আমার গল্পে আমি খলনায়িকা পর্ব -০৪

# আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—০৪

সকাল হতেই আমরা সবাই সেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।কিন্তু গিয়ে হতাশা মিললো সবার ভাগ্যে।সেই রোগীকে নাকি রিলিজ দেওয়া হয়েছে এবং তাকে কেউ সাথে করে নিয়ে গিয়েছে।অগ্যতা আমাদের ফিরে আসতে হলো।কিন্তু তারপরেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়,বাস্তবে কে ছিলো সেই ব্যক্তি।কল্লোল নাকি আরোও কেউ?কল্লোলকে আমি নিজের হাতে খু ন করেছি,ও ফিরে আসলে আমার থেকে বেশী অবাক কেউ হতো না,আর আমি ভালো করেই জানি সেটা কখনোই সম্ভব নয়।মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসতে পারে না।যাই হোক আমরা সবাই বাড়িতে ফিরে আসলাম।।




দুপুর বেলা যখন প্রত্যয় গোসল করতে ব্যস্ত।সেই সুযোগে আমি আবারো ওর রুমে গেলাম।ডায়েরীতে কি আছে দেখার জন্য।এই ডায়েরীর রহস্য উদঘাটন না করা পর্যন্ত ঘুমাতে পারবো না আমি,যেকরেই হোক দেখতে হবে কি আছে এই ডায়েরীতে।
রুমের ভেতরে ঢুকে দেখি ডায়েরীটা যথাস্থানেই রাখা আছে,আমি চারপাশটা তাকিয়ে এগিয়ে গেলাম ডায়েরীর দিকে।হাত দিতে যাবো ঠিক তখন ড্রয়িংরুম থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ ভেসে আসলো আমার কানে।আবারো আমার কাজে ছেদ পড়লো‌।এদিকে মা আমায় আর প্রত্যয়কে নিচে ডাকছে।ডায়েরীটা আবারো জায়গামতো লুকিয়ে রেখে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।




—কি হয়েছে মা,আমাদের ডাকছিলেন?

—দেখো তো বৌমা,এই মেয়েটা বাড়িতে ঢুকে কিসব শুরু করেছে!

আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখতে পাই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একে তো আমি আগেও দেখেছি এই বাড়িতে।এইতো কয়েকমাস আগেই।মেয়েটা আমার দিকে ক্রোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,আমি তাকে জিজ্ঞেস করি।

—তোমাকে আগেও দেখেছি আমি এই বাড়িতে,প্রত্যয়ের বার্থডে পার্টিতে ওর বন্ধুবান্ধবদের সাথে এসেছিলে।ঠিক কিনা?

—হ্যাঁ,আপনার ধারণা একদম ঠিক।প্রত্যয় কোথায়,এবার ওকে ডাকুন।

—প্রত্যয় গোসল করছে,একটু পরেই আসবো।তুমি বসো।

—আমি বসতে আসিনি,বোঝাপড়া করতে এসেছি প্রত্যয়ের সাথে!

—বোঝাপড়া,কিসের বোঝাপড়া?

—আগে প্রত্যয় আসুক,তারপরেই না হয় দেখতে পারবেন।

একটু পরে প্রত্যয় বাথরুম থেকে বেরিয়ে সোজা ড্রয়িংরুমে চলে আসলো।আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েটাকে দেখে যেনো ভরকে গেলো ও।

–একি,রোদেলা তুমি,তুমি আমার বাড়িতে এসেছো কেনো?
(প্রত্যয়)
ওহ,তার মানে এই মেয়েটাই রোদেলা।এর সাথেই প্রত্যয়ের রিলেশন ছিলো।যার সাথে গতকাল কথা হয়েছে আমার।

—প্রত্যয়,এই মেয়েটা কে,ও এগুলো কি বলছে?
(প্রত্যয়ের মা)

—মা,ওর নাম রোদেলা।আমার বন্ধু।

—বন্ধু,শুধু বন্ধু!তুমি কি মজা করছো আমার সাথে প্রত্যয়?আমি কোনোদিনোও তোমার বন্ধু ছিলাম না,কি কি করেছো আমার সাথে সব বলে দেই এদেরকে?

—তুমি একটু শান্ত হয়ে কথা বলো।প্রত্যয় আমার হাসবেন্ড,তুমি আমার সামনে ওকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবে না,যদি বলতেই হয় আগে প্রমাণ দাও।ও কি করেছে তোমার সাথে?

—এই ছেলেটা এক নম্বরের চিটার।আপনারা বাড়ির লোক হয়েও এখনো চিনতে পারেনি ওকে।আমায় বিয়ে করার কথা বলে দিনের পর দিন ঠকিয়েছে,প্রতারণা করেছে আমার সাথে।

—শাট আপ,জাস্ট শাট আপ।তুমি যা খুশি তাই বলে যাচ্ছো,আমার কোনো কথাই শুনতে চাইছো না তুমি,এখন আবার আমার বাড়িতে এসে আমাকেই অসম্মান করতে চাইছো?
(প্রত্যয় রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে)

—তোমার আবার মান অসম্মান,এই বিধবা মহিলাকে বিয়ে করার সময়ে কোথায় ছিলো তোমার মান সম্মান?

রোদেলার কথা শুনে প্রত্যয় আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না।ঘুরেই সপাটে একটা চড় বসিয়ে দেয় ওর গালে।আমি গিয়ে রোদেলাকে সামলে নিলাম।

—তুমি আবার বাড়িতে এসে আমাকে অসম্মান করছো,তাও মেনে নিয়েছি।কিন্তু আমার স্ত্রীকে অপমান করার চেষ্টা করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আমার বাড়ি থেকে চলে যাও,নয়তো ঘাড় ধরে বের করে দেবো।

—প্রত্যয়,এসব কি হচ্ছে নিজেকে কন্ট্রোল করো।ও যাই বলুক না কেনো,তুমি একটা মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তুলতে পারো না।

—আমাকে প্লিজ জ্ঞান দিতে এসো না দোয়েল,তোমাকে কেউ অসম্মান করলে তার সাথে ঠিক এটাই করবো আমি।তুমি ওর কোনো কথা শুনো না,বের করে দাও বাড়ি থেকে।

এই বলে প্রত্যয় হনহন করে হেঁটে ওপরে চলে গেলো।রোদেলা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে আরম্ভ করে দিলো।

—আমায় ক্ষমা করুন আপু,আমি আপনাকে যা বলেছি সবটাই রাগের বশে।বিশ্বাস করুন,আমার আপনার ওপর কোনো অভিযোগ নেই,প্রত্যয় আমায় ঠকিয়েছে।ও আমায় বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত দিয়েছে,আমি জানি না ও আপনাকে কেনো বিয়ে করে নিলো।আমাকে জানায়নি পর্যন্ত ও।আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।

যা বুঝতে পারলাম,মেয়েটা আসলে ততোটাও খারাপ নয়।তবে একটু বদরাগী এটা ঠিক।প্রত্যয়ের সাথে আমার কোন পরিস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে ও জানে না সেটা,প্রত্যয়ও নিজে থেকে চায়নি আমায় বিয়ে করতে।আসলে এখানে কারোরই দোষ নয়।সবটাই একটা মিস-আন্ডারস্টান্ডিং।প্রত্যয় যেমন পরিস্থিতির স্বীকার,এই মেয়েটাও তাই।কিন্তু আমিও এতো কাঁচা খেলোয়াড় নই।এই মেয়েটাকে কোনোদিনও জানতে দেবো না প্রত্যয় বাধ্য হয়ে আমায় বিয়ে করেছে।এমন কিছু করতে হবে যাতে ও সারাজীবন প্রত্যয়কে শুধু ঘৃনাই করতে থাকে।কারণ এদের দুজনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে সেটা আমার জন্য সুখকর হবে না।আমি কিছুতেই প্রত্যয়কে অন্য কারো হতে দেবো না,যার জন্য নিজের স্বামীকে পর্যন্ত শেষ করেছি,তাকে এতো সহজে অন্য কারোর হতে দেই কিকরে।
আমি রোদেলাকে বুঝিয়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসলাম।তারপর ওকে বলতে শুরু করি।

—দেখো বোন,যা হয়েছে ভুলে যাও।এখন তো আর কিছু করার নেই,তুমি শুধু শুধু নিজের ইমেজ খারাপ করছো সবার সামনে!

—ও আমার সাথে যা করেছে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবো না আমি,আমার ওর সাথে কথা বলতে হবে,সবটা জানতে হবে।কেনো ঠকালো আমায়?

—আমি বলছি তোমায়,ও কেনো ঠকিয়েছে তোমায়।দেখো ও তোমায় কোনোদিন ভালোই বাসেনি।যদি তাই হতো আমাকে বিয়ে করতে পারতো।এই বিয়েতে কিন্তু আমার মত ছিলো না।কল্লোল মারা যাবার পরে ও নিজের বাবা মাকে এমন ভাবে ফোর্স করতে থাকা তারা আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

—ও তাহলে আমি যা ভাবছি তাই ঠিক?

—হ্যাঁ,এমনকি কল্লোল যখন বেঁচে ছিলো আমি বুঝতে পারি প্রত্যয়ের কোথাও একটা দূর্বলতা আছে আমার প্রতি।আমি লক্ষ্য করতাম সেটা।

—আপনি তারপরেও বিয়ে করলেন ওই লম্পটকে,যে ছেলের নিজের ভাবীর প্রতি কুনজর থাকে,তার যে বাইরের মেয়েদের প্রতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।আপনি জানতেন না সেটা?

—আমি কেনো প্রত্যয়কে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি সেসব না হয় পরে বলবো।তুমি প্লিজ আর এই বাড়িতে এসো না।আমি ফোন করে নেবো তোমায়।কেমন।

আমি যেকরেই হোক রোদেলাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিদায় করলাম।ওর কানে যতোটুকু বিষ ঢালার ঢেলে দিয়েছি,এখন শুধু দেখার অপেক্ষা এই বিষক্রিয়া কতদূর গড়ায়।তবে একটা ব্যপার সবথেকে ভালো লেগেছে,প্রত্যয় আমায় কিভাবে প্রটেক্ট করলো রোদেলার থেকে।ও আমার অসম্মান হতে দিতে চায় না।তার মানে ও ধীরে ধীরে দূর্বল হচ্ছে আমার প্রতি।আমি ওর এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই ওর মনে পুরোপুরি জায়গা করে নেবো,যদি কোনোদিন আমায় আলাদা করার কথা মাথাতেও না আসে ওর।

রুমে ফিরে দেখি প্রত্যয় বিছানার ওপরে শটান হয়ে শুয়ে আছে।ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি জেগে আছে জানিনা।আমি এই সুযোগে আবারো ওর ঘরে ঢুকে পড়লাম।দরজাটা বন্ধ করে ডায়েরীটা হাতে নেই,ডায়েরীর শেষ দিকটায় যেখানে কল্লোলের ছবি আটকানো ছিলো।তার পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতেই যেনো আমার বুকটা একটা অদ্ভুত কম্পনে মোচড় দিয়ে উঠলো।

—আল্লাহহহ,এটা কি দেখছি।আমার একটা ছবি ডায়েরীর পাতার সাথে আটকানো।যার নিচে লাল কালি দিয়ে মোটা অক্ষরে লেখা।

—“Next Target”

এটা দেখে হাত পা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো আমার।আমি প্রত্যয়ের নেক্সট টার্গেট!এসবের মানে কি?তাহলে ও প্রটেক্ট করলো আমায় সবার সামনে,সেসব কি নাটক ছিলো,এই ছেলেটা চাইছেটা কি,কে আসলে ও?

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here