ইংলিশ টিচার পর্ব ১১

#ইংলিশ_টিচার
পর্ব-১১
সুমনা হক

শুভ রিকশা নিলো মিলির বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে আর সাথে মিলির জন্য নেওয়া গিফট তার হাতে একটু বেশিই জোর দিয়ে ধরে আছে।
রিকশাচালক মামাকে শুভ বললো
-আচ্ছা মামা আপনি কোনো ভুল করলে আপনার বউ আপনাকে মাফ করে দেয় না ?

-আমাদের বিয়ে হয়ছে সে ১৬ বছর আগে, প্রতিদিন আমরা ঝগড়া করি আসলে ঝগড়া না হলে কেমন জানি ঠিক ভালো ও লাগেনা।
-তাহলে এক সাথে কিভাবে আছেন?
-ভুল তো করবোই আর সেও ভুল করে। আসলে আমার বউ একটু কালো, তাই আমার বাসায় অনেক কথা শুনাইতো প্রথমে কিন্তু আমি কখনো তার এই ব্যাপার নিয়ে তারে ছোট করি নাই।

আসলে সে যেমনি হোক না কেন আমি তারে অনেক সম্মান করি আর তাই সে ও আমারে সম্মান করে।
ভাই এত্তদিন এর সংসার জিবনে আমি যা বুঝলাম মেয়েরা খুব নরম মনের হয় কিন্তু সবসময় না।আপনি যখন তার দুর্বল কোনো দিক নিয়ে কথা শুনাইবেন তখন সে এই কথা গুলা মনের মধ্যে নিয়ে ফেলবে আর পরে আপনি এইগুলা ভুলে যাবেন তয় সে ভুলবো না।
-আপনি তো ভাই অনেক বুঝেন। রিকশা টা সাইডে রেখে আগে আমাকে কিছু টিপস দেন তো।

-ভাই আমি আপনার মতো অত শিক্ষিত না তয় আমি যা বুঝি তা হলো কারো দুর্বল দিক থাকতেই পারে আর তাই স্বাভাবিক, আর এই দিক গুলা নিয়ে আমরা যারা আপনজন আছি তাদের কখনওই কথা শুনানো ঠিক না।আমরা যদি কথা শুনাই তাহলে বাহিরের মানুষ আর আমাদের মাঝে পার্থক্য কই থাকলো?
-তুমি মিয়া বুঝলা কিভাবে আমি কারো দুর্বল দিক নিয়ে কথা শুনাইছি হু?

-আমি যখন আমার বউ কালো আর বাসার মানুষজন খারাপ বলে বলছিলাম আপনি ভাই মাথাটা নিচা কইরা ছিলেন।রিকশাচালক হয়তে পারি তয় মানুষের মন বুঝতে পারি।আপনি আজকে বউ এর কাছে যাইতেছেন তাই না ভাই? আপনার বউ রাগ করে আছে?
-জ্বী ভাই।

-বিরক্ত হইয়েন না কিছু কথা বলি, যদিও ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যায়।আমার বউ কালো এখন যদি তারে আমি ফেরেনলাভলী বা সুন্দর হওয়ার ক্রিম আইনা দেয় সে কিন্তু না আমি না বললে ও অনেক কিছু বুঝে যাবে।আর এই বুঝাটা কিন্তু কখনওই আমাদের সংসার জিবনের জন্য ভালো হয়তো না।
এইটা বলেই রিকশাচালক রিকশা চালিয়ে দিয়েছে।

রিকশা মিলির বাসার সামনে এসে থামল আর শুভ নেমেই একটা হাসি দিয়ে রিকশাচালক কে প্যাকেট থেকে দুইটা চকলেট ও ভাড়া দিয়ে দিলো।

মিলিদের বাসার মেইন দরজার কাছে গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই একটা পিচ্ছি এসে দরজা খুললো।
পিচ্চিকে দেখে শুভ ভাবছে এই ছেলে আবার কে?
শুভতো তাকে বিয়ের দিন ও দেখেনি।
শুভ পিচ্ছিটা কে বললো
– বাসার বাকি সবাই কোথায়?
শুভর কথা শুনে পিচ্ছিটা তার আম্মুকে ডাক দিলো
-আম্মু দেখো অপরিচিত আংকেল আসছে।
শুভ এই কথা শুনে হাসছে আর অবাক হচ্ছে এইটুকু ছেলে কত বুঝে, শুভ অপরিচিত বলে শুভর নাম দিয়ে দিলো অপরিচিত আংকেল ঠিক যেমন টা করতো মিলি।
এরিমধ্যে পিচ্ছিটার আম্মু এসে হাজির।
শুভকে বললো
-কাকে চাই?
-আসলে মিলিরা কোথায়?
-কে মিলি?
-আপনি মিলিকে চিনেন না? এটা তো ওদের বাসা। মিলি, রিমি দুই বোন। আপনি কি কাউকে চিনতে পাচ্ছেন না??
শুভর মাঝে মিলিকে হারানোর এক অজানা ভয় কাজ করা শুরু করলো।

-না আসলে আমরা এই বাসায় উঠেছি ১ মাস হবে।তারিফ এর আম্মু এই বাসাটা কিনে নিয়েছে প্রায় দুইমাস হলো।
-এই বাসা কিনে ফেলেছে মানে!!
-হ্যাঁ।আমরা কিনেছি।
-আপনি একটু ডিটেল বলবেন কিভাবে কিনেছেন? কাদের কাছ থেকে কিনেছেন? তারা কেন বিক্রি করলো?

-আমি এত্ত কিছু জানিনা। আপনি বরং তারিফ এর বাবার সাথে কথা বলেন।সে আপনাকে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর বলে দিতে পারবে।
শুভ তারিফ এর বাবার ফোন নাম্বার নিলো।আর তারিফকে সব গুলো চকলেট দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

রাস্তায় এসে শুভর মাথায় প্রচণ্ড ঝিমঝিম করছে।
শুভ আর দেড়ি না করে তারিফ এর বাবাকে কল দিলো।
তারিফ এর বাবাকে কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা আর এদিকে শুভর হার্টবিট বেড়েই যাচ্ছে।
শুভ কল দিয়েই যাচ্ছে, ৯ বার কল দিবার পর তারিফ এর বাবা কল রিসিভ করলো।
শুভ বলতে শুরু করলো
-হ্যালো! আপনি কি তারিফ এর বাবা?
ভদ্রলোক বেশ চমকে যায় ছেলের নাম শুনে।সে তাড়াতাড়ি বলে
-হ্যাঁ আমি তারিফ এর বাবা।কি হয়েছে বলেন তো?
-না টেনশন নিবেন না,আপনার ছেলে ঠিক আছে।
-কিছু মনে করবেননা আসলে এখন রাস্তাঘাট এর যা অবস্থা ছেলেটা কে নিয়ে টেনশনে থাকি কখন জানি কি হয়।

লোকটা এবার বেশ শান্তভাবে বললো
-তা কি ব্যপারে কল দিলেন,একটা মিটিং এ ছিলাম তাই অনেক গুলি কল দিলেন আমি রিসিভ করতে পারিনি।
-আচ্ছা আমিও বেশিই করে ফেলছি এত্তগুলো কল দেওয়া আমার ও উচিত হয়নি।আসলে অনেক চিন্তাই ছিলাম তো তাই এত্ত কল দিতে হলো।
-তা ঠিক আছে,কিন্তু কি ব্যপারে জানতে চাচ্ছেন তা কিন্তু এখনো বললেন না।

-আসলে আজ আমি আপনাদের নতুন বাসায় গিয়েছিলাম, আর সেই নতুন বাসায় আমার এক পরিচিত থাকতো। আজ যখন গেলাম অবাক হয়ে গেলাম।তারা নাকি এসব বিক্রি করে দিছে?
কিন্তু কেন?

-আমি এত্ত কিছু বলতে পারবো না তবে এখানে এসে লোকমুখে যা শুনলাম তা হলো
এই বাসার মালিক এর বড় মেয়ের বিয়ের দিন ছোট মেয়ের বিয়ে হয় আর তারি কিছুদিন পর ছোটমেয়েকে কেউ একজন রাত ২ টার দিকে বাসায় দিয়ে যায়।আর এইটা কেউ একজন দেখে এলাকাজুড়ে নিউজ হয়ে যায়।সবাই মেয়েটাকে নিয়ে নানানরকম কথা শুরু করে।

মেয়েটার বড় বোন গিয়েছিলো মেয়েটার সংসার বাঁচাতে তার শ্বশুরবাড়ি কিন্তু কেউ নাকি এই এই মেয়েকে রাখতে রাজি হয়নি,যদিও এলাকাবাসী বুঝে গেছিলো এমন মেয়েকে কোন শ্বশুর বাড়ির মানুষ রাখতে চাইবে।

-আচ্ছা এর জন্য বাসা টা বিক্রি করে দিলো?
-আরে নাহ।
-তাহলে?
চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here