#আমার_পূর্ণতা
#রেদশি_ইসলাম
পর্বঃ১২
শরতের বিকেল। শিমুল ফুলের মতো পেজা তোলা মেঘ ভেষে বেড়াচ্ছে স্বচ্ছ আকাশে। ছাঁদের একপাশে লাগানো শিউলি ফুলের গাছটা থোকায় থোকায় ভরে উঠেছে শিউলি ফুলে। মৃদু মিষ্টি শীতল বাতাসে দুলে উঠছে ছাদে লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ছাদের মাঝখানে অবস্থিত সাদা রং করা দোলনায় দুলছে নব দম্পতি অর্থাৎ রাদিয়া আপু ও আবির ভাইয়া। আর তাদের বিভিন্ন পোজের ছবি তুলে দিচ্ছে রিয়া আপু। এই পর্যন্ত না হলেও প্রায় একশোর অধিক ছবি তোলা হয়েছে তার কিন্তু তবুও একটা ছবি যদি পছন্দ হতো রাদিয়া আপুর। পাশে আবির ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ব্যাপক হাসি পেলো আমার। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে বউয়ের ছবি তোলার চক্করে বেজায় বিরক্ত সে। এর মধ্যে রিয়া আপু নিচে ধাপ করে বসে পরলো। তা দেখেই রাদিয়া আপু চেঁচিয়ে বলে উঠলো—
” এই এই তুই বসলি কেনো? আমি বলেছি তোকে একবার ও বসতে?”
” মাফ চাই আপু। আমি আর পারবো না তোমাদের ছবি তুলতে। বিশ্বাস করো হাত একদম ব্যাথায় টনটন করছে।”
” মাত্র তো এই কয়টা ছবি তুললাম তার মধ্যেই হাত ব্যাথা হয়ে গেছ তোর? অকর্মার ঢেঁকি কোন জায়গার।”
” আপুরে দুইশো টা ছবিকে তোমার মাত্র মনে হচ্ছে? আচ্ছা পোজ দিতে দিতে তুমি ক্লান্ত হচ্ছো না? ভাইয়ার মুখের দিকে তাকাও একটু। তোমার যন্ত্রণায় না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে।”
রিয়া আপুর কথায় আবির ভাইয়ার দিকে ফিরলেন রাদিয়া আপু। কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন—
” সত্যি আবির? তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো?”
আপুর কথায় মুখে জোর পূর্বক হাসি টেনে আবির ভাইয়া বললেন—
” একদম না সোনা। আমি একটুও বিরক্ত হচ্ছি না। শালিকা তো মজা করছে তোমার সাথে। ডোন্ট আপসেট বউ। তুমি যত্ত ইচ্ছা ছবি তোলো। এইযে দেখো আমি তোমার পাশে চুপ করে বসে আছি”
রাদিয়া আপু দাঁত বের করে হেঁসে রিয়া আপুকে ভেঙ্গিয়ে দিলেন। তা দেখে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলো রিয়া আপু।
ওদের কাহিনি দেখে হাসলাম আমি। তাদের দুইজনকে ড্রামা বাজ ছাড়া কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না। এর মধ্যেই হাতে থাকা ফোনে টুং করে শব্দ হলো। স্ক্রিনে ভেষে উঠলো ইন্টারনেট প্যাকেজ এর ম্যাসেজ। তাই আর পাত্তা না দিয়ে ফোন নামিয়ে রাখতে গেলাম। তখনই নজর পরলো হাতের ব্রেসলেট খানায়। যেটা গতকাল তাফসির ভাইয়া পরিয়ে দিয়েছেন।
গতকাল রাতে যখন উনি আমাকে কল দিয়েছিলেন তখন অবাক হলাম বটে। সন্ধ্যায় উনি নাম্বার নিয়েছিলেন আমার তবে রাত হতে না হতে ওনার রুমে ডাকলেন কেনো বুঝতে পারলাম না। তাই কোনো দরকারি কাজ হবে ভেবে গেলাম ওনার রুমে। তখন তাফসির ভাই রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন আর কফি খাচ্ছিলেন। উনি এখানেও সাথে করে ল্যাপটপ আনতে ভুলেন নি। বড় মা দেখার পর যদিও জিজ্ঞেস করেছিলেন কেনো তবে উনি বলেছিলেন জরুরি কাজ আছে নাকি। তাই এ নিয়ে আর কোনো কথা বলেনি কেউ।
তাফসির ভাই আমাকে দেখতেই চোখের ইশারায় ওনার পাশে বসতে বললেন। আমি ওনার পাশে বসতেই উনি আমার দিকে পাশ ফিরে তাকালেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম—
” হঠাৎ ডাকলেন যে তাফসির ভাই? কিছু বলবেন?”
” তো না বললে কি তোর চেহারা দেখার জন্য ডেকেছি?”
” ডাকতেও পারেন বলা তো যায় না।”
” সব সময় এক লাইন বেশি বুঝিস কেনো?”
” কি করবো বলুন এটা তো আমার স্বভাব ”
” তুই ও যেমন তোর স্বভাব ও তেমন। বলদ।”
তাফসির ভাইয়ের কথায় আমি চেতে গিয়ে বললাম—
” আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে এখানে ডেকেছেন? নাকি কিছু বলবেন? আমার এতো ফাও সময় নেই আপনার সাথে ঝগড়া করার। কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।”
” এক থাপ্পড় দেবো বেয়াদব। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না? গুনে গুনে তোর থেকে আট বছরের বড় আমি। আট বছর মানে বুঝিস? তারপরও তুই আমার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলছিস?”
ওনার কথায় চুপসে গেলাম আমি। মাথা নিচু করে বললাম—
” দুঃখিত তাফসির ভাই। আর হবে না।”
তাফসির ভাই কন্ঠ নরম করে বললেন—
” তোর হাত দে তো”
” কেনো? আমার হাতে আবার কি করবেন?”
এ কথা শুনে তাফসির ভাই চোখ গরম করে আমার দিকে তাকাতেই আমি তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে দিলাম। উনি ডান হাত দিয়ে আমার হাত ধরে বাম হাত পকেটে ঢুকিয়ে কাগজে প্যাকেট করা কিছু একটা বের করলেন। তারপর প্যাকেট ছিড়ে বের করলেন ডেইজি ফুল ও ছোট্ট পাথরের সংমিশ্রণে তৈরি একটি ব্রেসলেট। উনি যে হাত ধরে ছিলেন সে হাতে পরিয়ে দিলেন ব্রেসলেট টি। তারপর অস্ফুটস্বরে বললেন ” পার্ফেক্ট”
আমি এতক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম সবকিছু। মানে কি? উনি আমার জন্য ব্রেসলেট এনেছেন তা আবার পরিয়েও দিলেন? এটাও সম্ভব? বিশ্বাস হচ্ছে না তো আমার। তাই অবিশ্বাসী কন্ঠে ওনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম—
” এটা কি আমার জন্য তাফসির ভাই?”
” না এটা আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য। তোর হাতে পরিয়ে ট্রায়াল দিচ্ছিলাম। বলদ কোথাকার!! তোর জন্য না হলে কি তোর হাতে পরাতাম? এটুকু ও বুঝিস না?”
” হঠাৎ আমাকে এতো সুন্দর একটা ব্রেসলেট দেওয়ার কারন?”
” এতো কথা শুনে তুই কি করবি? যা বের হ আমার রুম থেকে।”
ওনার কথা শুনে মনে মনে খুব খুশি হলাম আমি। কেনো তা জানি না। হয়তো ব্রেসলেট টা আমার খুব পছন্দ হয়েছে তাই।
হঠাৎ রিয়া আপুর ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসলাম। আমাকে এমন ভাবনা চিন্তা করতে দেখে রিয়া আপু বললেন—
” এই প্রাচুর্য এতো কি ভাবছিস? সেই কখন থেকে ডাকছি শুনছিস ই না।”
” সরি আপু। একটা জিনিস ভাবছিলাম। আচ্ছা কি বলবে বলো।”
” নিচে যাবো চল। রাদিয়া আপু আর আবির ভাইয়া চলে গেছে কিছুক্ষণ আগে। এখন আমাদের ও যেতে হবে। দেখেছিস সন্ধ্যা নেমেছে? তাড়াতাড়ি চল নাহলে ছোট মা রাগ করবে আবার।”
” হ্যাঁ চলো আপু।”
.
.
মাহিন ভাইয়া দের ফ্ল্যাটে আসতেই দেখলাম ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছেন বড় মা, মেজো মা, ফুপ্পি ও মা। বাবারা কেউ বাড়িতে নেই। বিকেল হতে না হতেই বেরিয়েছেন তিন ভাই। তবে কোথায় গেছেন তা জানা নেই। আমি আর রিয়া আপু গিয়ে মা’দের পাশের সোফায় বসে পরলাম। সুফিয়া ফুপ্পি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলেন। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন—
” যাই বলো না কেনো শাহানা তোমার মেয়ে টা দেখতে কিন্তু মাশাল্লাহ হয়েছে। আমার আরেকটা ছেলে থাকলে নিঃসন্দেহে আমার ছেলের বউ করতাম।”
ফুপ্পির কথায় আমি লজ্জা পেলাম একটু। তার মধ্যে মা বললেন—
” শুধু আমার মেয়ের কথা বলছো কেনো আপা? আমাদের বাড়ির বাকি ছেলে মেয়ে গুলোর কথা ও বলো। সবাই-ই মাশাআল্লাহ।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো। আমাদের সব ভাইয়ের ছেলে মেয়েই সোনার টুকরো।”
এর মধ্যেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন দিয়ানা ভাবি। সাথে আছেন ফুপ্পি দের হ্যাল্পিং হ্যান্ড। তার হাতের ট্রে তে নানা রকমের খাবার। দিয়ানা ভাবি এসেই আমাদের সামনের টেবিলে সব খাবার রাখতে বললেন। তার কথা মতো হ্যাল্পিং হ্যান্ড সব খাবার রেখে চলে গেলেন। তারপর ভাবিও তার আধ ভাঙা বাংলা ইংলিশ মিশিয়ে সবার সাথে গল্পে মেতে উঠলেন।
হঠাৎ চোখ পরলো তাফসির ভাইয়ের রুমের দিকে। উনি ফোনে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছেন। হয়তো বাইরে যাচ্ছিলেন। তার মধ্যেই ডাক দিলেন সুফিয়া ফুপ্পি। উনি ফোন নামিয়ে বললেন—
” জ্বি ফুপ্পি?”
” কোথায় যাচ্ছিস আব্বু?”
” এইতো একটু বাইরে যাচ্ছিলাম ফুপ্পি। কেনো কিছু বলবে?”
” এদিকে আয়। বোস একটু। দেখ তোর ভাবি কি কি বানিয়েছে। খেয়ে তারপর যা।”
ফুপ্পি কথায় সায় জানিয়ে ভাবিও ডাকলেন তাফসির ভাইকে। উনি এসেই বসে পরলেন আমার পাশ ঘেষে। খেতে খেতে ভাবির দিকে তাকিয়ে বললেন—
“বাহ ভাবি তুমি তো খুব ভালো রান্না করো। একদম বাঙালিদের মতোই হয়েছে।”
” সব ই মা শিখিয়েছেন। উনি আমাকে বলতে গেলে একদম হাতে ধরিয়েই শিখিছেন। দ্যাট’স হোয়াই আমি এসব পারি। আর তোমার ভাইয়া বাংলা শিখাচ্ছেন। InshaAllah one day I will be able to speak Bengali completely ”
” আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো ভাবি।”
এর মধ্যেই পাশ থেকে সুফিয়া ফুপ্পি বলে উঠলেন—
” তা বিয়ে কবে করবি আব্বা? বোনের তো বিয়ে হয়ে গেলো। এখন তো তোর পালা ”
” করবো ফুপ্পি। আর দু এক বছরের মধ্যেই করে ফেলবো।”
” তা কোনো মেয়ে টেয়ে পছন্দ আছে নাকি? থাকলে বল। বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।”
” আছে ফুপ্পি। তবে বউ এখনো ছোট। আর একটু বড় হোক।”
তাফসির ভাইয়ের কথায় পাশ থেকে বড় মা বিস্ময় নিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলেন—
” কি বললি তুই? তোর পছন্দ আছে অথচ আমি একবার ও জানলাম না? আমাকে একবার ও বললি না তুই? আমি এখন এতো টাই পর হয়ে গেলাম আব্বা? ”
” আরে মা তোমাকে তো বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু এখনো তেমন সময় হয়ে উঠে নি তাই বলি নি।”
#চলবে
[আর দুইটা এক্সাম আছে। এক্সাম দুটো শেষ হলেই রেগুলার গল্প দিবো। আপনারা এতো রাগ করবেন না প্লিজ আর পর্ব গুলো বড় করে দেওয়ার ও চেষ্টা করবো]