#আমার_সংসার
.
.
Part:25
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
আজ অফ ডে। সিনহা অফিস যায়নি।সারাদিন বাড়িতেই বসে থাকার পর স্বপ্নের জোড়াজুড়িতে ফাহিম আর সিনহা স্বপ্ন কে নিয়ে ঘুরতে বের হইছে। তিনজনে বেশ ভালো মজা করছে।ফুচকার দোকানে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো ওরা।তখুনি দুর থেকে একটা চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো রাগী চোখে।সেই চোখ টা আর কারোর না সিফাতের।আজ ছুটির দিন জন্য সিফাত জান্নাত আর ওর মায়ের জোড়াজুড়ি তে সাইরি জান্নাত কে নিয়ে ঘুরতে এসেছে।গাড়ির কাচের ভেতর থেকে সিনহাদের দেখে আর একমিনিট ও ওদের সামনে দাড়ালো গাড়ি স্টার্ট দিতে লাগলো।ঠিক তখুনি জান্নাত বলে উঠলো
-” ফুচকা খাবো ঐ দেখো ফুচকাওয়ালা?
– “জান্নাত এই ফুচকাগুলো অনেক বাজে ভালো না,চলো আমরা ভালো কোনো রেষ্টুরেন্টে গিয়ে পিজ্জা খাবো।
– ” না পাপ্পা আমার পিজ্জা লাগবে না,আমি এখানকার ফুচকাই খাবো গাড়ি থামাও।নতুন মাম্মা আমায় এনে দিবে তাইনা নতুন মাম্মাম বলো?
– “হ্যাঁ সোনা আমি এনে দিবো।আচ্ছা এনে দিন না ফুচকা বাচ্চা মেয়ে জেদ করছে।
– ” না খেতে হবে না এগুলো।
– “জেদ কেনো করছেন আপনি বলুনতো,জান্নাতের জেদ তো জানেন ও যেটা বলে সেটা করেই ছাড়ে।
– ” আমি ওখানে যেতে পারবো না।
– “ওকে তাহলে আমিই নিয়ে আসছি।
সিফাত চুপ করে থাকলো।নিরাবতা সম্মতি বুঝে সিনহা গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো ফুচকা কিনতে।
.
আর এদিকে স্বপ্ন শুধু দুষ্টুমি করছে ছোটাছুটি করছে আবার ছুটেছে আইসক্রিম ওয়ালার দিকে পিছন পিছন সিনহাও গিয়েছে।আর ফাহিম ফুচকার দোকানে বিল মিটাচ্ছে।তখুনি সাইরি এলো ফুচকা নিতে।ফুচকাওয়ালার কাছে ফুচকা চাইতেই ফাহিমের কন্ঠ টা চেনা চেনা লাগলো পাশ ফিরে তাকাতেই ফাহিম হা। এটা তো সে ওর মায়াপরী।ওর মায়াপরীর সাথে যে আবারো দেখা হবে এটা সে ভাবতেই পারেনি।সে ভেবেছিলো শুধু সেই দেখায় শেষ দেখা হয়তো আর কখনো তার মায়াপরীর খোঁজ পাবেনা।কিন্তু নাহ তার ভাগ্যে মায়াপরীর দেখা লেখা ছিলো তাই সে আবারো তার মায়াপরীর দেখা পেয়েছে।কতোদিন পর সে তার মায়াপরীরে দেখছে।সেদিন তো দুর থেকে মায়াপরীরে একনজর দেখে তার ফ্রেমে বন্ধ করেছিলো।আজ সে কাছাকাছি থেকে দেখছে।ওর মায়াপরী যে এতো সুন্দর কল্পনাও করতে পারেনি।কাজলে টানা চোখ দুটো হরিনীর ন্যায়।যার অতলে ডুব দিতে ইচ্ছে করে ফাহিমের।কল্পনা ভাংগে সিনহার ডাকে।সামনে থেকে দেখে তার মায়াপরী নেই,আশেপাশে টা ভালো করে তাকিয়ে দেখে একটা গাড়িতে করে চলে গেলো।সাথে একটা ছোট্ট মেয়ে আর ছেলে।আচ্ছা তবে কি মায়াপরী বিবাহিত।দেখে তো মনে হয় না।তাহলে সাথে ওরা কে।হবে হয়তো আত্নীয়।খোজ নিতে হয় দেখছি।
.
– “এই যে মি.চৌধুরী কোথায় হারিয়ে গেলেন বলুনতো।আসুন না এখানে?
– ” হ্যাঁ আসছি,
বলে ফাহিম আইসক্রিম ওয়াার কাছে গেলো।
তিনজনে মজা করে আইসক্রিম খেয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে গেলো।
.
সাইরিকে ওর বাড়িতে রেখে সিফাত জান্নাত কে নিয়ে বাড়ি চলে গেলো।আজ ওদের ঘুরতে পাঠিয়ে ছিলো ওর মা দুজনকে একটু কাছাকাছি আসার জন্য বোঝার জন্য।একটু সময় কাটানোর জন্য।যাতে দুজনে কথা বলে দুজনের জড়তা দুর করে কাছে আসতে পারে।কিন্তু হলো টা কি।সিফাতের মায়ের সব চেষ্টা জলে।ওরা দুজনে কাছে আসা দূর সারাসময় প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও বলেনি,তারাতারি করে সিফাত সাইরিকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেছে।
.
– “আজকের দিনটা অনেক ভালো কেটেছে তাই না মি.চৌধুরী?বাড়ির ভিতর যেতে যেতে সিনহা বললো।
ফাহিমের কোনো কান নেই,সে তো আছে তার মায়াপরীর ভাবনায় বিভোর।কোনো উত্তর না পেয়ে সিনহা দেখলো ফাহিম অন্যমনস্ক তাই সে আর কিছু না বলে রুমে চলে গেলো স্বপ্ন কে নিয়ে।আর ফাহিম চলে গেলো নিজের ফ্ল্যাটে।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার ভাবনার জগত পুরো টা আয়ত্ত্ব করে নিলো তার মায়াপরী।মায়াপরীর সাথে প্রথম দেখা।ভাল লাগা সব মনে পড়তে লাগলো।
.
মায়াপরীকে প্রথম দেখেছিলো কক্সবাজারে।সমুদ্রের পাড় দিয়ে খোলা লম্বা চুলে হেঁটে যাওয়া এক সুদর্শনী।নাম না জানাই না দিয়েছে তার মায়াপরী।তার চাঞ্চলতা, ছেলে মানুষি দৃষ্টি কারছিলো ফাহিমের।সেই দুষ্টুমিগুলো তার ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতেও ভুলে যায়নি ফাহিম।ভাগ্যিস বন্দি করেছিলো নয়তো দেখতো কিভাবে। যখন তার মায়াপরীকে মনে পড়ে তখন সে কি দেখতে ছবিগুলো কাছে না থাকলে।ছবিগুলো সে ক্যামেরা থেকে বের করেছে।পুরো দেয়ালে লাগিয়ে রেখেছে।তার পুরো দেয়াল জুড়ে শুধু তার মায়াপরীর ছবিতে ভর্তি। ভালবাসাহীন মানুষটার মনে প্রচুর ভালবাসা জমে গেছে তার মায়াপরীর জন্য।আচ্ছা সে কি পাবে তার মায়াপরীকে।এইসব আকাশকুসুম ভাবছে ফাহিম।
.
আর সিফাত ভাবছে সিনহার কথা।সাথে থাকা লোকটা আর বাচ্চা ছেলেটি কে হয় সিনহার।কার সাথে ঘুরতে বের হইছে সে।হয়তো ওর স্বামী সন্তান।বেশ হাসিখুশি দেখলাম।মজা করে ফুচকা খাচ্ছে। সুখেই তো আছে সে।সে তার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকলে আমি কেন পারিনা।আমি কেনো সাইরি কে মেনে নিতে পারছিনা।আমি চাইছি সাইরিকে মানতে কিন্তু পারছি না কেনো।সাইরি কে আমায় মেনে নিতেই হবে সিনহার জন্য আমি সাইরি কে কষ্ট দিতে পারিনা।আমাকে মানুষিক ভাবে প্রস্তুত হতে হবে সাইরিকে মানার জন্য বিয়ের আগেই।কিন্তু কিভাবে এসব ভেবে সিফাত নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিড়তে লাগলো।
.
আর সিনহা তার ছেলে কে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। মাঝরাতে সিনহার ফোনে একটা কল আসে।ফোনের শব্দে সিনহা চমকে যায়।এতো রাতে কে কল করলো।তার ফোনে তো সচরাচর কল আসেনা,এতো রাতে তো আরো আসেই না।ফোনের স্কিনে তাকাতেই দেখে আননোন নাম্বার।কে কল করলো ভাবতে ভাবতে কল টা কেটে যায় রিসিভ করার আগেই।সিনহা কল করতে যাবে তখুনি আবারো বেজে ওঠে ফোন টা।সিনহা রিসিভ করে।
– “হ্যালো,,কে বলছেন?
ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।নিস্তব্ধ মনে হচ্ছে সবকিছু।কোনো শব্দ নেই শুধু সিনহা একা একা কথা বলে যাচ্ছে জানতে চাইছে কে সে। কিন্তু অপাশে থাকা মানুষটা কথা বলছে না।বেশি কিছু সময় সিনহা হ্যালো হ্যালো করার ওপাশ থেকে ফোনের লাইন টা কেটে দেয়।সিনহা পুরো হা হয়ে যায়।কেইবা কল করলো আবার কথা বললো না।আজিব লোক।
.
সিনহা কে কল করেছিলো সিফাত আর কেউ না।অনেক খারাপ লাগছিলো সিফাতের।সিনহার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো তাই সে কল করেছিলো।কিন্তু কথা বলতে পারেনি। গলা তার জোরো হয়ে আসছিলো কথা বলতে গিয়ে।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল ঝড়তে লাগছিলো।নিজেকে সামলাতে পারছিলো না তাই কথা না বলেই কল টা কেটে দিলো।বিছানয় গা এলিয়ে দিয়ে জান্নাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো সিফাত।সিনহা স্বপ্ন কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
.
To be continue………
.