#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ২০
রোদেলা:সূর্য!কোথায় গেলি বাবা তাড়াতাড়ি আয়।ধুর কি যে করছে ছেলেটা,সূর্য এবার কিন্তু মার খাবি।কি ক..
(বলতে বলতে রুমে ঢুকে দেখলো ছয় বছর বয়সের সূর্য একটা এলবাম হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে কিছু দেখছে)
রোদেলা:সূর্য?কি দেখছিস এভাবে?
সূর্য এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে এলবাম এর একঅটা ছবি দেখিয়ে বললো।
সূর্য:আম্মু এটাই কি আমার প্রতিভা আন্টি?
মুহূর্তেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো রোদেলার।ছবিটাতে রোদেলা,প্রভা,সিনথিয়া,দিপ্তি চারজন একসাথে আছে।
রোদেলা:ত তুই কি করে জানলি এটা প্রভা?
সূর্য:আমার নিরব আঙ্কেল বলেছে।
রোদেলা:কি বলেছে?
সূর্য:আমি যখন আঙ্কেল এর রুমে খেলছিলাম তখন আঙ্কেল আমাকে ওর আর প্রতিভা আন্টির ছবি দেখিয়ে বলে এটা নাকি আমার আন্টি। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম আন্টি তোমার সাথে থাকেনা কেনো?তখন আঙ্কেল বললো আন্টু নাকি তার উপর অনেক রেগে আছে।তাই তার সাথে কথা বলেনা।জানোতো আম্মু,এই আন্টি টা খুব পচা।আন্টির জন্য আঙ্কেল অনেক কষ্ট পায়। আমি একবার আন্টিকে সামনে পাই,এত্তগুলো বকা দিয়ে দিবো।
রোদেলা:তোর আন্টি পচা না রে সোনা।তোর আন্টি খুব ভালো,খুব ভালো।
কথাটা বলেই মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো।সূর্য পিছন থেকে ডাকলেও কোনো উত্তর দিলো না।সূর্যের মন টা খারাপ হয়ে গেলো।সে এমন কি বললো যার জন্য তার মা কাঁদছে।
ঠিক তখনি রুমে ঢোকে রোদ্দুর।আব্বু কে দেখেই বিছানা থেকে ছুটে এসে তার কোলে ওঠে সূর্য।
সূর্য:আব্বু আম্মু কি আমার উপর রাগ করেছে?আম্মু ওভাবে কাদছিলো কেনো বলো না।
রোদ্দুর:আম্মু তোমার উপর রাগ করেনি সোনা। আসলে তোমার আম্মু আন্টি কে খুব মিস করছে তাই।
সূর্য:তাহলে আন্টি কেনো সবার থেকে দূড়ে থাকে, আমাদের কাছে আসে না কেনো?
রোদ্দুর:তোমার আন্টি যে চাইলেও আসতে পারবে না সোনা।
সূর্য:কেনো আসতে পারবে না?এই জন্যই তো আন্টি অনেক পচা।আন্টির জন্য আঙ্কেল এতো কষ্ট পায়,আম্মুও কষ্ট পায় তারপর ও আন্টির রাগ ভাঙেনা,পচা আন্টি। (মুখ ফুলিয়ে বললো)
রোদ্দুর:এমনভাবে বলতে নেই শোনা।তুমি তো ছোট তাই বুঝবেনা।আগে বড় হও তাহলে সব বুঝতে পারবে।এখন যাও তুমি গিয়ে খেলা করো।
সূর্য এবার রোদ্দুর এর কোল থেকে নেমে ছুটে খেলতে চলে যায়।রোদ্দুর খাটের পাশে গিয়ে এলবাম টা হাতে নেয়।সেই ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে নেয়।
রোদ্দুর:সত্যি ই,সূর্যের মতো আমারো তোমার উপর খুব রাগ হচ্ছে প্রতিভা।তুমি নিজে তো চলেই গেলে কিন্তু তার সঙ্গে আরেকজন মানুষকে জীবিত অবস্থাতেয় মৃত বানিয়ে গেলে।
এলবাম টা বন্ধ করে রেখে দেয় রোদ্দুর।চশমা টা খুলে চোখের কার্নিশে জমে থাকা জল মুছে নেয়। পা বাড়ায় রুমের দিকে।সে জানে রোদেলা নিশ্চই এখন কাঁদছে।তাকেই এখন রোদেলা কে সামলাতে হবে।
_____”,,🌿,,”
মাথা ব্যাথা এখনো পুড়োপুড়ি কমেনি নিরব এর। তার উপর অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকায় আরো বেশি বিরক্ত লাগছে তার।মাথা চেপে ধরে উঠে বসে সে।বেশিক্ষন শুয়ে থাকায় মাথা খানিকটা ভার হয়ে আছে।উঠে দাঁড়িয়ে যেই দু পা হাটতে যাবে তখন ই তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নেয়।যদিও এক হাত দিয়ে খাট ধরে ফেলে সে। ঠিক সেই মুহূর্তেই অপর হাতে কারোর স্পর্শ অনুভব করে।এই স্পর্শ সাধারণ স্পর্শ নয়,এ যেনো তার খুব চেনা স্পর্শ।শরীরের মধ্যে অদ্ভুত শিহরণ দিয়ে ওঠে তার।
অপরদিকে প্রভার(ইশা কে এখন থেকে তার আসল পরিচয় মানে প্রভা নামেই বলবো)ও একই
অবস্থা।শরীর কেপে ওঠে তার।পাচ বছর পর সেই চেনা স্পর্শ সে সজ্য করতে পারছে না।চোখ খিচে বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকে।অনেক কষ্টে নিজেকে ঠিক রেখে নিরব এর দিকে তাকায়।
দেখে নিরব তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবারো শ্বাস আটকে আসে প্রভার।চট করে চোখ নামিয়ে নেয় সে,আচ্ছা নিরব ওকে চিনতে পেরে গেলোনা তো?না না এ কি করে সম্ভব।কথাটা ভেবেই আবারো নিজেকে শান্ত করে নিরব বেড এ বসিয়ে দেয়।
প্রভা:আপনি জানেন আপনার শিরীর কতটা দূর্বল?এখনি তো পরে যাচ্ছিলেন।
নিরব:নিশ্চুপ..
জিসান:আরে ইশা,ভালোই হলো তুমি চলে এলে। নিরব মিট হার, ডঃ মাহমুদা তাসনিম ইশা। ওনার কথাই বলেছিলাম তোমায়,আর ডঃ উজ্জ্বল কে তো তুমি দেখেছোই। (দড়জা থেকে ঢুকে বলে)
নিরব:ও ওহ..
কথাটা বলেই প্রভার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো নিরব।কেমন অদ্ভুত লাগছে ওর।মনে হচ্ছে এই স্পর্শ তার খুব ভালো করে চেনা।এই চোখ ও যেনো তার খুব চেনা,একদম তার দিয়াপাখির মতো।ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে নিরব।এসব কি ভাবছে সে।
নিরব:নাইস টু মিট ইউ ডঃ ইশা (হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বলে)
ইশা:(কাপা কাপা হাতে হ্যান্ডসেক করে)
জিসান:ওকে ইশা তুমি নিরব এর সঙ্গে পরিচিত হও আমি আজ আসি। (বলেই বেড়িয়ে যায়)
ইশা:আপনি কিন্তু উত্তর টা দিলেন না ডক্টর। নিজে একজন ডক্টর হয়ে নিজের ভালো টাই বোঝেন না।
নিরব একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।এই হাসির মানে বুঝতে পারলো না প্রভা তবে এই হাসি তাকে ভিতরে ভিতরে দুমরে মুচরে শেষ করে দিচ্ছে।
ইশা:হ হাসছেন কেনো?
নিরব:নিজের ভালোটা বুঝলে হয়তো আজ অনেকটাই ভালো থাকতে পারতাম ডক্টর।নিজের ভালোটা বুঝিনি বলেই হয়তো আজ এতোটা একা। (অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো)
প্রভা এবারো নিরব এর কথার মানে বুঝতে পারলো না।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিরব এর পানে।
নিরব:এনিওয়ে,আমি যেহেতু এখন আপনার আন্ডারে তাই আপনাকেই রিকুএস্ট করছি।ডিসচার্জ করে দিন আমায় প্লিজ।কালকেই দুজন পেশেন্ট এর ওটি করা খুব ইম্পরট্যান্ট।আর আমি তো এখন অনেকটা বেটার।শুধুশুধু এখানে থেকে কি করবো।
ইশা:আপনার নিজের এই অবস্থা আর আপনি অন্যের কথা ভাবছেন?
নিরব:যাদের দিকে তাকিয়ে নিজে বেচে আছি তাদের কথা ভাববোনা বলছেন?
ইশা:মানে?
নিরব:আমার পেশেন্ট দের নিয়ে ব্যাস্ত থাকি বলেই তো আজ বেচে আছি।আর তাদের নিয়ে না ভেবে থাকি কি করে বলুন তো?আমি তো আর এমন নয় যে হাটা চলা করতে পারছি না।আমি তো এখন ঠিক আছি,আম ফাইন।আর তাছাড়াও যে কটাদিন আছি তাতে যদি কারোর জীবন বাঁচাতে পারি তাহলে আমি ই খুশি হবো।
ইশা:এসব কি বলছেন আপনি?পাগল হয়ে গেছেন? ক কিচ্ছু হবে না আপনার। (বেশ জোড়ে বলে)
নিরব:(ইশার এমন কথায় খানিকটা অবাক হয় তবুও বেশি ভাবেনা)আচ্ছা সেসব বাদ দিলাম। এখন বলুন ডিসচার্জ দেবেন আমায়?
ইশা:আ আজ রাতটা থাকুন।কাল সকালে দিয়ে দিবো।আপনি ঘুমিয়ে পরুন আমি আসছি।
কথাটা বলেই কেবিন থেকে বেড়িয়ে পরে প্রভা। এতক্ষনে মন ভরে নিশ্বাস নিতে পারছে।এতক্ষন নিরব এর সামনে থেকে যেনো দম আটকে আসছিলো তার।
অনেক ভাবার পর সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিরব এর চিকিৎসা করবে।জীবনে অনেক যুদ্ধের সম্মুখিন হয়েছে।আর একটা যুদ্ধের সম্মুখিন ও নাহয় হবে। এ যুদ্ধে আদতেও জিততে পারবে কিনা জানে না। তবে সে তার সম্পূর্ন টা দিয়ে চেষ্টা করবে।কিন্তু এই সবটাই ইশার পরিচয়ে।সম্মুখে থেকেও কেউ তাকে চিনতে পারবে না।তার আসল পরিচয় সে কখনই সামনে আনবে না।
_______🌿
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সিগারেট এর ধোয়া ওড়াচ্ছে উজ্জ্বল।খুব মনে পরছে আজ সেই প্রিয় মানুষটির কথা।শত বার ভুলতে চেয়েও পারছে না ভুলতে, বারংবার আড়ালে অনুভবে উকি মারে সেই মানুষটি।যাকে ভুলে যাওয়ার জন্য দেশ ছাড়লো,তবুও তো ভুলতে পারলো না।
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে উজ্জ্বল। আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনমনেই গাইতে শুরু করে–
~~তুমি সাইকেল চালানো শিখবে তাই
আমি আজো সাইকেলে ঘুরে বেড়াই
শুধু ছলনায় তোমার ছোঁয়া মেলেনা
তুমি কবিতাগুলো পড়বে তাই আমি
আজো রাত জেগে ছন্দ সাজাই
রাত শেষে শুধু ভোর ফিরে আসে না
আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেবোই তাই
ব্যাগে আজো রাখি পিজিক্স বই
শুধু তুমি নেই তাই বইটা খুলি না
তুমি ছুঁড়ে ফেলে দিবে এই ভয়ে
আমি সিগারেট আজো লুকিয়ে শুধু
এখনতো কেউ বারণ আর করে না______
_____তুমি চশমাটা খুলে রাখবে তাই
আমি আজো ভুল করে পেছনে তাকাই
শুধু কালো ওই চোখ দুটো দেখিনা
আমি আজো আনমনে হারিয়ে যাই
তাই ভুল করে এই হাতটা বাড়াই
শুধু তোমার কোমল ছোঁয়া মেলেনা
তুমি লিখবে আমায় এই ভেবে আমি
আজো করি অপেক্ষা তবে
অপেক্ষার শেষ কবে জানিনা
তুমি ভাবনা আজ আমায় নিয়ে আমি
স্মৃতিগুলকেই জড়িয়ে শুধু
নতুন করে স্বপ্ন দেখিনা
তুমি এতো সহজে ভুলতে পারো
অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরো
আমি কেনো শুধু ভুলে যেতে পারিনা
আজ অবাক লাগে তোমায় দেখে
আমায় আজ তোমার অচেনা লাগে
এতো ভালো অভিনয় কেনো জানিনা?
তুমি এতো সহজে ভুলতে পারো
আমি কেনো শুধু ভুলে যেতে পারিনা~~
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে উজ্জ্বল।হাতে থাকা ছবিটি চোখের সামনে ধরে বলে,
উজ্জ্বল:সবাই নিজেদের জীবনে মুভ অন করতে পারে।তুমিও করেছো,তবে আমি কেনো পারবো না?ছেড়ে তো দিয়েছি তোমায়,আটকাইনি তো।নিজের মতোই তো আছো।তাহলে কেনো বারবার আমার আড়ালে অনুভবে তে চলে আসো?
তবে আর নয়।এবার আমিও মুভ অন করবো জীবনে।তবে তোমার মতো প্রতারকের সঙ্গে নয়। এমন একজনের সঙ্গে যে মানুষকে ঠকায় না,যে তোমার মতো নয় তার সাথে,হ্যা হ্যা তার সাথে..
#আড়ালে_অনুভবে🌼
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ২১
চোখের সামনে রুকসানা রায়হান(উজ্জ্বল এর মা),নূহা এবং সানা(উজ্জ্বল এর দুই বোন) কে দেখে বিষ্ফরিত চোখে তাকিয়ে রইলো ইশা। সানা এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো এবার।
সানা:কি গো কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?
ইশা:অবিশ্বাস্য সারপ্রাইজ পাগলি।কিন্তু তোমরা কখন এলে আর এই বাড়ি?
রুকসানা:তুই চলে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িটা একদম ফাকা ফাকা লাগছিলো।সানা আর নূহাও মন খারাপ করে থাকতো।তাই ভাবলাম চলেই আসি।আর এই বাড়িটা আমাদের ই।তুই তো জানিস আমরা আগে এখানেই থাকতাম।সেসব বাদ দে তুই কি খুশি হোস নি?
ইশা:অনেকককক বেশি খুশি হয়েছি মামনি।আমিও তোমাদের অনেক মিস করছিলাম।ভালোই হলো তোমরা চলে এলে।
নূহা:আমাকে তো কারোর চোখেই পড়ে না।
(মুখ ফুলিয়ে বললো)
ইশা এবার ছুটে গিয়ে হুইল চেয়ার এর সামনে বসলো।
ইশা:এইরে রিয়ালি সরি আপু।এইযে কান ধরছি। হয়েছে এবার?
নূহা:ঠিকাছে ঠিকাছে ভেবে দেখবো ক্ষমা করা যায় কিনা।
ইশা এবার মুচকি হেসে খানিকক্ষণ গল্প করলো সবার সাথে।নূহা উজ্জ্বল এর বড় বোন।তিন বছর আগে একটা এক্সিডেন্ট এ তার স্বামী মারা যায় এবং সে নিজের পায়ে দাড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।সানা ইশার চেয়ে চার বছরের ছোট।
সকাল বেলা হসপিটাল এ গিয়ে নিরব কে ডিসচার্জ করে দেয় ইশা।তারপর কেবিন এ বসে ছিলো এমন সময় উজ্জ্বল এসে বলে তার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।আর তারপর ই এই বাড়িতে নিয়ে আসে।
দুপুরে আর হসপিটাল এ যাওয়া হয়নি,উজ্জ্বল ও যায়নি।দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নেয় ইশা,চোখটাও সামান্য লেগে গেছিলো।
ঘুম ভেঙে যেতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বিকেল ৪টা বাজে। ওয়াশরুম এ গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে তৈরি হয়ে নেয় হসপিটাল এ যাওয়ার জন্য। যে কদিন এখানে আছে সে কদিন অন্যান্য পেশেন্ট ও দেখবে সে।
নিজে তৈরি হয়ে উজ্জল কে ডাকার জন্য যেই তার রুমের দিকে যাবে তখনি দেখে নূহার রুম থেকে উজ্জের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।কেনো জানিনা তার খুব শুনতে ইচ্ছে করলো তাদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে। দরজা খানিকটা খোলা থাকায় পাশে উকিয়ে ভিতরের কথা শুনতে লাগলো ইশা।
রুমের ভিতরে—
নূহা:ভাই..
উজ্জল:হুম
নূহা:দেশে যেহেতু এলি একটিবার ওর খোজটা তো নিয়ে দেখ
উজ্জল:ও ভালো আছে আপু।আমি সিওর ও অনেক ভালো আছে।আর আমি খোজ নিতে যাবোই বা কেনো?
নূহা:ভাই,তোর মনে হয় না তুই ভুল করছিস?সবটা না জেনে শুনে একজনের ব্যাপারে এমন কিছু ভাবতে পারিসনা তুই।
উজ্জল:আর কিছু জানার বাকি আছে আপু!
নূহা:দেখ ভাই আমি তোর ভালো চাই তাই বলছি, বাহিরের মানুষের কথায় কান দিয়ে কোনো ভুল করিস না।
উজ্জল:ভুল!হা হা হা ভুল তো করেছি ই।জীবিনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি ওকে ভালোবেসে।আর ওর কথা ভেবে জীবনের পাচ পাঁচটে বছর নষ্ট করে।তবে আমি আর কোনো ভুল করবোনা।
নূহা:মানে!
উজ্জল:আমিও লাইফ এ মুভ অন করতে চাই আপু। নিজের জীবনটা নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে চাই।
নূহা:তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস?
উজ্জল:আমি ইশা কে বিয়ে করতে চাই আপু
নূহা:কিহ!তুই ভেবে চিন্তে কথা বলছিস?
উজ্জল:আমি যথেষ্ট ভেবেই কথা বলছি।
নূহা:দেখ ভাই,তুই কিন্তু ইশার অতীত সম্পর্কে কিছুই জানিস না।
উজ্জল:আমিতো জানতে চাই ও না আপু।ওর অতীত এ যাই থাকুক না কেনো আই ডোন্ট কেয়ার।আমি এই পাচ বছরে এতটুকু তো বুঝেছি যে ইশা অন্য কারোর মতোন ঠকবাজ,প্রতারক নয়।ও খুব ভালো মনের একটা মেয়ে।আর এতটুকুই যথেষ্ট আমার কাছে।
নুহা:ইশা কে বলেছিস এই ব্যাপারে?
উজ্জল:উম হু,বলিনি।তবে বলবো,আমার কাছে ওর মতামতের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।ও যদি রাজি থাকে তবেই আমি এই বিষয় এগোবো নয়তো না।
নূহা:তুই কি ইশাকে ভালোবাসিস ভাই?
উজ্জল:জানিনা,হয়তো বাসিনা।চেষ্টা করেছি জানোতো।কিন্তু পারছিনা,প্রতিবার ওকে মনে পরে যায়।হয়তো আমি ইশাকে ভালো বাসতেও পারবো না,আবার হয়তো পারবো।কিন্তু আমি এতটুকু বলতে পারি,আমি ওকে এতটুকু কষ্ট পেতে দেবোনা।প্রতিটা মুহূর্তে ওর সঙ্গে থাকবো ওর পাশে থাকবো।একজন ভালো প্রেমিক না হতে পারলেও একজন দায়িত্ববান স্বামী হয়ে দেখাবো।আর আমি এটাও জানি,ইশা এমন একটা মেয়ে যাকে আমি প্রতিটা মুহূর্তে পাশে পাবো।নিজের সুখ দুঃখ সবকিছু ভাগাভাগি করে পারবো।ব্যাস,আর কি লাগে!
নূহা:আমি তোকে বাধা দেবোনা ভাই।আর ইশা কেমন মেয়ে তা শুধু তুই না আমরা ভালো করে জানি।শুধু এতটুকুই বলবো যা করবি ভেবে চিন্তে করবি।তোর এই বোন সবসময় তোর পাশে আছে।
উজ্জল:থ্যাংক ইউ আপু,থ্যাংক ইউ সো মাচ।
আর শুনতে পারলোনা ইশা।দৌড়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে।এমনটা নয় যে সে উজ্জল এর উপর রেগে গেছে কিংবা ওর কথা শুনে অসন্তুষ্ট।উজ্জল এর কথায় সে বিন্দুমাত্র কষ্ট পায়নি।বরং সে মুগ্ধ হয়েছে প্রতিটা কথায়।কিন্তু সে যে পারবেনা নিজের জীবন অন্য কারোর সঙ্গে জড়াতে।নিরব এর ভালোবাসা মিথ্যে হতে পারে কিন্তু তারজন্য প্রভার ভালোবাসা তো মিথ্যে নয়।সে তো নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলো মানুষটাকে।না চাইতেও আজও তার হৃদয়ে,অনুভবে,প্রতিটি অনুভুতি তে শুধু একটা নাম ই লেখা,নিরব নিরব আর নিরব।
ইশা ভেবে নেয় উজ্জল তাকে এই ব্যাপারে কোনো কথা বললে সে এক বাক্যে না করে দেবে।
হসপিটাল এর করিডোর দিয়ে মাত্র কেবিন এ যাচ্ছে ইশা।তখন ই দেখে সামনে থেকে নিরব কোথাও যাচ্ছে।ইশা ভ্রুযুগল সামান্য কুচকে আড়ালে নিরব এর পিছন পিছন যেতে থাকে। কিছুটা দূর যেতেই দেখলো নিরব একটা কেবিন এ ঢুকলো।ইশা সেখান থেকে চলে যেতে নিএও গেলো না।সেই কেবিন এর সামনে গেলো।কিন্তু সেখানে এমন একটা জিনিস দেখলো যা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।সিনথিয়া বেড এ বসে আছে।নিরব ওর পাশে গিয়ে বসতেই সিনথিয়া ওকে জড়িয়ে ধরলো।নিরব ও ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।হালকা ঘোলাটে কাচের দড়জা দিয়ে এতটুকুই দেখা গেলো।
ইশা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।ঠোট চেপে কান্না আটকে রেখে হাত দিয়ে মুখ চেয়ে ধরে ছুটে চলে গেলো নিজের কেবিনে।
ইশা:কেনো নিরব?কেনো?তুমি তো তোমার দিয়াপাখির কান্না সজ্য করতে পারোনা তবে কেনো আমায় এতোটা কষ্ট দিলে?আমি কি এমন চেয়েছিলাম তোমার কাছে?শুধু একটু ভালোবাসা।তুমি তো দিয়েও ছিলে,তবে কেনো এভাবে দূড়ে সরে গেলে।আমি যে আর পারছিনা।
অবশ্য কি ই বা বলছি আমি।আমি তো আর নিরবের দিয়াপাখি নই,এই নাম তো আরো কতো বছর আগেই হারিয়েছি।
নাহ,আমি কাঁদবোনা।কেনো কাদছি আমি?কার জন্য কাদছি?ও ঐ মানুষটার জন্য?যার জন্য আমি মরতে বসেছিলাম!আ আর আমি এসব কি করছি।আমি কিনা এমন একটা মানুষের জন্য ফেরেশতার মতো উজ্জ্বল কে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম!ছিহঃ,ভাগ্যেস আমি ওর পিছু নিয়েছিলাম।নাহলে তো আমি উজ্জল কে ফিরিয়ে দিতাম,এতে তো আমার পাপ হবে পাপ।যেই মানুষটা বিনা স্বার্থে বিপদের দিনে আমার পাশে থেকেছে।যার জন্য আমি নতুন জীবন পেয়েছি তাকে কিনা আমি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম?না না আমি এমনটা করতে পারবোনা,এত বড় স্পর্ধা আমি দেখাতে পারবোনা।সেই মানুষটা যদি কোনো স্বার্থ ছাড়াই আমায় আপন করে নিতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবোনা?পারতে আমাকে হবেই।ভুলে যাবো সকল অতীত কে, ভুলে যাবো নিরব নামম ব্যাক্তির সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত,মুছে ফেলবো তার প্রতি থাকা সকল অনুভুতি।
উজ্জল যদি আমায় নিজের পাশে চায় তবে আমিও থাকবো তার পাশে।এটাতো আমার সাত জন্মের সৌভাগ্যের ব্যাপার।
#চলবে