#আমি_সেই_তনু
#অষ্টম_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
বাসায় পৌছে দেখলো প্রীতি আকাশের বাসায়, মনে হচ্ছে কান্না করেছে!!
আকাশ: ও এখানে কেনো মা?
বলতে ই লতিফা আকাশ কে একটা থাপ্পর দেয়….
লতিফা: আমি দুঃস্বপ্নে ও কল্পনা করি নি এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমি জন্ম দিয়েছি!!
আকাশ: কি হয়েছে মা বলবে তো আমাকে!?
লতিফা: প্রীতি ৫ সপ্তাহ এর অন্তঃসত্ত্বা আর তার বাবা তুই!?
আকাশ যেনো কথাটা শুনে একটা ঝটকা খেলো! কী বলছো এসব মা!? সব মিথ্যে কথা!!
লতিফা: খবরদার নিজের পাপ আর এসব বলে বাড়াস না। আমি কালকে ই তোদের বিয়ে দিবো।
আকাশ: কি যা তা বলছো মা!?
প্রীতি: আকাশ কেনো মিথ্যে বলছো? আমাদের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে ই না হয় সব টা মেনে নাও আকাশ!! এমন করো না।
আকাশ প্রীতি কে থাপ্পড় দিতে যাবে ঠিক তখনই লতিফা আকাশের হাত টা ধরে ফেলে, তারপর প্রেগনেন্সি রিপোর্ট আর আকাশের সাথে প্রীতির অন্তরঙ্গ ছবি গুলো আকাশের সামনে ছুড়ে ফেলে।
আকাশ যেনো নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না কি করে এগুলো সম্ভব!! হঠাৎ তনুর কথা মনে পড়ে আকাশে রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়।
আকাশ: মা আমাকে বিশ্বাস করো আমি এসব করি নি ,সব টা নাটক প্রীতি ইচ্ছা করে করেছে এসব !
লতিফা:আমি আর কিছু শুনতে চাই না! কালকে ই আমি তোদের বিয়ে দিবো, ঘটনাটা বাইরে জানা জানি হবার আগে ই আমি এসব ঝামেলা সেরে ফেলতে চাই। তুই এখন আমার চোখের সামনে থেকে যা!!
বলে সোফায় বসে পড়ে লতিফা ।
প্রীতি মুচকি মুচকি হাসছে….
আকাশ: রাগে দুই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে, আমাকে তুমি এখনও চিনতে পরো নি প্রীতি!! তোমায় তো আমি দেখে নিব, বলে চলে যায় ।
তনু আজ খুব আশা নিয়ে খুব সযত্নে লতিফার একটা শাড়ি পরেছে, দুপুর থেকে কত কষ্ট করে শাড়ী টা পড়েছে!! কালো রং এর শাড়ী,হতে চুড়ি, খোলা চুল, যেনো নিজের মণ মত সেজে ছিল তনু!! প্রীতি এসে যখন জানালো সে প্রেগনেন্ট , আর তার সন্তানের বাবা আকাশ! তনু বিশ্বাস করে নি তারপর প্রীতি সব রিপোর্ট আর ওই ছবি গুলো যখন দেখলো তখন তনু আর কোনো কথা বলতে পারে নি!!
তনু ফ্লোর এ হাঁটু তে মাথা গুঁজে বসে আছে,, চোখ ফুলে গেছে চোখের পানি শুকিয়ে আসছে। কয়েকটা চুড়ি ভেঙে পড়ে আছে,কখন কিভাবে ভেঙেছে তনু খেয়াল করে নি!
আকাশ তনুর ঘরে এসে তনুকে দেখে আকাশের কান্না পাচ্ছে কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না। পুরুষ মানুষ যে কাদতে পারে না , চাইলে ও না।
আকাশ: তনু তুইও কি বিশ্বাস করিস ? আমি এসব করতে পারি?
তনু মুখ তুলে আকাশ কে দেখে আবার মাথা একটু নিচু করে রাখল।
আকাশ: কি হলো তনু বল? তুইও কি বিশ্বাস করিস আমি এটা করতে পারি? চুপ করে থাকিস না।
তনু: আপনি আমার কাছে জবাবদিহি কেনো করছেন আকাশ ভাইয়া!?
আকাশ: কারণ আমি তোকে…
তনু: কারণ আপনি আমাকে ব্যাবহার করেন তাই না?
আকাশ: কি বলছিস এসব তুই!?
তনু: নিজের সন্তান কে অস্বীকার করছেন!? আপনি তো বাবা নামের কলঙ্ক আকাশ ভাইয়া।
আকাশ: কিসের সন্তান? কার সন্তান? ওই সন্তান আমার না।
তনু: আচ্ছা মানলাম সন্তান আপনার না, তবে ওই ছবি গুলো সেটাও কি মিথ্যে বলুন ভাইয়া !? জবাব দিন!?
আকাশ কি জবাব দিবে সে তো নিজে ই জানেনা এসবের উত্তর।
আকাশ: আমি সব প্রমাণ করবো তনু তুই দেখে নিস, বলে তনুর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ।
আকাশ নিজের রুমে শুয়ে আছে আর ভেবে যাচ্ছে কি করে এসব সম্ভব…. ভাবতে ভাবতে চোখ টা লেগে গেলো আকাশের।
সকালে উঠে ই আকাশ অফিস এ চলে যায়। আজ কোনো কাজে মন বসছে না আকাশের, সন্ধায় প্রীতির সাথে আকাশের বিয়ে!! কী করবে আকাশ!!
নির্ভীক আকাশের ফাইল গুলো চেক করছে, আকাশের আজ কিছু products রপ্তানির মিটিং আছে তাই ফাইল গুলো বুঝে নিচ্ছে।
নির্ভীক: স্যার, congratulations!!
আকাশ: কেনো?
নির্ভীক: আপনার নাকি আজ বিয়ে? আপনার মা আজ সন্ধায় ইনভাইট করেছে অফিস এর কিছু স্টাফ আর কিছু ভিআইপি দের আমাকে ও যেতে বললো।
নির্ভীক কে কেমন শান্ত দেখাচ্ছে! নির্ভীক এর সাথে অফিসিয়াল ভাবে সম্পর্ক হলেও আকাশের সাথে বেশ ক্লোজ।
নির্ভীক: স্যার আপনাকে এত চিন্তিত লাগছে কেনো? মনে হচ্ছে আপনাকে ধরে বেধে বিয়ে দিচ্ছে কেউ?
আকাশ: জানো নির্ভীক প্রীতি প্রেগনেন্ট!! আমি বেশ ভালো করে ই জানি এই বাচ্চার বাবা আমি না, তবে কে হতে পারে সেটা ভেবে পাচ্ছি না!
নির্ভীক প্রীতির প্রেগনেন্সির কথা শুনে যেনো চোখে মুখে চিন্তার ছাপ!
নির্ভীক: প্রীতি প্রেগনেন্ট? আপনি সত্যিই বলছেন স্যার?
নির্ভীক এর চোখে অশ্রু আর মুখে আনন্দের হাসি…
নির্ভীক এর প্রশ্নে বেশ বিরক্ত হলো আকাশ।
আকাশ: আরে সত্যি প্রেগনেন্ট,আমি মিথ্যা কেনো বলবো? তোমার কি মনে হয় এই মুহূর্তে আমি মিথ্যা বলার পরিস্থিতি তে আছি?
বলতে বলতে ই নির্ভীক আকাশের পা জড়িয়ে ধরলো…..
স্যার প্রীতি কে আপনি বিয়ে করবেন না আপনার পায়ে পড়ি!! প্রীতি খুব লোভী একটা মেয়ে। কিকোরে একটা মানুষ একজনের বাচ্চা কে আর একজনের বলে চালিয়ে দেয়!! আজ আমি আমার বাচ্চার জন্যে হলেও এই বিয়ে আমি হতে দিবো না। কথা গুলো এক দমে বলে থামলো নির্ভীক !!
আকাশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এসব কি বলছো তুমি নির্ভীক?
নির্ভীক: আমি ঠিকই বলছি স্যার।
আকাশ: প্রীতি খুব চালাক,এভাবে সব শিকার করবে না আমাদের বুঝে কাজ করতে হবে ।
নির্ভীক: ঠিক বলেছেন স্যার! সেটা না হলে অনেক গুলো জীবন নষ্ট হবে…
চলবে?
(কেমন লাগছে লিখে জানান)