আমি শুধুই তোমার পর্ব -১০ ও শেষ

#আমি_শুধু_তোমার
#লেখনিতেঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি
#শেষপর্ব

(#বিঃদ্রঃ ৩৪১৭শব্দের পর্ব। লাইট থেকে ওপেন না হলে ফেইসবুক মূল এপ ইউজ করবেন। আশা করি, পড়তে সমস্যা হবেনা।)

✘কপি করা সম্পূর্ণ নি/ষিদ্ধ✘
ঘরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমার চোখের সাথে সাথে মন, মস্তিষ্ক, ভাবনা সব বন্ধ হয়ে গেল। অর্থাৎ, আমি জ্ঞান হারালাম। তারপর, উনি ঠিক কী করলেন, তা আমার জানা নেই। তবে, জ্ঞান ফিরতেই ওনাকে পাশে পেলাম। সেটাও আমার ডান হাতকে নিজের দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে কপালে ঠেকিয়ে রাখা অবস্থায়। আমি হালকা নড়েচড়ে উঠতেই উনি চোখ তুলে তাকালেন। আমাকে সজাগ দেখে নিজে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলেন। ছেড়ে দিলেন আমার হাতও। আমি কিচ্ছু বললাম না। কেবল, ক্লান্ত চোখজোড়া মেলে তাকিয়ে রইলাম এই অদ্ভুত মানুষের দিকে। উনি মলিন হাসলেন। শুধালেন,
“কেমন লাগছে?”

জবাবে আমি মৃদু মাথা নাড়লাম। আস্তে করে বললাম,
“আলহামদুলিল্লাহ্।”

উনি হাত বাড়িয়ে আমার কপালে রাখলেন। বললেন,
“কখন থেকে জ্বর? বলোনি কেন আমায়?”

আমি এবার ওনার চোখের দিকে তাকালাম। চোখগুলো কেমন অদ্ভুত! আমি বুঝতে পারছি না সেই ভাষা। তবে, এতটুকু বুঝলাম, একজন স্বাভাবিক মানুষের চোখ এমন হতে পারে না। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। বললাম,
“বলে কী হতো?”

উনি জবাব না দিয়ে বা হাতে থাকা ঘড়িতে চোখ রাখলেন। সময় দেখে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ বাদে ট্রে হাতে রুমে এলেন। ট্রে পাশে টেবিলে রেখে আমার পাশে বসলেন। তারপর, আমাকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে পাশ থেকে স্যুপের বাটি নিয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলেন। চামচ দিয়ে স্যুপটা নেড়েচেড়ে একটু ঠান্ডা করে একচামচ স্যুপ মুখের সামনে ধরলেন। সঙ্গে আমি চোখমুখ কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আমার এমন আচরণে উনি শুধালেন,
“কী হলো?”

আমি চোখ বন্ধ রেখেই বললাম,
“আমার স্যুপ পছন্দ না। আমি স্যুপ খাই না।”

আমার কথার জবাবে উনি ছোট্ট করে বললেন,
“ওহ্।”

এমন ভান করলেন যেন এটা কিছুই না। তারপর, আরেকটু এগিয়ে বসলেন। স্যুপের বাটিতে চামচ নাড়তে নাড়তে বললেন,
“কিন্তু, আজকে খেতে হবে। পছন্দ হলেও, না হলেও। ভালোভাবে খেলে ভালো। নয়তো, জোর করে খাওয়াবো।”

ওনার কথা শুনে আমি মুখ ঘুরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। বললাম,
“কিহ্? আমি ম/রে গেলেও খাব না।”

উনি একদম স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
“মানুষ মা/রা গেলে খেতে পারে না। সো, তুমি বেঁচে থাকতেই খাবে। নাও ওপেন ইওর মাউথ।”

আমি দূর্বল হাতে মুখ চেপে ধরে ডানে-বামে মাথা দোলালাম। যার অর্থ ‘না’। উনি শুনলেন না সেই না। মুখের সামনে স্যুপ ধরে গম্ভীর চোখে তাকালেন আমার দিকে। তার সেই দৃষ্টিতে কিছুটা ভ/য় পেলাম আমি। চোখ নামিয়ে মৃদু স্বরে বললাম,
“স্যুপ খেলে আমার বমি পায়।”

আমার কথার জবাবে একদম সরল জবাব দিল সে। বলল,
“বমি পেলে বমি করবে। সমস্যা নেই।”

আমি অসহায় চোখে তাকালাম তার দিকে। তার থেকেও অসহায় চোখে তাকালেন উনি। বললেন,
“প্লিজ, হা করো।”

ওনার কন্ঠে যেন কিছু ছিল। অনুরোধ, ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু তা বুঝলাম না। তবে, কিছু তো ছিল। যা আমার জেদকে টিকতে দিল না। অটোমেটিক মুখ খুলে গেল আমার। আমি হা করে স্যুপ মুখে নিলাম। প্রথমবার মুখে নিতেই গা গুলিয়ে এলো আমার। ছোট থেকেই আমি স্যুপ পছন্দ করি না। স্যুপের স্বাদটা আমার ভালো লাগে না। একবার খেয়েছিলাম সে কি বমি! তারপর, আর খাওয়া হয়নি। আজ আবার ওনার জোড়াজুড়িতে খেতে হচ্ছে।

আমি ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়লাম। ভালো মেয়ের মতো স্যুপটুকু খেয়েও নিলাম। বাট, পেটের ভেতর তা বেশিক্ষণ টিকলো না। শেষের চামচটা মুখে নেওয়ার পূর্বেই মুখ ভরে বমি। আচমকা বমিতে নিজে তো ভসলামই। সাথে ভাসালাম সামনের মানুষটাকেও। আমি যে এখান থেকে উঠে বাথরুম অব্দি যাব, সেই সুযোগটাই পেলাম না।

একদম পেট খালি করে তবেই থামলো আমার বমি। বমি টমি করে আমি আরও কাহিল হলাম। সীমাহীন ক্লান্ত চোখজোড়া দিয়ে ওনার দিকে চাইলাম। শুঁকনো ঢোক গিলে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হলাম। কারণ, নিজের অবস্থা তো খারাপই। সাথে ওনার যেই অবস্থা, তা দেখে আমার আবার বমি পাচ্ছে। তাহলে ওনার কি অবস্থা তাই ভাবছি!

আমি অপরাধী স্বরে বললাম,
“দেখলেন, আপনি তো বিশ্বাসই করলেন না। এখন দেখুন, কি অবস্থাটাই না হলো। এজন্যই আমি স্যুপ খেতে চাই না।”

আমার কথার জবাবে উনি একদম স্বাভাবিকভাবে বললেন,
“ইট’স ওকে। তুমি বসো, আমি আসছি।”

কথাটা বলে উনি উঠে গিয়ে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে এলেন। তারপর, বিছানার কাছে এসে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলেন। ওয়াশরুমে নিয়ে কোল থেকে নামিয়ে শুধালেন,
“একা পারবে নাকি তাইয়্যেবাহ্’কে ডেকে দিব?”

উত্তরে আমি মাথা নেড়ে মৃদু স্বরে বললাম,
“পারব।”

আমাকে দাঁড় করিয়ে উনি রুমে গেলেন। কিছুক্ষণ পর শাড়ি এনে দিয়ে বললেন,
“দরজা লক করো না। চাপানো থাকুক। আমি এখানেই আছি।”

ওনার কথার জবাবে আমি হালকা মাথা নাড়লাম। উনি দরজা চাপিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি বহু কষ্টে পরনের শাড়িটা খুলে পাশে রাখলাম। তোয়ালে ভিজিয়ে গা’টা একটু মুছে নিলাম। ঠান্ডা পানির ছোঁয়া গায়ে লাগতেই গায়ে কা/টা দিলো। আমি কোনোমতে নিঃশ্বাস বন্ধ করে গা মুছা শেষে ব্লাউজ পেটিকোট চেঞ্জ করে নিলাম। তারপর, বেসিন থেকে হাতের কোষের সাহায্যে মাথার তালুতে কিছুটা পানি দিলাম। শাড়িটা নিয়ে কাঁপা হাতে কোমড়ে কিছুটা গুঁজতেই মাথা ঘুরে উঠলো। হাতটা বাড়ালাম কিছু আগলে ধরে নিজেকে সামলাতে। সেই হাত গিয়ে পড়লো দরজায়। বেশ শব্দ হলো। শব্দ পেয়ে ওপাশ থেকে উনি উদ্বিগ্ন স্বরে শুধালেন,
“কেনো সমস্যা? ঠিক আছো তুমি?”

মুহূর্তের মাঝেই যেন জ্বরটা বাড়লো। চোখ জ্বলে উঠলো। গলার স্বর আটকে এলো। আমি জবাব দিতে পারলাম না। আমার জবাব না পেয়ে উনি তৎক্ষনাৎ ভেতরে ঢুকে এলেন। দেয়ালের সাথে ঠেকে থাকা আংশিক শরীরটা যখন মাটি ছুঁবে, ঠিক তখনই সে উনি আমায় আগলে নিলেন। নিচে পরে ভিজে যাওয়া শাড়িটা তুলে পাশের বালতিতে রেখে পাশ থেকে টাওয়াল নিয়ে আমার গায়ে দিলেন। তারপর, সেই অবস্থাতেই কোলে তুলে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলেন। ড্রয়ার থেকে আরেকটা শাড়ি বের করে পরিয়ে দিতে লাগলেন যত্ন করে! পুরোটা সময় আমি তাকে দেখলাম। নীরবে, চুপিসারে!

~~~~~~~~~~~

দেখতে দেখতে ৬ দিন পেরিয়ে গেল। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ। জ্বর নেই বললেই চলে। শরীরের দূর্বলতাও কে/টে গিয়েছে। এই ক’টা দিন উনি আমার অনেক খেয়াল রেখেছেন। অনেক যত্ন করেছেন। যার ঋণ আমি আজীবনেও শোধ করতে পারব না৷ আসলে, কিছু ঋণ কখনোই শোধ করা যায় না।

কথাগুলো ভেবে আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। সুন্দর সময়গুলো কত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। আমরা চাইলে তা বেঁধে রাখতে পারি না। কোনোদিনও না!

নিজের মনকে বুঝিয়ে শক্ত করে নিয়েছি। কারণ, বিয়েটা উনি করলেও ওনার উদ্দেশ্য ছিল আমাকে আর অভ্রকে এক হতে সাহায্য করা। উনি আমায় ভালোবেসে বিয়েটা করেননি। আমি ভুল ছিলাম হয়তো! আর, ভুল তো একদিন না একদিন ঠিক ভেঙে যায়। আমার ভুলটাও ভেঙে গিয়েছে। তাই, বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি!

ব্যাগ গুছাতে গুছাতে খাটের পাশের দেয়ালে থাকা ওনার ছবিতে চোখ পড়তেই দু’দিন আগের কথা মনে পড়ে গেল আমার। ইশশ্, কি লজ্জা!

ফ্লাসব্যাক..
সকালের সূর্যের তীর্যক আলো এসে চোখে পড়তেই ঘুম ছুটে গেল আমার। আমি আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে পাশে তাকালাম। ওনাকে দেখতে না পেয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে সময় দেখলাম। তখনই উনি ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। তোয়ালে পেঁচানো ওনাকে দেখে চোখ নামালাম আমি। উনি বড় বড় পা ফেলে আলমারির কাছে চলে গেলেন। সেখান থেকে প্যান্ট আর শার্ট নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। মাঝে একটুও শব্দ করলেন না। কিছুক্ষণ বাদেই একদম ফুল ড্রেসে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। ওনাকে দেখে আমি মৃদু হাসলাম। কালো প্যান্ট আর আকাশী রঙের শার্ট পরণে তার। উনি এগিয়ে এসে কপালে হাত রেখে জ্বর পরীক্ষা করলেন। ওনার শার্টের ওপরের দু’টো বাটন খোলন ছিল। যার ফলে জ্বর চেক করার সময় আমার দিকে ঝুঁকে পরাতে সেখান থেকে ওনার বুক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ওনার বুকে প্রচুর লোম। ফর্সা বুকে লোমগুলো কেমন মিশে আছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন আমার হিংসে হলো লোমগুলোর সাথে। কিন্তু, পরক্ষণেই আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। মুখ ফসকে বললাম,
“আপনি এভাবে খোলামেলা পোশাকে আমার সামনে আসবেন না, মাষ্টার সাহেব। আমি ভুলভাল কিছু করে ফেলব কিন্তু!”

আমার কথার উত্তরে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন উনি। হয়তো, কথার মর্মার্থ বুঝতে পারেনি। আমি হাত বাড়িয়ে শার্টের আরেকটা বোতাম লাগিয়ে দিলাম। বললাম,
“যতক্ষণ আছি, ভুলেও বিনা শার্টে বা ভেজা শরীরের টাওয়েল পেঁচিয়ে আমার সামনে আসবেন না। নয়তো..”

আমি কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই উনি আমার মুখ থেকে কথাটাকে কেড়ে নিলেন। একদম অন্যরকম দৃষ্টিতে চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“চু/মু খাবে?”

আচমকা ওনার লাগামহীন কথায় ভরকে গেলাম আমি। সঙ্গে সঙ্গে কাশি উঠে গেলো। উনি টেবিল থাকা পানি ভর্তি গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললেন,
“যাস্ট ‘চুমু খাওয়া’র কথা শুনেই তোমার কাশি উঠে গেল? তবে, কাল রাতে ওটা কী ছিল? ওটা আসলেই তুমি ছিলে তো?”

ওনার কথার মর্মার্থ না বুঝে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। শুধালাম,
“মানে?”

উনি এবার প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। তারপর, আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে বললেন,
“ইউ কিসড মি!”

ওনার কথাটা শুনে যেন আমি চারশো চল্লিশ ভোল্টের একখান ঝটকা খেলাম! আমি অবিশ্বাস্যের চোখে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। উনি চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“কাল রাতে যে কি পাগলামি করেছো, তোমার আইডিয়াও নেই। কত কি বলেছো, সেটাও হয়তো তোমার মনে নেই। তবে, আমি জানতাম সবটাই তুমি জ্বরের ঘোরে করেছো। জ্বর কমে গেলে ঠিক ভুলে যাবে। সেটাই হলো। তবে, আমার কাছে এই ৭ মাসের ভেতর এই দু’টো রাত চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তুমি ভুলে গেলেও আমার মনের কোণে চিরকাল থেকে যাবে। ধন্যবাদ তোমাকে কাল রাতের জন্য!”

একের পর এক কথাগুলো বলে থামলেন উনি। আমার সব কথাগুলো হয়তো মনে নেই ঠিক! তবে, হালকা কিছু কথা মনে আছে। সেই কথাগুলো জ্বরের ঘোরে বললেও অনুভূতিগুলো মিথ্যা ছিল না। এটা আমি তাকে কীভাবে বোঝাই?

আমার ভাবনার মাঝেই উনি বললেন,
“ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার আনছি।”

কথাটা বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। আমি মলিন চোখে ওনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম। পুরুষ মানুষ বুঝি এতই অবুঝ হয়? কী করলে তারা একটি মেয়ের অনুভূতি বোঝে? কী করলে!

আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যাগের চেইন লাগালাম। মনে হচ্ছে ওনার সাথে বিয়েটা না হলেই বুঝি ভালো হতো। ওনার হেল্প বা দয়া কোনোটারই তো দরকার ছিল না। অভ্র কপালে লিখা থাকলে এমনিতেই পেতাম। মাঝ থেকে আমার জীবনটা ওলট-পালট হতো না। অতীতটা তাঁজা হয়ে সেটাই বর্তমানে পরিণত হতো না। এখন আমি কী করব? কীভাবে সবটা মেনে নিব? এই মায়া, এই বন্ধই-বা ছিঁড়ব কী করে? সেই সাধ্য যে আমার নেই। একটুও নেই!

কথাগুলো ভাবতেই নিজেকে পাগল বোধ হলো আমার। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়লাম। তখনই ঘরে ঢুকলেন উনি। আমাকে উদ্দেশ্য করে শুধালেন,
“রেডি তুমি?”

ওনার ডাকে মাথা ছেড়ে ফিরে তাকালাম আমি। স্মিত হেসে মাথা নাড়লাম। বললাম,
“আপনি এগোন। আমি আসছি।”

জবাবে উনি মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি শেষবারের মতো ভালোবেসে প্রতিটা জিনিস একবার করে ছুঁয়ে দিলাম। বাড়ির মানুষগুলোর সাথে সাথে জিনিসগুলোর প্রতিও কেমন একটা অধিকারবোধ চলে এসেছিল। আজকের পর মানুষগুলোর মতো জিনিসগুলোও পর হয়ে গেল। কাল হয়তো আমার জায়গায় অন্য কেউ এই ঘরে রাজ করবে। এই জিনিসগুলো ভালোবেসে ছুঁবে। অধিকার নিয়ে তার বাহুতে আবদ্ধ হবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আমার দুনিয়া ঘুরে গেল। বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠলো। চোখ থেকে বেয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা জল। আমি আলতো হাতে তা মুছে নিলাম। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো এ ঘর থেকে খোলা আকাশটা দেখে নিলাম। তারপর, সকল পিছুটান ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

বাহিরে এসে মা’য়ের থেকে বিদায় নিতে গিয়ে নিজেকে সামলাতে পারলাম না। বুক ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়লাম তার বুকে। মা স্নেহের হাত বুলালের মাথায়। বললেন,
“বোকা মেয়ে! এমনভাবে কাঁদছিস যেন আজীবনের জন্য চলে যাচ্ছিস। দু’টো দিনের-ই তো ব্যাপার। তারপর তো আবার ফিরে আসবি। তাছাড়া, আমরা তো তোকে জোড়ও করিনি। তুই নিজেই তো যেতে চেয়েছিস। তারপরও বলছি, যাচ্ছিস যা। ভালো না লাগলে কাল ভোরেই চলে আসিস।”

মা’য়ের কথার জবাবে ‘হ্যাঁ-সূচক’ মাথা নাড়লেও মনটা যে জানে, এ বাড়িতে আর কখনোই ফিরে আসা হবে না আমার। কিন্তু, সে কথা মা কি আর জানেন? জানেন না! জানলে হয়তো যেতেই দিতেন না।

আমি নিজেকে সামলে নিলাম। বাকীদের থেকে বিদায় নিয়ে বের হওয়ার সময় আরেকবার মানুষগুলোকে দেখে নিলাম। দেখে নিলাম আমার সংসারটা। আমার ছোঁয়া জিনিসগুলো। আজকের পর এর কোনোকিছুই আর আমার রবে না! চিরকালের জন্য পর হয়ে যাবে!

আমি বুকে পাথর চেপে সব স্নেহ, মায়া, ভালোবাসার বন্ধন ছিড়ে চিরকালের জন্য বেরিয়ে এলাম বাড়ি থেকে। এটা জেনেও যে, আজকের পর আর এখানটায় আসা হবে না। কোনোদিনও না!

~~~~~~~~~~

দীর্ঘ সময় পর আমার বাসার গেইটে এসে গাড়ি থামলো। গাড়ি থামতেই নেমে গেলাম আমি। নামলেন উনিও। পুরো পথে দু’জনের মাঝে কোনো কথা হলো না। উনি কয়েকবার কথা বললেও আমি কোনো জবাব দেইনি। জানিনা কেন যেন ওনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। রাগ হচ্ছে নাকি অভিমান বুঝতে পারছি না। কেবল এতটুকুই বুঝতে পারছি যে, আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না!

গাড়ি থেকে নেমে উনি ব্যাগগুলো নামাতে নিতেই আমি এগিয়ে গিয়ে ওনাকে সরিয়ে ব্যাগগুলো নামাতে নামাতে বললাম,
“ধন্যবাদ, আপনাকে। এই অব্দি অনেক কিছু করেছেন। এতটুকু আমি করতে পারব।”

উনি হয়তো অবাক হলেন আমার আচরণে। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখলেন আমাকে। আমি সেদিকে কোনো পাত্তা দিলাম না। ব্যাগগুলো নামিয়ে নিয়ে গেইটের সামনে রাখলাম। তারপর, ফিরে এসে ওনার সামনে দাঁড়ালাম। বললাম,
“থ্যাঙ্ক ইউ! থ্যাংক্স ফর এভ্রিথিং। আপনার এই ঋণ আমি আজীবনেও শোধ করতে পারব না। ভালো থাকবেন। আসছি।”

কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো আমার। আমি নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর, লাজ লজ্জা ভুলে এক অদ্ভুত কাজ করলাম। শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে। উনি টাল সামলাতে না পেরে দু’কদম পিছিয়ে গেলেন। তবে, আমাকে ছুঁলেন না। আমার অভিমান যেন আরও গাঢ় হলো। নিজের এহেন কান্ডে নিজেকেই গা/লি দিতে ইচ্ছে হলো। আত্মসম্মানে প্রবল আ/ঘাত লাগাতে তৎক্ষনাৎ তাকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়াতেই পেছন থেকে সে আমার হাত টেনে ধরলো । বললো,
“নিজেই বলবে? আমায় কিছু বলার সুযোগ দেবে না?”

ওনার বলা শেষ বাক্যটায় আমার মনটা অশান্ত হয়ে পড়লো। চাতক পাখির মতো তার অব্যক্ত কথাগুলো শোনার অপেক্ষা করলো। আমি তৎক্ষনাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার চোখে। উনি জোরপূর্বক হাসলেন। তারপর, সময় নিলেন কিছুটা। হয়তো, কথাগুলো গোছানোর চেষ্টা করলেন। বেশ খানিকটা সময় পর কথা বললেন উনি। ঘাড় চুলকে আলতো হাসলেন। বললেন,
“‘তুমি আমার হয়েও, আমার হলে না। হয়তো, তুমি কখনোই আমার ছিলে না। তবে, আমি চিরকাল তোমারই থাকবো। কারণ, আমি শুধুই তোমার।”

ওনার এই কথাটুকু যেন আমার ভাবনাগুলোকে ওলট-পালট করে দিলো। আমার সকল বিষন্নতারা যেন উড়ে যেতে লাগলো, যাস্ট তার বলা শেষ বাক্যটায়! সে শুধুই আমার? শুধুই!

কিন্তু, ভাগ্য বলেও একটা কথা আছে। সেখানে সুখ নামক শব্দটা লিখা থাকতে হয়। যা আমার ভাগ্যে নেই। যখনই সুখের আশা করি, তখনই দুঃখের সাগরে ডুবে যাই। চেয়েও কোনো কূল খুঁজে পাই না। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যখনই ভাবলাম, এবার সব দুঃখের ছুটি। তখনই, নতুন করে দুঃখ এসে কড়া নাড়লো আমার দরজায়। কিছুক্ষণ আগে উড়ে যাওয়া সব দুঃখগুলো আমার ফিরে এলো তার আরেকটি কথায়। সে বলল,
“তবে, তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই, শ্যামাঙ্গিনী। আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট! কেবল তুমি ভালো থেকো তোমার প্রিয় মানুষটার সাথে। চিরকাল এক সাথে থেকো, ব্যস একটুকুই!”

একটানে কথাগুলো বলে থামলেন উনি। তারপর, অস্পষ্ট স্বরে বললেন,
“পৃথিবীর সমস্ত শুভ দোয়া রইলো শ্যামাঙ্গিনীর জন্য!”

আমি নিঃশ্বাস আটকে যেন সবগুলো কথা শুনলাম। ওনার এই উদারতা আমার সহ্য হলো না। একটাবার অধিকার দেখিয়ে বলা যেত না, ‘তুমি আমার। আমায় ছেড়ে কোত্থাও যাবে না, খবরদার!’ কিন্ত সে বলল না। তার তো মহান হতে হবে। কিন্তু, আমি মহান হতে পারলাম না। মহান হয়ে তার শুকরিয়া আদায় করতে পারলাম না। আমার ইচ্ছে করলো তাকে খু/ন করে নিজেও ম/রে যেতে। রাগে মানুষ কী না পারে! কিন্তু, এই মুহূর্তে নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব নয়। আগ বাড়িয়ে কিছু বলে নিজের আত্মসম্মানে আ/ঘাত করার মানেই হয় না। যেই পুরুষ চোখের ভাষা বোঝে না। সে কোনোদিন মুখের ভাষাও বুঝবে না! কোনোদিনও না!

মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। উনি পেছন থেকে বললেন,
“রুম পর্যন্ত দিয়ে আসি?”

“নাহ্। নিজের কাজ নিজেরই করা উচিৎ।”

আমার কাটকাট জবাব। উনি কথা বাড়ালেন না। আমি বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেলাম। গেইট খুলে ভেতরে ঢোকার পূর্বে শেষবারের মতো একবার তাকালাম তার দিকে। শতহোক, আমি তাকে ভালোবাসি! অনেকটা ভালোবাসি। কিন্তু, আফসোস! আত্মসম্মানের দহনে সেটা তাকে বলা হয়নি। কখনো হবেও না হয়তো!

তপ্তশ্বাস ফেলে আমি ভেতরে গিয়ে গেইট লাগিয়ে দিলাম। তারপর, পা বাড়ালাম সিঁড়ির দিকে। এক কদম, দু’কদম করে এগিয়ে গেলাম আর বুকের ভেতর কেমন শূণ্য শূণ্য লাগতে শুরু করলো। মনে হতে লাগলো প্রিয় কোনো জিনিস হারিয়ে ফেলেছি! যা কখনো খুঁজে পাব না। তবুও মনকে সামলে নিয়ে নিচ তলা ও দোতলার মাঝ পর্যন্ত গেলাম। কিন্তু, তারপর আর একটা পা-ও এগোতে পারলাম না। কোনো অদৃশ্য বন্ধন যেন আমাকে পেছনে টেনে ধরলো। চেয়েও সেই বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না আমি। চোখের সামনে ভাসতে লাগলো তার মুখশ্রী। ভাসতে লাগলো তার সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো। কানে বাজতে লাগলো তার বলা একের পর এক বাক্যগুলো। নিজেকে যেন পাগল পাগল মনে হলো। কী করব, কী করব না, ভাবতে ভাবতেই আমি ব্যাগগুলো ফেলেই উল্টো পথে দৌড় লাগালাম। বাতাসের বেগে যেন সিঁড়ি পেরিয়ে গেট অব্দি এলাম। তাড়াহুড়ো করে গেইট খুলে বাহিরে গেলাম। কিন্তু, কিছুক্ষণ আগে থাকা গাড়িটা তার জায়গায় নেই। তবে, উনি চলে গেলেন? কথাটা ভেবে এদিক ওদিক তাকাতেই ওনার গাড়ি দেখতে পেলাম। আমার থেকে কয়েক হাত দূরে। সে চলে যাচ্ছে। আমি আবার দৌঁড়াতে লাগলাম। পাগলের মতো ছুটতে লাগলাম প্রিয়তমর পেছনে। পায়ে জুতো নেই! নতুন রাস্তার খোয়াগুলো পায়ে গিয়ে গাঁথছে। আমি ব্যথা পাচ্ছি। কিন্তু, থামতে পারছি না। মন থামতে দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে, থেমে গেলেই হেরে যাব। আজন্মের মতো হেরে যাব! কিন্তু, আমার সেই ছুটে চলাটা বেশিদূর টিকলো না। আচমকাই পায়ের শক্ত চামড়া ভেদ করে নরম মাংসপিণ্ডে ধারালো কিছুর আ/ঘাত লাগলো। সাথে সাথে মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে এলো ‘আহ্’! আমি সেখানেই বসে পরলাম। ভেঙে পড়লাম কান্নায়। উনি কী করে পারলেন আমায় রেখে চলে যেতে? একটুও কষ্ট হলো না ওনার? একটু অপেক্ষা করলে খুব কি ক্ষতি হতো?

কথাগুলো ভেবে দু’হাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। চাপা স্বভাবের মানুষের সে-কি য/ন্ত্রণা, তাই না? তারা নিজের দুঃখের কথা কিংবা ভালো লাগার কথা কাউকে বলতে পারে না। আবার নিজের ভেতরও রাখতে পারে না। শুধু তাই নয়। ভালোবাসা আর আত্মসম্মানবোধ একসাথে থাকতে পারে না। কখনোই না!

আমি মুখ থেকে হাত নামিয়ে চোখ বন্ধ রেখেই আকাশের দিকে মুখ করে দীর্ঘশ্বাস এক নিঃশ্বাস ছাড়লাম। তারপর, চোখ খুলে সামনে তাকাতেই মনে হলো বিস্মিত হলাম। নিজেকে স্বপ্নের জগতে অনুভব করলাম। সেই অনুভবের মাঝেই আমি উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে যেতে নিতেই সেই পরিচিত হাত জোড়া আমায় আগলে ধরলো। আমি টলমল চোখে তার চোখের দিকে তাকালাম। রুদ্ধশ্বাস কন্ঠে বললাম,
“আপনি এমন কেন?”

উনি জবাব দিলেন না। বরং, আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমার কোমড়। আমি আবার বললাম,
“আপনি কী বোঝেন না আমার চোখের ভাষা? সব কি মুখে বলতে হয়?”

উনি এবার মুখ খুললেন। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন,
“একটাবার ডেকে দেখতে, ছুটে চলে আসতাম। শক্ত করে আগলে ধরতাম। কক্ষণো ছাড়তাম না।”

পরক্ষণেই যেন সেই রূপ যেন পাল্টে গেল। আমাকে আচমকাই কোলে তুলে নিলেন। স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
“এভাবে দৌঁড়ানোর কী প্রয়োজন ছিল? পেলে তো ব্যথা! ভাগ্যিস আমি গ্লাসে দেখেছিলাম। নয়তো…”

উনি কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই আমি বলে ফেললাম,
“সবার মতো আপনিও শরীরের ক্ষ/তটা দেখলেন। আর, মনের ক্ষ/তটা?”

উনি এবার আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু, কোনো জবাব দিলেন না। চুপচাপ গাড়িতে নিয়ে বসালেন। তারপর, আমান সামনে বসে আস্তে করে পা থেকে কাঁচের টুকরোটা টেনে বের করতেই চাপা আ/র্তনাদকে করে উঠলাম আমি। উনি একপলক তাকালেন আমার দিকে। তারপর, গাড়ি থেকে পানির বোতল বের করে র/ক্ত ধুয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে পা বেঁধে দিলেন। আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে তার ঠিক সামনে দাঁড়ালাম। শান্ত চোখে তাকালাম তার দিকে। ভেঁজা স্বরে বললাম,
“আমি শুধুই আপনার! চিরকাল আপনার কাছে রেখে দিন আমায়।”

আমার কথার জবাবে উনি এক পা এগিয়ে এলেন। বা হাত রাখলো আমার গালে। তার ছোঁয়ায় যেন আমার কষ্টগুলো আহ্লাদ পেল। কান্নার রেশ বাড়লো। আমি কাঁদলাম! সে বৃদ্ধ আঙুল দ্বারা চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
“একদম কান্না নয়। এত ছোট্ট একটা কথা বলতে এতটা সময় লেগে গেল তোমার? বুঝতে এতটা সময় লাগলো? আমি তো বহু আগেই বুঝে গিয়েছিলাম। কেবল, তোমার মুখ থেকে শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

ওনার কথায় আমি অবাক হলাম। ভেজা চোখে অবাক হয়ে চাইলাম। উনি মৃদু হেসে বললেন,
“অবাক হবার কিচ্ছু নেই। তোমার সকল অব্যক্ত কথাগুলো আমি বুঝতে পারি, শ্যামাঙ্গিনী। তোমার চোখের ভাষাগুলো আমি বুঝতে পারি। এই কথাগুলোও বুঝেছিলাম আমি। আরও শিওর হয়েছি সেদিন তোমার আর অভ্র’র কথা শুনে। তুমি যে অভ্রকে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে বারণ করেছো, ওর সাথে সম্পর্ক রাখবে না, ওর কাছে যাবে না, সবগুলো কথাই সেদিন আমি শুনেছিলাম। আ’ম সরি, কারো পার্সোনাল কথা লুকিয়ে শুনতে নেই। কিন্তু, সেই কথাগুলো না শুনলে যে অনেককিছুই সম্ভাবনাতে রয়ে যেতো। যদিও শিওর হওয়ার পরও আমি চেয়েছি, তুমি নিজের মুখে আমাকে বলো। এজন্যই এত অপেক্ষা! এতকিছু করা! কিন্তু, তবুও তুমি এতটা সময় নিলে। আমি জানতাম, তুমি আমার-ই। আমার দূরত্ব তোমার সহ্য হবে না। তবে, ভেবেছিলাম, তুমি গেইটটাও পার হতে পারবে না। তার আগেই ফিরে আসবে। কিন্তু, তুমি বাসার ভেতরে গিয়েছো দেখে ভেবেছিলাম, হয়তো আমার ধারণা ভুল! তবে, তুমি ফিরে এসে আমার ধারণাকে সত্যি করে দিয়েছো। সত্যিই, সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে তুমিই আমার জীবনের সেরা উপহার, শ্যামাঙ্গিনী!”

আমি টলমল চোখে তাকিয়ে ছোট্ট করে বললাম,
“আ’ম সরি। সরি ফর এভ্রিথিং!”

উনি হাসলেন। ইশশ্, কি চমৎকার সেই হাসি। আমি চোখ ভরা অশ্রু নিয়েও সেই হাসির জবাবে নীরবে হাসলাম। উনি ভালোবেসে উষ্ণতার পরশ এঁকে দিলেন আমার কপালে। আলতে করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“আমি শুধুই তোমার, শ্যামাঙ্গিনী! চিরকাল, চিরজীবনের জন্য শুধু আর শুধুই তোমার। পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই শ্যামাঙ্গিনীর সম্পদে ভাগ বসানোর। কারণ, শ্যামাঙ্গিনীর সম্পদন একান্তই তার! বিনিময়ে কেবল, তুমিও তার একান্ত সম্পদ হয়ে যাও, ব্যস!”

আমিও পরম আবেশে তার বুকে মুখ লুকোলাম। শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“ভালোবাসি, মাষ্টার সাহেব। ওই আকাশ সমান ভালোবাসি আপনাকে। এই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সৃষ্টি কর্তাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আজ থেকে আমি শুধুই আপনার! একান্তই আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ!আর, মাষ্টারের ব্যক্তিগত সম্পদে হক বসানোর অধিকার সৃষ্টিকর্তা কাউকে দেননি। কাউকে না!”

কথাগুলো বলে আমি ওনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম, আমার আর কষ্ট হচ্ছে না। মন খারাপ লাগছে না। নিজেকে একা বা অসহায় মনে হচ্ছে না। বরং, নিজেকে ভীষণ সুখী লাগছে। এইযে, পায়ে ব্যথা পেলাম? সেই ব্যথাটাকেও কি মিষ্টি লাগছে। মন আর মস্তিষ্কের মাঝে দ্বন্দ্বও হচ্ছে না। সব কেমন স্নিগ, শুভ্র লাগছে! ইশশ্, কাঙ্ক্ষিত বস্তু পাওয়া বুঝি এত আনন্দের হয়? এত প্রশান্তির হয়? আগেও তো পেয়েছি। কখনো শাড়ি, কখনো চুড়ি। কখনো অন্যকিছু। কিন্তু, এতটা প্রশান্তিকর তো লাগেনি। তবে, এটা কি ভালোবাসার এক বিশেষ গুণ? আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম! রঙিন সব স্বপ্নের জগতে পারি জমালাম। যেখানে কোনো দুঃখ, কষ্ট বা হারানোর ভয় নেই। আছে কেবল সম্মান, বিশ্বাস আর ভালোবাসা! যেই স্বপ্নে আমরা দু’জন শুধুই দু’জনের! যেখানে অন্যকারো অস্তিত্ব নেই। বিন্দুমাত্রও না!

#সমাপ্ত….

(সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ভালোবাসা সকলকে.. 🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here