোভে এক বাচ্চার বাপ কে বিয়ে করেছিস তুই আপি৷ এখন আমি একটা ভালো ছেলে পেয়েছি জন্য সহ্য হচ্ছে না।”
মেহুল পিহুকে চোখ রাঙিয়ে বলে,“ভদ্রভাবে কথা বল। ভুলে যাস না আমি তোর বড় বোন হই।”
“আমি কিছু ভুলিনি আপি। তুই আমার ব্যাপারে নাক গলাবি না। আমি অন্তরকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করব। দেখি তুই কি করতে পারিস আমার। তোর মতো বড় বোনের আমার দরকার নেই। দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।”
কথাগুলো বলে ধা*ক্কা দিয়ে মেহুলকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর নিজের মতো চলে যায়। মেহুল দাঁড়িয়ে থেকে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। নিজের বোনের কাছ থেকে এভাবে অপমানিত হতে হবে সেটা কখনো আশা করেনি।
অন্যদিকে অন্তর দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে বলে, “আমি তাহলে সফল হয়েছি। এবার শুধু দেখে যাও আকাশ ও মেহুল আর কি কি হয় তোমাদের সাথে।”
মেহুল আর বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না। কারণ রায়ানের স্কুল ছুটি দেওয়ার সময় এসে গেছে। তাই রায়ানকে আনতে যেতে হবে। মেহুল ততক্ষণাৎ রওনা দেয় কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে জ্যামের মধ্যে আটকে যায়। জ্যামে আটকে থাকার পর রায়ানের স্কুলের সামনে উপস্থিত হতেই চরম অবাক হয়ে যায় মেহুল। কারণ সে এসে দেখে স্কুল অনেক আগেই ছুটি হয়ে গেছে। মেহুল স্কুলের দারোয়ানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করে, “স্কুল কতক্ষণ আগে ছুটি হয়েছে?”
“তা প্রায় ঘন্টাখানেক হবে।”
“সব বাচ্চারা কি চলে গেছে?”
“জ্বি”
মেহুল আর দেরি না করে আকাশকে ফোন দেয়। আকাশ ফোন রিসিভ করলে মেহুল তাকে জিজ্ঞাসা করে সে রায়ানকে নিয়ে গেছে কিনা। আকাশ না বলে। আশিককে ফোন করলে সেও একইকথা বলে। সে জানায় রায়ান বাড়িতেও আসে নি। মেহুল দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরতে থাকে কোথায় সে পাবে রায়ানকে।
মেহুলের মাথায় একবার আসে যে, অন্তর নিয়ে গেছে কিনা। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে পড়ে অন্তর তো পিহুর সাথে ছিল। সাথে রায়ানের হলো কি? সারাদিন মেহুল একা একা রায়ানকে খুঁজতে থাকে এবং সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরে। বাড়িতে ফিরে আরো বেশি অবাক হয় সে। কারণ আকাশ রায়ানের নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনেও বাড়িতে ফেরেনি। আমিনা আক্তারকেও নিশ্চিত লাগছে। শুধুমাত্র আশিককেই একটু চিন্তিত লাগছে।
মেহুল বুঝতে পারে না, এই বাড়ির একটা বাচ্চা নিখোঁজ অথচ সবাই এতো স্বাভাবিক আছে কিভাবে।
#চলবে