আমার_শহরে_তুমি পর্ব ২০+২১

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২০
,,,,,,
,,,,,
আমি কান থেকে ফোন নামিয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষন ভাবলাম,
~কী এমন সারপ্রাইজ দিতে পারে? সারা।নতুন কোনো অপমান করার প্ল্যান নাতো?যা হবার হবে আমি নিজেকে কিছুতেই দূর্বল করবো না।
ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুল ঠিক করতে লাগলাম।দরজা ঠেলে রক্তিম ঘরে প্রবেশ করলো তাকে অনেক চিন্তিত লাগছে আমি আয়নার দিকে তাকিয়েই তাকে প্রশ্ন করলাম,
~কী হয়েছে?সব ঠিক আছে তো?
রক্তিম বললো,
~অধরা,সারা আমাদের এতো especially invite করেছে এতে তোমার কোনো সন্দেহ হচ্ছে না?
আমি বললাম,
~যা হবার হবে কিন্তু আজ আমরা সারার বাসায় যাচ্ছি।
রক্তিম বললো,
~হুমম তাতো যেতে হবেই।
আমরা সবাই রেডি হয়ে সোফার রুমে ওয়েট করছি রাতের জন্য সে আসলেই আমরা রওনা দিবো।কিন্তু আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে না জানি সারা কী করবে?এই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।কিছুক্ষনের মধ্যে রাত এসে হাজির সে আমাদের সবাইকে দেখে বললো,
~ওয়েট করানোর জন্য সরি।এখন আমরা রওনা দেই
কথা শেষ করে যেই না রাত বাড়ির বাহিরে পা রাখবে তখনই বাবা বললেন,
~রাত,আমি চাচ্ছি আজই তোমার আর সারার বিয়েটা ঠিক হয়ে যাক।আর তুমি যদি বিয়ের পর আলাদা থাকতে চাও এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।এভাবে দিন-রাত তোমরা একসাথে ঘুরো এটা ঠিক না
বাবার কথায় সাহারা রায়জাদা বললেন,
~কীসব আজেবাজে বলছেন?আমার ছেলে বাড়ি ছেড়ে কেন যাবে?
বাবা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~সাহারা,ছেলে বাসার বাহিরে থাকবে দেশের বাহিরে না যে দেখা করতে পারবে না।তাই আমি যা বলেছি তাই হবে।
বাবার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার মুখ চুপসে গেলো।তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ হয়তো সন্তান হারানোর ভয়।
রাত বাবার সব কথা শুনে বললো,
~ঠিক আছে বাবা,আমি আজই সারাকে বলবো।
বাবা কিছু না বলে বাসার বাহিরে চলে গেলেন।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রক্তিমের সাথে হাঁটা ধরলাম।
গাড়িতে বসে আমি ভাবছি সারা যাই করবে তাতো আমাকে ঘিরে হবে কিন্তু সে তো আমার বাসায় এসেও করতে পারতো আমাদের সবাইকে এভাবে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে কেন?
নাহ এসব আর ভাবা যাবে না মাথা ঠান্ডা রেখে সব কাজ করতে হবে নাহলে হিতে বিপরীত হতে সময় লাগবে না।সব যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দিতে হবে না আমার এতটুকু দোয়া রইলো সেখানে যাই হোক রক্তিমের মাথা যাতে ঠান্ডা থাকে।
রক্তিমের ডাকে আমি ভাবনার জগত থেকে বের হলাম।রক্তিম বললো,
~অধরা,কী ভাবছো?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~কিছু না।আর কতক্ষন লাগবে পৌছাতে?
রক্তিম বললো,
~এইতো পৌছে গেছি।৫মিনিট হয়তো লাগবে
আমি কিছু না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

,,,,,,
,,,,,,
সারাদের বাসায় পৌছে দেখতে পাই সারার বাবা-মা আমাদের সবাইকে Welcome করার জন্য দাড়িয়ে আছেন।তারা আমাদের সাথে কুশলাদি করে বাসায় ডুকতে বললো আমরাও তাদের কথায় বাসার ভিতরে প্রবেশ করলাম।কোথাও সারাকে দেখতে পেলাম না তাই আমি সারা মাকে বললাম,
~আন্টি সারা কোথায়?
আন্টির মুখটা কালো হয়ে গেলো কিন্তু পরক্ষনেই হাসি হাসি মুখে বললেন,
~রুমে আছে চলে আসবে।
আমি কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসি দিলাম।সাহারা রায়জাদা আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~এই গিফট গুলো আপনাদের জন্য।
আন্টি বললেন,
~এগুলো কেন এনেছেন?আমরা কী পর নাকি?
সাহারা রায়জাদা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
~আপনারা কেন পর হবেন?আপনারাই তো এখন রাতের সবচেয়ে আপন মানুষ।
কথাটা রাতের দিকে তাকিয়ে বললেন সাহারা রায়জাদা। হঠাৎ সারা বলে উঠলো,
~রাতের আপন মানুষ তো আপনিই বানিয়েছেন আন্টি।
আমরা তার কথা অনুসরণ করে সিড়ির দিকে তাকালাম।সারা সিড়ি দিয়ে নামছে আর এ কথা বলছে সারা আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,
~কেমন আছো অধরা?
আমি বললাম,
~ভালো।তুমি কেমন আছো?
সারা বললো,
~ভালো।আপনাদের সবাইকে এখানে দেখে অনেক ভালো লাগছে বিশেষ করে রক্তিম আর অধরাকে দেখে।আমি ভাবিনি তোমরা আমার বাসায় আসার জন্য রাজি হবে।ধন্যবাদ তোমাদের
রক্তিম হেসে বললো,
~সারা তুমি আমাদের পরিবারের অংশ এখন তাই তোমার কথাও আমাদের রাখা উচিত।
সারা বললো,
~ধন্যবাদ আমাকে এতোটা আপন করে নেওয়ার জন্য।

অনেকক্ষন আমরা আড্ডা দিলাম কিন্তু সারা বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছিল এমন মনে হচ্ছে কেউ আসবে তার জন্য ওয়েট করছে।আমি সারাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই আন্টি এসে বললেন,
~প্লিজ ডিনারটা সেরে তারপর কথা বলেন।
আমরা সবাই খাওয়ার টেবিলে বসে পরলাম।সারা সবাইকে সার্ভ করছে সারার এমন ব্যবহার দেখে আমি অনেক অবাক কারণ সারা এধরনের মেয়ে নয় যে মেহমানদের সার্ভ করে খাওয়াবে।আর সবচেয়ে আজব ব্যাপার সে রাতের সাথে একবারও কথা বলেনি।আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা কী হচ্ছে সারা কী চায় কোনো কিছুই ক্লিয়ার না মাথা ভো ভে করছে।এসব চিন্তা করতে করতে খাবার শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে হাত ধুয়ে সারার পাশে এসে দাড়ালাম আজ এই মেয়েটাকে অনেক অচেনা লাগছে।

আমরা সবাই সোফার রুমে বসে আছি তখন রাত বলে উঠলো,
~সারা,আমি তোমার শর্তে রাজি।আর বাবা আমাকে পারমিশন দিয়েছে বিয়ের পর আমরা আলাদা থাকতে পারবো।এখন তুমি বলো বিয়েটা কবে করছি আমরা?
সারা কোনো জবাব না দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তার বাবা-মাও চুপ করে আছেন আমি তাদের নীরবতা দেখে বললাম,
~সারা এভাবে চুপ করে আছো কেন?কিছু তো বলো।
সারা আমার কথায় মাথা উঠিয়ে বললো,
~অনেক কিছু বলার আছে অধরা।কিন্তু শুরু কীভাবে করবো বুঝতে পারছি না।
সাহারা রায়জাদা বললেন,
~যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
তার কথা শুনে বাবা বললেন,
~সাহারা মেয়েটা কিছু বলতে চায় ওকে বলতে দেও।
সারা বললো,
~আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।
সারার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না সারা কী বলছে?বিয়ে করবে না কেন?

,,,,,,,
,,,,,,,,,
সারার এহেন কথায় রাত অবাক হয়ে বললো,
~সারা বিয়ে কেন করবেনা?কী সমস্যা বলা যাবে?
সারা ঠান্ডা কন্ঠে বলা শুরু করলো,
~রাত আমি তোমাকে কোনোদিন ভালোবাসিনি।যা করেছি তা ঝোঁকের বসে করেছি ২বছর আগে যখন তোমার সাথে আমার দেখা হলো তোমার coolness,handsome look দেখে তোমার মোহে পরে যাই।কিন্তু পরে জানতে পারি তোমার সম্পর্ক অধরার সাথে গড়ে উঠেছে।
এতটুকু বলে সারা থামলো একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করলো,
~তাই আমি তোমার আশা ছেড়ে দিলাম কিন্তু একদিন তোমার মা আমার সাথে দেখা করে আর বলে
সারার কথার মাঝেই সাহারা রায়জাদা হুংকার দিয়ে উঠে আর বলে,
~এই মেয়ে একদম কোনো কিছু বানিয়ে বানিয়ে বলবে না।আমি তোমাকে চিনতাম পর্যন্ত না
সারা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
~চোর চুরি করে কোনোদিন স্বীকার করে না।তাই প্রুভ আছে কোনো দিন ভাবিনি এটার প্রয়োজন পরবে কিন্তু আজ পরলো।
সারার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার ভয় পেয়ে গেলো।
রক্তিম বললো,
~সারা কথা শেষ করো।
সারা আবার বলতে শুরু করলো,
~একদিন আন্টি আমার সাথে দেখা করে আর বলে রাত আমাকে ভালোবাসে কিন্তু অধরাকে কথা দিয়েছে বলে আমাকে তার মনের কথা বলতে পারছেনা।
আমি সেদিন আন্টির কথা শুনে অনেক খুশী হই।তারপর একটা প্ল্যান তৈরি করি আন্টির সাথে যেহেতু রাত আমার ফ্রেন্ড ছিল তাই আমি তাকে আমার বাসায় ইনভাইট করি রাত চলেও আসে।আমরা সেদিন অনেক enjoy করি।তারপর থেকে প্রতিদিন আমরা দেখা করতাম অধরা তার ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে পারেনি সেই সময়টা আমি কাজে লাগিয়েছি একদিন সুযোগ বুঝে রাতকে আমি purpose করি আর রাত সেটা accept করে ফেলে।কারণ রাত অধরার কাছ থেকে কোনো importance পাচ্ছিল না তাই আমার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে তোলে।কিন্তু আমি এখন বুঝতে পেরেছি রাতকে আমি শুধু মোহে পরে আপন করতে চেয়েছিলাম ভালোবাসা তো অন্য কেউ ছিল।
সারা এতটুকু বলে চুপ হয়ে গেলো হঠাৎ পিছন থেকে বলে উঠলো,
~সারা এখানে কী হচ্ছে?
সারা সেই ব্যক্তিকে দেখে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সেই ব্যক্তিটিও তাকে জড়িয়ে ধরলো।রাত শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সারা সেই লোকটির হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এসে বললো,
~আমার ভালোবাসা হচ্ছে প্রতীক।ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল ৩বছর আগে আমরা ১বছর রিলেশনশিপেও ছিলাম কিন্তু আমি রাতের মতো কাউকে চেয়েছিলাম শুধুমাত্র টাকার জন্য। ৪মাস আগে প্রতীকের সাথে আমার আবার দেখা হয় মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে আমার মন জয়ী হয় আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাই এমন শর্ত দিয়েছিলাম যাতে আন্টি বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় কিন্তু তাতেও কিছু হলো না তাই আজ সবটা বলে দিলাম।অধরা তোমার অপরাধী আমি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও
বলেই হুহু করে কেঁদে উঠলো প্রতীক তাকে জড়িয়ে ধরলো সে প্রতীকে বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।
রাত সব শুনে কিছু না বলে সারাদের বাসা থেকে বের হয়ে যায় রক্তিম তার পিছে যেতে নিলে আমি তার হাত ধরে ফেললাম আর বললাম,
~রক্তিম ওকে একা ছেড়ে দেও ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা মানুষ একাই অনুভব করতে চায়।
রক্তিম আমার কথায় তার একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমায়
আমরা বাসায় চলে আসলাম।রক্তিম পুরো রাস্তায় কোনো কথা বলিনি বাসায় এসে আমরা রুমে চলে আসবো তখনই বাবা বললো,
~রক্তিম,তোর মাকে বলে দে এই কালো মন নিয়ে আমার রুমে যাতে এক পাও না দেয়।
বাবার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।বাবা তার দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে যায় আমি তাকে বললাম,
~আপনি দাদীর রুমে চলে যান।
তিনি আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন আমি কাছে যেতেই সে বললেন,
~আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসবে।
আমি সাহারা রায়জাদার হাত ধরে তাকে দাদীমার রুমে দিয়ে আসলাম।দাদীমার পাশে তাকে বসিয়ে চলে আসলাম আমার রুমে এসেই আমি রক্তিমকে খুঁজতে লাগলাম হঠাৎ বারান্দা থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতেই সেখানে গিয়ে দেখলাম,
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২১
,,,,,,,
,,,,,,,
সেখানে গিয়ে দেখলাম রক্তিম হাঁটু গেড়ে বসে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে হাত দুটো হাঁটুর উপরে রেখে চোখ দিয়ে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে।তার চোখ গুলো সামনের দিকে স্থির হয়ে আছে রক্তিমের এ অবস্থা আমার বুকে এক প্রলয় বয়ে আনছে।কীসের দুঃখ তার এতো যে এভাবে সে কান্না করছে রক্তিমের কাছে যেতে মন চাইছে কিন্তু পা দুটো চলছে না কেনজানি মনে হচ্ছে তাকে সামলাতে গেলে নিজেই দূর্বল হয়ে যাবে।কিন্তু যেতে তো হবে সামলাতে চাই আমি তাকে মানুষটার মনের কথা গুলো আজ শুনতে চাই এতো কীসের কান্না তার।সে কি জানে না তার কান্না আমাকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে তার চোখ থেকে বের হওয়া প্রতিটা অশ্রু আমার মনকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে।
নাহ আর ভাবতে পারলাম না দৌড়ে চলে গেলাম রক্তিমের কাছে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় রক্তিম হকচকিয়ে গেলো কিন্তু পরক্ষনে আমাকে তার দুটো হাত দিয়ে নিজের বাহুডরে আবদ্ধ করলেন রক্তিমের চোখের পানি দিয়ে আমার কাঁধ ভিজে গেলো।আমি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
~কী হয়েছে এভাবে বসে কান্না করছেন কেন?আপনার এতো কীসের কষ্ট আমি কী জানতে পারি।
রক্তিম কোনো কথা বলছেনা শুধু আমায় জড়িয়ে ধরে আছেন।আমি রক্তিমকে জড়িয়ে ধরা থেকে ছেড়ে দিলাম তারপর নিজেকে তার থেকে ছাড়িয়ে রক্তিমের মুখোমুখি হয়ে আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে তার চোখ মুছে দিলাম তার কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে সেগুলে মুছে দিয়ে বললাম,
~কী হয়েছে বলা যাবে?
রক্তিম আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,
~তুমি কী আমার ছেড়ে চলে যাবে? অধরা
রক্তিমের এহেন প্রশ্নে আমি শুধু অবাক না চরম পর্যায়ের একটা ধাক্কা খেলাম আমি রক্তিমের দিকে ফ্যালফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন এভাবে নীরবতা বজায় রেখে আমি নিজেকে সামলে নিলাম তারপর বললাম,
~আপনার কী হয়েছে তা আমি জানি না?কিন্তু এখন আপনি নিজের হুশে নেই তাই আমরা পরে কথা বলবো।এখন আপনি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরুন
রক্তিম তার হাত দুটো দিয়ে আমার গাল আকড়ে ধরে বললেন,
~তুমি কী রাতের কাছে চলে যাবে?
এবার আমার রাগ হলো ভীষন রাগ মনে চাচ্ছে রক্তিমকে নিজের রাগে নিঃশেষ করে দেই।পরক্ষনেই নিজেকে শান্ত করে আমি বললাম,
~রক্তিম আপনি অনেক চিন্তিত রাতের জন্য কিন্তু এই চিন্তায় আপনি আমাকে জড়িয়ে ফেলছেন যা একদম উচিত নয়।
এতটুকু বলে আমি রক্তিমের দিকে তাকালাম সে হয়তো আমার দ্বারা এ কথাটিই আশা করেছিল তাইতো তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠে।
রক্তিম তার চোখ মুখ ভালো মতো মুছে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
~অধরা,ভালোবাসার যন্ত্রণা অনেক বেশি যে একবার এটার স্বাদ পেয়েছে সে সারাজীবন এটার স্বাদ গ্রহন করতে চায়।তোমাকে অনেক ভালোবাসি অধরা হয়তো নিজের থেকেও বেশি আমার জীবনের প্রতিটি ধাপে শুধু তুমি।তুমি যদি আমার সাথে না থাকো আমি হয়তো নিজেকে শেষ করে দিবো আমি দুবছর আগের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে চাই না।অনেক কাঠখর পুড়িয়ে তোমাকে আমি পেয়েছি হারাতে চাই না তোমায় আমি।
রক্তিমের এতোগুলে কথা যেমন আমার ভালো লেগেছে ঠিক তেমনি একটি লাইন আমার মাথায় ঘুরছে দুবছর আগে সে কোন যন্ত্রণা সহ্য করেছে।রক্তিমকে জিজ্ঞেস করবো না থাক এখন না সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলতে হয়।আমি আর রক্তিম ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে শুয়ে পরলো।আর আমি ভাবতে থাকলাম আজ কী থেকে কী হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারলাম না রাত কী নিজেকে সামলাতে পারবে?

,,,,,,,
,,,,,,,
রাত একটা নির্জন রাস্তায় দাড়িয়ে আছে দূর দূর পর্যন্ত কোনো গাড়ির দেখা নেই হবেই বা কী করে রাতঃ৩.৩০মিনিটে সব মানুষই মিষ্টি ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতের নিজেকে আজ একা মনে হচ্ছে শুধু সারার দেওয়া কষ্টে তার মন পুড়ছে না তার মাও যে তাকল হারে হারে শেষ করে দিয়েছে।সারার তো মাত্র কয়েকদিন ধরে তার জীবনে কিন্তু তার মা তাকে এতো বড় প্রতারণা।
কিন্তু এতে তার মায়েরই বা কী দোষ সে নিজেই তে তার সব শেষ করেছে নিজের ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।এখন কিছুই করার নেই নিজের পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে অধরাকে অপমান করার শাস্তি এতোটা ভয়ানক হবে তা সে জানতো না।আসলে কথায় আছে প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না সে তার প্রতিশোধ নিয়েই থাকে।অধরা কতোটা সুখে আছে রক্তিমের সাথে তা ওর মুখ দেখলেই বুঝা যায়।দিনশেষে অধরা সুখী হলো অথচ রাত তাকে ছেড়ে দিয়েছিল সুখের খোজে।
অধরার কাছে ক্ষমার কীভাবে চাইবে সে নাহ তাকে তো চাইতেই হবে পাশাপাশি রক্তিমের কাছেও তার মাফ চেতে হবে।আজ এইমূহূর্ত থেকে সব ভুলে নতুন ভাবে সব শুরু করতে হবে নিজের ভুল গুলো শুধরাতে হবে।এই ভেবে রাত গাড়িতে বসে পরে আজ থেকে সব নতুন করে শুরু করার প্রতিজ্ঞা করে।
সকালে রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গতেই সে দেখে অধরা তার সাথে লেপ্টে আছে শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে তা দেখে রক্তিম হেসে মনে মনে বললো,
~এই মেয়েটা শাড়ি সামলাতে কবে শিখবে?
এইভেবে রক্তিম অধরার উম্মুক্ত পেটে হাত রাখলো।
আমার পেটে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখি রক্তিম আমার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে।আমি রক্তিমকে দেখে মুচকি হাসি দিলাম সে আমার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।আমার কপাল থেকে একটু নিচে নেমে নাকে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন আমি তাকে বললাম,
~সকাল সকাল এতো ভালোবাসা কেন?
রক্তিম হেসে বললেন,
~তোমাকে তো সারাদিনই ভালোবাসতে মন চায়।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।কিন্তু এখন ছাড়েন আমাকে ভার্সিটিও যেতে হবে।
রক্তিম বললেন,
~হুমম আজ আমারও অনেক ক্লাস আছে।
বলেই ছেড়ে দিলেন আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম শাড়ি ঠিক করে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।
কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম রক্তিম মোবাইল নিয়ে বসে আছে আমি তাকে বললাম,
~ভার্সিটি কী যাওয়ার ইচ্ছা আছে?
রক্তিম মোবাইল থেকে মুখ উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~অবশ্যই আমারতো যাওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু তুমি যদি চাও আমি কোথাও যাবো না।
আমি তার কথার জবাব দিতে যাবো তার আগেই নিচ থেকে বাবার উচ্চস্বরে বলা কথার আওয়াজ শোনা গেলো।রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~অধরা নিচে চলো।
আমি অপেক্ষা না করে রক্তিমের সাথে নিচে চলে আসলাম

,,,,,,,
,,,,,,
নিচে এসে দেখি বাবা সাহারা রায়জাদাকে কিছু বলছেন আর সে ছলছল নয়নে বাবার দিকে তাকিয়ে আছেন।বাবা বলছেন,
~সাহারা,তোমাকে আমার আশেপাশে যেন আমি না দেখি আর তোমার নবাবপুত্র কোথায় আছে? বাসায় কী ফিরবে? তোমার কারণে রাত এতোটা বিঘরে গেছে।আমার চোখের সামনে থেকে যাও তুমি।
বাবার এমন ব্যবহার দেখে রক্তিম বললো,
~বাবা,এমন করে কেন বলছো?মায়ের ভুল হয়েছে তাই বলে তুমিও সেই ভুল করবে।
বাবা রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~রক্তিম তোর মাকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলবি নাহলে খারাপ হবে।
বাবা তার কথা শেষ করে যেই না রুমের দিকে পা বাড়াবে সেইসময়ই দাদীমা তার রুম থেকে বের হয়ে বললো,
~রাহাত বউমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন?এটা কী আমার শিক্ষা
দাদীমার কথা শুনে বাবা তার কাছে গিয়ে বললো,
~মা,তুমি জানো না এই মহিলা কী করেছে?
দাদীমা বললো,
~সব জানি কে কি করেছে তার জন্য তুমি বউমার সাথে এমন আচরণ করবে।সে ভুল করেছো তাই বলে কী তুমি তোমার মুখ সামলে কথা বলতে পারছো না।
দাদীমার কথা শুনে সাহারা রায়জাদা হু হু করে কেঁদে ফেললো আর বললো,
~মা আমি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
দাদীমা বললো,
~সবাই নাস্তার টেবিলে বসবে ৩০মিনিটে আর অধরা টেবিল সাজাও সার্ভেন্টরা নাস্তা রেডি করে রেখেছে।
রক্তিম রাতকে ফোন করো খবর নেও কোথায় আছে?
দাদীমার কথা শেষ হতেই সে রুমে চলে গেলো।আমি টেবিল সাজাতে শুরু করলাম ঠিক ৩০মিনিট পর দাদীমা সহ সবাই টেবিলে উপস্থিত রক্তিম বললো,
~দাদীমা,রাত ২০মিনিটে বাসায় পৌছে যাবে।
দাদীমা বললো,
~ঠিক আছে।বউমা রাতের জন্য মেয়ে খোজা শুরু করো রাতের বিয়ের কার্যক্রম শুরু করার এটাই উপযুক্ত সময়।
দাদীমার কথায় সাহারা রায়জাদা বললো,
~মা এখন কীভাবে রাত রাজি হবে না।
দাদীমা বললো,
~সারার বিরহে আমি আমার নাতীকে শেষ করতে পারবো না তাই একজন এমন মেয়ে প্রয়োজন যে তাকে গুছিয়ে রাখতে শিখাবে আর বিয়ে এখনই হবে না মেয়ে খুজে রাখাটা জরুরি।
দাদীমার কথা শেষ হতেই সবাই নাস্তা করা শুরু করলো।তখনই কলিংবেল বাজার আওয়াজ আসলো রক্তিম উঠে দরজা খুলে দিলো আর সাথে সাথে সাবিহা ভিতরে প্রবেশ করলো।সাবিহাকে দেখে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম তারপর তার কাছে গিয়ে বললাম,
~সাবিহা এতো সকালে তুমি?
সাবিহা হাসি হাসি মুখে বললো,
~ভাবি তোমার সাথে ভার্সিটি যাবো।
রক্তিম বললো,
~তোর ভাবি কী তোকে কোলে করে নিয়ে যাবে?
সাবিহা হি হি করে হেসে উঠলো আর বললো,
~ভাবির এখন তার বাবুকে কোলে নিবে আমাকে কেন নিবে?
সাবিহার কথায় আমি তার দিকে চোখ বড় করে তাকালাম।সাবিহা আমার অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো আমি ওর হাসি দেখে নিজেও হেসে ফেললাম।
আমি সাবিহার পিছে তাকিয়ে দেখি রসত বাড়ির ভিতরে ডুকছে রাতকে দেখেই আমি রক্তিমের দিকে ইশারা করলাম।রক্তিম আমার ইশারা বুঝতে পেরে রাতের কাছে চলে গেলো রাত রক্তিমকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~ভাইয়া,Good morning.
রক্তিমও রাতের কথার জবাব দিয়ে বলে,
~Good morning.
রাত আর কোনো কথা না বলে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।উপরে যাওয়ার আগে একপলক সাবিহার দিকে তাকিয়ে চলে যায় আমি সাবিহাকে বললাম,
~আমি রেডি হবে।তুমি চলো আমার রুমে
সাবিহা খুশি হয়ে বললো,
~আচ্ছা চলো।
আমি আর সাবিহা রুমে চলে আসলাম সে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে পরলো আর আমি রেডি হতে শুরু করলাম

,,,,,,,
,,,,,,,
আমি, রক্তিম,সাবিহা বের হবো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে তখনই রাত এসে বললো,
~ভাইয়া আমিও আজ ভার্সিটি যাবো অনেকদিন যাই নি।
রক্তিম বললো,
~ভালো কথা চল।তোর মনটাও ফ্রেশ হয়ে যাবে
রাত বললো,
~Thanks ভাইয়া।আমাকে বুঝার জন্য
রাতের কথা শেষ হতেই সাহারা রায়জাদা হাজির সে রাতকে দেখে বললো,
~রাত তুই কোথায় যাচ্ছিস আবার?
রাত গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~যাচ্ছি এক জায়গায়।
বলেই সে বাহিরে চলে গেলো আমরাও রাতের পিছে পিছে বাহিরে এসে পরলাম তারপর গাড়িতে বসে রওনা হলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে পুরো গাড়িতে শুধু আমি আর সাবিহা কথা বলেছি।
ভার্সিটি পৌছে যে যার কাজে লেগে পরলাম।এতদিন কতোগুলো ক্লাস মিস হয়েছে।তাই সব গুলো নোট সংগ্রহ করতে করতে আমার শরীর বাবাজী শেষ।
সব গুলো ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গেটের বাহিরে দাড়িয়ে আছি আমি আর সাবিহা রক্তিমের কাজ আছে সে এখন যেতে পারবে না।তাই আমি সাবিহার গাড়িতে বাসায় যাবো হঠাৎ রাতের গাড়ি আমাদের সামনে এসে দাড়ালো।সে তার গাড়ির জানালার গ্লাস নিচে করে আমাকে বললো,
~ভাবি,ভাই আমাকে পাঠিয়েছে বাসায় পৌছে দেওয়ার জন্য।
রাতের মুখে ভাবি ডাক শুনে আমি হা হয়ে গেলাম তাই আমার কিছু বলার আগে
সাবিহা বললো,
~ভাবি তো আমার সাথে যাবে।
রাত বললো,
~সাবিহা তোমরা আমার সাথে যাবে।
সাবিহা আর আমি রাতের সাথে চললাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।আমাকে বাসায় দিয়ে রাত সাবিহাকে তার বাসায় দিতে গেলো
রাত আর সাবিহা গাড়িতে বসে আছে রাত ড্রাইভ করছে আর সাবিহা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে
রাত আড়চোখে সাবিহাকে দেখছে হঠাৎ রাত বললো,
~সাবিহা তোমার কী বয়ফ্রেন্ড আছে?
সাবিহা ভ্রুকুচকে বললো,
~আপনি জেনে কী করবেন?
রাত বললো,
~আন্টির কাছে বিচার দিতে পারতাম।
সাবিহা বললো,
~রাত ভাই আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
রাত বললো,
~কেমন ছেলে চাও তুমি?
সাবিহা বললো,
~এতো কিছু জেনে কী করবেন?আমার বাসা এসে পরছে।
সাবিহার কথা শেষ হতেই রাত গাড়ি থামিয়ে দিলো।
সাবিহা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরলো বাড়ির পথে রাত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো।

চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

(দেরি করে গল্প দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখীত)
চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

(কেমন লাগলো সারার সারপ্রাইজ 😁😁)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here